দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৪] #তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

0
518

#দিন_বদলের_হাওয়ায় [১৪]
#তানজিলা_তিহা (লেখনীতে)

কার ভাগ্যে কি আছে তা আমরা কেউই জানি না। ভাগ্য উপরওয়ালা কর্তৃক নির্ধারিত। এর ভালো মন্দ তিনি বহু আগেই লিখে রেখেছেন। রাস্তার ওপাশে পায়রার স্বামী মাহবুব দাঁড়িয়ে আছে। তার আশেপাশে অনেক লোকজনের সমাগম। লোকেরা তাকে ঘিরে রেখেছে আর কি কি যেন বলছে। মনে হচ্ছে মাহবুবকে তারা ধরে রেখেছে। এই দৃশ্য দেখে আমি রেদোয়ানকে ডাক দিলাম। বললাম, রেদোয়ান দেখো তো ওটা মাহবুব না?

রেদোয়ান আমার কথায় ওদিকে তাকালো। বললো, তাই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু ওখানে এতো লোকজন কেন? চলো তো গিয়ে দেখি।

রেদোয়ান আমার হাত ধরে টেনে ওখানে নিয়ে গেলো। লোকজনের ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন লোককে ও ডেকে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে ভাই? এখানে এতো ভীড় কেন?

লোকটা বললো, আরে ভাই বইলেন না। এই লোক একটা ঠ/ক/বা/জ। দুই সপ্তাহ আগে মালের অর্ডার করছি এখনো মালের ডেলিভারি নাই। টাকা তো অগ্রিমই নিয়া রাখছে। এতোগুলা মানুষরে ঘুরাইতাছে।

পায়রার জামাই তো ব্যবসা করে কাপড়ের ব্যবসা। ওদের তো ভালোই চলছিলো। কিন্তু কেন এমন হলো কি করে? হঠাৎই দেখলাম মাহবুব আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আমাদের দেখে ও পুরোপুরি বদলে গেলো। এতোক্ষণ লোকজনের কথায় মাথা নিচু করে রেখেছিল আর বলছিলো ও খুব জলদিই ডেলিভারি দিয়ে দিবে। কিন্তু এখন আমাদের দেখে কেমন জানি করে বললো, আপনারা কাল আমার অফিসে আসবেন আমি সবার হিসেব চুকিয়ে দিবো।

লোকেরা কিছুটা শান্ত হলেও পুরোপুরি হয় নি। মাহবুব আড় চোখে আমাদের দেখছে। আর ভাবটা এমন যেন আমাদের চিনে না। কিছু না বলে রেদোয়ানের হাত ধরে ওখান থেকে আসতে আসতে বললাম, চলো বাড়ি চলো। এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?

আরে দেখছো না? নিশ্চয়ই একটা গোলমাল আছে। ওকে জনগণ গণ ধো/লা/ই দিবে।

দিক তাতে তোমার কি? উচিত শিক্ষা হবে। দেখছো না কেমন করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে? অ/হ/ং/কা/র শেষ হয় না। কেন নিজের সম্মান ভুলে যাও? টাকার গরমে পা মাটিতে পড়ে না।

রেদোয়ান আর কিছু বললো না। আমরা সামনে থেকে একটা সিএনজি ভাড়া করে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে খেয়াল করলাম পায়রা অনেক গুলো কল দিয়েছে। ভীষণ চিন্তা হচ্ছে নিশ্চয়ই ওর কোন বি/পদ হয়েছে। ছোট বোনটার বি/প/দে পাশে না থাকতে পারলে কেমন বোন আমি? কেমন যেন লাগছে। আবার পরোক্ষণেই ওর ব্যবহারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। অ/হং/কা/রে তো ওর পা মাটিতে পড়ে না। তাই এবার ওর সাথে কিছুতেই যোগাযোগ করবো না আমি। একটা উচিত শিক্ষা ওকে দিতেই হবে। মাথায় চিন্তার পাহাড়। তবুও রেদোয়ানকে এসবের কিছুই বুঝতে দিলাম না।

আজ আমরা আমাদের নতুন বাসায় উঠেছি। বাসাটা বেশ ভালোই। এটা বড় দালান নয় ছোট টিনের ঘর। দুটো রুম আছে। আমাদের মতো ছোট ছোট আরো তিনটে পরিবার এখানে থাকে। যাক ভালোই। দুজনের আর এর থেকে বড় বাসার কি দরকার? অট্টালিকার সাধ আমার মিটে গেছে। কি লাভ অট্টালিকায় থেকে যদি সেখানে মানসিক কোন প্রশান্তি আমি না পাই? এখানে তো অন্তত দুটো খেয়ে পড়ে শান্তিতে থাকতে পারবো। তাতেই হবে।

ভালোই কাটতে শুরু করলো নতুন বাসার দিনগুলো। রেদোয়ান চাকরিতে জয়েন করলো।‌ দিন কাটতে লাগলো। বেশিরভাগ সময়ই অফিস নিয়েই এখন বিজি থাকে। আমি বাড়িতেই থাকি। আমাদের পাশের ঘরের মেয়েটার একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে। ছেলেটা ভীষণ দুষ্টু্। সারাক্ষণই দুষ্টুমি করতে থাকে। আমার সাথে তার অনেক ভাব। প্রায় সময়েই ও আমার কাছে থাকে। ওর মা প্রথম প্রথম নাকি ভাবতো আমি বাচ্চা পছন্দ করি না। তাই সবসময় ওকে দূরে রাখার চেষ্টা করতো কিন্তু ও তো মানতো না। সব বাচ্চাদের একটা কমন স্বভাব হচ্ছে যা বারণ করবে তা বেশি বেশি করবে। ও ও তাই। ব্যাপারটা মন্দ না। ওর সাথে আমার বেশি সময় কাটে। কয়েকদিন আগে রুশা আপাও আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। রুশা আপা আগের মতন নেই অনেক পরিবর্তন হয়েছেন তিনি। এবার উনি আমার ছোট ননদ সম্পর্কে ইনিয়ে বিনিয়ে কি কি যেন বলার চেষ্টা করেছেন। বুঝতে পারি নি আমি। জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে পারি নি। আমার ছোট ননদ থাকে বহুদূরে। উনি থাকে পঞ্চগড়ে। বছরে আসে আবার আসেও না। যোগাযোগ তেমন নেই তার সাথে। রেদোয়ানের বউ হয়ে আসার পর তার সাথে চার কি পাঁচ বার দেখা হয়েছে মনে হয়। বুঝতে পারি না আমি এতো দূরে আমার শাশুড়ি মেয়ে বিয়ে দিলো কি করে? উনি তো মেয়েদের ছাড়া বাঁচেন না। তবে ইদানিং দেখছি নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবছেন। শাশুড়ি গত সপ্তাহে এখানে এসেছিলেন। শুনেছি ও বাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার শাশুড়ি বার বার একই কথা আওড়াচ্ছিলেন। তাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বার বার চাতক পাখির ন্যায় আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যদি একটু বলি আমাদের সাথে থাকতে! কিন্তু আমি বলি নি। দূরে থাকুক ভালো থাকুক। একটু তো বুঝতে দেওয়া দরকার তাদের। আমি বুঝতে পারি না মানুষ কিভাবে এতো বদলাতে পারে। সুসময়ে আঠার মতো পিছে লেগে থাকে আর দুঃসময়ে আবর্জনার মতো ফেলে দেয়। আমি সেদিন তাকে কিছু বলি নি। আমার শাশুড়ি মুখ কালো করে সেদিন আমার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন আর আসেন নি। এখানে আসার পর ও বাড়িতে আর যাই নি আমি। জুলি আর শান্তি প্রায় সময়ই ফোন করে ও বাড়িতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু যাই না। সুবিধাবাদী দলের আরেকজন সদস্য হলো পায়রা। সেও ফোন করে প্রায় সময়েই। কিন্তু ধরি না। আপন জনদের থেকে তো কম কষ্ট পেলাম না। এবার না হয় দূরে থাকি তাদের থেকে। একটু শান্তিতে বাঁচি। জীবনে তাদের থেকে সবচেয়ে বড় কষ্ট পেয়েছি। কি করে তাদের আবার আগলে নেই আমি? ভালো আছি এখন আমি এভাবেই থাকতে চাই। পিছনের ভ/য়ং/কর ঘটনাগুলো মাঝে মাঝে ভুলে যেতে চাই কিন্তু এগুলো কি এতো সহজে ভুলে যাওয়া যায়? এসব মনে যে ক্ষ/ত তৈরি করেছে তা এতো সহজে কি করে মুছে যাবে? তাই স্বার্থপর এই লোকগুলোর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাই।

গতকাল মা ফোন করেছিলো। বাবার শরীরটা ভালো
নেই। বাবা নাকি অনেক অসুস্থ। শুনেই মনটা কেমন যেন আনচান করছে। বাবাকে দেখতে যাওয়া দরকার। কিন্তু কিভাবে যাবো? রেদোয়ানের সময় হচ্ছে না। বন্ধ কোম্পানি নতুন করে খোলা হয়েছে। কাজের তো অভাব নেই। প্রায় নয় মাসে কোম্পানির অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। শুনেছি সরকার থেকে কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবুও সবটা কাটিয়ে উঠতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এতো তাড়াতাড়ি সবটা সম্ভবও নয়। কোম্পানি খুললো দু মাস হলো। এর আগে নয় মাসই কর্মচারীরা বাড়িতে বসে ছিলো। দু মাসের মাথায় ছুটি চাইলে ছুটি দিবে কে? রেদোয়ানকে অনেক বার বলেছি। সে বলেছে দেখবে। তার দেখাদেখিতে তিন দিন কেটে গেলো। ভীষণ রা/গ হচ্ছে। আমার বাবা অসুস্থ আর আমি এখনো যেতে পারলাম না। খুব কষ্ট হয়। রেদোয়ান একদিনের ছুটি নিতে পেরেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরশু শুক্রবার। যাক দুদিন যেয়ে সেখানে থাকতে পারবো। রেদোয়ান অফিস শেষে বাড়ি ফিরলো রাত আটটা। আমি সব গোছগাছ করে রাখলাম। সকাল সকালই বেরিয়ে পড়বো।

আমাদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল নয়টা বেজে গেলো। ভোরে রওয়ানা দেওয়ার পরও নয়টা বাজলো। বাড়িতে কারো কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। একদম থমথমে পরিবেশ। আমি মায়ের দরজায় টোকা দিতেই মা দরজা খুললেন। আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। জরিয়ে ধরে মাথায় চুমু খেলেন। বাবাও চোখ মেলে তাকাল। মলিন হেসে বললেন, ‘আইলি তো আইলি আমার শেষ সময়ে আইলি?’

চলবে……

(রিচেক হয়নি। অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন। গল্প দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো। জানি ছোট হয়েছে। পেইজে সমস্যা হচ্ছে। গল্প দেওয়াটাই মুশকিল। এর মধ্যেও যতটুকু সম্ভব দিচ্ছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here