#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
ফোনের অপরপাশ থেকে আদিরার কাছ থেকে সকল কিছু শুনে মারসাদ স্থিরচিত্তে বলল,
–পনেরো মিনিটের মধ্যে মেসের বাহিরে আসবে। এখন রাত সোয়া নয়টার কাছাকাছি বাজে। সাড়ে নয়টার মধ্যে নিচে নামবে।
মারসাদকে প্রতিউত্তরে আদিরা কিছু বলবে তার আগেই মারসাদ কল ডিসকানেক্ট করে দিয়েছে। আদিরা হতাশ হয়ে নিজে নিজেই বলে,
–এই লোকটা কখন কী বলে কী করে কিছু বোঝা যায় না। এই রাতের বেলা দেখা করে সে কী করবে? এখন তার ইচ্ছে হয়েছে দেখা করবে নয়তো সে আবার রেগে যাবে। আচ্ছা সে এই বিষয়ে জানলো কিভাবে? মা কী আহাদকে দিয়ে তাকেও ফোন করিয়েছে? ধ্যাত সে না বললে আমি জানবো কী করে! এখন দেলোয়ারের সাথে কী সে দা*ঙ্গা করবে! দেলোয়ার যদি তার খারাপ কিছু করে বসে! স্টপ আদিরা। এতক্ষণ টেনশনে থাকলেও পড়ার কারণে চিন্তা কিছুটা কম ছিল। কিন্তু এখন এই পনেরো মিনিট আমার কাছে অনেক দীর্ঘ একটা ধৈর্য পরীক্ষা।
পনেরো মিনিট পর আদিরা মেসের সামনের রাস্তা থেকে একটু দূরে একা দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে একটা রিকশা এসে থামল যেটাতে আহনাফ, রবিন, রাহিন ও মৃদুল। আদিরা ওদের আসার কারণ বুঝতে না পেরে কনফিউজড হয়ে তাকিয়ে আছে। আহনাফ এসে আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,
–মারসাদ কই?
আদিরা অবাক হয়ে হড়বড়িয়ে জবাব দেয়,
–আমি কিভাবে জানব আপনার বন্ধু কই! আপনাদেরই না জানার কথা। সে আমাকে এখানে আসতে বলেছে আমি এসেছি। আপনাদেরও কী আসতে বলেছে? কী মুশকিল! নিজে সবাইকে আসতে বলে নিজেই লাপাত্তা। আচ্ছা সে সবাইকে আসতে কেনো বলল? আপনারা কী সবাই মিলে ফা*ইটিং ট্রেনিং করবেন? দেলোয়ারের সাথে তো মনে হয় তার লোকজনও আসবে। আপনারা মাত্র পাঁচজন। কীভাবে কী করবেন? আমার মনে হয় কী….
আহনাফ, মৃদুল, রাহিন ও রবিন হা করে আদিরার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আদিরা অনবরত দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর কথাগুলো বলে চলেছে। আহনাফ আদিরাকে থামিয়ে বলে,
–রিল্যাক্স! কী হয়েছে তোমার? এতো তাড়াহুড়া করে নিজের মতো কতোকিছু বলে যাচ্ছ। আমরা শুধু এটুকু জানি দেলোয়ার তোমার খোঁজ পেয়ে গেছে আর সে আসছে। মারসাদ এইজন্য আমাদের আসতে বলেছে। আর তুমি কীনা অনেককিছু ভেবে বসে আছো!
আদিরা অস্থীরচিত্তে বলে,
–জানিনা আমি কিসব ভাবছি। আপনার বন্ধু ফোন করে বলল, আমার কী হয়েছে? কীসের বিপদ? এসব। উনি জানলো কী করে? আমি ভেবেছিলাম উনি হোস্টেলে ফেরার পর ফোন করলে আমি তাকে সবটা জানাবো। কিন্তু সে তো নিজেই অনেকটা জেনে বসে আছে।
মারসাদ এসে হাজির হয়। এরপর মারসাদই বলে,
–বলেছে কেউ একজন। উৎস শুরুর স্থান থেকেই। এখন চলো বিয়ে করবো!
আচমকা বিয়ের কথা শুনে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে যায়। মারসাদ সকলকে চুপ করে তার দিকে নির্নিমিখ তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–কী? আমাকে কী ভূ*তের মতো লাগছে? এমন করে সবাই চেয়ে আছিস কেনো?
রাহিন মারসাদের কাছে এগিয়ে এসে বলে,
–কী বললি আবার বল।
মারসাদ রাহিনের কানের কাছে একটা চা*টা মে*রে বলল,
–আমি এখন আদিরাকে বিয়ে করবো। শুনেছিস? নাকি আরেকটা দিলে শুনবি?
আদিরা আচমকা বলে উঠে,
–বিয়ে! বিয়ে কেনো?
মারসাদ তীক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে বলে,
–আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। কোনো সমস্যা?
আদিরা থতমত খেয়ে যায় অতঃপর বলে,
–সমস্যা! হ্যাঁ সমস্যা তো। আমি এখন বিয়ে করতে পারব না। বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করবো না।
মারসাদ দাঁতে দাঁত চিপে বলে,
–তো দেলোয়ারকে বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে? তাহলে আগেরবারই বিয়ে করতে। তখন কান্নাকাটি করে চলে এসেছ কেনো?
আদিরা বলে,
–আমি কখন বললাম আমি দেলোয়ারকে বিয়ে করবো? দেখেন, বিয়ের জন্যও একটা মানসিক প্রস্তুতি আছে তো। আর আমার বাবা-মা যদি রাজি না থাকে?
মারসাদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–তোমার বাবা-মায়ের অনুমতি নেওয়া আমার। তাই চুপচাপ আমার সাথে চলো।
আদিরা অবাক হয়ে বলে,
–কখন? আর তারা আমাকে তো বলে নাই।
মারসাদ ইতোমধ্যে আদিরার হাত ধরে রিকশার কাছে নিয়ে গেলো। আহনাফদেরও সাথে আসতে বলে রিকশা কাজী অফিসের দিকে যাচ্ছে। আদিরা রিকশায় উঠে কিছু বলতে নিবে তার আগেই মারসাদ বলে,
–একদম চুপ করে থাকবে। তোমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে তোমাকে নিয়ে আসার সময়ই অনুমতি নিয়ে এসেছি। এখন একটা কথাও বলবে না। সব পরে তোমাকে বুঝানো যাবে।
কাজী অফিসে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মারসাদ ও আদিরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আদিরার এখনও ঘোর কা*টছে না। কবুল বলার সময়ও যখন চুপ করে ছিল তখন মারসাদের ধা*ক্কানোতে হড়বড়িয়ে বলে ফেলেছিল। মারসাদ আহনাফদের সাথে কথা বলছে। আগামীকাল যখন দেলোয়ার আসবে তখন কী করবে? আর খবরটা যেহেতু রাত্রি জানিয়েছে তারমানে সাগরদের দলের হাত আছে।
মারসাদ আদিরার কাছে এসে বলে,
–তুমি আজ রাতে আহনাফের বাড়িতে থাকবে। আহনাফের বাড়িতে আহনাফের মা-বাবা, ভাই-ভাবি, ভাতিজি ও একটা ছোটো বোন আছে। ওদের বাড়িতে যেতে ঘণ্টাখানেক লাগবে কিন্তু ওখানে তুমি সেফ থাকবে। যে বা যারা তোমার খোঁজ দেলোয়ারকে দিয়েছে, তারা তোমার মেসের ঠিকানাও নিশ্চয়ই জানে। তাই আগামী দুইদিন আহনাফদের বাড়িতেই থাকবে। আহনাফ ওর মায়ের সাথে কথা বলছে এই ব্যাপারে। কাল সকালে মাহিকে বলব, তোমার দরকারি জিনিসপত্র যেনো আহনাফদের বাড়িতে পৌঁছে দেয় মেস থেকে।
আদিরা আর দ্বিমত করে না। দ্বিমত করবেই বা কী করে! ওর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না মারসাদ নামক জেদী লোকটা এখন তার স্বামী! এতোক্ষণ মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছিল দেলোয়ারকে নিয়ে। দেলোয়ার যদি তুলে নিয়ে যায়? এখন কিছুটা হলেও সেই ভয় দূর হয়েছে। মনের ভিতর অদ্ভুত আড়ষ্টতা কাজ করছে। মারসাদকে দেখলেই তার লাজুক মনে আবারও নতুন করে উথালপাতাল ঝড়ের আবির্ভাব হচ্ছে। এমনিতেও প্রতিদিন মারসাদের সাথে কথা বলতে তার কিছুটা লজ্জা লাগতো।
আদিরাকে অন্যমনা দেখে মারসাদ রম্যাত্নক কন্ঠে বলে,
–হিসেব মতে আজ আমাদের বাসর রাত। তুমি কী সেই ভাবনায় মশগুল? তাহলে বলতে পারো। আজ তাহলে বউয়ের সাথে ফার্স্ট নাইট কা*টিয়ে নেই!
আদিরা চোখ বড়ো বড়ো তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে হড়বড়িয়ে বলে,
–না না। আমি এসব একদম ভাবছিলাম না। আমি তো ভাবছিলাম, কী থেকে কী হয়ে গেল! আমার সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
মারসাদ এগিয়ে এসে আদিরার গালের দুইপাশে নিজের হাত দিয়ে আদিরার মুখমণ্ডল আগলিয়ে নিলো। তারপর আদিরার কপালে প্রথমবারের মতো বৈধভাবে গাড়ো চুম্বনে সিক্ত করল। অন্যরকম আবেশের প্রশান্তি এতে। আদিরা গভীরভাবে নিজের আঁখিযুগল মুদিত করে রেখেছে। মারসাদ এবার নিজের কপালের সাথে আদিরার কপাল ঠেকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,
–আমার প্রথম বৈধ স্পর্শ। তোমার আমার প্রণয় আজ বৈধতা পেয়েছে। হোক সেটা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু যারা আমাদের খারাপ চায় তারাই আজ আমাদের পরিণয়ের কারণ। সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর ওদের খুব সুন্দর করে একটা ধন্যবাদ দিবো। তারপর তোমার গ্রামে গিয়ে তোমার বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে আসব। ভালোবাসি আমার মনোহারিণী। এই শহরে আমাদের প্রণয়ের প্রেম আজ পরিণয় পেয়েছে।
আদিরা লজ্জায় আরক্তিম হলো। মিশে গেলো তার প্রিয়তমের প্রশস্ত বাহুযুগলের আলিঙ্গনে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।