#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৮
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই আব্রাহাম বের হয়ে পরে গাড়ি নিয়ে সোজা আইরাতের বাসার উদ্দেশ্যে। আব্রাহাম বাড়ির বাইরে গাড়ি থামায় গার্ড রা গেট খুলে দিলে তারপর ভেতরে চলে যায়। তবে কেনো যেনো আব্রাহামের একটু অস্থির অস্থির লাগছে। এক্সিডেন্টের পর সে এই প্রথম আবার নিজের বাসায় যাচ্ছে। আব্রাহামের দাদি তো অবশ্যই ভেতরে আছে না জানি আব্রাহাম কে দেখে কেমন রিয়েকশন দেয়। যাই হোক আব্রাহাম সব চিন্তা বাদ দিয়ে বাড়ির একদম ভেতরে চলে যায়। আর আব্রাহামের যেতেই ইলার সাথে তার একদম মুখোমুখি হয়ে যায়। ইলা তো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক লাগা নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। ইলার হাতে মেডিসিনের বক্স ছিলো তা ধিরিম করে হাত থেকে নিচে পরে যায়। ইলা হুহু করে কেদে দিয়ে ছুটে আব্রাহামের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামের কপালে গালে হাজারো চুমু দিচ্ছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আব্রাহাম নিজেও কিছুটা ঝুকে তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে আছে।
আসলে দাদি-নানিরা হয় ই এমন। তাদের কাছে যেনো তাদের সন্তানের থেকেও তাদের নাতি-নাতনীদের কদর টা অনেক বড়ো। তাদের ওপর দাদি-নানি দের একটা আলাদা টান থাকে, একটা আলাদা মায়া থাকে। এমনও আছে যে নিজের পেটের সন্তান দেখতে না পারলেও একমাত্র তাদের নাতি-নাতনীদের জন্য বারবার ছুটে আসে তারা। বেড়াতে এসে বা চলে যাবার সময় ওইযে হাতে ১০০ বা ৫০০ টাকার নোট গুজে দিয়ে বলা
“” এটা আমি তোকে দিলাম, তোর মা কে বলিস না যেনো””। মাঝে মাঝেই মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে দাদি-নানির পানের বাটা থেকে পান চুরি করে খাওয়া, একসাথে ঘুড়তে যাওয়া আরো কত্তো কি। এগুলো যেনো দাদি-নানিদের আদরের এক অন্যতম অংশ। ইলা আব্রাহাম কে বেশ সময় জড়িয়ে ধরে। তবে আব্রাহাম বুঝলো যে বেশি কান্না কাটি করলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে তাই আব্রাহাম ইলা কে আস্তে করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে দেয়। আব্রাহাম ইলার বয়সের চাপে কুচকে যাওয়া চামড়াময় হাত গুলো নিয়ে তাতে চুমু একে দেয়।
ইলা;; কোথায় ছিলি এতো গুলো দিন সোনা? জানিস কত্তো খুঁজেছি তোকে? কতো কেদেছি। নামাজে বসে কতোই না আল্লাহ”র কাছে দোয়া করেছি তোর জন্য। আমি জানতাম যে তুই একদিন না একদিন আমার কাছে আসবিই। (আব্রাহামের মাথা হাতিয়ে দিতে দিতে)
আব্রাহাম;; এসে গেছি তো।
ইলা;; আমি যেমন-তেমন আইরাত টা তো মরেই গেছিলো। তোর ভাগ্য যে আইরাতের মতো মেয়ে কে জীবনে পেয়েছিস।
আব্রাহাম;; আর ওর ভাগ্য যে ও আমার মতো জামাই পেয়েছে।
ইলা কান্না অবস্থাতেই ফিক করে হেসে দেয়। তখনই আব্রাহাম খেয়াল করে যে দরজার এক কিণারে রনিত হাতে একটা পুতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কেমন এক মায়া মায়া ভাব। আব্রাহামের হঠাৎ নিজের ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো। সেও ঠিক এভাবেই দরজার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তার বাবার দ্বিতীয় সুখী সংসার দেখেছে কিন্তু সেইদিন কেউ তাকে কাছে টেনে নেওয়ার মতো ছিলো না। আব্রাহাম হেটে গিয়ে রনিতের কিছুটা কাছে চলে যায়। তারপর নিচে এক হাটু ভাজ করে রনিতের দিকে তার দুই হাত কিছুটা মেলে ধরে। রনিত একগাল হেসে দিয়ে দৌড়ে আব্রাহামের কাছে এসে পরে। আব্রাহামও তাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয়। কষে গালে একটা চুমু একে দেয়।
আব্রাহাম;; বাব্বাহ, কিরে ব্যাটা বড়ো হয়ে গেছিস তো!!
রনিত;; তোমার মতো তো হই নি।
আব্রাহাম;; আরে না রে ভাই আমার মতো হোস না জীবন শেষ। আর তার ওপর যদি তোর বোনের ক্যাটাগরির মেয়ে কপালে পরে তাহলে নেও ঠ্যালা। কথাই নাই।
রনিত;; হিহিহিহিহিহিহিহি।
আব্রাহাম;; দাঁত গুলো শেষ করেছিস চকোলেট খেতে খেতে। ক্যাবিটি”স।
রনিত;; আচ্ছা শুনো…
আব্রাহাম;; হুমম
রনিত;; তুমি কি আবার চলে যাবে?
আব্রাহাম;; না তো,, একদম না।
রনিত;; 😃
এভাবেই সময় টুকু যায়। না রনিত আর না ই ইলা কেউ যেনো আব্রাহাম কে ছাড়ার নাম অব্দি নিচ্ছে না। আব্রাহাম সারা বাড়ি তে চোখ বুলাচ্ছে। কিন্তু যাকে খুঁজছে তাকে কোথাও পাচ্ছে না।
ইলা;; বউ কে খুঁজছিস বুঝি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, কই বউ কই আমার?
ইলা;; ওরে ছেলে 😅।
আব্রাহাম;; এখন তো অনেক সকাল, আইরাত ঘুমাচ্ছে নাকি?
ইলা;; না, আইরাত বাসায় নেই।
আব্রাহাম;; মানে?
ইলা;; ও জিমে গিয়েছে। সাথে তনয়াও হয়তো আছে। আমাকে শুধু “দাদি যাই” এই কথা বলেই হাতে ওয়াটার পট টা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা।
ইলা;; এখন কি…….
আব্রাহাম;; আমিও যাবো মানে জিম করতে না তবে ওর কাছে।
ইলা;; আইরাত এসে পরবে তো, আর বেশি সময় হয়তো থাকবে না।
আব্রাহাম;; তবুও যাই।
ইলা;; আচ্ছা।
আব্রাহাম বাড়ি থেকে আবার বের হয়ে পরে।
অন্যদিকে আইরাত মুখে এক কঠোর ভাব এনে ট্রেডমিলের ওপর দৌড়িয়ে যাচ্ছে। কপালের সাইডে, বুক দিয়ে, ঘাড়, পিঠ দিয়ে ঘাম ঝড়ে যাচ্ছে। বেশ হাপিয়ে গিয়েছে সে কিন্তু তবুও তার থামার নাম নেই। জোরে জোরে দম নিচ্ছে এক প্রকার ফুসছে তবুও দৌড়িয়েই যাচ্ছে। তনয়া আইরাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে তার দুইহাত ভাজ করে অবাক চোখে আইরাতের কাছে এসে পরে। আইরাতের তাতেও যেনো ভ্রক্ষেপ নেই। সে আনমনে সামনে তাকিয়ে দৌড়িয়েই যাচ্ছে। এবার তনয়া নিজেই আইরাতের ট্রেডমিলের স্পীড টা কমিয়ে দিলো। আইরাতের দৌড়ের বেগ আস্তে আস্তে কমে আসে। এবার আইরাত হাটছে।
তনয়া;; আচ্ছা কি হয়েছে? রাগ?
আইরাত;; মোটেও না।
তনয়া;; তাহলে এতো স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে এমন করছিস যে?
আইরাত;; কেনো মানুষ দৌডায় না দ্রুত গতিতে?
তনয়া;; দৌড়ায় কিন্তু তোকে দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছিস।
আইরাত;; নাহ, রেগে নেই আমি। সত্যি বলতে আমি খুশি জানিস। তবে হ্যাঁ একজনের ওপর রেগে আছি ভীষণ।
তনয়া;; কে?
আইরাত;; তোর ওপরে।
তনয়া;; ওমা কেনো আমি কি করলাম আবার?
আইরাত ট্রেডমিলের ওপর থেকে নেমে পরে। তনয়ার পিঠে দুই-একটা মেরে দিয়ে বলে ওঠে….
আইরাত;; হারামি তুই আব্রাহামের সাথে ছিলি তাও আমাকে বলিস নি।
তনয়া;; ওহহ এই কথা। আরে স্যার যে স্ট্রিক্ট মানুষ জানিসও তো। আমি যদি তোকে বলে দিলাম তাহলে স্যার হয়তো আমাকেই শুট করে দিতো। কীভাবে বলতাম বল।
আইরাত;; হুম তোর সিচুয়েশনও বুঝি।
আইরাত তার হাতে একটা ছোট টাওয়াল নিয়ে ঘাড় গলা মুছতে থাকে। এশ & ব্লেক কালারের একটা জিম আউটফিট পরে এসেছিলো আইরাত। ঘামে তার আউটফিটের এশ কালারের অংশ টাও যেনো ব্লেক হয়ে গেছে।
আইরাত;; গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। এই পানি দে।
আইরাত আর তনয়া কথা বলছিলো তখনই একটা ছেলে আসে। একচুয়ালি জিমের ট্রেইনার। কিন্তু আইরাত ওকে দুচোক্ষে দেখতে পারে না। আইরাত যতটা দূরে দূরে থাকে এই ছেলের থেকে এই ছেলে তত আইরাতের সাথে মিশতে চায়।
আদিব;; হেই আইরাত!
আইরাত;; হুয়াট?
আদিব;; অনেক দৌড়িয়েছো মনে হচ্ছে। ক্লান্ত নিশ্চয়ই।
আইরাত;; Mind your own business..
আদিব;; বাই দি ওয়ে আজকে তোমার মুখ টা অনেক মলিন লাগছে।
আইরাত;; মিষ্টি কুমড়া খেয়ে এসেছি তো তাই মলিন লাগছে 🙂।
আদিব;; হুয়াট এ জোক আইরাত।
আইরাত;; গাধা।
আইরাত এগুলোই বলছিলো তখনই আব্রাহাম আসে। একদম ব্লেক কালার প্যান্ট পরে, জেকেট টেকেট পরে। চোখে চশমা দিয়ে। বেশ অনেক মেয়েই জিম করছিলো। কেউ কেউ হাতে ভারি বস্তু নিয়ে আপ-ডাউন করছে। আব্রাহাম যখন ভেতরে আসে তখন সবাই তাকিয়ে ছিলো। একটা মেয়ের হাত থেকে তো সোজা ভারি ডাম্বেল টা নিচে পরে যায় আব্রাহাম কে দেখতে গিয়ে। তবে আব্রাহাম এসেই দেখে আদিব আইরাতের সাথে ফ্লার্ট করার ট্রাই করছে। তনয়া দেখে আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। একবার আব্রাহাম রেগে গেলে শেষ। তনয়া আইরাত কে ইশারা করে। আইরাত সেখান থেকে চলে আসে বিরক্তি একটা ভাব নিয়ে।
আদিব;; যাহ বাবা চলে গেলো?
আব্রাহাম;; না না সে তো তোমার কাছে থাকার জন্য এখানে এসেছে তাই না।
আদিব পেছন ঘুড়ে তাকায়।
আদিব;; আব..আব আব্রাহাম স্যার আপনি?
আব্রাহাম;; বউ হয় আমার। just stay away from her,, do you get that?!
আদিব;; জ জ্বি।
আদিব দ্রুত চলে যায়। এবার আব্রাহাম আইরাতের কাছে যায়। আইরাতের বাহু ধরে দেয় এক টান। আইরাত পানি খাচ্ছিলো এভাবে টান দেওয়াতে পানি পরে যায়।
আইরাত;; হুয়াট দা হেল!
আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে চেপে নিজের বেশ কাছে এনে রেগে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কসম লাগে খোদার যদি কোন পোলা তোর দিকে তাকায় আমি ওর জান নিয়ে নিমু। (রাগে লাল হয়ে)
আইরাত;; তো যান নিন জান। আপনার দিকে যে এতো মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো আমি কি কিছু বলেছি নাকি।
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো তোমার দিকে তাকাই শুধু।
আইরাত;; তো আমিও তো আপনার দিকে শু…….
আব্রাহাম;; হা?? কি কি? আবার, আবার বলো।
আইরাত;; না মানে!!
আব্রাহাম;; হুম হুম কি কি? বলো, কি?
আইরাত;; আমাকে কথার ফাদে ফেলা বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা,, চলো!
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; জিমে কি সারাদিন থাকবে নাকি। টাইম”স আপ। চলো।
আইরাত নিজের ওপরে জেকেট টা জড়িয়ে নেয়। তারপর আব্রাহামের সাথে গাড়িতে করে চলে যায়। তবে আব্রাহাম আইরাতকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সে নিজে তার বাড়িতে চলে যায় যেখানে রাত্রি রাও থাকে। আজ হয়তো আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসবে। আব্রাহাম সেখানে গিয়ে নিজের সব প্যাকিং শুরু করে দেয়। ঘন্টা খানিক পর আব্রাহাম তার রুম থেকে বের হয়ে হলরুমে আসে। রাত্রির মা লাবণীর সাথে আব্রাহাম অনেক কথা বলে। একটা সময় আব্রাহাম বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে রাত্রি অনেক বেশি চুপচাপ। আব্রাহাম তার গার্ড কে দিয়ে নিজের সব লাগেজগুলো গাড়ির ডিকি তে তুলে ফেলে। তারপর সে নিজেই রাত্রির দিকে এগিয়ে আসে৷
আব্রাহাম;; রাত্রি!!
রাত্রি ডাক শুনে বাড়ির গেটের পাশে এসে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; মন খারাপ?
রাত্রি;; একদম না।
আব্রাহাম;; আমাকে মিস করবি তুই?
রাত্রি;; একদম না।
আব্রাহাম;; সত্যি?
আব্রাহাম রাত্রির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো সেই চোখে যে কেউ তাকালেই মায়ায় পরে যাবে।
আব্রাহাম;; রাত্রি!!
রাত্রি তার চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷
রাত্রি;; অনেক মিস করবো।
আব্রাহাম;; শোন…
রাত্রি;; হুমম।
আব্রাহাম রাত্রির দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসে৷
আব্রাহাম;; আমার থেকে হাজার গুণে ভালো ছেলে পাবি তুই। যে তোকে ভালোবাসবে আর আগলেও রাখবে।
রাত্রি অবাক হয়ে আব্রহামের দিকে তাকায়।
রাত্রি;; না মানে আম……
আব্রাহাম;; আমি জানি সবই,, একজনের মন কখন, কীভাবে আরেকজনের ওপর এসে পরে তা জানা নেই কারোরই। আর আমি সত্যি বলতে এতো টাও ভালো একজন না। দেখিস তুই তোর লাইফে এমন একজন কে পাবি যে কিনা তোকে নিজের নয়নের মনি বানিয়ে রাখবে। তোকে অনেক ভালোবাসবে আর তুইও।
রাত্রি;; হুমম। এখানে মাঝে মাঝে আসবি তো?
আব্রাহাম;; অবশ্যই।
রাত্রি;; আইরাত কে নিয়ে আসিস,, আমার জাস্ট এক কথায় ওকে অনেক ভালো লাগে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি বুঝি মাসে কয়দিন হয় আর বছরে কয়দিন।
রাত্রি;; হাহাহা, ওই ই তোর জন্য ঠিক আছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি যাই,, তুই নিজের খেয়াল রাখিস আর আন্টিকেও দেখে রাখবি। আর হ্যাঁ যাই হোক, যে কোন সময় ই হোক যা কিছুই হোক না কেনো সবার আগে আমাকে ডাকবি ওকে। কোন প্রব্লেম হলে আমাকে আগে ডাকবি।
রাত্রি;; অবশ্যই, তোকে জ্বালানো ছাড়ছি না।
আব্রাহাম;; আমি যাই।
রাত্রি;; যাই বলতে নেই বল আমি আসি।
আব্রাহাম;; 😅। আমি আসি, আল্লাহ হাফেজ।
রাত্রি;; আল্লাহ হাফেজ।
আব্রাহাম রাত্রির দিকে এক নজর তাকিয়ে এসে পরে। রাত্রিও আব্রাহাম চলে গেলে বাড়ির ভেতরে এসে পরে। বেশ কিছু সময় পর আব্রাহাম তার নিজ বাড়িতে এসে পরে। গাড়িতে যা কিছুই ছিলো সব গার্ড রা ভেতরে নিয়ে এসেছে। এখন সব ঠিক, সবকিছু একদম আগের মতো। আব্রাহাম-আইরাত, দাদি আর রনিত। একটা ছোট্ট হ্যাপি ফ্যামিলি। আব্রাহাম সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তবে রুমে গিয়ে আব্রাহাম অবাক। একটা সুতো অব্দি নড়েনি রুমের। বেশ বছর আগেও যেমন ছিলো এখনো ঠিক তাই। শুধু রুমের দেওয়াল গুলোতে আব্রাহাম-আইরাতের আরো বেশ কিছু ছবি যুক্ত হয়েছে। আব্রাহামের চোখে আইরাতের একটা ছবি বাধে। সেখানে শুধু আইরাত একাই দাঁড়িয়ে আছে। লাল-সাদা কালারের হাজারো বেলুনের মাঝে আইরাত একটা সাদা গোল জামা পরে দুই হাতে দুইটা বেলুন নিয়ে একগাল হেসে বসে আছে। আব্রাহাম দেওয়ালে এক হাত রেখে আইরাতের সেই ছবিটার দিকে ঝুকে পরে কিছুটা। ডান হাত দিয়ে ছবিতে থাকা আইরাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়। তখনই ওয়াসরুম থেকে শাওয়ারের আওয়াজ আসে। অর্থাৎ ঝড়ে যাওয়া পানির শব্দ। আব্রাহাম তার ঘাড় ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকায়। সে বুঝলো যে আইরাত ওয়াসরুমে।
আইরাত;; Main jalti raatein teri tu woh subah jo bhuja dee,, Bheegh loon bheegh loon ajj main teri baarish main bheegh loon…..
আইরাতের এমন গান শুনে আব্রাহাম ফিক করে এসে দেয়। সে ভালোই বুঝলো সে আইরাত বেশ খাঁটি একজন বাথরুম সিংগার। তার প্রায় আধা ঘন্টা পর আইরাত ওয়াসরুম থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। তাও তারর হাটু অব্দি সাদা টাওয়াল পেচিয়ে। আইরাত গুনগুন করে গান গেয়ে যাচ্ছে তো গেয়েই যাচ্ছে। অন্য দিকে খেয়াল নেই তার। আইরাত তার ভেজা পায়ে রুমের ভেতরে এসে মাথা থেকেও টাওয়াল টা খুলে নেয়। ভেজা চুল গুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে পরে। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আইরাত খেয়াল করে যে বিছানার ওপর আব্রাহাম তার দুইহাত ভাজ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আয়নাতে আব্রাহাম কে দেখেই দেয় এক চিল্লানি।
আইরাত;; আম্মুহহহহহহহহহ..৷
আইরাত ঠাস করে আবার ওয়াসরুমের ভেতরে চলে যায়। এদিকে আব্রাহাম শুধু আইরাতের কান্ড দেখছে। পরিস্থিতি একদম নীরব, চুপচাপ। কয়েক মিনিট পর আইরাত তার ওয়াসরুমের দরজা হাল্কা খুলে এক চোখ বের করে রুমে তাকায়। আব্রাহাম নেই। আইরাত অবাক হয়। আব্রাহাম কি তাহলে চলে গেলো নাকি। আইরাত এবার দরজা বেশ টুকু খুলে মাথা বের করে সারা রুমে চোখ বুলাচ্ছে আর তখনই আব্রাহাম হুট করেই সামনে এসে পরে। এতে আইরাত পুরো চমকে যায়। আইরাত দরজা লাগাতে যাবে কিন্তু আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে ওয়াস রমের দরজা আটকে দেয়। আইরাত যেখানে নিজের দুই হাত আর বডি দিয়ে দরজা লাগানোর চেষ্টা করছে সেখানে শুধু আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আটকে রেখে দিয়েছে। তবে আব্রাহাম এক প্রকার ঠেলেই ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকে পরে। আইরাত তো ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আব্রাহাম এক পা এক পা করে আইরাতের দিকে এগোচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে যতটা পেছায় আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঠিক তার দ্বিগুণ ভাবে আগায়। একটা সময় পেছাতে পেছাতে আইরাতের পিঠ দেওয়ালের সাথে ঠেকে যায়। আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দিকে এক হেচকা টান দেয়। এতে আইরাত এসে সোজা আব্রাহামের বুকের ওপর পরে। আব্রাহাম আইরাতকে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরে তার দিকে বেশ ঝুকে যায়। আইরাতের ভেজা ভেজা চুলগুলো তার গালে, ঠোঁটে আর কিছুটা কপালে লেগে রয়েছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে সেগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। আইরাত তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। তার জন্য পরিস্থিতি টা সামলানো বেশ কষ্টসাধ্য। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে আইরাতের ফর্সা ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমে রয়েছে। আর তার ঠিক মাঝ বরাবর জায়গায় একটা কালো তিল ফুটে রয়েছে। আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবায়। আব্রাহামের বডির সাথে এভাবে লেগে গিয়ে আইরাতের যেনো একটা ঝটকাই লাগলো৷ চেয়েও সে আব্রাহাম কে দূরে সরাতে পারছে না। আইরাতের শ্বাস ভারি হয়ে এসেছে। আব্রাহাম আইরাতের চুলের একদফা ঘ্রাণ নিয়ে মাথা তুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত আধো আধো চোখে তাকিয়ে আছে আর এগুলো যেনো আব্রাহাম কে মেরেই ফেলছে। সামলানো বড্ড দায় তার পক্ষে৷ আইরাতের বুকের টাওয়াল টা কিছুটা ঢিলা হয়ে এসেছে। তাই সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে নিজের করে নেয়। আইরাত তার চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকায়। কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহামই। সে তার বাম হাত দেওয়ালের ওপরে রেখে ডান হাত দিয়ে আইরাতের দুই হাত পেছনে আটকিয়ে ধরে আইরাতে মগ্ন। কতোক্ষন আইরাতকে এভাবে সে ধরে রেখেছিলো তার ধারণা নেই। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আব্রাহাম অপলহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে আর আইরাত মাথা নামিয়ে রেখেছে। আইরাত খেয়াল করলো যে তার গায়ের টাওয়াল টা আরো ঢিলা হয়ে এসেছে তাই আইরাত তার বুকের দিকটায় হাত দিয়ে খামছে ধরে। আব্রাহাম আইরাতের গালে টুক করে একটা চুমু একে দেয়। আইরাত আর এভাবে থাকতে না পেরে বলেই দিলো……
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ থামুন, আমার চেঞ্জ করতে হবে।
আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা খেয়াল করে,, আব্রাহামের শার্ট টা আইরাতের গায়ের পানি দিয়ে বেশ ভিজে গেছে। অবশেষে আইরাতের কপালে একটা গাঢ় চুমু খেয়ে আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দেয়। আর ছাড়া পেয়েই আইরাত ছুটে চলে যায় চেঞ্জিং রুমে।
আব্রাহাম নিজেও চেঞ্জ করে নিচে ড্রোইং রুমে এসে পরে। সেখানে ইলা রনিত সবাই বসে আছে। আব্রহামও বসে বসে কথা বলছে আর খাচ্ছে। তখনই ওপর থেকে সিড়ি বেয়ে আইরাত নিচে নামে। সবাই আইরাতের দিকে তাকায়। ইলা তো বেশ অবাক। আইরাত ওইযে আগের মতো করেই নেভিব্লু কালারের একটা গোল জামা পরে এসেছে। আইরাত নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে। সবাই আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আইরাত মুচকি হেসে বলে ওঠে….
আইরাত;; কি সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? দেখতে খারাপ লাগছে নাকি?
ইলা;; কত্তোদিন পর তোকে এভাবে দেখলাম। প্রচন্ড রকমের মিষ্টি লাগছে দেখতে।
আইরাত;; 🙃🙃
ইলা;; অনেক সুন্দর লাগছে 💖।
আইরাত;; থাংকু।
আইরাত খেতে বসে কিন্তু তখনই আব্রাহামের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটে। টেবিলের নিচ দিয়ে আইরাতের পায়ে সুরসুরি কাটতে শুরু করে দেয় সে। এতে আইরাত বিষম খায়। রাগি চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায় কিন্তু আব্রাহাম আইরাতকে উল্টো চোখ মেরে দেয়। আইরাত এখন না পারছে হাসতে আর না পারছে খেতে। কি আর করার এভাবেই চলতে থাকে সময় টা।
।
।
।
।
চলবে~~