কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:২২

0
830

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:২২
কলমে: ইয়াসমিন

নভেম্বরের শেষ তাই বাংলাদেশে শীতের শুভ সূচনা হয়ে গেছে। সারাদিন মোটামুটি আবহাওয়া গরম থাকলেও সূর্য ডোবার পরে শরীর এমনিতেই শীতল হয়ে আসে। রাতে শিশির পড়ে আর হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে পরিবেশ।যদিও শীতের প্রকোপ বেশ কয়েক বছর তেমন নেই বললেই চলে। মেঘমুক্ত আকাশে এ যেনো চাঁদ তাঁরার মিলনমেলা। কহিনুর আকাশের দিকে তাঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পড়ন্ত বিকালে অচেনা কোনো এক ব্যক্তির নামে নিজেকে কাগজে কলমে লিখে দিয়েছে। চৌধুরী বাড়ির কয়েকটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ওর অংশ নিওয়ার সুযোগ হয়েছিল সেগুলো এমন ছিল না। ওর মতো ভৌতিক বিয়ে হয়তো কারো হয়নি। ঐশ্বর্য ওকে খোচা দিয়ে বলে গেছে কহিনুর বোবা শুনে বরের মুখের হাসি নাকি উধাও হয়ে গিয়েছিল। কহিনুর সেটা নিয়ে ভাবছে না। ওর কাছে এসব তুচ্ছ। ভদ্রলোককে শিক্ষা দেওয়ার যথেষ্ট সময় আছে। পৃথিবীতে যে যতটুকু অন্যায় করবে সেই পরিমাণে শাস্তি পাবে সে,এটা সোজা হিসেব। ওর এসব নিয়ে আবেগ কাজ করে না। একদম আবেগ অনূভুতি শূন্য কহিনুর। তাইতো ওর হাসতে কাঁদতে মানা। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো খিলখিল হাসির শব্দ শুনে। মেয়েটা চলে এসেছে। কহিনুর বিরক্ত হয়ে মুখের চুল গুলো সরিয়ে নিয়ে পাশ ফিরে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো হাসির কারণ কি? মেয়েটা রেলিং ধরে পশ্চিম দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাসি মুখেই বলল,
> কোনো বিষয় নিয়ে আফসোস করোনা নূর। তুমি যা চাইবে যেভাবে চাইবে এক সময় সবটা তোমার মতোই হবে। খানিক সময় অপেক্ষা করো। আশেপাশে অসংখ্য শ*ত্রু তোমার জন্ম নিয়েছে। এই কালো শক্তির অধিকারী শয়তান গুলোকে ধ্বং*স করবে তুমি। কাউকে ক্ষমা করবে না। আমি কে হয়তো তুমি জানো না। আমি চকচক করে জ্বলতে থাকা একখণ্ড পাথরের মধ্যে থাকা শক্তি। যেই রত্নের শক্তির জন্য সবাই মুখিয়ে আছে। বহুকাল ধরে ওরা আমাকে কালো শক্তির আধার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। আমি চাইনা ওদের সঙ্গ দিতে। তোমার মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে চাই। এতদিন বহু লুকোচুরি হয়েছে আর না। তোমার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি বহুকাল ধরে। আমি প্রথমে কিন্তু খারাপ ছিলাম না। তুমি আমার জন্ম রহস্য শুনবে? ভাবতে পারো সামান্য একটা পাথরের জন্মে আবার কি রহস্য থাকবে? পাথর টা আবার একটা মেয়ের রূপে তাও তোমার আদলে। শুনবে তো?
কহিনুর মাথা নাড়িয়ে সাড়া দিলো। ওর জানাটা খুব জরুরী। কহিনুর রত্নটাকে নিয়ে মানুষের এতো এতো আগ্রহ আর এতগুলো ঘটনার সূত্রপাত সেই কাহিনীটা জানা খুব দরকার। মেয়েটা মলিন হাসলো। তারপর চাঁদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করলো,
> আজ থেকে বহুকাল আগের কথা। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচারণা শুরু হয়নি। সুলতান মাহমুদের নেত্রীত্রে ভারতবর্ষ আক্রমণ হয়ে বহু মানুষ মারা গিয়েছিল সেই সময়ের কথা। লুন্ঠন হয়েছিল খুব। দিল্লীর এক ছোট্ট গ্রামে আবদুর রহমান নামের একজন লোক বসবাস করতো। লোকটা ছিল প্রচণ্ড ধর্মানুরাগী সৎ কিন্তু গরীব। সেই গ্রামজুড়ে ছিল সনাতন ধর্মীয় লোকের বসবাস। ভদ্রলোক ভালো মানুষ হওয়ার দরুন সকলের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতেন। ভদ্রলোকের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। জমজ ছয়টা কন্যা ছিল তাঁর ঘরে,টুইন আর কি। যারা রূপে গুণে ছিল অনন্যা। ঘর বন্দী জীবন যাপন করতেন। যৌবনের প্রথমে আবদুর রহমান জীবিকার আশায় সস্ত্রীক দেশ ত্যাগ করেছিলেন বিধায় ওখানে নিজের আত্মীয় স্বজন কেউ ছিল না। একেতো অর্থকষ্ট তারপর আরেটা নতুন ঝামেলা উনার ঘাড়ে এসে বাসা ধাঁধতে শুরু করেছিল। বিবাহ উপযুক্ত মেয়েদের জন্য সুপাত্রের ব্যবস্থা উনি করতে পারলেন না। যেহেতু উনি ইসলাম ধর্মের মানুষ সেহেতু মেয়ের জন্য তো মুসলিম পাত্রের দরকার হবে। মাথায় উনার আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। দিন যায় মাস যায় বড় মেয়েগুলোর বয়স বাড়ে সেই সঙ্গে উনার চিন্তা। একবার ভেবেছিলের নিজ দেশে ফিরে আসবেন কিন্তু ফিরবো বললেই তো আর ফেরা যায়না। ফসলি জমি, গবাদি পশুপাখি আসবাবপত্র কিভাবে বহন করবেন?ভেবে ভেবে উনার রাতের ঘুম যেনো হারাম হয়ে গিয়েছিল। আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশীরা উনাকে সান্ত্বনা দিতেন কিন্তু তাঁরাই বা কি করবেন। আশেপাশের গ্রামে খোঁজ নিয়ে যায় কয়েকটা ঘর পাওয়া গেলো কিন্তু সে নানারকম তালবাহানা। এসব ভেবে একদিন গভীর রাতে উনি একা একা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসলেন। আকাশে অর্ধেক চাঁদের আবছা আলো। চারদিকে ঝিঝিপোকার গগনবিদারী চিৎকার সঙ্গে দূরের পাড়া থেকে আসা কুকুরের ডাক উপেক্ষা করে উনি এক নদীর তীরে দানবাকৃতির বটবৃক্ষের ছায়ায় গিয়ে বসলেন। কাঁধের গামছাটা বিছিয়ে নামাজ আদায় করে নিলেন। নামাজ শেষে হাত উঠিয়ে দীর্ঘ মোনাজাত শুরু করলেন। উনার চোখের পানি টপটপ করে জমিনে পড়তে শুরু করলো। লোকটা নিজের দুঃখ কাউকে বলবে না তাই গভীর রাতে এই নির্জনে এসে একান্তে ইবাদত করা। আল্লাহর অশেষ রহমত নাকি খারাপ কিছুর বদনজর ছিল তাই লোকটার উপরে বর্ষণ হয়েছিল সেই রাতে আমার জানা নেই।কারণ বটবৃক্ষে থাকা এক জ্বীনের নজর পড়ে উনার উপরে। লোকটা মোনাজাত শেষ করে পাশ ফিরতেই চমকে উঠলেন একজন অচেনা অগন্তুককে দেখে। ভয় না পেয়ে আবদুল রহমান লোকটাকে সালাম দিয়ে জিঞ্জাসা করলেন,
> কে আপনি?
লোকটা অমায়িক হাসলো। আবদুর রহমান লোকটার পা হতে মাথা পযর্ন্ত পর্যবেক্ষণ করলেন। লম্বা জুব্বা পরিহিত ছেলেটা বেশ সুদর্শন। নির্জনতা কাটিয়ে উনি বললেন,
> আমি আল্লাহর একজন উপাসক। অনুমতি দিলে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। সবটা শুনেছি আমি। আপনার দুঃখের দিন আল্লাহ সহায় থাকলে আমার অছিলায় সমাপ্তি ঘটতে পারে। দিবেন জনাব আমাকে সেই অনুমতি?
আবদুর রহমানের কি জানি হলো উনি এই অচেনা জ্বীনকে বিশ্বাস করতে শুরু করলেন। তাছাড়া বিপদের দিনে মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই উনার অবস্থাও তাই। জ্বীনটা উনার সঙ্গে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করতেই উনি সঙ্গে নিয়ে আসলেন। ঘরে ছয়টা উপযুক্ত মেয়ে। কেউ যেনো কারো রূপের থেকে কম যায়না। জ্বীন বাবাজীর এদের রূপ দেখে দিশেহারা অবস্থা। কাউকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে নেই এটাই ছিল তাঁর উপযুক্ত উদাহরণ। জ্বীন ক্রমগত মেয়েদের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। মেয়েরা নিয়মিত নামাজ পড়ে সঙ্গে কোরআন পাঠ করে তাই তেমন কায়দায় করতে পারছিল না। তাছাড়া ও আবদুর রহমানকে বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দিয়েছিল। ফলে সংসারের অভাব একেবারে না গেলেও কিছুটা হলেও কষ্ট দূর হয়েছিল। জ্বীনটা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠছিলো। মেয়েদের মধ্যে ঝগড়া তর্কবিতর্কের সৃষ্টি করছিল। আবদুর রহমানের বুঝতে বেশ দেরি হয়ে গেলো যে কেউ কাউকে এমনি এমনি সাহায্য করেনা। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। আগে ছিল অর্থকষ্ট,মেয়েদের বিয়ের চিন্তা কিন্তু এখন মরার উপর খাড়ার ঘা। কি করবেন মাথা কাজ করছিল না। জ্বীনের সঙ্গে বিবাদ শুরু করলেন। ঘর বন্ধ করে নিলেন কবিরাজ দিয়ে। জ্বীন এবার ক্ষেপে গেলো অনুরোধ করতে লাগলো। জ্বীনের এহেন অবস্থা দেখে ওরই ভাই এসে জঘন্য একটা ষড়যন্ত্র করে ফেলল। রহমান সাহেবের অনুপস্থিতিতে হ*ত্যা করে বসলেন উনার আদরের ছয় ছয়টা কন্যা সঙ্গে উনার স্ত্রীকে। উনি বাড়িতে ফিরে খুব করে কাঁদলেন। অভিশাপ দিলেন ওই জ্বিনকে। যেনো আজীবন ওকে ঠকতে হয়। পাথরের পরিণত হয় ওই ঠকবাজটা। তারপর আর কি একজন নিরপরাধ ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে গেলো। জ্বীনের প্রধানের কানে এই খবর পৌঁছাতেই উনি জ্বীনটাকে পাথরে পরিণত করলেন। আবদুর রহমানের ছয় কন্যার পবিত্র আত্মা থেকে উৎপত্তি হলো শক্তি। সেই শক্তি গিয়ে পাথরটাকে গ্রাস করে নিলো। দুটো মিলিয়ে তৈরি হলো মূল্যবান কহিনুর। যেটা কোনো সাধারণ পাথর ছিল না। বিশেষ বিশেষ তিথিতে পাথর হাত বদল হতো। অসহায় মানুষের সাহায্য করতে কিন্তু একসময় একজন কালোজাদুর উপাসকের নজর পড়ে এই পাথরের উপরে। পাথরটাকে নিজেদের বশে এনে প্রচুর পরিণামে অর্থসম্পদ হাছিল করা হয়। সঙ্গে শত্রুদের হত্যা তো আছেই। একসময় পুরো পাথরটা অভিশপ্ত হয়ে গেলো। যা দিতো তার অধিক পরিমাণ কেড়ে নিয়ে লোভী ব্যক্তিকে উচিৎ শিক্ষা দিতে থাকলো। এভাবে পর্যায়ক্রমে সুলতান পরিবারের কাছে আসা। তবে আসার প্রসেস কিন্তু সহজ ছিল না। বেশ কিছু ধাপ ছিল। পাথরের বিনাশ জরুরী। অভিশাপ মুক্তির জন্য একটা মাধ্যম দরকার। আর তুমি হলে সেই মাধ্যমে। জীবন্ত কহিল। আজ এই মূহুর্তে আমি তোমার মধ্যে বিলীন হয়ে যাবো। তুমি নিজের ইচ্ছা শক্তি আর আমার শক্তিকে ব্যবহার করে শত্রুদের শেষ করবে। তোমার পিতামহের লেখা একটা ডাইরি আছে খোঁজ করবে। সেখানে বিস্তারিত আরও লেখা আছে। কহিনুরের শক্তি সুলতান পরিবারের অন্য মেয়েদের মধ্যে না প্রবেশ করে শুধুমাত্র তোমার মধ্যেই কেনো করেছে এমন সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। তবে সাবধান। উপযুক্ত সময়ের আগে নিজের শক্তির প্রকাশ করবে না। খোঁজ পেলে তোমাকে ওরা নিজেদের বশে নিয়ে তোমাকে শে*ষ করে আবারও পাথরটাকে ফিরিয়ে আনতে চাইবে। এমটা হতে দিওনা। আমি তোমার মধ্যেই থাকবো তবে তুমি এটা অনুভব করতে পারবে না। নিজের তীক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়ে কাজ করবে। আমি শুধুমাত্র তোমার শক্তি তাছাড়া কিছুই না।
একদমে মেয়েটা নিজের কথাগুলো বলে থামলো। কহিনুরের চোখেমুখে বিস্ময়। এতো লম্বা কাহিনি এই পাথরের মধ্যে। আরও কতকি কাহিনী আছে কে জানে। রহস্যের গন্ধ। নিজেই তো একটা রহস্য। এটা তো পাথরের রহস্য ছিল এখন নিজের জন্ম রহস্য জানতে হবে। কিভাবে জানবে বুঝতে পারছে না। মায়ের মুখে বহুবার শুনেছে ওর জন্মেরে আগেই সুলতান পরিবার জানতো এই বাড়িতে কহিনুরের জন্ম হবে। প্রশ্ন জাগলো সেটা কে ভবিষ্যতবানী করেছিল? ওর ভাবনার সমাপ্তি ঘটলো যখন চোখের সামনে মেয়েটাকে চকচকে একটা পাথরে পরিণত হতে দেখে। পাথরটা ধীরগতিতে কহিনুরের মধ্যে মিশে গেলো। তখনই ওর শরীরের মধ্যে ঝাকি দিয়ে উঠলো। চোখের পাপড়ি নড়ে উঠলো সঙ্গে বুকের মধ্যে ডিপডিপ আওয়াজ। চার‍দিকে চক্কর দিয়ে উঠলো। মাথা ঘুরছে। জামসেদ ছাঁদে উঠেছিলো সিগারেট খেতে হঠাৎ কহিনুরকে মাথা ধরে বসতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ধরে ফেলল। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে ওকে কোলে তুলে চিৎকার করতে করতে ছাদ থেকে নেমে আসলো। ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। মেয়েটা একা একা ছাঁদে অথচ অধরা আর জুনায়েদ ঘরে খিল মেরে বসে আছে। বউ দেশের লোকদের নেই শুধুমাত্র সুলতান জুবায়ের ফারুকীর একার আছে। জামসেদ বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে কহিনুরকে পালঙ্কে রেখে হাফ ছাড়লো। ততক্ষণে কাজের মেয়েগুলো দৌড়ে এসেছে।। ডাক্তারকে ফোন দেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পরে জুবায়ের আর অধরা এসে হাজির হলো। জামসেদ ভ্রু কুচকে আড়চোখে দুজনকে দেখে ফোড়ন কাঁটলো,
> মেয়ের বাসর বাতিল করে শশুর শাশুড়ি মিলে বাসর হচ্ছে। দিনকাল যে কি আসলো। কতকিছু আর দেখতে হবে কে জানে।
জুবায়ের মেয়ের মাথায় কাছে বসে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
> আঙুর ফল টক।
ওদের মেয়েলী টাইপ ঝগড়া দেখে অধরা বিরক্ত হলো। কহিনুরের শরীর প্রচণ্ড উত্তাপ। জ্বর উঠেছে। দাদু দুজনকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন। ডাক্তার আসল তবুও জ্বর কমার লক্ষণ দেখা গেলো না। অধরার কান্না থামছে না। সব দোষ দিচ্ছে এই অভিশপ্ত বিয়েটাকে। অন্যদিকে দাদুর আরেক চিন্তা। ডাইরীতে লেখা কথার সঙ্গে কহিনুরের এই হঠাৎ অদ্ভুত রকমের জ্বরটা ঠিক মিলছে না। কি হবে এখন?
*******
সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের একটা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে পাথর। রাতের ফ্লাইটে জার্মানি এসেছে সেই থেকে শামীর তালুকদারের সঙ্গে ওর কথা বলা বন্ধ। নিজের পিতার পরিচয় জানতে প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মেছে মনের মধ্যে। লোকটা ওর মাকে ফেলে রেখে কেনো পালিয়েছিল জানতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু তেমন কোনো ক্লু নেই। কতদিনের ঘটনা। নানু বলতে পারতো কিন্তু উনি বেঁচে নেই। মন খারাপ সঙ্গে অপরাধবোধ। বিয়ে করে একটা মেয়েকে এভাবে ফেলে আসা উচিত হলো কি বুঝতে পারছে না। মেয়েটার কাছে অর্থ আছে কখনও অভাবে পড়বে না তবুও স্বামী হিসেবে ওর দায়িত্ব আছে সেটার কি হবে? রাগ ক্রমশ পানি হয়ে আসছে। চলে আসার আগে অন্তত একবার দেখে আসা উচিৎ ছিল। কেনো যে এমন বোকামি করতে গেলো। না না একদম উচিত হয়নি। মেয়েটা কি ভাবলো ওকে। নিশ্চয়ই ওকে স্বার্থপর আর খারাপ ভেবেছে। কিন্তু এখানে ওর কিবা করার ছিল। হঠাৎ করেই কহিনুরের সঙ্গে দেখা করতে ওর মন উতলা হলো। মেয়েটা কেমন হতে পারে আনমনে ভাবলো। মনের মধ্যে এলোমেলো একটা মুখ ভেসে উঠলো। উন্মুক্ত কেশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এক রমনীর বসবাস ওর হৃদয় কুঞ্জে। অজান্তেই ওষ্ঠে হাসি আসলো ঠিক তখনই আচমকা পেছন থেকে একটা অদৃশ্য হাত ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। এই সুউচ্চ ভবন থেকে পড়লে ওর মৃ *ত্যু নিশ্চিত। পাথরের শরীর কাঁপছে। বাতাসের সঙ্গে মনে হলো ও উড়ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটির নাগাল পেয়ে যাবে আর শক্ত রাস্তার উপরে মুখ থুবড়ে পড়ে মুখ থেতলে যাব। কি হবে এখন! মৃ*ত্যু নাকি মুক্তি?
*******
নির্জন সমুদ্র পৃষ্টে চকচকে একটা বস্তুর দিকে নজর আটকে গেলো আধারের। যতই রাত হোক আধারের দৃষ্টি শক্তি প্রখর। অনায়াসে চোখে দেখে সবটা। গত কয়েকদিন এখানে নিয়ম করে আসছে। অন্য দিনের তুলনায় আজকের দিনটা ওকে অস্থির করে তুলেছে। কেনো এমন হচ্ছে জানা এই। শরীর মন নিজের বশে নেই। এই ভালো তো এই খারাপ। সবটা ওই মেয়েটার জন্য। কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে আধার সেটা দেখেই তবে ছাড়বে। দরকার হলে মেয়েটাকে পি*চ**পিচ করে কেঁ*টে দেখবে। শুধুমাত্র রূপের যাদুতে নাকি অন্য কিছু আছে ওই মেয়ের মধ্য সেই রহস্য ভেদ করবে। তবে দম ওর। কথাটা ভেবে এ পাথরটা তুলে নিলো। দামি একটা লকেট। আধার পাথরে চাপ দিয়ে ওটা সরিয়ে ভেতরটা খুলে ফেলল। সেখানে ইংরেজিতে ছোট্ট করে লেখা” কহিনুর” আধার লকেটটা মুঠোয় নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে ওর ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। হৃদয় শান্ত হলো। বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো,
> কিউটি দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। উতলা করেছো শাস্তির জন্য তৈরি হয়ে যাও।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here