প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৬
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বিকালবেলা,নামটা শুনলেই মনে হুট করেই একটা আলাদা আনন্দ কাজ করে,চায়ের সাথে একটা বিসকিট এটা ভাবলে তো দিল আমার খুশিতে আটখানা
সারাদিন ধরে কি ঝড় ঝাপটা গেছে তা না ভেবে এখন আমি ভাবছি চায়ে চিনি বেশি দেবো
চিনি হলেই চায়ের আসল স্বাদ বোঝা যায়,তবে বেশিও না আবার কম ও না
এক চামচ চিনি বেশি দরকার হলে আরেক চামচের ১৫%
ভাবতে ভাবতে শান্তর বারান্দার বিন ব্যাগটা থেকে উঠে দাঁড়ালাম চা বানাতে যাব বলে তবে পিছন ফিরতেই দেখলাম আমার রুগী জামাই চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো হয়ত ডাকার জন্যই,
রিপা এসে দিয়ে গেছে মনে হয়
আমি এক দৌড়ে এসে হাজির তার কাছে,তার যে অসুস্থতা সেটা আমার মাথায় নেই,এখন আমার মাথায় ঘুরঘুর করছে কখন চায়ে বিসকিট ডুবিয়ে খাব
সাথে দেখছি চিনিছাড়া টোস্ট,মন ভালো করার মেডিসিন হলো চা
ভাবতে ভাবতে আহানা শান্তর পাশে বসে চা আর বিসকিট নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,শান্ত গরম গরম চা খেতে খেতে আহানার চায়ের প্রতি এমন উন্মাদ হওয়া দেখছে
.
আহানা পুরোটা চা শেষ করে তারপর হাত দিয়ে মুখ মুছে শান্তর দিকে ফিরে তাকিয়ে বসলো,এবার সে গল্প করবে
.
শান্ত ও ফিরলো ওর দিকে
.
তো বলুন আপনি রতনের কি করবেন?
.
আমি তারে জেলে ঢুকাবো,ওসব বাদ দাও,আগে বলো মায়ের মুড কিরকম দেখলে?
.
শান্তি আন্টি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা স্বভাবের একজন মানুষ,তাকে যা বোঝানো হয় তাই বুঝেন,এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আপনি হসপিটাল থেকে এসে তাকে যা বুঝিয়েছিলেন তা তিনি বুঝেছেন
.
হ্যাঁ সেটা ঠিক,তবে মা ওভার টেনসন করে একদম তোমার মতো,তুমি তো পাগলামি শুরু করে দাও
কিন্তু মা নিরবে নিজেকে পোড়ান
.
এটা সবচেয়ে কষ্টের, যাই হোক আপনি বডিগার্ড রাখেন,এত টাকা নিয়ে তো কবরে যেতে পারবেন না,তাই টাকা কাজে লাগান,২/৩টা রাখলেই চলবে,অন্তত আপনার সেফটি জরুরি
ঐ যে শাহরুখ খান যে বডিগার্ড রাখে সেটা রাখেন,একদম সেফ
.
হাসালে আহানা
.
হাসালাম তো হাসেন,তারপর যা বললাম করেন,আমি কিছু শুনতে চাই না,আমার কথা যদি না শোনেন তাহলে কচু গাছে ফাঁসি দেবো
আমি আবার সুইসাইড এটেন্ড করতে অত্যন্ত পটু
আমার হাসবেন্ড বলেছিলো আমার সবকিছু “অত্যন্ত ”
.
শান্ত হাসতে হাসতে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়েছে
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”ঝগড়া করবো না আর কোনোদিন, এভাবেই হাসবেন”।
.
নাহ
.
কি নাহ?
.
তোমাকে ঝগড়ায় মানায়,যে সম্পর্কে ঝগড়া হয় না সে সম্পর্ক বেশিদিন টিকে না
ঝগড়া হয়ে আবার মিটমাট হওয়া সম্পর্কগুলো হয় আজীবনকার জন্য,আমি চাই তুমি তোমার মতন থাকো
তোমার কোনো কিছু বদলাতে হবে না
একবার ভেবে দেখো না শুরু থেকেই কিন্তু আমরা ঝগড়া করে এসেছি কিন্তু তারপরেও আজ আমরা স্বামী স্ত্রী
.
সেটা ঠিক তবে আপনাকে হারানের ভয়টা মাথায় আসলে মন চায় আপনাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিই
.
শান্তর কাশি উঠে গেছে কথাটা শুনে,তারপর কোনোরকম কাশি থামিয়ে সে বললো”থাক থাক,এত এত সেবা লাগবে
না,আগের আহানাই বেস্ট
একটা কথা কি জানো?বেশি কেয়ার করলে সে হয় খালাতো বোন আর ঝগড়া করে মাথা খেলে সেটা হয় বউ
বুঝলে?”
.
আপনার খালাতো বোন আছে?
.
নাহ,থাকলে এতদিনে কাড়াকাড়ি লেগে থাকত
.
তা ঠিক,তবে আমার ইচ্ছা আপনার নানু বাড়ি যাব,কোনোদিন দেখা হয়নি
.
আমার নানু তোমাকে ছোট বেলায় পছন্দ করত না
.
কেন.?কি করেছি
.
উনি যখন বেড়াতে আমাদের বাসায় আসতেন তখন তুমি আমার সাথে খেলতে আমাদের বাসায় আসলে উনার পানের বাটুয়া থেকে চুন চুরি করে নিয়ে সারা মাথায় মেখে সাদা ওড়না গায়ে পেঁচিয়ে পুরো বাড়ি হাঁটতে হাঁটতে বলতে”আমি নানু সেজেছি,আমি নানু সেজেছি”
.
এ্যা মা!!!তারপর?
.
নানু অনেক রেগে যেতেন কারণ তিনি পান খেতেন ঘন্টা পরপর,আর সেখানে তুমি চুন নিয়ে ঝামেলা করতা বলে তার মেজাজ খারাপ থাকতো তার উপর আন্টি তোমাকে পানিতে চুবিয়ে তোমার চুলে হাজার সাবান- শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতেন
.
তো এখন যদি আমরা আপনার নানু বাড়ি যাই আমাকে কি উনি ভালোবাসবেন না?
.
বাসবে অবশ্যই,আচ্ছা আমি মাকে বলে দেখি তোমাকে নিয়ে একবার নানুবাড়ি থেকে ঘুরে আসবো,আগে আমি সুস্থ হয়ে নিই,এই ব্যান্ডেজ নিয়ে নানুবাড়ি গেলে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আমাকে,আর অনেকে তোমাকে অলক্ষী এওয়ার্ড ও দিয়ে দিতে পারে
.
এ্যা!আমি কি দোষ করছি
.
সেটা তুমি জানো,জামাইরে ভালোবাসো না মনে হয় ঠিকমতন,তাছাড়া জামাই জোর করে ভালোবাসলে দুদিন গাল ফুলিয়ে রাখো তোমাকে অলক্ষী বলবে না তো কি আমাকে বলবে?
.
হ্যাঁ আপনাকেই বলবে কারণ আপনি বিয়ের এক মাস পর আমাকে আই লাভ ইউ বলেছেন তাও আমাকে কত ঘাটের পানি ও খাইতে হয়েছে
.
তুমি তো বলছো ২০দিন পর
.
তো?আপনার আগে বলছি তাই আমি জিতলাম এই যাত্রায়
.
সে যাই হোক কিস করতে গিয়ে তো ১০০বার চড় খেলাম সেটার কি হবে?
তোমাকে তো বক্স অফিস থেকে এওয়ার্ড দেওয়া উচিত চড় দেওয়ার জন্য
.
ভালো ছেলের মতন বিহেভ করলে চড় খায়না মানুষ
.
কিস কি শুধু খারাপ ছেলেরাই করে?
.
সবাই করে,কথা হলো আপনি সিরিয়াস মোমেন্টে কিস করতে আসছিলেন বলে আমি চড় মেরেছিলাম
.
কিস করার সময়টাই তো সিরিয়াস,কি বলো তুমি!
.
না সেটা না,আমি বলছি প্রথমবার আপনি রিয়াজ ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমাকে টেনে কাশফুলের কাছে নিয়ে এসেছিলেন সেখানে আশেপাশে নদীর উপর লঞ্চ স্টিমারে ভর্তি ছিল সেটা সিরিয়াস মোমেন্ট না?তার উপর দ্বিতীয় বার আপনার বুকে ছুরির ক্ষত দাগ ছিলো আমি সেটার দিকে চেয়ে কাঁদছিলাম আর ঐ সময়ে আপনি কিস করতে চেয়েছেন,সেটা সিরিয়াস মোমেন্ট নয়?
.
শান্ত কপাল কুঁচকে বললো”তোমার জন্মের পর আন্টি তোমার মুখে ঝিঙের খোসা দিয়েছিলেন?”
.
আহানা রেগে কুশন দিয়ে শান্তর গায়ে এক বাড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো রুম থেকে
.
শান্ত হাসতে হাসতে বললো”এই আহানাটাকেই চাই,ঝগড়াটে বউ”
.
আহানা একেবারে রাতেই রুমে আসলো তাও শান্তকে ডিনারের জন্য ডাকতে
.
শান্তকে আজ শান্তি রহমান নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন,সাথে খাওয়ালেন নিতুকেও
আহানা ব্রু কুঁচকে সব দেখছিলো,ব্যাপারটা শান্তি রহমান বুঝতে পেরে আহানাকেও খাইয়ে দিচ্ছেন এবার
.
চিকেনের পাখনার মাংসটা আহানার ও পছন্দের আর শান্তর ও
মা সেই মাংস দিয়ে লোকমা বানাচ্ছেন,বিষয়টা দেখতে পেয়ে আহানা মুখ এগিয়ে নিলো লোকমাটা ওকে দেওয়ার জন্য,কিন্তু তার আগেই শান্ত আহানার কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের মুখটা মায়ের দিকে এগিয়ে ধরলো
.
আহানা হেরে গিয়ে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে,শান্ত দাঁত কেলিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি হেসে যাচ্ছে অনবরত
♣
রতনকে পুলিশ ২দিনের ভেতরেই ধরে ফেলেছে,খাগড়াচড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ছিলো সে
শান্ত তার বিশ্বস্ত একজন পুলিশ ফ্রেন্ডকে কাজটা দিয়েছিলো
রতন আপাতত জেলে,১৭তারিখে কোর্টে আনা হবে তাকে,বাস যার থেকে ভাড়া নিয়েছিলো সে পুলিশ কাস্টাডিতে আছে,সব প্রুফ জোগাড় হয়েছে এবার শুধু শাস্তি শোনানোর পালা
তাছাড়া মজনু চাচার ও জেল হয়েছে কারণ কয়েকদিন আগে শান্তর উপর করা হামলার আসল রহস্য বেরিয়ে এসেছে এবং এর মূল হোতা মজনু এরেস্ট হয়েছে
সবকিছু শুনে আহানা এবার পুরোপুরি নিশ্চিত
♣
আহানা????আহানা!!!আমি জামাটা পরতে পারছি না,পরিয়ে দাও না প্লিস
.
আমি গোসলে ঢুকছি মাত্র,আরও আগে বলতে পারেননি?সব আমাকে জ্বালানোর ধান্দা
.
আহানা শান্তকে এক ঝুড়ি বকাবকি করে ভেজা জামা পরা অবস্থাতেই বের হলো বাথরুম থেকে তারপর গাল ফুলিয়ে কাছে এসে শান্তকে ওর টিশার্টটা পরিয়ে দিতে থাকলো
.
স্বামীর সেবা করো তো ঠিকই তার আগে এত কথা শুনাও ক্যান বলোতো?
.
আপনি টাইমলি কাজের ফরমাইশ দেন না
.
কি করবো?ভেবেছিলাম নিজে নিজে পরতে পারবো কিন্তু হাতের জন্য পারছিলাম না বলেই তো ডাকলাম
.
আহানা কপাল কুঁচকে টিশার্টটা সম্পূর্ন পরিয়ে দিয়ে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওর হাতটা ধরে ফেললো
.
কি?সময় নষ্ট করছেন কেন,আমার এখন ভেজা জামার কারণে জ্বর এসে যাবে
.
শান্ত আহানাকে জড়িয়ে ধরে বললো”আসবে না,প্যারাসিটামল খেয়ে নিবা
.
আপনার কি আমার জন্য মায়া হয় না
.
হয় বলেই তো বুকে ধরে রেখেছি
.
আহানা মাথা উঁচু করে বললো”শান্ত”
.
হুম বলো বউ
.
ঠাস করে ধাক্কা খাবা জামাই?
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে বললো”ক্যান”
.
এরকম রোমান্স সময় অনুযায়ী করিয়েন কেমন?আমার গোসলের সময় কেউ ডিস্টার্ব করলে তার মাথা ফাটাতে ইচ্ছা করে
.
মাফ করো আর ধরব না,যাও
.
শান্ত আরেকদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়ালো এবার
তা দেখে আহানার দয়া হলো কিছুটা
তাই এগিয়ে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সে শান্তকে
শান্তর কিঞ্চিত রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে,মুচকি হেসে সে পাশে তাকিয়ে বললো”কি ম্যাডাম?গোসলে দেরি হচ্ছে না এখন?”
.
আমার বর রাগ করেছে তাকে চড় মেরে ঠিক করবো বলেই ঝাপটে ধরলাম
.
শান্ত চোখ বড় করে বললো”আহানা মাঝে মাঝে ভাবি তুমি তো আমার বাচ্চাদের দিনে ২০০বার চড় মারবা মনে হয়”
.
ধুর!
.
আহানা গেলো গোসল করতে,শান্তর সাথে দু লাইন কথা বললেই শুরু হয় ঝগড়া,ঝগড়া ছাড়া যেন আর কোনো কথাই নেই
♣
১৫/১৬দিন পর শান্ত সুস্থ হয়েছে প্রায়ই,এখন আর হাতে ব্যান্ডেজ নেই,মাথায় ও নেই,তার অবস্থার উন্নতি দেখে আহানা তো প্রতিদিন শান্ত আর শান্তি রহমানকে দেখিয়ে দেখিয়ে ট্রলি ব্যাগ বাসার সামনের পাকা রাস্তাটায় রোদে দেয়
.
শান্ত ও হাসে,মা ও হাসে,তো সেদিন বিকেলবেলা আহানা মুখ ফ্যাকাসে করে ট্রলি ব্যাগটা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে বাসায় ঢুকার সময় শান্ত এসে দাঁড়ালো ওর সামনে
হাত ভাজ করে সে আহানার ট্রলি ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে আছে
.
কি এত দেখছেন?পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিলো বলে রোদে দিয়েছিলাম,আর কিছু না
.
আমি তো কিছু বলিনি
.
হুহ
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে রুমের দিকে চললো
শান্ত ওর পিছু পিছু এসে আলমারি থেকে নিজের জামা বের করতে করতে বললো”তা কেউ চাইলে আমার সাথে আমার নানুবাড়ি যেতে পারে”
.
আহানা তো নিজের কানে শুনেও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না,এক দৌড় আলমারির কাছে এসে শান্তকে সরিয়ে দিয়ে সে এখন নিজের শাড়ীগুলো নেওয়ায় ব্যস্ত
.
শান্তর নানুবাড়ি হচ্ছে ঝিনাইদহের বেপারি পাড়ায়,তো ঢাকা থেকে গাবতলি গিয়ে সেখান থেকে লঞ্চে যেতে প্রায়ই ৫ঘন্টা পেরিয়ে আরও আধঘন্টা সময় লাগতে পারে
শীত পড়া শুরু বলে আহানা সবার আগে শীতের জামাকাপড় নিচ্ছে,নিজের এবং শান্তর জন্য।
.
সব শাড়ী নিয়েছে আহানা,,কোনো থ্রি পিস নেয়নি,কে জানে নানু যদি রাগ করে,এমনিতেও আগে ভাগে ছোটবেলায় কুকীর্তি করে তার মেজাজ বিগড়ে রেখেছিলাম
চলবে♥