প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_১৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহা আপনি বুঝতেছেন না,এভাবে চাকরি পাওয়া যায় না
এখন আপনাকে চাকরি দিলে অন্যদের সাথে বেইমানি করা হবে
আপনি প্লিস অন্য কোথাও ট্রাই করুন,আমাদের সময় নষ্ট করবেন না
.
প্লিস!!!রিকুয়েস্টটা রাখুন আমার
.
এক মিনিট স্যার ফোন দিয়েছে
হ্যালো স্যার!!
.
কি সমস্যা?এত চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে কেন?কি হয়েছে?
.
স্যার একটা মেয়ে এসে চাকরির জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে
মানতেই চাচ্ছে না
তার নাকি ৩টা বাচ্চা না খেয়ে আছে
.
উনার যোগ্যতা কতদূর?
.
স্যার সব ঠিকঠাক তবে আইএ পাস
বিএ পাস না
.
ইংলিশে কথা বলতে বলো,দেখো কত স্পীডে বলতে পারে তারপর নাও
.
ওকে স্যার
.
আহানা চোরের মতন ঊষার মুখের দিকে চেয়ে আছে,শয়তানটা কি বলছে কে জানে
ঊষা ফোন রেখে আহানাকে বললো ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে
আহানা বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে ফটরফটর করে ইংরেজীতে নিজের পরিচয় দিতে থাকলো
My name is Suhana Yasmin, I am married, I have two children, my husband has left me
.
এক মিনিট,তোমার সার্টিফিকেটে লেখা আহানা,তাহলে নাম সুহানা হলো কেমনে?
.
ইয়ে আসলে সার্টিফিকেটে সুহানার জায়গায় আহানা লিখে ফেলেছে কম্পিউটারের লোকটা,পরে ঠিক করতে ৫০০টাকা চাইছিলো বলে ঠিক করাইনি,আপনারা আমাকে সুহানা ডাকিয়েন
.
ওকে ডান,তোমার কথা আমার ভালো লাগছে,তোমার চাকরি কনফার্ম
.
থ্যাংক ইউ সো মাচ!!
.
এক মিনিট ম্যাম,তাহলে আমরা কি দোষ করলাম?আমাদের ও তো ফ্যামিলি আছে,আমরাও ইংরেজীতে পারদর্শী
.
আহানা ব্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো”তো?তোমার কি আমার মত ৩টা বাচ্চা আছে?তোমারেও কি তোমার বউ ছাইড়া দিসে?আজব সাজব কথা কয়
.
ছেলেটা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো
.
ওকে সুহানা,তুমি এখন চলো স্যারের সাথে কথা বলবে
.
আহানার কাশি উঠে গেলো ঊষার কথা শুনে
কাশতে কাশতে বললো”আমার না ভয় করে,আমি আসলে…
.
আরে কিছু হবে না,আর চাকরি এটাতে তো তোমাকে সারাক্ষণ স্যারের সাথে এদিক ওদিক যেতে হবে,স্যারের তো ক্লাইন্ট পার্টনার তুমি এখন থেকে
.
আহানা কথাটা শুনে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে
কি বলতেছে এই মেয়েটা!আমি তো ভেবেছিলাম একা আমি গিয়ে ক্লাইন্ট সামলাবো,এখন দেখি আমার সাথে উনিও যাবেন
একেই বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়
.
কি হলো চলো!
.
ঊষা আহানার হাত মুঠো করে ধরে হেঁটে চলেছে
আহানা কি করবে!! কি করে পরিস্থিতি সামলাবে সেটার মারপ্যাঁচ বের করছে
ঊষা করিডোর পেরিয়ে সবার শেষের একটা বিরাট অফিস রুম আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো,দরজায় নক ৪বার করে বললো “স্যার আসবো?”
.
শান্ত ল্যাপটপ থেকে চোখ উঠিয়ে বললো আসতে
.
ঊষা ভিতরে ঢুকে বললো “স্যার ঐ ক্লাইন্ট মিটিং এটেন্ড করার জন্য আপনার নিউ পার্টনার কে এনেছি,ওকে কি ডাকবো?”
.
হ্যাঁ ডাকো
.
সুহানা!
.
শান্ত চমকে দরজার দিকে তাকালো
সুহানা??নামটা ওকে মনে হয় গলা ধরে বলতেছে সুহানা না এটা হবে আহানা
শান্ত থ হয়ে দরজার দিকে চেয়েই আছে
আহানা পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকলো,সে একটা কথা ভালো করে ঠিক করে নিয়েছে আর সেটা হলো মুখ খুলবে না,মুখ খুললেই শান্ত ওকে চিনে ফেলবে,কোনো কথা বলবে না
.
শান্ত ব্রু নাচিয়ে বললো”বোরকা??
.
ঊষা আহানাকে খোঁচা দিয়ে বললো মুখ থেকে পর্দা সরাতে
আহানা মাথা নাড়িয়ে “না” জানালো
.
শান্ত আবার ল্যাপটপে মনে দিয়ে বললো”ঊষা ২কাপ কফি নিয়ে আসো,একটাতে চিনি বেশি আরেকটা উইথ আউট সুগার
.
ওকে স্যার
.
আহানা ঢোক গিলে রোবটের মত রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে,দোয়াদরুদ সব পড়া শেষ তার
.
ঊষা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই শান্ত চোখ তুলে তাকালো আহানার দিকে
শান্তর এই চাহনি দেখে আহানা মনে হয় এখনই মরে যাবে
শান্ত তার চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে আসতেছে এদিকে
আহানা ভয়ে এদিক ওদিক তাকালো তারপর ভাবলো নাহ এমনি হয়ত কথা বলার জন্য আসতেছে এদিকে
.
শান্ত সোজা গিয়ে দরজাটা লক করে ফেললো
এটা দেখে আহানার ভয় এবার চরম শিখরে
.
শান্ত আহানার একদম কাছে এসে দাঁড়ালো এবার
আহানা কাঁপতে কাঁপতে চেয়ার একটা টেনে বসে পড়েছে ততক্ষণে
শান্ত মুচকি হেসে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
তারপর টাই টানতে টানতে বললো”কি ব্যাপার আহানা সরি সরি সুহানা ম্যাডাম!!আমাকে এত ভয় পেলে চলে?আমার সাথেই তো আপনার এখন থেকে সব মিটিং এটেন্ড করতে যেতে হবে”
.
আহানা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে,শেষমেষ ধরা খেয়েই গেলো,কথা হলো গিয়ে চিনলো কি করে
.
শান্ত আহানার মাথার থেকে হিজাবটা টান দিয়ে উঠিয়ে বললো”তোমাকে চিনতে আমার কোনো সার্টিফিকেট লাগবে না বুঝছো?তোমাকে আমি হারে হারে চিনি!!
এ কদিনে তোমার গায়ের ঘ্রান তোমার হাঁটা চলা,এবং মোস্ট ইমপরট্যান্ট থিংক তা হলো তোমার পায়ের বড় তিলটা ওটা দেখেই আমি সিউর হলাম এটা সুহানা নয় আহানা
.
আহানা এখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে
.
আগে বলো এরকম বেশে আসছো কেন?কি হইছে?এত নাটকের মানে টা কি?
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”চাকরির দরকার কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না বলে এখানে এসেছি,আপনি তো আমাকে দেখলেই খোঁচাতেন তাই এমন বেশে আসছি আর দেখেন সেই খোঁচাচ্ছেনই
.
চাকরি দরকার মানে?কি করবা টাকা দিয়ে?
.
সংসার কি আপনি চালান?আমি একা চালাই,টাকা দিয়ে কি করবো?
নুন আনতে পান্তা পুরোয় আর আপনি বলতেছেন কি করবো?
এতদিন পর আপনার পরিবারের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে,আমাদের অবস্থা সম্পর্কে সবটা জেনেও আপনি কোন মুখে জিজ্ঞেস করেন যে টাকা দিয়ে কি করবো?
নাচবো,খুশি?
.
আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করেছি,তাই বলে এত হাইপার হচ্ছো কেন?
তোমার চাকরি করতে হবে না,তোমাদের সংসার আমি চালাবো
.
ঢং করার দরকার নাই,আপনার হেল্পের কোনো দরকার নাই আমাদের,আমি এই চাকরিটাও করবো না
♣
কি ব্যাপার ভিতর থেকে দরজা লক কেন?
স্যার!!!কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
.
আহানা ঊষার কথা শুনতে পেয়ে টেবিলের উপর থেকে হিজাবটা নিয়ে পরতে পরতে দরজা খুলে বেরিয়ে চলো গেলো
ঊষা চিন্তিত হয়ে ভিতরে ঢুকে বললো”কি হয়েছে স্যার?”
.
কিছু না,জাস্ট ফর গেট ইট!
.
আহানা যেতে যেতে পথেই কেঁদে দিলো
এই লোকটার কাছে আমরা ভালো আছি নাকি খারাপ আছি সে ব্যাপারে কোনো কিছু যায় আসে না,টাকা দিয়ে কি করবো মানে?কি করে এটা বললো আমাকে!আমাদের অবস্থা কি দেখে না?
না খেয়ে মরবো তাও এই অফিসে আমি চাকরি করবো না বেয়াদব একটা!!
শুধু শুধু সময় নষ্ট করছে আমার
.
আহানা বাসায় ফিরতেই দেখলো মা দরজা খুলে ওর জন্য দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই
আহানা কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেলো
.
কিরে?চাকরি পেলি?
.
চাকরি তো আর হাতের মোয়া না যে পেয়ে যাবো আর তোমার ঐ শান্ত!!বললো আমার আবার টাকার কিসের দরকার,টাকা দিয়ে কি করবো এসব বললো আমাকে
.
শান্ত?ওকে পেলি কই?আর ও এসব বললো মানে?
.
বাদ দাও,কেমন পরিবারের ছেলে উনি?আমাদের অবস্থা তো নিজের চোখে দেখেছে তাও বলে আমার টাকা কেন দরকার,কেন চাকরি খুঁজতেছি এসব বললো আমায়
.
আরে হ্যাঁ আমার তো মাথায় আসেনি,তুই তো শান্তর অফিসেই কাজ করতে পারিস
.
তোমার মাথা ঠিক আছে?এত অপমানিত হয়ে এলাম আর তুমি বলতেছো ঐ হারামির অফিসে আমি চাকরি করবো?মরে গেলেও না
না খেয়ে থাকবো এখন থেকে
.
শুন,মজা করিস না,হাতের কাছে সুযোগ আর তুই জেদ ধরে বসে আসিস,জীবনে নিজের জেদ নিয়ে বসে থাকলে উপরে উঠা যায় না আহানা
তুই আবার যা শান্তর অফিসে,ও তোকে ভালো চাকরি দিয়ে দিবে,তাতে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে কিছুটা হলেও
.
না আমি যাব না
.
তুই রতনের ভয়ে সকালে বাচ্চাদের পড়াতে পারবি না বিকালে টিউশনি করাতে পারবি না তারমানে তুই চাস আমি না খেয়ে মরি?এতদিন নিজে খেটে আমি তোকে খাইয়েছি আর বুড়ো বয়সে এসে তুই আমাকে এই দিন দেখাবি এটা জানলে আমি কত আগেই তোর বাবার সাথেই মরে যেতাম
.
মা প্লিস!থামো
আচ্ছা ঠিক আছে,আমি যাচ্ছি,তুমি যা চাও তাই হবে,ঐ শান্তর পা ধরে বসে থাকবো তাতে যদি তুমি খুশি থাকো তো ভালো
কথা শেষ করে আহানা বোরকা খুলে ওড়না হাতে নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
সন্ধ্যা ৬টা বেজে এসেছে,, শান্ত অফিস রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহানা আসতেছে তেড়ে
.
শান্ত হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আবার কি?তোমার সাথে তো এখন আর কথাই বলতে ইচ্ছে করে না আমার, যাই বলি তা নিয়েই শুরু করে দাও”
.
শুনুন,আমার যথেষ্ট আত্নসম্মান আছে কিন্তু মায়ের ভরণপোষনের জন্য বাধ্য হয়ে আমাকে সেই আপনার অফিসেই আসতে হলো
তাই বলে এই নয় যে আপনি আমাকে যা তা বলে কথা শুনাবেন,ভুলে যাবেন না আমি আপনার কে হই সম্পর্কে
.
তুমি আমার কিছু হও না,তোমার বাবা আমার বাবার বেস্টফ্রেন্ড এই সূত্র ছাড়া আর কিছু না
.
চাকরি দিবেন নাকি চলে গিয়ে মাকে বলতাম তার সো কলড শান্ত আমাকে চাকরি দেয়নি
.
এক শর্তে দিব
.
কি?
.
আমার সব কথা শুনতে হবে
.
আমি এখনই মা কে ফোন করে বলতেছি যে আপনি চাকরি দেওয়ার নাম করে আমাকে কিসব শর্ত দিচ্ছেন
.
তুমি কেন?আমি ফোন করছি
শান্ত ফোন বের করে আহানার মাকে কল করলো
মা ফোন ধরতেই শান্ত বললো”সে আহানাকে জাস্ট বলেছে অফিসের কাজে আহানা যেন তার কথা শুনে কিন্তু না আহানা আবারও রাগ দেখাচ্ছে, চাকরি করবে না বলতেছে
.
আহানা চোখ বড় করে বললো”এসব কি উল্টা পাল্টা বলে আমার মায়ের মাথা খাচ্ছেন আপনি??”
.
মা শান্তকে বললো ফোন আহানাকে দিতে
আহানা ফোনটা নিয়ে কানে ধরতেই মা কেঁদে কেঁদে বললেন”তোর জায়গায় আমার একটা ছেলে থাকলে আজ চাকরি করে আমাকে খাওয়াইতো আর তুই এইটুকু পারতেছিস না আমার জন্য
.
এসব কি বলতেসো তুমি?২বছর ধরে আমি সংসার চালাচ্ছি আর তুমি আমাকে এখন খোঁটা দিচ্ছো?
.
মা লাইন কেটে দিলেন আর কিছু বললেন না
আহানা রেগে শান্তর ফোন ওর গায়ে ছুঁড়ে মারলো
.
আউচ!
বসকে কেউ এমন করে মারে?একদম চাকরি খাবো তোমার
.
বিশ্বাস করেন আপনার মতো ফালতু লোক আমি আর দুটো দেখিনি
.
তো দেখো এখন,সূবর্ণ সুযোগ
.
আহানা রেগে মেগে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়লো
শান্ত ঊষাকে ডেকে বললো আহানাকে অফিসের ফর্মটা দিয়ে যেতে আহানা সেটা ফিল আপ করবে
.
আহানা মাথার চুল টানতেছে আবার গলা ঘষতেছে,
সারাদিনে কিছুই খয়নি সে,পাগলের মত চাকরি খুঁজে গেছে এখন শরীর খারাপ করছে,গলা জ্বলতেছে
.
আহানা ফর্ম হাতে নিয়ে টেবিলে মাথা রেখে পূরন করতেছে
শান্ত দূরে চেয়ার টেনে বসে পায়ের উপর পা তুলে একটা কর্মচারীকে ডেকে বললো একটা বার্গার আর চা আনতে
.
আহানার সামনে এনে কর্মচারী বার্গার আর চা রাখলো
শান্ত দূর থেকে বললো”ভেবো না তোমার প্রতি আমার মায়া আছে,নতুন কর্মচারীদের আমরা এমন করে ওয়েলকাম করি,কিছু খাইয়ে,খালি মুখে যেতে দেই না
.
আহানা ফর্ম একপাশে রেখে গাপুসগুপুস করে পুরো খাবার সাবাড় করে দিয়ে পানি খেয়ে এবার চা খেতে খেতে ফর্ম পূরন করছে
শান্ত মুচকি হেসে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হাসি থামানোর জন্য
আহানা ফর্মটা পূরন করে শান্তর হাতে দিয়ে ব্রু কুঁচকে চলে যাচ্ছে
.
এই মেয়ে!!
.
কি?
.
বস কে আসতে যাইতে সালাম দিবা বুঝছো?
.
সবাই গুড মর্নিং,গুড ইভেনিং,গুড নাইট এসব বলে,আমিও নাহয় ওসব বলবো
.
না তুমি সালাম দিবা আমাকে
.
আপনার……👿
.
ডিল ইজ ডিল,চাকরি দেওয়ার আগে বলেছিলাম আমার সব কথা তোমাকে শুনতে হবে
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে শান্তর সামনে এসে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে অনেক কষ্টে দাঁত কেলালো,তারপর হেসে দিয়ে বললো”স্যারররর,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
চলবে♥