#প্রেম_তুমি
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-২১
“এই মেয়ে, ফাজলামো পেয়েছো? তুমি যার সাথে বলবে তার সাথে গিয়ে আমার ড্যাংড্যাং করে নাচতে হবে? আমি কার সাথে নাচব, কি গানে নাচব সেটা অবশ্যই আমার চয়েজ হবে। তোমার নয়? ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পেয়েছো বলে মাথা কিনে নেওনি। আমি ওর সাথে নাচ করব না।”
অর্ষা আলিশার উপর প্রচন্ড ক্ষেপেছে। গরগর করে কথাগুলো রাগ নিয়ে বলল।
আলিশা ওর কথা গায়ে না মেখে হাই বেঞ্চের উপরে বসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“এজ ইউর উইশ। না নাচ করলে নেই। শুধু শুধু আমাদের টাইম ওয়েস্ট করো না। তোমার সাথে ফালতু বকা ছাড়াও আমাদের আরো অনেক কাজ আছে। সো প্লিজ লিভ!”
আলিশা দরজা দেখাল।
অর্ষা রাগে গজগজ করছে। অপমান সহ্য করতে পারছে না। ওকে হেনস্তা করার জন্য আলিশা উঠে পড়ে লেগেছে তা বুঝতে বাকি নেই। ও নাক কুঁচকে বলল,
“এ-সব করে কী পাবে? দর্শনকে? দর্শনের ছায়াও মারাতে পারবে না। আমি দেব না। যদি এগুলো করে মনকে শান্তি দিতে পারো দেন নো প্রবলেম। তোমার মানসিক শান্তির প্রয়োজন। আমার প্রতি ক্ষোভ মিটিয়ে যদি কিঞ্চিৎ মিলে!”
আলিশা ওর কথা শুনে স্থির থাকতে পারল না। সমস্ত ক্ষোভ মেটানোর জন্য বেঞ্চ থেকে নেমে এক লাথি দিল বেঞ্চে। তারপর চোখে রক্তিম আভা এনে বলল,
“খুব বাড় বেড়েছো। লিমিট ক্রস করো না। কার মানসিক শান্তির প্রয়োজন হবে সেটা না-হয় কিছুদিন পরেই টের পাবে।”
“কেন সীমানা অতিক্রম করার দায়িত্ব কি তুমি একা নিয়েছো? আমার সাথে একদম লাগতে আসবে না। তাহলে সীমানা কী বুঝিয়ে দেব।”
অর্ষা দুম করে দরজায় শব্দ করে বের হয়ে গেল। আলিশা ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে রাগে ফুসছে,
“বড্ড উড়ছিস না? উড়তে থাক।”
অর্ষা ভেবেচিন্তে মেমের সাথে কথা বলতে গেল। ওর মতামত শুনে মেম জানাল,
“এখন আর কিছুই সম্ভব না অর্ষা। তুমি যদি আরো আগে বলতে তাহলে কিছু করতে পারতাম।
সব ফিক্সড হয়ে গেছে। সবাই তার পার্টনারের সাথে নাচ তৈরি করে ফেলছে। এখন একদমই সম্ভব না।”
অর্ষা রিকুয়েষ্ট করে বলল,
“মেম, প্লিজ একটু দেখুন না। আমি তো আজকেই জানতে পারলাম কে আমার পার্টনার।”
“কলেজ মিস দিয়েছো কেন? একটা প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছো তোমার কি উচিত ছিল না রেগুলার আসা? এখন যদি একজনকে চেঞ্জ করতে যাই তাহলে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তুমি কলেজ মিস না দিলে সব পারফেক্ট পেতে। সরি। তুমি এডজাস্ট করে নেও।”
অর্ষার কিছুই বলার থাকলো না। দর্শনের সাথে রাগ করে কলেজে না আসা তারপর ওর জন্মদিন নিয়ে এত মেতে ছিল যে এদিকটা তালগোল পাকিয়ে গেছে। মেজাজের বারোটা বেজে গেছে। বিরক্ত লাগছে খুব। কি করবে বুঝতে পারছে না।
…..
দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে নোটিশ বোর্ডে। দর্শন রুটিন মোবাইলে পিকচার তুলে নিল। সামনে পরীক্ষা। সিলেবাস পুনরায় শেষ করতে হবে। ভালো করে প্রস্তুতি নিতে হবে, পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে এসব ভাবতে লাগল। রুটিনের দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। প্রথমে কোন সাবজেক্ট সেটা দেখল। প্রথমে বাংলা প্রথম পত্র।
“কী খবর দর্শন?”
দর্শন চোখ তুলে চেয়ে দেখল জুবায়ের দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছে কিছু বলতে এসেছে। ওর ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি। দর্শন ওকে কয়েক সেকেন্ড পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“ভালো। হঠাৎ?”
“ওহ! হ্যাঁ হঠাৎই। তুমি কী জানো তোমার গার্লফ্রেন্ডের ড্যান্স পার্টনার কে?”
দর্শন চোখের মণি এদিক সেদিক করে গম্ভীর গলায় বলল,
“কেন? জানা কি জরুরি?”
“না তবে জিজ্ঞেস করলাম আর কি। জিজ্ঞেস করার কারণ হচ্ছে ওর ড্যান্স পার্টনার আমি।”
জুবায়ের অদ্ভুত হাসি দিল। এই হাসির মানে দর্শন বের করতে পারল না। এভাবে কেন হাসল? তারচেয়ে বড় কথা এই অসভ্যের সাথে অর্ষা ড্যান্স কেন করবে? অর্ষা কী পাগল হয়েছে? জানে না ও কেমন ছেলে? অর্ষা কেন ওকে জানায়নি এটা ভেবেই দর্শনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।
“বিশ্রীভাবে হাসছিস কেন? এই হাসির মানে কী?”
“বিশ্রীভাবে! আচ্ছা! তেমন কিছুই না। আমার সৌভাগ্য দেখে হাসলাম।”
“কীসের সৌভাগ্য?”
জুবায়ের আবারও হাসল,
“বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের সাথে ড্যান্স করার সৌভাগ্য।”
জুবায়েরের চোখ কিছু একটা ইঙ্গিত করছিল। দর্শন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না। এতক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে, হাত মুঠো করে সব সহ্য করেছে। আর পারছে না।
দর্শন আচমকা ওর কলার ধরে নাকে ঘুষি মারল। জুবায়ের এত জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। দর্শন এমন কিছু করবে সেটা ঘূর্ণাক্ষরেও জানত না।
“এত বড় সাহস তোর অর্ষাকে নিয়ে বাজে কথা বলছিস? বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছিস? জানো*য়ার!”
দর্শন চেঁচাতে লাগল।
জুবায়ের পরিস্থিতি ঠান্ডাভাবে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ও চায়না কারো সামনে নিজের ইমেজ খারাপ হোক। যা হওয়ার দর্শনের সাথে হোক।
জুবায়ের চারদিকে তাকাল। ঝামেলা দেখে মানুষের আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে।
“দোস্ত, তুই ভুল বুঝছিস। আমি কী করেছি বল। আমি বাজে কথা কখন বললাম?”
“একদম অভিনয় করবি না। তুই কী মনে করেছিস আমি কিছু বুঝি না? অনেকক্ষণ ধরে বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছিলি। চুপচাপ সহ্য করে গেছি। বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের সাথে নাচবি না?”
দর্শন আরো একটা ঘুষি মারল। ভীড় জমে গেছে। জুবায়ের আর সহ্য করবে না। দুইবার মার খাওয়ার পর একবার মার দেওয়া তো চলেই। জুবায়ের পালটা ঘুষি মারল দর্শনকে। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। দুটি পক্ষ ওদের ছাড়িয়ে দু’দিকে নিল।
রুশান, তামিম আর রাতুল খবর পেয়ে দৌড়ে এল। দর্শনের চুপ এলোমেলো। শার্টের একটা বোতাম খোলা, চশমা হাতে, চোখে রক্তিম আভা।
আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️
চলবে….
(ঘুম পাচ্ছে তাই ছোট পর্ব দিয়েছি।)