মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-54

0
894

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান

Part-54

পরেরদিন উজান জমি জামার কিছু কাজের জন্য রংপুর আসে,,উজানের সাথে আসতে বায়না ধরে শ্রাবণো,,কিন্তু হিয়া শ্রাবণকে বুঝায় তার ভালো ভাইয়া কালকের মধ্যেই চলে আসবে,পরীক্ষা টা শেষ হোক সামনের মাসে ওরা অনেকদিন দাদু বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে,শ্রাবণ প্রথমে মুখটা কালো করলেও পরে ঠিক নিজেকে মানিয়ে নেয়,,

এদিকে উজান যাবার সেই রাত থেকেই হিয়ার শরীর টা কিরকম খারাপ করতে শুরু করে,,মাথা ঘোরা থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব সারারাত আর হিয়ার ঘুম আসে না,,পরেরদিন ঘুম থেকে উঠেই ভেসিন ভরে বমি করে দেয় হিয়া,,শরীর টা আজ সায় দিচ্ছে না,,শ্রাবণকে বলে থাক আজ স্কুলে যাবার দরকার নেই সেও ভার্সিটি গিয়ে আর ক্লাস করবে না,,কোনো মতে দু’জনের জন্য গরমগরম ভাত আর ডিমের তরকারি করে হিয়া শুইয়ে পড়ে,,মধ্যদুপুরের এই রোদের তেজ আর বাতাসের একটা অন্য রকম গরম উষ্ণতা হিয়ার শরীর টাকে আরো খারাপ করে দেয়,,

হিয়াঃ শরীর টা কাল থেকে এরকম লাগছে কেনো আবার,,,,,আর ভালো লাগে না এসব,,কখনো শ্রাবণ কখনো আমি,,মানুষ টা আর কতোদিকে সামলাবে,,,,,ওনাকে কি বলবো একবার আমার বমি হয়েছে আমার গা গুলাচ্ছে,,,না থাক ওখানে এমনিতেও ঝামেলা তে আছে,,আসুক কাল তখন ধীরেসুস্থে জানানো যাবে,,

হিয়া সেদিন টা নিজেকে কোনোমতে সামলে নিয়ে শ্রাবণের সাথে রাত টা পাড় করে,,এদিকে সে রাতে অনেকবার উজানকে ফোনে ট্রাই করেও পায় না,,উজান যেনো দেখেও হিয়ার ফোন তুলছে না এরকম,,

পরের দিন বিকেলের আগে আগে উজান বাড়িতে ফিরে,,আর ফেরার পর থেকে এমনসব অদ্ভুত আচরণ করতে থাকে যেনো সে খুবই বিরক্ত,,হিয়ার কাছে এ-ই উজানটাকে বড্ড অচেনা লাগে,,কেমন যেনো দায় সাড়া হয়ে উজান হিয়ার সাথে কথা বলছে এমন,,হিয়া বুঝে উজান হয়তো কিছু নিয়ে ডিস্টার্ব তাই এরকম ব্যবহার করছে তার সাথে তাই সে উজানের খারাপ ব্যবহার টাকে নিজের গায়ে বেশি মাখতে দেয় না,,কিন্তু একটা পর্যায় উজানের ব্যবহার টা মাএাতিক্ত খারাপ হয়ে আসলে হিয়া প্রশ্ন তুলতে বাধ্য হয়,,

হিয়াঃ কি হয়েছে উজান,,আসছেন থেকে আমার সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করছেন,,আমাকে এ্যাভয়েড করছেন__কিছু কি ভূল করেছি আমি,,(শান্তভাবে)

উজানঃ যা করছি বেশ করছি,,তোমার সাথে আর ঠিক কি ভালো আচরণ করা যায় হিয়া,,

হিয়াঃ উজান আমি!!

উজানঃ লিসেন হিয়া,আমি না জাস্ট ফেডআপ তোমাকে নিয়ে,আর সত্যি কথা বলতে কি আমি না তোমাকে কখনো ভালোইবাসি নি জানো,,আমি জাস্ট শুধু তোমার উপর রিভেঞ্জ নিতে তোমাকে বিয়ে টা করেছি,,দ্যাটস ইট

হিয়াঃ প্রতিশোধ!!কিসের প্রতিশোধ উজান,,

উজানঃ ওহ রিয়েলি হিয়া,,কিসের প্রতিশোধ তুমি জানো না,,,,,,,,,,,,মনে পড়ে সেদিন ভার্সিটিতে-ভরা ক্যাম্পাসের সামনে তুমি আমাকে থাপ্পড় দিয়েছিলে,,তোমার সাহস কি করে হয়েছিলো আমার গায়ে হাত তোলার,উজান শাহরিয়ার এর গায়ে হাত তোলার,

হিয়াঃ কিসব কি বলছেন আপনি উজান,,এখন ওসব পুরাতন কথা কেনো আসছে সেগুলো তো সব সেসময়ই মিটে গেছে তাই না,,

উজানঃ তোমার কাছে মিটে গেছে হিয়া,আমার কাছে না,আমি জাস্ট তোমাকে সবার সামনে ছোট করতে,সবার সামনে লাঞ্ছিত করতেই এ-ই ভালোবাসার নাটক এই বিয়ের নাটক টা করেছি,,

হিয়াঃ আপনি আমার সাথে মজা করছেন তা-ই না,এগুলো একটাও আপনার মনের কথা না আমি জানি,,

উজানঃ ভূল জানো তুমি,,এগুলো সব আমার মনের কথা,,তুমি ভাবলে কি করে তোমার স্ট্যাটাসের একটা মেয়েকে বিয়ে করবে আমার মতো কোনো ছেলে,,বাস্তবে ফিরে আসো হিয়া,,এটা কোনো বাংলা নাটক না যে সব ভুলে আমি তোমার প্রেমে ডুবে গিয়ে তোমাকে গ্রহন করবো,,I want to divorce hiya,,এ-ই সম্পর্ক টা আমি আর চাই না,,

উজানের মুখ থেকে ডিভোর্স শব্দ টা শুনেই হিয়া একটা বড়সড় ধাক্কা খায়,,বুকের ভেতরের কলিজা টা কেমন নিমিষে চুপসে গিয়ে ছোট হয়ে আসে তার,,চারপাশের পরিবেশ টা তাকে চেপে ধরতে শুরু করে,,হিয়া বিশ্বাস করতে পারে না উজান ওকে এসব কথা বলছে,,

হিয়াঃ ডিভোর্স!!________ধ্যাত আপনিও না,,কি যে শুরু করলেন আসছি থেকে,,আসুন তো বসুন এদিকে ঠান্ডা ঠান্ডা শরবতটা খাবেন আসুন,,,,,,,আমি জানি তো কি হয়েছে আপনার___সন্ধি আপুরা আবার কোনো প্রাঙ্ক করছে না আমার আর আপনার সাথেএএএ,,হুম হুম সব বুঝেছি আমি___আরে ওরা এর থেকে ভালো কিছু করতে পারলো না আমাকে যদি এ-ই পুরো পৃথিবী এক হ’য়েও বলে না যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আমি তাও বিশ্বাস করবো না,,বুঝলেন

হিয়ার এ-ই খামখেয়ালি আচরণে আরো বিভৎস চিৎকারে উজান হিয়ার উপর ঝেঁপে আসে,,

উজানঃ ওহ কামন হিয়া,,জাস্ট স্টপ দিস ড্রামা,,তুমি নিজেকে কি ভাবো হ্যা খুব চালাক_______(আঙ্গুল তুলে কাঠ কাঠ কন্ঠে)কেউ আমার সাথে কোনো প্রাঙ্ক করছে না,,কারো না এ-ই উজান শাহরিয়ার এর সাথে প্রাঙ্ক করার মতো ক্ষমতা নেই,,আমি তোমার সাথে থাকতে চাই না দ্যাটস ইট,,আন্ডারস্ট্যান্ড

হিয়া কিছুক্ষণ চুপ হ’য়ে থাকে,,কোনটা বিশ্বাস করবে কোনটা করবে না তার কোনো হিসাব হিয়ার মাথায় এ-ই মুহুর্তে ঢুকছে না,, নীরবতা কাটিয়ে হিয়া আবার হাসি দেয় তার এখনো বিশ্বাস উজান সত্যি তার সাথে মজা করছে,,

হিয়াঃ উফ আপনি আবার শুরু করলেন,,হুম জানি কারো আপনার সাথে প্রাঙ্ক করার সাহস নেই কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি,,আমি জানি আপনি কি রকম__দেখি খাবেন এটা,,হা করুন হাআআআ

হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে শরবত টা উজানের মুখে দিতে যাবে ওমনি উজান হিয়ার হাত টা ছিটকে দিয়ে গ্লাস টা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে,,আর এতোক্ষণ যাও বা সে হিয়ার সাথে খারাপ বিহেভ করছিলো সেটা যেনো মুহুর্তে আরো তিক্ততায় ভরে উঠলো,,হিয়া বুঝতে পারছে না উজানের এ-ই রকম বিহেভের কারণ কি,,বুঝতে কি হিয়া তো এটাই বিশ্বাস করতে পারছে না উজান ওর সাথে এরকম বিহেভ করছে,,এবার হিয়ার চোখেমুখে কিছুটা ভীতির চিহ্ন পাওয়া যায়,,মনের মধ্যে এক অজানা, নাম না জানা সংশয় কাজ করতে শুরু করে তার,,

হিয়াঃ আপনি আমার সাথে এরকম বিহেভ কেনো করছেন উজান,,আমি আমি কি কোনো ভূল করেছি,,আমি কি কোনো বেয়াদবি করেছি আপনার সাথে,বলুন আমাকে আমার ভূল টা কোথায়?

উজানঃ এ-তো কিছুর পরো তোমাকে বলে দিতে হবে তোমার ভূল টা কোথায়,,আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো হিয়া,, তোমার কি যোগ্যতা আছে আমাকে বিয়ে করার,আমার লাইফ পার্টনার হ’য়ে সারাটা জীবন আমার সাথে চলার,,এর কোনো উওর আছে তোমার কাছে,, থাকলে উত্তর দেও,,

হিয়াঃ(তোতলানো কন্ঠে) না কি থাকবে আমার,আমি তো নিঃস্ব,আর এসব জেনেই তো আপনি আমাকে বিয়ে করেছিলেন আমাকে ভালোবেসে ছিলেন,তাই না বলুন

উজানঃ ভালোবাসার অভিনয় টা করেছি শুধু রিভেঞ্জ টুকু নেবার জন্য আর কিচ্ছু না,,

হিয়া এসে উজানের বুকে নিজেকে জড়িয়ে নেয়,,তার এখন খুব ভয় করছে সত্যি কি উজান ওর সাথে রিভেঞ্জ নিতেই,

হিয়াঃ না আমি বিশ্বাস করি না,,আপনি যা বলছেন সব মিথ্যা,,সব সব সব,,ও উজান আমি কি কোনো ভূল করেছি বলুন না আমাকে__আমি আমি কি কোনো বেয়াদবি করেছি কেউ কিছু বলেছে আপনাকে আমার নামে,,

উজানঃ তোমার নিজের কিছু থাকলে না কেউ তোমাকে নিয়ে কিছু বলবে,,কিছু বলতে গেলেও তো কিছু থাকতে হয় হিয়া,,

উজান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিজের বুক থেকে হিয়াকে দূরে সরিয়ে দেয়,,

উজানঃ আমি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি হিয়া,,একটা সময় তোমার প্রতি করুণা জন্মেছিলো ঠিকই কিন্তু ভালোবাসা,কখনোই না

হিয়াঃ আমার থেকে আপনার যদি রিভেঞ্জই নেবার ছিলো তাহলে সেটা আমাকে আপনি বিয়ে না করেও নিতে পারতেন উজান,,,কেনো করলেন বিয়ে আমাকে,,বলুন,,চুপ করে থাকবেন না উওর দিন,,

উজানঃ তোমাকে ইউস করতে চেয়েছিলাম,ডিভোর্স দেবার পর তুমি কতোটা নিঃস্ব হ’য়ে ভিক্ষারির মতো লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ফিরো তাই দেখতে চেয়েছিলাম,,ব্যাছ

হিয়াঃ না উজান আমি বিশ্বাস করি না,,আপনি এটা আমার সাথে করতে পারেন না,,আচ্ছা আমি ধরে নিলাম যে আপনি বিয়ে করে আমার থেকে প্রতিশোধ নিতে এ-ই এতো কিছু করেছেন তাহলে আমাদের সাজানো সংসার টা,,আমাদের এই দেড় বছরের যে একটা সুন্দর সংসার সেটা কেনো আপনি করলেন আমার সাথে,,আপনি তো বিয়ে করে আমাকে তার পরের দিনই ডিভোর্স দিতে পারতেন,,সেটা না করে কেনো আপনি,,

উজানঃ আরে তোমার পেছনে এতো ইনভেস্ট করেছি কিছুতো প্রফিট আমারো প্রাপ্য ছিলো তাই না বলো,,

হিয়াঃ প্রফিট,,যা ক্ষতি তো আপনি বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে দিয়েও করতে পারতেন উজান,,তার জন্য এতোদিন একটা সংসার সাজানোর তো কোনো মানে ছিলো না,,কি লাভ হলো এসব করে আপনার??

উজানঃ লাভ,,তোমার শরীর টা!!___এতো খরচা করেছি তোমার উপর,একটু না হয় তোমার শরীর টাকেই ইউস করলাম এতোদিন,,সো হোয়াট

উজানের কথায় হিয়ার মাথার উপরের আকাশ টা যেনো কোটি কোটি অংশে টুকরো হয়ে ঝড়ে পড়তে শুরু করে,,হিয়া নিজের গা পায়ে হাত দিয়ে কেমন একটা ছটফট করতে থাকে,এ-ই মুহুর্তে নিজের এ-ই শরীর টাকে তার কেমন জানি একটা ঘৃণা লাগছে,মনে হচ্ছে এ-ই এতো কিছু যা সে এতোদিন পেয়ে এসেছিলো এটা শুধুমাএ তার এ-ই শরীরের বিনিময়ে!!

হিয়ার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে,,সে চিৎকার করে কাঁদতে চাইছি কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ওর গলা চিপে ধরে আছে তাই কান্নাগুলো গলায় তার বারবার আছড়ে পরে ধাক্কা খাচ্ছে,,

তবুও হিয়া নিজেকে শক্ত করে,সে যেই উজানকে ভালোবেসেছিল তার বিশ্বাস এটা সেই উজান না,,উজানের নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে আজ নাহলে উজান ওর জন্য যা পাগল ছিলো,,হিয়া দৌড়ে রুমে আসে,আলমারি থেকে সিন্দুক টা খুলে বাঁধিয়ে রাখা ফাইল থেকে বিয়ের সেই কাবিননামা টা বের করে এনে উজানের সামনে দাঁড়িয়ে যায়,,হিয়ার হাত পা কাঁপছে সাথে কাঁপছে ঠোঁট,কি থেকে কি কথা বলছে বা বলবে সে বুঝে উঠতে পারছে না,,

হিয়াঃ উজান,,উজান আপনি এটা দেখুন,,এটা এটা আমাদের বিয়ের কাবিননামা এতে কি লেখা ছিলো দেখুন একবার,,আপনি তো নিজে কাজিকে বলে এটা বানিয়েছিলেন বলুন__দেখুন একবার

উজান কাবিননামা দেখবে কি,সেটা হাতে নিয়ে সে এমন হাসি দিলো যে উজানের এ-ই রুপ দেখে হিয়া ভয়ে গটগট করে কাঁপতে শুরু করছে,,

উজানঃ তুমি কি এখন আমার থেকে এ-ই একশো কোটি টাকা দাবি করছো না-কি হিয়া,,so chilly হিয়া,,অভিনয় করতে গেলে কতো কি করতে হয় তাই না___কোনোদিন শুনেছো কোনো কাবিননামা এরকম অদ্ভুত হয়,,একশো কোটি!!___grow up হিয়া,,তুমি ছোট বাচ্চা না,,

হিয়াঃ আমি আপনাকে একবারো বলছি না আমাকে টাকা দিতে,,আমি শুধু আপনাকে দেখাতে চাইছি যে আপনি আমাকে কথা দিয়ে বলেছিলেন এটা আমাদের ভালোবাসার অঙ্গীকারনামা,,এখানে এখানে তো আপনি শুধু আমার না শ্রাবণ ওকে দিয়েও সই করে নিয়েছিলে বলেছিলেন আপনি ওর বাবা,,

উজানঃ বাবা!!যে নিজের বাবাকেই বাবা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চাইতো না সে কি না হবে অন্যের বাবা,,হায় রে এ-তো বোকা মানুষ হয় কেমনে___লিসেন হিয়া,,সব কথা যখন উঠলো তখন শেষ বারের মতো শেষ কথা আমি তোমাকে বলছি আমি কোনোদিন তোমাকে ভালোবাসি নি,যা করেছি যা হয়েছে সবটাই তোমার থেকে রিভেঞ্জ নেবার জন্য,,আমি তোমাকে টাকা দিয়ে দামি জিনিসপত্র গোহনা গাটি দিয়ে ফেবার দিছি তুমি আমাকে তোমার শরীর টুকু দিয়ে ফেবার দিছো,,হিসাব সমান সামান,,তাই এখন থেকে আমাদের দু’জনের রাস্তা আলাদা,,প্লিজ আমাকে এবার টুকু মুক্তি দেও

হিয়াঃ বললেই হিসাব সমান সমান হয় না উজান,,আমার কথা না-হয় বাদেই দিলাম কিন্তু শ্রা-ব-ণ,,সে যে আপনাকে তার বাবার জায়গায় বসিয়ে দিছে তার কথা আপনি ভুলে গেলেন,,দোষ আমি করেছি,,,,,,আপনার গায়ে হাত তুলে আমি ভূল করেছিলাম শাস্তি আমাকে দিতেন ঔ নিস্পাপ বাচ্চা টাকে কেনো টানলেন এর মাঝে,,,,,,,,ও তো জীবনের এ-ই সব জটিলতা বুঝে না,,আমি তাকে কি জবাব দেবো আপনি কোথায়?সে তো আমার থেকেও এখন বেশি আপনাকে চোখে হারায়!!

উজানঃ হুমমমম ভূল টা আমার,,শুধু শুধু বাচ্চা টাকে এসবের মাঝে না টেনে আনা টা-ই বেটার ছিলো আমার,,কি করবো এখন, ও তো এসে গেছে___তবে তুমি চিন্তা করো না ওকে যখন আমি এসবে ইউস করছি তখন ওকে ফেবারো তো দিয়েছি,,আর তুমি চাইলে সামনেও দেবো,,ও এখন যে স্কুলে পড়ছে ও পড়ুক তার জন্য যতো টাকা লাগে আমি তোমার এ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবো,,ওর জন্য ইদ পার্বনে নতুন নতুন জামা জুতা এ্যান্ড ইউ নো বাকি যা সব লাগে দিয়ে দেবো,,চিন্তা নেই ওর ফিউচার টা বেটার করতে যা টাকা লাগবে সব দেবো

হিয়াঃ টাকা টা-ই কি সব উজান!!

উজানঃ আমার কাছে তো টাকা টা-ই সব,,আসছি

উজান যেতে ধরলেও হিয়া থামিয়ে দেয়,,সে কিছুতেই এ-ই ঘটনা গুলো বিশ্বাস করতে পারছে না যে উজান ওকে এভাবে ঠকাচ্ছে,,

হিয়াঃ উজান আপনি জাবেন না,,উজান আমার ভূল হয়েছে তো আমি ক্ষমা চাচ্ছি,,এ-ই যে দেখুন কান ধরছি,,আর কখনো আপনার গায়ে হাত তুলবো না আপনার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলবো না,,আমাকে আর একটা সুযোগ দিন,,আপনি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না,,উজান আমি পায়ে পড়ছি আপনার,,আমি এ-ই বাড়িতে শ্রাবণ সহ একা কি করে থাকবো,,

উজানঃ জাস্ট স্টপ দিস কিডিং হিয়া,,পা ছাড়ো আমার,,নিজের শেল্ফ রেসপেক্ট বলেও তো কিছু রাখো,,

হিয়াঃ না আপনার কাছে কিসের শেল্ফ রেসপেক্ট আপনাকে তো আমি আমার সব মানি,,আপনি আমার গার্ডিয়ান আমার আইডল,,উজান আপনি এভাবে আমার থেকে মুখ ফেরাতে পারেন না,,

উজানঃ হিয়া কি করছো,ছাড়ো আমাকে,,হিয়া তোমাকে আমি কখনো ভালোবাসি নি,,তোমার প্রতি একটা সিমপ্যাথি ছিলো আমার এটুকুই,,প্লিজ আমাকে যেতে দেও

হিয়াঃ উজান না,,উজান আপনি যাবেন না,,উজান এ-ই অঙ্গীকারনামা টা কি তাহলে মিথ্যা,,আমি বিশ্বাস করি না উজান,,কি হয়েছে আপনার আমাকে বলুন না আপনি,,এভাবে আমাকে রেখে যাবেন না আপনি,আমি কি করে বাঁচবো আপনাকে ছাড়া,,

উজান হিয়ার থেকে অঙ্গীকারনামা টা নিয়ে হিয়ারই মুখের সামনে ওটা দুভাগ করে হিয়ার বুকের কাছে ছুঁড়ে দেয়,,হিয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে উজান সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে,,অঙ্গীকারনামা টাকে দু টুকরো হতে দেখে হিয়া পাথর হ’য়ে দাঁড়িয়ে যায়,,উজানকে যে সে আটকাবে কাবিননামা টাকে দু টুকরো হতে দেখে সেই শক্তি টুকু তার শরীর থেকে যেনো ফুরিয়ে আসতে লাগলো,,

এদিকে উজান সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে গ্যারেজের কাছে থমকে যায়,,নিস্তব্ধ পরিবেশের মধ্যে হঠাৎই কানে বাজতে লাগে শ্রাবণের খিলখিল করা হাসির শব্দ,,উজান বুঝতে পারে শ্রাবণ হয়তো মাঠ থেকে এদিকেই দৌড়ে আসছে,,হ্যা শ্রাবণ এদিকেই আসছে,,দৌড়ে এসে সিঁড়ির মাথায় নিজের ভালো ভাইয়া কে দেখতে পেয়ে শ্রাবণের খুশি আজ দেখে কে,,সে চিৎকার করে তার ভালো ভাইয়াকে ভালো ভাইয়া বলে ডাকে,,সেই ডাক কানে পৌঁছাতে উজান ওর চোখ দুটো বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস টানে,,পর মুহুর্তে যখনি চোখ দুটো উজান খুললো নিমিষে দু ফোঁটা চোখের জল টপ করে ঝরে পড়লো তার দুচোখ থেকে,,উজান নিজের শরীরের সব শক্তি হারিয়ে নিচে বসে গিয়ে অনেক কষ্টে তার দুহাত সামনে প্রসারিত করে,,এদিকে শ্রাবণের তো যেনো এ-ই দুদিন পর তার ভালো ভাইয়াকে দেখে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার অবস্থা,,সে দৌড়ে এসে ঘপ করে জড়িয়ে ধরে তার ভালো ভাইয়াকে,,উজানো তার প্রশস্ত বুকের সবটা জুড়ে শ্রাবণকে তার বুকের সব দিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয়,

উজানের চোখ লাল হ’য়ে যাচ্ছে,সারা শরীর কাঁপছে তার,,বুকের ভেতর টা হাহাকার এর শব্দে ফেঁটে যাচ্ছে,,উজান নিজেকে আর থামাতে পারে না শ্রাবণকে জড়িয়ে এবার অঝোরে কেঁদে দেয়,,

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া তুমি কাঁদছো কেনো,,তোমার কি পেটে ব্যাথা দিচ্ছে,,আমি ডাকবো বুবুকে,,ও ভাইয়া ভাইয়া

উজান অনেক কষ্টে নিজের কান্নাটাকে থামিয়ে চোখ মুছে শ্রাবণের দু গালে হাত রাখে,,

উজানঃ তোকে অনেকদিন পর দেখলাম তো তার জন্য কাঁদছি,তোকে খুব মিস করেছি এ-ই দুদিন আমি,খুববব

শ্রাবণঃ আমিও তোমাকে অনেক মিস করছি,,তোমাকে ছাড়া রাতে ঘুমোতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো আমার জানো,,

উজানঃ (চোখ গুলো ভালো করে মুছে নিয়ে)আমারো তো,,আচ্ছা শ্রাবণ শোন,,আমি তোকে এখন কয়েকটা কথা বলবো তুই মন দিয়ে শুনবি আর যা যা বলবো তাই করবি,,ঠিক আছে

শ্রাবণঃ আমি তো আমার ভালো ভাইয়ার সব কথা শুনি তাই না বলো,,

উজানঃ হুমম তো শ্রাবণ তো আমার কতো ভালো বাচ্চা,,তুই আমাকে কথা দে কখনো যদি আমি না থাকি তুই তোর বুবুকে চোখে চোখে দেখে দেখে রাখবি,,

শ্রাবণঃ কেনো থাকবা না তুমি কোথায় যাবা?

উজানঃ আমার কিছু কাজ আছে,,এই দুই একদিনে ফিরে আসবো,,তুই আমাকে কথা দে তুই তোর বুবুর সব কথা শুনবি,,ও যা বলে তাই করবি,,ওকে কোনো কষ্ট পেতে দিবি না,,ও পড়তে বসতে বললে বসবি,,খেতে দিলে সব খাবি ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ ঠিক আছে আর?

উজানঃ ওর চোখে কখনো পানি আসতে দিবি না,,ওকে কখনো কাঁদতে দিবি না,সবসময় ওকে দেখে দেখে চোখে চোখে রাখবি,,

শ্রাবণঃ আমি বুবুনিকে দেখে দেখে রাখি তো,আমি বড় হইচি না এখন,

উজানঃ জানি তো,,আমার বড় শ্রাবণ,,নিজের যত্ন নিবি বেশি বেশি করে ফল খাবি,,আমি দুধ আনা লোকটাকে বলে দিছি সে কাল থেকে রোজ দুধ দিয়ে যাবে,,ঠিক আছে,,প্রত্যেকদিন এক গ্লাস করে দুধ খাবি আর বুবুকেও খাওয়াবি

শ্রাবণঃ বুবু কচু খাবে তুমি জানো না দুধ খেলে বুবুর গা গুলায়,,দুধ এমনি ভালো লাগে না ভাইয়া একটা হরলিক্স হলে সেই মজা লাগে,,ইয়ামমিইই

উজানঃ হরলিক্স নাই বাড়িতে?

শ্রাবণঃ এইটুকু আছে,,এ-ই যে এতোটুকু দেখো,,

উজানঃ এইটুকু আছে,,আচ্ছা আমি যাবার আগে কিনে দিয়ে যাবো ঠিক আছে,,আর কি লাগবে আমার বাচ্চাটার

শ্রাবণঃ তোমার চোখে এখনো পানি কেনো,আমি তো আছি,,কাঁদে না তুমি না ভালো এভাবে কেউ কাঁদে,,,,,,আমার কি লাগবে হরলিক্স লাগবে আর একটাআআ সস লাগবে,,হুম,,নুডুলুসের সাথে খাবো,,ঝাল ঝাল

উজানঃ আচ্ছা সব দিয়ে যাবো আমি,,,এখন শোন এ-ই যে আমাদের মাঝে এতোক্ষণ যেই কথা হলো সেটা কিন্তু বুবুকে বলবি না ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ কেনো বলবো না?

উজানঃ কারণ বুবু জানলে তো আমাকে তখন সস হরলিক্স এগুলো আনতে দিবে না না,,খুব বকবে তাহলে,,

শ্রাবণঃ হুমমমমম তো,,আমি তো এটা ভাবি নেই,,ঠিক আছে আমি বুবুকে বলবো না তুমি আসছিলা,আমরা কথা বলছি নিচে,,ঠিক আছে

উজানঃ আমাকে ছুঁয়ে কথা দে যে তুই বলবি না,,

শ্রাবণঃ আরে তুমি মানা করছো তাই আমি বলি,,জানো না তুমি আমাকে,,

উজানঃ জানি তো,,আমার বাচ্চা টা তো সবার সেরা,কত্তো ভালো,,আমার সব কথা শুনে

বলেই উজান শ্রাবণের পুরো মুখে চুমু এঁকে দিয়ে অনেকক্ষণ শ্রাবণেকে জড়িয়ে রাখে,,,নিজের বাচ্চাটাকে এভাবে বুকে জড়িয়ে রাখাতে যেনো পৃথিবীর সব শান্তি মিলছে তার,,চোখ ভরে পানি চলে আসছে,,না এই চোখের পানি টা আর শ্রাবণকে কোনোভাবেই দেখানো যাবে না,,উজান উঠে দাঁড়ায়,,শ্রাবণের মুখে হাত বুলে নিয়ে বেড়িয়ে আসে,,এখন সে কোথায় যাবে কি করবে সে জানে না,,তার ঠিকানা আজ কোথায় তার সেটা অজানা,,

উজানঃ আমাকে ক্ষমা করে দিও হিয়া,,কাল যে সত্যের মুখোমুখি আমি হয়েছি সেটা তোমার সামনে আসলে এই আমি-ই কখনো তোমার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারবো না,,বাকি জীবনটা তুমি আমাকে ঘৃণা করো তাও আমি তোমার চোখের ঔ ঘৃণার চাহনি সহ্য করতে পারবো কিন্তু এ-ই সত্যি টা আমি কি করে তোমাকে!!তোমাকে আমায় খুব ঘৃণা করতে হবে হিয়া খুব!!

উজানের নিঃশ্বাসের শব্দে ভারি হয়ে আসে প্রকৃতি,,চোখ ভিজে বার-বার পানি গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে মাটিতে,,এদিকে হিয়ার অবস্থা যেনো আরো করুন,, কাবিননামা টা বুকের কাছে জাপ্টে অঝোরে কাঁদছে হিয়া,,তার বিশ্বাস হচ্ছে না উজানের মতো কেউ থাকতে তার সাথে এমন খারাপ কিছু হতে পারে,,উজান তো নিজের জীবনের চাইতেও হিয়া আর শ্রাবণকে ভালোবাসতো তাহলে আজ কি এমন হলো যে উজান,,,হিয়া আর ভাবতে পারে না,,হিয়ার গলা ছেড়ে করা কান্নার চিৎকার আর আহাজারিতে চারপাশের পরিবেশ টা রুদ্ধ হতে শুরু করে,,হিয়া পারছে না এ-ই কষ্ট সহ্য করতে তার কিচ্ছু চাই না কিচ্ছু না তার শুধু তার উজানকে চাই,,শ্রাবণ আর উজানকে নিয়ে একটা ভরা সংসার চাই,,

হিয়াঃ ফিরে আসুন উজাননন,,আমার পক্ষে একা একা আর কিচ্ছু করা সম্ভব না,,ভালোবাসি আপনাকে,,বাড়িতে যাওয়া অবধি তো আপনার সাথে আমার সবকিছু ঠিক ছিলো বাড়ি থেকে এসেই কি করলেন আপনি এটা,,আমি যে কিছুতেই এটা মানতে পারছি না আপনি আমার সাথে,,ফিরে আসুন না উজান,,আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া বাঁচতে,,পারবো না আমি,,

দুজনের বুকেই এই মুহুর্তে মরুভূমির খরার চাইতেও কঠিন এক শূন্যতা গ্রাস করছে,,এ-ই শূন্যতার চাইতে কেউ যদি বুকে চাকু চালিয়ে খুন করে দিতো এর চাইতে সুখের হয়তো কিচ্ছু হতো না কিচ্ছু না,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here