মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-34

0
1038

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-34

তিনজনের জন্য গরম গরম ভাত কষা করে মুরগির মাংস সাথে শুকনো লঙ্কা দিয়ে কুমড়োর লাল লাল ভর্তা করে টেবিলে সুন্দর মতো বেড়ে হিয়া ব্যস্ত উজান আর শ্রাবণকে ডাকতে,,কিন্তু উজান আর শ্রাবণ যে এখনো বাথরুমে ঢুকে সেই আধাঘন্টা ধরে বাথটবে সাবানের ফেনা তুলে পানি দিয়ে খেলতে ব্যস্ত!!

হিয়াঃ শ্রাবণ,,শ্রাবণ হয়নি তোদের,,ভাইয়া,, ভাইয়া শুনছেন,,কি করছেন কি এতোক্ষণ বাথরুমে হয়নি গোসল??

শ্রাবণঃ বুবুউউউ দেখে যা আমরা একটা ছোট পুকুরে গোসল করছি,,আয় না ভেতরে দরজা টা খোলা আছে

হিয়াঃ না আমার তোমার ছোট পুকুর দেখার কোনো ইচ্ছে নেই,,তুমি আর ভাইয়া তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসো আমার সব রান্না শেষ,,পরে খাবার ঠান্ডা হলে কিন্তু আমি আর গরম করতে পারবো না

উজানঃ আচ্ছা আচ্ছা তুমি ভাত বাড়ো আমরা আসছি,,যাও

হিয়া হতাশ হয়ে ডাইনিং এ এসে ভাত বাড়তে শুরু করে,,এদিকে মিনিট পাঁচেক পর উজান শ্রাবণসহ ডাইনিং এ এসে দাঁড়িয়ে যায়,,শ্রাবণ উজান দু’জনের পড়নে তোয়ালে,,কার্টুন লাগানো তোয়ালে টা শ্রাবণের পায়ের পাতা অবধি আসলেও উজান যেই সাদা রঙের তোয়ালে টা নিজের কোমড়ে পেঁচিয়ে নিয়েছে সেটা ওর পায়ের হাঁটুর একটু নিচ অবধি আসে,,হিয়া ভাত বাড়তে বাড়তে উজান আর শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থ মেরে যায়,,শ্রাবণ না হয় ছোট কিন্তু উজান আবার সেই পিকনিকের দিনের মতো খালি গায়ে ওর সামনে এরকম করে ঘুরছে,,হিয়া কিছুক্ষন অপলক উজানের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো,,এই উজান টাও না সত্যি কথায় কথায় শুধু হিয়াটাকে লজ্জা পাইয়ে দেয়,,

শ্রাবণঃ বুবু আমি রানটা খাবো,,খাই

হিয়াঃ আমি তো তোমাকে সবসময় রান টাই দেই শ্রাবণ,,দেখি প্লেট টা এগিয়ে ধরো,,একটা তোমার রান আর একটা ভাইয়ার ঠিক আছে

উজানঃ আর তোমার?

হিয়াঃ আমার একটা হলেই চলবে আপনার আর শ্রাবণের মতো ওতো এটা খাবো ওটা খাবো না স্বভাব আমার নেই,,,,দেখি এসে বসুন

উজান এসে বসে আগে কুমড়ো ভর্তা দিয়ে অর্ধেক প্লেট ভাত শেষ করে,,পরে হিয়া উজানের পাতে মুরগী তুলে দিয়ে নিজে একটা চেয়ারে বসে খেতে শুরু করে,,বাকি এখনো অনেক কাজ আছে সব কাজ শেষ করে সে সিদ্ধান্ত নেয় সে গোসল করবে,,

হিয়াঃ গায়ের জামাকাপড় গুলো কোথায় খুলে রাখছো শ্রাবণ?ওগুলো যে ভিজিয়ে রাখলে এখন কি পড়বে তুমি শুনি!!

হিয়ার প্রশ্নে শ্রাবণ ভীষম খেয়ে চোখ বড় করে তার ভালো ভাইয়ার দিকে চট করে তাকিয়ে উঠে-উজানো ওর নিজের খাবার রেখে শ্রাবণের দিকে তাকাতেই দুজনে ফিকঁ করে হেঁসে দেয়,,কারণ দুজনে তখন পুরো জামাকাপড় খুলে খালি গায়ে টবে ঢুকে গোসল করছিলো,,তাই জামাকাপড় কারোরই ভেজা নেই

হিয়াঃ এতে হাসির কি হলো!!!!

উজানঃ না কিছু না,,তুমি এতো ভাবছো কোনো বলো তো,,আমার জামাকাপড়ের কি অভাব আছে না-কি,,শ্রাবণ এখন আমার একটা শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট গুলো থেকে একটা পড়ে নেবে আর তুমি এখন গিয়ে ওর এই খুলে রাখা জামা কাপড় গুলো ধুয়ে দেও যা রোদ আজকে এক ঘন্টায় শুকিয়ে যাবে।

হিয়াঃ আপনার শার্ট আর প্যান্ট যেনো ওর হবে!!আচ্ছা আপাতত একটা বড় গেঞ্জি থাকলে ওকে দিন ওটা,, পড়ে থাকুক কিছুক্ষণ

উজানঃ হুম

হিয়াঃআপনাকে দেবো আর একটু ভাত??

উজানঃ দেও,,কুমড়ো ভর্তা আর নেই??

হিয়াঃ আর কতো খাবেন,,আমি একটু রাতের জন্য তুলে রাখছি রাতে আবার আপনাকে ভাতের সাথে দেবো বলে।

উজানঃ (হতাশ কন্ঠে) ঠিক আছে,,তুমি ভাত নিচ্ছো কোথায় ভাত নেও আরো

বলেই উজান হিয়ার পাতে আরো দু প্লেট ভাত আর এক গাদা মুরগীর মাংস তুলে দিলো,,হিয়া নিরুপায় হয়ে ভাত গুলো অনেক কষ্টে শেষ করলো কারণ এতো ভাত তার একসাথে খাবার অভ্যাস নেই,,তাই সে হাঁপিয়ে গেলো যেনো একরকম,,খাওয়া শেষে উজান শ্রাবনকে নিয়ে সেই একটা ঘুম দিলো,,উঠলো ঠিক সন্ধ্যার আরো ঘন্টা দেড় একের পর,,এই তিন চার ঘন্টার মধ্যে হিয়া প্রথমে মিনিট বিশের মতো বিশ্রাম নিলো তারপর উঠে হাঁড়িতে পরে থাকা চা টুকু গরম করে আবার খেলো চোখে কেনো জানি ঘুমঘুম পাচ্ছে কাল ঘুমোইনি রাতে তাই জন্য হয়তো,,তারপর দৌড়ে এসে শ্রাবণের জামা কাপড় গুলো আগে কেচে দিলো কারণ একটু পর রোদ টা পড়ে গেলে সেগুলো আর শুকোতে চাইবে না,,কাপড় গুলো বারান্দায় রোদে মেলে দিয়ে হিয়া উজানের ফোন টা বের করলো,করে উজানের ফোনে সেভ করে রাখা গুনগুনের মায়ের নাম্বার থেকে গুনগুনের মাকে ফোন করে বললো সে কাল থেকে নিয়মিত গুনগুন কে আবার পড়াবে,,কথা বলা শেষে হিয়া ফোনটা আস্তে করে উজানের বালিশের কাছে রেখে রান্নাঘরে গিয়ে দুপুরের খাওয়া শেষে বের হওয়া এঁটো বাসন গুলো মেজে নিলো,,এক এক করে বাজারের ব্যাগ থেকে আটা চিনি চাপাতা সব বের করতে থাকলো আর তখনি এক ফাঁকে বেড়িয়ে আসলো একটা gold leaf cigarette এর পুরো প্যাকেট,,প্যাকেট দেখেই হিয়ার মেজাজ পুরো বিগড়ে গেলো নিমিষে!!

হিয়াঃ বাজার করতে গিয়ে সিগারেট আনা হচ্ছে তো,,খাওয়াবো এবার থেকে আপনাকে বেশি করে সিগারেট আমি,,ঘুম থেকে উঠুন শুধু আজ!!

হিয়া সিগারেটের প্যাকেট টা লুকিয়ে রেখে বাকি বাজার গুলো বের করে সুন্দর মতো বোয়ামে-ডালিতে সাজিয়ে নিয়ে রান্নাঘর টা মুছে নিলো,,আর সব বোয়মে লিখে দিলো কোনটা লবন কোনটা চিনি কোনটা জিরে কোনটা ধনিয়ার গুঁড়া,,যদিও এর সবই হিয়ার চেনা কিন্তু উজানের সুবিধার জন্য হিয়া এই কাজ টা করলো,,রান্নাঘরের কাজ শেষ করে হিয়া ডাইনিং এ এসে টেবিল পরিষ্কার করে ডাইনিং রুম টা ঝাড়ু দিয়ে নিলো,,ফ্রীজ টা পরিষ্কার করতে চাইলো কিন্তু উজানকে না বলে আর হাত দিতে চাইলো না,,ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে সাত টা,,শ্রাবণের ঘুম শেষের পর্যায় তাই সে এপাশ ওপাশ নড়তে ব্যস্ত,,শ্রাবণের নড়াতে ঘুম ভেঙে গেলো উজানের,,তাও উজান না উঠে কম্বল মুড়ে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে একটা ঘুম দিলো,,কিন্তু মিনিট দশকের পর ফোনের আচমকা শব্দে ঘুমটা ভেঙে আসলো,,শ্রাবণো
চোখ খুললো কিন্তু উঠলো না ওটুকু জায়গায় উজানকে জড়িয়ে গা চাঁড়া দিতে থাকলো

তুষারঃ মামা তুমি কই,,হিয়াকে পাওয়ার পর থেকে তুমি আর আমাদের কে তোমার দর্শন দেও না,,এটা কি ঠিক

উজানঃ কিসের জন্য ফোন দিয়েছিস সেটা বল,,পরীক্ষার জন্য তুমি বাথরুমে বই নিয়ে যাও আর আসছো আমাকে বলতে আমার দর্শন নাই

তুষারঃ তুই কি খারাপ উজান,,এই একদিন যে হিয়াকে খুঁজতে জান প্রাণ ছেড়ে দিলাম সেটা তো বলছিস না একবারো

উজানঃ সেটা না হয় একদিন,,এমনি সময় কি করিস তুই সব জানা আছে আমাদের

তুষারঃ আচ্ছা বের হবি না এখন,,মকবুল স্যারের নোট টা তো তোর কাছে,কপি করা হয়নি,,রুপম বলছে ওগুলো নিয়ে একবার টি এস সির সামনে আসতে

উজানঃ আচ্ছা,,থাক তোরা আমি শ্রাবণসহ আসছি,,

তুষারঃ আচ্ছা আয়,,আছি আমরা

উজান ফোন কেটে দিতে শ্রাবণ তার ছোট্ট হাত দুটো দিয়ে উজানের দাঁড়ি গুলো টানতে থাকে

শ্রাবণঃ আমরা এখন কোতায় যাবো?

উজানঃ এমনি কিছু কাজ আছে,,তারপর তোর কিছু বই-ও তো কেনা বাকি আছে না দুটো,, ওগুলো কিনতে হবে,,সামনের সপ্তাহ থেকে কিন্তু স্কুল শুরু

শ্রাবণঃ হে হে আমার নুতুন ইস্কুল,,নুতুন জামা নুতুন বই

উজান শ্রাবণের কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে উঠে বসে,,উঠে বসতে দেখে হিয়া সামনে দাঁড়িয়ে ওর টেবিল গুছে দিচ্ছে,,

উজানঃ হিয়া শ্রাবণের জামাকাপড় গুলো শুকোয়নি??ওকে পড়িয়ে দেও না আমরা এখন একটু বাহিরে যাবো

হিয়াঃ আবার কোথায় যাবেন এই রাতে?

উজানঃ এমনি আসছি,,তুষার ডাকলো

হিয়াঃ আচ্ছা,,দিচ্ছি পড়িয়ে আপনি রেডি হোন ততোক্ষণে,,আচ্ছা শুনুন না একটু

উজানঃ বলো,, কি?

হিয়াঃ এই কোন বই গুলো আপনারা লাগবে এখন,,না মানে সব পরীক্ষা তো শেষ আর একটা বাকি তাই না??তো যেগুলো লাগবে না সেগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখি আমি!!

উজান কপাল উল্টে এক বার ওর স্টাডি টেবিল টা চোখ বুলে নিয়ে যেগুলো বই লাগবে ওগুলো তুলে ড্রেসিং এ রেখে হিয়াকে বলে এখন এই বই গুলো সব গুছিয়ে রাখো,,হিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতিসূচক হ্যা বলে বারান্দায় গিয়ে শ্রাবণের জামা আর প্যান্ট টা তুলে এনে শ্রাবণকে পড়িয়ে দেয়,,যদিও প্যান্টা এখনো হালকা ভেজা কিন্তু কি আর করার তবুও হিয়ার একটু চিন্তা হয় যদি ঠান্ডা টা আবার লেগে বসে শরীরে,,

উজানঃ হিয়া হলো তোমার??

হিয়াঃ হুম

উজান একটা ওফ হোয়াইট রঙের প্যান্ট আর নেভিব্লু টি শার্ট পড়ে তৈরি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা আছড়ে নিয়ে নোট গুলো একটা ফাইলে গুছিয়ে নেয়,,হিয়া শ্রাবণের চুল আছড়ে শ্রাবণে একটা সুন্দর বাবু সাজ দেয়,,উজান সব গুছিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে গেট দিয়ে বের হতে যাবে ওমনি পাশের ফ্লাটের ফয়সালের আম্মু বেড়িয়ে হিয়াকে আর শ্রাবণকে দেখে ফেলে,,উজান আন্টি টাকে সালাম দিয়ে হিয়াকে পরিচয় করিয়ে দিতে থাকে যে হিয়া ওর ওয়াইফ আর শ্রাবণ হিয়ার ছোটো ভাই

ফয়সালের আম্মুঃ তুমি বিবাহিত জানতাম না তো??আসলে অনেক সময় তো দেখি কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে থাকো তাই আরকি বোঝা যায় না

উজানঃ আসলে কখনো তো ওভাবে কথা হয়নি আপনাদের সাথে তাই জানানো হয়নি,,এখন থেকে ও আমার সাথেই থাকবে,,পড়াশুনা তো শেষ হয়ে আসলো,ভার্সিটিতে এস এ টিচার জয়েন করবার কথা আছে তাই মা বললো এখন থেকে ওকে নিয়েই থাকতে একসাথে

ফয়সালের আম্মুঃ বাহ খুব ভালো,,হুম নিজের পায়ের দাঁড়িয়ে সংসার টা শুরু করো দেখবে তখন সব ভালো যাবে

উজানঃ হুম,,আঙ্কেল ভালো আছে?ওনার হার্টের কন্ডিশন কেমন এখন??

ফয়সালের আম্মুঃ আছে তোমার আঙ্কেল এখন ভালো আছে অনেকটা,,আচ্ছা বাহিরে যাচ্ছ মনে হয় বিরক্ত না করি,,তো বউ নিয়ে এসো একদিন বাড়িতে জানোই তো আমি ব্যস্ত ভীষণ যাবার সময় হয়ে ওঠে না,, ফয়সাল তো আবার ইদানীং তোমাকে খুব মিস করে উজান ভাইয়া কোথায় সে কেনো এখন আসে না,,বাড়িতে থাকে না কতো কথা,,

উজানঃ হুম পরীক্ষা চলছে তাই জন্য সময় হয় না,,আচ্ছা আন্টি আজ তাহলে আসি অন্য দিন কথা হবে

বলেই উজান হিয়ার দিকে ঘুরে হিয়াকে একটা ডেভিল মার্কা চোখ মেরে শ্রাবণকে নিয়ে নিচে নেমে আসে,,হিয়া ফয়সালের আম্মুর সাথে কোনোমতে দু একটা কথা বলে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একটা দম ছাঁড়ে,,উজানের না-হয় মিথ্যা বলার অভ্যাস আছে কিন্তু হিয়ার তো নেই,,সে যে শুধু শুধু উজানের হ্যা তে হ্যা মেলাতে গিয়ে কতো কি বলে ফেললো ফয়সালের আম্মুকে,,ধুর
!
!
!

উজানের টেবিল বিছানা আবার গুছিয়ে হিয়া এবার গোসল করতে ওয়াশরুমে ঢুকলো,,পানি ছেড়ে সকালে তুলে ফেলা বেড কভার আর উজানের খুলে রাখা প্যান্ট শার্ট গুলো ধুইয়ে দিয়ে হিয়ার গোসল করতে বাজলো রাত দশটার কাছাকাছি,,হিয়া তো মনের আনন্দে কাপড় চাপড় ধুইয়ে গোসল করলো কিন্তু এবার সে পড়বে কি!!কথাটা মাথায় আসতে হিয়ার এবার মাথায় হাত,,গায়ে পড়া জামা কাপড় গুলোও তো সব কেচে দিলো সে এখন কি হবে!!

হিয়াঃ শ্রাবণকে দুপুরে বকতে গিয়ে তো এবার আমি ঔ একি ভুল করে ফেললাম এখন আমি কি জামা পড়বো এ্যা হ্যা

হিয়া মুখ ছোট করে নিজের মাথায় নিজে মারতে শুরু করলো,,কিছুতেই কোনো কিছু মাথায় আসছে না তার,,সেকি এখন এই ভেজা জামা কাপড় গুলো আবার পড়বে ধ্যাত কিছুই তো মাথাতে বুদ্ধি আসছে না,,হিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটে কলিং বেলের কিরিং কিরিং শব্দে,,কি করবে এখন হিয়া কি পড়ে বের হবে,,এদিকে পাঁচ মিনিট হিয়ার জন্য অপেক্ষা করেও যখন উজান ভেতর থেকে হিয়ার কোনো সাড়াশব্দ পেলো না তখন ঘাবড়ে গিয়ে উজান বাড়িতে ফেলে রাখা আরেকটা ফোনে কল করলো,,এদিকে ফোনের শব্দ কানে বাজতেই হিয়া ওর গায়ে তোয়ালে টা পেঁচিয়ে নিয়ে বের হয়ে ফোন টা নিয়ে দেখলো উজান ওর নাম্বার থেকে ফোন করছে,,হিয়া কলটা রিসিভ করলো আর করেই এখন সে কি পড়বে বলে কান্না শুরু করে দিলো

উজানঃ কে বলেছিলো এই রাত দশটার সময় গোসল করতে,খুব তো তখন শ্রাবণকে খাওয়ার সময় বকলে এখন নিজে তো সেই একই ভুল করলে

হিয়াঃ আমি জানি না আপনি আমাকে একটা জামা নিয়ে এসে দিননন না প্লিজজ

উজানঃ আমি পারবো না এমনিতেও এখন সব দোকান বন্ধ,,তুমি ঔ এক কাজ করো তুমি গিয়ে আলমারি থেকে আমার একটা শার্ট বা প্যান্ট যা আছে পড়ে নেও

হিয়াঃ কি!!__মাথা টা কি পুরোই গেছে না-কি আপনার,,আপনি আমার জন্য এক্ষুনি নতুন জামা নিয়ে আসুন আর তাও যদি না পারেন আমার বাড়িতে যান রিমা আপু আছে ওনাকে গিয়ে বলুন আমার একটা জামা দিতে উনি আমার জামা আপনাকে বের করে দিবে,,যান

উজানঃ মাথা আমার না মাথা তোমার পুরোটা গেছে,,আমি পারবো না

হিয়াঃ তাহলে আমিও গেট খুলবো না,,দুজনে এখন কোথায় গিয়ে থাকবেন তাই ভাবুন,,আমি রাখলাম

উজানঃ হ্যা রাখো,,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার কাছে লকের এক্সট্রা চাবি আছে wow😍 আমি এখন গেট খুলে তোমাকে গিয়ে খোলা গায়ে দেখবো ইসস,,,ওয়েট আমি আসছি দুই মিনিট

হিয়াঃ এই নাআআআ,,একদম না,,দেখুন আপনি এরকম করবেন না,,আমি আমি কিন্তু বাথরুমে গিয়ে তাহলে বসে থাকবো হ্যা

উজানঃ থাকবে যতক্ষণ খুশি থাকবে আমাদের কি

হিয়াঃ আপনি না খুব খারাপ একটা মানুষ

উজানঃ এতোটুকুতেই খারাপ বলে দিলে হিয়া পাখি,,এখনো তো পুরো রাত বাকি আছে হি হা হা হা হা হা

হিয়াঃ একদম এভাবে হাসবেন না,,গা পিওি সব জ্বলে গিয়ে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় আমার,,দাঁড়ান আমি না বলা অবধি একদম ভেতরে আসবেন না

হিয়া ফোন কেটে দশ সেকেন্ড ইচ্ছে মতো কান্না করে,,তারপর উজানের আলমারি থেকে বেছে বেছে উজানের একটা বড় সাদা শার্ট আর একটা সাদা হাফ প্যান্ট বের করে রাগে গটগট করতে করতে পড়ে নেয়,,আর উজানের শার্ট আর প্যান্ট পড়তে গিয়ে হিয়া যেনো একটা বোকা বনে গেলো এবার,,উজানের শার্ট হিয়ার কোমড় ছাড়িয়ে অনেকটা নিচ অবধি এসে পড়েছে এই শার্টের ভেতর হিয়ার মতো আরো দুটো হিয়া ঢোকানো যাবে,,প্যান্টটা ঠিক হাঁটুর নিচ অবধি পড়লেও একটু ঢিলে হয়ে খুলে যাবে খুলে যাবে এরকম অবস্থা,,হিয়া প্যান্টা টা টাইট করে গিটু দিয়ে তোয়ালে টা মাথায় পেঁচিয়ে নেয়,,এদিকে উজান ইচ্ছে করে কলিংবেল বাজাতে বাজাতে কান শেষ করে দেয়,,হিয়া এসে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে দরজা খুলে একটু আড়াল হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যায়,,হিয়াকে দেখে শ্রাবণ উজান দুজনে শকড,হিয়াকে একদম বাচ্চা গুলোর মতো লাগছে অনেক কিউট

শ্রাবণঃ বুবু তুই এগুলো কি পড়ছিস কেমন কেমন জানি লাগছে তোকে হে হে

হিয়াঃ চুপ,,যা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আয়

শ্রাবণ জুতা খুলে দৌড়ে গিয়ে হাত মুখ ধুবে বলে ওয়াশরুম ঢুকে,,এদিকে উজান হিয়ার দিকে কি রকম একটা তাকিয়ে আছে দেখে হিয়া ওখানে আর বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে দৌড়ে রুমে ঢুকে বারান্দায় গিয়ে নিজেকে আড়াল করে,,

হিয়াঃ ইসস এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকে,,বুঝতেই পারছে আমি লজ্জা পাচ্ছি তারপরো ওনার এই আমাকে লজ্জা দেওয়া চাই চাই,,আমার এখানে থাকতে আসা টাই ভুল হ’য়েছে আজ,,আর যদি কখনো ওনার কথা শুনে আসি আমি,,এরপর যা হবে সব বিয়ের পর হু!!
!
!
!
রাতের ডিনার টুকু শেষ করে এক দফা খেলা শেষে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রাবণ,,তার চোখ জুড়ে কেনো আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসলো তাই খুবই বিরক্ত লাগছে তার,,বুবুর কাছে শুনতে পেলো এখন না-কি রাত একটা বাজতে যাচ্ছে,,শুনেই মাথায় হাত তার কখন সময় গড়িয়ে এতো রাত হয়ে আসলো,,ইসস ভালো ভাইয়া টা সাথে থাকলে সময় গুলো যে কি করে এতো ফাস্ট ফাস্ট এগোতে থাকে,,হতাশ হয়ে বিছানায় শুতে না শুতে ঘুমিয়ে গেলো শ্রাবণ,,হিয়াও আর বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারছিলো না কালকে রাতে তো ঘুম হয় নি হয়নি তার উপর আজ সারাদিনে মেয়ে যতো গুলো কাজ করলো শরীর ক্লান্ত না হয়ে উপায় আছে,,উজান বুঝতে পারে হিয়া ভীষণ ক্লান্ত তাই নিজে উঠে মশারী টা ফেলে দিয়ে এসি টা একটু কমিয়ে দিয়ে হিয়াকে আরেকটা কম্বল বের করে দিলো,,হিয়া কিছু বলছে না শুধু শ্রাবণের পাশে বসে অপলক দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে আছে,,

হিয়াঃ আপনি ঘুমোবেন না?আমি সড়ে যাই ওপাশে

হিয়ার প্রশ্নে উজান একটা হাসি দিলো,,মশারি তুলে হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ বুলে দিয়ে হিয়াকে শুইয়ে কম্বল টা ঠিক করে দিলো,,

উজানঃ আমি এখন ঘুমোবো না,,পড়তে বসতে হবে আর বেশি সময় নেই পরীক্ষার,,এই পরীক্ষা টা হলে তখন সারারাত গল্প করবো ঠিক আছে

হিয়াঃ আপনি এখন এই রাত জেগে পড়বেন তাহলে আমিও আপনার সাথে রাত জাগবো

উজানঃ না হিয়াপাখি তুমি জেগে থাকলে যে আমার পড়া হবে না!!(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

হিয়াঃ ঠিক আছে,,মন দিয়ে পড়ুন আপনার এই পিচ্চি আপনাকে কোনো প্রকার বিরক্ত করবে না ঠিক আছে

উজানঃ আচ্ছা পাগলি,,ঘুমোও

হিয়াঃ হুম

!
!
!

রাত তখন চারটের কাছাকাছি,,সেই ১টা থেকে এক টানা পড়তে পড়তে উজান এবার অনেকটা ক্লান্ত,,এদিকের রুমের বিছানা থেকে উঠে একটা বড় করে হাই তুলে গা টা একটু দু হাতে এপাশ ওপাশ করে ফুটিয়ে নিলো সে,,এখন একটা সিগারেট খেতে পারলে ভালো হতো,,কথাটা মনে আসতেই উজানের মনে পড়লো তখন যে সে দোকানদার টার থেকে এক প্যাকেট গোল্ড লিফ চেয়ে নিলো ঔ প্যাকেট টা কোথায়!!

উজানঃ সর্বনাশ এই প্যাকেট হিয়ার হাতে গেলে তো আজ রক্ষে থাকবে না আমার,,অবশ্য গেলেই বা কি হিয়া তো জানে আমি সিগারেট খাই সো হোয়াট ভয় পাই নাকি আমি ওকে____তবে প্যাকেট টা তার হাতে পড়লে যে সেটাকে সে সাজিয়ে না রেখে ছুঁড়ে ফেলবে সেটাও আমি সিউর,,কোথায় খুঁজি এখন ওটাকে আমি কোথায় খুঁজি??

বলতে বলতে উজান প্রথমে ময়লার ঝুড়ি টা খুঁজলো তারপর যেই পলিথিন গুলোতে বাজার দিয়েছিলো সেই পলিথিন গুলো খুঁজলো কিন্তু তবুও কিছু পেলো না,,তারপর রান্নাঘরের তাক গুলোতে বোয়াম সারিয়ে সারিয়ে খুঁজতে গিয়ে হিয়া এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো

হিয়াঃ এটা খুঁজছেন??

হিয়ার কথায় উজান হালকা কেঁপে গিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হিয়া এক হাতে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

উজানঃ তুমি এখনো ঘুমোওনি?

হিয়াঃ ঘুমিয়ে ছিলাম,,ওয়াশরুমে যাবো বলে ঘুম টা ভেঙে আসলো,,আপনাকে একবার দেখতে ইচ্ছে করলো বলে উঠে আগে এখানে আসলাম এসে দেখতে পেলাম আপনি চোরের মতো কি জানি একটা খুঁজতে ব্যস্ত

উজানঃ হোয়াট চোরের মতো,,এটা আমার ফ্ল্যাট আমি কেনো চোরের মতো আমার জিনিস খুঁজতে যাবো,,,আর এটা তোমার হাতে কেনো হ্যা,,দেও বলছি আমাকে

হিয়াঃ আপনি ভাবলেন কি করে আমি এটা আপনাকে দেবো,,মাঝে মাঝে এক দুটো সিগারেট খান ঠিক আছে মানলাম ছেলে মানুষ একটু বাজে স্বভাব থাকবে তাই বলে একদিনে পুরো প্যাকেট

উজানঃ একদিনে কোনো পুরো প্যাকেট খেতে যাবো,,কিনে এনে রাখলাম রোজ একটা দুটো করে বের করে খাবো তাই জন্য

হিয়াঃ আমাকে শেখাচ্ছেন আপনি!!___আপনার এপাশের রুম টা ঝাড় দিতে গিয়ে গুনে গুনে আটটা প্যাকেট তুলে ফেললাম আমি আজ আর আপনি আমাকে শেখাচ্ছেন আপনি রোজ একটা দুটো করে খান এসব

উজানঃ আরে ঔ রুমে তো তুষাররা আসলে আমরা একসাথে থাকি তখন জমে যায়,,কিন্তু বিলিভ করো আমি একাই এতো গুলো কখনো একসাথে

হিয়াঃ বিশ্বাস আর আপনাকে তাও আবার এটা দেখার পর,,মাঝে মাঝে তো আমার ডাউট হয় আপনার এই ঠোঁট গুলো কি সত্যি এতো পিংক পিংক নাকি ঠোঁটে ঔ লিপস্টিক টাইপ কিছু দেন,,এতো সিগারেট খেলে তো ঠোঁট এতো গোলাপি থাকবার কথা না,,উম হুম

হিয়ার কথায় উজান এসে রান্নাঘরের দরজার দুপাশে হাত দিয়ে হিয়াকে একটা বেষ্টনে আঁটকে দিলো,,

উজানঃ তাই না,,আসো তা দেখাই তোমাকে আমার ঠোঁট গুলো ওরজিনালি পিংক না অন্য কিছু

হিয়াঃ কি করছেন আপনি?দূরে যান হ্যা গিয়ে পড়তে বসুন

উজানঃ প্যাকেট টা হাতে দেও আমার

হিয়াঃ কখনোই না

উজানঃ দিবা না!!

হিয়াঃ না

উজানঃ সত্যি না!!

হিয়াঃ হুম আপনি যা করতে পারেন করে নিন আমি এটা আপনাকে দেবো না মানে কিছুতেই দেবো না

উজানঃ তাই ঠিক আছে দেখি আমি এটা তোমার থেকে নিতে পারি কি পারি না

বলেই উজান টপ করে হিয়াকে কোলে তুলে নেয়,,নিয়ে আলতো পায়ে এ দিকের ঘরটায় এসে হিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হিয়ার দিকে ঝুঁকে আসে

হিয়াঃ দে-খুন আমি আমি কিন্তু তখন বলেছিলাম যে আমি আমি আপনাকে বিশ্বাস করি,,আপনি কিন্তু হ্যা

উজানঃ কি আমি!!

হিয়াঃ আমাকে যেতে দিন,,শ্রাবণ শ্রাবণ উঠে আমাকে না পেলে কান্না করে দেবে

উজানঃ দিলে দিবে আমি আছি তো

হিয়াঃ দেখুন বিয়ের আগে কিন্তু এসব ঠিক না হ্যা

উজানঃ কি ঠিক না!!

হিয়া আর কিছু বলতে পারে না,,গলা শুকিয়ে আসে তার,,এদিকে উজান হিয়ার পেটের কাছে ওর হাত টা নিয়ে এসে রাখে,,আলতো করে দু আঙ্গুল চালিয়ে একটু একটু করে আঙ্গুল টা এনে ঠেকায় হিয়ার বুকের ঠিক খাঁজের মাঝে,,ভয়ে হিয়ার আত্না শুকিয়ে যায়,,নিশ্বাস যেনো আরো এক ধাপ বেড়ে যায়,,উজান ওর আঙ্গুল দুটো আবার চালিয়ে সেটা হিয়ার থুতনির কাছে এনে ঠেকে দেয়,,ভয়ে হিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে,,উজান আঙ্গুল দুটো সোজা করে এক হাত হিয়ার কানের ফাঁক দিয়ে হিয়ার চুলে ডুবে দিয়ে হিয়াকে কিছুটা টেনে উপরে তুলে হিয়ার কপালের সাথে কপাল লেগে দেয়,,ভয়ে হিয়া ওর ঠোঁট দুটো চিপে ধরে,হিয়ার হাত থেকে এবার না চাইতেও সিগারেটের প্যাকেট টা গড়িয়ে নিচে পড়তেই উজান হিয়ার কপালে একটা চুমু এঁকে টপ করে হিয়ার উপর থেকে উঠে প্যাকেট টা তুলে নিয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিলে হিয়া থ হয়ে যায়,,তারমানে এতোক্ষণ এই প্যাকেট টা নেবার জন্য উজান এতো কিছু করলো,,লজ্জায় হিয়া দৌড়ে ওর রুমে গিয়ে কম্বল মুড়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে,,ইসস কি লজ্জা টাই না দিলো উজান ওকে একটু আগে,,লজ্জায় পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছে হিয়া কেনো সে ঘুম থেকে উঠেছিলো সেটাও এখন আর তার মনে নেই

উজানঃ পাগলি একটা এ-তো বোকা কেউ হয়,,মনে তো হচ্ছিলো যেনো ওকে সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলবো

হিয়াঃ এ-ই লোকটা খুব খুব খুব বাজে,,কি করে এই লোকটার সাথে আমি সারাজীবন থাকবো,,আমাকে তো এরকম লজ্জা দিতে দিতে পাগল বানিয়ে দিবে,,না আর কখনো আমি ওনার সাথে এ ফ্ল্যাটে এসে থাকবো না,,ধুর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here