মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-53 ( ১৮+)

0
950

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-53 ( ১৮+)

কয়েকমাস পরঃ

জীবনকে নিজের নিয়মে চলতে দিয়ে হিয়া উজানো নিজেদের মতো সবটা মেনে নিতে চেষ্টা করে, ভালো কিছুর সম্ভাবনায় নিজেদের মতো নিজেদের পথে হাঁটতে শুরু করে,,অপেক্ষা শুধু একটাই এ-ই মেঘলা আকাশে কোনো এক রঙীন রামধনুর,,

বাহিরে আজ দুপুর থেকেই শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি,,সকালে আকাশের যা পরিপাটি অবস্থা ছিলো সেই আকাশ দেখে বোঝার উপায় ছিলো না এ-ই মাঝ দুপুরে এরকম আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামতে পারে,,শ্রাবণকে স্কুল থেকে নিতে আসে উজান,,আর বাড়ি আসার পথে এবার দু’জনের মনে একটাই ইচ্ছে জন্মে সেটা হলো তারা আজ দু-জনে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে,,যেই ভাবা সেই কাজ,,বাড়িতে এসে গ্যারেন্জের কাছে দারোয়ান কাকুর হাতে সব ব্যাগ পএর দিয়ে দু’জনে মাঠে নেমে যায়,,মাঠের এক কানিতে ছিলো একটা পানির বোতল সেই বোতাল দিয়েই শুরু হয় দু’জনের ফুটবল খেলার আসর,,কলোনির নিচে ভিজতে আসা অন্য ছেলে থেকে শুরু করে বাচ্চা গুলোও এসে যোগ দেয় তাদের সাথে,,আর এ-ই খেলা কি সেই খেলা,,কাঁদায় পানিতে একাকার হয়ে মাটিতে লুটোপুটি খেতে খেতে যা খেলা জমে উঠছে এরপর বাড়িতে গিয়ে হিয়ার সামনে তাড়া কি করে দাঁড়াবে এটাই হচ্ছে এখন বড় প্রশ্ন,,

কলিংবেলের আওয়াজে হিয়া দরজা খুলে,,খুলে এদিকে এসে ফিরে হিয়া নিজের মনে বকবক করতে থাকে, তার খেয়াল হয় না উজান আর শ্রাবণ দু’জনে ভিজে একবারে চৌচির হ’য়ে আছে,,মুখে হাসি টেনে উজান আর শ্রাবণ গুটিগুটি পায়ে ওদের রুমে এসে দাঁড়াতেই হিয়া দরজা লাগিয়ে রুমে আসে,,কি একটা কথা বলতে হিয়ার চোখ আঁটকে যায় ওদের দু’জনের উপর,,,এ-ই কি অবস্থা,,তাদের কাঁদা পায়ের পানি পায়ের চক্করে হিয়ার পুরো ঘর নিমিষে পানি পানি হ’য়ে যায়,,শ্রাবণের স্কুলের প্যান্ট থেকে পানি ঝরে ফ্লোরে টুপটুপ করে পড়ছে তো কখনো উজানের ফ্লোড করা হাতে থাকে ঝরছে সেই পানির টপটপ বিন্দু,,

হিয়াঃ শ্রাবণ এসব কি!!!___এভাবে ভিজে আসলি কোথা থেকে,,,উজান!!

হিয়ার প্রশ্নে উজান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে যে তারা এতোক্ষণ নিচে বৃষ্টিতে ঠিক কি করছিলো,,শুনে তো হিয়ার মাথায় এখন পুরো হাত,,

হিয়াঃ কি অবস্থা আমার বাড়িঘরেরররর,,,,এই এই এক্ষুনি ওয়াশরুমে যাও যাও বলছি___আমি একটু আগে ঘরটা মুছে গেলাম আর তোমরা এখন,,কাঁদা পায়ে ইসস,,

হিয়ার বকুনি খেয়ে শ্রাবণ উজান দু’জনেই ভেজা গায়ে কাঁদা পায়ে চট করে ঢুকে পড়লো ওয়াশরুমে,,দুজনের মনে আজ অনেক আনন্দ,,কতোদিন পর তারা এরকম বৃষ্টিতে ভিজলো ভাবা যায়,,

ওয়াশরুমে ঢুকে জামা কাপড় সব খুলে দু’জনে বাথটবে ঢুকলো,,যদিও উজানের হাফ প্যান্টা পড়া আছে কিন্তু শ্রাবণ পুরো খালি গা হয়ে বাথটবে ঢুকে পানি নিয়ে শুরু করলো তার লাফালাফি ঝাঁপাঝাপি,,শ্রাবণের সাথে তাল মেলালো উজান নিজেও,,দু’জনে এরকম করে গোসল করতে শুরু করলো যে জীবনেও বোধহয় তারা বাথটবে ঢুকে গোসল করেনি,,এদিকে হিয়া ঘর গুলো আবার মুছে নিচ্ছে আর শ্রাবণকে হাজারটা গালি ছুঁড়ে দিচ্ছে এ-ই ভেজা স্কুলের ড্রেস কখন সে ধুবে আর কখন সেটা শুকোবে,,গালি খাবার তালিকা থেকেবাদ যাচ্ছে না উজান নিজের নামটাও,,

সব পরিস্কার করে নিয়ে ওড়না টা কোমড়ে ভালো করে গুজলো হিয়া,উজানের জন্য সিম্পল প্যান্ট আর একটা কালো রঙের টি-শার্ট আর শ্রাবণের জন্য একটা হাফপ্যান্ট আর একটা লাল রঙের মিকিমাউস ওয়ালা গেঞ্জি আলমারি থেকে বের করে বাথরুমে ঢুকলো,,আর ঢুকেই উজান আর শ্রাবণের বাথটবের তান্ডব দেখে হিয়ার মাথা যেনো এবার পুরোই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে,,

হিয়াঃ এসব আপনারা দুজন কি করছেন,,শ্রাবণণণ___উঠো বলছি হয়নি গোসল তোমার,,এসব ফেনা তুলে আমার বাথরুম টাকে আপনারা,,এ-ই এ-ই উঠ বলছি,,অনেক হয়েছে আর গোসল করতে হবে না___উঠ বলছি

হিয়া শ্রাবণকে উঠাবে কি উল্টে উজান হিয়ার হাত টান মেরে হিয়াকে দুম করে বাথটবটার কানিতে বসিয়ে দেয়,,আর উজানের এ-ই কাজে হিয়ার বিগড়ে যাওয়া মেজাজ টা যেনো এবার আরো বিগড়ে বাথটবের পানির সাথে গড়াগড়ি খেতে শুরু করে,,

হিয়াঃ এটা কি করলেননন আপনি,,আমার জামা টা ভিজে গেলো নাআ,,অসহ্য একবারে,,এরপর যদি দেখি জ্বর-টর কিছু বেঁধে বসিয়ে আছেন তাহলে আমি কিন্তু এবার সব ছুঁড়ে দিয়ে এ-ই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে,,এ-ই বলে রাখলাম,,

উজানঃ তুমি এ-তো রেগে যাচ্ছো কেনো হ্যা,কতোদিন বাদে একটু বৃষ্টিটাতে ভিজলাম,মানে আমাদের আনন্দ তো তোমার সহ্য হয় না,,

হিয়াঃ না হয় না,,এ-ই আনন্দ করার চক্করে শরীর টা খারাপ হয়ে আসুক খুব ভালো হবে তখন,,,দেখি তুমি উঠো তো,,বাথটবে তো ফেনা তুলে ভরিয়ে দিছো কিন্তু কানের কাছে যে এ-ই নোংরা কাঁদামাটি গুলো লেগে আছে ওগুলো কি আমি তুলে দেবো না তোমার ভালো ভাইয়া,,(এক নিশ্বাসে)

শ্রাবণঃ কোথায় ময়লা,এ-ই তো আমি গা ঘষছি তো জোরে জোরে,,

হিয়াঃ দেখি এভাবে হবে না,এদিকে উঠে আসো তো,,কি অবস্থা,,ময়লা কেনো এতো মাথায়,,মাথা দিয়ে ফুটবল খেলছিস না-কি তুই,,আর যদি আমি দেখছি না বৃষ্টিতে এভাবে,,দাঁড়া হও সোজা হয়ে,,

হিয়া শ্রাবণকে সোজা করে দাঁড়া করে দিয়ে নিজে বাথটবে পা ডুবে দিয়ে জুড়াতে সাবান মাখতে শুরু করে,,এক হাতে শ্রাবণকে চিপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ডোলে ডোলে শ্রাবণের গা পরিষ্কার করে দিতে থাকে,এদিকে শ্রাবণ যা নড়াচড়া শুরু করছে আর উজানের সাথে পানি ছুড়াছুড়ি করছে তাতে হিয়ার অর্ধেক গা ভিজে শেষ,,

হিয়াঃ আহ,আমার গায়ে পানি ছিটাচ্ছো কিসের জন্য,,আর আপনি দেখতে পারছেন না আমি ওকে গোসল করিয়ে দিচ্ছি,এরকম কেউ করে,,

উজানঃ আমাকেও গোসল করে দেও না হিয়াপাখি,,

হিয়াঃ কেনো আপনি কি শ্রাবণের মতো ছোট বাচ্চা যে আপনাকে এভাবে হাত পা ধরে ধরে গোসল করিয়ে দিতে হবে,,

উজানঃ ছোট বাচ্চা না,,তবে ইউ নো,,ওয়াইফের সেবা পেতে কোন হাসবেন্ডের না ভালো লাগে,,

হিয়াঃ আআআচ্ছাআআআ দি–চ্ছি সেবা,,

বলেই হিয়া এক মগ পানি ছুঁড়ে দেয় উজানের গায়ে,,আর পানি ছুঁড়ে দিতেই শ্রাবণের কি হাসি,,

উজানঃ (চোখ টিপে)এটা কিন্তু ঠিক হলো না মিসেস শাহরিয়ার,,আমি ধরলে কিন্তু পুরোটা ভিজিয়ে দেবো,,আই মিন পানি দিয়ে আরকি,,

উজানের কথায় হিয়ার চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে,,শ্রাবণ না বুঝলেও হিয়া তো বুঝে উজান কি বলতে চাইছে তাও আবার তার ঠোঁটের দিকে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,হিয়া কপাল কুঁচকে উজানের দিকে চোখ পাকালে উজান একটা ডেভিল টাইপ হাসি দিয়ে হিয়ার মুখে এক গাদা পানি ছুঁড়ে দেয়,,হিয়া কপট রেগে গিয়েও নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করে শ্রাবণকে গোসল করাতে শুরু করে,,শ্রাবণের গা পরিষ্কার করে এখন হিয়া শ্রাবণের মাথার ময়লা শ্যাম্পু দিয়ে তুলতে ব্যস্ত,,

হিয়াঃ আহা এরকম লাফালাফি করছো কেনো,চোখে শ্যাম্পু ঢুকে গেলে জ্বলবে না,তখন তো কান্না করবা,

উজানঃ আজকে লাঞ্চ এ কি পাচ্ছি হিয়াপাখি,,ওয়েদার টা তো পুরো খিচুড়ি খাবার ওয়েদার তাই না বলো,,

হিয়াঃ খিচুড়ি আর তার সাথে আপনার প্রিয় রোস্ট করা আছে,,দয়া করে আমার গোসল হতে হতে বেগুন গুলো ভেজে নিবেন,,একসাথে খাবো,খুশি

উজানঃ 😍তুমি সত্যি সত্যি খিচুড়ি,,তোর বুবু টা এ-তো ভালো কেনো শ্রাবণ,,ইসস

হিয়াঃ আহা ছাড়ুন তো,সবসময় ইআরকি ভালো লাগে না,,তা এতোক্ষণে কি আপনার গোসল হয়নি,,উঠুন আপনি,,

উজানঃ উঠবো মানে,,তুমি আমার মাথাটা শ্যাম্পু করে দিবে জন্য তো আমি বসে আছি,,আর তুমি বলছো উঠে যেতে,,

হিয়াঃ আপনাকে সত্যি না আমার কিছু বলার নেই,,,শ্রাবণ দেখি,,উঠো মাথা হয়েছে ধোয়া,,

শ্রাবণ বাথটব থেকে উঠে আসলে হিয়া আরো দু মগ পানি শ্রাবণের গায়ে ঢেলে দেয়,বাথটবে গোসল করলে না-কি তার ঠিক গোসল করা গোসল করা ফিল হয় না,,হ্যাঙ্গার হতে তোয়ালে নিয়ে সে মুছে দিতে থাকে শ্রাবণের গা থেকে শুরু করে পুরো মাথা,,শ্রাবণকে এ-ই সময় খুবই খুবই কিউট লাগছে,,ন্যাংটু হয়ে চুল গুলো মোছার ফোলে এলোমেলো হয়ে আছে,,তারউপর গোলাপি ঠোঁট টা হিয়ার বেশি ডোলাডলির চক্করে আরো লাল লাল হয়ে আছে,,

হিয়াঃ এখন গিয়ে সোজা বই নিয়ে বসবা,,তারপর খাওয়া দাওয়া করে একটু ঘুম,,তারপর খেলতে যাবা সন্ধ্যায় এসে আবার পড়বা ঠিক আছে,,

শ্রাবণঃ যদি না পড়তে বসি তাহইলে,,

হিয়াঃ তাহইলেএএএএ এ-ই পুতুপাখি টা তোমার আমি কাঁচি দিয়ে ঘ্যাচাং করে কেটে দেবো,,খুশি

হিয়ার কথায় শ্রাবণ ভয় পেয়ে চোখ বড় বড় করে কেঁপে ওঠে ,,দুহাতে তার পুতুপাখি টাকে ঢেকে একটা ঢোক গিলে,,শ্রাবণের ভয় পাওয়া দেখে উজান হিয়া দু’জনেই ফিঁক করে হেঁসে দেয়,,

শ্রাবণঃ তুই খুব খারাপ বুবু,,আমার রক্ত বের হবে না,আমি ব্যাথা পাবো না,,

হিয়া শ্রাবণকে কোলে তুলে নেয়,হ্যাঙ্গার থেকে শ্রাবণের গেঞ্জি আর প্যান্টা টা তুলে রুমে আসে,,

হিয়াঃ আমি আমার বাচ্চাটকে কি ব্যাথা দিতে পারি ,,দেখি আজকে আমার বাচ্চা টা কি গেঞ্জি পড়বে,,মিকি মাউস দেওয়া গেঞ্জি,,ইয়েএএ

শ্রাবণঃ বাইয়া বাইয়া ভালো ভাইয়া আজকে কি পড়বে,,তুই তুই ভালো ভাইয়াকে বল তাহইলে আমার মতো লাল পড়তে,,ম্যাচিং ম্যাচিং

হিয়াঃ ওরে আমার সোনা রে,,তার ভালো ভাইয়ার সাথে তার ম্যাচিং ম্যাচিং ড্রেস পড়তে এতো ভালো লাগে যে কেনো,,

শ্রাবণঃ সেইম সেইম,,আমি দেখছি তো ফয়সাল ওর বাবার সাথে ম্যাচিং করে জামা পড়ে বুবু জানিস,,আর ভালো ভাইয়া তো আমার বাবা না বল,,ওজন্য তো আমি ভালো বাইয়াকে বলেছি এখন থেকে আমরা সেইম সেইম রঙের জামা পড়বো,,

হিয়াঃ বাহ বা খুব ভালো,,দেখি এখন

হিয়া শ্রাবণকে জামা আর প্যান্ট পড়ে দিয়ে ড্রেসিং থেকে চিরুনি আর পাউডার নিয়ে আসে শ্রাবণকে দিবে বলে,,সুন্দর মতো শ্রাবণের গায়ে পাউডার দিয়ে হিয়া যে-ই চিরুনি দিয়ে শ্রাবণের চুল গুলো সেপ্টে একদম ভদ্র বাবু গুলোর মতো আছড়ে দিতে শুরু করলো ওমনি শ্রাবণ আবার তার সব চুল এলোমেলো করে দিলো,,

হিয়াঃ এটা কি হলো,,

শ্রাবণঃ এরকম চুল ভালো লাগে না বুবু,,ভালো ভাইয়া যেটা করে দেয় আমাকে,ওরকম করে করে দে না আমাকে,

হিয়াঃ তোমার ভালো ভাইয়া তো তোমাকে ভালো জিনিস শেখাবে না কখনো,,আমি যা-ও বা একটু শেখাতে চাই তাও তুমি আমার কথা শুনো না,,দেখি চুপচাপ এখন বিছানায় বসে যাও___আর এ-ই কি যেনো রাইম এটা ম্যাম দিছে লিখতে ওটা লিখে এ-ই পাঁচ টা ম্যাথ সলভ করো,,,ম্যাথ গুলো আবার স্কুলের খাতাতে করিও না,,ওগুলো বাসার বড় খাতাতে করো,,দেখি আমি তোমার ভালো ভাইয়ার মাথা টা ধুইয়ে দিয়ে আসি,,বসে আছে ঠান্ডা লাগবে না হয় ওনার আবার,,

হিয়া শ্রাবণকে পড়া বুঝিয়ে দিয়ে ব্যালকুনির দরজা টা টেনে লাগিয়ে দেয়,,ঝড়ের রেশ যাও বা একটু আগে কমেছিলো এখন যেনো আবার আকাশ টা কালো করতে শুরু করছে,,শ্রাবণের জন্য একটা কেক আর পানি এনে হিয়া ওটা ওকে খেতে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজারটা হালকা করে লাগিয়ে দেয়,,

বাথটবের কাছে আসতে উজান হিয়ার হাতে তুলে দেয় তার প্রিয় ক্লিন এ্যান্ড ক্লিয়ার শ্যাম্পু,,হিয়া হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারে না,এ-তো বড় মানুষটাকে এখন নাকি গোসল করিয়ে দিতে হবে সত্যি,,হিয়া বাথটবে পা ঝুলিয়ে বসে যায়,,উজান পেছন ফিরে নিজের মাথা টা হিয়ার কাছে নিয়ে আসলে হিয়া শ্যাম্পু দিয়ে আলতো করে উজানের চুল ধুইয়ে দিতে থাকে,,

হিয়াঃ ন্যাকামির একটা লিমিট থাকে আপনি জানেন,,কিন্তু আপনি ঔসব লিমিট দিনকে দিন ক্রস করে ফেলছেন___এ-তো বড় মানুষকে আমি মাথা ধুইয়ে দিচ্ছি মানুষ শুনলেও না হাসবে,,

উজানঃ কারো যদি ন্যাকামি মনে হয় তো তাই ভালো,,আমার কাছে এ-ই মুমেন্ট গুলো অনেক প্রিসিয়াস অনেক দামি,,আর আমি তো এসব মানুষকে দেখাচ্ছি না,,যা হয় যা হচ্ছে আর যা হবে সব আমাদের তিনজনের মাঝে,এই চার দেওয়ালের মাঝে হচ্চে,,তাহলে আমি যদি একটু আমার বউয়ের সেবা পাই তাহলে কার কি সমস্যা শুনি,,

হিয়াঃ আপনার সাথে না আমি কথায় পারবো না,,দেখি সোজা হন,,আর একটা কথা বলুন তো আপনার কি বয়স দিন দিন কমছে,,খুব তো ভার্সিটিতে গিয়ে বলেন আমি একজন টিচার মানুষ আমাকে এখন এসব লুতুপুতু প্রেম মানায় না,,আর সেই আপনি বাড়িতে এসে এসব কি করেন,,

উজানঃ বাড়িতে তো শুধু আমি আর আপনি,,তাই না

হিয়াঃ হুম বাড়িতে আপনার একটা ছোট বাচ্চা আছে সেটাও মাথায় রাখিয়েন,,

উজানঃ হুম হুম,,ওটা আবার থাকবেনা কেনো মাথায়,,বাচ্চা টাই তো এখন আমার সব,,দেখি তাড়াতাড়ি মাথাটা ধুইয়ে দেও খুব ক্ষুধা পাইছে,,

হিয়া উজানের মাথা ধুইয়ে দিয়ে উজানের পিঠ আর বুকের পাশ টাও যত্ন নিয়ে পরিষ্কার করে দেয়,,আর উজান ভেজা ভেজা মুখে অপলক তাকিয়ে থাকে তার হিয়ার দিকে,,এ-ই মুহুর্তে হিয়ার ভেজা ঠোঁট গুলোর সাথে নিজের ভেজা ঠোঁট গুলো মিশিয়ে দিতে পারলে ব্যাপারটা কিন্তু মন্দ হয় না,,,,!!!!

উজানঃ বলছি কি হিয়া,,

হিয়াঃ এখন আমাকে গপ করে খেয়ে নিতে মন চাইলেও কিছু করার নেই,,শ্রাবণ জাগনা আছে__দেখি সোজা হন

উজান হতাশ হয়ে বোকা বনে যায় হিয়া কি করলে জানলো তার এখন হিয়ার ক্ষুধা পাইছে,,এদিকে হিয়া আপন মনে উজানকে গোসল করিয়ে দিতে থাকে উজানের ক্ষুধা লাগলেও এখন যেনো তার কিচ্ছু করার নেই,,

উজানঃ বলছি কি হিয়াপাখি বুকের এই লোম গুলো ওয়াক্স করিয়ে নিলে কেমন হয়,,শার্টের বোতাম গুলো খোলা রাখলে কিরকম জানি একটা লাগে,,

উজানের প্রশ্নে হিয়া ভূ কুঁচকে উজানের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে,,হিয়ার চাহনি দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে উজান এ-ই মুহুর্তে মারাত্মক একটা ভুল কথা বলে ফেলেছে,,

হিয়াঃ শার্টের বোতাম খোলা রাখলে মানে,,আপনি কি ভার্সিটি গিয়ে শার্টের বোতাম খুলে বের টের হোন নাকি!!

উজানঃ আরে না,তা কেনো হতে যাবে,,বাড়িতে থাকি না মাঝেমধ্যে শার্ট ছাড়া,,এ-ই যে এখন যেরকম আছি তাই বলছি আরকি

হিয়াঃ কান খুলে খুব ভালো করে শুনে রাখুন,,বাড়িতে শার্ট কেনো প্যান্ট খুলে বসে থাকলেও I have no problem,,কিন্তুউউউ যদি আমি কখনো দেখি যে আপনি ভার্সিটি গিয়ে শার্টের বোতাম খুলে বাইক নিয়ে ঢুকছেন তাহলে কিন্তু আমি আপনাকে এ বাড়িতে ঢুকতে তো দেবোই না সাথে সাথে আপনার ভার্সিটি যাওয়ার আমি কেনসেল করে দেবো,,কথাটা যেনো মাথায় থাকে,,

হিয়া রাগে গা ঘষা জুড়া টা উজানের বুকে ছুঁড়ে দিয়ে উঠে আসে,,উজান নিজের গালে নিজে একটা মা’র বসিয়ে দেয় এ-ই কথাটা কি হিয়ার সামনে বলা খুব জরুরি ছিলো তার,,উজান গোসল সেরে জামা কাপড় পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি সে খেয়াল করে নিচে বাথটবের কাছে হিয়ার গলার সোনার চেইন টা পড়ে আছে,,যেটা সে সকাল অবধিও হিয়ার গলায় দেখেছিলো,,উজান ওটা তুলে নিয়ে রুমে আসে কিন্তু হিয়াকে কিচ্ছু বলে না,,

এদিকে উজান বেরুলে হিয়া গোসলের জন্য ওয়াশরুম ঢুকে আর গোসল করতে করতে খেয়াল করে তার গলায় চেইন টা নেই,হিয়া তো যেনো পুরো থ বনে যায়,,রান্না করার সময়ো তো সেটা তার গলায় ছিলো এ-ই কয়েক ঘন্টায় সেটা কোথায় উধাও হয়ে গেলো আবার,,হিয়া ওয়াশরুমের সব কিছু তছনছ করে খুঁজতে শুরু করে কিন্তু কোথাও সেটা পায় না,,শেষ মেষ হিয়া টপাটপ গোসল করে বের হতেই উজান হিয়াকে খাবারের জন্য খাবার টেবিলে ডাকে হিয়ার দেওয়া নির্দেশে তার গরম গরম বেগুন ভাজা এখন পুরোটা কম্পিলিট,,

হিয়া কি করবে এখন এ-ই গলার চেইন টা কতো দামি ছিলো পুরো এক ভরির কাছাকাছি এখন যা সোনার ভরি পুরো এক লাখের কাছাকাছি ৭৮হাজার কম কথা,,হিয়ার মাথা পুরো ঘুরতে শুরু করে,,চেইন টা কি শুধু দামি উজান নিজে ওটা টাকা জমিয়ে হিয়ার জন্য কিনে দিয়েছিলো হিয়ার গলা খালি বলে,,খালি ঠিক না হিয়া ঔ উজানের মা’র দেওয়া স্বর্ণের চুড়ি আর কানের দুল পড়লেও চেইন টা পড়তে চাইতো না তাই উজান নিজে এটা পছন্দ করে হিয়ার জন্য বানিয়ে আনে,,আর হিয়া কি না ওটা এভাবে,,হিয়ার গা কাঁপতে থাকে হিয়া যদি চেইন টা আর না খুঁজে পায়,,পুরো ড্রয়ার খাটের নিচ বালিশের নিচ ঘোরের এমন কোনো কোণা বাদ রাখে না যেটা হিয়া খুঁজে না,,এদিকে উজান ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে দেখে হিয়া খোঁজা টা আপাতত বন্ধ রেখে খেতে আসে,,উজান বুঝে হিয়ার এই অস্থিরতার কারণ টা, কিন্তু সে তো আরেক ধরিবাজ চেইন টা যে সে নিজে রেখেছে সেটা না বলে হিয়ার এক্সপ্রেশন দেখতে যেনো তার তর সইছে না,,

হিয়া কোনোমতে খেয়ে উঠে পড়ে,,কি যে খেলো কি যে পেটে পড়লে সেদিকে আর তার মন নেই ,,উঠে সে আবার খুঁজতে শুরু করলো তার চেইন,,এবার রুম ছেড়ে সে আসলো রান্নাঘরে,,ময়লা ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে আবার সেটা ঝুড়ির সাথে গেলো না তো,,হিয়া ময়লার ঝুড়ি থেকে ময়লা গুলো বের করে সব হাতড়াতে থাকে,,এদিকে হিয়ার এই গোসল করে এসে ময়লা নাড়ার কারণ শ্রাবণ বুঝতে পারে না তার যেনো বুঝারো সময় নেই,,দুই প্লেট খিচুড়ি পেট ভরে খেয়ে নিয়ে সে এখন রোস্টের হাড্ডি চিবোতে ব্যস্ত,,তার সাথে মুরগীর পা তুলে মানে রোস্ট তুলে সেটাকে গপ গপ করে খেতে ব্যস্ত উজান নিজেও,,

হিয়াঃ কি জবাব দেবো এখন আমি ওনাকে,যে আমি ওনার শখ করে কিনে আনা চেইন টা আজ এভাবে হারিয়ে ফেলেছি,,তুই এ-তো কেয়ারলেস কি করে হতে পারলি হিয়া,,বাজারে সোনার যা দাম আর তুই কি না এক ভরির চেইন টা এভাবে হারিয়ে ফেললি,,এজন্য এসব জিনিস আমি পড়তে চাই না,,কি করে বলবো আমি এখন ওনাকে যে আমি,,কতো কষ্টের টাকা ছিলো ওনার উনি কতো পরিশ্রম করে আর আমি,,

হিয়া আর কিছু ভাবতে পারে না তার আগেই চোখ দুটো জলে ভরে আসে তার,,এদিকে এতো এতো খেয়ে এখন শ্রাবণ উজান দুজনেরই শরীর ছেড়ে দিচ্ছে,,ঘুমের রাজ্য থেকে পাহাড় সমান ঘুম এসে জড়ো হচ্ছে তাদের চোখে,,শ্রাবণ হাড্ডি চিবোতে চিবোতে একটা হাই তুললে সেই হাইয়ের রেশ গিয়ে লাগে উজানের গায়েও,,সাথে সাথে উজানো একটা হাই তুলে খাওয়া শেষ করে,,উজানের দেখাদেখি খাওয়া শেষ করে উঠে আসে শ্রাবণ নিজেও,,

হাত ধইয়ে এসে এখন তো এদের আবার দুপুরে ঘুমোনোর পালা,,যা বৃষ্টি বৃষ্টি ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার- আজ তোহ সেই ঘুম হবে একটা,,উজান লাইট টাইট ওফ করে শ্রাবণ সহ বিছানায় এসে দুম করে শুইয়ে পড়ে,,ঘরময় পুরো অন্ধকার,,ব্যালকুনির থাই দিয়ে যাও বা আলো আসছিলো আকাশ পুরো কালো হওয়াতে সেই আলো টুকুও কি রকম নিমিষে অন্ধকারে বিলীন হ’য়ে গেলো,,এসি আজ না ওন করলেও চলবে তবে মাথার উপর ফ্যান টা ছাড়তে তো দোষ নেই,,ফ্যান ছেড়ে কম্বল মুড়ে ঘুমোনোর তো মজা টা-ই অন্যরকম,,তাই না,,

উজান হিয়াকে দু’বার ডেকেও হিয়ার সারা পায় না,,হিয়া আসছি আসছি বলেও আসছে না,,রান্নাঘর থেকে শুরু করে ডাইনিং ড্রয়িংরুম সব খুঁজে হিয়া ক্লান্ত কিন্তু কোথাও তো নেই সেই চেইন,,একটা সময় হিয়া হাল ছেড়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে রুমে আসে,,উজান হিয়াকে বলে তার তো সব কাজ শেষ কিন্তু সে কেনো এখনো ঘুমোতে আসছে না,,হিয়া কি উওর দিবে বুঝে পায় না,,বাহিরের রুমের লাইট ফ্যান ওফ করে হিয়া ওদের দু’জনের মাঝে এসে শুইয়ে পড়ে,,হিয়া মাঝে শ্রাবণ দেওয়ালে কিনারে আর উজান এদিকে,,

শ্রাবণঃ বুবুউউউ কি আকাশ টা ডাকছে না আজ,,কেমন গুরুম গুরুম করে,,

হিয়াঃ হুম,,তুমি তখন রাইম টা লিখছো শ্রাবণ,,আর বাকি যেই পাঁচটা ম্যাথ করতে দিলাম,,ওগুলো করছো?

শ্রাবণঃ সব করছি,,কিন্তু একটা ঔ চার নাম্বার ম্যাথ টা সলভ করতে পারি নি,ওটা তুই রাতে দেকিয়ে দিস,,

হিয়াঃ ঠিক আছে ঘুমাও এখন,,

এদিকে উজান অন্ধকারের সুযোগে কম্বলের ভেতর দিয়ে নিজের হাত টা এনে হিয়ার জামা তুলে হিয়ার পেটের ভেতর রাখতেই হিয়া উজানের হাতে একটা চিমটি বসিয়ে দেয়,,শ্রাবণের সামনে যে একটু বকা দিবে সেটাও পাচ্ছে না আজ,,

হিয়াঃ দেখি শ্রাবণ ঘুমে যাও তো,,তুমি না ঘুমোলে তোমার ভালো ভাইয়াও আজ ঘুমোবে না,,চোখ বন্ধ,,ফাস্ট,,

শ্রাবণঃ এখন কয়টা বাজে বুবু?

হিয়াঃ তিনটে বাজবে কেনো?

শ্রাবণঃ আমাকে কিন্তু তুই পাঁচটার সময় ডেকে দিবি,,ফয়সাল আসবে আমাকে নিতে,,

হিয়াঃ এই বৃষ্টিতে ফয়সাল আসবে না তোমাকে খেলতে ডাকতে,,ঘুমাও তুমি যদি আসে,ডাকবো এখন আমি,

শ্রাবণঃ হুম

শ্রাবণ ওপাশ ফিরে কোল বালিশ টা জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে,,হিয়া শ্রাবণের গায়ে হাত দিয়ে কয়েকবার থাপড়ে দিতে থাকলে একটা সময় শ্রাবণ গভীর ঘুমে ডুবে যায়,,শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে উজান হিয়াকে ওর পাশে ঘুরে নিয়ে হিয়ার পুরো মুখ থেকে শুরু করে গলার ভাঁজে নিজের ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিতে শুরু করে কিন্তু এবার হিয়া ডুকরে কেঁদে উঠে,,

উজানঃ হিয়া তুমি কাঁদছো!!এ-ই পিচ্চি কাঁদছো কেনো তুমি,,হিয়া,,

হিয়াঃ উজান আমি না একটা ভূল করে ফেলেছি,,আমি আমি না আপনার দেওয়া একটা খুব দামি জিনিস আজ হারিয়ে ফেলেছি,,

উজানঃ ওকে ওকে,,ঠিক আছে হারিয়ে ফেলেছো বুঝলাম তাই জন্য এরকম করে কাঁদতে হবে না-কি,,আরে

হিয়া থামবে কি হিয়া আরো অঝোরে কেঁদে উঠে,এই মুহুর্তে নাকের জল চোখের জল সব এক হয়ে আসে হিয়ার,,

হিয়াঃ না কাজ টা আমি ঠিক করি নি,আমার আরো খেয়াল রাখা উচিৎ ছিলো,,আমি আমি সবসময় ওটা দেখে দেখে রাখি,,দুপুরে রান্না করার সময়ো আমি ওটা গলায় দেখেছিলাম কিন্তু পরে যে কোথায় হারিয়ে গেলো,,,আপনি কতো শখ করে আপনার বেতনের টাকা জমিয়ে আমার জন্য ঔ চেইন টা আর আমি,,

উজানঃ চেইন টা খুঁজে পাচ্ছো না বলে এভাবে কাঁদছো,আরে ঘর ছাড়া যাবে কোথায়,,আছে কোথাও একটা,,

হিয়াঃ নাআআআ নেই,,আমি সব জায়গা বারবার করে খুঁজলাম কিন্তু ওটা কোথাও নেই,,

উজান হিয়াকে নিজের বুকে চেপে ধরে হিয়ার মাথায় হাত বুলাতে শুরু করে,,

উজানঃ চুপ না হিয়া,,এরকম করে কেউ কাঁদে,,গেছে একটা চেইন আবার আসবে,,তুমি কি ইচ্ছে করে হারিয়েছো না-কি,,আজব__আর চোখ দিয়ে পানি বের করলে কিন্তু আমি এবার সত্যি সত্যি বকা দিয়ে দেবো__দেখি

হিয়াঃ আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি জেনেশুনে ওটা,,

উজানঃ আচ্ছা মুশকিল তো,এতে ক্ষমা করার কি আছে,,আমি রাগ হচ্ছি কিন্তু হিয়া,,চুপপ চুপ,,শ্রাবণ উঠলে কিন্তু এবার আমি রেগে যাবো বলে দিলাম,,ঔ দেখো শ্রাবণ নড়ছে,,

হিয়াঃ আর কখনো আমি এসব জিনিস পড়বো না,,এ-ই চুড়ি গুলো কানের দুল গুলোও মা’কে এবার ফেরত দিয়ে আসবো,,আর কখনো আমি এতো দামি জিনিস পড়বো না কখনো না,,

উজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে হবে না পড়তে তোমায়,,দেখি এখন চুপচাপ ঘুমে যাও তো,,আমার খুব ঘুম পাচ্ছে,,হিয়া আর না,,সোনা পিচ্চি আমার,,এরকম করে কাঁদলে কষ্ট হয় না আমার,,দেখি কে কার বুকে আজ ঘুমাবে আমি তোমার বুকে না তুমি আমার,,

হিয়াঃ (চোখ মুছে)আমি আপনার বুকে ঘুমাবো,,

উজানঃ এ-ই তো গুড গার্ল,,

বলে উজান ওর বুকের কাছে রাখা হিয়ার মাথা টা আরো শক্ত করে চেপে ধরে হিয়াকে নিয়ে শ্রাবণের পাশে আরো গিষে যায়,,এর মধ্যে শ্রাবণ এ পাশ ফিরে হাত পা ছেড়ে আবার ঘুম দেয়,,উজান ওর এক হাত দিয়ে হিয়ার মাথায় রেখে হিয়ার চুলে বিলি কাটতে থাকে আর মাথার নিচের হাত টা বাড়িয়ে শ্রাবণের মাথায় হাত রাখে,,একটা সময় পর তিনজনই বাহিরের বৃষ্টির ছন্দে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়,,অন্ধকার ঘরে একে অপরকে জড়িয়ে এক শান্তির দেশে ঘুরে বেড়াতে থাকে আজ তিন জন,,

উজানের ঘুম ভাঙ্গে ফয়সালের চাপা কলিং বেলের কিরিং কিরিং শব্দে,সেই সাথে ঘুম ভেঙে আসে শ্রাবণেরো,,হিয়া একটু নড়েচড়ে বসতে উজান হিয়ার গায়ে হাত বুলে দিয়ে আবার হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়,,

উজানঃ এ-ই যে বাহিরে তো বৃষ্টি হচ্ছে তা এখন কোথায় খেলতে যাওয়া হবে শুনি,,

ফয়সালঃ আমরা নিচে গেররাউনট(গ্রাউন্ড) ফ্লোরে খেলবো,,গ্যারেজের কাছে ওখানে তো বৃষ্টি হচ্ছে না,,

উজানঃ ওকে ঠিক আছে,তুমি পাঁচ মিনিট বসো আমি শ্রাবণকে কিছু খাইয়ে দেই আগে,,ওর শরীরে রক্ত কম ওকে না ডক্টর বেশি বেশি করে খেতে বলছে তুমি জানো না,,

ফয়সালঃ ওকে বেশি বেশি করে খেতে বলছে,আর আমাকে ডক্টর কি বলেছে জানো, কম কম করে খেতে আমি না-কি মোটা হয়ে ফুটবল হয়ে যাচ্ছি ঔজন্য আমার ডক্টর টা কত্তো খারাপ,,

সত্যি ফয়সাল মোটা হয়ে একদম নাদুসনুদুস হয়ে যাচ্ছে দিন দিন,,উজান ফয়সালের ভুরি টা হালকা নেড়ে দিয়ে শ্রাবণের পাশাপাশি ফয়সালের জন্যেও আপেলের জুস বানিয়ে দু’জনকে খেতে দেয়,,আর দু’জনের হাতে ধরিয়ে দেয় দুইটা কমলা আর বলে খেলতে খেলতে পুরোটা যেনো শেষ করা হয়,,শ্রাবণ উজানকে জড়িয়ে ধরে ওর ব্যাট আর বল নিয়ে ফয়সালের সাথে নিচে আসে ক্রিকেট খেলতে,,আর এদিকে উজান একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে হিয়ার কাছে আসে,,রুমের লাইট টা ওন করে হিয়ার গায়ে কম্বল টা খুব সুন্দর করে মোড়ে দিয়ে উজান এবার ওর কাছে লুকিয়ে রাখা চেইন টা হিয়ার গলায় আলতো করে পড়িয়ে দেয়,,

হিয়াঃ (চোখ বন্ধ করেই)কি করছেন উজান আপনি,,জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলে ভালো করে ধরুন,,আমার এ-ই গলা আর চুল নিয়ে কি শুরু করলেন,,

উজানঃ কিছু না,,ঘুমাও তুমি,,

হিয়াঃ শ্রাবণ কি নিচে গেলো ফয়সালের সাথে?

উজানঃ হুম,,ওকে একটা আপেল কেটে জুস বানিয়ে খাইয়ে দিলাম,,ও আসলে নাস্তা দিও তুমি উঠে

হিয়াঃ হুম,,

হিয়ার চোখ জুড়ে ঘুম থাকায় হিয়া আবার মুহুর্তে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়,,উজান হিয়ার কপালে স্নেহের পরশ বুলে দিয়ে উঠে আসে,,ব্যাগ থেকে ভার্সিটির খাতা গুলো বের করে এখন সে সেগুলো কাটতে শুরু করে,,আজ সব খাতা কেটে এ-ই ঝামেলা টা কমিয়ে আনতে হবে যেনো তার,,

হিয়ার ঘুম ভাঙে অল্পকিছুক্ষণ পর-ই,,হিয়া আবার বেশিক্ষণ দুপুরে ঘুমে থাকতে পারে না,,আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতে হিয়া দেখে ও এতোক্ষণ একাই ঘুমিয়ে আছে শ্রাবণ উজান কেউই নেই তার পাশে,,হিয়া একটা হাই তুলে কিছুক্ষণ বসে থাকে বিছানার মধ্যে,,তখন কান্না করার জন্য চোখ গুলোও হালকা ফুলে আছে তার,,,ঘুম থেকে উঠে কতো মায়াবী লাগছে এ-ই মুহুর্তে হিয়াকে,কান্নার কারণ টা মনে আসতেই হিয়ার মন টা আবার খারাপ হয়ে আসে,,হিয়ার অজান্তেই হিয়ার বা হাত তার গলার কাছে গিয়ে থামে,,কি ব্যাপার গলার কাছে এটা কি এরকম খচখচ লাগছে কেনো,,হিয়া টপ করে চোখ নামিয়ে গলার দিকে তাকাতেই খেয়াল করে তার সেই কাঙ্ক্ষিত চেইন টা তার গলায় ঝুলছে,,হিয়া টপ করে উঠে আয়নার দাঁড়িয়ে যায়,,এটা এটা তো সত্যি সত্যি তার সেই সোনার চেইন টা,,এটা কি করে,,হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে ওড়না কম্বল যা আছে সব ছুড়ে দিয়ে এক দৌড়ে এদিকের রুমে এসে উজানের কোলের উপর বসে যায়,,

হিয়াঃ thank you thank you thank you,,এটা আপনি আমাকে খুঁজে দিয়েছেন তাই না,,ইসস আপনি এ-তো ভালো কেনো,,

উজানঃ খুশি এখন,,

হিয়াঃ খুশি মানে খুব খুব খুব খুশি,,,ইসস কি চিন্তাটা নায় ছিলাম আমি,,যাগ এখন থেকে খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে,,সোনার যা চড়া দাম বাজারে,এটা হারিয়ে গেলে তো পুরো___আচ্ছা আপনি এটা কোথায় পেলেন আমি যে পুরো বাড়ি তছনছ করে খুঁজলাম কোথায় আমি তো পেলাম না,,

হিয়ার প্রশ্নে উজান একটা হাসি দিয়ে ওর কোলে হিয়াকে আরো সুন্দর করে বসিয়ে নেয়,,হিয়ার মুখের কাছের চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে উজান এবার আসল সত্যি টা হিয়াকে বলে যে সে নাকি হিয়ার ঔ কান্না দেখার জন্য এরকমটা করেছে,,হিয়ার ঠোঁট ফুলিয়ে কান্নারত মুখ দেখতে নাকি তার সেই অনুভূতি লাগে,,এসব শুনেই তো হিয়ার মাথা পুরো গরম,,মানে হিয়া তখন ওভাবে কাদঁছিলো আর উজান কি না,,হিয়া রাগে উজানের বুকে পিঠে ইচ্ছে মতো কিল বসাতে শুরু করে

হিয়াঃ আপনি তারমানে ইচ্ছে করে,,আজ তো আমি আপনাকে খুনই করে ফেলবো,,কত্তো খারাপ আপনি,,

উজানঃ আরে হিয়া থামো,,কি করছো লাগবে তো আমার,হিয়া,,এ-ই পিচ্চি সত্যি সত্যি খুন করে দেবা নাকি তুমি আমাকে,,

উজান হিয়ার হাত দু’টো মুঠো করে ধরে হিয়াকে থামিয়ে দেয়,,হিয়া কপট রাগ করলেও পরে হেঁসে দেয়,,তাও যে ভাগ্যিস উজান ওটা তুলে রেখেছিলো নয়তো কি হতো,,

হিয়ার ঔ প্রশান্তির হাসি সাথে কান্নারত মুখের ফোলা ফোলা চোখ মুহুর্তে এক নেশা জাগিয়ে তুলে উজানের সারা শরীরে,,হিয়াকে হ্যাচকা টেনে বিছানার উপর ফেলে দিতেই হিয়া বুঝে যায় উজানের মতিগতি ঠিক সুবিধার না,,কে দেখবে খাতা এখন আর,বিছানার সব বই খাতা গুলো সামনের টেবিলে থুইয়ে উজান ঝুঁকে এসে হিয়ার উপর উঠে যায়,,

হিয়াঃ উজান এখন ওসব না,,

উজানঃ চুপপপপ,,বলেছি না ইমার্জেন্সি ডিউটির সময় অন্যদিকে মন দিতে নেই,,

হিয়াঃ ধ্যাত অসভ্য একটা,,

!
!

এক সপ্তাহ পরঃ
বৈশাখ মাসের এই তাপদাহরের সাথে হঠাৎই দুদিন ধরে চলা ঝড়ের তান্ডবে না-কি কোথায় কোন গাছ পড়ে কারেন্টর লাইনে সমস্যা দেখা দিছে তাই জন্য আজ ভোর থেকে কারেন্ট নেই,,জেনারেটর দিয়ে এ-ই রাত দশটা অবধি চললেও এখন যেনো তার মেয়াদো ফুরিয়ে আসছে,,শুধু অনেক কষ্টে ঘুরছে উজানের রুমের উপরের ফ্যান টা,,তাও যেনো ওটা না ঘোরা সমান,,এদিকে দুদিনের ঝড় শেষে আজ যা গরমের দেখা মিলছে সেটা যেনো সহ্য করার মতো না,,মরুভূমির বাতাস যেনো হামলা দিচ্ছে আজ ঢাকা শহরে,,,

শ্রাবণ রাতের খাবার শেষ করে ফোনে গেইম খেলছে,,চুল দিয়ে ঘাম পড়ে মাঝেমধ্যে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার ফোন স্কিন,,এমনিতে ফোনে আছে আর ৬শতাংশ চার্জ তারউপর বারবার ফোন ভিজে যাওয়ায় শ্রাবণের মেজাজ যেনো পুরো বিগড়ে যাচ্ছে,,হিয়া এদিকে রান্নাঘরের বাকি কাজ গুলো গুটিয়ে নিচ্ছে,,আর উজান ল্যাপটপের সামনে বসে স্কাইপে কথা বলছে সন্ধিদের সবার সাথে,,

!
!

রুপম বাদ দিয়ে সবার সাথে স্কাইপে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো উজান,,প্রত্যেক সপ্তাহের এ-ই ছুটির দিন গুলোতে সবাই অনন্ত চেষ্টা করে সামনাসামনি না হোক ভার্চুয়ালি একটা আড্ডার আসর জমাতে,,তাই নিয়ম করে আজো তারা এক হয়ে আড্ডা দিচ্ছে,,আর এ-ই আড্ডার এক পর্যায়ে কোনো রকম পূর্ভাস ছাড়া তড়িৎ গতিতে ছুটে এসে হিয়া উজানের গলা জড়িয়ে উজানের গালে চার পাঁচ টা হামি বসিয়ে দেয়,,হিয়ার তো আর খেয়াল নেই সামনে ল্যাপটপের সামনে সাব্বির তুষার সন্ধি সবাই ওর এ-ই কান্ড দেখে যাচ্ছে,,হিয়ার এ-ই কাজে বোকা বোনে যায় উজান,এখন সে হাসবে না কাঁদবে কিছুই যেনো বুঝতে পারছে না,,

হিয়াঃ উজান উজান উজান উজাননননননন,,,,উম্মা উম্মা উম্মা__উম্মা উম্মাআআআ___আজ আমি খুব খুব খুব খুশি উজান,,খুব খুশি,,

উজানঃ ওকে,,ওল রাইট,,আমি বুঝতে পারছি তুমি খুব খুশি কিন্তু এখন একটু আমাকে ছাড়ো,,(থ হয়ে)

হিয়াঃ না না আমার তো এখন আপনাকে জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে করছেএএএ,,আপনাকে এতো এতো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে,,,জানেন আজ আমার সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্ট বেড়িয়েছে আর আমি টপ ফাইভে এসেছি পুরো ডিপাটমেন্টের মধ্যে থেকে,,,,,সব সব ক্রেডিট আপনার,,আপনি আমাকে এতো গাইড না করলে তো আমি কিছুই পারতাম না,,কি বলে যে আমি আপনাকে ধন্যবাদ দেবো,,,,উম্মাআআআআ,,উম্মমমমমম মমমমম

উজানঃ (শান্তভাবে হিয়াকে আঁটকে)ওকে ওকে,,congratulation on that,,কিন্তু এ–খন আমাকে ছা–ড়ো সবাই দেখছে আমাদের,,

হিয়াঃ কোথায় দেখছে,কে দেখছে??

উজান ওর হাতের ইশারা ল্যাপটপের দিকে করলে হিয়া মুখ ফিরে এদিক তাকাতেই পুরো থ হয়ে যাচ্ছে,,ঘটনা কি হচ্ছে সেটা হিয়ার প্রথমে বুঝে আসে না, একটু ভালো করে লক্ষ্য করে পুরো ঘটনা বুঝে আসতেই হিয়া জিহ্বে কামড় দিয়ে তার হাত দুটো দিয়ে মুখ ঢেকে এক দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসে,,এদিকে হিয়ার এ-ই কাজে সবাই হেঁসে ফেলে,,

সন্ধিঃ বউ পাইছিস একটা ভাগ্য করে,,যেমনি মিষ্টি তেমনি চঞ্চল,,

উজানঃ চঞ্চল কি আগে ছিলো ইদানীং তো ওর মনে হয় দুইটা পাখা গজাইছে,,কি যে করে সারাদিন,,

সন্ধিঃ হুম সামধানে রাখিও মামা তোমার পাখিকে,,ভার্সিটিতে কেউ না আবার তাকে,,

উজানঃ সাহস আছে আমার পাখির দিকে তাকানোর,,,,তা সাব্বির বললি না তো রুপম ফোন দিয়ে কি কথা বলেছিলো তোর সাথে কাল?

সাব্বিরঃ কি আর বলবে সবার হালচাল জিজ্ঞেস করছিলো,,সবাই কেমন আছে আমি কবে ফিরবো এসবই,,

সন্ধিঃ ওর যে-ই বোনটার বিয়ের জন্য ও খুব টেনসড ছিলো পরে কি তার বিয়ে দিতে পেরেছে ও?

সাব্বিরঃ বললো তো পেরেছে,,ভালোই আছে কিন্তু ছেলেদের না-কি অনেক ডিমান্ড ছিলো ওগুলো মেটাতে,,

তুষারঃ ওর সাথে ভিডিও কলে কথা হলে একটা ছবি তুলে নিস তো,,কতোদিন দেখি না,,

সাব্বিরঃ হুম,,আচ্ছা আজ আমি উঠি খুব টার্য়াড শালারা ছুটির দিনেও কাজ করিয়ে ছাড়ে,,

সন্ধিঃ হুম আমরাও উঠি,,আবার কথা হবে,,আর পরশু তো আমি আসছি আমার একটা জব ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা,,দেখা হবে এখন তখন,,

উজানঃ হুম,,রাখ তাহলে,,যা গরম রে ভাই কারেন্টো নেই,,জেনেরেটর বুঝি এ-ই চলে যায়,

তুষারঃ যা তা ল্যাপটপ টা চার্জ দে,কাল কথা হবে,,

উজানঃ হুম

উজান ল্যাপটপ বন্ধ করে শরীর টা একটু আড়মোড়া ভেঙে হিয়ার কাছে উঠে আসে,,হিয়া এতোক্ষণ ব্যালকুনি টা ঝার দিয়ে বড় গদিটা সেখানে বিছিয়ে বিছানা বানাচ্ছিলো,,কারণ ঘরের যে একটা ফ্যান চলছে সেটাও যে একটু পর ওফ হয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আসবে সেটা আর তার বুঝতে বাকি নেই,,

হিয়াঃ হাসছেন কেনো ওভাবে,,

উজানঃ কি করছিলা একটু আগে তুমি ওটা?

হিয়াঃ দেখুন আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি আপুদের সাথে,,তাই বলে আপনি ওভাবে হাসবেন,,

উজানঃ আচ্ছা সরি,,এ-ই যে কান ধরছি আর হাসবো না,,তা এখানে বিছানা কেনো পাতানো হচ্ছে শুনি,,

হিয়াঃ তা কি করবো,,শুনলাম তো কারেন্ট আজ আসবে না,,জেনেরেটর এর যা অবস্থা যখন তখন ফুরুৎ হ’য়ে যাবে,,আর আজ যা গরম পড়ছে থাকতে পারবেন ফ্যান ছাড়া ভেতরে____তারচেয়ে বরং এ-ই মিষ্টি মিষ্টি ভরা জোৎস্নার আলোতে আজ ঘুমাবো ওটা বেস্ট হবে,,এখানে একটা ঠান্ডা বাতাসো আছে দেখুন,,

উজান এতোক্ষণ ব্যালকুনিটা ভালো করে লক্ষ্যে করে নি,,হিয়ার কথায় উজান এবার চারপাশের ব্যালকুনির পরিবেশ টা ভালো করে দেখতে গিয়েই খেয়াল করে আজ একদম ভরা পূর্ণিমা,,আর সেই পূর্ণিমার আলোটা একদম তাদের মাথার কাছের এসে প্রকট আলো ছড়াচ্ছে,,তারপর একটা মিষ্টি মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস ঘামে ভেজা শরীর টাকে যেনো অন্য রকম শিহরণ তুলে দিচ্ছে,,সাথে আসছে কোথা থেকে কামিনি ফুলের মিষ্টি সুবাশ,,

হিয়াঃ ওভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে বালিশ দুটো নিয়ে এসে আমাকে একটু সাহায্য করুন,,শুনছেন আমার কথা,,উজান,,

হিয়ার ডাকে উজান হুঁশে ফিরে,,ঘর থেকে বালিশ আনতে যাবে ওমনি জেনারেটর এর লাইন টাও চলে গিয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে আসে,,শ্রাবণ অন্ধকারে দৌড়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে তার বুবুকে,,উজান তিনটে বালিশ এনে তোশক টায় ফেলে,,হিয়া বালিশ তিনটে সিরিয়ালে সাজিয়ে দেয়,,

শ্রাবণ ঘেমে যাচ্ছে দেখে হিয়া শ্রাবণের গা থেকে গেঞ্জি টা খুলে ফেলে নিজের ওড়না দিয়ে শ্রাবণের মুখটা মুছে দেয়,,শ্রাবণের দেখাদেখি এবার শার্টটা খুলে ফেলে উজান নিজেও,,শার্টটা ব্যালকুনির দড়িতে শ্রাবণের গেঞ্জি সহ ঝুলে দিয়ে উজান বিছানায় শুইয়ে যায়,,উজানের বুকের উপর এসে শুইয়ে পড়ে শ্রাবণ,,হিয়া শোয় না,,না শুইয়ে তাল পাখা দিয়ে বাতাস করতে থাকে শ্রাবণ আর উজানকে,,

হিয়াঃ মশা তো এখানে খুব,,ধ্যাত ঘুমোনো যায় তাই এ-ই মশার কামড়ে,,

উজানঃ পায়ের নিচ দিয়ে তোমার ওড়না টা দিয়ে দেও না,,

হিয়াঃ হুম,,শ্রাবণ ঘুমে যা-ও তো সোনা এখন,,অনেক রাত হচ্ছে,,

শ্রাবণঃ নাআআআ আমি গল্প করবো এখন ভালো ভাইয়ার সাথে,,

হিয়াঃ না উনি ক্লান্ত খুব আজ,,আজ কোনো গল্প হবে না,,চটপট চোখ বন্ধ করো,,

কে শুনে কার কথা,,শ্রাবণ তো উজানের সাথে খেলায় ব্যস্ত হিয়ার কথা যেনো ওর কানেই পৌঁছাতে চাইছে না,,উজান ওর দু পায়ে শ্রাবণকে ভর করে ঘুগুসটি খেলছে তো কখনো শ্রাবণকে পিঠে চড়িয়ে করছে পুশআপ,,

হিয়াঃ উজান রাত এক টা পাড় হচ্ছে এবার তো ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিন,,

উজানঃ দেই না,কেবল তো একটা,,

হিয়াঃ একটা বাজা কে কেউ কেবল কি করে বলতে পারে,,শ্রাবণ

শ্রাবণঃ কি?

হিয়াঃ চল চল কবিতা টা বলো তো,,দেখি কেমন মনে রাখছো,,,,,কি হলো বলো

শ্রাবণ খেলতে খেলতে চল চল কবিতা টা বলা শুরু করে,,আর সম্পূর্ণ বলা শেষে উজান হাত তালি দিয়ে উঠে,,

হিয়াঃ কবির নাম কি পরীক্ষার খাতায় আমি লিখে দিয়ে আসবো,,ওটা বলতে হবে না,,

শ্রাবণঃ চল চল চল কবিতাটি লিখেছেন কবি কাজি নজরুল ইসলাম,,হইচে

হিয়াঃ হুম,,এখন ইংলিশ যেই রাইম টা কাল শিখিয়েছি ওটা বলো

শ্রাবণঃ কোনটা?Rain Rain go away

হিয়াঃ হুম,,বলো

শ্রাবণ রেইন রেইন কবিতা টা বলা শুরু করে,,ওটা শেষ হতে হিয়া আরো অনেক কয়েকটা পড়া শ্রাবণকে ধরে,,হিয়াকে পড়া বলতে উজানের সাথে খেলতে মিলতে একটা সময় পর শ্রাবণ ঘুমিয়ে আসে,,গরমে বাচ্চা টার শরীর দিয়ে পুরো পানি ঝরছে,,হিয়া বারবার ওড়না দিয়ে সেই পানি টা মুছে দিচ্ছে যদি এটা লেগে আবার ঠান্ডা বসে যায়,,

উজানঃ কাল ঝিনুকের মা কি বললো হিয়া?

হিয়াঃ নাম্বার তো দিয়ে আসলাম,আন্টি বললো ঝিনুক নাকি বলেছে সে নিজে আমাকে ফোন করবে,,

উজানঃ দেখো কি হয়,,ফোন টা সাথে সাথে রেখো এ-ই কয়দিন,,

হিয়াঃ হুম,,,তা কালকে কি আপনি বাড়ি যাবেন?

উজানঃ যাওয়া তো লাগবে,,আবার গিয়ে পরশুই ব্যাক করতে হবে,,

হিয়াঃ হুম,,আমার খুব ইচ্ছে ছিলো যাবার,,তা থাক সামনের মাসে শ্রাবণের পরীক্ষা টা শেষ হলে একবারে যাবো,,আপনিও না হয় কয়েকটা দিন বেশি করে ছুটি নিয়েন তখন,,

উজানঃ হুম,,আমি তো যাবো আর আসবো,,দেখি____হিয়া এখানে মশা অনেক,,শ্রাবণের কষ্ট হচ্ছে,,

হিয়াঃ আপনার চার্জার ফ্যানটার চার্জ নেওয়া হয়নি?ওটা দিয়ে না হয় ওকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসতাম,,

উজানঃ আচ্ছা আমি দেখি,,ঔ রুমে মশারি দেওয়া আছে?

হিয়াঃ হুম,,দিয়ে রাখছিলাম শ্রাবণের জন্য,,

উজান উঠে দেখে ওর ছোট চার্জার ফ্যান টায় পাওয়ার ব্যাঙ্ক টা দিয়ে পুরোটাই চার্জ হয়ে গেছে,,এটা এখন মিনিমাম দুই তিন ঘন্টা তো যাবেই,,উজান শ্রাবণকে কোলে করে এনে মশারির তোলে খুব সুন্দর করে শুইয়ে দেয়,,চার্জার ফ্যান টা একটা টুলে বসিয়ে দিয়ে শ্রাবণের মাথার কাছে টুল টা রাখে,,,,উজান শ্রাবণের গা টা আরো একবার মুছে দিয়ে ড্রেসিং আয়না থেকে পাউডার নিয়ে এসে শ্রাবণের খোলা গায়ে মেখে দেয়,,যাক এখন অনন্ত দুই তিন ঘন্টা বাচ্চাটা আরাম করে ঘুমাতে পারবে,,

!
!
এদিকে হিয়া এতোক্ষণ তোষকের উপর শুইয়ে হাত পাখা দিয়ে নিজেকে বাতাস করতে করতে আকাশের চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে,,এ-ই চাঁদ এ-ই আকাশ ভরা জোৎস্না,,অগণিত তারার মেলা,,সাথে রাতের মিষ্টি এক বাতাস সব কিছু আজ অনেক অনেক বেশি মন ছুঁয়ে যাচ্ছে হিয়ার,,পাশের বিস্কুট ফুল গুলো একবার হাত বুলে নিয়ে কি একটা মনে করে হিয়া হালকা করে হেঁসে দেয়,,উজান শ্রাবণকে শুইয়ে দিয়ে হিয়ার পাশে এসে এসে হিয়ার মাথার বালিশে হাত ভাঁজ করে শুইয়ে যায়,,এপাশে ঘুরে হিয়ার গা থেকে ওড়ান টা খুলে মাথার পেছনে রাখে,,একটা হাত গুঁজে দেয় হিয়ার আঙ্গুলের ভাঁজে,,

উজানঃ কে বেশি সুন্দর এ-ই চাঁদ টা না আমার এ-ই পিচ্চি টা,কোনটা?

হিয়াঃ এখন আমি আপনার বিয়ে করা বউ উজান,,এখন তো আমার সাথে ফ্লাট করা বন্ধ করুন,,

উজানঃ এ-ই মেয়ে শোনো আমি কিন্তু কোনোদিনই তোমার সাথে ফ্লাট করি নি,,তোমাকে আমার চোখে যেরকম লাগে আমি তাই বলেছি,,

হিয়াঃ হুম জানি তো,,তা বললেন না তো কে বেশি সুন্দর আমি না ঔ চাঁদ টা?

উজানঃ তুমি ও না ঔ চাঁদটাও না,,আমার কাছে তো চাঁদের আলোতে সব চাইতে সুন্দর লাগছে তোমার মায়াবী মুখ টা,,

হিয়াঃ আপনি না,,দিন দিন বুড়ো হচ্ছেন কিন্তু এসব ফাজলামো কমছে না,,

উজানঃ এখনো বাচ্চার বাবা-ই হলাম না আর ওমনি বুড়ো হয়ে গেলাম,,দেখি ঘোরো তো এদিকে,,

হিয়া একটা হাসি দেয়,,সেই হাসি গিয়ে ধাক্কা লাগে উজানের বুকে,,উজান একটু একটু করে নিজের ঠোঁট জোড়া ডুবে দেয় হিয়ার ঠোঁটে ,,হিয়াও আজ উজানকে বাঁধা দেয় না বাধা দিলেও যে উজান তা শুনবে না সেটাও সে খুব ভালো করেই জানে,,সময় পেরুবার সাথে সাথে তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে সেই আদর করার যুদ্ধ,,শ্রাবণো হয়তো তার মিল্ক ভিটা এতো মজা করে খায় না এ-ই মুহুর্তে যতোটা টেস্ট করে উজান হিয়ার ঠোঁটে আদর খাচ্ছে,,

একটা পর্যায় হিয়া একটু দম নেবার জন্য একটু ঠোঁট টা সরে আকাশের দিকে মুখ টা তুলতেই উজান রাগে হিয়ার গাল ধরে হিয়াকে আবার কাছে টেনে হিয়ার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়।

উজানঃ দেখছো আমি আদর দিচ্ছি তারপরো তোমার বিরক্ত করা চাই(রাগে)

হিয়াঃ আমাকে শ্বাস টুকু তো নিতে দিন,,

উজানঃ না নিতে হবে না,,আমি শ্বাস দিচ্ছি না,,

উজান আবার আদর করার যুদ্ধে লিপ্ত হয় হিয়ার উপর,,আর এবার এটা এতোটাই তীব্র হয়ে আসে যে হিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ পানি ঝরে যায়,,এদের এ-ই কাজে আকাশের চাঁদ টাও আলো বিলাতে বিলাতে প্রচন্ড রকমের লজ্জা পেয়ে মেঘে লুকিয়ে যায়,,ব্যালকুনির গাছ গুলোও লজ্জায় বুঝি চোখ বুদে ফেলে,,না এ-ই মুহুর্তটা সামনাসামনি সহ্য করা খুবই কঠিন,,খুবই খুবই খুবই শিহরণ জাগানোর,,

হিয়ার ঠোঁট জোড়া নিজের সর্বস্ব দিয়ে গ্রাস করে শুষে নিয়ে উজান হিয়ার মুখ থেকে পায়ের পাতাতে অবধি নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়,,হিয়ার পায়ের আঙ্গুলের ভাঁজে চুমু আঁকতে আঁকতে উজান হিয়ার পায়ের তলায় সুরসুরি দিলে হিয়া খিলখিল করে হেঁসে উঠে,,হিয়ার ঔ মনকড়া হাসিতে আরো নেশা ধরে যায় উজানের,,উজান ঝুঁকে পড়ে হিয়ার উপর,নিজের সর্বশক্তি দিয়ে হিয়াকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে,,ইসস এ-তো শক্তি দিয়েও জড়িয়ে ধরে এটা উজানের কাছে কম মনে হচ্ছে, এর চাইতে বেশি শক্তি তার শরীরে থাকলে বোধহয় ভালো হতো,,হিয়াকে তখন বুকের হাড় হাড্ডি ভেদ করে নিজের কলিজার নিজের পাঁজরের মাঝে ডুবে নিতে পারতো সে তখন,,এদিকে হিয়াও প্রত্যেকদিনের মতো উজানের পুরোটা নিজের করে নিতে ব্যাস্ত, উজানের ঘার্মাক্ত খোলা পিঠে হিয়ার নখের আঘাত এতোটাই প্রখর ভাবে হানা দেয় যে এ-ই বুঝি সেখান থেকে রক্ত বেড়িয়ে আসে,,উজান মুখে ডোবায় হিয়ার গলার ভাঁজে হিয়া মুখ লুকায় উজানের কানের লতির কাছে!!

_______________🌈💙______________

পাঠকদের অভিযোগ না-কি গল্প শুরু হবার পর থেকে উজান হিয়ার মাঝে কোনো রোমাঞ্চ দেখানো হয়নি,,তাই আজ দেখিয়ে দিলাম,,এটাই প্রথম এটাই শেষ কিন্তু,,আর এসব আবদার করলে আমি কানে তুলো দিয়ে রাখবো এই বলে দিলুম🥱🥱বড় করে দিছি কেমন হলো আজ না জানিয়ে গেলে কিন্তু কাল আপডেট দিবো না,,হু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here