মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-58

0
1000

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান
Part-58

প্রায় দেড় মাসের মাথায় হিয়ার ডেলিভারির দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সবার মাঝে এক অন্যরকম উন্মাদনা কাজ করতে শুরু করে,,সবাই এখন যার যার মতো প্রস্তুত ঘরের নতুন অতিথি কে ঘরে আনতে,বাসবি প্রস্তুত তার বানানো কাথা বালিশ নিয়ে তার আদরের নাতনিকে ঘরে তুলতে,শ্রাবণ তৈরি এখন থেকে তার সব জিনিস দুজনে দু’জনে শেয়ার করে নিতে,,বিছানায় বাবু কোন পাশে ঘুমাবে আর সে কোন পাশে সব সে আগে থেকে ঠিক করে নিয়ে রাখে,,এদিকে উজান তৈরি তার কলিজার প্রিন্সেসকে ঘরে নিয়ে আসতে ছোট মশারি থেকে শুরু করে হাজার ধরনের খেলনা দিয়ে তার ঘর সাজিয়ে নিতে,,কিন্তু সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সবার মাঝে আনন্দ বিরাজ করলেও হিয়ার মাঝে একটা অন্য রকম অনুভূতি খেলতে শুরু করে,তার এখন শুধু একটাই দোয়া তার বাচ্চাটা যেনো সুস্থ ভাবে এ-ই পৃথিবীতে আসে,,মাতৃত্বের সাধ যেমন হিয়ার পুরো শরীর থেকে শুরু করে হিয়ার মনকেও ক্ষণে ক্ষণে রাঙিয়ে দেয়,তার পাশাপাশি একটা অজানা ভয়ো কাজ করতে থাকে হিয়ার মাঝে,যদি এবারো হঠাৎ করে আকাশ কাপিয়ে কোনো ঝড় এসে তার অনাগত সন্তানের কোনো ক্ষতি করে দেয়,,সব ঝড় সামলে নিলেও এই ঝড় তার সন্তানের কোনো ক্ষতি করে দিলে তার যে কিছুই আর করার বাকি থাকবে না,,

সৃষ্টিকর্তা হিয়াকে জীবনে অনেক পরীক্ষার মধ্যে রেখেছে,অনেক কষ্ট দিয়ে হিয়াকে শক্ত করেছে,,তাই এবার আর উনি হিয়াকে কোনো ঝড়ের মুখোমুখি হতে দেন নি,,তারও হৃদয় গলেছে,,সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে হিয়ার মনের ভয়টাকে ভূল প্রমাণিত করে আজ উজান আর হিয়ার কোল জুড়ে এসেছে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই সন্তান,হিয়ান!__দুপুর আড়াই টের কাছাকাছি কোনো রকম জটিলতা ছাড়া ডেলিভারি হয় হিয়ার,,ডাক্তার আন্টিটা বাচ্চাটাকে পৃথিবীর বুকে নিয়ে এসে হিয়ার মাথার কাছে গিয়ে দাঁড় হয়,,হিয়া কাঁদছে খুব কাঁদছে তবে আজ প্রথম সে কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য কাঁদছে,,এ-ই কান্না টা খুব প্রিসিয়াস হিয়ার জন্য,হিয়া অনেক কষ্টে হাত বাড়িয়ে তার বাচ্চাটার মাথায় তার প্রথম পরশ বুলে দেয়,,নার্স এসে হিয়ানকে পরিষ্কার করে দিলে ডক্টর আন্টিটা নিজে থেকে হিয়ানকে কোলে নিয়ে, মুখে এক রাশ হাসি টেনে,বাহিরে এসে উজানের হাতে তুলে দেয় তার মেয়েকে,,বাচ্চার কান্নার শব্দ স্তব্ধ পরিবেশ টাকে নিমিষে ভরিয়ে তুলে,,উজানের গাল বেয়ে পড়া টুপটাপ ফোঁটা পানি এসে ছুঁইয়ে যায় হিয়ানের মুখে,,উজান হিয়ানের কপালে তার বাবা হবার প্রথম স্নেহের পরশ বুলে দেয়,,

হিয়ান একদম উজানের মতো দেখতে হয়েছে টিকালো সেই নাক,নাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেটাকে আর হাত দিয়ে টেনে লম্বা করতে হবে না দাদি নানিরা সচরাচর সরিষার তেল হাতে নিয়ে যেই কাজ টা করে আরকি,,চোখ দুটোও হয়েছে উজানের মতো ছোট ছোট কিন্তু মায়ের মতো ভারী মায়াবি যা তার চোখ দেখে এখনই বুঝা যাচ্ছে,,গায়ের রঙ দেখে আপাতত বোঝার উপায় নেই সে বড় হয়ে কি রকম হবে,,সে যে রকমই হোক সে তার বাবা মায়ের কলিজার টুকরা তো,,,উজানের মতো গড়ন পেলেও হিয়ানের আবার হিয়ার মতো বুকের কাছের ঔ তিল টা জন্ম হওয়াতেই হালকা বুঝা যাচ্ছে,বড় হলে যা স্পষ্ট রুপ নিবে ঠিক একদম তার মায়ের মতোই,,

একে একে সবাই এসে হিয়ানকে কোলে নিয়ে নিজের মনের খুশিটা জাহির করতে থাকে,,সন্ধিও সেই পরশু থেকে এসে হিয়াকে সঙ্গ দেয়,,একবার বাসবি একবার সন্ধি তো কখনো হিয়ানের দাদুভাই,,সবাই কোলে নিয়েছে এখন শ্রাবণ না নিলে কি তার চলবে,,রাগে না হসপিটালে বোম ফাটিয়ে দিবে সে,,অনেক সাবধানতার সাথে উজান শ্রাবণের কোলে হিয়ানকে তুলে দিয়ে ধরে রাখে,,ও মা,,এতোক্ষণ যেই বাচ্চা সবার কোলে কোলে কাঁদছিলো সে কি না শ্রাবণের কোলে উঠতেই পুরো চুপ হয়ে গেলো,,আর শুধু কি চুপ এ-ই প্রথম সে দিলো একটা তার মলিন হাসি,,সবাই তো অবাক,,ইসস শ্রাবণের মুখের এই সময়ের হাসি টা ছিলো একদম দেখার মতো তার কোলে উঠে বাবু কান্না ওফ করছে তার মানে বাবুর তাকে খুব পছন্দ হইছে,,হুম দেখেই বুঝা যাচ্ছে মামা ভাগ্নীর খুব জমবে,, এবার শুধু শ্রাবণ না শ্রাবণের পাশাপাশি হিয়ান সহ দুজনে মিলে হিয়াকে এবার জ্বালিয়ে শেষ করে দিবে এটা বুঝতে আর উজানের বাকি থাকছে না!!

হিয়াকে নিয়ে চারদিন পর বাড়িতে আসে সবাই,,বাড়িতে এসে হিয়ার প্রতি সবার যত্নআত্তি যেনো আগের চাইতেও বেশি বেড়ে যায়,,বাড়ি ভর্তি লোকজন বিরাজ করতে থাকে কিছুদিন,,কখনো মকবুল স্যার আসছে হিয়ানকে দেখতে তো কখনো গ্রাম থেকে আসছে হিয়ার চাচ্চু,,সব মিলিয়ে কিছুদিন বাড়িতে একটা রমরমা আমেজ বিরাজ করছে,,এদিকে উজান তো বাবু হবার খুশিতে আরো এক সপ্তাহ এক্সট্রা ছুটি নিয়ে নিলো,,তার যে কিছুতেই তার মেয়েকে ছাড়া ভার্সিটিতে ক্লাস করতে মন চাইছে না,,

এ-ই রমরমা ভরা আমেজটা এবার আস্তেধীরে কাটতে শুরু করে,,সবাই যে যার কাজে যে যার জায়গায় ফিরে যায়,,বাড়িটা আবার আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে যায়,,শুধু হিয়াকে দেখে রাখতে থেকে যায় উজানের মা,,এ-ই তো দিন গুলো চলতে থাকে জীবনের নিয়ম করে,,দুই বাচ্চা কে সামলাতে যে হিয়ার সময় গুলো কখন ফুরিয়ে যায় হিয়া নিজেও আন্দাজ করতে পারে না,,

পাঁচ মাস পর;

হিয়ান এ-ই পাঁচ ম মাসে অনেকটা বড় হয়ে গেছে,,মেয়ের গায়ের রঙ বাবার মতো উজ্জ্বল না হলেও হাত পা দেখে বুঝা যায় সে হবে তার বাবা-র মতোই লম্বাচড়া,,এখন হিয়ান আ হু বলে ছোট ছোট বুলি আওড়াতে শিখছে কিন্তু সেই মধুর ধ্বনি গুলো তখনি ওর মুখ দিয়ে বেশি বের হয় যখন সে খুব খুশি থাকে,,আর তার খুশি থাকা তখনি বেশি হয় যখন শ্রাবণ এসে ওর মুখের সামনে কথা বলে ওর সাথে খেলতে শুরু করে,,আর এখন এ-ই মুহুর্তে শ্রাবণ হিয়ানের সাথে খেলছে বিধায় হিয়ান সেই খুশিতে মুখ দিয়ে বের করছে তার আ হু ধব্বি,,

শ্রাবণঃ আআ আ আ আমার সাদা পরীইই আমার নীল পরী আমার লাল পরী,,দাঁত দেকি দাঁত দেকি,,দাঁত হয়নি,,এই যে আমার দাঁত,,ইইইই,,ভালো ভাইয়া হিয়ানের দাঁত কবে হবে?

উজানঃ দেড়ি আছে সোনা,,

শ্রাবণঃ আমি কি এখন ওকে আইসক্রিম কিনে দিতে পারবো না?আইসক্রিম তো নরম জিনিস ওর গলায় লাগবে না,,

উজানঃ আরেকটু বড় হোক তখন কিনে দিস,,

শ্রাবণঃ ঠিক আছে,,এ-ই বুড়িইইইই,,ঘুমাবি না ঘুমা ঘুমা,,ঔ যে হালুম আসলো,,বাঘ আসলো,,কি বলে আমার বুড়ি টা,,বুড়ি তুই বড় হো না আমরা দু’জনে খেলবো তখন,,,,,জানিস বুড়িইই ফয়সালের না একটা বোন আছে কি বাজেএএ,,একদম খারাপ খালি ঝগড়া করে,,মনে হয় ঠাস ঠাস থাপ্পড় মেরে দেই,,এতো বেয়াদব,,আমার বুড়ি টা তো কত্তো ভালো নাআআ

হিয়াঃ আহ শ্রাবণ চুপ করো তো,,সারাদিন হিয়ানের সাথে কতো কথা বলো তুমি,,তোমার মুখে ব্যাথা হয় না,,

শ্রাবণঃ না ব্যাথা হয় না,,আমার বুড়ি টা কতো ভালো,,সোনা বুড়ি আমার,,

হিয়াঃ আচ্ছা ও কি তোমার কথা বুঝে কিছু, বলো আমাকে,,আর এও বা কি কিছু বুঝে না শ্রাবণ কিছু বললেই হেসে দিয়ে দেয়,,,এদের নিয়ে আর পারি না আমি,,,,,ভালো কথা মনে পড়লো তুমি বলে আজকে ফয়সালের ছোট বোন ফারিহাকে ধরে মারছো,,কিসের জন্য ওকে মারছো তুমি সাহস তো কম না তোমার অন্যের বাচ্চার গায়ে হাত তুলো,,

শ্রাবণঃ মারছি বেশ করছি,,আরো মারবো,,নার্সারি তে পড়া একটা মেয়ে তার কথা শুনলে মনে হয় আমি ওর ছোট আমাকে শাসন করে কতো খারাপ,,

হিয়াঃ তাই বলে তুমি ওর গায়ে হাত তুলবা,,আমি যেনো আর এসব না শুনি,,শুনলে না ঔ ফারিহাকে দিয়েই আমি তোমার একদিন বিয়ে দিয়ে দেবো,,বেয়াদব

শ্রাবণঃ আমাট বয়েই গেছে ঔ পেত্নী টাকে বিয়ে করতে,,

শ্রাবণ হিয়াকে মুখ ভেংচি কেটে আবার হিয়ানের সাথে খেলতে শুরু করে,,এদিকে উজান মশারী ফেলে হিয়ার পাশে এসে শুইয়ে পড়ে,,দেওয়ালের কিনারে শ্রাবণ তারপর হিয়ান হিয়ানের পাশে হিয়া হিয়ার এপাশে উজান,,

হিয়াঃ আপনি কিভাবে মশারী ফেলেন উজান প্রত্যেকদিন একটা না একটা মশা ঢুকে থাকে,,

উজানঃ শ্রাবণ দেখো কেমন করে খেলছে ঔজন্য মশারী উঠে গিয়ে মশা ঢুকছে,

হিয়াঃ এ-ই দেখি তুমি ঘুমাবা এখন,,হিয়ানো খেয়ে ঘুমাবে এখন,,দু’জনেই ঘুমে যাবা,,আর কোনো কথা না,

শ্রাবণঃ আর একটু খেলি না বুবু,,

হিয়াঃ শ্রাবণ তুমি এখন ছোট নাই কিছুদিন পর ফাইভে উঠবা,এ-ই সব খেলাধুলা আর না বড় হচ্ছো না,,

শ্রাবণ বুঝে এখন হিয়াকে আর বেশি কিছু বলা যাবে না,সে গত ২ঘন্টা ধরে হিয়ানের সাথে খেলে তার পড়াটা পড়তে ভুলে গেছে,,এখন বেশিক্ষণ জেগে থাকলেই তার বিপদ,,হিয়া হিয়ানকে নিয়ে এদিকের রুমে এসে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে থাকে আর তার ফাঁকে শ্রাবণ উজানের সাথে এক দফা খেলে নিয়ে ঘুমে যায়,,হিয়াও হিয়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এই রুমে এসে শ্রাবণের পাশে হিয়ানকে শুইয়ে দিয়ে নিজে শুইয়ে পড়ে,,ভালো করে কম্বল টা শ্রাবণ আর হিয়ানের গায়ে দিয়ে হিয়া একটা দম ফেলে,,যাগ আজকের মতো সব কাজের ইতি,,উজান শ্রাবণ আর হিয়ান দু’জনের মাথায় হাত বুলে দিয়ে হিয়ার বুকে মাথা রাখে,,

উজানঃ আজকে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে জানো হিয়া,,কি নেই আমার কাছে আজ,,আমি সবসময় এখন দোয়া করি আমরা চারজন যেনো এভাবে সুখে থাকতে পারি,,

হিয়াঃ হুম থাকবো কথা দিচ্ছি,,

উজানঃ হুম দু’জনকে সামলাতে গিয়ে খুব কষ্ট হয় না এখন তোমার?

হিয়াঃ আমি আর কোথায় সামলাই মা’ই তো সব করে করে দেয়,,

উজানঃ তারপরো,,আচ্ছা আজকে তো মা নেই হিয়াপাখি,আজকে কি আমাকে একটু সময় দেওয়া যায়?

হিয়াঃ আপনি ফেরার পর থেকেই তো আমি আপনাকে সময় দিচ্ছি,,এখন আবার কিসের সময় চাই!

উজানঃ না মানে ঔ বলছি যে চলো না ঔ রুমে যা-ই,,এই বেশিক্ষণ না এক ঘন্টা!

হিয়াঃ কি!___আমি যাবো না,,

উজানঃ প্লিজজ,, আচ্ছা আধা ঘন্টা,,আচ্ছা যাও ওনলি ফিফটিন মিনিটস,,

হিয়াঃ কি অসভ্য আপনি উজান,,এতো বেহায়া হলে হয় না,,চুপচাপ শুইয়ে পড়ুন তো,

উজানঃ শুনো না,,এই দেখো আমার দিকে দেখো,,যাও দশ মিনিট,,পাঁচ মিনিট,,দুই মিনিট

হিয়াঃ কি শুরু করলেন কি আপনি,,দুজনে কিন্তু উঠে যাবে,,

উজানঃ যাবে না চলো না প্লিজজ,,এক মিনিট যাবো আর আসবো,,

হিয়াঃ দিন যতো যাচ্ছে অসভ্যমি তে আপনি তোতোই পিএইচডি করছেন,,ভুলে যাবেন না আপনি এখন একজনের বাবা,

উজানঃ জানি তো,,প্লিজ আসো তো,,আসো না,,

উজান হিয়াকে পাঁজা কোলা করে কোলে তুলে এদিকের রুমে নিয়ে আসে,,সত্যি হিয়া ঠিকই বলে এ-ই উজান টার মতো অসভ্য কেউ নেই,,কেউ না,,

🍁
আজ প্রায় আড়াই বছর পর;

জীবনের এই ঘড়ির চাকা টা কতো দূত আমাদের জীবনে চলতে থাকে,,সময় গুলো দেখতে দেখতে কখন গিয়ে কোন জায়গায় থেমে যায় আবার সেখান থেকে নতুন উদ্যেমে সবটা শুরু করে সে বুঝা মুশকিল,,যেনো চোখের এক পলকে সব পাল্টে যায় সময় পরিস্থিতি সুখ দুঃখ সব,,

হিয়ানের বয়স এখন ২বছর ২মাস চলছে,,সে এখন স্পষ্ট কথা না বললেও তার কথার পকপকানির জ্বালায় হিয়ার কান ঝালাপালা হয়ে যায় যায় এমন অবস্থা,,বাবার আদরের মেয়ে বলে কথা যেমন আহ্লাদের ওমনি কি তার জীদ,,ভাব দেখে বুঝা যায় পড়াশুনোর প্রতি তার বিন্দুমাএ আগ্রহ হবে না,,শ্রাবণের কোনো বই খাতা তার হাতে পড়লেই গেলো,,সব ছিঁড়ে মিরে একাকার হ’য়ে বইয়ের ব ও খুঁজে পাওয়া যায় না এমন,,বই খাতা যেনো তার শএু,,তবে সাজগোজের প্রতি তার ঝোঁক দেখলে মাথা পুরো নষ্ট,,হিয়ার ড্রেসিং আয়নার এমন কিছু নেই যেটা তার দখলে নেই,,মা তো থাকে সিম্পল সাধারণ একটা কপালে কালো টিপ হলেই তার চলে কিন্তু মেয়ের তো আবার লিপস্টিক নামক বস্তুটা এ-তো প্রিয় যে উজানের অর্ধেক ইনকামই বুঝি তার মেয়ের সাধের লিপস্টিক কিনতে একসময় ফুরিয়ে আসবে,,

এদিকে শ্রাবণ সে তো হয়েছে আরেকটা উজান,,যেমনি লম্বা তেমনি হ্যান্ডসাম,ক্লাস তো সে সাড়ে সেভেনে পড়ে মানে ঔ আর ছ মাস পর এ্যাইটে উঠবে আরকি,,কিন্তু ভাব এমন যে এ্যাইট তো দূর সে এখন মাধ্যমিকের কোনো ক্যান্ডিডেট,,পোষাক আশাক এতোই পরিপাটি তার সাথে তার স্টাইল কথা বার্তা চলাচলের অঙ্গভঙ্গি এতোই নিখুঁত যে একদম উজানের মতো ব্যাক্তিত্বের সে অধিকারী হবে তা তাকে এখন থেকেই দেখে বলে দেওয়া সম্ভব,,

!
!

ব্যালকুনিতে বসে বসে হাজার রকমের খেলনার সামগ্রী হাতে নিয়ে বসে খেলা করছিলো হিয়ান,,মাথায় তার দু ঝুঁটি করা যদিও একটা বেশি টানাটানি করার জন্য একটু পর খুলেই যাবে এমন হ’য়ে আছে,,পড়নে একটা সাদা ফ্রোক,,হাতে তার মায়ের খুলে রাখা বড় বড় চুড়ি যদিও সেগুলো বারবার তার হাত থেকে খুলে পড়ছিলো কিন্তু তবুও ঔ খুলে পড়া চুড়ি গুলো আবার তুলে নিয়ে হাতে পড়তে তার ওতেই খুব আনন্দ হচ্ছে,,শ্রাবণ স্কুল থেকে ফিরে আসায় হিয়া আগে তাকে পাঠিয়ে দেয় গোসল করতে,,শ্রাবণ ফেরার কিছুক্ষণ পর উজান আসে,,হাতে থাকা ভার্সিটির ফাইল টা দুম করে বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে সে ঔ ঘামে ভেজা শরীর নিয়েই ব্যালকুনিতে বসে হিয়ানের সাথে একদফা খেলে নেয়,,

উজানঃ হিয়া,,হিয়া কি করো,,হিয়াআআআ,একটু পানি খাওয়াবা,,হিয়া,,,,তোর আম্মুটা এতো কি রান্না করে রে,,আমি ডাকছি তাও শুনে না,,হিয়া

হিয়ানঃ মা ফিস নান্না করে,,

উজানঃ(হতাশ কন্ঠে) ফিস নান্না করে মা!!আজকে আবার সেই ফিস খাবো,,যাওয়ার সময় তো বলে গেলাম একটু বিরিয়ানি করতে কতোদিন খাই না,,আচ্ছা মা তুই খেল আমি একটু পানি খেয়ে আসি,,

উজান উঠে যেতে হিয়ান উজানের দিকে হিয়ার ফোন টা বাড়িয়ে ধরে,,

হিয়ানঃ টিম টিম দেও,,

উজানঃ হাটি মাটিম দেবো,,আচ্ছা,,এ-ই যে হাটি মাটিম টিম দিয়ে দিলাম,,তুমি বসে বসে দেখো আমি আসছি,,

উজান হিয়ানকে হাটিমাটিম ধরিয়ে দিয়ে ডাইনিং এ এসে গলায় হালকা সুর তুলতে তুলতে গুনগুন করে গান করতে থাকে আর ফ্রিজ খুলে খুঁজতে থাকে ঠান্ডা পানির বোতল,,কিন্তু নরমালে নেই একটাও ঠান্ডা পানি,,এ-ই গরমে গলা যা শুকিয়েছে এ-ই মুহুর্তে ঠান্ডা পানি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই,,উজান ড্রিপ ফ্রিজ খুলে বরফ বের করতে যাবে ওমনি একটা জায়গায় তার চোখ আঁটকে গেলে উজান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উঠে,,

উজানঃ এসব কি এখানে,,হিয়ার লিপস্টিক,কাজল,,,,হিয়ার এই মেক-আপের জিনিস ড্রিপ ফ্রিজে কি করছে!! স্ট্রেঞ্জ___হিয়া,,হিয়া কোথায় তুমি,,হিয়া

হিয়াঃ আসছি আসছি,কি হয়েছে কি তখন থেকে হিয়া হিয়া কেনো করছেন?

উজানঃ এসব তোমার সাজার জিনিস এখানে কি করছে?আজব!

হিয়া উজানের হাতে ঔ সব জিনিস গুলো দেখে টপ করে এসে ছো মেরে নিয়ে সেগুলো আবার ড্রিপ ফ্রিজটার ভেতর লুকিয়ে রাখে,,

হিয়াঃ কি করছেন কি আস্তে বলুন আপনার মেয়ে শুনলে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে,,

উজানঃ হিয়ান শুনলে সর্বনাশ হয়ে যাবে কেনো?

হিয়াঃ কেনো আপনি বুঝেন না,,আমার সাজগোজের এমন কোনো জিনিস নেই যেটা ও নষ্ট করে নি,,আমি অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখলেও এই বদ শ্রাবণ টা কোথা থেকে সেগুলো আবার খুঁজে এনে হিয়ানের হাতে ধরিয়ে দেয়,,ফাজিল ছেলে একটা,,তাই আমি এগুলো এই উপরে ড্রিপ ফ্রিজে রেখে দিছি,,ভালো করছি না বলুন,,এখন শ্রাবণ হাজার খুঁজলেও হিয়ানের জন্য কিচ্ছু খুঁজে পাবে না,,জায়গাটা দারুণ না!

উজানঃ সিরিয়াসলি হিয়া,,এসব বদ বুদ্ধি তো আমি জিন্দিগিতেও মাথায় আনতে পারতাম না,,দেখি সারো যেমন মেয়ে তার তেমন মা,,,

হিয়াঃ যার ঘরে এরকম দূরন্ত টাইপ মেয়ে থাকে না সেই মা গুলোকে এরকমই হতে হয়,,

উজানঃ তাই বলে নিজের মেয়ের সাথে এরকম ভাগাভাগি,,জীবনে তো কোনোদিন দেখলাম না একটু শখ করে ঠোঁটে এ-ই সব রঙ টঙ ছুঁইয়েছো,,বলতে বলতে ঔ কাজল টা দেও,,তা এসব রেখে কি হবে আর,,

হিয়াঃ শুনুন আমি না মোটেও আমার মেয়ের সাথে ভাগাভাগি করছি না,,ও অহেতুক জিনিস নষ্ট করে তাই আমি ওগুলো নিরাপদ জায়গায় রেখে দিয়েছি,,আপাতত যেগুলো আছে ওগুলো শেষ হোক তারপর দেখা যাবে এগুলো ওকে দেওয়া যাবে কি না,,

উজানঃ যা ইচ্ছে করো,,শ্রাবণ বের হলো আমি গোসলে যাবো,,খুব খিদে পাইছে আজ

হিয়াঃ যান গিয়ে যা খুশি করুন,,আমি এখন হিয়ানকে খাওয়াবো আমাকে আর কোনো ডিস্টার্ব দিবেন না,,

উজান ভেংচি কেটে হিয়ানের সাথে আবার গিয়ে একটু টুকিটাকি খেলে নিতে থাকে,একটুপর শ্রাবণ গোসল করে বেড়িয়ে আসলে উজান হিয়ানের গালে একটা টাইট করে হামি দিয়ে গোসল করতে ঢুকে যায়,,এদিকে হিয়ার কাছে ফয়সালের মা’র দেওয়া পায়েসের বাটি টা পড়ে থাকায় হিয়া শ্রাবণকে ফয়সালের বোনের জন্য ওর বানানো ফিসক্রাই দিয়ে বলে বাটি টা গিয়ে দৌড়ে দিয়ে আসতে,,শ্রাবণের তো শুধু ফয়সালের বাড়িতে যাবার বাহানা হলেই হয় আর ফয়সালেরো তাই তবে শ্রাবণের টা একটু বেশি আর তার কারণ ফয়সালের বোন ফারিহা!!ঔ ছোটবেলার ভালো লাগা আরকি,,
শ্রাবণ চলে আসতেই হিয়া হিয়ানের জন্য বাটিতে ভাত বেড়ে নিয়ে এসে ব্যালকুনিতে হিয়ানের পাশে বসে যায়,,আর ভাতগুলো মাখতে মাখতে শুরু করে দেয় তার গল্প,,,কিন্তু এতোকিছুর মাঝে আমাদের হিয়ান রানী এবার করে বসে এক মহৎ কাজ,,সে যখন ব্যালকুনিতে একা একা হাট্টি মাটিম দেখছিলো তখন কি মনে করে ব্যালকুনির গ্রীলের ফাঁক দিয়ে নিজের হাতে থাকা ফোন টা এক ঢিলে ধাম করে নিচে ফেলায় দেয়,,আহ,এ-ই মহৎ কাজ করে তার মুখের হাসি দেখে কে,,শুধু ফোন ফেলেই সে ক্ষান্ত হয় না সাথে তার দুটো খেলনাও নিচে টপ করে ছুঁড়ে দেয়,,

হিয়ানঃ মা পেলায় দিচি,,(ফেলায় দিছি)

হিয়াঃ ফেলায় দিছো ভালো করছো,,দেখি হা করো,আজকে ভাত পুরো না খেলে পিঠের মধ্যে দেবো তোমার আমি,,

হিয়া হিয়ানের মুখে ভাত তুলে দেয়,,কিন্তু মেয়ে তো দাঁত এমন করে চিপে আছে যে ভাত গলায় ঢুকছে কম বাহিরে বেড়িয়ে যাচ্ছে বেশি,,

হিয়াঃ হিয়ান তখন যে তোমার হাতে একটা ফোন দেখলাম,,কার ছিলো ওটা,,দেখি একটা তোমার দাদিকে ফোন দেই কতোদূর পৌঁছালো,,

বলতে বলতে হিয়া আবার হিয়ানের মুখে ভাত তুলে দিয়ে ফোন খুঁজতে থাকে,,কিন্তু ফোন!!

হিয়াঃ ফোন টা কি করলা হিয়ান?

হিয়ানঃ মা পোন পেলায় দিচি,,

হিয়াঃ কি ফেলায় দিছো মা?

হিয়ানঃ পোন টা নিচে পেলায় দিচি,

হিয়ানের কথা বুঝে আসতে হিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উঠে,,

হিয়াঃ ফোন ফেলায় দিছো মানে!কার ফোন ফেলছো,,তোমার হাতে যেই ফোন টা ছিলো তুমি ওটা নিচে ফেলায় দিছো,,কেমন করি ফেলছো?

হিয়ান হিয়াকে দেখিয়ে দেয় সে কেমন করে ফোন টা নিচে ফেলায় দিছে,,ঘটনা বুঝে আসতে হিয়ার মাথায় হাত,,হাত থেকে ভাতের বাটি টা থুইয়ে উজান বলে এক চিৎকার দিতেই শ্রাবণ তো ছুটে আসে আসে সাথে সদ্য গোসল করে মাথা মুছতে মুছতে বের হওয়া উজানো এক দৌড়ে ব্যালকুনিতে আসে,,

উজানঃ এরকম বিভৎস চিৎকার কেনো করলে হিয়া,,হিয়ান আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো?

হিয়াঃ সবাই ঠিক আছি কিন্তু তোমার মেয়ের কাজকর্ম ঠিক নেই ,,ওর হাতে ওটা কার ফোন ছিলো?

উজানঃ কার ফোন ছিলো আমার তো না মনে হয়?আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম,কেনো কি হয়েছে?

হিয়াঃ তোমার মেয়ে ঔ ফোনটা নিচে ফেলে দিছে,,

শ্রাবণঃ কি!!এ-ই পরীটা আমার কোথায় ফেলছিস ফোন,,নিচে ফেলায় দিছিস?

হিয়ানঃ নিচে এরকম করে পেলায় দিছি,চামুচ টাও ফেলচি,,

শ্রাবণঃ আমার সাদা পরী টা কার ফোন নিয়ে খেলছিলি এতোক্ষণ,,?এ-ই মেয়ে বল?

হিয়ানঃ পোন পেলায় দিচি,,টিম টিম ফেলায় দিচি

হিয়ানের কথায় উপস্থিত সবাই থ বনে যায়,,কার ফোন নিচে ফেলায় দিছে হিয়ান,প্রশ্নটা সবার মাথায় আসতেই তিনজনে তিনজনের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে,,শ্রাবণ এক ছুটে রুমে এসে তার ফোন খুঁজতে শুরু করে,শ্রাবণের সাথে দৌড় দিয়ে রুমে আসে উজান,আর উজানের পিছে পিছে হিয়া,,রুমে এসে সব খুঁজে একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলে শ্রাবণ যাগ তার ট্যাব টা নিরাপদে চার্জে দেওয়া আছে তাহলে,,এদিকে উজানো ফাইলের পাশে তার ফোন টা দেখতে পেয়ে একটা দম ছাড়ে,,কিন্তু হিয়া!তারমানে হিয়ান নিচে যেই ফোন টা ফেলে দিয়েছে সেটা হিয়ার!!কাহিনী বুঝে আসতে হিয়া হিয়ান বলে এ-ই যে এক চিৎকার দিলো রে ভাই ভয়ে উজান আর শ্রাবণ এক ছুটে নিচে নিমে গেলো,,আর হিয়ান সোনা তার মায়ের চিৎকার শুনে ভয়ে দৌড়ে এসে তার মায়ের কোলে উঠবে বলে হিয়ার জামা টা টুকটুক টানতে শুরু করে,,

উজান আর শ্রাবণ নিচে গিয়ে ফোনটা খুঁজতে থাকলে দারোয়ান মামা এসে বলে উনি একটু আগে ফোন টা নিচ থেকে কুড়িয়ে এনে রেখেছিলো,,উজান আর শ্রাবণ ফোন টা ওনার কাছে থেকে নিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে আসে,,ফোনটার সামন টা পুরো গুঁড়া গুড়া হয়ে গেছে,,এটা আর ঠিক করা যাবে কি না কে জানে,,

উজানঃ আরে হিয়াপাখি রিলাক্স তুমি তো এমনিতেও ফোন টোন এতো ইউস করো না,,আমি না হয় এনে দেবো নতুন একটা,,

হিয়াঃ ইউস করি না বলে কি আমার ফোনের কোনো মূল্য নেই,,ওখানে ঝিনুকের নাম্বার ছিলো,,আমার ক্লাস নোটের ছবি তুলে রাখা ছিলো হিয়ানের ছোট বেলার কতো ছবি রাখা ছিলো,,এ্যা হা

উজানঃ কাম ডাউন কাম ডাউন হিয়া,,দেখি ফোনটা ঠিক করা যায় কি-না,,ঠিক করা গেলে সব তখন ফিরে পা-ওয়া যাবে বিশ্বাস করো,,

হিয়াঃ আপনার মনে হয় চার তালা থেকে পড়ে ঔ ফোন আর ঠিক হবে কখনো,

উজানঃ হবে হবে,,চুপ আর কাঁদে না,,

হিয়াঃ সামনে আপনাদের রিইউনিয়ন এর ফাংশন আমি ভাবলাম ঝিনুককে আমি ফোন করে আসতে বলবো সবাই মিট করবো, এখন এই ফোন ঠিক না হলো আমি কোথায় পাবো ওর নাম্বার,,আমি তো সীমে না রেখে ফোনে ওর নাম্বার সেইভ করে রাখছি,,

উজানঃ আচ্ছা আচ্ছা আমি গিয়ে আবার ঝিনুকের মা’র থেকে ঝিনুকের নাম্বার নিয়ে আসবো,এখন আর কাদিও না তুমি প্লিজ,,

হিয়াঃ সত্যি আনবেন,,

উজানঃ হুম,,আগে দেখো এ-তো দিন বাদে এই রি ইউনিয়ন এ আমার সব ফ্রেন্ডগুলোই আসে কি না,,সবাই নিজের জীবন নিয়ে এতো ব্যস্ত যে,,

হিয়াঃ আপনি একদম ভাববেন না সবাই আসবে,,,

উজানঃ সত্যি আসবে?

হিয়াঃ হুম সবাই সেদিন আমরা এক হবো মিলিয়ে নিয়েন আপনি আমার কথা!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here