মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-59

0
899

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান
Part-59

ভার্সিটির রিইউনিয়ন ফাংশনে আজ প্রায় তিন কি সাড়ে তিন বছর বাদে ক্যাম্পাসের এই মাঠটাতে একে একে জড়ো হচ্ছে সবাই,সবার মনেই আজ এক অন্যরকম অনুভূতি,,তারা জানে না মনে আসা এই অনুভূতি টাকে তারা ঠিক কিভাবে কি ভাষায় বহিঃপ্রকাশ করবে,পুরোনো কতো স্মৃতি এসে ভীড় জমে যাচ্ছে সবার মস্তিষ্ক জুড়ে,,এ এক অন্যরকম ভালোলাগা,,আবার এক অন্যরকম চাপা কষ্ট,,এ-ই টিএসসির চত্বর,এই শিমুল ফুলের গাছ,এই খোলা মাঠ,কতোদিন বাদে রমজান মামার সাথে দেখা,পুরাতন সব টিচারদের সাথে আলাপ,,সব মিলিয়ে আজ ভার্সিটির মিষ্টি বাতাস যেনো রঙীনতার এক অন্য রকম আবেশে দুলছে,,

গিটার হাতে গান ধরেছে সন্ধি,,সন্ধির পাশে বসে আছে উজান,উজানের কাঁধে মাথা রেখে সন্ধির গানের তালে হারিয়ে যাচ্ছে হিয়া,

🍁পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়
ও সেই চোখের দেখা-প্রাণের কথা
সে কি ভোলা যায়

আয় আর একটি বার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়
মোরা সুখের দুখের কথা কব -প্রাণ জুড়াবে তায়🍁

সন্ধির গানের মাঝপথে সাব্বির রুপমকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে গোল হয়ে বসে গেলো তাদের মাঝে,,তুষারের সাথে যাও বা চার পাঁচ মাসে একবার দেখা হতো সাব্বির আর রুপমের সাথে তো আজ প্রায় তিন বছর পর দেখা,,গত পরশুর ফ্লাইটে সাব্বির বার্লিন থেকে ফিরে এসেছে,সে এখনো বিয়ে করে নি,ঝিনুকের দেওয়া ঔ ধাক্কা টার পর সে আর অন্য কোনো মেয়ের প্রতি ঔ হিসাবে মনে কোনো অনুভূতিই আনতে পারে নি,,রুপম আজ অনেকটা বদলে গেছে,,চোখের চশমা টা রুপমকে এক অন্য রুপ দিয়েছে,,তুষারের সাথে সেদিনের ঔ হাতাহাতির পর রুপম কি করে তুষারের সাথে কথা বলবে বুঝতে পারে না,,তুষার এসে নিজে থেকে রুপমের পাশে বসে হাত রাখে রুপমের একটা হাতে,,

🍁মোরা ভোরের বেলা ফুল তুলেছি
দুলেছি দোলায়
বাজিয়ে বাঁশি গান গেয়েছি
বকুলের তলায়

হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়!!

আবার দেখা যদি হল সখা, প্রাণের মাঝে আয়!🍁

গান গাইতে গাইতে সন্ধি এবার অঝোরে কেঁদে ফেলে,,সেই কান্নার রেশ গিয়ে এক এক করে সবার চোখে এসে লাগে,,সবার চোখে আজ পানি,,কারো বেশি কারোবা কম,,তাদের সাথে মিল রেখে হিয়াও হালকা কাঁদছে আজ যদি এদের সবার মাঝে ঝিনুকো ওর পাশে বসে থাকতো কতো ভালো হতো তাই না,,সন্ধি আর গান করতে পারে না গলা ধরে আসে তার,,উজান ওর হাত বাড়িয়ে সন্ধির মাথায় হাত রাখতে সবাই উঠে এসে সন্ধির হাতে হাত রাখে,,সন্ধি তার আরেক হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে সবার হাত গুলো,,তার চোখের জলের প্রত্যেকটা ফোঁটা এসে সেই মুঠোর মধ্যে টুপটুপ পড়তে থাকে,,তারা কেউ কথা বলছে না,তারা সবাই শুধু কাঁদছে কিন্তু এই চুপ করে নীরবতার মাঝেও তারা যেনো একে অপরকে কতো কথা বলে দিচ্ছি,,বলছে এ-ই বাঁধন ছাড়া আর তোরা হারিয়ে যাস না কোথাও,,সখা তুই এখানেই থেকে যা,,এখানেই পৃথিবীর যাবতীয় সব শান্তি!

একটা পর্যায় সন্ধি কান্না থামিয়ে মুখে একটা শান্তির হাসি টানে,,সবাই নিজের চোখ টা মুছে নিয়ে নিজ নিজ জায়গায় বসে যায়,,কেউ কথা বলছে না একটু এ-ই নীরবতা টা উপভোগ করতে চাইছে,তাদের কান্নায় ভারি হয়ে যাওয়া বাতাস টা আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে,,সবার নীরবতা কাটিয়ে উজান সাব্বিরের পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয়,,

উজানঃ মামা তুই তো বার্লিনে থাকি এদকম পুরো জার্মিনিদের মতো দেখতে হইছোস,,তোকে দেখে কেমন এদেশে থাকা ফরেনার গুলোর মতো ফিল হচ্ছে আমার,,

সাব্বিরঃ যা তো ফাজলামো করিস না,,নিজে তো একটুও বদলাস নি,,(উজানের হাতের বাহু গুলো ধরে),,আগের মতোই বডি আর সিক্স প্যাক আছে দেখছি তা এই লেডি কিলার লুকেই ভার্সিটিতে মেয়েদের ক্লাস নেওয়া হয় তাই না,,এ-ই হিয়া তুমি ওকে কিছু বলো না কেনো হু,,

হিয়াঃ কি আর বলবো ভাইয়া,,যতোই ঔ হিরো হিরো গেট আপ নিয়ে থাকুক ঘুরেফিরে তো ঔ আমার কাছেই আসতে হবে ওনাকে,,

উজানঃ ঔখানে তো আঁটকে গেছি ম্যাডাম,,তা রুপম খুব ভালো ছিলি না আমাদের ছাড়া,,সাব্বিরের সাথে যোগাযোগ করা যায় আর আমাদের সাথে করতে তোর মনে লাগে তাই না,,

রুপমঃ তোদেরকে ছাড়া থাকতে কতোটা কষ্ট হয়েছে সে আমি ভাষায় বলে বোঝাতে পারবো না ভাই,,

সন্ধিঃ আন্টি কেমন আছে এখন?সাব্বির বললো সেদিন ওনাকে রিং পড়ানো হয়েছে সুস্থ আছে এখন উনি?

রুপমঃ হুম আছে ভালো,,সবাই এখন ভালো আছে,,বড় বোনটার বিয়ে দিয়েছি কিছুদিন আগে তার বাচ্চা হলো,,ছোট ভাই টা এখন রোকেয়াতে সিএসসি নিয়ে পড়াশোনা করছে ফাস্ট ইয়ার,,এ-ই তো চলে যাচ্ছে সময়,,

তুষারঃ তা মামা,,তুমি আর সাব্বির বিয়ে করছো কবে শুনি,,কতোদিন আর এরকম ব্যাচেলার থাকবা,

রুপমঃ এ-তো কিছুর মাঝে এ-ই বিয়ের চিন্তা মাথায় আসেনি ভাই,,তোরা একটা মেয়ে খুঁজে দে না,

সাব্বিরঃ আমার মেজো বোন টাকে বিয়ে কর তা,,ছেলেও অবশ্য খুঁজছি তার জন্য,,

রুপমঃ না ভাই আমার মতো মানুষ তোমার বোনের জন্য কোনো দিক দিয়ে পারফেক্ট না,,

সাব্বির রাগ হ’য়ে রুপমকে ইচ্ছে মতো মার বসিয়ে দেয়,,শুরু হয় আবার সবার মারামারি কিলাকিলি,,হঠাৎই সবার এই গল্পের মাঝে কেউ একজন পেছন থেকে এসে হিয়ার চোখে হাত দিয়ে হিয়ার চোখ ঢেকে ধরে,,হিয়া ওর দু হাত রাখে ওর চোখে রাখা হাতের উপর,,কে এটা!

সন্ধিঃ বলো তো হিয়া এটা কে?

উজানঃ এটা যদি না বলতে পারো হিয়াপাখি মান সম্মান আজ সব আমার মাটিতে মিশে যাবে,,প্লিজজ বলো,,

হিয়াঃ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না এটা কে___কে____ঝিনুক!!

হিয়া মুখ দিয়ে ঝিনুকের নাম টা উচ্চারণ করতেই সবাই হাত তালি দিয়ে চিৎকার করে উঠে,,ঝিনুক হাত সারিয়ে দিতেই হিয়া দাঁড়িয়ে গিয়ে পেছনে ঘুরে,আর ঝিনুকের চোখে চোখ পড়তেই হিয়া পুরো থ হয়ে যায়,,এটা হিয়ার কল্পনারো বাহিরে ছিলো যে ঝিনুক এ-ই সময় এ-ই মুহুর্তে এতোদিন পর ওর সামনে দাঁড়িয়ে যাবে,,হিয়া কি করবে কোনো ভাষা খুঁজে পায় না,,জড়িয়ে ধরবে না তাকে জিজ্ঞেস করবে কেমন আছিস তুই,কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছে না সে,,দুজনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে ফেলে,,হিয়া তো কাঁদে একদম গলা ছেড়ে দিয়ে,,এই ঝিনুককে খুঁজতে সে কি কি না করেছিলো,,ঝিনুকদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার পরো সে কতোবার তার খোঁজ নিতে আবার তার বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলো,,

সন্ধিঃ হ’য়েছে হয়েছে আর কাঁদতে হবে না,,আসো তো বসো দেখি দু’জনে এখন,,

উজানঃ শালিসাহেবা এসেই আমার বউটাকে কাঁদিয়ে দিলে এটা কিন্তু একদম ঠিক কাজ করলে না,,দিস ইস নট ফেয়ার কিন্তু

হিয়া আর ঝিনুক চোখ মুছে সবার সাথে গোল হ’য়ে বসে যায়,,ঝিনুকের দিকে এ-ই মুহুর্তে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাব্বির,,ঝিনুক একবার চোখ দিয়ে সাব্বিরকে দেখে নিয়ে পর মুহুর্তে ওর চোখ টা নামিয়ে নেয়,,তার যেনো সাব্বিরের সামনে চোখে চোখ মেলাতে নিজেকে খুবই অপরাধ বোধ লাগছে,,

ঝিনুকঃ কেঁদেছে না হয় আপনার বউ একটু কি হয়েছে তাতে,,আপনি না-হয় রাতে একটু বেশি করেএএএএ আদর দিয়ে দিবেন!(চোখ টিপে)

হিয়াঃ আ হা,আসতে না আসতে শুরু করলি তুই আবার,,

হিয়া ঝিনুকে রাগ করলেও ঝিনুক আজ কথা শুনে না,মুখ যেনো আজ তার লাগাম ছাড়া হ’য়ে যাচ্ছে,,এতোদিন বাদে সে একটু প্রাণ খুলে কথা বলছে আর হিয়া কি না ওকে বারণ করছে,,হিয়ার বারণ তো সে কচু শুনবে,,

সন্ধিঃ সাব্বির তো আর মনে হয় না বাহিরে যাবি,,দেশে এবার কি করবি ঠিক করেছিস কিছু,,

সাব্বিরঃ বউ খুঁজছি বিয়ে করতে চাই আপাতত,,!!

সাব্বিরের এই কথায় ঝিনুক একটা বড়সড় ভীষম খায়,,

তুষারঃ সাব্বির আর তুষারের জন্য ঘটক নিয়ে আসতে হয় দেখি তাহলে সন্ধি,,

সন্ধিঃ হুম বিয়ের মতো ফরজ কাজ,,আমাদেরই দায়িত্ব নিতে হয় বুঝলে তুষার,,তা ঝিনুক কোথা থেকে ফিরলে মানে তুমি তো কানাডায় ছিলে তোমার হাসবেন্ডের সাথে,,দেশে কবে আসলে,,থাকো কোথায় এখন?

ঝিনুকঃ দেশে অনেক আগেই আসা হয়েছে আপু,,কাউকে জানানো হয়নি যে আমি দেশে আছি,,

সন্ধিঃ ওহ এখানে কি হাসবেন্ড সহ থাকো?

ঝিনুকঃ আপু আসলে আমার বিয়ের ছয়মাসের মাথায় আমার সাথে আমার হাসবেন্ডের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়,,তারপর আমি বেশ কিছু দিন আপুর সাথে আপুর বাড়িতে থেকে দেশে ফিরি,,কিন্তু মন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে আর কারো সাথে পরে,,

হিয়াঃ এটা কি ঝিনুক,,কোথায় অনেক আগে যখন তোর সাথে আমার একবার ফোনে কথা হলো তখন তো তুই একবারো আমাকে বললি না যে তুই,,আর তোর হাসবেন্ডের সাথে ডিভোর্স মানে!এতো জোড় জবরদস্তি করে বিয়ে হবার পর কিসের ডিভোর্স,,

ঝিনুকঃ আসলে আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার অন্য জায়গায় এ্যাফেয়ার ছিলো,,উনি জাস্ট ওনার ফ্যামিলির চোখে আইওয়াশ হিসাবে আমাকে ব্যবহার করেছে,,আর আপুর হাসবেন্ড ছিলো তার নিজের ফুফাতো ভাই তাই আমাকে সেদিন বলা হয়েছিলো যদি আমি বিয়ে টা না করি তাহলে তারা আপুকে সংসার করতে দিবে না,,অনেক কাহিনী অন্য একদিন বলবো___ওসব বাদ দে এখন বল তো তোর মেয়ে কোথায় আমার যে ওকে দেখার জন্য আর তর সইছে না,,,জান বেড়িয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি শ্রাবণকে বল ঝিনুক আপু জলদি হিয়ানকে নিয়ে ডাকছে,,,

হিয়াঃ ওরা আসছেই,,ঔ চিপস খাবে বলে শ্রাবণ ওকে নিয়ে গেলো,,

ঝিনুকঃ ওহ,,সন্ধি আপু আপনার বাবু হয়নি?আপনাদের তো একই সাথে বিয়ে হয়েছিলো,,মানে কিছুদিন পর,,

সন্ধিঃ এটাই তো সমস্যা ঝিনুক,,একই সাথে বিয়ে হবার পরো আমি তোমার ভাইয়াকে এখনো বাবা হবার সুখ দিতে পারিনি,,সবই কপাল,,

তুষারঃ জাস্ট স্টপ সন্ধি,,কতোবার বলেছি এসব কথা আমাদের মাঝে তুলবা না,,

ঝিনুকঃ সরি আপু আমি বুঝতে পারি নি,,

সন্ধিঃ এতে সরির কিছু নেই ঝিনুক,,প্রশ্ন আসবে স্বাভাবিক,,এই বাচ্চা না হওয়া নিয়ে অনেক চাপে আছি বুঝলা আমাদের সমাজ টা তো ভালো না,,

উজানঃ আচ্ছা ওসব কথা বাদ এখন,,যখন সৃষ্টিকর্তা তোকে দিবে না দেখবি তোর কোল ভরিয়ে দিবে কোনটা রেখে কোনটা সামাল দিবি নিজেই কাহিল হয়ে পড়বি তখন,,

রুপমঃ যদি সম্ভব হয় আমার সেদিনের ব্যবহারের জন্য তুই আর তুষার আমাকে ক্ষমা করে দিস,,আমি সেদিন নেশার ঘোরে,,

সন্ধিঃ আমি তো তোকে সেদিনই ক্ষমা করে দিয়েছি রুপম,,আমি তো জানি যে তুই তখন,,বাদ দে,,আমি আর অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না,,এখন আমরা সবাই এক হয়েছি আমি চাই সবাই সব ভুলে আমরা এক থাকি,,

সন্ধি আর রুপমের কথার মাঝে হঠাৎ সাব্বির ঝিনুককে বলে উঠে সে ঝিনুককে বিয়ে করতে চায় আজকে এক্ষুনি,ঝিনুক কি রাজি!সাব্বিরের কথায় সবাই চুপ হয়ে ড্যাপ ড্যাপ করে একবার সাব্বিরকে দেখতে থাকো তো কখনো ঝিনুককে,,কেস টা কি হলো,,এদিকে সাব্বিরের প্রপোজাল শুনে ঝিনুকের মাথা নষ্ট এ-ই ছেলে বলে কি,এতোদিন বাদে দেখায় কেউ এরকম কিছু প্রথমেই বলে নাকি,,

সাব্বিরঃ এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই আমাকে বিয়ে করতে তাই না ঝিনুক,এখন তো তুমি স্বাধীন,,প্লিজ চুপ করে থেকো না ঝিনুক আমার কথার উওর দেও,,

ঝিনুকঃ না ভাইয়া আমি আপনার জন্য পারফেক্ট না,আপনি আমার থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করেন!

সাব্বিরঃ বেটার কাউকে বিয়ে করার হলে আমি এতোদিনই করতে পারতাম ঝিনুক,,তুমি যাবার পর কোনো মেয়ের প্রতি আমার সেই অনুভূতি কখনো জন্মায়নি,,

ঝিনুকঃ না ভাইয়া তারপরো,,আপনি একটা ফ্রেশ মানুষকে পাবার যোগ্যতা রাখেন আমার মতো ডিভোর্সি একজনকে,,আমাকে ক্ষমা করবেন,,

হিয়াঃ হেই মেয়ে চুপ কর না,,সাব্বির ভাইয়া যখন নিজে থেকে বলছে হ্যা বলে দে না,কবে কি হয়েছে বাদ দে,,এখন তো আর কোনো সমস্যা নেই,,

ঝিনুকঃ না হিয়া,,আমি উনাকে একবার ঠকিয়েছি এখন আবার আমি কি করে,,

সন্ধিঃ আরে এ-তো ফর্মালিটি করো না তো,,হ্যা বলে দেও না,,ইসস এখন তাহলে শুধু রুপমের জন্য মেয়ে খুঁজলেই হ’য়ে যাবে,,ঝিনুক ফাস্ট ফাস্ট বলো,,

তুষারঃ আরে হ্যা বলে দেও না,,একটা বিয়া খাই,,খুব বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ইচ্ছে করছে,,

হিয়াঃ তুই বলবি কি না আমি তোর হয়ে বলে দেবো,,এ-ই উজান আপনি ওকে একটু হ্যা বলতে বলুন না,,

সবাই ঝিনুককে এমন চিপে ধরে জোড়াজুড়ি করতে শুরু করে যে শেষে গিয়ে বাধ্য হয়ে ঝিনুক হ্যা বলে দিয়ে লজ্জায় হিয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়,,সবাই আবার হাত তালি দিয়ে সাব্বিরকে কোলে তুলে নিয়ে চিৎকার শুরু করে,,সবার হাসিমজার মাঝে শ্রাবণ হিয়ানকে নিয়ে এসে ধপ করে সবার মাঝে বসে যায়,,ভাগ্যিস এ-ই মুহুর্তে শ্রাবণ হিয়ানকে নিয়ে আসলো নয়তো সাব্বির আর ঝিনুককে লজ্জা দিয়ে দিয়ে তো সবাই একবারে শেষ করে দিচ্ছিলো,,ঝিনুক ঘপ করে শ্রাবণের থেকে হিয়ান কে কোলে নিয়ে হিয়ানের পুরো মুখে চুমু এঁকে দিতে থাকলো,,এটা তার বেস্টির মেয়ে ভেবেই যেনো কতো আনন্দ হচ্ছে তার,,

শ্রাবণঃ বুবু তোর মেয়ের মতো শেয়ানা মেয়ে আমি একটাও দেখি নি,,যেই চিপস কেনা হয়ে গেলো ওমনি বলে মা যাবো,,দাঁড়া তুই আর যদি আসতে চেয়েছিস না আমার কোলে,,নেবোই না তোকে,,

হিয়ানঃ তুমি ভালো ভালো তো,মামাটা ভালো তো,মামা নিবে কোলে না বাবা,,

সাব্বির এসে শ্রাবণের কাঁধে হাত রেখে,,

সাব্বিরঃ ছেলে তো আমাদের আরেকটা উজান তৈরি হচ্ছে দেখছি,,একদম বাপকা বেটা,,সেই একই পার্সোনালিটি,,

রুপমঃ সত্যি আজকে যে এ-তো ভালো লাগতিছে না সব কিছু এটা ভাষায় বলে তোদের বোঝাতে পারবো না,,ঝিনুক দেও তো নেই উজানের এর প্রিন্সেসটাকে একটু কোলে,,

রুপম হিয়ানকে কোলে নেবার পর সবাই এক এক করে হিয়ানকে কোলে নিতে শুরু করে,,এতো মামা খালা ফুফু পেয়ে হিয়ান তো পুরো নাজেহাল,,কাকে রেখে কার কোলে উঠবে সে এখন,,কিন্তু মেয়ের মধ্যে কোনো বিরক্তই নেই দেখছি,,তাকে নিয়ে যেই কাড়াকাড়ি হচ্ছে এতে যেনো তার খুবই আনন্দ হচ্ছে,,

!
!
সব রেসারেসি,মান অভিমান,অভিযোগ সকল গ্লানি,অন্ধকারের আবরণ সব মিটিয়ে একটা নতুন পথের শুরু করলো সবাই,,সেই নতুন পথের শুরুটা হলো ঠিক সাব্বির আর ঝিনুকের বিয়ে দিয়ে সেই বিয়ের মিষ্টি মুখে নিয়ে,,এখন আর কারোরই আকাশ মেঘলা নেই শুধু সন্ধির কোল জুড়ে একটা বাচ্চা চলে আসলেই সব খাপেখাপ হ’য়ে যাবে,,

দেখতে দেখতে সময় গুলো পেড়িয়ে হিয়ার মাস্টার্স টাও শেষ হ’য়ে আসলো,,সবাই এখন সবার মতো যোগাযোগ রাখছে কিন্তু এ-ই দূরে দূরে থাকা টা কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না কারো,,তাই উজানরা সব বন্ধু মিলে ঠিক করে তারা এখন রংপুরে সবাই শিফট করবে,,রুপম যেহেতু রংপুর ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারবে না আর উজানের ভিটেমাটির ঠিকানাও রংপুর তাই সবাই রংপুর কে-ই শেষ ঠিকানা হিসাবে মেনে নেয়,,উজান ওর ভার্সিটিতে আরো একবার রেজিকনেশন লেটার পাঠিয়ে দেয়,,সে জানে প্রথমবার মকবুল স্যারের জন্য ওর রেজিকনেশন টা উইথড্র করা গেলেও দ্বিতীয়বার সেটা আর করা কখনোই সম্ভব না,,সাব্বির যেহেতু ফরেন থেকে ব্যাক করে বিজনেসে ইনভেস্ট করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে তাই উজান বলে যা বিজনেস করার সেটা রংপুর গিয়েই স্টার্ট কর,,আর সাব্বিরকে বিয়ে করে ঝিনুকো তাই তার বেস্টির সাথে এক ছাঁদের নিচে থাকতে সাব্বিরের হ্যা তে রাজি হয়ে যায়,এদিকে শুধু থাকে তুষার আর সন্ধি,,সন্ধির বাচ্চা না হওয়া নিয়ে ওর শ্বশুর বাড়ির সাথে তার সম্পর্ক ঠিক একটা ভালো যায় না,,তাই তার দূরে থাকা কাছে থাকা কারোই তেমন একটা ম্যাটার করে না,,কিন্তু তুষারের রংপুরে জব না হওয়া অবধি তারা তো আর শিফট করতে পারে না,,তাই ঠিক হয় সবাই গিয়ে রংপুরে শিফট হোক আর এদিকে তুষারের রংপুরে কোনো ভালো জব হয়ে গেলে ওরাও এসে সবার সাথে যোগ দিবে,,
!
!

আজ সব গুছিয়ে পুরোপুরি ঢাকা ছাড়ার উদ্দেশ্য রওনা দিচ্ছে হিয়ারা,,হিয়ার এ-ই বাড়ি টা ছাড়তে কষ্ট হলেও সব চাইতে বেশি কষ্ট আজ হচ্ছে শ্রাবণের,,যবে থেকে সে কিছু বুঝতে শিখেছি এ-ই বাড়িটাকেই সে তার নিজের বাড়ি হিসাবে চিনতে শিখেছে, এ-ই কোলোনিতে থাকা মানুষ গুলোকে নিজের বলে জানতে শিখেছে,,সে তো ছোট থেকেই ফয়সালের সাথে খেলতো তার বড় হওয়ার পুরোটাই তো ফয়সালের সাথে,,কেমন জানি একটা চাপা অভিমান কাজ করছে তার,,বিশেষ করে ছোট্ট ফারিহাকে রেখে যেতে যেনো তার একটু বেশিই মন টা খারাপ করছে,,ফারিহা শ্রাবণের থেকে তিন বছরের ছোট শ্রাবণ এখন নাইনে উঠেছে আর ফারিহা ক্লাস সিক্সে,,দুজনে দুজনকে একদম সহ্য করতে পারে না ছোটতে তো সারাক্ষণ মারামারি লেগেই থাকতো তাদের,,বিশেষ করে ফারিহা তো ওর মায়ের যতোটা না মা’র খেয়েছে জীবনে তার চাইতে বেশি বোধহয় শ্রাবণের হাতের ঠাস ঠাস থাপ্পড় খেয়ে মানুষ হয়েছে,,তাই আজ সব ছেড়ে যেতে বেশি কষ্ট হচ্ছে শ্রাবণের,,

হিয়াঃ অনেক মিস করবো আপনাদের আন্টি,,পারলে আঙ্কেলকে বলে রংপুরে ট্রান্সফারের ব্যাবস্থা টা একটু তাড়াতাড়ি করে নিবেন,,একসাথে থাকবো না হয় তখন,,

আন্টিঃ হ্যা ওনার অফিস থেকে তো বলছেই বদলির কথা,,রংপুরে হলে ভালোই হয় আমার বাবা-র বাসাও ওখানে,,

হিয়াঃ রংপুরের মতো শান্তি কোথাও নেই আন্টি,,আমার অধিকাংশ সময় ঢাকাতে কাটলেও রংপুরের ঔ নিরিবিলি পরিবেশ টা সত্যি অনেক মিস করি

আন্টিঃ আর কোথায় নিরিবিলি এখন,,তোমার আঙ্কেলের থেকে যা শুনলাম রংপুর না-কি এখন পুরোই চেঞ্জ,,ঢাকার মতো,,উজানের নিউ প্রজেক্টেতো শুনলাম উনিও ইনভেস্ট করবে,,যদি কখনো গিয়ে সত্যি সত্যি থাকতে হয়,,আর বদলি হবার চান্সই অনেক বেশি,,

হিয়াঃ হুম আন্টি তা ঠিক,, আসছি আন্টি আজ তাহলে, হিয়ানের বাবা বারবার ফোন দিচ্ছে,,দোয়া রাখবেন আর যোগাযোগ তো হবেই,,

আন্টিঃ হুম,,ভালো থেকো ঢাকায় কখনো আসা হলে বাড়িতে কিন্তু আসতে একদমই ভুলো না,,

হিয়াঃ না আন্টি আসবো অবশ্যই,,আমি নামি এখন,,শ্রাবণকে পাঠিয়ে দিয়েন,,বলেন যে সবাই নিচে নেমে গিয়েছে,,

আন্টিঃ ঠিক আছে সবাধানে এসো,,ঔ তো বন্ধুর থেকে বিদায় নিচ্ছে,,দিচ্ছি আমি ওকে পাঠিয়ে,,

হিয়া ফয়সালের মা’কে সালাম দিয়ে নিচে আসে,,ফয়সালের মা গিয়ে শ্রাবণকে বলে তার বুবু তাকে নিচে ডাকছে,,শ্রাবণ ফয়সালকে বিদায় দেবার সময় বারবার শুধু ফারিহাকে খুঁজ ছিলো কিন্তু ফারিহা কি আজ বাড়িতে নেই,,শ্রাবণ হতাশ মুখে ফয়সালকে টাটা বলে সিঁড়ির নিচে নামতেই দেখে ফারিহা দৌড়ে উপরে তার কাছেই আসছে,,

শ্রাবণঃ এই হেবলি ওভাবে দৌড় দিচ্ছিস কোথায়?

ফারিহাঃ কোথাও না শ্রাবণ ভাইয়া,,হিয়া আপু বললো তোমরা নাকি সত্যি সত্যি আজ চলে যাচ্ছো

শ্রাবণঃ হুম একটা বার তো আমাকে দেখতেও আসলি না,,খুব খুশি লাগছে তো তোর সব জানি আমি,,

ফারিহাঃ ও মা আমি তো তোমার জন্যেই খেলা ছেড়ে দৌড়ে আসলাম,,

শ্রাবণঃ হুমম,,এ-ই নে এতো গুলো চকলেট তোর জন্য,,একবারে বেশি খাবি না,প্রত্যেকদিন একটা একটা করে খাবি আর খাবার সময় আমাকে মনে করবি,,

ফারিহাঃ এগুলো শেষ হয়ে গেলে?

শ্রাবণঃ আমি ফয়সালকে দিয়ে আরো কিনে দেবো,,আর শোন একদম ঔ পাশের বিল্ডিং এর আবীরের সাথে খেলবি না,,ও কিন্তু খুব খারাপ

ফারিহাঃ মোটেও আবীর ভাইয়া খারাপ না আবীর ভাইয়া আমাকে কত্তো আদর করে,,আর তুমি তো শুধু আমাকে মারো,,এখন যাও দেখবো ওখানে কাকে গিয়ে এরকম ঠাস ঠাস মারো তুমি প্রত্যেকদিন,,

শ্রাবণঃ(রেগে গিয়ে) তুই তোর বয়সের থেকেও খুব কথা বলিস ফারিহা,,আমি আসলাম আর ফয়সালের সাথে যখন ভিডিও কলে কথা বলবো তুইও কিন্তু আসবি তখন ঠিক আছে,,

ফারিহাঃ ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ আমাকে বেশি বেশি করে মিস করবি,,

ফারিহাঃ ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি

ফারিহাঃ ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ আমাকে কিছু বলবি না,,

ফারিহাঃ কি বলবো তোমাকে আমি?

শ্রাবণঃ ধুর হেবলি একটা,,শুধু তো ঝগড়া করতে পারিস অন্য কিছু কি বুঝবি তুই,,আমি আসলাম,,

এই বলে শ্রাবণ ফারিহার একটা ঝুঁটি টান মেরে খুলে দিয়ে এক ছুটে নিচে চলে এসে,,ফারিহা তো এ-তো সতো বুঝে না শ্রাবণের এই কৈশোর কালে মনের মধ্যে জেগে বসা কিছু অনুভূতির কথা,,ফারিহা রাগ হয়ে ওর রাবার ব্যান্ডটা হাতে নিয়ে নিজ মনে কেঁদে দিয়ে বলে যা-ও তুমি শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে আর জ্বালাতে আসবা না,হু

হিয়াঃ এতো গল্প এদের দুই বন্ধুর কিসের যে কে জানে,,এ-ই যে আর আপনি,, হিয়ানের খাবারের পট টা যে তখন বললাম বাহিরে বের করতে করেছেন?

উজানঃ সব করেছি হিয়ানের মা,,তোমার ভাই নামলেই এখন যাওয়া যাবে,,তাই না বুড়ি

হিয়ানঃ শ্রাবণ টা আসচে না কেনো এখনো,,

হিয়াঃ শাবণ মামা হয় না,,নাম ধরে ডাকছো কেনো আবার তুমি?

হিয়ানঃ শাবন শাবন শাবন,ঔ শাবন

হিয়াঃ আবার,,!!

উজানঃ চোখ রাঙাছো কেনো ওকে,,ভয় পাবে না আমার মা টা,,

হিয়াঃ এ-ই আপনি লায় দিয়ে কিন্তু আপনার মেয়েকে,,,ভালোই লাগে না আমার কেউ কোনো কথা শুনে না আমার,,

উজানঃ তুমি এতো রাগ কেনো করছো,,তোমার কি মন খারাপ লাগছে?

হিয়াঃ খারাপ লাগবে না বলছেন,,এ-ই বাড়িটার সাথে কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলুন তো,,

উজানঃ হুম,,মন খারাপ করো না,রংপুর চলো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য!!

হিয়াঃ আবার সারপ্রাইজ!!

_____________________❤️🖤_____________________

✅কেনো বারবার জিজ্ঞেস করো ২১/১৮ কবে শুরু করবো?কতোবার এই একই উওর দেই বলো তো বোনুরা😥

আমার ২৫তারিখ হতে ২তারিখ টেস্ট পরীক্ষা,,তাই আমি সমানের মাসের ১তারিখ হতে ২১/১৮শুরু করবো ঠিক আছে!!❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here