#মেঘের_বাড়ি☁
#পর্ব-২
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
” সোহেল আমি আমার বোনের কাছ থেকে সবটা শুনেছি৷ এখন তোমার কী কিছু বলার আছে?”
সোহেল এবার মাথা তুলে মেঘের দিকে একনজর তাকিয়ে বলে উঠলো,” দেখুন ভাইয়া মেঘ আপনাদের কী বলেছে আর কী বলেনি সেটা আমি জানি না তবে আমি বলবো মেঘ যা বলছে পুরোটাই বানোয়াট কথা কারণ আপনারাই দেখছেন আমার আম্মাকে? আমার আম্মা একদম মাটির মানুষ তিনি বা আমার বোন ভাই এমন টা কখনো করতেই পারে না৷” সোহেলের কথা শুনে মেঘ ত্যাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বললো,” দাদা তার মা বোন ভাই এতই ভালো যখন তখন একবার জ্বিজ্ঞাসা করো তো প্রথম রাতে তার বোন আর ভাইয়ের স্ত্রী মিলে তোমাদের দেওয়া সব জামা কাপড় গহনা না বলে কী করে নিয়ে যায়! দ্বিতীয় দিন নতুন বউয়ের শাড়ি লুকিয়ে রেখে ছ্যাড়া শাড়ি পড়তে দেয়? জ্বিজ্ঞাসা করো কোন ছোট জা এসে আমাকে আজেবাজে কথা বলে? এমনকি তাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের ও উল্টো পাল্টা কথা শিখিয়ে দেয়৷ আমার সাথে কাজের লোকের থেকেও বাজে আচরন করে৷” মেঘ আর কিছু বলতে যাবে তার আগে মেঘের ছোট ভাই আকাশ মেঘের বরের দিকে তেরে যেতে নিলে মেঘ আটকে দিয়ে ইশারায় বারণ করে৷ আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে আগুন দৃষ্টিতে সোহেলের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বি*শ্রি কিছু গা*লি দিলো৷ এদিকে মেঘের ভাইয়েরা সবটা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলেন৷ সোহেল এখনো আগের মত নির্বিকার হয়ে বসে আছে৷ চোখ মুখ একে বারে শান্ত৷ সোহেলে ভেতরে কি চলছে তা মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই৷
মেঘের সেজভাই আবদুল্লাহ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সোহেলকে বলতে লাগলো,” শোন সোহেল বোনকে বিয়ে দিয়ে ভাসিয়ে দিই নি৷ আমাদের তিন বোন আমাদের কলিজা৷ তাদের বিন্দুমাত্র কষ্ট আমরা সহ্য করবো না৷ আমরা একপাক্ষিক বিচার করবো না৷ আমরা তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো৷ এই সমস্যার সমাধান করা অত্যান্ত জরুরী৷” আবদুল্লাহ কথা শেষ হতে মেজভাই(তাজুল) বলে উঠলো,” আপাতত মেঘ এখানে থাকবে যতদিন না সমস্যার সমাধান হয়৷ ”
মেজভাইয়ের কথা শুনে সোহেল ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠে,” এটাই যদি আপনাদের সিধার্ন্ত হয় তাহলে আজ আমিও আপনাদের একটা কথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি কাল যদি মেঘ আমার সাথে ও বাড়ি না ফেরে যায় তাহলে মেঘের জন্য ও বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে৷” সোহেলের কথা শেষ হতে না হতে মেঘের ছোট ভাই সোহাগ তেরে সোহেল কে আঘাত করতে নিলে মেঘ সহ বাকি চার ভাই সোহাগ কে আটকে ফেলে৷
” ছোট ভাই কি করছো? শান্ত হও৷”
” মেঘ তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস? ওই শু*** বা** কত বড় সাহস আমার সামনে বলে ওবাড়ির ফিরে না গেলে চিরদিনের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যাবে৷” সোহাগ সোহেলের দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগলো,” আজ তুই আমার বোনের জন্য বেঁচে গেলি কিন্তু তুই কী করে আমার বোন কে ওই বাড়িতে ঢুকতে না দিস সেটা আমিও দেখবো৷ আমাকে চিনিস নি এখনো, ভান্ডারিয়া গিয়ে জ্বিজ্ঞাসা কর সোহাগ কে বলে দিবে এই সোহাগ কে এবং কী করতে পারে৷ তোকে তো আমি দেখে নিবো সাথে তোর পরিবারকেও৷ ”
” কি হচ্ছে কি সোহাগ? আমরা কথা বলছি তো?” চেঁচিয়ে বলে উঠলো নাজমুল৷
সোহাগ হাত ছাড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো,” দুঃখিত দাদা তোমার সামনে এভাবে ব্যবহার করার জন্য কিন্তু তুমি যদি আমাকে বিশ্বাস করো তাহলে এই সমস্যার সমাধান আমাকে করতে দেও৷ কথা দিচ্ছি সোহেল আর ওর পরিবারকে যদি সোজা করতে না পারি তাহলে আমি সোহাগ না৷”
” সোহাগ আমরা কথা বলছি তো তুই চুপ থাক৷” (তাজুল)
সবার কথা শুনে সোহেল বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,” আপনাদের সবার কথা শুনেছি এখন আমার কথা আপনারা শুনুন৷ আমি এই মুহূর্তে এ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবো আর আপনাদের বোন যদি সংসার করতে চায় তাহলে যেন আমার সাথে এই মুহূর্তে এ বাড়ি ত্যাগ করে নাহলে ……” আর কিছু বলেনি সোহেল গট গট করে হেটে রুমে চলে গেল৷ এতক্ষণ আলিয়া দরজায় দাড়িয়ে সবার কথাই শুনলো৷ তবে ভেতরে আর প্রবেশ করলো না কারণ এখন সবার মাথা গরম ভেতরে গেলে হয়তো প্রত্যেকে বকা দিবে৷ সে ভয়ে আর ভেতরে না ঢুকে রান্না ঘরের দিকে ছুট লাগালো আলিয়া৷
৪.
পুরো বাড়ি আজ থম মেরে আসে মেঘের মা শেফালী বেগম আহাজারি করে কান্না করতে করতে জ্ঞান হারাচ্ছে বার বার ৷ মেঘ সব টা দেখেও কিছু করতে পারছে না কারণ ঘন্টাখানিক আগে সোহেল বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেছে৷ সোহেল বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মেঘ অন্য রুমে দরজা সেটে গাট হয়ে বসে ছিলো৷ সোহেল বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর পর আলিয়া দরজায় নক করে সোহেলের চলে যাওয়া কথা জানাতে মেঘ দরজা খুলে বাইরে বের হতে শেফালী বেগম মেঘের গালে কয়েকটা থাপ্পর মেরে আহাজারি করে কান্না শুরু করেছে তার আর থামার নাম গন্ধ নেই৷
রাতে কারও আর খাওয়া হলো না৷ ছোটরা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে৷ শুধু ঘুম নেই মেঘের চোখের কোণে৷ চোখের সামনে এখনে বিয়ের সেই মুহূর্ত টা চোখে ভাসছে৷ তারপর পর ভেসে উঠছে সেই বাজে ব্যবহারের কথা৷ কিছুতেই সেই বাজে ব্যবহারের কথা ভুলতে পারছে না৷ প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে মেঘের৷
অন্যদিকে সোহেল বাড়ি ফিরে তার বাবা মা বোন ভাইদের সবটা জানাতে তারা অকথ্য ভাষায় মেঘ কে গা*লি গালাজ করতে লাগলো৷ সোহেল অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তার মায়ের দিকে, এ কোন রুপ দেখছে তার মায়ের? কি জঘন্য ভাষায় মেঘ কে গা*লি*গা*লাজ করছে ৷ সোহেল ধীর পায়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো৷ এদিকে সোহেলের তিন বোন তার মায়ের সাথে মেঘকে চিরতরে তাড়ানোর প্লান করছে৷
” আম্মা ভাবিরে আর এই বাড়ি ঢুকতে দেওয়া যাইবো না৷” বড় মেয়ে আখি বলে উঠলো৷ আখির কথা শুনে মেজ মেয়ে সাথী বলে উঠলো, ” হ আম্মা বড় আপা ঠিক কথা বলছে৷ ভাবি এমনিতে শিক্ষিত মাইয়া৷ ভাইয়ের সব জমিজমা টাকা পয়সার সব হিসাব নিবো৷ আমরা যে এতদিন ধরে ভাইয়ের টাকা পয়সা দিয়া আমাগো নামে জমি রাখছি৷ সে কথাও জেনে ফেলবো তখন ভাই তো আমাগো ভুল বুঝবো৷ আমাগো আর বিশ্বাস করবো না৷”
” তোরা থামবি? তোগো মাথায় কী গোবর ভরা? এখন যদি বউ বাড়ি না আহে আর ওই বাড়ি থাইকা যায় তাইলে ও বাড়ি দিয়া যে মাল জিনিস আইসে সেগুলা তো দেওন লাগবো ৷” মায়ের কথা শুনে দুবোন চুপ হলেও ছোট বোন মিলা চুপ থাকলো না ৷
” আম্মা মাল জিনিস কিছুই ভাবিরে দিমু না৷ তার চাইতে আমাগো অন্য কিছু ভাবতে হইবো৷”
” হ আমা মিলা ঠিক কয়ছে ৷ আমার দেবরকে দিয়া ভাবির বাড়ি আশে পাশে খোঁজ লইয়া দেখি কোন খবর পাই কীনা? যে খবর দিয়া ভাবিরে কিস্তিমাত করা যাইবো৷ কিন্তু আম্মা তোমারে আগেও কইছিলাম ভাইয়ার জন্য অশিক্ষিত মাইয়া আনতে কিন্তু আমার কথা শুনলা না এখন দেখতাছো কী ভোগান্তিতে পড়তে হইতাছে৷”
” হ আপা ঠিক কইছিস ওই সা* আলমগীর এই বিয়ার প্রস্তাব আনছে সা*লারে হাতের কাছে পাইলে চটকানি দিতাম৷ ”
” এহন এইসব কথা বাদ দিয়া খাওন বার সবাইরে খাওন দিতে হইবো তো৷”
মায়ের কথা শুনে তিন মেয়ে উঠে গেল খাবার বাড়তে অন্যদিকে সোহেল মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে৷ ও বাড়ি থেকে আসার পর থেকে কোন কিছুই ভালো লাগছে না সোহেলের৷ মেঘের মায়াবী মুখটা বার বার মনে পড়ছে৷ মুখে যাই বলুক না কেন এই কয়েক দিনে সোহেল মেঘকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছে৷ এক মুহূর্তের জন্য ও মেঘকে চোখের আড়াল হতে দিতে মন চায় না সোহেলের কিন্ত পরক্ষণে আজকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা মনে পড়তে রাগে কপালের রগ গুলো ফুলে ফেঁপে উঠলো৷ সোহেল চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,” আজ যা হলো তার মূল্য তোমাদের দিতে হবে মেঘ৷ এর সমাধান না করে তোমাকে আমি ঘরে তুলবো না৷
রাতে খাবার খাওয়ার সময় সোহেল কে অনেক ডাকাডাকি করেও রুম থেকে বের করতে পারেনি কেউ৷ তবে এই নিয়ে বিশেষ কোন মাথা ব্যাথা নেই কারোর৷ সবাই যার যার মত খেয়ে উঠে গেছে৷
পরেরদিন দিন সকাল বেলা সোহাগ একাই সোহেলের গ্রামে গিয়ে হাজির হয়৷ সেখান কার মাতব্বর মোহাম্মদ গাজীর সাথে মেঘের বিষয় কথা বলে৷ সবটা শুনে মোহাম্মদ গাজী ভিষণ রেগে যায় তার ভাইপো সোহেলের উপর ৷ তিনি এই গ্রামের মাতব্বর আর তার গ্রামে তার রক্ত এমন অবিচার করছে সেটা শুনে প্রচন্ড রেগে যায়৷
অন্যদিকে আখির দেবর রানাকে আখি মেঘের গ্রামে পাঠায়৷ সেখানে রানা এমন একটা খবর পেলো তা শুনে এক মুহূর্ত দেরি না করে বাড়ি ফিরে গেল৷
৫.
দুপুর দুইটায় রানা সোহেলদের বাড়ি পৌছানো মাত্র তিন বোন রানাকে ঘিরে ধরে৷
” রানা কিছু জানতে পেরেছিস?”
” হ ভাবি এমন একটা খবর আছে যেটা শুনলে তুমি খুশিতে নেচে উঠবে৷”
” কি খবর দ্রুত বল রানা৷ আমার আর তর সয় না৷”
রানা তিন ঢোকে পানি খেয়ে বলতে লাগলো………
.
.
.
#চলবে………….
