#মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি (১)
শেষমেষ বিয়ে টা ভেঙেই গেল! অনুষ্ঠান মঞ্চে সকলের সম্মুখে বরের মুখে রেড ওয়াইন ছুঁড়ে দিলো তিয়াশা। বিয়ের কনে তখন বিহ্বল তাকিয়ে।চেঁচিয়ে উঠে তিয়া। পা থেকে জুতো খুলে এগিয়ে যায় আ’ঘাত করতে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে জাপটে ধরে আওয়ান। তবে ততক্ষণে জুতো দিয়ে দুটো আঘাত করে নিয়েছে তিয়া।
” আমাকে ছাড়, এই হা’রামির বাচ্চা কে আমি মে’রেই ফেলবো। আমাকে কাল বিয়ে করবে বলে আজ এখানে বিয়ে করতে এসেছে। ছাড় আমাকে, জা’নোয়ার তোকে তো জুতো পেটা করবো আমি। ”
রওনাক এর অবস্থা কাহিল।পরিস্থিতি সামলানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। তিয়া যেন আরো রেগে যায়। স্টেজের সামনে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস গুলো একে একে ভাঙতে শুরু করেছে। কনের সামনে গিয়ে থেমে যায়। মেয়েটির দিকে আঙুল তুলে বলে
” এই মেয়ের জন্য, হা এই মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে প্রতারণা করলি? হা’রামি, জা’নোয়ার আজ তোর বিয়ে করার সাধ মেটাবো আমি। ”
মেয়েটার গ’লা চেপে ধরে তিয়া। সবাই চেঁচিয়ে উঠে। রওনাক ছুটে যায় সে দিকে। এবার কনে কে ছেড়ে রওনাক এর উপর হামলা করে। রওনাক এর জ্বিভ বেরিয়ে আসার উপক্রম। আওয়ান এতোক্ষণ মুখ টিপে হাসলে ও এবার তিয়া কে আটকায়। তিয়ার থেকে ছাড়া পেয়ে বার বার শ্বাস নেয় রওনাক। সকলে ছুটে আসলো ওর দিকে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। একজন লোক চেঁচিয়ে উঠলেন। সম্ভবত কনের বাবা তিনি।
” কি হচ্ছে টা কি! এই মেয়েটাই বা কে। এভাবে হামলা ই বা করছে কেন?”
” আঙ্কেল আমি আপনাকে পরে বোঝাবো সব। ”
” কি বুঝাবি তুই, কি বলবি ওনাদের। ”
কথা বলতে বলতে রওনাক এর কাছে চলে এসেছে তিয়া। আওয়ানের ইচ্ছে হচ্ছে মাটি তে গড়াগড়ি খেতে। তবে খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। রওনাকের কলার চেপে ধরে গালি প্রদান করলো তিয়া।
” হারা’মির বাচ্চা। মেয়ে মানুষ দেখলে হুস থাকে না তাই না। জ্বিভ দিয়ে পানি পরে। শুধু টাকা চাই তোর। ”
” দেখো তিয়া ভাষা খারাপ করবে না বলে রাখলাম। ”
দাঁতে দাঁত চেপে বললো রওনাক। তিয়ার রাগ বাতাসের গতিতে বৃদ্ধি পেল। সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিলো রওনাক কে। ধাক্কা সামলাতে না পেরে বর আসনের নিচে পরে গেল রওনাক। এতোক্ষন পর বিয়ের কনে তথা জারিন মুখ খুললো।
” কি হচ্ছে টা কি এসব? আমাকে কি পাগল মনে হয় সবার। আর রওনাক এসব কি! কে এই মেয়েটা? ”
” জারিন আমি… ‘
রওনাক কথা পূরণ করতে পারে নি তাঁর পূর্বেই অট্রহাসি তে ফেঁটে পরলো তিয়া। সকলের দৃষ্টি এখন ওর উপর। কিয়ৎক্ষন বাদে বললো তিয়া
” এই হা ‘রামির উদ্দেশ্যে হলো টাকা। যে যতো টাকা দিবে তাঁর সাথেই রিলেশন করবে। ”
” মানে? ”
” বোঝাচ্ছি আমি। এই যে ভোলা ভালা সুন্দর চেহারা টা দেখছো এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক নিকৃষ্ট মানুষ। ”
একটু থামলো তিয়া। আওয়ানের দিকে তাকাতেই আওয়ান ইশারায় আশ্বস্ত করলো। তিয়া বলা শুরু করলো
” প্রথমে তোমাকে সাহায্য করবে। তারপর নানা বাহনা পাকিয়ে তোমার থেকে টাকা নিবে। কথার জালে ফাঁসিয়ে দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলবে। আর সর্বশেষ যেখানে সুবিধা পাবে সেখানেই বিয়ে করবে অথবা বিয়ের অভিনয় করবে। তোমার টাকা শেষ হয়ে গেলে, প্রয়োজনে তোমায় বিক্রি করে দিবে লম্প’ট টা। ”
রওনাক শুকনো ঢোক গিললো। তিয়াকে না থামালে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তিয়ার দিকে এগোতে গেলেই বাঁধা হলো আওয়ান। ফিস ফিস করে বলল
” বেশি বার বেরো না খোকা ঝড়ে পরে যাবে। ”
কটমট করে উঠলো রওনাক। সেসব দেখার সময় সুযোগ নেই কারো। সবার দৃষ্টি তিয়াকে ঘিরে। তিয়া বলছে
” আমার সাথে রিলেশন করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছে। এই যে একটু আগে ও আমাকে বললো তোমার বাসায় না মানলে কালকেই বিয়ে করবো আমরা। অথচ এ দিকে বর সেজে আছেন ওনি। না জানি আর কতো জনের সাথে প্রতারণা করে চলেছে। ”
” আঙ্কেল এই মেয়েটা মিথ্যে বলছে। ”
” মিথ্যে বলছি আমি? ওয়েট দেখাচ্ছি প্রমান। ”
ফোন বের করলো তিয়া। রওনাকের ভয়েস রেকর্ড টা শুনিয়ে দিলো সবাই কে। রাগে আক্রোশে ফেঁটে পরলো জারিন। গলায় থাকা মালা টা দুমরে মুচরে ফেলে দিলো। রওনাক বার বার চেষ্টা করছে ওকে থামাতে। কিন্তু ওকে তোয়াক্কা না করেই চলে গেল জারিন।
মাথার চুল গুলো খামচে ধরলো রওনাক। ওর সম্মুখে এক দলা থু থু ফেলে চলে গেল তিয়া। খিটমিট করে হেসে উঠলো আওয়ান। রওনাকের ব্লেজার এর কলার ঠিক করে দিয়ে বলল
” খেল খতম জামাই রাজা? ”
” আওয়ান তোকে আমি ‘
” আহ আহ আওয়ান নয়, বল আরহাম আওয়ান। বেটা শুধু সারনেম এ ডাকে কেউ, গিভেন নেম কি তোর বাপ এসে বলে যাবে। ”
” মুখ সামলে কথা বল আওয়ান। ”
” বিগ জিরো ম্যান, তোর মতো মানুষের সাথে কথা বলতেই আমার গা ঘিন ঘিন করে। ”
রওনাক এর টাই টা জোড়ে গলায় লাগিয়ে দিয়ে ছুট লাগায় তিয়ার পানে। তিয়া কাঁদছে, চোখের পানি নাকের পানি এক করে নিয়েছে। মনোযোগ পেতে খ্যাক খ্যাক করে কাশলো আওয়ান। তিয়া গড়গড় করে বলল
” দেখ তুই আমাকে লেগপুল করবি না একদম। তাহলে আমি পানি তে ঝাঁপ দিয়ে ম’রে যাবো। ”
” হা আসছে আমার পানি তে ঝাঁপ দিয়ে ম’রে যাওয়া ত্যাগী। ”
” আমি এখন মজা করার মুড এ নাই। একা থাকতে দে আমায়। ”
” থাক একা বারন করেছে কে? ”
” আওয়ান প্লিজ। ”
বিরক্তিকর শব্দ করে একটু দূরে অবস্থান করলো আওয়ান। ওপাশ থেকে নানান রকমের কান্নার আওয়াজ কানে এসে লাগছে। যেন মেঘ ডেকেছে আর বৃষ্টি ও সাড়া দিয়েছে। তাই তো অঝর ধারায় কেঁদে চলেছে তিয়া।
*
পরিবেশের বাতাবরণ মিহি সুন্দর আজ। আকাশে মেঘ জমেছে যেমন তেমনি জমে আছে রোদ্দুর। ছোট সময়ে বায়ুমণ্ডলের এই বিশেষ রূপ টা কে কতো ধরনের ছড়া তে সাজাতো তিয়া। হালকা রোদ্দুরে মাঝে যখন বৃষ্টি পরতো তখন বলতো ” রোদ হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে, খেক শিয়ালের বিয়ে হচ্ছে। ”
কৃত্রিমতার থেকে প্রকৃতি কে বেশি অনুভব করে তিয়া। ওর মনে হয় মেঘ আর বৃষ্টির খুব ভালো একটা সম্পর্ক রয়েছে। এই যে মেঘ ডাকলেই বৃষ্টি চলে আসে সব কিছু তুচ্ছ করে। হাত দুটো বুকে চেপে ধরে এক ফালি শ্বাস নিলো সে। বাতাসে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। সে ঘ্রাণ নাকে প্রবেশ মাত্র কম্পন সৃষ্টি করলো ওর দেহ। বিড়বিড় করে বলল
” বাতাস তুই কি হবি আমার প্রাণ? মেঘের ডাকে বৃষ্টি যেমন সাড়া ফেলে তেমন করে তুই কি আমার ডাকে সাড়া দিবি। মেঘ বৃষ্টির মতো করে আমরা কি একটি গল্প লিখতে পারি না? এতো টাই তুচ্ছ আমি! ”
মেয়েটার কথায় ব্যথা ছড়িয়ে পরলো। মৃদু হাসির ছন্দ একে ঘরে প্রবেশ করলো আওয়ান। তিয়া বুঝতে পারলো অসময়ে কে এসেছে। কাউচের উপর গা এলিয়ে দিয়ে আওয়ান বলল
” কি রে আজকাল হিংসে করছিস খুব। ”
” কিসের হিংসে, কার সাথে হিংসে করছি আমি? ”
” ঐ যে বললি মেঘ বৃষ্টির মতো কেউ তোর ডাকে সাড়া দিবে কি না। ”
” কেউ বলি নি, বলেছি বাতাস আমার সঙ্গ দিবে কি না। বেশি বেশি বলিস না তো। ”
” হুম অবশেষে বায়ুমণ্ডলের সাথে প্রেম করার শখ জেগেছে। তা বায়ুমণ্ডলের কয় স্তর আছে জানিস তো?”
” দেখ আওয়ান আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ যা এখন। ”
ধপ করে কাউচ ছেড়ে উঠে গেল আওয়ান। তিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।ঠোঁট দুটো কৃশ করে সুর বাজালো, তিয়া কে উদ্দেশ্যে করে বলল
” বয়েই গেছে আমার। এসেছিলাম কারন আন্টি বললো তুই নাকি ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা না হয়ে খাবারে উপর অভিমান করেছিস। তাই ডাকতে এসেছিলাম। ”
” হয়েছে এবার যা তুই। ”
” আগে খাবার শেষ করবি তারপর যাবো আমি। ”
” আওয়ান প্লিজ, যা। একটু একা থাকবো আমি। ”
” তোর সাথে কেই বা থাকতে চেয়েছে। ”
” ধ্যাত, যা আসছি আমি। ”
স্মিত হাসি ফুটালো আওয়ান। আঙুল উঁচিয়ে বলল
” পাক্কা? ”
” না চার ছক্কা। ”
শব্দ করে হেসে উঠলো দুজনেই। তিয়া তোয়ালে নিয়ে ওয়াসরুমের দিকে আগালো। ওর জীবনে আওয়ানের অবস্থান কিছু টা মেঘ না চাইতেই জলের মতো। হুট হাট মন ভালো করে দিবে।
তবে অনাকাঙিক্ষত ধাক্কা টা এখনো সামলাতে পারে নি। হাজার হোক রওনাক এর প্রতি একটা অনুভূতি তো ছিলোই তাই না।
** বেশ প্রিয় চরিত্র এগুলো। আশা করি সকলের মন কে স্পর্শ করে যাবে। সকল কে একটি অনুরোধ অনেকেই বলেছে যে পোস্ট তাঁদের নিকট পৌছায় না। তাই যাদের নিকট পোস্ট টি পৌছেছে তাঁরা সাধ্য মতো রেসপন্স করিয়েন। পরিশেষে বলবো আমি আমার পুরনো পাঠক দের খুব মিস করি যাদের আনোগোনা নেই বললেই চলে। **
#ফাতেমা_তুজ
#সূচনা_পর্ব