মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-31

0
1037

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-31

রুপমঃ দেখ আমরা তো এদিকে আছি,,সব খোঁজ খবর রাখছি,,তুই যেরকম হিয়াকে ভালোবাসিস হিয়াও কিন্তু সে রকম আমাদের নিজের বোনের মতো শ্রাবণো ঠিক তেমনি,,,তুই কাল সকালের ফ্লাইটে যা রংপুরে

তুষারঃ আর খুব কিছু হলে না হয় কালকেই আবার রাতের ফ্লাইটে ঢাকা ব্যাক করবি এক দু ঘন্টার মতোই তো যেতে আসতে লাগবে প্লেনে

উজানঃ কিন্তু হিয়াকে না খুঁজে আমি কি করে

তুষারঃ দেখ হিয়া যেমন তোর দায়িত্ব নীলিমাও কিন্তু তোর বোন,,ওর তো কিছু ইচ্ছে আছে নাকি,,এমন তো হতে পারে হিয়া একদম ঠিক আছে কিন্তু তুই শুধু শুধু নীলির বিয়ে তে না গিয়ে ওকে কষ্ট দিলি এটা কি ভালো দেখাবে

উজানঃ আমার নিজেরো কি ভালো লাগছে,,ছোট্ট থেকে একসাথে মানুষ আমরা আর কাল সেই বোন আমার বিয়ে করে,,,,,আচ্ছা তোরা যা ব্যবস্থা করতে হয় কর আমি আমি কাল সকালে গিয়েই রাতের ফ্লাইটে আবার আসছি,,এই কয়েকটা ঘন্টা তোরা একটু দেখে নিস

রুপমঃ হুম
!
!
!

চাচ্চু হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসতেই অনেকের মুখ টা কালো হয়ে আসে,,বিশেষ করে হিয়ার রিফা চাচির আর ছোট চাচ্চু ব্যাপারটা সহজে হজম করতে পারেন না,,হিয়া আর শ্রাবণ সবাইকে সালাম দিয়ে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে তারা সবাই কেমন আছে,,সবাই শুধু কথা বলতে হয় বলেই হিয়ার দাদুর সামনে হিয়ার সাথে সৌজন্যের সাথে কথা গুলোর উওর দেয়,,হিয়ার দাদুর হিয়াদের উপর রাগ থাকলেও আজ অনেকদিন পর ছোট্ট শ্রাবণের মাঝে উনি ওনার বড় ছেলের ছায়া দেখতে পেয়ে অনেকটা গলে যান,,শ্রাবণো কম যায় না আমাদের,সে তার দাদুর কাছে গিয়ে একটা হাসি দিয়ে দাদুর দাঁড়ি গুলো নিয়ে খেলতে গিয়ে ফিঁক করে হেঁসে দেয়
!
!
!

চাচিঃ হিয়া আর শ্রাবণ আজ আসবে সেটা তুমি আমাকে আগে বললেই পারতে পুতুলের বাবা,,এখন আমি ওদের জন্য আবার নতুন করে ভাত বসাবো তরকারি রান্না করবো,,এক হাতে কতো কি করবো আমি তোমার বাচ্চা সামলাবো তোমার বুড়ো বাবা মা-কে দেখে রাখবো আর কতো কাজ করে নেবা আমাকে দিয়ে তুমি

চাচ্চুঃ আজ তোমার ভাগ্নি বা বোন আসলে তুমি এই কথা টা বলতে পারতা রিফা,,ঠিক আছে কিচ্ছু করতে হবে না তোমাকে আমার জন্য তো রাতের খাবার রাখছো সেটাই দেও,,আমার হিয়ার আর শ্রাবণের এক প্লেট হলেই যথেষ্ট

হিয়ার চাচ্চুর কথা টা রিফা চাচির অপমানে গিয়ে লাগে,,হিয়া এতোক্ষণ ডাইনিং এ দাঁড়িয়ে চাচ্চু আর তার চাচির পুরো কথা টা শুনছিলো অবশ্য হিয়া যাতে শুনে সেই জন্যেই চাচি কথা টা জোরে বলেছিলো,,চাচ্চু ভাতের প্লেট নিয়ে এসে হিয়ার পাশে এসে বসতেই চোখ দিয়ে জল বের করে ফেলে,,মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারে না,,হিয়া বুঝে তার চাচ্চুর কষ্ট টা,,বুঝে তার চাচ্চু কতো টা অসহায় আর নিঃস্ব,,

হিয়াঃ আমি এখানে এসে তোমার কষ্ট টা আরো বাড়িয়ে দিলাম তাই না চাচ্চু

চাচ্চুঃ আমাকে ক্ষমা করে দিস রে মা,,তোর চাচ্চুর যে তোকে আলাদা করে ভাত দেবারো ক্ষমতা নেই আজ

হিয়াঃ প্লিজ চাচ্চু এখন এসব বাদ দেও বাড়িতে সব মানুষ আছে আমি চাই না এ নিয়ে আর কথা বাড়ুক,,তুমি শুধু আজকের রাত টা আমার আর শ্রাবণের একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করো আমি কালকে কি হয় না হয় সব শুনে রাতের গাড়িতেই না হয় ঢাকা ফিরবো

চাচ্চুঃ আচ্ছা আমি দেখছি,,তুই আগে ভাত টা শ্রাবণকে খাইয়ে দে দেখি,,কোথায় ঔ বিচ্ছু টা

হিয়াঃ মনে হয় দাদু ঘরে আছে দাদু কে দেখলাম তখন ডেকে নিয়ে গেলো,,আচ্ছা আমি গিয়ে দেখছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও,,,,কিন্তু তুমি রাতে কি খাবে?

চাচ্চুঃ তোরা না খেলে যে আমার পেটে ভাত ঢুকবে না মা!!

!
!
!

হিয়া উঠে শ্রাবণকে খুঁজতে ওর দাদুর রুমে যেতেই দেখে শ্রাবণ ওর দাদুর কোলে বসে দাদুর সাথে কিসব গল্প করছে,,দাদু গম্ভীর ভাবে থাকলেও কোথাও গিয়ে শ্রাবণের প্রতি তার মায়া হচ্ছে সেটা ওনার চোখেমুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে,,হিয়া রুমে গিয়ে দাঁড়াতেই শ্রাবণ ওর দাদুর কোল থেকে নেমে হিয়ার কাছে দৌড়ে আসে

হিয়াঃ দাদু কিছু মনে করো না ও ছোট মানুষ বুঝে নি তাই তোমার কাছে এসে

দাদুঃ বসো এখানে(গম্ভীর কন্ঠে)

হিয়া কি করবে বুঝতে পারে না কেনো তার দাদু তাকে আবার বসতে বলছে শ্রাবণ কিছু করে নি তো আবার নাকি ও এখানে এসে কোনো ভুল করেছে,,সব ভাবনাকে বাদ দিয়ে নিরুপায় হয়ে শ্রাবণকে নিয়ে সামনের সোফা টায় গিয়ে বসে যায় হিয়া,,

দাদু গম্ভীর গলায় পেপারের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে হিয়া কোথায় পড়ে,,কোথায় থাকে কিভাবে সংসার চালায় কিভাবে শ্রাবণকে মানুষ করছে সব শুনে নেয়

হিয়াঃ এই তো এভাবে হয়ে যায় সবটা

দাদুঃ(একটা বড় দম ফেলে) তোমার ছোট চাচ্চু চাইছে জমি গুলো নিলামে দিয়ে যা টাকা আসবে ওটা সবার মাঝে ভাগ হবে,,তোমার ইচ্ছে কি?

দাদুর প্রশ্নে হিয়া অবাক হয়ে যায় তার দাদু কি না তার কাছে তার ইচ্ছে সম্পর্কে জানতে চাইছে,,এটা কি সত্যি সে শুনছে?

হিয়াঃ মানে দাদু আমি কি বলবো বলো,,চাচ্চু যদি এটা ভালো মনে করে তাই করুক এমনিতেও তো আমি কখনো এখানে এসে থাকবো না আর জমি নিয়েও বাড়ি করার মতো সামর্থ্য আমার নেই তাই যা ভালো হয় তোমরা করো,,টাকা টা পেলেই হয়তো আমার সুবিধে হবে

দাদুঃঠিক আছে,,কালকে বিকেলে লোক আসবে এসব বিষয়ে কথা বলতে,,আমি আছি, আমি তোমাদের প্রাপ্য টা দেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো

হিয়াঃ ধন্যবাদ দাদু,,এতে অনেকটা উপকার হবে আমার
দাদুঃ রাতে খেয়েছো কিছু এসে?

হিয়াঃ হ্যা মানে আমি খেয়েছি শ্রাবণকে খাওয়াবো এখন,,চাচি ভাত দিলো

দাদুঃ ঠিক আছে যাও কালকে কথা হবে..

হিয়া মাথা নেড়ে বেড়িয়ে এসে শ্রাবণকে খাওয়াতে শুরু করে,,আর দাদু কে মিথ্যা বলে যে সে খেয়েছে নাহলে আবার এই খাবার নিয়ে রিফা চাচির সাথে অশান্তি কি দরকার!!

!
!
!

পরেরদিন সকালেঃ

সকালের ফ্লাইটে রংপুরে এসে উজান এখন সৈয়দপুর এ্যায়রপোর্টে,,এখান থেকে রংপুর পৌঁছাতে হায়েস্ট এক ঘন্টা বা তারো কম,,

উজানঃ হ্যা মা আমি কেবলই ল্যান্ড করলাম,,না না তোমাদের কাউকে নিতে আসতে হবে না,,আমি বাস থেকে মেডিকেল মোড়ে নেমে এখন কল করবো তুমি ফুফাকে পাঠিয়ে দিও একসাথে বাড়িতে যাবো না হয়,,ফুফা ফোন করেছিলো বললো চেকপোস্ট এর কাছাকাছি আছে ওজন্য

বাসবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে আসিস

উজানঃ মা আর একটা কথা আজ বিয়ে টা হয়ে আসলেই কিন্তু আমি রাতে আবার ব্যাক করবো,,তুমি প্লিজ এ নিয়ে আমাকে আর জোর করবে না আমি সত্যি ওখানে একটা বড় সমস্যা তে আছি

বাসবিঃ আমি তোর গলা শুনেই সব বুঝতে পারছি রাজা ঠিক আছে আমি তোকে জোর করবো না,,তুই নীলির কথা ভেবে যে আসলি এটাই অনেক আমার কাছে

উজানঃ আচ্ছা রাখছি এখন,,গাড়ি না পেলে বাস নিতে হবে
!
!
!
খাবার টেবিলে আজ রিফা চাচির এক ছেলে দুই মেয়ে আর ছোট চাচ্চুর এক ছেলে বসে সকালের নাস্তা করছে,,নাস্তা তো করছে না বলা চলে খাবার নষ্ট করছে,,শ্রাবণ বসে বসে সবার কান্ড দেখছে,,বাচ্চা গুলোর কেউ কেউ শ্রাবণকে মন থেকে গ্রহন করলেও ওদের মধ্যে যারা একটু বড় তারা আবার যতোটা পারছে শ্রাবণকে এড়িয়ে চলছে

দাদুঃ রিফা,,,সুমনা

সুমনাঃ হ্যা আব্বা বলেন

দাদুঃ সবাইকে ডিম দিছো শ্রাবণের পাতে ডিম কোথায়??রিফা

রিফাঃ জ্বী আব্বা

দাদুঃ যাও গিয়ে এক্ষুনি শ্রাবণের জন্য একটা ডিম ভেজে আনো

হিয়াঃ না না দাদু তার প্রয়োজন নেই,, শ্রাবণ চা দিয়ে এমনি রুটি খেতেই অভ্যস্ত

দাদুঃ তুমি এর মধ্যে কেনো কথা বলছো,,আমি বলেছি তোমাকে এর মধ্যে কথা বলতে

দাদুর গম্ভীর গলা আর চোখ রাঙানিতে হিয়া চুপ হয়ে যায়,,রিফা চাচি দাঁত মুখ খিঁচে রান্নাঘরে গিয়ে রাগে গটগট করতে করতে ডিম টা অমলেট করে নিয়ে এসে শ্রাবণের পাতে তুলে দেয়

শ্রাবণঃ দাদুউউ তুমি এগুলো কি কাচ্ছ(খাচ্ছ) কেমন সবুজ সবুজ

দাদুঃ করল্লার রস খাবে নাকি তুমি

শ্রাবণঃ করল্লার রস আবার কি জিনিস,,দেও দেখি আমি খাই একটু

হিয়াঃ শ্রাবণ না ওগুলো দাদুর জিনিস,,দাদুকে ডক্টর দিয়েছে খেতে

শ্রাবণঃ আচ্ছা,,দাদু তুমি খাও আমি কাবো (খাবো)না তাহলে

দাদুঃ তুমি সবসময় ওকে এতো বকো কেনো

হিয়াঃ না মানে,,দাদু আমার একটা কথা ছিলো ঔ মিটিং তো বিকেলে হবে আমি চাইছিলাম একবার গিয়ে বাবা আর মা র কবর টা দেখে আসতে,,আমি এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসবো তুমি ভেবো না

দাদুঃ তুমি তোমার বাবা মার কবর দেখতে যেতে চাইছো সেটা তো বিষয় না,,কিন্তু তুমি একা যেতে পারবা?

হিয়াঃ হ্যা দাদু আমি পারবো যেতে,,ও নিয়ে তুমি ভেবো না চাচ্চু আমাকে বলেছে আমাকে দিয়ে উনি ওদিক দিয়ে ওনার দোকানে চলে যাবে,,শুধু তুমি যদি অনুমতি দেও তাহলে

দাদুঃ ঠিক আছে যাও,,তবে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো বিকেলের আগে আগে মিটিং শুরু হবে

হিয়াঃ হুম,,

!
!
!

হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে কবরস্থানে আসে,,মুসলিম ধর্ম মতো মেয়েদের কবরস্থানে আসা টা নিষেধ কিন্তু অনেকে এই বিধান টা মানে অনেকে না,,হিয়া আসার সময় হাতে করে একটা গোলাপের চাঁড়া নিয়ে আসে,,

চাচ্চুঃ এখন কি আর কবর টা খুঁজে পাবি তুই,,সেই কবরের উপর কতো জনের যে কবর হয়ে আছে এর মধ্যে

হিয়াঃ আমি জানি চাচ্চু,,তুমি এখন যাও দোকানে অনেক দেড়ি করিয়ে দিলাম তোমার,,আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকবো না

চাচ্চুঃ আচ্ছা শোন আমি আসার সময় তোর জন্য ফোন কিনে নিয়ে আসবো,,আর এনআইডি কার্ড ছাড়া তো তুই সীম তুলতে পারবি না,,আমি না হয় আমার একটা পুরাতন সীম তোকে দেবো,,তুই ঢাকা ফিরে তোর নাম্বার টা তুলে নিস

হিয়াঃ ঠিক আছে চাচ্চু

চাচ্চুঃ আর এই খুচরো কিছু টাকা রাখ,,যাওয়ার সময় রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরিস,,

হিয়াঃ ঠিক আছে,,আসো এখন তুমি

!
!
!

ফুফাঃ এই শোন এদিকে তো কোনো রিক্সা পাচ্ছি না,,তোর শরীর কি পবিত্র আছে??

উজানঃ হ্যা হঠাৎ এই প্রশ্ন?

ফুফুঃ চল তাহলে কবরস্থানের ভেতরের রাস্তা টা দিয়ে বের হই,,মেইন গেটে গিয়ে দাঁড়ালে বাড়ি পৌঁছাতে দশ মিনিট লাগবে

উজানঃ কি বলো ওইদিকের রাস্তা দিয়েও এখন বের হওয়া যায় নাকি!!

ফুফুঃ হুম এখব কবরস্থানে আসার অনেক কয়টা রাস্তা হয়েছে আয়,,

উজানঃ চলো,,তাড়াতাড়ি বাড়ি গেলেই শান্তি,,

ফুফুঃ হুম,,

!
!
!

নিজের বাবা মা’র কবরের সমানে গিয়ে দাঁড়াতেই হিয়া কেঁদে ফেলে অঝোরে,,সেই কান্না তার গাল বেয়ে চিবুক বেয়ে টপ করে পড়ে মিশে যায় মাটিতে,,শ্রাবণ তার টুকরটুকুর চোখ দিয়ে তার বুবুকে দেখায় ব্যস্ত,,সে বুঝতে পারছে না তার বুবু এরকম করে কাঁদছে কেনো,,তার বাবা মা কি এখানে শুইয়ে আছে কিন্তু কোথায় সে যে দেখতে পাচ্ছে না,,সে হিয়াকে ধরে টানছে বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে বুবু তোর তুই কাঁদছিস কেনো,,কেনো কাঁদছিস তুই এরকম করে,,হিয়া কাঁদছে অঝোরে কাঁদছে,,সেই পুরানো রক্ত মাখা স্মৃতি তার মনে আবার ভেসে আসছে,,সে ভয়ে কষ্টে কেঁপে উঠছে

হিয়াঃ আমি ক্লান্ত বাবা আমি খুব ক্লান্ত মা,,,আমার টাকা নেই মা,,তোমাদের তোমাদের কে দেখতে আসার জন্য যে ভাড়া টা লাগবে আমার কাছে সেই টিকিটটা কাটার মতোও টাকা নেই,,টাকার অভাবে আমি চাইলেও পারি না তোমাদের কে দেখে যেতে,,ও মা মা বলো না মা আর কতোদিন কতোদিন আমাকে এভাবে সবার সাথে এই সমাজর সাথে যুদ্ধ করে করে বেঁচে থাকতে হবে,,আমি যে আর পারি না মা,,বাবা তোমরা একবার ফিরে আসো না এসে দেখো না আমরা কিভাবে কি কষ্টে আছি,,,,,বাবা একবার দেখো না তোমার এই মেয়ে টাকে এই বাচ্চা টাকে,,কেনো এ-তো টা নিঃস্ব করে দিয়ে তোমরা চলে গেলে আমাদেরকে একলা রেখে________আমার পেটে ক্ষুধা লাগে মা খুব ক্ষুধা লাগে মা আমার ঘরে ভাত নাই মা,,আমার আমার ঘরে ভাত রান্না করার চাল নাই মা,,বাবা ও বাবা আর কতোদিন আমাকে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হবে তুমি বলতে পারবা কতোদিন!!

বোনের এরকম কান্না দেখে শ্রাবণ ভয়ে কেঁদে উঠে,,কি হয়েছে তার বুবুর সে কাঁদছে কেনো এরকম করে!!

শ্রাবণঃ বুবু বুবু আমার ভয় করছে বুবু,,তুই কাঁদছিস কেনো বুবু,,ঔ বুবু আমার ভয় করছে,,বুবু শুন না বুবু জায়গাটা কেমন জানি চল না চল বাড়ি ফিরে যাই ও বুবু

হিয়া কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে আরো কেঁদে ফেলে,,

হিয়াঃ আমি আর পারছি না শ্রাবণ,,আমি আর পারবো না,,ভেঙ্গে গেছি আমি শক্ত হয়ে দাঁড়ানো সাহস নেই যে আর তোর বুবুর

হিয়া কাঁদতে কাঁদতে কিছুক্ষন পর অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে সে,,এক হাতে যতোটা পারে কবরের আশেপাশে সব পরিষ্কার করে দিতে থাকে,,

হিয়াঃ শ্রাবণ ফুলের গাছ টা এদিকে আন তো,,

শ্রাবণঃ কি করবি এতা (এটা) দিয়ে

হিয়াঃ এটা এখানে লাগিয়ে দিয়ে যাবো,,দেখ এখানে আরো কতো সুন্দর সুন্দর ফুল গাছ,,হলুদ বেগুনি লাল,,এটাও একদিন বড় হয়ে ফুল দেবে দেখিস

শ্রাবণঃ লাল ফুল দেবে,,ইয়ে আমি আমি লাগাবো

হিয়াঃ আচ্ছা আচ্ছা দুজনে লাগাবো

হিয়া একটা ভাঙ্গা ইট দিয়ে মাটি খুঁড়ে গোলাপ গাছ টা ওখানে খুব যত্ন ভরে লাগিয়ে দেয়,,কিন্তু পানি এখন কোথায় পাবে সে গাছ টাতে দেবার জন্য,,অবশ্য যে কবরস্থান টা দেখাশুনা করে সে সব গাছেই রোজ পানি দিয়ে যায়,,হিয়া ভাবে যাওয়ার সময় সে কেয়ারটেকার কে বলে পানি দেবার ব্যবস্থা করে দিতে বলবে,,

হিয়াঃ শ্রাবণ চলো এখন,,বাড়ি ফিরতে হবে

শ্রাবণঃ বুবু আমার না ঔ বাড়িতে যেতে ভালো লাগে না,,তুই ঢাকা কখন যাবি ভালো ভাইয়ার কাছে যাবো আমি

হিয়াঃ যাবো ভাই আজকেই যাবো,,মানুষ টা না জানি আমার দেওয়া চিঠি টা পেয়েছি কি না,,না পেলে তো উনি তো পুরো পাগল হয়ে যাবে,,ওনার সাথে কথা না বলা অবধি আমারো যে ভালো লাগছে না,,যদি একটা বার ওনাকে দেখতে পারতাম!!

হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে আসতেই উজান ওর ফুফাকে নিয়ে হিয়ার বাবা-মা র কবরস্থানের সামন দিয়ে মেইন গেটের দিকে আসতে থাকে,,ওমনি হিয়ার বাবা-মার কবরের দিকে চোখ পড়তেই উজান একটু থেমে যায়

ফুফাঃ কি হলো থামলি যে?

উজানঃ একটু দাঁড়াও

উজান গিয়ে একটা লাঠি নিয়ে এসে ওর ব্যাগ থেকে জার্নির সময় যেই পানির বোতল টা প্লেনে দিয়েছিলো সেটা বের করে এনে হিয়ার লাগানো ফুল গাছ টার সামনে গিয়ে বসে যায়

উজানঃ মনে তো হচ্ছে গাছ টা কিছুক্ষণ আগে লাগানো,,কিন্তু কান্ড ঞ্জান দেখছো মানুষের তুমি ফুল গাছ টা লাগিয়েছে ঠিকই কিন্তু একটা কিছু দিয়ে ভাড় না দিলে তো গাছ টা পড়ে যাবে যখনতখন এটুকু বুঝেনি____আর গাছ টায় যে একটু পানি দিতে হবে সেটাও বুঝে না যেনো

উজান লাঠি টা মাটিতে গুঁজে দিয়ে গাছ টায় ভাড় দিয়ে একটা সুতা খুঁজে বেঁধে দিয়ে পানি দিয়ে দেয়,,এখন গাছ টা খুব সুন্দর ভাবে শিকড় আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে যায়!!❤️

!
!
!
!

উজান বাড়িতে আসতেই ছোট জিনিয়া থেকে শুরু করে বাড়ির সবাই হামলে পড়ে উজানের উপর,,বাসবি তো একদম তার রাজাকে বুকে আগলে মায়ের কোলের সব ভালোবাসা দিতে ব্যস্ত,,

জিনিয়াঃ ছাড়ো ছাড়ো,,ও ভাইয়া ভাইয়া ভাবির ছবি দেখাও না ভাইয়া,,প্লিজজজজ

উজানঃ কি শুরু করলি কি বল তো,,আর তুই পার্লার যাবি কখন সাজবি না??নাকি এরকম ফকিন্নি গুলোর মতো বিয়ে করবি শুনি

নীলিমাঃ মা তোমার ছেলে কিন্তু কথা ঘুরাচ্ছে,,উমহুম তোর এই চালাকি চল বে না দেখা বলছি ভাবির ছবি দেখা

উজানঃ ফ্রি ফ্রি কেনো দেখাবো তোদেরকে দেখাবো শুনি,,আমার বউ স্পেশাল তাকে দেখতে এ্যাপায়মেন্ট নিতে হবে বুঝলি,,ভাগ এখন

জিনিয়াঃ মা দেখছো কি বলছে কি তোমার ছেলে,,বিয়ে না করতেই বউয়ের চামচামি শুরু করছে কি খারাপ

বাসবিঃ (উজানের মাথায় হাত বুলে দিয়ে) যা তো তোরা,ভুল কি বলছে আমার ছেলে,,আমার রাজার পছন্দ স্পেশাল ব’লেই কথা,,আমি ওসব ছবি টবি দেখবো না আমি আমার রাজার বউকে সামনাসামনি দেখবো,,দু’জনকে একসাথে পাশাপাশি রেখে দেখবো

উজানঃ দেখ,,মা আমার কতো ভালো দেখলি,,

বাসবিঃ এখন যা নীলি তুই রেডি হয়ে নে বিকেলের মধ্যে কিন্তু ওরা আসছে,,আর রাজা তুই দেখ বিহানকে নিয়ে কতোটা কি সামলাতে পারিস,,আমি একটু সালেহার বাড়ি থেকে আসছি

জিনিয়াঃ তুমি আবার সালেহা আন্টির বাড়ি কেনো যাচ্ছ এখন?

বাসবিঃ কি করবো ওকে ডেকে নিয়ে এসে রোস্ট আর মাছ টা ভেজে নেই,,এমনিতে ঘরোয়া আয়োজন হাতে গোনা ১০ ১৫মানুষ আসবে,,তার উপর যার রান্না করার কথা সে আসছে না তোর বাবা খুব ক্ষেপে আছে,,আমি দেখি সালেহাকে ম্যানেজ করে নিয়ে আসি,,

!
!
!

হিয়াঃ সালেহা খালা না!!___খালা কেমন আছো তুমি?

সালেহা খালাঃ আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস রে মা?এটা কি সেই ছোট্ট শ্রাবণ নাকি?

হিয়াঃ হ্যা খালা আমরা ভালো আছি,,তুমি কি হ্যা ঔ যে ফোন করা বন্ধ করে দিলে তো দিলে আর কোনো যোগাযোগ রাখলে না,,

সালেহা খালাঃ আসলে ঔ কি বলতো আমার ফোন টা না হারিয়ে গিয়ে তোর নাম্বার আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম তাই জন্য

হিয়া বুঝতে পারে সালেহা খালা ওকে মিথ্যা বলছে কিন্তু হিয়া আর কিছু না বলে সব টা বিশ্বাস করে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে,,হয়তো হিয়াকে খালা যেই দু হাজার টাকা করে দিতো সেটা দিতে না পারার জন্য সালেহা খালা মিথ্যা বলছে তাকে!!

হিয়াঃ আচ্ছা ওসব বাদ দেও,,কালকে যে তোমাকে বাড়িতে দেখলাম না কোথায় ছিলে তুমি?

সালেহা খালাঃ আমি আসলে একটু বাহিরে ছিলাম,,তুই কোথায় গিয়েছিলি?

হিয়াঃ ঔ মা-বাবা র কবর টা জিয়ারত করে আসলাম

সালেহা খালাঃ আচ্ছা ভালো করেছিস,,আচ্ছা তুই বস আমি একটু আসছি ঔ মিটিং না কি আছে তোদের আজ, ওজন্য নাকি রান্না বান্না হচ্ছে আমি গিয়ে দেখে আসছি

হিয়াঃ আচ্ছা এসো,,

!
!
!

রিফা চাচিঃ মুসতাকিম শোনো না একটা কথা বলি

চাচ্চুঃ হ্যা বলো

রিফা চাচিঃ বলছি কি হিয়া আর কতোদিন ওখানে ওভাবে একা একা থাকবে,,আজ না ফাহিম সকালে হিয়া যখন ছিলো তখন বাড়িতে এসেছিলো জানো,এসে না ওর হিয়াকে দেখে খুব পছন্দ হয়েছে,,ও আমাকে বললো মেয়ে টা কে,,আমি হিয়ার পরিচয় দিলাম,,তো ও তখন বললো যে হিয়া তো একা একা থাকে যদি তুমি আর পুতুলের দাদু রাজি থাকো তাহলে সে হিয়াকে নিজের বউ করে ঘরে তুলতে চায়

চাচ্চুঃ তুমি কি বললে রিফা আরেক বার বলো!!

রিফা চাচিঃ শোনো মুনতাকিম এতে তো এতো অবাক হবার কিছু নেই,,যা তুমি শুনছো আমি তাই বলেছি,,তুমি চাও না হিয়ার একটা গতি হোক,,হিয়াকি সারাজীবন একা একা থাকবে নাকি ভালো ছেলে হাতে আছে বিয়ে দিয়ে দেও,,তোমার মাথা থেকেও একটা অশান্তি যাবে

চাচ্চুঃ রিফা একটা কথা বলি,,হিয়া এখানে নিজের প্রাপ্য টুকু নিতে আসছে বিয়ে করতে না,,আর ফাহিম কি রকম ছেলে সেটা অন্তত তুমি আমাকে শেখাতে এসো না,,মদখোর সারাদিন মাতলামি করে বের হয় ওর কি যোগ্যতা আছে আমার হিয়া মা কে বিয়ে করার,,ছিঃ তোমার মাথায় এই চিন্তা আসে কোথা থেকে

রিফা চাচিঃ তুমি আমাকে ছিঃ করছো আমাকে,,তোমার হিয়া একাই একটা মেয়ে ঢাকা শহরে কি রকম করে বের হয় সেটা না সব জানা আছে আমার,,টিউশন পড়িয়ে একজনকে মানুষ করা এটা না একটা ছোট বাচ্চা কে বললেও সে হাসবে

চাচ্চুঃ তুমি কিন্তু তোমার মাএা ছাড়িয়ে যাচ্ছ রিফা,,

রিফাঃ আমি আমার মাএা ছাড়িয়ে যাচ্ছি আর তুমি,,তুমি কি করছো??আমার তো এখন তোমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে মুসতাকিম,,তুমি আবার তোমার ভাস্তির সাথে

রিফা চাচি আর কিছু বলার আগে হিয়ার চাচ্চু তার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়

চাচ্চুঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ রিফা ছিঃ,,,,তোমার মন মানসিকতা এতো টাই নিচ যে তুমি,,হিয়া শ্রাবণ আমার নিজের ছেলে মেয়ের মতো আমার ভাইয়ের ছেলে মেয়ে ওরা আর তুমি কি না___আমার যদি ক্ষমতা থাকতো না আমি এক্ষুনি তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালাক দিয়ে দিতাম শুধু বাচ্চা গুলোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি,,,

রিফা চাচিঃ তুমি ঔ হিয়ার জন্য আমার গায়ে হাত তুললা তো মুসতাকিম,,আজ শুধু মিটিং টা শেষ হতে দেও দেখো আমি কি করি,,শয়তান মেয়ে এতোদিন তো আসে নি একবারো রংপুরে যেই জায়গা জমির কথা উঠলো ওমনি চলো আসলো না,,লোভী মেয়ে একটা ছিঃ,,শুধু তো গিলতে আসছে গিলতে

কাঁদতে কাঁদতে চাচি বেড়িয়ে গেলো,,হিয়া এতোক্ষণ বাহিরে দাড়িয়ে সব শুনছিলো,,চাচি দেখার আগেই সে শ্রাবণকে নিয়ে বাড়ির উঠনো চলে আসলো

হিয়াঃ কি করলাম আমি এটা,,কেনো আসতে গেলাম আমি,,আজ আমার জন্য চাচ্চুকে এতো বড় বড় সব কথা শুনতে হলো,,আমার এখানে আসা টাই ভুল হ’য়ে গেছে,,না মিটিং টা মিটে গেলেই যেই বাস পাওয়া যাবে আমি ওটাই রওনা দিয়ে দেবো ঢাকা,,এমনিতেও ভাইয়ার সাথে কথা বলতে না পেরে আমার খুব অস্বস্তি লাগছে!

হিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটে বড় গেট দিয়ে উজানের মা বাসবির আগমনের সাথে সাথে,,বাসবি হাতে থাকা জিনিসপএ গুলো নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে পা ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে ধরলে হিয়া গিয়ে তাঁকে ধরে নেয়

হিয়াঃ আস্তে আন্টি!!দিন এগুলো আমায় দিন___দেখি দেখি আপনার লাগে নি তো!

বাসবিঃ না মা আমি ঠিক আছি,,থাক মা থাক

হিয়াঃ না না দিন আমাকে,,এতো গুলো ব্যাগ এক হাতে,,আপনি বসুন একটু আমি গুছিয়ে দিচ্ছি

বাসবিঃ আচ্ছা দেও,,তোমাকে তো চিনলাম না ঠিক,,অবশ্য এ বাড়ির কাউকে আমি তেমন ঠিক চিনি না কিন্তু তোমাকে এর আগে দেখেছি বলে মনে হয় না

হিয়াঃ আমি আসলে এখানে থাকি না তাই জন্য হয়তো আপনি আমাকে চিনছেন না

বাসবিঃ আচ্ছা,,তা সালেহা কি বাড়িতে আছে আমার ওকে একটু দরকার

হিয়াঃ সালেহা খালা!! হ্যা আছে তো আপনার দরকার ওনাকে আমি ডেকে দেবো??

বাসবিঃ হ্যা মা একটু ডেকে দেও খুব জরুরি,,

হিয়া আর শ্রাবণ মিলে বাসবির হাতের ব্যাগ গুলো এক এক করে সুন্দর মতো গুছিয়ে বাসবির হাতে তুলে দেয়

বাসবিঃ বাহ বা তুমি তো দেখছি খুব গুছানো,,কিরকম জগাখিচুরি হয়ে থাকা ব্যাগ গুলো এক করে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলে,,তা এই বাচ্চা টা কে তোমাক খুব মান্য করে দেখছি

হিয়াঃ জ্বী আমার ছোট ভাই,,,আচ্ছা আপনি দাড়ান আমি এক্ষুনি খালা কে ডেকে আনছি

হিয়া খালা কে ডাকতে যাবে ওমনি সালেহা খালা এসে সামনে দাঁড়িয়ে যায়,,হিয়া আর বাসবিকে একসাথে দেখে খালা কেঁপে ওঠে,,গলা শুকিয়ে আসে তার,,কপাল ঘেমে গিয়ে লোনা জলের ছাপ স্পষ্ট ভাবে দেখা মিলে

সালেহাঃ না না এ কি করে সম্ভব,,আপা কেনো হিয়ার সাথে,,না না আপার সামনে কিছুতেই হিয়ার পরিচয় সামনে আনা যাবে না,,কিছুতেই না কোনোভাবেই না!!
_______________🌺______________

ধন্যবাদ সবাইকে এতো টা ভালোবাসাতে আমাকে আর আমার লেখাকে ভরিয়ে দেবার জন্য❤️❤️❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here