নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৩২

0
1038

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩২

আইরাতের চাচা-চাচি বাড়ি এসে পরেছেন। তবে আইরাতের চাচি কিছুটা মনমরা, হয়তো তার মা অসুস্থ তার জন্যই। আর কিছুটা রাগ করেও আছে আইরাতের ওপর। ওইতো ওই অন্তুর জন্যই। কলি ঠিক বুঝতে পেরেছে যে তারা এমনি এমনি না বলে দেয় নি। আইরাতের ওপর সেইদিন তার সকাল থেকেই সন্দেহ ছিলো। এই মেয়ে নিশ্চিত উল্টা-পাল্টা কিছু করেছে যার ফলে এমন হয়েছে।

সকাল বেলা হাতে একগাদা ফাইল নিয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দ্রুত নিচে নামছিলো আইরাত। তখনই তার চাচির কড়া ডাকে থেমে পরে।

কলি;; আইরাত দাড়া…।

আইরাত;; হ্যাঁ বলো।

কলি;; অন্তুর বাবা ফোন করেছিলো। ওরা না বলে দিয়েছে কেন বল তো?

আইরাত;; ওহহ ওই চাইন্দা বেডা।

আইরাত সাথে সাথে দাত দিয়ে জিভ কাটে।

আইরাত;; আব..মানে অন্তুর বাবা!

কলি;; হ্যাঁ।

আইরাত;; আমি কি করে জানবো যে কেন না করেছে। হয়তো আমার মধ্যে কোন কমতি ছিলো তাই।

কলি;; তেমন তো আমি তোর মাঝে কিছু দেখি না। এই সত্যি করে বল তো তুই কিছু করেছিস কি 😠?

আইরাত;; আরে নাহহহহহহ! কি যে বলো না আমি কেন কি করতে যাবো। আমি কিছু কি করতে পারি বলো! শুনো এতো মাথা ঘামানো বন্ধ করো বুঝলে। আর কাউকে কারো পছন্দ না ই হতে পারে এতে এতো প্যারা নেওয়ার কি আছে। আমি গেলাম থাকো তুমি।

কলি কে আর কিছু বলার সুযোগ টুকু না দিয়েই আইরাত জলদি করে বের হয়ে এসে পরে। আরেকটু সেখানে থাকলে তার চাচি তার মাথা-কাল্লা সব ভেজে খেয়ে ফেলবে।


অন্যদিকে আজ সকাল থেকেই আব্রাহামের মাথা প্রচুর গরম। ইন ফ্যাক্ট কাল রাত থেকেই। রাগ সামলাতে পারে না আব্রাহাম। খুব রাগ লাগছে। এখন সে অফিসেই। তার সাথে অয়ন আর রাশেদও দাঁড়িয়ে আছে। পুরো কেবিনে কাচের ছোট-বড়ো সব টুকরো কেমন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রাগ গুলো এদের ওপরই ঝাড়া হয়েছে।

আব্রাহাম;; লাইক সিরিয়াসলি!! গতকাল যে কটা গাড়ি USA এর জন্য গিয়েছে সেগুলোতে ড্রাগস ছিলো?

রাশেদ;; স্যার সেখানের স্টাফ রা তো তাই বলছিলো।

আব্রাহাম;; এখন সেগুলো কোথায়?

রাশেদ;; স্যার সেগুলো USA-এর যে পুলিশ অফিসার রা ছিলো তাদের আন্ডারে৷

অয়ন;; হ্যাঁ আর ওরা জানে যে এগুলো তুই করবি না।

আব্রাহাম;; আরে ভাই মাফিয়া রা যতোই ভালো হোক না কেন মানুষ তাদের ভালো চোখে কখনোই দেখে না আর দেখবেও না কথা টা মাথায় রাখিস। ওরা আমার এমন কেউ লাগে না যে আমার ওপর তাদের এত্তো বিশ্বাস-ভরসা থাকবে। যাই হোক আমার আমাকে নিয়ে কোন চিন্তাই নেই কারণ কেউ মার একটা চুল অব্দি পাকা করতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে এটা যে ড্রাগস গুলো এলো কি করে?!

অয়ন;; এই যে গাড়ির পেপাস গুলো এগুলো চেক করতে পারিস।

আব্রাহাম পেপাস গুলো নিয়ে নেয়। সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে। কিন্তু সেখানে কোন কিছুই পাওয়া যায় নি।

রাশেদ;; স্যার আমার মনে হয় না যে যেখান থেকে গাড়ি গুলো কেনা হয়েছে সেখানের কেউ এমন করবে। কারণ অবশ্যই সবার কাছে সবার জীবন অনেক প্রিয়।

আব্রাহাম;; ন্যাহ, সেখান থেকে কেউ কিছু করবেও না। চান্স নেই। ভেতরের কেউই করেছে সবকিছু।

অয়ন;; কি বলিস?!

আব্রাহাম;; অয়ন একটা প্রবাদবাক্য আছে ” ঘরের মুরগি ডাল বরাবর”” অর্থাৎ আমি এখানে এদের যতোই বেশি সেলারি দিয়ে কাজ করাই না কেন এদের কাছে তা কমই হবে। আমি যতোই টাকা দেই না কেন মানে আমি মুরগি দিলেও তাদের কাছে তা ডালই লাগবে। এর জন্য তাদের আরো টাকা দরকার তাই এগুলো ইলিগ্যাল কাজ করে বসে। আর জানিস তো ক্ষতি সবসময় আমাদের আশে পাশের মানুষ রাই করে বেশি দূরে যেতে হয় না।

রাশেদ;; তাহলে স্যার এখন?

আব্রাহাম;; গাড়ি গুলো গত কয়েকদিন যাবৎ কে দেখা শোনা করেছে, কে গাড়ির নেইম প্লেট গুলো ঠিই ঠাক করেছে, গাড়ি গুলো বাইরে কে চালান করেছে সব ডিটেইলস চাই আমার। মনে রেখো ৬ টা গাড়ি আর সবগুলোতেই ড্রাগস এটা কিন্তু কম বড়ো কথা না।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

রাশেদ আর অয়ন কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহামের মাথা পুরো হ্যাং মেরে আছে। সে গিয়ে কাচের দেওয়ালে এক হাত রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার কিছুক্ষন পর আব্রাহাম খেয়াল করলো একটা মাঝবয়েসী লোক অফিসের ভেতরে ঢুকলো। আব্রাহাম একে ভালো করে চিনে না৷ কেমন যেন খটকা লাগলো তার কাছে। তখনই বাইরে কেবিনে নক…

রাশেদ;; স্যার আসবো?

আব্রাহাম;; কাম ইন।

রাশেদ;; স্যার এই দেখুন এখানে প্রত্যেক টা গাড়ির রেট বেশি নেওয়া হয়েছে। (হাতে কতো গুলো ফাইল এনে)

আব্রাহাম;; হুয়াট ডু ইউ মিন?

রাশেদ;; মানে প্রতিটি গাড়ির দাম তার আসল দামের থেকে সাত লাক্ষ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ নেওয়া তো হবেই গাড়িতে ড্রাগস যে ছিলো।

রাশেদ আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলো তখনই আব্রাহাম খেয়াল করে যে সেই অচেনা লোকটি ৪ নাম্বার কেবিনের দিকে গেলো।

রাশেদ;; তাহলে স্যার…

আব্রাহাম;; লিসেন টু মি,, তুমি এখন বাইরে যাও আর অয়ন কে আমার কেবিনে পাঠাও। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবে এই ড্রাগসের ব্যাপার টা যেন কোন ভাবেই লিগ না হয় ওকে?

রাশেদ;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; আর এই ৪ নাম্বার কেবিনে কে থাকে?

রাশেদ;; স্যার জাফর নামে একজন এমপ্লয়ি থাকে। জাফর আহমেদ। ওহহ হ্যাঁ আইরাত ম্যামের সাথে টুকটাক কাজ করে মানে এই ধরুন ফাইল দেখা বা হিসাব-নিকাশ করা এইতো।

আব্রাহাম;; হুমম বুঝলাম।

রাশেদ সেখান থেকে চলে যার তার কিছুক্ষন পর অয়ন আসে।

অয়ন;; কিরে ডেকেছিস?

আব্রাহাম;; শোন তোর তো আজ কোন কাজ নেই তাই না তাহলে আজ আমার অফিসেই থেকে যা।

অয়ন;; কিন্তু আমার খিদে পেয়েছে তো।

আব্রাহাম;; খালাআম্মা তোকে কি খেয়ে পেটে রেখেছিলো রে। শালা পেটুক। আসলে তোর জন্য কাল দিয়াই ঠিক ছিলো একদম পারফেক্ট।

অয়ন;; এই ওই বজ্জাত মেয়ের নাম নিবি না একদম।

আব্রাহাম;; শোন আমি কেবিনের বাইরে যাচ্ছি কিন্তু তুই এখানে থাক বুঝেছিস। মানে সবাই যাতে ভাবে যে আমি এখানেই আছি ওকে।

অয়ন;; তার মানে আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী পার্ট ২ 😃😃।

আব্রাহাম;; কিছুক্ষনের জন্য তাই ধরে নে।

অয়ন;; কিন্তু তুই যাচ্ছিস কোথায়?

আব্রাহাম;; ধরে নে কাহিনির মূল সূত্র খুঁজে পেয়েছি।

এই বলেই আব্রাহাম বের হয়ে পরে। সোজা চার নাম্বার কেবিনের ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে জাফর বসে আছে চেয়ারে। জাফর দেখে আব্রাহাম কে। কিন্তু চেয়ার থেকে উঠে দাড়াচ্ছে না। আব্রাহাম কিছুটা অবাকই হয়। মানে অফিসের বস কে দেখে সে দাড়াচ্ছে না। আব্রাহাম ভারি ভারি কিছু কদম ফেলে জাফরের দিকে এগিয়ে যায়। এবার আব্রাহাম ভালো ভাবে খেয়াল করে যে জাফর আসলে ড্রাগ নিয়েছে৷ আর ফলে যে তার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু নেই তার মাঝে। তার সামনে কে আছে কে নেই তার খেয়াল নেই। কেমন এক মাতলামো মাতলামো ভাব, চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে। চোখের পলক গুলো আধো আধো করে ফেলছে৷

আব্রাহামের কাছে এখন যেন সব পানির মতো পরিষ্কার। তাকে আর কিছু বলতেও হলো না কারণ প্রমাণ তার নিজের চোখের সামনে। গাড়িতে ড্রাগস গুলো কে ভরেছে বা কে চালান করেছে তা সুস্পষ্ট হয়ে গেলো। এখন প্রশ্ন একটাই যে যাই কিছু করেছে তা এই জাফর একাই করেছে নাকি আরো অন্য কারো হাত আছে এর পেছনে?। আব্রাহাম টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। ট্রবিলের ওপর এক গ্লাস পানি ছিলো তা নিয়ে আব্রাহাম সোজা জাফরের মুখের ওপর মেরে দেয়। জাফর কিছুটা ধরফরিয়ে ওঠে৷ চোখ গুলো খুব শক্ত ভাবে পিটপিট করছে। হাত দিয়ে মুখ টা কোন রকমে মুছে সামনে তাকায়। এখনো ঠিক ভাবে দেখতে পারছে না সে,, সব কেমন ঘোলাঘোলা দেখাচ্ছে। তবে যতটুকু অবয়ব দেখতে পেরেছে তাতে এটা সে বুঝে গেছে যে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি আব্রাহাম। জাফর ঢুলু ঢুলু পায়ে উঠে দাঁড়ায়।

জাফর;; আব্রাহাম স স স্যার আ আপনি!?

আব্রাহামের রাগ এবার সপ্তম আকাশে। সে জাফরের শার্টের কলার খামছে ধরে নিজের সামনে নিয়ে আসে। রাগে হাত-পা সব শক্ত হয়ে এসেছে আব্রাহামের। দাত গুলো কটমট করছে।


ওদিকে এই তীব্র গরমের মাঝে এত্তো ঝুট-ঝামেলা পেরিয়ে অফিসে এসেছে আইরাত। এসেই হাপাচ্ছে। পিয়ন কে বলে একদম ঠান্ডা একটা কোকাকোলা আনতে বলে। তখনই রোদেলা আসে…

রোদেলা;; কি এই অবস্থা কেন?

আইরাত;; রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিলো। তার ওপর গরমে আমি আলু সিদ্ধ রে ভাই।

রোদেলা;; হুম হুম দেখা যাচ্ছে। নাকের ডগায় ঘাম জমেছে তার মানে জামাই অনেক আদর করবে।

আইরাত;; ধুত্তুরি এগুলা হুদ্দাই কথা। তুমি বিশ্বাস করো?!

রোদেলা;; আরে না মজা করলাম।

তখনই আইরাতের কোকাকোলা এলো।

আইরাত;; এই খাবা?

রোদেলা;; না খাও।

আইরাত;; হুমম আমি যাই স্যারের কেবিনে।

রোদেলা;; আচ্ছা।

আইরাত;; ওহহ দাড়াও দাড়াও।

রোদেলা;; হ্যাঁ

আইরাত;; ওই যে ওই কোথায়?

রোদেলা;; কে 🙄?

আইরাত;; আরে ব্যাটার নাম টা কি যেন। মির মির হ্যাঁ মিরজাফর।

রোদেলা;; জাফর 😑

আইরাত;; আরে নাম খেয়াল থাকে না তাই মিরজাফর বলি এতে মনে থাকে৷

রোদেলা;; হ্যাঁ বুঝলাম এখন কি হয়েছে?

আইরাত;; আরে উনার কাছ থেকে ফাইল নেবার আছে আমার। ফাইল গুলো দিয়েছিলাম উনাকে চেক করবার জন্য৷ আজ নেওয়ার কথা। তাই নিতে হবে।

রোদেলা;; হ্যাঁ কেবিনেই আছে একটু আগেই দেখেছি কেবিনে যেতে।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা তাহলে আমি আগে উনার কাছ থেকে ফাইল গুলো আনি।

রোদেলা;; আচ্ছা।

আইরাত জাফরের কেবিনের দিকে যেতে ধরলো। গিয়েই দেখে কেবিনের দরজা খোলা। তৎক্ষনাৎ ভেতর থেকে ভাংচুরের শব্দ আসে। যেই না আইরাত ভেতরে পা রাখতে যাবে তখনই একটা রক্তমাখা কাচের টুকরো তার পায়ের সামনে আসে। এটা দেখেই তো আইরাত বেশ ভরকে যায়। সে একদম ভেতরে চলে যায় আর যেতেই যা দেখে তাতে আইরাতের হাত গুলো আপনা আপনিই তার মুখে চলে যায়।

আব্রাহাম এক হাতে জাফরের শার্টের কলার খামছে ধরে আছে আরেক হাতে রয়েছে কাচের একটা টুকরো। সেটা দিয়েই আব্রাহাম জাফরের মুখ বরাবর দেয় একটা আচড় কেটে। তাতে গালের মাংস সম্পূর্ণ কেটে অর্ধের কাচের সাথে এসে পরে আর অর্ধেক মুখের পাশেই ঝুলে থাকে। গলগল করে রক্ত ঝড়ছে। আব্রাহাম হাতে থাকা কাচটা ঢিল মারে, তারপর তার জেকেটের ভেতর থেকে একটা পকেট নাইফ বের করে। কোন কথা না বলেই আব্রাহাম সেই পকেট নাইফ টা দিয়ে সোজা জাফরের গলার শ্বাসনালি বরাবর এক ঘা বসিয়ে দেয়। রক্তে জাফরের শার্ট ভিজে গেছে। মূহুর্তেই ফ্লোরে পরে গেলো জাফর। গলা কাটা মুরগির মতো কেমন ছটফট করছে। এতোক্ষণে গিয়ে আব্রাহামের রাগ যেন কিছুটা কমেছে। হাত থেকে নাইফ টা জাফরের পাশেই ফেলেই দেয়। আইরাত এগুলো দেখে ভয়ে দুই কদম পেছনে সরে যায়। নিজের পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ কানে আসতেই আব্রাহাম ঘুড়ে তাকায়। দেখে আইরাত মুখে হাত দিয়ে চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। তখন জাফরের কেবিনে রাশেদ সহ আর ৩-৪ জন গার্ড প্রবেশ করে। তারা এসে তাদের কাজে লেগে পরে বলতে হয় না। কারণ আব্রাহামের সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে। রাশেদ আর গার্ড গুলো তাদের কাজ করতে থাকলে আব্রাহাম দ্রুত পা ফেলে আইরাতের হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে যেতে থাকে। যেখানে আব্রাহাম হাটছে সেখানে আইরাতকে কিছুটা দৌড়িয়ে যেতে হচ্ছে। অয়ন নিজের ফোন ঘাটছিলো আব্রাহামের কেবিনে বসে বসে৷ আব্রাহামের এভাবে ঠাস করে কেবিনে ঢোকাতে অয়ন সামনে তাকায়। সিচুয়েশন বুঝতে পেরে অয়ন কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আইরাতের এখন ভয়ে অন্তর-আত্না সব কাপাকাপি করছে। রাগে আব্রাহামের হাতের রগ গুলো কেমন ভেসে উঠেছে। আর যে শক্ত ভাবে আইরাতের হাত ধরে রেখেছে তাতে হাত আলগা হয়ে খুলে যাবার উপক্রম। আব্রাহাম একটা চেয়ার এনে পা দিয়ে লাথি দিয়ে সামনে রাখে তারপর আইরাতের হাত ধরে টেনে ধপ করে তাতে বসিয়ে দেয়। আইরাত মাথা একদম নিচু করে বসে আছে। আব্রাহামও তার সামনে একটা চেয়ারে বসে। এক হাত হাটুতে রেখে আরেক হাত কপালে ঠেকিয়ে রেখে দিয়েছে। কেউ কিছু বলছে না সব চুপ। এই চুপ থাকার মাঝেই হঠাৎ আব্রাহাম ধমকের সুরে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ?

আইরাত চমকে ওঠে৷

আব্রাহাম;; না বলো আমাকে প্রব্লেম কি তোমার?

আইরাত;;

আব্রাহাম;; যেখানে নয় সেখানে এসে পরো। আমি, না মানে আমি যখনই এগুলো করি তখনই কি তোমার আসতে হয়। এরপরে আসতে পারো না!

আইরাত;;

আব্রাহাম;; আর জাফরের কেবিনে কি করো তুমি? তোমাকে না বলছি সবার আগে আমার কেবিনে যাবা। ওই হারামির কেবিনে কি?

আইরাত;; কিছু ফা ফা ফাইল ছ ছিলো।

আব্রাহাম;; অন্য স্টাফ কে বলে তা আনা যেতো না। সবটা সময়, সবটা সময় যখনই আমি এমন কোন কাজ করবো গিয়ে দেখবো সেখানেই তুমি হাজির।

এবার আইরাতের রাগ হতে থাকে।

আইরাত;; তাহলে আমাকে বলে দিন যে কখন কখন আপনি এইসব খুন-খারাবি করবেন। তাহলে তখন আমি আপনার কেন আপনার এই অফিসের ধারে কাছেও থাকবো না। এতে আপনারও সুবিধে আর আমারও।

আব্রাহাম;; ফাজলামি করো!?

আইরাত;; আমার এতো শখ নেই। আব্রাহাম আপনি কবে নরমাল হবেন বলুন তো।

আব্রাহাম;; Hay, what do you mean by that am i abnormal 😡?!

আইরাত;; না তা বলি নি আমি। যে এত্তো বেশি মাস্টারমাইন্ড সে এবনরমাল কীভাবে হয়!!

আব্রাহাম;; জাফর কে যে মারলাম তাই দেখলে কেন মারলাম তা দেখলে না।

আইরাত;; যাই ই করুক ও আপনি পুলিশে দিতেন। খুন করা কোন সমস্যার সমাধান না। আপনি বুঝেন না কেন?

আব্রাহাম;; আর রাগ কার ওপর ঝারতাম তোমার ওপর?

আইরাত;; আপনি এই সব কি কখনোই বন্ধ করবেন না?

আব্রাহাম;; না। এবার মিস বকবক প্লিজ চুপ করো।

আইরাতের এত্তো রাগ লাগছে এখন। কিন্তু আইরাত খেয়াল করে যে আব্রাহামের হাতের তালুতে বেশ কেটে গেছে হয়তো কাচ দিয়েই। আইরাত রাগের বসে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে পরে। তারপর একটা ফার্স্ট এয়িড বক্স নিয়ে এসে আবার আব্রাহামের কাছে গিয়ে বসে। আব্রাহামের হাত টা ধরে দেয় এক টান। নিজের কোলের ওপর হাত টা রেখে দিয়ে তুলো তে সেভলন লাগিয়ে রক্ত ক্লিন করে দিতে থাকে। আইরাত রাগের চোটে জোরে জোরে ক্লিন করছে আর সেভলন বেশি করে দিচ্ছে যেন আব্রাহামের হাতে বেশ জ্বালা-পোড়া করে। কিন্তু আব্রাহামের কোন হাবভাব না দেখে আইরাত কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম এক ধ্যানে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। হাত যে কেটেছে বা তাতে এত্তো ক্ষার যুক্ত মেডিসিন যে দিচ্ছে তাতে তার কোন খেয়ালই নেই। আইরাতের এখন মন চাইছে নিজের চুলগুলো নিজে ছিড়ুক। যাই হোক আব্রাহামের হাত ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো সে। আব্রাহাম বুঝতে পারছে যে তার জন্য আইরাতের মনে এক দিকে রাগও হচ্ছে আরেক দিকে চিন্তাও হচ্ছে। এর জন্য সে রাগের বশে তার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আইরাতের এমন কনফিউজড ওয়ালা চেহারা দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে অগোচরেই। ব্যান্ডেজ শেষ হলে আইরাত ফার্স্ট এয়িড বক্স টা ঠাস করে টেবিলের ওপরে রেখে আব্রাহামের দিকে একটা ছোটখাটো রাগি লুক দিয়ে এসে পরে৷ আইরাতের যেতেই আব্রাহাম কিছুটা শব্দ করেই হেসে দেয়। তারপর ফোন করে কাকে যেন কি অর্ডার দেয় আব্রাহাম।


আইরাতের চাচি বাসায় কাজ করছিলো হঠাৎ করে বাড়ির কলিংবেলে চাপ পরে। কলি নিজের কপালের ঘাম গুলো মুছে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দিতেই দেখে একজন ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ হাইফাই ই রয়েছে। তবে তাকে চিনে না কলি আর মনে হয় যে এর আগে তাকে কখনো দেখেছিলো। ব্যাক্তিটি কলিকে সালাম দিলে কলি সালামের প্রতি উত্তর নেয়।





চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here