😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-47
ইভা রহমান
অনেকদিন বাদে দিচ্ছি তাই পাঠকদের কথা ভেবে বেশ বড় করেই লিখলাম!!
💙
গাড়ি করে ঢাকা পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা হয়ে যায়,টানা ৮ঘন্টার জার্নি করে সবার এখন ক্লান্ত বিধস্ত অবস্থা,,কারো যেনো কথা বলার শক্তি টুকু শরীরে নেই,সাব্বির সবাইকে যার যার বাসায় ড্রপ করে দিয়ে হায়েজ টা মালিকের কাছে স্থানান্তর করে নিজে একটা ক্যাব বুক করে তার বাড়ি ফিরে আসে,,এদিকে এ-তো দিন বাদে বাড়িতে এসে হিয়ার মাথা পুরো নষ্ট,,সেবার তো যাবার সময় পুরো গ্যাং মিলে বাড়িতে যে আম্ফান সৃষ্টি করে রেখে গিয়েছিলো তারই ফলস্বরূপ বাড়ি এখন পুরোই উল্টে পাল্টে আছে তার,,শরীর তো ক্লান্ত ক্লান্ত, তারপর উপর এই সব ময়লা আর আবজর্নার স্তুপ দেখে হিয়া পুরো নাজেহাল আর অস্থির,,
কোনোমতে হাত মুখ ধুইয়ে এসে উজান হিয়াকে নিয়ে দুম করে নোংরা বিছানা টায় শুইয়ে পড়ে,,উদ্দেশ্যে এখন সে টানা এক ঘুম দেবে,,
হিয়াঃ আপনি কি করছেন,,আমার অনেক কাজ আছে উজান,,বাড়ি ঘরের অবস্থা দেখেছেন একবার,,
উজানঃ আমি এখন ঘুমাবো,,তাই নো ডিস্টার্ব,,
হিয়াঃ আরে আপনার ঘুম পাচ্ছে আপনি ঘুমোন,আমাকে কেনো টানছেন,,উজান সত্যি আমার অনেক কাজ আছে একটু বুঝুন,,
উজানঃ আমার সত্যি অনেক ঘুম পাচ্ছে তুমি একটু বুঝো,আর তুমি ছাড়া এখন আমার ঘুম হবে না এটা তো অন্তত জানো,,
হিয়াঃ হ্যা কিন্তু আমাকে হাত মুখ টা তো অনন্ত ধুইয়ে আসতে দিন,,গাড়িতে কতো ধুলাবালি ছিলো,,আমার গা গুলাচ্ছে উজান,,ছাড়ুন না
উজানঃ পাঁচ মিনিট,আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি উঠে যেয়ো কেমন,,প্লিজ
হিয়াঃ পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি না ঘুমিয়েছেন না,,দেখুন তারপর,,
হিয়াকে জড়িয়ে পাঁচ মিনিট লাগে না দুমিনিটই উজান চোখ বন্ধ করতেই ভোস-ভোস করে নিশ্বাস নিতে শুরু করে,,এদিকে উজান ঘুমিয়ে গেলে হিয়া উঠে যা যা এই ক্লান্ত শরীর নিয়ে করা যায় তার সবটুকু কাজ সেরে গোসল করে এসে উজানকে ডেকে তুলে,,রাত তখন এগারোটার মাঝামাঝি উজান উঠে গোসল করে নিলে দু’জনে খেতে বসে,,খাওয়া শেষ করে উজান আসে ওর বিছানায়,, এর মধ্যে হিয়া উজানের বিছানা টাও পরিষ্কার করে নেয়,,রাতের বাকি সব কাজ গুটিয়ে হিয়া রুমে আসে,,উজান তখন ফোনে শ্রাবণের সাথে ভিডিও কলে গল্প করতে ব্যস্ত,,হিয়া এসে উজানের পাশে বসতেই শ্রাবণ ওর বুবুকে দেখে ফিক করে হেঁসে দেয়,,
শ্রাবণঃ বুবুউউউ🥰
হিয়াঃ কিরকম দাঁত বের করে হাসছে দেখুন,,এই যে দাদি মনির কোলে যে এরকম করে বসে আছো,ওনার কষ্ট হচ্ছে না,
শ্রাবণঃ আরেএএ আমি তো এক্ষুনি দাদি মনির কোলে এসে বসলাম,,মুইন(মুহিন),আমি, দাদুভাই সবাই তো আমরা এতোক্ষণ বাহিরে ঘুরতে গিয়েচিলাম(গিয়েছিলাম),,তাই না দাদিমণি বলো,,
শ্রাবণঃ হুম তো আমার সোনা দাদু ভাই টা,,
হিয়াঃ তা আর কতোদিন থাকা হবে শুনি,,বাড়িতে এসে পড়াশোনা টা কে করবে তোমার ভূত,,
শ্রাবণঃ করবো করবো,পড়াশুনা টাও আমি করবো,,ভাইয়া জানোওও আজকে না আমি আর মুইন আবার চিড়িয়াখানা গেছিলাম তারপর হাতি দেখছি হরিণ দেখছি,তুমি,তুমি আমাকে ডাকাতে(ঢাকাতে) একটা বানর দেখিয়েছিলে না একবার মনে আছে ঐরকম কতো গুলো বানর দেখছিইই,,কি লাফায়,,বানরের ছোটো বাচ্চা টাকে তো আমি আর দাদু ভাই মিলে বাদাম খাইতে দিছিলাম জানোওও,,
উজানঃ বাহ বা কি সাহস তো তোদের,,তা ছবি টবি তুলিসনি কিছু,,আমাকে দেখালি না তো,,
শ্রাবণঃ দেবো দেবো সব দেবো,,দাদি মনির কথা বলা শেষ হলে আমি একন(এখন),তোমাকে সব পাঠিয়ে দেবো,,
উজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,
বাসবিঃ তোমাদের কোনো চিন্তা করতে হবে না,,শ্রাবণ এখানে খুব ভালো আছে,,ঔ যে দুপুরে খাওয়া করে দাদু নাতি মিলে বেড়িয়ে ছিলো এখন নিয়ে বাড়ি ফিরলো,,,,,,,______তা বাড়ি ফিরে খাওয়া দাওয়া হয়েছে কিছু রাতে,,
হিয়াঃ খাওয়া দাওয়া সব হয়েছে মা,,এসে ঔ একটু ঘুম দিয়েছিলাম তারপর উঠে ঘরটর গুলো হালকা গুছিয়ে নিয়ে গরম গরম ভাত করলাম,,ঘর গুলোর কি অবস্থা করে রেখে গিয়েছিলাম যাবার সময় মনে আছে মা,,ওগুলো গুছিয়ে নিয়ে আপনার দেওয়া তরকারি গুলো গরম করলাম তারপর ওনাকে ডেকে তুলে একসাথে রাতের খাবার টা সারলাম,,
বাসবিঃ আমি যেগুলো খাবার দিয়েছিলাম ওগুলো ভালো ছিলো এতো দূরের রাস্তাতে,,নষ্ট হয়নি??
হিয়াঃ নষ্ট বলতে বুটের ডাল টা একটু টক টক হয়েছিলো তাই ওনাকে খেতে দেই নি,ওনার আবার কাল ক্লাস আছে,গিয়ে ঔ পেটে সমস্যা দিক তাই জন্য আরকি,,,,বাকি মাংস আর মুরগী গুলো ভালো ছিলো,,
বাসবিঃ হুম,,তাহলে ঘুমিয়ে যাও এখন,,শরীর ক্লান্ত,,আর শ্রাবণ থাক দু’টো দিন,,আমি আর উজানের বাবা পরশু না হয় ওকে দিয়ে আসবো,,উজানের বাবা আবার একটু ডাক্তার দেখাতে চাইছে ঢাকাতে,,দেখি
হিয়াঃ আচ্ছা মা,,যা ভালো বুঝেন ওভাবে আসুন,,
বাসবিঃ হুম,,তা এ-ই যে আমার গুনোধর ছেলে পড়ে পড়ে ঘুমালে হবে,বাড়ির কাজে তো একটু হিয়াকে হেল্পও করতে পারিস না-কি,,
উজানঃ বিয়ে করে আনছি কি কাজ করার জন্য নাকি,,তোমার বউমা আমাকে এখন তুলে তুলে খাওয়াবে,, আমার এখন আরাম করবার সময়,,আমি ওসব কাজ টাজ পারবো না,,,
বাসবিঃ বদমাইশ,,রাখলাম আমি,,
উজানঃ আচ্ছা,,রাখো,,আমাদের জন্য চিন্তা করতে হবে না আমরা এখানে ভালো আছি,,
বাসবিঃ বউ নিয়ে একা বাড়িতে ভালোই তো থাকবি,,আমার আর চিন্তা কি,,হিয়া আছে না তোর যত্ন নেবার জন্য,,
উজানঃ মা তুমিও না,,রাখো,,
উজান হালকা করে হাসি দিয়ে ফোনট কেটে দিয়ে হেলান দেওয়া বালিশ টায় আরো সুন্দর করে হেলান দেয়,আলতো করে হিয়াকে নিচের বালিশ টায় শুইয়ে দিয়ে তার উপর নিজের হাত রাখে,,হিয়া উজানের এক হাতের উপর মাথা রেখে আরেক হাত গুজিয়ে দেয় উজানের আরেক হাতে,,এক হাত বাকিয়ে হিয়ার চুলে বিলি কাটতে কাটতে,,
কি ভাবছো?
কোথায় কি ভাবছি,কিছু ভাবছি না,
হুমম কিছু তো একটা ভাবছো,,,,দেখি,,
কি?
তোমাকে,,
আমাকে তো রোজই দেখেন,আর কতো দেখবেন,
যতোদিন এ-ই দুচোখ দেখার ক্ষমতা রাখবে!❤️
তাই এতো দেখতে ভালো লাগে আমায়,,,
লাগেই তো,,
জানেন আজ না মা আর বাবাকে খুব কাছে থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে,,তাদের কে এনে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে,,মনে হচ্ছে আমি তাদেরকে এনে বলি, মা দেখো তুমি তোমার মেয়েকে সারাজীবন পক্ষীরাজ ঘোড়াতে চড়ে আসা যে রাজকুমারের গল্প শুনিয়ে এসেছিলো সেই গল্পের রাজকুমার টা সত্যি সত্যি তোমার মেয়ের জীবনে এসে তার সব দুঃখ,কষ্ট খারাপ লাগা কি রকম এক লহমায় কমিয়ে দিচ্ছে,,
হুম,,আজ ওনাদের সাথে আমি যদি সামনাসামনি কথা বলতে পারতাম তাহলে আমিও তাদের জিজ্ঞেস করতাম কি খাইয়ে আপনারা আপনাদের এ-ই মেয়ের হাসি টা রসগোল্লার মতো এতো মিষ্টি বানিয়েছেন,,দেখলেই গও করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে,,
তাই না,,সবসময় ফাজলামো
কিছুক্ষণ নীরব থেকে হিয়া এবার উজানের হাত টা নিয়ে সেটায় একটা স্নেহের পরশ বুলে দেয়,,
ধন্যবাদ উজান,,আমাকে এ-তো টা সম্মান দেবার জন্য,,এ-তো টা ভালোবাসা দেবার জন্য,,
হুম কি থেকে যে কি হ’য়ে গেলো,সেদিন মাঠে তোমার হাতের থাপ্পড় টা খেয়ে যা মেজাজ টা খারাপ হয়েছিল না আমার,,কোনোদিন ভাবছি সেই তোমাকে নিজের করার জন্য আমি এরকম পাগলামি করবো,,
সময় গুলো কতো দূত জীবন থেকে চলে যায় আমাদের তাই না,,আপনার সাথে ঔ প্রথম, ঝগড়া তারপর ঔ আপনার বাইক পরিষ্কার করে দেওয়া,তারপর ঔ গরম পানি গুলো,,ইসস কে ভেবেছিলো আমি আপনার মতো একজনকে এতো এতো কিছুর পড়ো ভালোবেসে বিয়ে করবো,
হিয়া একটা দম ফেলে মুচকি হাসি দেয়,,এদিকে উজান একটু মন টা খারাপ করে তার জন্য হিয়া সেদিন কতো টা না কষ্ট সহ্য করেছিলো!
বুকের কাছে এ-ই দাগ গুলো আমার ঔ গরম পানি ঢেলে দেওয়ার জন্য হয়েছে না,,
হুমমম,,তা-ও তো ঝিনুক ঔ ওর আপুর থেকে কি জেনো একটা ক্রীম এনে দিয়েছিলো ওটা দিয়ে তখন এই পোড়া দাগ গুলো অনেকটা মিশে গিয়েছিলো,,এখন আছে ঔ হালকা হালকা,,যেমনটা দেখছেন
হিয়ার কথায় উজান এবার মুচকি হাসে,,কারণ ঔ মলম টাতো ঝিনুক না,ঝিনুকের মাধ্যমে হিয়াকে এনে দিয়েছিলো উজান নিজেই,,উজান কিছু বলে না,,সব ভালোবাসা সব যত্ন কি মুখে মুখে বলতে হবে,থাক না কিছু ভালোবাসা কিছু যত্ন একান্ত গোপনে❤️💙❤️
হুম মা আসুক,,বাবাকে নাকি ডক্টর দেখাবে তখন এখন আমি তোমায় ভালো কোনো স্ক্রিন ডক্টর দেখিয়ে নেবো,,ঠিক আছে
হুম নিজে আঘাত করে নিজে এখন ট্রিটমেন্ট করতে চাইছেন,,কম জ্বালাননি কিন্তু আপনি আমায়,,মাঝেমধ্যে তো ভার্সিটিতে আমাকে চোরের মতো ঢুকতে লাগতো আপনার ভয়ে,,এ-ই বুঝি কি না কি করে দেন,,কি ভয়ে ভয়ে যে ছিলাম কটা মাস সে আমিই জানি
আচ্ছা সরি তো,,আর হবে না কখনো না এরকম,,আগে কি জানতাম যে এরকম হয়ে আছে নাহলে তো তখনি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করে দিতাম,,
আচ্ছা বাদ দিন ওসব,,ওসব ঝামেলা না হলে কি আপনি আমার কদর টা বুঝতেন,,যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে,,এখন যান চুপচাপ গিয়ে শুইয়ে পড়ুন,পরশু থেকে আমারো ক্লাস আছে,
চুপচাপ শুইয়ে থাকার জন্য বুঝি শ্রাবণকে মা’র কাছে রেখে দিয়ে আসছি হিয়া মুনতাসীর,,
মানে!শুনুন একদম ওভাবে হাসবেন না হ্যা,,আপনি যে এসে নাক ডেকে ডেকে ঘুমোলেন আর আমি উঠে কতো কাজ করলাম,, আপনার ক্লান্তি নাই থাকতে পারে,আমার আছে,,দেখি সোজা করে নিন বালিশ টা,,
নেওয়াচ্ছি তো সোজা করে,,দাড়াও না একটু,,
হিয়ার বাঁধা আজ মানার সময় কোথায় উজানের,,সে যে এখন তার হিয়াকে নিজের করে নিতে ব্যস্ত,,
!
!
!
দু’দিন পরঃ
হিয়া উজান দুজনে আজ বাইকে করে একসাথে ভার্সিটি আসছে,,কিন্তু ভার্সিটির মেইন গেটে ঢুকার আগে উজান কি যেনো একটা মনে করে ওর বাইকটা মাঝরাস্তা তে থামিয়ে হিয়াকে নামতে বললে হিয়া কপট রেগে যায়,,
উজানঃ আচ্ছা শুনো আমি আগে বাইক নিয়ে যাচ্ছি,তুমি তারপর আস্তেধীরে এই রাস্তা টা দিয়ে একটু হেঁটে আসো কষ্ট করে ঠিক আছে,
হিয়াঃ হেটে আসবো মানে?কেনো?
উজানঃ আমি বলছি তাই,,
হিয়াঃ আপনি কেনো বলছেন আমি তো সেটাই জানতে চাইছি,এতো দূর রাস্তা বাইকে একসাথে এসে এখন এই ভার্সিটির গেটে এসে আমরা আলাদা আলাদাভাবে কেনো যাবো,,হোয়াই?
উজানঃ কি ভাবে বুঝাই তোমাকে এখন,,কেউ তো জানে না আমরা বিবাহিত,,এখন যদি কেউ দেখে যে উজান স্যার তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ভার্সিটি ঢুকছে ব্যাপারটা কি রকম লাগবে একটু ভাবো তো,,
হিয়াঃ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কোথায় ঢুকছেন,,আমি তো আপনার বিয়ে করা বউ,,
উজানঃ সেটাতো এখনো কেউ জানে,,স্টুডেন্ট গুলো আমার কি ভাববে যে স্যার আমাদের এসব কি প্রেম ভালোবাসা শেখাচ্ছে,,
হিয়াঃ আমাকে না এসব ভূলভাল লজিক একদম দেখাতে আসবেন না আপনি,,আর আমি একটা জিনিস খেয়াল করছি এ-ই ভার্সিটিতে জয়েন করবার পর থেকে আপনি কিরকম একটা হয়ে গেছেন,,আগে তো ঔ সারাক্ষণ আমার পেছন পেছন ক্যাম্পাসে ঘুরঘুর করতেন তখন তো কেউ কিছু ভাবতো না, তাহলে ইদানীং আপনার কি হয়েছে,,সত্যি করে বলুন তো ক্লাস করাতে গিয়ে কোনো মেয়ের সাথে চক্কর টক্কর চলছে না তো,,
উজানঃ একটা সিম্পল জিনিস কোথায় থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো তুমি হিয়া,,ওরকম কিচ্ছু না,,আগে আমি ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলাম এখন টিচার একটু তফাৎ টা বুঝো,,আমি তো বলছি না আমরা একসাথে আসবো না,,আজ আমি সবাইকে গিয়ে বলি আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তারপর থেকে না হয়,,
হিয়াঃ যা খুশি করুন গিয়ে,,লাগবে না আমাকে ড্রপ করতে নিয়ে আসা আর দিয়ে আসা,,আগে ভরা ক্যাম্পাসে আমাকে বাইকে নিয়ে ঘুরতো তখন স্যাররা দেখলে সমস্যা ছিলো না আর এখন,,,যাবো না আমি আপনার সাথে আপনার বাইক আপনি যান,,,
রাগে হিয়া গটগট করে সামনে হাটা ধরে,,
উজানঃ এ-ই পাগলি টাকে আমি এখন কি করে বুঝাই আগে আমি স্টুডেন্ট ছিলাম আর এখন আমি একজন শিক্ষক,,আমাকে কি আর এখন এসব মানায়,,আআআআআ
রাগে মাথার চুল খিঁচে ধরে উজান ওর বাইক নিয়ে ওর ডিপার্টমেন্টের দিকে আগাতে শুরু করে,,আর হিয়া ভেংচি কেটে ওর ক্লাসে,,
!
!
!
আর একটুপর হিয়ার ক্লাস শেষ হবে,,উজান তাই জন্য ওর সব ক্লাস গুটিয়ে বাকি কিছু অফিসিয়াল কাজ পেন্ডিং রেখে হিয়ার ক্লাসরুমের বাহিরে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো,,ক্লাস শেষ হলে হিয়া বেড়িয়ে এসে দেখে উজান ওকে বাড়ি পৌঁছে দেবার জন্য নিতে আসছে,,কিন্তু হিয়া তো সেই সকাল থেকে ক্ষেপে আছে,,সে যে কিছুতেই উজানের সাথে এখন আর ফিরবে না,,
উজানঃ হিয়াআআ,,হিয়াআ,,আরে এ-ই মেয়ে ডাকছি না আমি,,হিয়া
হিয়াঃ ডাকুক গিয়ে ,,আজ যদি আমি কোনো কথা বলি ওনার সাথে তাহলে আমার নামো হিয়া না,,লাগবে না আমাকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফেরা আমি একাই পাড়বো যেতে,,ওনার না-কি বউ নিয়ে ঢুকতে লজ্জা লাগে,,লাগাচ্ছি লজ্জা
হিয়াকে হনহন করে হাঁটতে দেখে উজান দৌড়ে এসে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দু কানে হাত রাখে,,
উজানঃ আচ্ছা সরি না,কাল থেকে আমরা একসাথে আসবো যাবো,প্রমিস
হিয়াঃ আমার সামন থেকে সারুন,,সারুন বলছি,,এখন এসব বলে আপনি আমাকে ভূলাতে পারবেন না ঠিক আছে,,
উজানঃ কি করে বোঝাই আমি এ-ই মেয়েকে আমি এখন একজন শিক্ষক আমি যদি আমার কি এখন ওসব খোলামেলা প্রেম মানায়___আচ্ছা শোনো না,,কাল না মকবুল স্যার সহ আরো সবাইকে দেওয়াত করলাম,,স্যার তো আমি একা একা বিয়ে করে নিয়েছি দেখে আমার উপর খুব রাগ,,তাই কাল স্যার সহ সবাইকে বাড়িতে ইনভাইট করেছি,,সবাই কাল আসবে,,এখন তুমি প্লিজ এরকম রাগ করে থেকো না,
হিয়াঃ আপনি বলেছেন আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন?
উজানঃ কি রকম সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে দেখো,,তোমাকে বিয়ে করবো না তো কাকে বিয়ে করবো শুনি,,সবাইকে বলেছি আমি আপনাদের ভার্সিটির স্টুডেন্ট হিয়া মুনতাসীর কে বিয়ে করে এখন সংসার করছি,,কাল আপনাদের সবাইকে বাড়িতে ইনভাইট করলাম,,ঠিক আছে,,
হিয়াঃ হুম ঠিক আছে,,তা দাওয়াত যে করেছেন বাড়িতে কিছু আছে যে খাওয়ানোর,,বাজার টা কি আমি করবো না আপনি করে নিয়ে আসবেন শুনি,,বাড়িতে কিন্তু চাল আর আলু ছাড়া কিচ্ছু নেই,,এমনিতেও আজ আপনাকে বাজার করতে হতো,,
উজানঃ হুম,,আচ্ছা একটা কাজ করি এখন তো হবে না,,রাতে দু’জনে একসাথে বের হ’য়ে যা লাগবে কিনে নেবো এখন
হিয়াঃ তাও হয়,,প্রথমবার স্যাররা বাড়িতে আসছে একটু দেখেশুনে বাজার না করলে হবে,,রাতের দিকে মা-রাও আসছে কিন্তু,,ভালোই হবে কাল স্যারদের সাথে মা বাবারো পরিচয় করানো যাবে,,
উজানঃ হুম,,আসো তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে এসে আবার আমাকে একটু ভার্সিটি আসতে হবে,,
হিয়াঃ হুম,,
!
!
!
দুপুর তখন চারটার একটু পর,বাসবিদের রাতে ফেরার কথা থাকলেও তারা এই বিকেলেই ফিরছে,,
হিয়াঃ দেখুন এই প্রথম বাবা বাড়িতে আসছে আপনার, ওনার সাথে যথেষ্ট ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলবেন,,
উজানঃ দরকার কি ওনার সাথে কথা বলার,,উনি আমাকে এ-ই ফ্ল্যাট টা দিয়েছেন ওনার তো রাইট আছে আসার,উনি ওনার মতো আসবে যাবে,আমার কি,
হিয়াঃ একদম এসব ফালতু কথা বলবেন না,,এ-তো কিসের রাগ আপনার ওনার উপর,,যা হয়েছে নিশ্চয় তার কিছু কারণ আছে,,আপনি কিন্তু একদম ওনার সাথে খারাপ ব্যহার করবেন না,,
উজানঃ আমি ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করিও না,,
হিয়াঃ হ্যা বাড়িতে আকারে ইঙ্গিতে ওনাকে যা কথা বলেন ওটাকে না কোনো দিক থেকে ভালো ব্যবহার বলে না,বুঝাতে পারছি
উজানঃ আচ্ছা বাবা যাও,,আমি চুপ থাকলে হবে তো,,,,,,,,,ঔ যে কলিংবেল বাজছে দেখো আসছে হয়তো ওরা
হিয়াঃ হুম,,
হিয়া উঠে দরজা খুলে দিতেই শ্রাবণ ঘপ করে হিয়ার কোলে উঠে,,হিয়া শ্রাবণের গালে মুখে স্নেহের পরশ বুলে দিয়ে উজানের বাবা আর মা’কে অনেক যত্ন সহকারে ভেতরে আসতে বলে,,শ্রাবণ হিয়ার কোল থেকে নেমে দৌড়ে উজানের রুমে উজানের কাছে ছুটে যায়,,
হিয়াঃ খুব বিরক্ত করছে না মা ও এ-ই দুদিন,,
বাসবিঃ একদমই কোনো বিরক্ত করে নি,,যা বলছি সব শুনেছে,,
হিয়াঃ মা পানি টা নিন,,এটা খেয়ে একটু দম নিন আমি চা করে আনছি,,
বাসবিঃ এ-তো ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই মা,,আছিই তো দুদিন,,তুমি বরং ওনাকে ওয়াশরুম টা দেখিয়ে দেও উনি ফ্রেশ হয়ে আসুক
হিয়াঃ হ্যা মা দিচ্ছি,,বাবা এ-ই রুমে আসুন আমি এটা আপনাদের জন্য গুছিয়ে রাখছি,,ওয়াশরুমে সব দেওয়া আছে,,আর এ-ই যে তোয়ালে আপনার,,
সমরেশঃ উজান কোথায় ওকে দেখছি না,,
হিয়াঃ আছে রুমে,,,এ-ই যে শুনছেন,,মা রা তো আসছে দেখা করবেন না,,বাবা ডাকছে তো আপনাকে,,
সমরেশঃ থাক,,আমি ওর সাথে পরে কথা বলে নেবো,,দেখি ওটা দেও
হিয়া উজানের বাবা-র হাতে তোয়ালে টা দিলে উনি ফ্রেশ হতে চলে যায়,উজান এসে ওর মা’র সাথে দেখা করে নেয়,,বাসবি অন্য ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে মিলতে হিয়া ওদের জন্য বিকালের নাস্তা একদম সাজিয়ে নিয়ে এসে টেবিলে রাখে,,
বাসবিঃ তোরা কি এখন কোথাও বের হবি?
উজানঃ হ্যা মা,,তোমাকে বললাম না কাল স্যাররা সবাই আসতে চাইছে,,তাই একটু বাজারের দিকে যাবো,ঘরে মাছ মাংস কিচ্ছু কেনা নাই,,
হিয়াঃ মা আমি আপনার ছেলেকে বললাম যে মা-রা বিকেলের মধ্যে আসবে আমরা দুপুরে বাজার টা করে আনি,,কিন্তু ওনার আজকেই এতো কাজ যতসব,,
বাসবিঃ আচ্ছা হোক সমস্যা নেই,,যা-ও তোমরা কি লাগবে কিনে নিয়ে আসো,,আমরা তো আছি,,
হিয়াঃ আপনারা এলেন এক্ষুনি আবার আমাদের বের হতে হচ্ছে এ-র মাঝে,,আপনাকে বললাম আমার কাছে টাকা আছে আমি বাজার টা করে আসি,, আমাকে তখন বাজার করতে দিলে এখন এ-ই ঝামেলা টা হতো না,,
উজানঃ তুমি বেশি কথা বলো,,দিছো না মা’কে নাস্তা যাও গিয়ে রেডি হয়ে আসো,,ওলয়েজ পকপক
হিয়াঃ দেখলেন মা কি রকম করে_____মা বাবা কি সত্যি বিকেলে কিছু খাবে না?
বাসবিঃ না মা উনি এসময় কিছু খান না,,আর তাছাড়া উনি মনে হয় গোসল করে এসে শুইয়ে পড়ছে এখন ওনাকে ডেকে না তোলাই ভালো,,আমিও গিয়ে একটু বিশ্রাম নেই ততোক্ষণে তোমরা ঘুরে আসো,,
হিয়াঃ ঠিক আছে মা,,আমি সব এ-ই সামনে রেখে দিছি আপনার যা লাগবে আপনি নিয়ে নিয়েন,,
বাসবিঃ হুম যা-ও এখন গিয়ে তৈরি হও,,নাহলে রাজা আবার আরো রাগ করবে,,
হিয়া বাসবিকে হ্যা সূচক সম্মতি দিয়ে তৈরি হয়ে নেয় ,,এদিকে এখন শ্রাবণো ওদের সাথে যাবার জন্য বায়না করলে উজান শ্রাবণকেও ওদের সাথে নিয়ে নেয়,,উজান বাজারকরতে হিয়াকে নিয়ে শ্রাবণসহ সুপারশপে আসলেও হিয়া এবার উজানকে নিয়ে আসে একদম খাঁটি কাঁচাবাজারে,,বাজারের অবস্থা দেখে উজানের মাথা নষ্ট,,এমনিতে যা গরম আজকে তার উপর এ-ই বাজারের পরিবেশ,,মানুষ দিয়ে গিজগিজ করছে এপাশে মাছের দোকান ওপাশে সবজি,কেউ বা কাটছে মাংস কেউ বা গাদা গাদা বস্তা নিয়ে আসছে যাচ্ছে,,সব মিলে উজানের মেজাজ এখন তুঙ্গে,,
উজানঃ এ-ই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো?সামনেই তো সব বাজার আছে,,হিয়া
হিয়াঃ কি সমস্যা?
উজানঃ বলছি যে ওদিকে আমরা ভেতরে কোথায় যাচ্ছি,,যা লাগবে সব তো বাহিরেই আছে,,
হিয়াঃ হ্যা সে যে সব কিছু বাহিরে আছে সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি,,কিন্তু আমি এখন ভেতরে যাবো,,ভেতর থেকে সব কিছু কিনবো,,আপনি কি যাবেন আমার সাথে ভেতরে?
উজানঃ আচ্ছা মুশকিল তো,,সামনে জিনিস থাকতে আমরা ভেতরে গিয়ে কেনো বাজার করবো,,আশ্চর্য
হিয়াঃ কারণ আমি বলছি তাই,,আপনি কিন্তু অহেতুক আমার সময় নষ্ট করে দিচ্ছেন,,যাবার ইচ্ছে হলে আসুন নয়তো দাঁড়িয়ে থাকুন,আমি চললাম,
উজানঃ এক মিনিট,,
হিয়াঃ আবার কি?
উজানঃ তখন আমি তোমায় সুপার শপে নিয়ে গেলাম তুমি কি বললে তুমি সুপার শপ থেকে কেনাকাটা করবা না,,ফাইন,,কিন্তু এ-ই বাজারে এসেও বা আমরা ভেতরে যাচ্ছি কেনো,,সামন থেকে নিলে কি সমস্যা তোমার,,অহেতুক এই ভীড় ঠেলে কাঁদার মধ্যে লুটোপুটি খাবার কি দরকার,,
হিয়াঃ অনেক দরকার,,দেখি,ঔদিকে ঔ দোকান টা দেখতে পাচ্ছেন,,ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন তো দেশি পেঁয়াজের কেজি কতো?
উজানঃ হোয়াট!!
হিয়াঃ যা বলছি তা করুন,,আমার হাতে ওতো সময় নেই যে আমি আপনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবো,,কথা কি ঢুকেছে কানে,,কি হলো যান,,
উজান দাঁত মুখ খিঁচে শ্রাবণসহ ঔ দোকানে গিয়ে পেঁয়াজের কেজি কতো শুনে এসে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে যায়,,
হিয়াঃ কতো?
উজানঃ কি কতো?
হিয়াঃ পেঁয়াজের কেজি কতো?
উজানঃ দেশি ৬০ আর ইন্ডিয়ান ৫০,,দেখছো তুমি শুধু দেশি শুনতে চাইছো আমি দেশির পাশাপাশি ইন্ডিয়ান টারো দাম শুনে আসছি,,হাউ ইন্টেলিজেন্ট আই এম!
হিয়াঃ হুম ইন্টেলিজেন্ট না ছাঁই,,,, এ-ই যে পেয়াজ টা দাম করে এলেন ওটা আমি ভেতর থেকে নিলে ৪০করে কেজিতে নিতে পারবো,,কেজিতে তখন আমার কুড়ি টাকা বাঁচবে,,তাহলে খামোখা আমি কেনো ভেতর ছেড়ে বাহির থেকে নিতে যাবো আপনি বলুন,,
উজানঃ (তেড়ে এসে)তাই বলে,,তাই বলে তুমি কুড়ি টাকা বাঁচাতে এখন এই গ্যাদারিংএ ঢুকে,,আমি যাবো না,,নেভার,,
হিয়াঃ আচ্ছা আপনি এরকম কেনো করছেন, আমি তো বললাম আপনার এ-ই ভিড়ে যেতে ইচ্ছে না হলে আপনি শ্রাবণ সহ গেটে গিয়ে কিছু কিনে খেতে থাকুন আমি বাজার করে আসছি,,,,,আর আপনি কি বলতে চাইছেন কি কুড়ি টাকা টা কি টাকা না,ওটা কি গাছে ধরে ওটা রোজগার করতে হয় না,,
উজানঃ এখানে এসব কথা কেনো আসছে,,?
হিয়াঃ আসছে,,আপনি বুঝতে চাইছেন না তাই আসছে,,
উজানঃ হিয়া আমার কিন্তু ভীষণ রাগ লাগছে,,তোমাকে আমি স্বপ্নে তে নিয়ে গেলাম তুমি গেলে না ওখানে কি সুন্দর গোছানো পরিপাটি পরিবেশ,,এসির মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কিনতে পারতাম আর এখানে গরমে,,তাও যদি বাহির থেকে নিতে তাও একটা কথা ছিলো,,এখন এই ভীড়ে,,তুমি আসো তো আমার সাথে আসো,,
হিয়াঃ একদম আমার উপর দিয়ে একটা কথা বলবেন না,,ভূলে যাবেন না আমি আপনার ওয়াইফ,,তাই এসব সাংসারিক খুটিনাটি আপনি আমার থেকে শুনতে বাধ্য আমি আপনার থেকে নই,ঠিক আছে___আর স্বপ্ন তে কি আমি দাম কষাকষি করতে পারতাম,না তো,, উল্টো সব জিনিসের ভ্যাট দিতে দিতে আমার অর্ধেক টাকা চলে যাবে,,আপনি আসুন তো আমার সাথে আসুন,,এতোক্ষণে আমার সবজি টা কেনা হ’য়ে যেতো অনন্ত,,কি হলো আসুন
উজানঃ দিস ইজ টু মাচ হিয়া,,আমি যদি আর কখনো তোমার সাথে বাজারে আসছি,,
হিয়াঃ আসবেন না,,আমি একাই বাজার করতে পারবো অতুটুকু ক্ষমতা আমার আছে,,হু
!
!
বাজার শেষে বাড়ি ফিরে উজান এখন ক্লান্ত বিধস্ত নাজেহাল,,উজানের সাথে শ্রাবনোর অবস্থাও এখন পুরো ঢুলুঢুলু,,লিফট দিয়ে তিনজনে মিলে উপরে উঠতে যাবে ওমনি উপর থেকে উজানের বাবা আর মা নিচে নেমে আসে,,
উজানঃ মা তোমরা নিচে?কোথাও যাচ্ছো,,
বাসবিঃ হ্যা তোর বাবা ডক্টর দেখাবে কাল,,কোন ডক্টর টা ভালো হবে তাই দেখতে বের হলাম একটু,,
উজানঃ তার কোনো দরকার নেই,, হিয়া আমাকে বলেছিলো ওনার কথা,,আমি হিয়ার কথা শুনে ডক্টর খুঁজে এ্যাপায়ন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছি কাল,,
বাসবিঃ বাহ বা,,হিয়া আসার পর ছেলের আমার ভালোই উন্নতি হয়েছে দেখছি,,,,আচ্ছা তোরা উপরে যা,আমাদের আরো কিছু কাজ আছে আমরা এই ঘন্টাখানেক এর মধ্যে আসছি,,
শ্রাবণঃ দাদু ভাই কোথায় যাবা,,আমিও যাবো তোমাদের সাথে,,
হিয়াঃ না,,ওনারা কাজে যাচ্ছে,,তুমি গিয়ে এখন পড়তে বসবা,,
শ্রাবণঃ দাদিমনি😭
বাসবিঃ আহ যাও তো তোমরা,,ও যখন যাইতে চাচ্ছে ও যাক,,তোমরা গিয়ে ততোক্ষণ বাজার গুলো গুছাও,,
হিয়া কিছু না বলতে পেরে নিরুপায় হয়ে রাজি হয়ে যায়,,,বাসবিরা চলে যেতেই উজান হিয়াকে নিয়ে লিফটে উঠে,,লিফটের মাঝে উজান দু হাতে দুই ভারি ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে হিয়াকে মনে মনে খুন করছে,,আর হিয়া,হিয়া তো লিফটের মধ্যেই কতো টাকা বাঁচাতে পারলো পার্চ খুলে তাই গুনতে ব্যস্ত
উজানঃ কতো টাকা বাঁচানো হলো শুনি,,
হিয়াঃ আপনি জানি আমাকে কতো দিয়েছিলেন?
উজানঃ কতো বাকি আছে সেটা বলো,,
হিয়াঃ আপনি আমাকে পুরো পাঁচ হাজার পাঁচশো দিয়েছিলেন না এই দেখুন আমার কাছে এখন পুরো দেড় হাজার আর একটা নুতুন কচকচে একশো টাকা আছে মানে পুরো ১৬০০ টাকা বাঁচছে😍
উজানঃ খুব খুশি লাগছে না ১৬০০টাকা বাচিয়ে,,এদিকে যে আমার আর শ্রাবণের অবস্থা একবারে নাজেহাল বানিয়ে দিলে দেখছো একবার সেদিকে,,দেখো ঘামে শার্ট ভিজে চুপচুপে হ’য়ে আছে,,
হিয়াঃ আরে আমিই তো ধুইয়ে দেবো এ-তো রাগ হচ্ছেন কেনো,,ইসস
উজানঃ রাতটা হোক ম্যাডামের এ-ই খুশি আজ বের করে দেবো আমি,,
হিয়াঃ তাই বুঝি,,
উজানঃ তা আমার টাকা আমাকে ফেরত দেও,,
হিয়াঃ এএএ শখ দেখলে বাঁচা যায় না,,কিসের আপনার টাকা,,এগুলো সব আমার টাকা এখন,,আমি না নিয়ে গেলে বাচতো এ-ই টাকা গুলো আপনার,,
কথার মাঝে লিফট এসে থামে ওদের ফ্লোরে,লিফট থেকে বের হয়ে এসে হিয়া গেট খুলতে খুলতে উজানকে এবার আরো খুচাতে থাকে,,
উজানঃ দরকারো ছিলো না বাঁচানোর,,আসছে হিসাবআলি,,এখন থেকে আমি একা একা স্বপ্ন থেকে বাজার করে নিয়ে আসবো তুমি যেতে চাইলেও নিয়ে যাবো না,,
হিয়াঃ আমি যাবোও না,,দুদিনের বৈরাগী ভাতকে বলে কি না অন্ন,হু
উজানঃ তুমি নিজে কি?
হিয়াঃ আমি না আমার শেকড় টা খুব ভালো করে চিনি,,ওটাকে এ-তো সহজে ভূলে যাবো এতো টাও ঠুনকো আমি না,,আমি জানি আমি আগে কি ছিলাম,,এখন এসব সব কিছু বেশি বেশি হাতের কাছে পেয়ে যে হিসাব টুকুও ছেড়ে দেবো এমনটা আমি নই(গেট খুলতে খুলতে)
উজানঃ এমনটাও আমি নই(ঠোট ভেটকে),,
হিয়া রুমে এসে সব লাইট ওন করে দরজা লাগিয়ে দিতেই উজান ব্যাগ গুলো রেখে হিয়ার সামনে আসে
উজানঃ তা এখন টাকা টা দেও আমার,,আচ্ছা যাও ফিফটি ফিফটি,,তুমি ফিফটি আমি ফিফটি,,খুশি
হিয়াঃ দিচ্ছি তো আপনাকে আমি,,নিয়ে তো দেখান,,
হিয়ার উওরে উজান এসে গপ করে হিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,হিয়া ওর ব্যাগ টা একদম চিপে ওর পেটের কাছে দু হাতে আঁকড়ে নেয়,,আর এ-তো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে যে উজান হিয়ার হাতের মুঠ খুলতেই পারে না এতো শক্ত,,আর শুরু হয় হিয়ার প্রাণ খুলে করা খিলখিল হাসি❤️
হিয়াঃ আমার কাতুকুতু লাগছে উজান,,ছাড়ুন না,,আমি দেবো না টাকা আপনাকে,আমি এগুলো ব্যাংকে ফেলবো
উজানঃ কতো টাকা ফেলো তুমি ব্যাংকে,,এখানে তোমার ৮০০ আমার ৮০০,,
হিয়াঃ কি অবস্থা,,কি করেছেন আপনি,আমাকে রান্না বসাতে হবে উজান প্লিজ ছাড়ুন না,আরে(খুব হাসতে হাসতে)
উজানঃ দিবা না তুমি,,আমি তো নিয়েই ছাড়বো
হিয়াঃ সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য কেমন করছে কপাল,,আরে আমার জামা ছিঁড়বে উজাননন,,,দেখো তো জ্বালা,,
উজানঃ আচ্ছা টাকা না দেও তার বদলেএএএ,, শ্রাবণরা ফেরা অবধি একটু যদি ইউ নো,,
হিয়াঃ না,,একদম না,,আমি এখন ভাত বসাবো বাজার গুলো সব এক এক করে গুছিয়ে রাখবো,,কতো কাজ আমার,,
উজানঃ প্লিজ হিয়াপাখি একটু,,
হিয়াঃ একটু কেনো এ-ই এতোটুকুও না,,আপনি এখন গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিবেন যান
উজানঃ হ্যা গোসলই তো করবো তার আগে যদি একটু,,
হিয়াঃ কি অসভ্য আপনি উজান,,দেখি ছাড়ুন আমাকে,,সময় নেই অসময় নেই যখনতখন আদর করা করি(রাগে),,আমি আপনার জামা বের করে রাখছি আপনি টপ করে গোসল টা করে আসুন কুইক,,
উজানঃ এরকম কেনো তুমি,,
হিয়াঃ আমি এরকমই,,এখন আপনি যাবেন কি,,
উজানঃ যাচ্ছি ইডিয়ট,,
উজান যাবার আগে হিয়ার মাথার চুল গুলো আবার টেনে দিয়ে গোসল করতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়,,আর হিয়া ১৬০০টাকা বাঁচাতে পেরে খুশিতে আত্মহারা হ’য়ে কি থেকে কি করবে কিচ্ছু না বুঝে দৌড়ে গিয়ে ওর মাটির ব্যাংক টাতে সব গুলো এক এক করে ভরিয়ে রাখতে রাখে,,
হিয়াঃ ইসস লোকটা আজকে খুব ক্ষেপে গিয়েছিলো আমার সাথে,,ক্ষেপুক গিয়ে সামনের মাসে আবার ওনাকে নিয়ে সারা মাসের বাজার টা কিনে আনবো,,বুঝেও না ভেতর থেকে একটু কষ্ট করে কিনলে কতো টাকা সেইভ হয়,,পাগল একটা,,
_______________________________
অনেকদিন বাদে লিখলাম,,কেমন হয়েছে জানাতে ভুলে না কিন্তু,,দেখি কে কে এখনো গল্পে যুক্ত আছে!!