মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-30

0
974

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-30

পরীক্ষা শেষে একটা বড় করে গা চাড়া দিয়ে শার্টের দুটো বোতাম খোলায় ব্যস্ত উজান,,গরমের এই অতিরিক্ত তাপদাহ টা কিছুতেই সহ্য করা যাচ্ছে না,,মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরলেও তা দিয়ে যে গরম বাতাস বের হচ্ছে তা যেনো আরো মাথা ব্যাথা তুলে দিতে যথেষ্ট!!

উজানঃ ওওওওও__ওহ___শালারা তিন ঘন্টা লিখে নিয়ে হাতের একবারে বারোটা বাজিয়ে দেয় ___আর একটা পরীক্ষা কোনো রকমে পাড় টা হলেই বাঁচি আমি

পেছন থেকে তুষার ওর পেন টা জিংকসের পকেটে ঢুকিয়ে উজানের পাশে এসে উজানের পিঠে একটা ধাম করে মারে

সাব্বিরঃ ব্যাটা এতো ডাকলাম একবার তাকালিও না,,হারামি

উজানঃ ভাই তুই তো নিজে দেখলি ঔ রক্তচোষা স্যারের বাচ্চা কেমন করে আজ পুরো তিন ঘন্টা আমার সামনে দাঁড়ায় ছিলো,,মন তো চাচ্ছিলো ব্যাটার সব চুলে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগায় দেই

রুপম এসে উজানের দিকে একটা সেভেন আপ এগিয়ে দিয়ে

রুপমঃ শোনো মামা তোমার সামনে স্যার থাকুক আর তোমার পাশে,তোমার পরীক্ষা যে ওলয়েজ দূর্দান্ত হয় তা আমাদের কারো জানতে বাকি নেই

তুষারঃ তাও আবার এবারের পরীক্ষা,,ভাবি যে হারে গাইড দিয়েছে না ভাই রে ভাই,,বেটার পরীক্ষা এমনিতেও ভালো হবে

উজানঃ গাইড না ছাই,,প্যারা বল প্যারা

রুপমঃ স্যার হয়ে ব্যাক করবা তুমি আর ভাবির এটুকু প্যারা সহ্য করতে পারবা না

সাব্বিরঃ ও হ্যা ভালো কথা কথায় কথায় মনে আসলো,, পরীক্ষা চলাকালীন হিয়া একবার এসেছিলো এই রুমে,,রুমে না মানে জানালার পাশে

উজানঃ হিয়া জানালার পাশে এসেছিলো মানে!!

সাব্বিরঃ হ্যা তোকে মনে হয় খুঁজছিলো,,ইশারায় ডাকবার ট্রাই করছিলো কিন্তু তুই পেছনে ফিরলি না তাই ঔ আমাকে ডেকে এই চিরকুট টা ঢিল দিলো

উজানঃ কিসের চিরকুট?দে দেখি

সাব্বির উজানকে চিরকুট টা দিলে উজান ওটা খুলে দেখে ওখানে লিখা আছে “লাইব্রেরি মামা””

সাব্বিরঃ লাইব্রেরি মামা এটা আবার কি রকম সাইন

রুপমঃ তুমি যে গাধা বুঝবা কি,,হিয়া হয়তো লাইব্রেরি মামার কাছে কিছু রাখছে ওজন্য হয়তো বলেছে,,গিয়ে একবার মামার সাথে কথা বললেই তো হয়

উজানঃ উঠ তো,,জরুরি কিছু নয় তো আবার,,অবশ্য জরুরি কিছু হলে তো___আচ্ছা আমি গিয়ে দেখে আসছি তোরা যাবি?

সাব্বিরঃ তুই যা ভাই গরমে আজ শরীর পুরো শেষ,,আমি বাড়ি গিয়ে যে কতোক্ষণে খাবো

তুষারঃ সেম ব্রো!!

উজানঃ আচ্ছা যা তাহলে তোরা,,রাতে টি এস সি তে আসিস দেখা হবে এখন,,

রুপমঃ হুম,,

সবাই চলে যেতেই উজান লাইব্রেরি মামার কাছে আসে

উজানঃ মামা হিয়াকি তোমার কাছে আমাকে দেবার জন্য কিছু রেখে গেছে??

মামাঃ হ শাহরিয়ার বাবা,,আমাকে তো হিয়া মা তোমাকে একটা বই দেবার জন্য বলে গিয়েছিলো,,কিন্তু বাবা আসলে বই টা

উজানঃ বই টা?

মামাঃ তোমাদের সুমন স্যার আমার হাতে দেখে বললো ওনার লাগবে,,আমি বললাম হিয়া মা তোমাকে দেবার জন্য আমাকে রাখতে দিয়েছে তো উনি তো আবার হিয়া মা কে চিনে না তবে তোমাকে চিনে,,উনি বললো বই টা নাকি উনি তোমাকে দিয়েছিলো তাই বললো তুমি কিছু বললে বা বই টা নিতে আসলে আমি যেনো তোমাকে বলি স্যার ওনার বই টা নিয়ে গিয়েছে

উজানঃ (একটা দম ছেঁড়ে)বই টা ফেরত দেবার জন্য এতো কাহিনি,,আমি ভাবলাম কি না কি খাবার টাবার রাখতে দিয়ে গেছে হয়তো,,হু,,আচ্ছা মামা সমস্যা নেই এমনিতেও আমার আর ঔ বই টা লাগতো না,,আচ্ছা আসি আমি তাহলে,,পরীক্ষা দিয়ে শরীর আজকে পুরো ঝরে যাচ্ছে

মামাঃ আর তো একটা পরীক্ষা তোমাদের, তারপর তো চলেই যাবা বাবা,,ফিরবা কি আর কখনো এই ভার্সিটি এই ক্যাম্পাস এই লাইব্রেরির বইয়ের মাঝে

উজানঃ (একটা হাসি দিয়ে) ফিরবো মামা,,শীঘ্রই ফিরবো

উজান মামার থেকে বিদায় নিয়ে পার্কিং এরিয়াতে এসে ওর বাইক টা নিয়ে স্টার্ট দিতে গিয়ে ওর ফোন টা খুঁজতে শুরু করে হিয়াকে ফোন করবে বলে

উজানঃ ড্যাম ফোন টা চার্জে দিয়ে চলে এসেছি আজকেও,,হিয়া তো এতোক্ষণে বোধহয় একশোটা ফোন দিয়ে শেষ করে দিয়েছে,,ভাব তো এমন দেখায় পরীক্ষা আমার না পরীক্ষা টা ওনার__হু
!
!
!

বিকেল তখন ৪টের একটু আগে,,বাস এখন ফুড ভিলেজ পাড় হয়ে সিরাজগঞ্জের মাঝামাঝি,,গাড়ি আজ দূতই এগিয়ে এসেছে,, টাঙ্গাইলে এ্যালেঙ্গার কাছে সচারাচর যে জ্যাম টা পাওয়া যায় তার তিল পরিমাণ জ্যাম আজ ছিলো না বললেই চলে,হিয়া সেই সকাল থেকে এখন অবধি বাসের জানালার কাছে মাথা হেলিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে তো আছেই,,শ্রাবণ দু বার বমি করে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে তার বুবুর শরীরের উপর,,হিয়ার চিন্তা শুধু একটাই কি করে এখন সে সবার সাথে যোগাযোগ করবে,,শ্রাবণের ব্যাগে যেটুকু খুচরা টাকা আছে সেটা দিয়ে তো বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে চাচ্চুর বাড়ি যেতেই সব শেষ হয়ে যাবে,,বাস থেকে নেমে যাও বা একটা ফোন কেনা যেতো সেই টাকা টাও যে আজ তার নেই!!

হিয়াঃ আজ কতোদিন বাদে দাদু বাড়িতে যাচ্ছি,,চাচ্চুর ছেলে টাও বুঝি এখন স্কুলে যেতে শুরু করেছে,,চাচি কি আমার যাওয়া টা স্বাভাবিক ভাবে নিবে,,আমি তো জাস্ট একটাদিনই গিয়ে থাকবো,,কালকে দুপুর বা বিকেলের মধ্যে টাকা টা পেয়ে গেলেই না হয় রাতের গাড়িতে আবার ঢাকা ব্যাক করবো,,কিন্তু কাল গিয়ে সকালে আমাকে দুটো কাজ করতে হবে এক তো চাচ্চুকে বলে যদি এক হাজার টাকার একটা ফোন কিনে নিয়ে সিম টা তুলতে পারি খুব ভালো হবে,,ভাইয়ার নাম্বার টা আমার মনে না থাক কিন্তু উনি যে আমাকে ফোনে না পেয়ে কল করতেই থাকবে আমি জানি আর দ্বিতীয় তো কাল একবার শ্রাবণকে নিয়ে বাবা-মা র কবর টা জিয়ারত করে আসবো সেই যে ঢাকায় আসার পর একবারো তো কখনো তাদের দেখতে যাই নি,,কাল সকালে একবার গিয়ে আর ফোন টাও না হয় একবারে কিনে আনবো,,,,,,জানি না সন্ধ্যের আগে দাদু বাড়ি গিয়ে পৌঁছাতে পারবো কি না,,রাতের দিকে শ্রাবণকে নিয়ে কি করে আমি,,,,,,ওদিকে মানুষ টা যে কি রকম পরীক্ষা দিলো আজ সেটাও জানতে পারলাম না,,মামা কি বই টা দিয়েছিলো ওনার হাতে,,বই টা না পেলে,,ফোনে আমাকে না পেলে উনি তো পুরো পাগল হয়ে যাবে!!
___________________

উজানঃ এ-ই মেয়েটার নাম্বার টাও আবার ওফ কেনো,,পাঁচ ছয় বার মিসড কল এ্যার্লাট হয়ে আছে দেখছি,,কি করছে ওদিকে কে জানে___কয় টা বাজে এখন,,৫টা!! ওহ এসময় তো গুনগুন কে পড়ায় ও,,নির্ঘাত ফোনে চার্জ নেই,,কেয়ারলেস একটা!!

ফোন টা বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ক্ষুধার চোটে পুরো বাড়ি ওলট-পালট করতে শুরু করে উজান,,ফ্রিজ থেকে হিয়ার কালকের রান্না করা বিরিয়ানি টা বের করে ওভেনে চটপট গরম করে গপগপ করে খেতে শুরু করে,,এক হাতে খাচ্ছে তো আরেক হাতে ননস্টপ হিয়ার নাম্বারে কল করছে

উজানঃ সমস্যা কি এই মেয়ের এরকম হুটহাট কে ফোন ওফ করে রাখে,,ফোনে চার্জ নেই তো স্টুডেন্টের বাড়িতে কি চার্জার নেই,,একটু দশ মিনিট চার্জ টা দিয়ে নিলেই তো হয়ে যায় আজব,,অবশ্য চার্জার থাকলেও মাথায় বুদ্ধি টা তো থাকা লাগবে____ফোন টা ওন করো না পিচ্চি,,আজ সারাদিনে একবারো তোমার কন্ঠ টা শুনি নি!!
___________________

রাত আটটা

হিয়াঃ শ্রাবণ শ্রাবণ এ-ই ছেলে,,শ্রাবণ উঠো সোনা,,আমরা এসে গেছি রংপুরে,,উঠো না

শ্রাবণঃ বুবু কোলে নে,,আমার মাথা ঘুরতিছে,,ক্ষুধা লাগছে

হিয়াঃ আচ্ছা নিচ্ছি তুমি একটু কষ্ট করে নিচে নামো আগে,,আমি নেমে নিচ্ছি তোমাকে কোলে

হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে নিচে নেমে একটা বিস্কুট কিনে খেতে দেয়,,এই বিস্কুট দেখেই শ্রাবণের মন টা খারাপ হয়ে আসে,,কোথায় তার পেয়েছে ভাতের ক্ষুধা আর কোথায় তার বুবু তাকে এনে দিচ্ছে বিস্কুট,,ছোট থেকে এই দশ টাকার এ্যানার্জি প্লাস বিস্কুট খেতে খেতে শ্রাবণ ত্যাক্ত

হিয়াঃ মামা যাবা,,রহমান কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে যে গলি টা যায় তার ভেতর দিকে

মামাঃ কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে তো অনেক গলি ই যায় তুমি কোন গলি যাবা

হিয়াঃ আচ্ছা তুমি চলো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি,,

রিক্সা এসে থামে কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে,,কিন্তু বাড়ির সামনে নামতেই হিয়া গুগলি খেয়ে যায়,,তিন বছর আগের এই জায়গা আর এখন কার এই জায়গা পুরো আকাশ-পাতাল তফাৎ,,ফাকা মাঠ টা উঁচু উঁচু বিল্ডিং দিয়ে ভরে গেছে,,এক বাড়ির সাথে আরেক বাড়ির কিঞ্চিৎ পরিমাণ ফাঁকা জায়গা নেই যেনো,,পিচ ঢালা রাস্তা,,দু পাশে ল্যাম্পপোস্ট,,মোড়ের মাথায় রঙ বেরঙের বাহারি দোকান কোনোটা মুদি কোনোটা পার্লার কোনোটা বা বাড়ির সাথে লাগানো শো রুম

হিয়াঃ শ্রাবণ এটা আমরা কোথায় আসলাম,,মামা আমাদের ঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছে তো,,আগে তো এই জায়গায় একটা বিরাট মাঠ ছিলো আমরা যখন তোর সমান ছিলাম ছোট তে এখানে এসে এসে খেলতাম,,কিন্তু সেই মাঠ গেলো কোথায়??___আর এতো গুলো গলি আমি এখন কি করে!!

শ্রাবণঃ বুবু আমার না ভাতের ক্ষুধা লাগছে,,বিস্কুট দিয়ে পেট ভরে নি,,পেট আবার ব্যাথা ব্যাথা করছে

হিয়াঃ ব্যাথা করছে মানে!কো কো কোথায় ব্যাথা করছে বল আমাকে,,আবার এদিকে ব্যাথা করছে,,এখানে??

শ্রাবণঃ আরেএএ আমি এমনি বললাম ঔ ব্যাথা না,,খিদা খিদা,,খিদা লাগছে

হিয়াঃ বেশি ব্যাথা হলে আমাকে বলবি কিন্তু,,কিচ্ছু লুকোবি না,,আমি দেখি কোথাও ভাত পাওয়া যায় কি না এখানে,,

হিয়া এখন কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারে না ভাত খুঁজবে না ওদিকে চাচ্চুর বাড়ি,,রাস্তা দিয়ে এক ভদ্র মহিলা হেঁটে যাচ্ছিলো হিয়া ওনাকে ডেকে ওসমান ভিলা টা কোন গলিতে জিজ্ঞেস করাতে মহিলা টা হিয়াকে দুটো ওসমান ভিলার ঠিকানা বলে দেয়,,হিয়া এখন এ পাশ ও পাশ ঘুরে কোন গলিতে আগে যাবে সেটা ভাবতে শুরু করে,,ভাগ্যিস এ সময় হিয়ার চাচ্চু রিক্সা করে হিয়ার সামন দিয়ে যেতেই মহিলা আর হিয়াকে কথা বলা দেখে থেমে যায়

চাচ্চুঃ টুকটুকি না ওটা!!___টুকটুকির মতোই তো লাগছে,,সাথে কে ওটা শ্রাবণ,,ভাইয়ার ছেলে টা এতো বড় হয়ে গেছে!!____হিয়াআআআ এ-ই হিয়াআআ___শ্রাবণ

চাচ্চুর ডাকে হিয়া পেছন ফিরে,,চাচ্চুকে দেখে হিয়ার কলিজা শান্তি পায়,,এই মানুষ টাকেই তো সে খুঁজ ছিলো এতোক্ষণ ধরে,,চাচ্চুর কাছে যেতেই হিয়ার চোখে পানি চলে আসে,,চাচ্চুকে দেখে হিয়ার খুব মায়া হচ্ছে বয়সের ভাড়ে যতোটা চেহারা টা মলিন হয়ে আছে সাংসারিক কলহে চেহারার সেই ধূসরতা যেনো আরো প্রখর হয়ে দেখা মিলছে,,চাচ্চু শ্রাবণকে কোলে নিয়ে কেঁদে উঠে

চাচ্চুঃ ভাইয়ার ছেলে টা একদম ভাইয়ার মতো হ’য়েছে রে টুকটুকি,,ভাইয়ার মতো দুধে আলতা গায়ের রঙ টিকালো নাক,,চুল গুলোও ভাইয়ার মতো কেমন দাঁড়া হয়ে আছে,,খুব রাগ নাকি রে এই সোনা টার

হিয়াঃ (চোখ মুছে)না গো চাচ্চু আমার ভাই তো খুব মিষ্টি,,আমার সব কথা শুনে

চাচ্চুঃ তা এটা তোর কোনো কাজ গাড়িতে উঠে একটা ফোন করবি তো অনন্ত,,আমি সারাদিনে তোর ফোন না পেয়ে ভেবে নিয়েছিলাম তুই হয়তো আজ আসবি না

চাচ্চুর প্রশ্নে হিয়া সব ঘটনা খুলে বলে

হিয়াঃ ওজন্যেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি,,জানো

চাচ্চুঃ হুম,,,(চোখ মুছে) আমাকে ক্ষমা করে দিস রে মা আমি চাইলেও যে তোদের কে আমার কাছে রাখতে পারি না,,চাইলেও তোদের দু বেলা একটু ভালো মন্দ খাওয়াতে পারি না,,তোর এই চাচ্চু টা খুব অসহায় শ্রাবণ খুব নিঃস্ব

হিয়াঃ তুমি থামবে কি চাচ্চু,,আর নিজের চেহারার এই কি অবস্থা করছো তুমি হ্যা দাঁড়ি কাটা নেই চুল গুলো এলোমেলো তুমি না আগে কি ফিট ছিলা

চাচ্চুঃ মনে সুখ না থাকলে কি চেহারাতে সৌন্দর্য প্রকাশ পায় রে মা,,মনের সুখ টাই হচ্ছে বড় কথা তোরা বুঝবি না

হিয়াঃ বুঝি চাচ্চু সব বুঝি,,আচ্ছা একটা কথা বলো তো তুমি আমাকে আর শ্রাবণকে কি করে চিনলে,,তার মানে আমি আগের মতোই মানে ছোট বেলার মতো এখনো মিষ্টি আছি অনেক তাই না বলো,,বলো বলো

চাচ্চুঃ টুকটুকিকে চিনতে তার চাচ্চুর ভুল হবে বুঝি,,হ্যা তুই এখনো মিষ্টি আছিস একদম আগের মতো_____আচ্ছা আয় তোদের বাড়ি নিয়ে যা-ই অনেক রাত হচ্ছে

_______________

এদিকে হিয়াকে ফোনে না পেয়ে উজান পুরো অস্থির হয়ে উঠে,,সন্ধিকে ডেকে নিয়ে আবার রওনা দেয় হিয়াদের বাড়ি,,এরকম তো হবার কথা না হাজার রাগ করুক উজানের পরীক্ষা কি রকম হ’য়েছে সেটা এক বার হলেও হিয়া ফোন করে জিজ্ঞেস করে কিন্তু আজ কেনো!!হিয়ার খোঁজ নিয়ে সন্ধি দূত বাহিরে আসে উজান এতোক্ষণ বাহিরে দাঁড়িয়ে সন্ধির জন্য অপেক্ষা করছিলো

উজানঃ এরকম হাঁপাচ্ছিস কেনো,,হিয়া কোথায়?

সন্ধিঃ হিয়া বাড়িতে নেই,,

উজানঃ বাড়িতে নেই মানে!!

সন্ধিঃ হ্যা আমি ওর রুমমেট না তো ঔ কি বলে মিতু মিতু পাশের রুমে যে থাকে ওকে গিয়ে বললাম তো ও বললো হিয়া নাকি শ্রাবণকে নিয়ে ৯টা কি ১০টার দিকে বেড়িয়েছে আর এখন অবধি বাড়ি ফেরে নি

উজানঃ হোয়াট!!বাড়ি ফেরে নি!!বাড়ি ফেরে নি মানে টা কি,,বাড়ি ফেরে নি ওর ফোন ওফ,,কোথায় ও কি,করছে টা কি ও

সন্ধিঃ আচ্ছা তুই একটু শান্ত হ,,দেখ ৯টা পাড় হচ্ছে এর বেশি আমি বাড়ির বাহিরে থাকতে পারবো না,,রুপম তুষার এরা সবাই আসছে তুই দেখিস হিয়াকে ঠিক খুঁজে পা-ওয়া যাবে

উজানঃ আমার খুব ভয় হচ্ছে সন্ধি,,তুই তুই একটু ঝিনুক কে ফোন দে না আমি ততোক্ষণে একটু ওর টিউশনের ওখানে ফোন দিয়ে দেখি

সন্ধিঃ হুম দিচ্ছি

উজান হিয়ার দুটো টিউশনের ওখানে ফোন দিয়ে শুনে হিয়া আজ কোথাও পড়াতে যায় নি,,এদিকে সন্ধি ঝিনুক কে ফোন করলে ঝিনুক বলে হিয়া তো আজ ক্লাস করতেও নাকি ভার্সিটি আসে নি,,শুনেই উজানের বুক টা আরো ভয়ে কেঁপে ওঠে,,আবার কোথায় হারালো হিয়া

সন্ধিঃ দেখ এমনোতো হতে পারে হিয়া সে বারের মতো কোনো কাজে

উজানঃ না সন্ধি তা হবার হলে তো হিয়া এটলিস্ট ওর ফোন টা ওফ রাখতো না,,কি যে করছে,,এই সোয়ার এবার যদি ওকে শিকল দিয়ে ওর পা আমি বেঁধে না রাখছি,,ও জানে ওকে নিয়ে আমার কি পরিমাণ টেনশন হয় আর ও কি করে সবসময়,,এটা একটা কোনো কথা
__________________

হিয়াঃ বাড়িতে সবাই কেমন আছে চাচ্চু??

চাচ্চুঃ আছে সবাই ভালোই আছে,,

হিয়াঃ দাদুর কি এখনো আমার আর শ্রাবণের উপর রাগ আছে?

চাচ্চুঃ ঔ লোকটার কথা আমার সামনে বলিস না তো,,নিজে তো নিজের অহংকার নিজের নীতির জন্য আমাদের শেষ করলো সাথে এখন সেই অহংকারের জন্য তোদের কেও তোদের রাইট গুলো থেকে বঞ্চিত করছে,,বেয়াদব

হিয়াঃ নিজের বাবাকে গালি দিচ্ছো তুমি চাচ্চু এটা কি ঠিক হচ্ছে

চাচ্চুঃ বাধ্য হয়ে দিচ্ছি রে মা,,ঔ লোকটা চাইলেই তোকে আর শ্রাবণকে একটা সুন্দর জীবন দিতে পারতো,,কিন্তু ওনার কাছে ওনার জেদ টা এতো টাই প্রখর যে

হিয়াঃ আচ্ছা ওসব বাদ দেও,,,এই জায়গা টা বেশ উন্নত হয়ে গেছে তাই না,,কি বিশাল বিশাল সব বিল্ডিং গড়ে উঠেছে গো চাচ্চু,,সেই আগের পরিবেশের ছিটেফোঁটাও এখন আর নেই কিচ্ছু

চাচ্চুঃ মানুষ গুলোই রঙ বদলে নিয়েছে আর তো তোর চারিপাশ
_______________

রুপমঃ একটু শান্ত হ,,আমরা আমরা খুঁজছি তো,,আমি সবাই কে বলে দিয়েছি বাইক নিয়ে পুরো শহর টা ঘুরে দেখছে ওরা

উজানঃ তোর মনে হয় সিফাত বা নীলিরা হিয়ার কোনো ক্ষতি করলে সেটা ওপেনলি করবে, সবার চোখের সামনে,,রাত দশ টা বাজছে রুপম একটা মেয়ে সকাল থেকে নেই,,এটা সম্ভব!!

উজান রাগে ওর মাথার সব চুল খিঁচে ধরে,,এমনি সময় ওর বাড়ি থেকে ওর মা’র ফোন আসে,,উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে ফোন টা রিসিভ করে

উজানঃ বলো মা

বাসবিঃ কি রে রাজা সারাদিনে কোনো খোঁজ নেই আজ তোর,,শরীর ঠিক আছে

উজানঃ আছে মা বলো

বাসবিঃ পরীক্ষা কেমন দিলি,,আর তো একটা পরীক্ষা বাকি না___আচ্ছা শোন কালকে তুই আসছিস তো রংপুর

উজানঃ কালকে কেনো??

বাসবিঃ কেনো মানে!!তোর না কাল রংপুর আসবার কথা কাল ৬তারিখ ভুলে গিয়েছিস নাকি তুই,,তোর বোনের কাল বিয়ে রাজা

উজানঃ বোনের বিয়ে মানে!!___ও শীট আমি কি করে নীলিমার বিয়ের কথা টা

বাসবিঃ ঘরোয়া ভাবে কম আয়োজনে করতে চেয়েছিলাম তবুও যা করছে না তোর বাবা,,তার বড় মেয়ের বিয়ে নাকি এরকম পানসে ভাবে হচ্ছে উনি মেনেই নিতে পারছে না,,কি যে তার রাগ___আচ্ছা তুই কিন্তু রাতের মধ্যে ব্যাগ ট্যাগ সব গুছিয়ে নিয়ে কালকের সকালের ফ্লাইটে এখানে এসে পৌঁছাস,,ঠিক আছে

উজানঃ মা একটা কথা ছিলো

বাসবিঃ বল

উজানঃ মা আমি না কাল আসতে পারবো না,,আমি আসলে এখানে একটা কাজে

বাসবিঃ কি বললি তুই!!নীলি শুধু শুনুক তোর সাথে এ জন্মেও সে কিন্তু কথা বলবে না

নীলিমাঃ কি বলে মা তোমার রাজা ও আসবে না??

বাসবিঃ নে কথা বল,,বলে বল কালকে সকালেই ফ্লাইটে সে যেনো রওনা দেয়

নীলিমাঃ দেও____কি রেএএএএএএএ শুনলাম নতুন নতুন প্রেম শুরু করছিস তা কাল ভাবিকেও নিয়ে আয় না বাড়িতে,,আমার সাথে না হয় তোদের বিয়ে টাও

উজানঃ হোয়াট রাবিস,,কার কাছ থেকে এসব শুনেছিস তুই হুদাই

নীলিমাঃ আসে আসে অনেক কথাই কানে আসে,,তুই আয় খালি তোর কি অবস্থা করি দেখবি তুই শুধু

উজানঃ হুম,,আমি আমার বউকে এরকম পানসে করে বিয়ে করবো না,,আমার বিয়ে হবে পুরো ধামাকা ভাবে,,হু____নীলি শোন না

নীলিমাঃ বল??

উজানঃ কালকে আসা টা কি আমার খুব জরুরি,,আমি আসতাম বিলিভ কর কিন্তু আমি এখানে একটা বিরাট প্রবলেপে পড়ে

নীলিমাঃ আসতে পারবি না তাই তো,,এ্যান্গেজমেন্টের দিনো এলি না,,গায়ে হলুদের দিনো নাকি পরীক্ষা আসতে পারবি না,,আর কাল আমি বিয়ে করে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছি এখনো তুই বলবি তুই আসতে পারবি না!!

উজানঃ নীলি আমার কথা টা শোন??

নীলিমাঃ এমনিতে বিয়ে টা হচ্ছিলো না বলে কতো জনের কতো কথা,,আর কাল যখন,,থাক আসতে হবে না তোকে,,তুই তোর সমস্যা গুলোই নিয়ে থাক,,আমরা কে??
_______________

চাচ্চুঃ শোন হিয়া জমি বিক্রির টাকা হয়তো এখনই না পেতে পারিস,,ওটার অনেক ঝামেলা আছে কাগজপত্র তৈরি খাজনা খারিজ অনেক ব্যাপার,,তবে কাল একটা মিটিং বসবে ওরা কিন্তু তোকে আর শ্রাবণকে একঘরো করে দিতে চেষ্টা করবো কিন্তু তোকে strong থাকতে হবে,,কতো দামে জমি যাবে কার ভাগে কতো পড়বে,,ওরা হয়তো তোকে কম দিতে চাইবে কিন্তু তুই কথা তুলবি এ ব্যাপারে বলবি শ্রাবণ ছেলে হিসাবে এখানে সবার মতো শ্রাবণের ও পুরো পাওনা আছে

হিয়াঃ তুমি একটু আমার সাথে সাথে থেকো চাচ্চু

চাচ্চুঃ আমি তো থাকবোই,,কিন্তু সবার সামনে হয়তো বেশি কথা বলতে পারবো না তোকে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে কথা বলতে হবে,,আর ফসলের টাকা কিন্তু তুই দু বছর থেকে পাস নি তোকে দেওয়া হয় নি,,এবারের টাকা টা তুই নিজে চেয়ে নিবে বলবি দশ হাজারের একটা টাকা তুই কম নিবি না

হিয়াঃ হুম বুঝলাম,,চাচ্চু একটা কথা ছিলো বলছি কি তুমি আমাকে এক হাজার টাকা দিতে পারবা আমার ঔ একটা ফোন লাগবে,,আমি তোমাকে ফসলের টাকা টা পেয়েই দিয়ে দেবো কিন্তু ফোন টা কিনে সিম টা লাগানো খুব জরুরি আমার

চাচ্চুঃ খুব বড় হয়ে গেছিস না চাচ্চুকে টাকা ফেরত দিতে চাইছিস,,দেবো কিনে ও নিয়ে তুই ভাবিস না

হিয়াঃ চাচ্চু আর একটা কথা,,বাড়ি গিয়ে কি একটু ভাত যোগাড় করে দিতে পারবা শ্রাবণের না খুব খিদে পেয়েছে,,আমাকে বললো তখন আমি তো হোটেল বা কিছু খুঁজে পেলাম না

চাচ্চুঃ আর তোর,তোর খিদে পায় নি?

হিয়াঃ আমার খিদে পায় না চাচ্চু!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here