#চড়ুইপাখির_অভিমান🕊️
#এক্সটা_পর্ব
#লেখনীতে_নন্দিনী_নীলা
শুভ্রতা রুমে শুয়েছিল আর ভাব ছিল নিজের ভুলের জন্য নিজের পরিবার হারাতে হলো। যাকে বিশ্বাস করেছিল সেও ঠকালো। এখন পড়ে আছে কোথায়? যাকে চেনে না জানে না। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মানুষের বাসায় আশ্রয় নিল। নিজের ভুলের মাশুল আমাকে এভাবে দিতে হলো। এসব ভেবে ভেবে শুভ্রতা ডুকরে উঠেছিল।
এভাবেই শুভ্রতা ঘুমিয়ে পড়ে। শুভ্রতার ঘুম ভাঙ্গে ফোন রিংটোনে। ও লাফিয়ে উঠে বসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মায়ের কল।
‘ হ্যালো আম্মু।’
‘ শুভ্রতা তুই কোথায় মা। ওইভাবে কেন পালিয়ে কোথায় চলে গেলি। বাড়িতে তো হুলুস্থুল অবস্থা। তুই ঠিক আছিস তো। আমি তোর কথা বিশ্বাস করেছি আর কেউ না করুক। তোর সাথের ছেলেটা তোর বয়ফ্রেন্ড না কিনা আমি জানি। যেই হোক তুই কার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল আর ওই ছেলেটা কে আমি এসব জানতে চাই না। তুই ফিরে আয় মা। কেউ আমার কথা শুনছে না। তুই আমার কাছে চলে আয় চলে আয়। আমি তোর নানু বাড়ি আছি। সবাই খুব ঝামেলা করছে তুই যেখানেই আসিস তোকে ওই ছেলেটাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না তোর বাবা। তুই আমার কাছে চলে আয়। আমি চাই না। পর পুরুষের সাথে তুই থেকে আর নিজের দিকে খারাপ দৃষ্টি না দেখাস মানুষ কে। আমি তোর বাবাকে ভালো করে বুঝিয়ে ঠান্ডা করব। তুই কোথায় আছিস বলো নিরব তোকে নিতে আসবে।’
‘ আম্মু আমার কথা শোনা।’
‘আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না তুই কোথায় আছিস ঠিকানা বল।’
শুভ্রতার কথা না শুনে ঠিকানা নিয়ে ওর মা ফোন কেটে দেয়। শুভ্রতার নানু বাড়ি এসে লুকিয়ে থাকে। এদিকে স্পর্শের কথা শুভ্রতা ভুলেই যায়। তার জন্য যে তার বাবা স্পর্শের বাসায় পুলিশ পাঠালেন সেসব কিছুই শুভ্রতা জানে না। স্পর্শরা সবাই পাগলের মতো ওকে খোঁজে পায় না। একটার দিকে শুভ্রতার স্পর্শের কথা মনে আসে আর তারাতাড়ি কল করে। কাল রাতেই নাম্বার দিয়েছিল স্পর্শ কোন দরকার হলে যেন কল করে বাইরে গিয়ে না খোঁজে।
তখন স্পর্শের কাছে অনেক ক্ষমা চায় শুভ্রতা আর স্পর্শ অনেক বকাবকি করে এমন কৃতজ্ঞহীনতার মতো কাজ দেখে।
তারপর থেকে স্পর্শ শুভ্রতার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। পুলিশের হানা দেয় নি মনে হয় ব্যাপারটা শুভ্রতার বাবা জেনে গিয়েছে। স্পর্শ আর তাদের খোঁজ নেয়নি।
আমাদের বাসায় এসেছি সন্ধ্যায়। আমাদের ওখান থেকে আব্বু আম্মু বাদে সবাই গিয়েছিলো বৌভাতের অনুষ্ঠানে। আসার পর থেকে আমার একটা মাত্র জামাইকে নিয়ে বসে আছে আমার কাজিন আর বান্ধবীরা জানিনা ওর সাথে কি আলাপ করছে আমাকে ওরা রুম থেকে বের করে দিয়েছে কারণ আছে এর ও। আসার পর আমি সরাসরি স্পর্শ কে রুমে এনে দরজা আটকে জিজ্ঞেস করেছি,
‘এবার বলুন তো শুভ্রতার খবর কিভাবে পেলেন? আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছেনা ওই মেয়ে ওইভাবে কোথায় চলে গিয়েছে আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে!’
স্পর্শ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই সামান্য কথা জানার জন্য তুমি ঘর শুধু লোকের সামনে আমাকে নিয়ে দরজা আটকালে?’
‘ তো কি করবো সবার সামনে জিজ্ঞেস করবো নাকি। এটা আমাদের গোপন ব্যাপার না। এই বাসার কাউকে এসব জানানোর দরকার নাই। কেউ যাতে শুনতে না পাই এজন্য তো এই কাজ করল।’
স্পর্শ মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘তোমার মাথায় আর বুদ্ধি সুদ্ধি কোনদিন হবে না! সবার সামনে যে দরজার আটকালে সবাই এখন কি ভাবছে? ছিহ ওই দেখো কিভাবে দরজা ধাকাচ্ছে।’
‘বাদ দেন এসব আমার শয়তান কাজিন আর বান্ধবী গুলা করছে। আপনি আগে আমাকে সব বলেন তার পরে দরজা খুলবে এর আগে দরজা খুলব না।’
স্পর্শ বাধ্য হয়েই কথাটা শর্টকাট আমাকে বলল। সব শুনে ইচ্ছেমতো আমি শুভ্রতা আর ওর মাকে বকলাম। ওদের জন্য আমার বৌভাতের অনুষ্ঠানে মাটি হচ্ছিল। তারপরে দরজা খুলতেই বিচ্চু বাহিনির দল আমাকে ধাক্কিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকে বলল,
‘একদিনেই আমাদের সবাইকে পর করে দিলি।এসেই জামাই নিয়ে দরজা আটকে বসে আছিস বেশরম মেয়ে।’ কথাটা বলল আমার কাজিন ফাতেমা আপু। উনি কেমন জানি করে কথা বলেন সব সময় মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার আমি কিছু বলতে যাব আপু থামিয়ে দিল। আমি মুখে ভেংচি কেটে চলে গেলাম রুম থেকে।
স্পর্শ তারপর থেকে তাদের সাথেই আছে। আমি বাইরে বসে আছি আমার চাচাতো বোন মাইশা আপুর এক ছেলে নিয়ে।
নিঝুম এসে ধাক্কা মেরে আমার পাশে বসলো। আমি পরতে গিয়ে পরলাম না।
‘ ওই নিঝুর বাচ্চা আমারে ধাক্কা মারলি কেন?’
আরেক ধাক্কা নিঝুম কে মেরে বললাম আমি। নিঝুম সোফা থেকে পরে আমাকে চিৎকার করে বলতে যাবে আমার একমাত্র আম্মু আমাকে বাঁচাতে চলে এলো। না হলে নিঝুম উঠে যে আমাকে কি মারটায় না দিত। নিঝুম কে নিচে পড়ে দেখে আম্মু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,,
‘ কি হয়েছে নিঝুম নিচে বসে আছো কেন?’
নিঝুম আমতা আমতা করে বলল, ‘না মানে আন্টি….
রাগী চোখে নিঝুম আমার দিকে তাকালো। আমি মিটিমিটি হাসছি। নিঝুম লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর আমার গা ঘেষে বসে পরলো।
‘ আসলে আন্টি আমি মজা করে নিচে বসে ছিলাম।’
‘ এটা আবার কেমন মজা?’
‘ আপনি বুঝবেন না। চলেন পিঠা খাবো তৈরি করা তো শেষ তাই না।’
‘ হুম। স্পর্শ ও তার বন্ধুদের নিয়ে দাও তোমরা ও খাও।’
‘ আচ্ছা।’
নিঝুম আমাকে টেনে পিঠার প্লেট আনতে নিয়ে গেল। দুজনে দুই হাতে ইয়া বড় বড় দুইটা টে নিয়ে রুমে এলাম। স্পর্শ দুই ছেলে বন্ধু ওর সাথে এসেছে আমাদের বাড়ি। সবাইকে পিঠা দিলাম। স্পর্শ আমাকে সবার অগোচরে হাত টেনে ওর পাশে বসিয়ে দিলো আর আমার কানে ফিসফিস করে বলল,
‘ আমি সেই কখন থেকে একা একা চুপ করে এখানে বসে আছি অসহায়ের মতো। আর এখানে বেয়াই বেয়ানরা সারা রাজ্যের গল্প জোর দিচ্ছে। তুমি আমাকে এখানে একা ফেলে কোথায় হারিয়ে গেছো হ্যাঁ? বাপের বাড়ি এসে দেখি আমাকে একদম ভুলেই গেছো। খোঁজ নিচ্ছ না।’
‘ আপনার খোঁজ নিতে না ওদের সবাইকে রেখে গেলাম। আমার খোঁজ নেওয়াই তো কেউ নাই এটা একা বাইরে বসে আছি কেউ আমাকে এখানে আসতে দিচ্ছে না।’
‘ সবাইকে দিয়ে আমার কোন কাজ নাই। আমার একজন থাকলেই হবে। চুপ করে আমার পাশে এখানে বসে থাকো।’
‘ আমার হাত ছারুন। আমি এখন বসতে পারবো না।’
বলেই আমি স্পর্শের হাত থেকে হাত ছাড়াতে টানাটানি করতে লাগলাম। কিন্তু স্পর্শ ছাড়ার বদলে আরো শক্ত করে ধরে বলল,
‘ দেখি তোমার কতো শক্তি হয়েছে। ছাড়াতে পারলে ছাড়িয়ে নিয়ে যাও।’
আমি অনেক টানাটানি করেও একটুও ছাড়াতে পারলাম না। উল্টা ব্যাথা হয়ে গেল হাত
আমি অসহায় মুখ করে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ আমি ব্যাথা পাচ্ছি। আপনি জেদ করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন!’
আমার নরম কোমল গলার কথা শুনে স্পর্শ আমার হাত তুলে কয়েকটা চুমু দিল। আমি ভাবলাম এবার বোধহয় হাত ছাড়বে কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে আবার নরম করে ধরে বলল,
‘ কথা আর টানাটানি বাদ দিয়ে বসে থাকো নাহলে আরো ব্যাথা পাবে।’
‘ ধ্যাত!’
স্পর্শ পিঠা খাচ্ছে তো আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে সেসব দেখে মিষ্টি আর ধারা মিটিমিটি হাসছে আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করছি ওদের দিকে। ওরা ফোন বের করে কি জানি করছে আমি ভাবছি ওরা কি করছে?
ছবি তুলছে না তো?
আমি চিৎকার করে উঠলাম,
‘ ওই মিষ্টি তোরা আমার ছবি তুলছিস কেন এখন? এমনিতেই তো অনেক বলি ছবি তুলে দে তখন তো তোরা তুলিস না এখন লুকিয়ে তুলছিস কেন?’
ওরা তারাতাড়ি ফোন লুকিয়ে ফেলল। আমি ও বোকা বনে গেলাম এই ভাবে সবার মাঝে চিৎকার করাটা ঠিক হয়নি। সবাই তাকিয়ে আছে। স্পর্শ টেনে আমাকে বসিয়ে দিল। আর বলল,
‘ গাধা একটা।’
#চলবে….