#মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-55

0
874

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান
Part-55

আজ এক সপ্তাহ পরঃ

সেদিনের পর থেকে হিয়া কন্টিনিউসয়লি উজানের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে,,এমন কোনো উপায় বাদ রাখে না যেটা দিয়ে উজানকে খুঁজে পাওয়া যাবে সেটা সে অবলম্বন করে না,,হিয়া ভেঙে পড়ার মেয়ে না,,জীবনে এরকম ধাক্কা সে অনেকবার খেয়েছে,,পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার মাঝে প্রতিনিয়ত তাকে তার মাথা ঠুকতে হয়েছে,,বাবা মা চলে যাবার পর যেই আঘাত টা হিয়া সহ্য করেছে সেটাও তো হিয়া কোলের শ্রাবণকে আগলে সারিয়ে তুলেছে নিজ হাতে তাই হয়তো আজ উজানের দেওয়া আঘাত টাও হিয়া তার নিষ্পাপ বাচ্চা টার মুখের দিকে তাকিয়ে সহ্য করে নিয়ে বেঁচে থাকবে,,কিন্তু হিয়ার যে অনেক প্রশ্নের উওর চাই,,হিয়ার বিশ্বাস এটা সেই উজান না যাকে সে এতোদিন চিনে এসেছিলো, যাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো,,হিয়া আর একবার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে উজানের সমস্যা টা কি সেটা শুনতে চায়,,হিয়ার কোনো ভূল হয়েছে কি না সেটা জানতে চায়,,তার বিশ্বাস তার ভালোবাসার উপর উজান ফিরবে!আর তার এই দূর্ব্যবহার করে চলে যাবার কারণ টাও সে একদিন জানাবে,,

সন্ধিঃ তুমি আর একটা দিন সামলে নেও হিয়া,আমি কালকে রাতের ফ্লাইটেই ঢাকা আসছি,,

হিয়াঃ উনি কি আপনাদের কারো ফোন তুলছে না আপু?

সন্ধিঃ ওর তো নাম্বারি সব বন্ধ কি ফোন তুলবো ও,,তুমি গিয়েছিলে আজ ভার্সিটিতে উজান কি আজো ক্লাস নিতে আসে নি?

হিয়াঃ না উনি সেদিনের পর থেকে আর ভার্সিটিতে ক্লাস নিতে আসেন না আপু,আমি রোজ গিয়ে ওনার জন্য বসে থাকি,,কিন্তু উনি আসেন না,,

সন্ধিঃ শান্ত হও হিয়া,,তোমাকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই শুধু এটুকু জানি উজান এরকম না,,ও তোমার সাথে যেই আচরণ টা করছে সেটা ওর থেকে,,,,

হিয়াঃ আমি জানি আপু উনি এরকম না,,আমি ওনাকে চিনতে কোনো ভূল করিনি,,ওনার প্রতি বিশ্বাস না থাকলেও আমার আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আছে,,একরাতে এমন কি হতে পারে যে উনি,,

সন্ধিঃ তুমি কি একবার ওর মা’র সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবে?

হিয়াঃ এখন না আপু,,আমি জানি উনি আমাকে ছাড়া বেশিদিন থাকতে পারবে না,,ওনাকে আমার কাছে আসতেই হবে,,,,,ওনার এ-ই খারাপ আচরণের উওর ওনাকে আমায় দিতে হবে,,আর উনি সেটা দিতে বাধ্য,,

সন্ধিঃ ঠিক আছে,,আমিও একবার উজানের মুখোমুখি হতে চাই,জানতে চাই এরকম ছেলেমানুষী সে কেনো করলো___শ্রাবণের খেয়াল রেখো আমি আসছি তারপর দেখি কি করা যায়,,

হিয়াঃ হুমম

হিয়া ফোন কেটে ব্যালকুনির দেওয়াল টায় মাথা ঠেকিয়ে প্রায় আধা ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকে,,উজানকে ছাড়া এ-ই বাড়িতে তার একটা মুহুর্ত আর ভালো লাগছে না,,তার প্রশ্নের উত্তর চাই,,অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর,,

হিয়াঃ আমার কেনো মনে হচ্ছে আপনি আমাকে দূর থেকে দেখছেন,,কেনো আমার মনে হচ্ছে আপনার নিঃশ্বাসের উওাপ এসে আমার মুখে পড়ছে,,কেনো করলেন আপনি আমার সাথে এতোটা খারাপ ব্যবহার?ছাড়তে হলে ছেড়ে দিতেন,,এ-তো টা খারাপ ব্যবহার কি আমি সত্যি সত্যি ডিজার্ভ করি আপনার কাছে!আমার অনেক উওর জানার বাকি আছে উজান,,অনেক উওর

হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে,,মাথার নিউরন গুলো আর এ-ই হিসাব কষতে পারছে না,,জীবনের এই জটিলতা হিয়াকে পুরো ছিন্ন ছিন্ন করে শেষ করে দিচ্ছে,,হিয়ার সুখে কার নজর লাগে এ-তো,,একটার পর একটা অশান্তি লেগেই আছে,,হিয়াকেই কেনো সবসময় এ-তো এ-তো পরীক্ষা দিতে হয়,,হিয়ার নিজেরো তো একটা ব্রেথিংস্পেসের দরকার আছে নাকি হিয়া মানুষ না,,

হিয়ার চিন্তার ভাঁজ কাটে কলিংবেলের কিরিং কিরিং আওয়াজে,,শ্রাবণ দৌড়ে টুপ করে গিয়ে দরজা খুলে দিলে দেখে ফুড পান্ডার ঔ ছেলে টা যে তাদের রাইডার মানে তারা কিছু খাবার অর্ডার করলে সচারাচর যিনি রাইডে করে দিয়ে যান,,বাড়িতে যখন উজান ছিলো তখন শ্রাবণ আর উজান মিলে প্রায় প্রত্যেকদিন ফুড পান্ডা তে অর্ডার দিয়ে হাবিজাবি যা ইচ্ছে খেতো যদিও শ্রাবণের আবার অসুস্থতার পর সেটা অনেক কমে এসেছে,,কিন্তু কে শুনে আর কথা সপ্তাহে দুইদিন হলেও তাদের কিছু না কিছু অর্ডার করা তো চাই চাই,,একবার তো এদের এ-ই কাজে হিয়া খাবার দিতে আসা লোক টাকে গেটের দরজা হতে যা নয় তাই বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো আর বলেছিলো সে যেনো এই বাড়ির এিসীমানেও আর না আসে,,

ছেলে টাকে দেখে শ্রাবণের চিনতে কোনো অসুবিধে হয় না,,সে মুখে এক বালতি হাসি টেনে হিয়ার কাছে ছুটে আসে এদিকে হিয়াও ব্যালকুনি থেকে এদিকে আসছিলো গেট খুলবে বলে,,শ্রাবণ গিয়ে সোজা ধাক্কা খায় হিয়ার উপর,,

হিয়াঃ পড়বা তো এরকম দৌড়াচ্ছে কেনো?আর কে আসছে বাহিরে?বলছি না ভালো ভাইয়া ছাড়া অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবা না,,

শ্রাবণঃ আরেএএ বোকা এটা তো অন্য কেউ নাআআ এটা তো ঔ আঙ্কেল টা,,যিনি আমাদের ডেলিবারি(ডেলিভারি) দিয়ে যায়,,

হিয়াঃ কিসের ডেলিভারি,,দেখি সারো সামন থেকে,,

হিয়া ওর গায়ের ওড়না টা ঠিক করে নিয়ে কপট রাগে দরজায় সামনে এসে দাঁড়ায়,,হিয়া এই ছেলে টাকে চিনি একেই একবার হিয়া বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো,, হিয়ার সাথে সাথে এসে দাঁড়ায় শ্রাবণো,তার আজ খুশি দেখে কে,,তার তো বুঝতেই বাকি থাকছে না এখন সে কতো কিছু খাবে,,

-জ্বী বলেন,,কি চাই আপনার?

-ম্যাম আমি ফুড পান্ডা হতে আবীর বলছি,ম্যাম এ-ই গিফট ভাউচার টা স্পেশালি আপনার জন্য,যদি কাইন্ডলি আপনি এটা একটু রিসিভ করে নিতেন,

–ফুড পান্ডা!ভাউচার,,দেখুন আপনার হয়তো কোথাও ভূল হচ্ছে আমি আজ কিছু অর্ডার করিনি আপনাদের এ্যাপ থেকে,,

-সরি ম্যাম,,প্রথমত এটা অর্ডার নয় এটা আমাদের একটা ভাউচার,আমরা আমাদের রেগুলার কাস্টমারদের পান্ডা মাট হতে দিচ্ছি,,এখানে দু হাজারের মতো কিছু জিনিসপত্র আছে এই আপনার হরলিক্স সস নুডলস যেগুলো আমাদের কোম্পানি অফার করছে,,আর আপনি আমাদের রেগুলার কাস্টমার বলে আপনাকে আমাদের কোম্পানি হতে এটা দেওয়া হচ্ছে সাথে ফুড পান্ডা হতে এই কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি,,

বিরিয়ানির কথা শুনে শ্রাবণ এত্তো বড় হাআআ করে উঠে,,বিরিয়ানি খাবে সে এখন উফফ কি শান্তি 😍

-(হিয়া একটু ভেবে নিয়ে)তা বুঝলাম কিন্তু জিনিস টা কেমন জানি হ’য়ে যাচ্ছে না,,আসলে আমার হাসবেন্ড তো বাড়িতে নেই আপনি যদি পরে আসতেন,,

-দুঃখিত ম্যাম,হয়তো আমাদের এদিকে রাউন্ড দেবার সেই সময় হবে না,, আপনি জিনিস গুলো রাখুন আপনার হাসবেন্ড বাড়ি ফিরলে ওনার সাথে ফোনে কথা বলে দিলেই হবে,,,আর কাইন্ডলি একটু এ্যাপ এ রিভিউ দিয়ে দিবেন সময় করে,,আসছি

বলেই ছেলেটা এক দৌড়ে নিচে নেমে আসলো,হিয়া যে ছেলেটাকে আঁটকে কিছু বলবে সেই সুযোগ টাও সে হিয়াকে দিলো না,,

শ্রাবণঃ ইসস বিরিয়ানি খাবোওও আজকে,,কি মজা হে হে,,আজকে আমাদের টাকাও দিতে হয় নি,,আর কত্তো দিছু দিয়ে গেলো,,আআআআ বুবুউউউ হরলিক্সও আছে রাতেএএএ দুধের সাথে মিল করে খাবোওও,,ইয়ামমি ইয়ামমি করে,,

হিয়া কি করবে বুঝতে পারে না,,এখন কি এগুলো নিবে না লোকটাকে ডেকে আবার ফেরত পাঠাবে,,এদিকে শ্রাবণ তো উজানের অনুপস্থিতিতে কেমন জানি একটা চুপষে গেছে এ কয়দিনে এখন এ-ই কিছু মুহুর্তের মুখের হাসি টা-ই বা হিয়া কি করে বাচ্চাটার থেকে কেঁড়ে নিবে হিয়া!!

এদিকে আবীর বলে ছেলেটা হিয়াকে সব বুঝিয়ে দিয়ে কলোনির বাহিরের রাস্তায় এসে তার বাইক টা থামায়,,উজান ওয়ালেট হতে ছেলেটাকে কিছু টাকা বের করে হাতে বুঝিয়ে দেয়,,

-স্যার যেভাবে বলেছেন সেভাবে ম্যামকে সবটা বুঝিয়ে দিয়ে আসছি

-ধন্যবাদ,,নেও এ-ই টাকা টা রাখো,,তোমার বকশিস,,

-ধন্যবাদ স্যার,,রাইডার দের হয়ে একটু রিভিউ দিয়ে দেবেন,অনেক উপকার হবে

-দেবো,,ধন্যবাদ

!
!

পরেরদিন সন্ধি আসে,আর হিয়া আজো সন্ধিকে নিয়ে ভার্সিটি আসে উজানকে খুঁজতে,,কিন্তু উজান আজো ক্লাস নিতে আসে না,,সন্ধিই বা কেনো আসলে এসেই বা কি করবে কিচ্ছু বুঝে পারছিলো না,,একটা কি থানায় ডায়েরি করবে,,কিন্তু উজান তো নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে আছে আর যে নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে থাকতে চায় তাকে কি সহজে ফিরে আনা যায়,,

বাহিরে টিচার্স রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিয়া,,চোখ বুলিয়ে চারিদিকে দেখতে চেষ্টা করছে উজান আছে কি না,,কিন্তু দৃষ্টি তার যতোদূর যায় তার গন্ডির মাঝে উজান কোথাও নেই,,হঠাৎই পেছন থেকে মকবুল স্যারের ডাকে হিয়া খানিকটা চমকে উঠে,,স্যারকে সালাম দিয়ে হিয়া কি কথা বলবে আমতা আমতা শুরু করে,,

স্যারঃ কি ব্যাপার হিয়া তুমি এখানে?

হিয়াঃ হ্যা মানে স্যার,,উজানকে খুঁজছিলাম,,উনি কি আজো ক্লাস করাতে আসেন নি?

স্যারঃ তোমার সাথে কি উজানের কথা হয় না?anything wrong!সব ঠিক আছে তো তোমাদের মাঝে!

হিয়াঃ না স্যার কথা হয়,,আর কি ঠিক থাকবে না সব ঠিক আছে ,,আসলে ঔ বাড়ি যাচ্ছিলাম তাই জন্য ভাবলাম ওনার ক্লাস না থাকলে একসাথে,,

স্যারঃ strange!! তুমি বলছো তোমাদের মাঝে সব ঠিক আছে কিন্তু তুমি এটা জানো না যে গত পরশু উজান রিজাইন করেছে,,

স্যারের কথায় হিয়া একটা বড় রকমের ধাক্কা খায়,,উজান রিজাইন করেছে মানে কিসের জন্য রিজাইন করেছে,,না না স্যারের হয়তো কোথাও ভূল হচ্ছে,,

হিয়াঃ না স্যার উনি রিজাইন কেনো করতে যাবে,,আপনার হয়তো ভূল হচ্ছে কোথাও একটা,,

স্যারঃ আমার ভুল হচ্ছে!

হিয়াঃ স্যার আমি আপনাকে ওভাবে কথাটা বলিনি,,আসলে উনি রিজাইন করলে আমি তো জানতাম তাই জন্য বলছি যে

স্যারঃ সেটাই তো আমি অবাক হচ্ছি,আর আমার কোনো ভূল হচ্ছে না উজান আমার হাত দিয়েই রেজিক নেশনের লেটারটা হেড স্যারকে দিয়েছে,,ওকে অনেক বুঝিয়ে ছিলাম কিন্তু তোমরা এখন বড় হচ্ছো নিজেরা নিজেদের ভালো টা বুঝো,,,উজানের মতো একজনকে খুব প্রয়োজন ছিলো এ-ই ভার্সিটিতে,,উজান আমাকে এভাবে ডিসাপয়েন্ট করবে আমাকে নিরাশ করবে এটা আমি কখনো কল্পনা করি নি,,অন্তত উজানের মতো একটা দায়িত্ববান ছেলের থেকে এরকম immature আচরণ আশা করা টা অকল্পনীয়,,,,

হিয়াঃ স্যার আমি!

স্যারঃ হয়তো কোনো সমস্যা তে যাচ্ছে ও,,চোখেমুখের অবস্থা তো খুব ভালো দেখলাম না,,মনে হয় দু তিন রাত ঘুমায়োনি ঠিক করে,,,একটা কথা বলবো হিয়া,,

হিয়াঃ বলুন?

স্যারঃ তুমি ওর ওয়াইফ হও ওর স্ত্রী,,হাসবেন্ড রা হয়তো কখনো বুঝতে দেয় না তাদের জীবনে তাদের স্ত্রীদের ভূমিকা কতো টুকু,,,,,,,জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি একটা সময় সব ছেড়ে হতাশ জীবন কাটিয়েছি কিন্তু তোমার আন্টি সে সময় আমার ঢাল হয়ে আমার পাশে ছিলো,,এ্যারেন্জ ম্যারেজ ছিলো, তোমাদের মতো এরকম ভালোবেসে বিয়ে করিনি আমরা,,কিন্তু আমাদের মাঝে বোঝাপড়া ছিলো ব্যাপক,,এমনো দিন গেছে আমি তোমার আন্টিকে দুইবেলা ঠিক মতো ভাতো দিতে পারিনি দুটো মাস,, এতেটাই অক্ষম হয়ে গিয়েছিলাম,,সে চাইলে কিন্তু আমাকে ছেড়ে যেতে পারতো কিন্তু যায় নি,,আঁকড়ে ধরে বেঁচে ছিলো আমায়,,আর আজ দেখো আমি কোন পর্যায়ে আছি,,সবটাই তার ক্রেডিট____তোমার আর উজানের মাঝে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে সেটা বসে সলভ করো,,কোনো ভূল বোঝাবোঝি আসতে দিও না তোমাদের মাঝে,,তিন বার তালাক বললেই একটা সম্পর্কের বিচ্ছেদ আনা যায় কিন্তু একটা সম্পর্ক গড়তে অনেক সাধনা করতে হিয়া অনেক পরিশ্রম করতে হয়,,আই হোপ আমার কথার অন্তর্নিহিত মানে টা আমি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি!

স্যারের কথা শুনে হিয়ার চোখে পানি এসে যায়,,হিয়া ভরা চোখ নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্যারের দিকে,,

হিয়াঃ সে যদি না চায় তাহলে আমি একা কি করে পাড়বো স্যার??!!

স্যারঃ হিয়া কার মনে কি সেটাতো আমি বলতে পারবো না মা,,তবে এই ৪৫বছর জীবনের অভিজ্ঞতাতে অনেক মানুষ দেখেছি,চিনেছি,,সেই অভিজ্ঞতা হতে একটা কথাই বলতে পারি উজান মানুষ টা খারাপ না,,ওর চোখে আমি তোমার জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি তার চাইতে যেটা বেশি দেখেছি তোমার প্রতি ওর সম্মান,,ও তোমাকে অনেক সম্মান করে হিয়া,অনেক সম্মান_____যাগ অনেক কথা বলে ফেললাম,,দেখো কি করতে পারো কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ করো,,আমি উজানকে বুঝাবো___আসছি এখন ক্লাস আছে,,

হিয়াঃ হুম ঠিক আছে স্যার দোয়া করবেন,,আসি,,

স্যারের থেকে বিদায় নিয়ে হিয়া বেড়িয়ে আসে,,সন্ধি এই কড়া রোদের মধ্যে বাহিরে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ হিয়ার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো,,

সন্ধিঃ কি হলো হিয়া,উজান নেই ভেতরে?

হিয়াঃ না আপু,উনি আসবেন না ক্লাস নিতে,

সন্ধিঃ আসবেন না মানে,কেনো?

হিয়াঃ উনি রিজাইন করেছে,,উনি আর এই ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করবেন না বলে ঠিক করেছেন,,

সন্ধিঃ মানে!!কি বলছো তুমি ভেবে বলছো তো হিয়া,,রিজাইন কেনো করবে উজান?

হিয়াঃ সে টা তো আমারো প্রশ্ন আপু,,আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন উনি তো ডিভোর্স দিয়েই সব সম্পর্ক শেষ করে সেটা করতে পারতেন,,এভাবে আমার থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কি আছে!!

সন্ধিঃ আমি না কি বলবো কিছু ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না,,কোথায় থাকতে পারে এ-ই ছেলে,,আমার মনে হয় তোমার একবার ওর বাড়িতে জানানো উচিৎ,

হিয়াঃ আর কিছুদিন যাক আপু,,বাবা প্রত্যেকদিনই ফোন দেয় শ্রাবণের সাথে কথা বলে আমি ওনাকে রোজ রোজ মিথ্যা বলি,,কারণ ওনার কথা শুনে যা বুঝেছি উনি হয়তো এসব বিষয় কিছু জানেন না,,আর আমারো রোজ রোজ ওনার সামনে একটা নকল মুখোশ পড়ে থাকতে ইচ্ছে করে না,,

সন্ধিঃ দেখো যা ভালো বুঝো,,কোথায় যাবে এখন বাড়িতে?

হিয়াঃ না আপু শ্রাবণের স্কুলে যাবো ওকে আনতে হবে আর ওর পরীক্ষার ফি টাও দেওয়া বাকি,,আমাদের সম্পর্কের জটিলতায় তো আমি বাচ্চা টার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারি না,,

সন্ধিঃ ঠিক আছে আমি তোমাকে নামিয়ে দিয়ে একটু বাড়িতে যাবো,,মা’র নাকি শরীর টা ভালো না একটু দেখে আসতে চাইছি,,

হিয়াঃ ঠিক আছে আপু,আপনি আমার জন্য সেই সাতক্ষীরা হতে ছুটে এসেছেন তাতেই আমি অনেকটা হালকা বোধ করছি,,আসুন

সন্ধি হিয়াকে নিয়ে একটা রিক্সা ভাড়া করে দু’জনে উঠে পড়ে,,সামনে শ্রাবণের স্কুল সে ঠিক করে সে হিয়াকে নামিয়ে দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবে,,

!
!
বাইক নিয়ে শ্রাবণের স্কুল দিয়ে উল্টোদিকের রাস্তায় ফিরছিলো উজান তখনি তার সাথে দেখা হয় নীলিমার,,দেখেই বুঝা যাচ্ছে নীলিমা অনেক হেল্পলেস হ’য়ে উজানের কাছে লিফটের জন্য বিনতি করছে,,

নীলিমাঃ আমি অনেক হেল্পলেস হয়ে এই ফেবার টুকু তোমার কাছে চাচ্ছি উজান,,একটু আগে বাবাকে হসপিটালে এডমিট করা হ’য়েছে ওনার অবস্থা ক্রিটিকাল,,,,তুমি যদি একটু লিফট দিতে আমাকে,,আমার গাড়ি সেই বিশ মিনিট ধরেও আসছি করে আসছে না শাহবাগের দিকে জ্যামে আঁটকে আছে,,

উজানঃ ঠিক আছে বসো,,

উজান নীলিমাকে নিয়ে উল্টোদিকে রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে আসতে থাকে আর হিয়া সন্ধিকে নিয়ে এদিকের রাস্তায়,,মাঝের ট্রাফিকে আঁটকে যায় উজানের বাইক,,এদিকের রাস্তায় আঁটকে যায় সন্ধিদের রিক্সা,,উজান হিয়াকে না দেখলেও হিয়ার ঠিক চোখ যায় উজানের উপর,,উজানকে দেখামাত্রই হিয়ার মুখে হাসি খেলে যায় মনে হচ্ছে আকাশের ঔ চাঁদ টা হিয়া তার হাতে পেয়ে গেলো,,হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে উজানকে কিছু বলার আগে তার চোখ যায় বাইকের পেছনে বসে থাকা নীলিমার উপর,,হিয়া কিছু বলতে গিয়েও থমকে যায় সেই নিস্তব্ধতার রেশ এসে গায়ে লাগে সন্ধিরো,,

সন্ধিঃ এটা উজান কি করছে!নীলিমার সাথে,,হিয়া নিজেকে সামলাও,,উজান এরকম না হিয়া,,প্লিজ তুমি শান্ত হও,,

সন্ধি হিয়াকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না,,হিয়া এক দৃষ্টিতে উজানের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই,,

নীলিমাঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি উজান?

উজানঃ বলো?

নীলিমাঃ তুমি কি কোনোদিনও আমাকে একটা মুহুর্তের জন্য ভালো বাসোনি,,

উজানঃ না,,তোমার মতো মেয়েকে ভালোবাসা যায় না নীলিমা,,আজ শুধু মানবতার খাতিরে আমি তোমাকে এ-ই সাহায্য টুকু করছি,,আর হিয়ার কথা ভেবে জানো তো হিয়া তার চরম শএুকেও বিপদে সাহায্য করতে পিছপা হয় না তাই আমিও হিয়ার হাসবেন্ড হ’য়ে সেই দায়িত্ব টুকু করতে চাইছি নয়তো তুমি হিয়ার যা ক্ষতি টা করেছিলে সে সময়গুলোত, এরপর তোমাকে সাহায্য তো দূর তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধতো,

নীলিমাঃ তুমি হিয়াকে খুব ভালোবাসো তাই না?

উজানঃ বাচ্চা দের মতো প্রশ্ন করা তোমাকে মানায় না নীলিমা,,গ্রো আপ,,হিয়াকে আমি কতোটা ভালোবাসি সে শুধু আমি না পুরো ক্যাম্পাস জানে,,হিয়া আমার সব কিছু,,হিয়াকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না,,এতোটুকু তো বুঝো,,

নীলিমার আর দ্বিতীয়বার কিছু জিজ্ঞেস করার মতো মুখ নেই,,ট্রাফিক ছাড়লে উজান বাইক স্টার্ট দেয় আর এদিকে সন্ধি হিয়াকে নিয়ে আসে শ্রাবণের স্কুলে,,

সন্ধিঃ হিয়া তুমি,,,,,,উজান ওরকম ছেলে না হিয়া,,ও হয়তো কোনো কারণে,,তুমি ওকে ভুল বুঝো না,,

হিয়াঃ আমি ওনাকে ভুল বুঝছি না আপু,আমি জানি উনি কি রকম,,আমার বিশ্বাস টা এতো ঠুনকো হতে পারে না,,আমি শুধু ওনার কথা ভাবছি ওনাকে একবার ভালো করে দেখেছিলেন আপনি,,,স্যার ঠিকই বলেছিলো উনি হয়তো রাতে ঘুমোন না___উনি এতো অগোছালো না আপু উনি তো অনেক পরিপাটি ব্যাক্তিত্বের একটা মানুষ,,উনি নীলিমা আপু কেনো অন্য মেয়ে নিয়েও বাইকে ঘুরলে আমি ওনার দিকে কখনো সন্দেহের চোখে তাকাতে পারবো না,,,,আমি জানি না কি হচ্ছে আমার শুধু কিছু প্রশ্নের উওর চাই,,আর আমি জানি আমি সেটা শীঘ্রই পাবো,,আসছি আপু পরে কথা হবে,,

হিয়া সন্ধিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করে,,শ্রাবণ এতোক্ষণ গার্ডিয়ান রুমে হিয়ার অপেক্ষা তেই বসে ছিলো,,হিয়াকে দেখে শ্রাবণ দৌড়ে আসে হিয়া তো ওকে কথা দিয়েছিলো সে উজানকে আজ নিয়েই বাড়ি ফিরবে তাহলে উজান কোথায়!শ্রাবণের মনটা মুহূর্তে খারাপ হ’য়ে আসে,,হিয়া বুঝে শ্রাবণের কষ্ট টা কিন্তু তার তো কিচ্ছু করার নেই এই মুর্হুতে,,হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে অফিস কাউন্টারের দিকে আসতে হিয়ার সাথে দেখা হয় শ্রাবণের ক্লাস ম্যামের,,হিয়া ওনাকে সালাম জানিয়ে কথা বলতে শুরু করে,,

ম্যামঃ ছুটি তো হয়েছে অনেকক্ষণ,,আপনারা বাড়ি ফেরো নি,,এদিকে কোথায় যাচ্ছিলেন অফিস রুমে?

হিয়াঃ জ্বী ম্যাম ঔ শ্রাবণের পরীক্ষার ফি টা দিতে এসেছিলাম,,কিন্তু আজ না-কি অফিস সেকশন বন্ধ তাই চলে যাচ্ছি

ম্যামঃ অফিস সেকশন তো কিছু কারণে বন্ধ,কিন্তু আপনি হঠাৎ শ্রাবণের কিসের ফি দেবার কথা বলছেন?

হিয়াঃ কিসের আবার,সামনের মানথে যে ওদের ফাইনাল এক্সাম আমি তার ফি দিতেই তো,,

ম্যামঃ এক সেকেন্ড,,শ্রাবণের তো ফি দেওয়া হ’য়ে গেছে,,

হিয়াঃ ফি দেওয়া হয়ে গেছে বলতে,,,,,,ম্যাম কাইন্ডলি যদি একটু ক্লিয়ারলি বলতেন

ম্যামঃ আরে সেদিন তো ওর বাবা উজান শাহরিয়ার তাই তো?উনি এসে পরীক্ষার ফি তো দিলোই আর সাথে শুধু পরীক্ষার ফি না উনি তো এ-ই জুন থেকে শুরু করে ডিসেম্বর এর এ্যাডভান্স সহ যা খরচ সব পেমেন্ট করে দিলো কাউন্টারে,,

হিয়াঃ কিসব বলছেন আপনি ম্যাম!

ম্যামঃ কিছু কিছু বাচ্চাদের থেকে তো বেতন ফি এসব চাইতে চাইতে হয়রান হয়ে যেতে হয় আর আপনার হাসবেন্ড কে দেখুন উল্টো এ্যাডভান্স করে রেখে চলে গেলো,,একদিক দিয়ে ভালোই হ’য়েছে আর আগামী ছয় মাস আর কোনো চিন্তা থাকলো না,,নাহলে মাসে মাসে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যা হেনস্তা হতে হয়,,,,কিন্তু আপনি এ-তো অবাক হচ্ছেন কেনো আপনার হাসবেন্ড আপনাকে বলে নি যে সে,,

হিয়াঃ না আসলে আমি কালই এক জায়গা হতে আসলাম তো সময় হয়ে ওঠেনি এসব কথা বলার,,আসছি ম্যাম,দোয়া করবেন আমার বাচ্চা টার জন্য,,

ম্যামঃ হুম এসো,,

হিয়া শ্রাবণকে নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করে,,আজ যে সে রিক্সা অটো কিছু নিবে সেটাও তার হুঁশে আসছে না,,

শ্রাবণঃ আর কতো হাটাবি বুবু, পা ব্যাথা করে তো,,,বুবু কোথায় মন দিয়ে বসে আছিস শুনছিস না আমি কি বলছি,,এ-ই বুবু,,বুবু(রাগে হিয়ার জামা টেনে ধরে)

হিয়াঃ হ হুম বল,,

শ্রাবণঃ রিক্সা নে না বুবু হাঁটতে ভালো লাগছে না,,

হিয়াঃ নিচ্ছি,,

শ্রাবণঃ দেখলি আমি তোকে তখন কি বললাম আমি ঠিক সেদিন ভাইয়াকে দেখেছিলাম আমার স্কুলে,,দেখলি মিললো তো,,ভাইয়া আমার সাথে এরকম লুকোচুরি কেনো খেলছে বুবু,,ভাইয়া কি ধরা দেবে না??

হিয়াঃ আমি জানি না শ্রাবণ কিসের ওনার এ-তো লুকোচুরি,,উনি কি বুঝতে চাইছেন না ওনার এ-ই লুকোচুরি আমাকে আরো হারিয়ে ফেলছে!!

______________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here