প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#পর্ব_৫১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত সবার গিফট নিয়ে তমালের হাতে দিলো,তমাল পরিচিত একটা রিকসায় সব তুলে বললো শান্তর বাসায় পৌঁছে দিতে,সেখানে যে গার্ড আছে তার হাতে দিলেই হবে
আহানা দূরে দাঁড়িয়ে এখনও সব দেখে যাচ্ছে
.
কি ভাই এবার প্রেমনিবেদন পাইসো কয়টা?
.
এবার ১৫টা😂
.
ওয়াও,তা কার প্রোপোজ একসেপ্ট করবেন?
.
শান্ত জ্যাকেট টেনে আহানার দিকে চেয়ে বললো “কারোর না!”
.
এক এক করে সবাই চলে গেছে,শান্ত একটা গোলাপও পেয়েছে
আহানাকে দেখে সেটা কামড়ে ধরে বটতলায় গিয়ে বসলো সে
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ক্লাসরুমের দিকে চলে গেলো
.
“কিরে?? আহানা তোরে উইস করে নাই?”
.
“না রে সূর্য,আমি ওকে জানাইনি,জানাইনি বলে উল্টা রাগ করেছে”
.
“জানালেও কি না জানালেও কি,জানাসনি ভালো করেছিস,ওর কাছে তোকে দেওয়ার মত কোনো expensive gift নেই”
.
“নাহ সূর্য!! গিফট সবসময় কিনতে হয় না,চাইলেই যেকোনো কিছুকে গিফট হিসেবে দেওয়া যায়,বুঝলি!”
♣
আহানা ২টো ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে গেলো,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গাল ফুলিয়ে বললো “হুহ পরবো না শাড়ী,দেখি কি করে,জন্মদিনের কথা কিনা আমাকেই জানালো না?? কতটা বেয়াদবি করসে!”
আহানা খাটের মাঝখানে গিয়ে বসে রইলো
দরজায় কে যেন টোকা দিচ্ছে,নিশ্চয় অলি এসেছে
খাট থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুললো আহানা,ওপারে শান্ত দাঁড়িয়ে আছে
সে ব্রু কুঁচকে রেগে রেগে বললো “এখনও শাড়ী পরোনি??”
.
পরবো না,কি করবেন?আমি তো কেউ না,আমাকে একটিবার জানালেন ও না আজ আপনার জন্মদিন!
.
কেন? কি গিফট দিবা তুমি?
.
কথাটা শুনে আহানা মুখটা গম্ভীর করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো,চোখ মুছে বললো ভালো করেছেন জানান নি,আসলেই আমার কাছে কিছু নেই যে আপনাকে দিব,সেই সামর্থ্য আমার নেই তবে আজ বেতন পেলে একটা কিছু গিফট কিনে দিব আপনাকে
.
আমি যদি টাকা দিয়ে কেনা গিফটের চেয়েও দামি কিছু চাই?
.
আহানা চোখ মুছে পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো সেটা কি?
.
শান্ত কাছে এসে ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো “সময় হলে ঠিক আদায় করে নিব,শাড়ী পরে নাও এখন,একসাথে অফিসে যাবো”
শান্ত সোফায় গিয়ে বসে ফোনে গেমস খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো
আহানা নিজের রুমে এসে শাড়ীটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলো যে শান্ত গিফট হিসেবে কি নিবে ওর থেকে
তারপর শাড়ীটা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে বের হতে যেতেই মনে পড়লো কাল তো সাজগোজের অনেক জিনিস পাঠিয়েছে শান্তর বাবা
সেসব নিয়ে আহানা ড্রেসিং টেবিলের সামনে টুল টেনে বসে মুখে পাউডার লাগালো তারপর কপালে টিপ,কানের দুল গলার হার পরে নিয়ে লিপস্টিক লাগাতে যেতেই ওপার থেকে শান্ত বললো “লিপস্টিক লাগাইও না”
.
কেন?
.
আমি বলসি তাই,ঐ ঠোঁট এমনিতেই সুন্দর,রঙ করার কোনো প্রয়োজন নেই
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে লিপস্টিক রেখে দিয়ে বের হলো রুম থেকে
শান্ত পিছন ফিরে ওকে দেখে জাস্ট মুচকি হেসে দিলো
জ্যাকেট টেনে ঠিক করে বললো “চলো!!সিউর আজ আমাদের দেখে সবাই বলবে আমরা বিবাহিত”
আহানা লজ্জা পেলো,অবশ্য এই লজ্জাটা সেদিন থাকা জরুরি ছিল যেদিন তাদের বিয়ে হয়েছিল
শান্তর কাঁধে হাত রেখে বাইকে উঠে বসলো সে
.
অফিসে আসতেই সবাই শান্তকে বার্থডে উইস করলো,গিফটস ও দিলো
আহানা এক কোণায় দাঁড়িয়ে ভাবতেসে উইস করবে তো কিভাবে করবে??
শান্ত তার কেবিনে বসে আহানার দিকে তাকিয়ে বললো “উইস করতে যদি এত ভাবতে হয় তাহলে উইস করতে হবে না,উইস না করলেও বার্থডে সেলিব্রেট করা যায়”
আহানা মুখ বাঁকিয়ে এসে তার কেবিনে বসলো,কাজ করতে করতে বললো “শুভ জন্মদিন!!!”
.
শান্তকে যেন ধমক দিয়ে উইসটা করলো
শান্ত চোখ বড় করে বললো “এমন করে উইস করে মানুষ?তাও বউ হয়ে??”
.
তো কি চুমু খেয়ে বলতাম?
.
কথাটা শুনে শান্ত দাঁত কেলিয়ে তাকালো ওর দিকে
.
আহানা মাত্র কি বললো সে তা বুঝতে পেরে লজ্জায় আরেকদিকে ফিরে বসলো
“ইস কি থেকে কি বলে ফেললাম ধুর!”
.
অফিস ছুটি শেষে রাফি স্যার এসে যাদের পার্সোনাল ব্যাংক একাউন্ট নেই তাদের হাতে তাদের বেতন বুঝিয়ে দিলেন
আহানা তার বেতন পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেছে,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার
টাকা ব্যাগে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে শান্তর বাইকে উঠে বসলো সে ,শান্ত ফোনে কথা বলতে বলতে আসতেসে
.
উফ আজ দেরি হয়ে গেছে অনেক
.
কেন?কোথাও যাবেন নাকি?
.
হুম
.
কোথায়?
.
গেলেই দেখতে পাবা
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে “রক এন্ড রোল”ক্লাবে আসলো
আহানা চারদিক দেখে বিস্মিত হয়ে বললো এখানে কেন?
.
আমার বার্থডে পার্টি এখানে হবে
.
আমি যাব না,পরিবেশ এরকম কেন
.
আমি আছি না?
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে শান্তর পিছু পিছু ক্লাবে ঢুকলো,সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একসাথে
লাল নীল সবুজ বাতি জ্বলতেসে,একবার অফ হচ্ছে আবার অন হচ্ছে
শান্ত তমাল আর নওশাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সাথে করে আহানার হাত মুঠো করে ধরে ওকেও নিয়ে গেলো সেদিকে
.
আহানা আশেপাশের সবাইকে দেখতেসে এক এক করে
আজ এখানে যারা এসেছে তাদের সবাইকেই কম বেশি চিনে আহানা,কারণ সবাই ভার্সিটির,শান্তর সাথে বটতলায় এদের প্রায়ই সময়ে দেখতো আহানা
ভিড়ের মাঝে রুপাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলো সে
রুপা আহানাকে পেয়ে তো মহা খুশি,রুপা আর আহানা কথা বলা শুরু করে দিলো পার্টি নিয়ে
একজন ওয়েটার গ্লাসে করে জুস ৪গ্লাস নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আহানা আর রুপাকে সাধলো
আহানা নিতে যেতেই শান্ত দূরে থেকে ওকে ওয়েট করতে বললো
এগিয়ে এসে গ্লাস নিয়ে টেস্ট করে বললো আহানা এটা তুমি খাবা না
.
কেন😒
.
“এটা নরমাল ম্যাংগো জুস না,এটাতে ওয়াইন মিক্স করা আছে
ব্রো তুমি বরং এক কাজ করো! নরমাল ড্রিংক ২টো আনো,এদের দুজনের জন্য”
.
ওয়েটার ঠিক আছে বলে চলে গেলো
.
রুপা আহানাকে এক ঠেলা দিয়ে বললো “এত কেয়ার!”
.
আহানা শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত তার হাতের জুস খেতে খেতে মুচকি হেসে চলে গেলো
.
কিরে?তোদের মাঝে কি ফোড়ন চলতেসে?আমি কি ধরে নিতাম যে তোদের অবশেষে প্রেমের পাঁচফোড়ন টেস্ট করা হয়ে গেছে?
.
আরে ধুর,এসব কি বলিস?
.
ঐদিকে একটা জায়গায় লাইট হাইলাইট করা হলো,সবাই সবার কাজ রেখে সেদিকে ফিরে তাকালো
এলিনা দাঁড়িয়ে আছে মাঝখানে,পরনে গ্রিন ওয়েস্টার্ন ড্রেস,পার্টি সাজ দিয়ে এসেছে আজ সে
হেসে বললো “এটেনশন প্লিস!”
“আজ আমার ভালোবাসার মানুষ শাহরিয়ার শান্তর বার্থডে,এই দিন তার জন্য অনেক অনেক স্পেশাল,আর আমার কাছেও,আমি শান্তকে এখানে ডাকতে চাই,শান্ত প্লিস কাম!
.
শান্ত জ্যাকেট ঠিক করে এগিয়ে গেলো
আহানা মুখটা ফ্যাকাসে করে চেয়ে আছে সেদিকে
শান্ত এলিনার থেকে মাইক নিয়ে হেসে দিয়ে মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে উপরের দিকে তুলে দিলো তারপর বললো “এবার কেক কাটা যাক?”
.
এলিনা এই কথাটা আশা করেনি,সে ভেবেছিল হয়ত তার উক্তির জন্য শান্ত তাকে ধন্যবাদ দিবে কিন্তু তা না করে উল্টে কথা এড়িয়ে গেলো শান্ত!!
.
শান্তর এপাশে নওশাদ আর ওপাশে এলিনা দাঁড়িয়েছে,আহানা দূরে রুপার সাথে দাঁড়িয়ে আছে
লিগালি ওয়াইফ হওয়ার সত্ত্বেও আজ সে শান্তর থেকে কতটা দূরে,তার অধিকার থেকেও নেই
শান্ত তো এলিনাকে সবার আগে কেক খাওয়াবে
আর না খাওয়ালে এলিনা সব উলটপালট করে ফেলবে
.
শান্ত ছুরি হাতে নিয়ে যে ছেলেটা সকল লাইট অফ অন করার দায়িত্বে আছে তার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে দিলো
ছেলেটা হাত উঠিয়ে “ওকে” জানালো
শান্ত কেক কেটে হাতে নিতেই লাইট সব অফ হয়ে গেলো সাথে সাথে
সবাই বলে যাচ্ছে লাইট কেন চলে গেছে,কখন আসবে, এইসব বলাবলি করতেসে সবাই
এদিকে শান্ত আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে দূরে নিয়ে গেলো ওকে
হাতের স্পর্শতেই আহানা চিনতে পেরেছে এটা শান্ত আর তাই সে টু শব্দটাও করেনি
শান্ত দূরের আলোতে আহানাকে নিয়ে ওকে কেক খাইয়ে দিলো
আহানার চোখমুখে হাসি ফুটে উঠেছে,সে জানতো না শান্ত কিভাবে ওকে সবার আগে কেক খাইয়ে দিবে
শান্ত পকেট থেকে টিসু নিয়ে আহানার মুখ মুছিয়ে দিয়ে বললো “স্ত্রী হিসেবে এটা তোমার অধিকার আহানা,অন্য কারোর নয়”
কথাটা বলে শান্ত চলে গেলো,আহানা মুগ্ধ চোখে চেয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
শান্ত আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে জোরে “ডান” বললো
সেই ছেলেটা ডান শুনতে পেয়ে লাইট আবার অন করে দিলো
.
শান্ত তুই ডান বললি কেন?
.
ইয়ে আসলে নওশাদ! কেকের প্রথম পিসটা আমি খেয়ে ফেলেছি লোভ সামলাতে পারিনি তাই ডান বললাম
.
নওশাদ দুষ্টামি করে এক ঘুষি দিলো ওর পেটে,সবাই হেসে দিলো,শান্ত কেক আরেক পিস নিয়ে নওশাদকে রিয়াজকে আর সূর্যকে খাওয়ালো তারপর এলিনাকে
নওশাদ আর সূর্য মিলে লাস্টে যে কেক ছিল সেটা শান্তর সারা মুখে মাখিয়ে দিলো তারপর পার্টি স্প্রে দিয়ে আবারও ভূত বানিয়ে দিলো ওকে
.
হেহে!!কেক এক পিস দিয়ে তোরা আমাকে ভূত বানিয়েছিস,কিন্তু তোদের বার্থডে তে আমি আলাদা একটা কেক আনবো যেটা শুধু তোদের গালে মাখানোর জন্য
.
শান্ত তুই ভুলে যাস কেন আমরা তোরই বেস্টফ্রেন্ড??আমরাও আলাদা একটা কেক অর্ডার দিয়ে বানিয়েছি শুধুমাত্র তোর সারা গায়ে মাখানোর জন্য,হাহা
.
এই না খবরদার!!
.
শান্ত দৌড় দিলো সবাই মিলে কেক নিয়ে ওর পিছু পিছু গেলো
এলিনা এক পিস কেক নিয়ে মুঠো করে ধরে আহানার দিকে তাকিয়ে ওর কাছে আসলো
.
“সো স্যাড আহানা!শান্ত তোমাকে এক পিস কেক ও খাওয়ালো না
ইটস ওকে,ও বুঝতে পেরেছে ওর সাথে আসলেই কাকে মানায়!
এন্ড আই এম সরি কারণ এখন আমি শান্তর জন্মদিন উপলক্ষে তোমাকে কেক মাখাবো
আহানা সরতে যাওয়ার আগেই এলিনা আহানার চুলে গালে কেক লাগিয়ে দিলো
আহানা বিরক্ত হয়ে বললো “কি সমস্যা?আমি কি ক্ষতি করসিলাম আপনার?সবসময় এমন করেন কেন?”
.
“তুমি আমার শান্তকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চাও,আর সেটা আমি হতে দিব না কিছুতেই”
♣
শান্ত টিসু দিয়ে মাথা মুছে এসে দেখলো আহানারও একি অবস্থা
“এই হাল কে করলো তোমার?”
.
আহানা রেগে বেরিয়ে চলে গেলো ক্লাব থেকে
.
“ওক গাইজ তোমরা ফান করো আজ আমি আসি,আমার এখন বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে হবে”
♣
“আহানা দাঁড়াও”
.
কি?
.
যে করেছে তার হয়ে আমি সরি বলতেসি,আর এসব এলিনা করেছে আমি জানি তাকে আমি পরে বুঝিয়ে দিব যে তুমি আমার…
.
আমি বাসায় যাব,প্লিস আর কোনো কথা নয়
.
ওকে,বাইকে উঠো
.
আহানা বাইকে উঠে বসতেই শান্ত বাইকের আয়নায় তাকিয়ে বললো একটা কথা রাখবে?
.
কি?
.
আজ আমার বাসায় থাকবে?নওশাদেরা আসতে আসতে শেষরাত হয়ে যাবে
.
না,আমার বাসায় গিয়ে গোসল করতে হবে,আর আমার জামাকাপড় তো আমার বাসায়
.
আমার কাছে একটা থ্রি পিস আছে,আমি মিতুর জন্য কিনেছিলাম,তুমি নাহয় সেটা পরিও,আমি ওকে আরেকটা কিনে দিব,ও তো চিকন তাও আমার মনে হয় ওর সেই জামাটা তোমার গায়ে ফিট হবে,ঢিলা জামাটা
.
না,আমি আমার বাসায় যাব
.
শান্ত চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে,হঠাৎ করে খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো,গেলো তো গেলোই,থামাথামি নেই,দুজনে ভিজে টইটুম্বর হয়ে গেসে
শান্তর বাসার সামনে দিয়েই আহানাদের বাসায় যেতে হয়,বৃষ্টির জন্য বাইকও চালানো পসিবল হচ্ছে না,এত গতি বৃষ্টির শেষে তার বাসার সামনে এসেই বাইক থামালো শান্ত
আহানার হাত ধরে বিল্ডিং এর ভিতরে চলে আসলো
.
“তোমার বাসায় যাওয়া একদম ইম্পসিবল হয়ে গেসে বাধ্য হয়ে বাইক আমার বাসার সামনেই থামালাম,এখন কি করবা তুমি বলো?”
.
“আচ্ছা ঠিক আছে চলুন,বৃষ্টি তো থামতেছেই না,এমনিতেও ভিজে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে,তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে তা না হলে জ্বর এসে যাবে”
.
হুম,চলো
♣
বাইরে বৃষ্টি,মেঘ থেমে থেমে নয় প্রতি সেকেন্ডে ডাক দিচ্ছে মানে অবস্থা কঠিন,বাতাস তো আছেই
বারান্দার পর্দা উড়ে উড়ে আকাশ দেখাচ্ছে বারবার,অন্ধকার ভয়ঙ্কর আকাশ,ভয়ঙ্কর আকাশ বলার কারণ হলো বজ্রপাত,যেভাবে পুরো আকাশে তারকাটা এঁকে দিচ্ছে,ভয়ঙ্করই বটে!
এটা না দেখলেও চলবে,তাও কেন যে পর্দা সরে সরে বারবার আকাশ দেখাচ্ছে
আহানা নিশ্চুপ হয়ে সেই আকাশ দেখায় ব্যস্ত,কিছুক্ষন আগেই গোসল করেছে সে,চুল ভিজে আছে,বৃষ্টি হলে এই এক ঝামেলা,সহজে চুল শুকাতে চায় না,আর আমার চুল হলে তো আজ সারারাতেও শুকাবে না,মিতুর জন্য কেনা জামাটা ফিট হয়েছে তবে একটু টাইট
পিঠের উপর চুল ভিজা থাকার কারণে পিঠও ভিজে কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হচ্ছে
একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আহানা,বারান্দার যে জায়গাটাই বাতাসের উৎপাত বেশি সেই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো সে,চুলগুলো পিঠ থেকে সরিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছে সে
.
চা হাজির!!
.
শান্তর গলা শুনে পিঠের উপরে চুল ছেড়ে দিলো আহানা যেগুলো এতক্ষন তার হাতে ছিল
পিছন ফিরে শান্তর দিকে তাকালো সে,শান্ত এগিয়ে এসে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে ধরেছে,আহানা চায়ের কাপটার দিকে চেয়ে সেটা হাতে নিলো তারপর আবার বারান্দার দিকে ফিরে বাতাসের দিকে মন দিলো
.
শান্ত চা খাওয়া শেষ করে সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় চেয়ার টেনে বসে আছে,সিগারেটের ধোঁয়া আকাশের দিকে ছাড়ছে,আকাশ যে রঙ সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লেও তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে
তাই ধোঁয়া ছাড়ার পর সেটা কোনদিকে যায় ঠিক বোঝা যায় না তার উপর এত অন্ধকার!
.
আহানা চুল ঝাড়তে ঝাড়তে ড্রেসিং টেবিলের দিকে গেলো
এই যে চুল ঝাড়লো পানি পুরোটা না গেলেও কিছুটা শান্তর মুখের উপর গিয়ে পড়লো নিমিষেই মুখের ভাবগতি এলোমেলো হয়ে গেলো তার,চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
আহানা ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে তার গোলাপি চুড়িগুলো নিয়ে পরতেসে,গোসল করার আগে এখানে খুলে রেখেছিলো
কেমন একটা অনুভূতি হতেই সে চোখ তুলে আয়নায় তাকালো,শান্ত পিছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে,হাত কাঁপতেসে তার
.
আহানা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শান্তর দিকে ফিরে বললো কি হয়েছে আপনার?শরীর ঠিক আছে তো?আর আপনার হাত!
.
তার আগেই শান্ত আহানার খুব কাছে এসে গেলো,এতটা কাছে যে আহানার নিজেরই এখন সারা শরীর কাঁপতেসে,হাত একটা নাড়াতে পারছে না শান্তর কাঁধের তলায় পড়ে সেটা অবশ হয়ে আছে,আর আরেকটা হাত স্বাধীন,সেটা দিয়ে শান্তকে সরাতে যাবে তার আগেই সেই হাতটাও শান্ত ধরে ফেললো
.
শান্ত!আপনি এমন করছেন কেন?
.
“চুপ!”
শান্ত মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসলো,আহানা বুঝতে পেরেছে সে চাইলেও আজ আটকাতে পারবে না শান্তকে,শান্তর চোখমুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে সে আজ আহানাকে ছাড়বে না
চলবে♥