😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-38
সবার চোখ জুড়ে দেখা মিলছে কান্নার মেলা,,সবাই যেনো খুশিতে নিজেদের কথা বলার সব শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে,,তারা কি ঠিক শুনলো,,শ্রাবণ কি সত্যি রেসপন্স করেছে,,নাকি কথা গুলো তাদের মনের মধ্যে কোনো এক কারণে বাজছে কোনটা?
হিয়া উজানের দিকে প্রশ্নভরা চোখে তাকাতেই উজান হিয়াকে ওর বুকে জাপ্টে ধরে কাঁদতে শুরু করলো,,সাথে সাথে সেই কান্নার রেশ গিয়ে লাগলো হিয়ার চোখে,,যে যেভাবে পারছে নিজেদের মনের খুশি টুকু চোখের পানিতে প্রকাশ করছে,,
নিজেদের সামলে নিয়ে সবাই দল পেকে শ্রাবণের মুখের কাছে এসে জোরো হয়,,সবাইকেই যেনো শ্রাবণের সাথে কথা বলতে হবে,,আর কে আগে কি কথা বলবে শুরু হয় সবার ঠেলাঠেলি চিল্লাচিল্লি,,
উজানঃ হেই বুড়া তুই দেখতে পারছিস আমাদের কে?শ্রাবণ কথা বল,,দেখা যাচ্ছে আমাকে?
তুষারঃ ভালো ভাইয়া কি গান করেছে তুই শুনেছিস তো,,এই ছেলে কথা বলিস না কেনো?
ঝিনুকঃ আরে শুনবে না কেনো,,এই এই বল না একটু আগে কি বললি,,কে কে বকা দেয় তোর ভালো ভাইয়া কে,,বল কে বকা দেয়?
শ্রাবণঃ বুবু!!
শ্রাবণ মুখে হাসি টেনে বুবু বলতেই সবাই চিৎকার শুরু করে,,কি যে আনন্দ পাচ্ছে তারা বলে ব্যাখা করা অসম্ভব
ঝিনুকঃ ইয়ে শ্রাবণ আমার কথা শুনেছে,,তোমরা কচু পারো কিছু করতে___কে বকা দিছে আবার বল,,এই এই ঔ পাজি হিয়া টা বকা দিছে তাই না,,আমরা এবার সবাই হিয়াকে ইচ্ছে মতো মারু দেবো ঠিক আছে।
উজানঃ আমাকে আমাকে একবার ভালো ভাইয়া বলে ডাক না শ্রাবণ,,এই ঝিনুক বল না ওকে আমাকে ভালো ভাইয়া বলে ডাকতে
সন্ধিঃ শ্রাবণ সোনাবাচ্চা আমাদের একবার ভালো ভাইয়া বলে ডাকতো এই বদমাইশ টাকে,,
শ্রাবণঃ ভালো বাইয়া(ভাঙ্গা কন্ঠে)
শ্রাবণ ভালো ভাইয়া বলার সাথে সাথে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে,,উজান খুশির চোটে তুষারকে জড়িয়ে ধরে,,
সন্ধিঃ আমি আমি কে শ্রাবণ বল না আমি কে?
শ্রাবণঃ সনদি(সন্ধি)আপু!!
শুনেই সন্ধি গপ করে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে,,
তুষারঃ আরে আস্তে আস্তে,,বাচ্চা টা তো ব্যাথা পাবে নাকি
সন্ধিঃ সরি সরি
শ্রাবণঃ বুবু কোলে!!
উজানঃ কি সোনা কি বল আরেকবার?
শ্রাবণঃ বুবু কোলে যাবো
উজানঃ বুবু বুবু কোলে যাবি,,এই হিয়া হিয়া কোথায় তুমি,,এই সামনে আসো শ্রাবণ ডাকছে না,,কি হলো আসো
হিয়া এতোক্ষণ সবার পেছনে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো,,সবাই সামন থেকে সরে দাঁড়ালে হিয়া এক পা দু পা করে শ্রাবণের মাথার কাছে এসে বসে,,কাঁপা কাঁপা হাতে শ্রাবণকে আগলে ধরতেই গলা ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করে,,আজ কতোদিন বাদে তার বাচ্চা টা তাকে বলছে সে তার বুবুর কোলে উঠবে,,বুবুর কাছে যাবে,,ছোট্ট থেকে মায়ের মতো যেই বাচ্চা টাকে বুকে আগলে আগলে সে মানুষ করেছে আজ কতোদিন বাদে আবার সে তার এই বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে আদর করবে ভাবতেই যেনো পুরো শরীর মন ওর ভরে উঠছে হিয়ার,,
সন্ধিঃ আর কাঁদে না হিয়া,,এখন আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবা তুমি।
ঝিনুকঃ এতো খুশিতে তুই আর এভাবে কেঁদে কেঁদে মুহুর্ত গুলো ভারী করে তুলিস না হিয়া,,দেখ শ্রাবণ তোর কান্না দেখে ভয় পাচ্ছে
তুষারঃ এই হিয়া চুপ করো,এভাবে কাঁদে নাকি কেউ,,দেখি আমি একবার ডক্টরদের ফোন করে কথা গুলো বলি,,
সন্ধিঃ হ্যা তুমি তাড়াতাড়ি করে ওনাদের ফোন করে শ্রাবণের রেসপন্সের কথা বলো,,ওরা তারপর কি করতে বলে সেটা তো জানতে হবে নাকি?
তুষারঃ হুম করছি তুমি হিয়াকে সামলাও,,রুপম আয় তো দেখি আমার সাথে,,উজান তুই থাক হিয়ার পাশে
হিয়াঃ আমার শ্রাবণ আবার আগের মতো কথা বলছে ঝিনুক,,ও আমাকে বুবু বলে ডাকছে,,আজ কতোদিন ধরে আমি আমার বাচ্চা টার কন্ঠ শুনি না,,মনে তো হচ্ছিলো যেনো আমি আর কখনো হয়তো শ্রাবণকে
উজান এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিয়ে
উজানঃ চুপ না পাগলি,,শ্রাবণ ভয় পাচ্ছে তো,,এরপর ভয় পেয়ে আবার ওর কিছু হয়ে গেলে তখন
হিয়াঃ না না,,এই তো আমি আর কাঁদছি না দেখুন আপনি
উজানঃ হুম দেখি,,চোখ গুলো মুছে দেই,,শ্রাবণ এই বুবু টাকে একটু বকা দিয়ে দে তো খুব কান্না করছে
ঝিনুকঃ হ্যা খুব রাগ করে দে,,এই দুই মাস কি জ্বালান টাই না জ্বালিয়েছে আমাদের,উনি নাকি একা হাতে সব পারবে,,আসছে আমার পারু মামা
হিয়াঃ এই তুই কিন্তু আমাকে একদম ভেঙ্গাবি না ঝিনুক
ঝিনুকঃ তুই কিন্তু আমাকে একদম ভেঙ্গাবি না ঝিনুক,,,তোকে ভেঙ্গাতে যেনো আমার বয়েই গেছে,কে রে তুই,,খালি তো এই চোখ দিয়ে কান্নাই করতে পারিস আর কি পারিস,,ভীতুর ডিম একটা
হিয়াঃ খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু ঝিনুক বলে রাখলাম
ঝিনুকঃ যা তো,তুই গিয়ে মুড়ি খা,,এখানে কি তোর,,শ্রাবণ প্রথমে আমার কথার উওর দিছে তাই এখন আমি ওর কাছে থাকবো,,তুই ফুট
হিয়াঃ দেখলেন, আপনি দেখলেন ঝিনুক কি রকম মুখ বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করছে____আপনি হাসছেন,,ঝিনুক আমাকে ভেঙ্গাছে আর আপনি এভাবে হাসছেন
উজানঃ সরি সরি,,এই ঝিনুক কি হচ্ছে কি তুমি আমার হিয়া পাখিকে এরকম খুঁচে যাচ্ছো কেনো,,এটা কিন্তু ঠিক না,,খুঁচাতে হলে একটু বেশি করে ভেঙ্গাও এরকম করে কেউ ভেঙ্গায়,,
হিয়াঃ কি বললেন আপনি,,শ্রাবণ দেখ তোর ভালো ভাইয়া আমার সাথে কিরকম করছে,,আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি কান্না করে দেবো
উজানঃ ওটাই তো পারো তুমি,,চোখ তো না যেনো সাতটা মহাসাগর,,ওয়েট শ্রাবণ আমি দেখাই তোদেরকে তোর বুবু ঠিক কি রকম করে কাঁদে,,,রেডি_______এ্যা হ্যা এ্যা আমার ঘুম পাচ্ছে পেটে ব্যাথা করছে তার উপর আপনি বকবক করছেন বক বক করে করে আমাকে আরো ইরিটেট করছেন,,এ্যা হ্যা
উজানের হিয়ার কান্না নকল করা দেখে সন্ধি ঝিনুক তো হেঁসে হেঁসে খুন হয়ে যাচ্ছে যাচ্ছে এদিকে ভালো ভাইয়ার এরকম কান্না দেখে শ্রাবণ এবার খিল খিল করে হেঁসে ফেলে,,শ্রাবণের মুখের হাসি দেখে হিয়া চাইলেও আর রাগ করতে পেরে না,,সবার হাসি দেখে সে নিজেও হেঁসে ফেলে
হিয়াঃ পাগল একটা,,সবসময় পাগলামো❤️
!
!
!
ডক্টর এসে শ্রাবণকে দেখে নিয়ে বলে ওর আরো কিছু টেস্ট আর চেক আপ করাতে হবে যেগুলো বাড়িতে রেখে সম্ভব না,,তাই উজান ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী শ্রাবণকে নিয়ে এক সপ্তাহের জন্য হসপিটালে আবার শিফট করে,,ওখানে কিছুদিন ডক্টরের আন্ডারে থাকার পর ডক্টর শ্রাবণকে সুস্থ ঘোষণা করে শ্রাবণকে নিয়ে বাড়ি ফেরার নির্দেষ দেয়,,আর বলে আগামী দুই মাস শ্রাবণকে সম্পূর্ণ বেড রেস্টে রাখতে,কোনো রকম মানসিক চাপ পড়াশোনা এগুলো না করিয়ে হাসিখুশি খেলাধুলার মধ্যে রেখে ওর যত্ন নিতে,,আর পেটের সেলাই টাও এখন পুরোটা শুকিয়ে গেছে তাই সেটা নিয়ে ভয় পাবার আর তেমন কোনো কিছু নেই,,এখন শুধু কিছু মেডিসিন যেগুলো বলা আছে ওগুলো ঠিক মতো নিলে আর পুষ্টিকর খাবার খেলেই আস্তে আস্তে শ্রাবণ আগের মতো চলাফেরা করতে পারবে,,
শ্রাবণকে নিয়ে বাড়িতে শিফট করার পর,তিন চার দিন ঝিনুক সন্ধি,গ্রাম থেকে আসা হিয়ার চাচ্চু সবাই শ্রাবণের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে যার যার বাড়িতে ফিরে গেলো,,ঝিনুক থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু হিয়া দেয় নি এক সপ্তাহ বাদে ফাইনাল পরীক্ষা হিয়া আর কিছুতেই পরীক্ষার প্রতি ঝিনুকের এই উদাসীনতা মেনে নিতে পারছিলো না,,
!
!
!
দুপুরের দিকে শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে হিয়া গোসল সেরে আসতেই উজান এক ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে এসে কলিং বেল চাপতে শুরু করলো,,কলিং বেলের শব্দে শ্রাবণ একটু নড়েচড়ে বসতেই হিয়া মাথা মুছতে মুছতে দৌড়ে ছুটে গেলো গেট খুলে দিতে
হিয়াঃ এভাবে কেউ কলিংবেল বাজায়,,শ্রাবণ ঘুমোচ্ছে না
উজানঃ সরি সরি,,নেও ধরো,
হিয়াঃ কি এগুলো,,আবার বাজার কেনো করে আনলেন,,কে খাবে এগুলো এখন
উজানঃ কে খাবে মানে,,চাচ্চু,ঝিনুক এরা বাড়িতে নেই ওরা খাবে,
হিয়াঃ না কেউ বাড়িতে নেই,,চাচ্চুর গ্রাম থেকে ডাক আসায় উনি চলে গেলো,,আর ঝিনুককে আমি বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম,,সামনের সপ্তাহে ওর পরীক্ষা এভাবে সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়ে থাকলে ওর চলবে
উজানঃ বাহ বাড়ি তারমানে ফাঁকা আজ,,শ্রাবণো ঘুমে,,আ হা
হিয়াঃ কিছু বললেন আপনি
উজানঃ না কি বলবো,,নেও ধরো না,,আমি জুতো টা খুলি
হিয়াঃ দিন,,
হিয়া বাজারের ব্যাগ দুটো নিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে রেখে আসে,,এই এখন ওসব ঢেলে দেখার ইচ্ছে আর ওর করছে না,,উজান এসে হিয়ার থেকে তোয়ালে টা নিয়ে গোসলে ঢুকলে,হিয়া রুমে এসে আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিয়ে শ্রাবণের পাশে গিয়ে বসে,,শ্রাবণের মাথার কাছে বালিশ টা ঠিক করে দিয়ে হিয়া মাথার কাছের জানালার পর্দা নেমে দিয়ে রুমের লাইট টা ওফ করে দেয়,,বাহিরে রোদের আলো যথেষ্ট আজ, পর্দা ভেদ করেও সে আলো আসছে তাই অহেতুক এই দিনের বেলা লাইট জ্বালিয়ে রাখার প্রয়োজন আছে কি কোনো,,হিয়া উঠে চুল গুলো গায়ের ওরনা টা দিয়ে ঝেরে নিয়ে একটা খাতা আর কলম নিয়ে রোজকার মতো আবার হিসাব করতে বসে যায়,,
হিয়াঃ চাচ্চু এ পর্যন্ত আমার হাতে দিয়েছে ৬লাখ ২০হাজার,,সেদিন হসপিটালে উনি আর চাচ্চু মিলে দিলো ১লাভ ২০,,যার মধ্যে চাচ্চু দিলো ৩০ তাহলে সর্বমোট চাচ্চু এ পর্যন্ত শ্রাবণের জন্য দিয়েছে সাড়ে ৬লাখ,,আর এদিকে রংপুর থেকে আসা যাওয়ার খরচ তো ছিলোই,,আচ্ছা ওগুলো না হয় আমি বাদেই দিলাম____ভাইয়া সেদিন দিলো তাহলে ৯০ আর টেস্ট গুলো করাতে লাগলো ১৫ কি ২০,,তাহলে মোট দিলো ১লাখ ২০___আর সেবার যখন প্রথম শ্রাবণ হসপিটালে ছিলো তখন দিয়েছিলো সাড়ে চার লাখ,,ডক্টরদের বাড়িতে নিয়ে আসলো তার ভিজিট যতোটুকু শুনে বুঝলাম ২০,,তাহলে সাড়ে চার লাখ আর ১লাখ ২০ এ মোট হচ্ছে ৫লাখ ৭০ আর এদিকে ২০,,৫লাখ ৯০মোটে ধরলাম ৬লাখ____ঘরের এই সব জিনিস তো কম করে হলেও ৫০দিয়ে কিনেছে আর এই দুদিন ধরে শ্রাবণের ঔষধ বাজার সব মিলায় তো আরো কতো খরচ করলো,,আমি যদি কম করেও ধরি তাহলে ভাইয়া ৭লাখের মতো আর চাচ্চু খরচ করছে সাড়ে ৬ লাখ,,,,মোটে সব মিলায় গেলো সাড়ে তেরো কি চৌদ্দের মতো
সব হিসাব করে হিয়া এবার একটা দম ফেললো,,তখনি উজান বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে মাথা কোনো মতে মুছে দিয়ে হিয়াকে এসে পেছন থেকে গপ করে জড়িয়ে ধরে হিয়ার চুলের পেছনে মুখ লুকিয়ে নিলো,,
উজানঃ সারাদিন হিসাব হিসাব হিসাব,,যা খরচ হওয়ার তা তো হবে,,এসব হিসাব করে কি কোনো লাভ আছে
হিয়াঃ কাল থেকে আপনি আমাকে না বলে বাড়তি আর একটা টাকা খরচ করবেন না,,নাহলে কিন্তু আমি সব কিছু বাহিরে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে দিয়ে আসবো
উজানঃ আমার টাকা আমি খরচ করবো তোমার কি?
হিয়া হাতে থাকা খাতা টা বন্ধ করে সামনের টেবিলে রেখে পেছন ফিরে উজানের বুকের কাছে ওট হাত দুটো রাখে,,আর উজান তার দু হাতে হিয়ার কোমড় আগলে ধরে,,
হিয়াঃ আমার কিছুই না,,আপনার টাকা, আপনার খরচ করতে ইচ্ছে হলে সেটা আপনি আপনার বাড়িতে গিয়ে করবেন এখানে না
উজানঃ হিয়া শোনো,,আমি না তোমার কথা শুনতে বাধ্য নই,,তুমি মনে করো না এই এক মাস তুমি আমার সাথে ঠিক কতোটা কি খারাপ ব্যবহার করেছো সেটা আমি ভুলে গিয়েছি,,শ্রাবণকে সুস্থ হতে দেও একবার,কি করে সব হিসাব মিটিয়ে নিতে হয় তাই দেখবা তুমি
হিয়াঃ যা ইচ্ছে হয় আপনি করুন গিয়ে,,কিন্তু বাড়তি কিছু খরচ করতে দেখলেই আমি সেটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবো,,আর টাকা গুলো তো আপনার নিজেরো রোজগার করা না,,ওগুলো আপনার বাবার টাকা,,আপনি যেদিন নিজে রোজগার করে আমার জন্য কিছু কিনে আনবেন আমি সেটা খুশি মনে গ্রহন করবো কিন্তু এখন এইসব আমি কিছুতেই টলারেট করবো না
উজানঃ আমার বাবা কি তোমার বাবা না,,কি সমস্যা তোমার ওনার টাকা নিলে
হিয়াঃ আপনি নিজে তাকে বাবা বলে মানেন তো?__কোথায় এই এতো গুলো দিনে তো আমি কখনো আপনাকে তার সাথে একটা বারের জন্য কথা বলতে দেখলাম না,,কখনো তো ফোন দিয়ে শুনতে দেখলাম না যে আপনি ওনার সাথে কথা বলে জানতে চাইছেন বাবা তুমি ঠিক আছো কি না!
উজানঃ হিয়া আমি কেনো তার সাথে যোগাযোগ করি না তুমি কিন্তু সবটা জানো,,তাই এই মুহুর্তে এই প্রশ্ন গুলো করা কিন্তু তোমার সাজে না হিয়া
হিয়াঃ ওহ,,আপনার তার সাথে কথা বলতে সমস্যা কিন্তু তার টাকা নিতে আপনার বিবেকে বাঁধে নি একবারো,,খুব ভালো
উজানঃ হিয়া তুমি কিন্তু আমাকে
হিয়াঃ আমি কিছুই করি নি আপনাকে,,আপনার ভুল গুলো কোথায় সেটা শুধু আমি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি___আজ আমার বাবা মা নেই বলে আমি কতোটা নিঃস্ব কতোটা অসহায় সেটা কি আপনি চোখে দেখতে পারছেন না___আপনি কি উপলব্ধি করতে পারেন নি আজ বাবা মা নেই বলে আজ আমি অনাথ বলে আমাকে সবার কাছে কতোটা অসহায় হয়ে থাকতে হয়
উজানঃ এখানে এসব কথা কেনো আসছে হিয়া,,
হিয়াঃ আসছে তার কারণ আপনি তো আমার মতো অনাথ না,,আপনার মা বাবা দু’জনই আছে,,সময় থাকতে দয়া করে তাদের মূল্য দিতে শিখুন,,আপনি কিন্তু এটা কখনো অস্বীকার করতে পারবেন না আপনি আজ নিজেকে যেভাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,,যেভাবে একটা হাই ফাই মুডে নিজেকে সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন সেটা শুধুমাত্র আপনার বাবার জন্য,,উনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করলেও কিন্তু আপনার মায়ের প্রতি,আপনাদের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব তিনি পালন না করে থাকেন নি,,আজ আজ যদি শ্রাবণ সুস্থ হয়ে এভাবে চলতে পারে সেটাতে কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে আপনার বাবা জড়িয়ে,,আপনি না চাইতেই উনি আপনাকে বিনা বাক্যে কতো গুলো করে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে রোজ,,আপনার কি মনে হয় এগুলো শুধুই দেখানো,,না উজান___সব সবসময় দেখানোর জন্য সব হয় না,,
উজানঃ বলা শেষ তোমার,,ঠিক আছে বাবার টাকায় তোমার জিনিস নিতে সমস্যা তো,,সামনের মাস থেকে আমি ভার্সিটি জয়েন করছি,আই হোপ সেই টাকায় তোমার কিছু নিতে কোনো আপওি থাকবে না
উজান রাগে হিয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে গট গট করতে করতে শ্রাবণের পাশে গিয়ে শুইয়ে পড়ে,,হিয়া খেয়াল করে উজানের চুল ভেজা সাথে খোলা পিঠেও দেখা মিলছে পানির বিন্দু বিন্দু ছাপ,,হিয়া একটা শ্বাস ফেলে তোয়ালে টা নিয়ে আলতো করে উজানের মাথার কাছে গিয়ে বসে উজানের চুল মুছে দিতে থাকে,,চুল মুছে দেওয়া হয়ে গেলে হিয়া উজানের পিঠ,কোমড় মুছে দিয়ে উজানকে পেছন থেকে আলতো হাতে জড়িয়ে উজানের কানের কাছে ওর মুখ টা এনে ঠেকে দেয়,,
হিয়াঃ খুব রাগ হচ্ছে না আমার উপর____আচ্ছা আর ওসব বলবো না ঠিক আছে____কি হলো কথা বলবেন না____এই যে ভাত খাবেন না দুপুরে?
উজানঃ না খাবো না
হিয়াঃ ইসস কি রাগ করছে দেখো,,ভাত খাবেন না তো কি খাবেন শুনি
উজানঃ কিচ্ছু খাবো না আমি,,
হিয়াঃ আমাকেও খাবেন না,,
হিয়ার কথায় উজান টপ করে এপাশে ফিরে হিয়াকে গপ করে জড়িয়ে ধরে,,
উজানঃ খাবো তো,,তুমি দিবা খেতে
হিয়াঃ ওমনি রাগ কমে গেলো তো,,ছাড়ুন এখন,, আমি ভাত খাবো আমার খুদা পাইছে
উজানঃ না এখন কিচ্ছু খাওয়া হবে না,,এখন শুধু ঘুম হবে
হিয়াঃ ঘুম হবে মানে,,ঘুম পড়ে হবে,,একটুপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে এখনো দুপুরে ভাত না খেয়ে আছি,,মানুষ শুনলে হেঁসে দিবে
উজানঃ দিলে দিবে,,আমি এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুম দেবো আর এটা আমার শেষ কথা
হিয়াঃ আরে কি করছেন কি,,এভাবে কেউ চিপে ধরে,,আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে না
উজানঃ এখনি দম বন্ধ হয়ে আসলে তো হবে না হিয়াপাখি বিয়ের পর তো তখন আমি আরো তোমাকে
হিয়াঃ ছিঃ শুধু বাজে কথা সবসময়,,দেখি ঠিক হয়ে বালিশে মাথা দিন
উজান ঠিক করে বালিশে মাথা দিয়ে হিয়াকে বুকে নিতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে গভীর ঘুমে হারিয়ে গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে শুরু করে,,এদিকে এতো জোরে চিপে ধরে থাকায় হিয়ার অবস্থা এবার বারোটা বাজার উপক্রম,,
!
!
!
সন্ধ্যা পেরিয়ে ঘড়ির কাটায় তখন ৭টার একটু বেশি,,উজান হিয়া ঘুমিয়ে থাকলেও মশার কামড়ে ঘুম ভেঙে আসে শ্রাবণের,শ্রাবণ ঘুম ভাঙ্গা চোখে উঠে বসতেই দেখে বুবু তার ভালো ভাইয়ার বুকে মাথা দিয়ে ঘুমে আছে,,আর তার ভালো ভাইয়াও ঘুমের মধ্যে নাক ডাকছে মানে জোরে জোরে শ্বাস টানছে আরকি,,বেচারা এখন কি করবে
শ্রাবণঃ বুবুউউ,,বুবুনি,,এই বুবু হিসু পাইছে আমার,,বুবু আমি একা একা যাবো,,বুবুউউ
শ্রাবণ হিয়ার মুখে হাত দিয়ে হিয়াকে ডাকতে ধরলে হিয়া ধরফর করে উঠে যায়,,
হিয়াঃ হ্যা সোনা,,কখন উঠছিস তুই,,ইসস আমি এভাবে এতোক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম,,তুই আমাকে ডাকবি না
শ্রাবণঃ আমি এককুনি(এক্ষুনি) উঠে তোকে ডাকলাম,,হিসু পাইছে খুব
হিয়াঃ হুম আয় আমি কোলে নিচ্ছি,আয় দেখি,,
হিয়া উঠে শ্রাবণকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে হিসু করিয়ে আবার বিছানায় এনে বসিয়ে দেয়,,উজান তখনো ঘুমে,,
শ্রাবণঃ বুবু ভাইয়ার কপালে একটা মশা বসছে,,ওটাকে মার না,,
হিয়াঃ চুপ আস্তে,,নাহলে মশাটা উড়ে যাবে,,
শ্রাবণঃ হুম হুম
হিয়া আর শ্রাবণ খুব সর্তকভাবে উজানের দিকে ঝুঁকে মশা টাকে দুম করে মেরে দিতে মশাটা ফেটে গিয়ে রক্ত বেড়িয়ে উজানের কপাল,আর সাথে হিয়ার হাত ফস্কে নাকে গিয়ে রক্ত টা লেগে যায়,,উজান চোখ খুলে তাকাতেই দেখে হিয়া আর শ্রাবণ ওর দিকে তাকিয়ে কি রকম করে খিল খিল করে হাসছে,তাদের হাসির কারণ রক্ত টা ঠিক উজানের নাকের মনিতে এসে লেগে উজানকে কি রকম একটা বানিয়ে দিয়েছে
শ্রাবণঃ বাইয়া,,
উজানঃ হ্যা সোনা তুমি উঠছো,,
শ্রাবণঃ ভাইয়া একটা মশা না তোমার রক্ত খাচ্ছিলো,,এই দেখো তোমার নাকে
হিয়া ওর ওরনা টা দিয়ে উজানের নাক আর কপাল মুছে দিয়ে উঠে গিয়ে বাকি কাজ গুলো করতে শুরু করে,,এদিকে উজান শ্রাবণের সাথে একটু খেলে উঠে ফ্রেশ হতে যায়,,ফ্রেশ হয়ে এসে বায়না ধরে সে এখন পিয়াজু আর পুরি খাবে,,হিয়াকে অনেক বাগিয়ে বুগিয়ে রাজি করে উজান এসে ফোন নিয়ে শ্রাবণের সাথে গেম খেলায় মেতে উঠে,,হিয়া একটা বাজারের ব্যাগ থেকে সব বাজার গুছিয়ে রেখে উজানের আবদার মেটাতে গরম গরম পিঁয়াজি আর পুরি করে নিয়ে আসে,,
হিয়াঃ এটাই লাস্ট,,আর কখনো এসব ভাজা পোড়া খাবারের জেদ তুলবা না কিন্তু শ্রাবণ,,আর এই যে আপনি দুপুর থেকে না খেয়ে আছেন ভাত দেবো আপনাকে আমি
উজানঃ নাআআআআ,,,এখন আর ভাত খাবো না এখন তো আমরা গরম গরম পিয়াজু আর পুরি খাবো,,
হিয়াঃ যা ইচ্ছে করুন গিয়ে,,আমি রাতে আর রান্না করবো না,,তরকারি তো মাছ পড়ে আছে দুপুরে তো শ্রাবণ ছাড়া কেউ ই খেলাম না,,এখন একটু গরম গরম ভাত আর আলু ভর্তা দেবো,,ওগুলোই রাতে খাওয়া লাগবে
উজানঃ ওগুলোই খাওয়া লাগবে,,না মানে আমি একটু পোলার চাল আর মুরগী নিয়ে এসেছি যদি একটু রাতে চিকেন বিরিয়ানি পাওয়া যেতো
হিয়াঃ মানে আবদারের শেষ নেই না আপনার,,আর মুরগী আনছি মানে মুরগী কোথায়,,আমি তো কোথাও দেখলাম না,,সর্বনাশ এতোক্ষণে তো এই গরমে মুরগীটা,,,আপনি কি হ্যা আমাকে আগে বলবেন না
হিয়া এক দৌড়ে রান্নাঘরে ছুটে কোন ব্যাগে মুরগী আছে খুঁজতে শুরু করে,,মুরগী বের করেই হিয়ার মাথাতে হাত কেমন নরম হয়ে আছে ওটা,,এখন এই মুরগীটা না রান্না করেও তো উপায় নেই,,কারণ এ বাড়িতে তো আর ফ্রিজ নেই যা দরকার হয় রেখে আসার জন্য তা সন্ধির ফ্ল্যাটে গিয়ে রেখে আসে সে,,কিন্তু এই মুরগী তো এখন রেখেও কোনো লাভ নেই,,হিয়া দাঁত মুখ খিঁচে মুরগী টা আগে কেটে নিয়ে পোলার চাল টা বের করে বিরিয়ানি রান্না করতে শুরু করে,,আর রান্না করতে করতে সে যে কতো গুলো গালি দিয়ে দেয় উজানকে সে হিসাব তার জানা নেই,,
!
!
!
উজানঃ কালকে আবার গরম গরম পিয়াজু খাবো,,না বেগুনি কোনটা খাবি বল
শ্রাবণঃ বুবু শুনলে না তোমাকে মারু দেবে,,কি বললো তকন(তখন) শুনো নি
উজানঃ তোর বুবুকে কে বলছে আমরা ওসব খাবো,,কাল শুক্রবার আমরা কাল বেরু করতে যাবো তারপর ঘুরেফিরে টিএসসির সামনে গিয়ে গরম গরম ভাজা পোড়া খাবো,,
শ্রাবণঃ তাওলে(তাহলে) ঔ কলাভর্তাও খাবো,,কি টেস্ট ওটা
উজানঃ আ হা মুখে পানি আসলো তো,,____হে ওয়েট বিরিয়ানি বিরিয়ানি গন্ধ পাচ্ছি না একটা,,তোর বুবু কি সত্যি
শ্রাবণঃ বিরিয়ানি!!
উজানঃ দেখতে হচ্ছে তো
উজান শ্রাবণকে কোলে নিয়ে রান্নাঘরে আসতে দেখে হিয়া সত্যি সত্যি বিরিয়ানি রান্না করছে,,আর পুরো রান্নাঘর থেকে শুরু করে ফ্ল্যাট জুড়ে বিরিয়ানির গন্ধে একদম মৌ মৌ করছে,,
উজানঃ ইসস এই না হলো উজান শাহরিয়ার এর বউ,,যা চাই,না বলতেই করে দেয়
হিয়াঃ এই যে শুনুন,মুরগী টা নষ্ট করবো না বলে আমি এই রান্না টা করছি নাহলে আমার এতো ঠেকা পড়ে নি আপনার জন্য এই রাতে আমি___দেখি এই বাটির মাছ গুলো নিয়ে আপুর ফ্রিজে রেখে আসুন,,ভালো থাকলে কালকে দুপুরে খাওয়া যাবে,,
উজানঃ দেও তা,,নিচ থেকেও একটু ঘুরে আসা হবে,,দোকানে মামা কিছু টাকা পায় দিয়ে আসি
হিয়াঃ টাকা পায় না সিগারেট খেতে যাবেন আমি যেনো কিচ্ছু বুঝি না না,,
উজান এসে এক হাতে হিয়ার একটা গাল টেনে ধরে
উজানঃ ইসস এতো বুঝে এই মেয়েটা,,খুব পাকনা
শ্রাবণঃ ভাইয়া আমিও সন্দি আপু যাবো,,নিচে দোকান মামা যাবো
উজানঃ তোকে নিয়েই তো যাবো সোনা,,তুমি গিয়ে জুতো টা পড়ে নেও কুইক
শ্রাবণ উজানের কোল থেকে নেমে জুতো পড়তে শুরু করলে উজান হিয়াকে পেছন থেকে একদম চিপে জড়িয়ে ধরে হিয়াকে হালকা কাইত করে নিয়ে হিয়ার গালে মুখে নাকে এক সাথে অনেক গুলো চুমু এঁকে দেয়
হিয়াঃ আ হা,,কি হচ্ছে টা কি
উজানঃ আরে আমি তো একটু আদর করছি
হিয়াঃ রাখুন আপনার আদর,,তখন দুপুরে জড়িয়ে ধরে ঘুমে ছিলেন শ্রাবণ কিন্তু উঠে দেখছে,,কি ভাবলো ও কোনো ধারণা আছে,,এখন আবার এসব শুরু করলেন কেনো
উজানঃ এরকম পাষাণ কেনো তুমি হ্যা,,আজ অবধি কখনো তোমার ঠোঁট খেয়েছি শুধু তো ঔ একটু এসে
হিয়াঃ আপনি যাবেন কি,,
উজানঃ আর একটু আদর দেই,,শ্রাবণ ততোক্ষণে জুতো টা পড়ে নিক না
হিয়া এবার তেড়ে গিয়ে খুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে উজান হিয়ার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে এক ছুটে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে,,উজানের ভয় পাওয়া মুখ দেখে হিয়া ফিক করে হেঁসে দেয়
হিয়াঃ পাগল একটা,,সত্যি একটা পাগল❤,,
!
!
!
রাত তখন সাড়ে এগারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই,,হিয়ার রান্না দশটার মধ্যে শেষ হয়ে আসলে হিয়া এক বাটি বিরিয়ানি দিতে সন্ধির ফ্ল্যাটে যায়,ওখানে কিছুক্ষণ গল্প করে এসে হিয়া উজান শ্রাবণ দুজনকে খাওয়ার জন্য ডাকে,,বিরিয়ানির গন্ধ নাকে পৌঁছাতে দুজনে এসে ডাইনিং এ বসে গল্প জুড়ে দেয়,,
হিয়াঃ আমি খাইয়ে দিচ্ছি তোমাকে,,ভাইয়াকে খেতে দেও তুমি
শ্রাআণঃ আচ্ছা,,
উজান বিরিয়ানির এক লোকমা তুলে একটা কাশি দিয়ে গম্ভীর হয়ে কাঠ কাঠ কন্ঠে হিয়াকে আদেশ করে সে যেনো কাল থেকে পড়াশোনা শুরু করে পড়তে হবে,,তাকে যে করে হোক পরীক্ষাতে বসতে হবে,,কিন্তু হিয়া যে কিছুতেই পরীক্ষা তে বসবে না,,এই দু এক কথায় দু’জনের তুমুল ঝগড়া লেগে যায় এবার।
উজানঃ যাক এখন সব ক্লিয়ার,,তুমি কাল একবার ভার্সিটি গিয়ে প্রবেশপএ টা কালেক্ট করে নিয়ে আসিও
হিয়াঃ প্রবেশপএ নিয়ে আসবো মানে?
উজানঃ তোমার পরীক্ষার প্রবেশপএ,
হিয়াঃ পরীক্ষার প্রবেশপএ মানে!!আমি তো পরীক্ষা দেবো না,,আর এমনিতেও আমি ফর্মফিলাপ করি নি এখন চাইলেও আর কিছু সম্ভব না,,
উজানঃ আমি তোমার ফর্মফিলাপ করে দিয়েছি অনেক আগেই,,
হিয়াঃ মানে কি,,ফর্মফিলাপ করে দিয়েছি বললেই হবে,,আমি যদি পরীক্ষা না দেই(রাগে)
উজানঃ পরীক্ষা দিবা না তুমি কিসের জন্য,,এখন তো শ্রাবণো সুস্থ,,তাহলে
হিয়াঃ আমি এই এক সপ্তাহ পড়ে কি পরীক্ষা দেবো,,মাথা ঠিক আছে আপনার
উজানঃ আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে,,আমি তোমাকে কিছুতেই ইয়ার গ্যাপ দিতে দেবো না,,কোনো সাবজেক্টে রেজাল্ট খারাপ আসলে পরের বছর ইমপ্রুভ দেবা কিন্তু ইয়ার লস আমি কিছুতেই সহ্য করবো না
হিয়াঃ আমি পরীক্ষা দেবো না,,আর এটা আমার ফাইনাল কথা,,আমি আপনাকে আগ বাড়িয়ে বলিনি আমার ফর্ম ফিলাপ করে দিতে,,আমি পরীক্ষা দিতে গেলে শ্রাবণকে দেখবে কে
উজানঃ (একদম উচু কন্ঠে)এনাফ ইস এনাফ হিয়া,,তুমি ছোট বাচ্চা না যে এসব কথা বলছো,,শ্রাবণকে দেখার জন্য আমি আছি____আর একটা কথা যেনো আমি না শুনি এ বিষয়ে,,কাল থেকে সব বাদ দিয়ে পড়াশোনা করতে বসবা আগে,,সবসময় জেদ আর জেদ
উজান শেষে এসে এই কথা টা এতো জোরে আর রাগে বলে যে শ্রাবণ অবধি ভয়ে চুপ হয়ে যায়,,উজানকে এই প্রথম হিয়ার উপর রাগতে দেখলো শ্রাবণ,,উজানের মোটা গলার ঝারি খেয়ে হিয়ার চোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়ে,,হিয়া টেবিল থেকে উঠে দৌড়ে রুমে গিয়ে সব লাইট টাইট ওফ করে দরজা জানালা লাগিয়ে কম্বল মুড়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে,,
উজানঃ হিয়া খেতে আসো,,হিয়া আমার কথা শুনো,,হিয়াআআ
উজান গম্ভীর কণ্ঠে হিয়াকে ডাকতে থাকে কিন্তু হিয়া আসে না,,উজান এখনো রাগে আছে ওর সব সহ্য হবে কিন্তু হিয়া ওর পড়াশোনা নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ করুক এটা সে কিছুতেই সহ্য করবে না,,উজান খাবারের প্লেট টা ছুঁড়ে দিয়ে গেটের কাছে এসে হিয়াকে দু বার ডাকলেও হিয়া উঠে না,,
উজানঃ হিয়া এসব কান্নাকাটি করে তুমি আমাকে ভুলাতে পারবা না,,তোমাকে পরীক্ষা দিতে হবে আর এটাই আমার শেষ কথা
হিয়াঃ আমি পরীক্ষা দেবো না দেবো না দেবো না(কাঁদতে কাঁদতে)
উজান আর কিছু না বলে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে আবার ডাইনিং এ এসে শ্রাবণকে খাইয়ে দিতে থাকে,,শ্রাবণ ভয়ে যে খাবে না সে কথাও বলতে পারে না,,খাবার শেষে উজান শ্রাবণকে ঔষধ গুলো দিয়ে শ্রাবণের মুখ মুছে দেয়,,
শ্রাবণঃ তুমি আর বুবু খাবা না
উজানঃ খাবো পড়ে,,দেখি আয় আমি তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেই অনেক বাজছে আজকে,আর রাতে কিছু খেলতে হবে না
শ্রাবণঃ বুবু মনে হয় ভয় পাইছে তুমি বকা দিছো
উজানঃ কথা না শুনলে আরো বকা দেবো,,আয় আমার কোলে,,
উজান শ্রাবণকে কোলে নিয়ে বারান্দায় পায়চারি করে গল্প শুনাতে শুনাতে ঘুম পাড়িয়ে দেয়,,শ্রাবণ ঘুমে আসলে উজান শ্রাবণকে হিয়ার পাশে দেওয়ালের কিনারে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়,,এদিকে হিয়া এ পাশের কিনারে গুটিশুটি হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে,,উজান এসে হিয়ার পাশে বসে হিয়ার মুখ থেকে কম্বল তুলে,,হিয়া ওর চোখে-মুখে ওর হাত টা ভাঁজ করে দিয়ে শক্ত করে নিজেকে আড়াল করে রাখছে,,উজান হিয়ার মুখ থেকে হাত টা সরাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না
উজানঃ হিয়া___এ-ই মেয়ে___খাবা না___হিয়া___আমি বকা দিছি বলে কষ্ট হচ্ছে খুব,,হিয়া
উজান জোর করে হিয়ার মুখ থেকে হাত তুলতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না
উজানঃ আমি কিন্তু দুপুর থেকে ভাত না খেয়ে আছি,,আমার খিদে লাগে না___আসো খাবে আসো____হিয়া আমি রাগ হচ্ছি কিন্তু
হিয়াঃ আমি পরীক্ষা দেবো না
উজানঃ আবার তোমার এক কথা,,আমি বলেছি না পরীক্ষা তোমাকে দিতে হবে
হিয়াঃ না আমি পরীক্ষা দেবো না,,আমার কিচ্ছু পড়া হয় নি,,আমি ফেইল করলে তখন কি হবে,,আপনি টিচার হয়ে ভার্সিটিতে জয়েন করবেন আর তখন সবাই বললে স্যারের বউ ফেলটু,,,না না আমি পরীক্ষা দেবো না
উজানঃ এ-ই জন্য তুমি পরীক্ষা দেবে না,,এটা একটা কথা___আর আমি যদি ভার্সিটি জয়েন না করি তখন__আর এমনো তো হতে পারে তুমি ফেইল করলা না তার বেলা
হিয়াঃ না এটা কোনো ম্যাজিক না যে আমি পাস করে যাবো,,আমার কিচ্ছু পড়া হয়নি,,আমি পরীক্ষা দেবো না দেবো না দেবো না
উজানঃ আমি যখন বলেছি তুমি পরীক্ষা দেবা তো তুমি পরীক্ষা দেবা,,আর এটা আমার শেষ কথা,,
হিয়াঃ আমি পরীক্ষা দেবো না না না,,
বলেই হিয়া অন্য দিকে মুখ করে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করে,,উজান রাগে রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে দুটো সিগারেট টেনে হিয়ার পাশে এসে উল্টোদিকে মুখ করে ঘুমিয়ে যায়,,হিয়াপাখির আজ কেঁদেও কোনো লাভ নেই কারণ তার কুমড়োপটাশ আজ ভীষণ পরিমাণে রেগে আছে তার চোখের পানিও যেই রাগকে নেভাতে পারবে না,,হু