#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড
কলমে: ইয়াসমিন
পর্ব:২৫
দূর থেকে ফজরের আযানের সুর ভেসে আসছে। সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কাছাকাছি সব মসজিদে আজান শেষ। কক্ষে আবছা আলো বিরাজ করছে। উন্মুক্ত জানালা দিয়ে শো শো করে বাতাস এসে পর্দা নাড়িয়ে দিচ্ছে। শীত শীত অনুভব হচ্ছে। অধরা পাশ ফিরে মেয়ের মুখটা দেখে নিলো। মেয়েটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নিশ্বাস উঠানামার সঙ্গে সঙ্গে ছোট শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। জ্বরের প্রকোপে চোখ মুখ শুকিয়ে আছে।অধরা কহিনুরর কপালে হাত রেখে উষ্ণতা দেখে নিলো। একদম ঠিক আছে। জানালা বন্ধ করা জরুরি তাছাড়া নামাজ পড়তে হবে। মেয়েটাকেও তুলতে হবে কথাটা ভেবে ও উঠে বসলো। হঠাৎ খেঁয়াল হলো জুবায়ের কক্ষে নেই। দরজা হালকা চাপানো আছে। খটকা লাগলো লোকটা এতো সকালে কোথায় গেলো? অধরা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে জানালা বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমের আবছা আলোতে দেখা গেলো জুবায়ের পাইচারী করছে। ঘনঘন এদিক থেকে ওদিকে হাঁটতে। মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। অধরা ভ্রু কুচকে নেমে আসলো উপর থেকে। কৌতূহল কাজ করছে। এই লোকটার আবার কি হলো কে জানে। হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনে জুবায়ের থমকে গেলো। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক রেখে পেছন ফিরে প্রশ্ন করলো,
> বাইরে কেনো? মেয়েটার জ্বর কমেছে?
অধরা উত্তর দিলো না। জুবায়ের কাছে এসে কন্ঠ নামিয়ে বলল,
> আপনি সাত সকালে এখানে কি করছেন? কিছু নিয়ে কি আপনি চিন্তিত?
জুবায়ের হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু হলো না। কোনোরকমে ফিসফিস করে বলল,
> ঘুম আসছে না। জামসেদের সঙ্গে কথা বলা জরুরী। মেয়েটা এতবছর কোথায় ছিল আর আজকে নূরের সঙ্গে এখানে কি করছিল জানতে হবে না?
অধরার বিস্ময় কাটছে না। বলে ফেলল,
> আপনি তো তখন উদ্ভট কাণ্ড করে আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন এখন নিজেই অশান্ত হয়ে আছেন ঘটনা কি? আপনি কিন্তু নিজে নিজে মাতব্বরি করতে যাবেন না। যতবার করছেন কিছু না কিছু ভূল করেছেন। আর না।
জুবায়ের হাঁটা থামিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। হেলান দিয়ে বলল,
> আমি কহিনুরের জন্য জামসেদের কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পাচ্ছি। সেদিন সুড়ঙ্গে থাকা মহিলার চিৎকার তুমি শুনেছিলে না? আমার মনে হচ্ছে সেটা মীরা ছিল। কহিনুর ওকে নিয়ে এসেছে। আরেকটা কথা সুলতান পরিবারের মেয়েদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিয়ের কথা ভাবলেও সেই ছেলের জীবন নিয়ে টা/না/টানি পড়ে যায়। বাঁ/চার চিন্তা বাদ। সেখানে কহিনুরের বিয়ে হয়ে গেছে তবুও পাথর একদম সুস্থ কিছু হয়নি কিভাবে সম্ভব?। আজকে মেয়েটা একা একা অসুস্থ অবস্থায় সুড়ঙ্গ পযর্ন্ত চলে গেলো এটা কি স্বাভাবিক লাগছে বলো? একমাত্র ওর অ/ভি/শা/প কাটলেই কিন্তু এসব সম্ভব হতো। আমার কেমন জানি কহিনুরকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে। জামসেদের থেকে হারিয়ে যাওয়া পাথরটা কোনো অবস্থায় কহিনুরের কাছে যদি চলে আসে তবে কিন্তু খুব বি/প/দ। ওর বয়স কম। শ/ত্রু/রা সুযোগ নিতে চাইবে। ও যার সঙ্গে থাকবে সেই ওকে বশে নিতে চাইবে। কালো শক্তির প্রভাব পড়বে ওর উপরে। মেয়েকে আমরা হারাবো। তোমাকে আমি টেনশনে ফেলতে চাইনি তবুও কিছু করার নেই। বলতে হচ্ছে।
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে থামলো। অধরার চোখেমুখে আ/ত/ঙ্ক খেলা করছে। কি হবে মাথায় কাজ করছে না। আবারও কি জুবায়েরকে ছেড়ে অন্য কোনো দেশে পাড়ি দিতে হবে? আর সম্ভব না অনেক হয়েছে। ও হাত পা ছেড়ে দিয়ে জুবায়েরের কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বসে পড়লো। বিড়বিড় করে বলল,
> কহিনুর কথা বলতে পারেনা অ/ভি/শাপ কাটলে তো কথা বলতে পারতো তাইনা? তাছাড়া আপনার বোনরাও তো বোবা বধির আছে এখনো।
জুবায়ের বিষয়টা চিন্তা করে বলল,
> এর পেছনে আরও কিছু থাকতে পারে তবে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে কহিনুর আর এই পরিবারের মেয়েদের উপরে থাকা অ\ভি\শাপ কেটে গেছে। আমরা শুধুমাত্র সামান্য কিছু জানি। আরও কাহিনী আছে বুঝলে? শুনো আমি দ্রুত তোমাদের টিকিটের ব্যবস্থা করছি। এখানে আর না। শ/ত্রু/রা ঘাড়ে বসে নিশ্বাস নিচ্ছে যেকোনো সময় ঝাপ দিয়ে পড়বে।
> ভয় দেখাচ্ছেন কেনো? আপনাকে ছেড়ে আর যাচ্ছি না যতই বিপদ আসুন।
অধরা আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হলো না জামসেদ উপর থেকে নেমে আসলো। ওকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে দুজনেই চুপ থাকলো। জামসেদ সোজা ওদের পাশে গিয়ে বসলো এই প্রথমবার ছেলেটাকে ওরা এভাবে শান্ত হতে দেখলো। জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> মীরা কিছু বলেছে? ও কোথায় ছিল এতদিন? হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো এর পেছনে কে ছিল কিছু জানা গেছে?
জামসেদ চোখ বন্ধ করে নিলো। সারা শরীর মন জুড়ে অবসাদ বিরাজ করছে। এতদিন ভাবতো মেয়েটা ওকে ফেলে কারো সঙ্গে পালিয়ে গেছে তাই প্রতিশোধ নিতে কি না কি করেছে সেই পাপের হিসেব নেই। ড্যাডের পরামর্শে কালো জাদুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছে সঙ্গে শয়তানের উপসনা পযর্ন্ত করেছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত কি হলো? মেয়েটা ভালো ছিল না। এই বাড়ির নিচের সুড়ঙ্গে আটকে ছিল। ওকে কে আটক রেখেছিল মেয়েটা নিজেও বলতে পারছে না। এক রাতে ঘুমিয়ে ছিল সকালে উঠে নিজেকে অচেনা পরিবেশে পেয়েছে। তারপর থেকে ওখানেই আছে। বিস্তারিত ও সুস্থ হলে জানা যাবে। জামসেদ উত্তর দিলো,
> ও কিছু বলতে পারছে না। আমাদের বাসার নিচে থাকা গোপন কক্ষ থেকে কহিনুর ওকে উদ্ধার করেছে। আমি রাতে সেখানে গিয়ে চেক করেছি কিছু পাইনি। পরপর তিনটা কক্ষ রয়েছে। একটা কক্ষে কালো জাদুর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আমি খোঁজ করছি কে এমন ঘৃণিত কাজের সঙ্গে জড়িত তাকে আমি ছাড়বো না। আমাকে চিনে না এবার চিনবে।
জুবায়ের কিছু ভেবে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,
> মিরা অ/ভি\শপ্ত সঙ্গে বোবা বধির ছিল ওকি কথা বলতে পারছে? কিভাবে সম্ভব?
জুবায়েরের সঙ্গে অধরাও বেশ চমকে গেলো কিন্তু জামসেদ মোটেও চমকালো না। যেমন ছিল তেমনিভাবে বলল,
> অ/ভি/শাপ নেই তবে বড় অ /ভি/শাপ সামনে। ড্যাড বা দাদু কিছু জানার আগে কহিনুরকে নিয়ে তোরা সকালের আগেই এখান থেকে পালিয়ে যা। তোরা জানিস না এই বংসের মেয়েরা অ/ভি/শপ্ত অর্ধমানবকে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করে। ওরা নারী লোভী সঙ্গে অত্যাচারী। এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যার সঙ্গে ওরা জড়িত নেই। বোন ফুপিদের সঙ্গে যাদের বিয়ে হয়েছে ওরা এক একটা শ/য়/তা/নের বা/চ্চা। বছরের সবগুলো সময় ওরা এসব কাজে লিপ্ত থাকে তারপর একটা নিদ্দিষ্ট সময়ে এখানে আসে। মেয়েগুলোর জীবন ওরা ন/রকে পরিণত করেছে। জানি আমি খারাপ বিশ্বাস করা যায়না কিন্তু কখনও চাইনি আমার বোনদের জীবনটা এমন হোক। তাছাড়া কেউ দাসত্ব করতে চাইনা আমিও চাইনি। আমি শুধুমাত্র দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পাপের সঙ্গে জড়িয়েছি। কহিনুর নিজেও জানেনা আমাকে ও কি ফিরিয়ে দিয়েছে এই ঋণ আমি জীবন দিয়ে হলেও শোধ করবো দেখে নিও। ওর বয়স কম। পৃথিবীর কিছুই ওর চেনাজানা নেই কিভাবে শ\ত্রু\র সঙ্গে মোকাবেলা করবে তোমরাই বলো? আমি চাইনা ও এখানে থাক আর শ\য়\তা\ন\গুলো ওকে পেয়ে যাক ।
জামসেদের গলা কাঁপছে। অধরা জুবায়েরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে ভয় পাচ্ছে। আবারও নতুন ঝামেলা শুরু। এক ঝামেলা শেষ হয়না আরেকটা এসে হাজির হয়। ভেবেছিল কহিনুরের জন্ম হলে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু এখন সব উল্টো। মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখা কষ্ট। অধরা চোখে পলক ফেলে বলল,
> এই মূহুর্তে আমরা কোথায় যাবো? আমার ভয় করছে। তাছাড়া এই বাড়িতে বাইরের কেউ তো আসছে না। শ/ত্রু/রা তো আর কহিনুরের কথা জানেনা।
জুবায়ের অধরাকে সাপোর্ট করলো কিন্তু জামসেদ প্রতিবাদ করে বলল,
> ঘরের শ/ত্রুতে বেশি ক্ষতি করে আর গতকাল আধার নামের ছেলেটার পরিচয় জানো? ওর পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানো? আমাদের মেজো বোনের স্বামী ওর আপন চাচা। বুঝতে পারছো কী বলতে চাইছি? ওরা একা নেই ওদের বংশ বিস্তার কতদূর পর্যন্ত সে খবর জানো? কিছুই তো জানো না। তোমাদের মনে প্রশ্ন আসেনা এই অর্ধমানবগুলো কে বা এদের সঙ্গেই কেনো আমাদের পরিবারের মেয়েদের বিয়ে হয়? আর কিসের বিয়ে? না মুসলিম রীতি, না সনাতন, না খ্রিস্টধর্ম কোনো ধর্মমতেই এসব বিয়ে হয়নি। ওরা তো কোনো ধর্ম মানেই না। আমি শয়তানের উপাসনা করেছি তবুও আমি আল্লাহকে মানি। প্ররোচনাই পড়ে খারাপ পথে গিয়েছি শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য। কখনও হৃদয় থেকে জোরকরে বলতে পারিনা আমি সৃষ্টিকর্তাকে মানিনা। আমার কথা ছাড়ো অর্ধমানবগুলোকে শেষ করতে আর এই বিশাল কালো জাদুর ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে কহিনুরকে খুব দরকার। সেই জন্য ওকে কিছুটা সময় দিতে হবে। ও হুটহাট অনেক অদ্ভুত কাজকর্ম করবে সেসব আমাদের কৌশলে ধামাচাপা দিতে হবে। ও নিজের কাজে নিজেই ঘাবড়ে যাবে ওকে শক্ত হাতে বোঝাতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। এক সময় আমি চেয়েছিলাম কহিনুরের শক্তি নিজের করে পেতে।যদি মীরাকে না পেতাম হয়তো এখনো চাইতাম কিন্তু মেয়েটা আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি আর কিছু চাইনা। আর শুনো দাদুর জেগে উঠার আগেই সরে যাও। দাদুর পেছনে আছে আরেক রহস্য সেটা শুনলে ভয়ে তোমাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে পরে একদিন বলবো। উনার বয়স নিয়ে তোমাদের মনে প্রশ্ন আসেনি কেনো এটাইতো বুঝতে পারছি না।তোমাদের টিকিট নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি ম্যানেজারের সঙ্গে রাতেই কথা বলেছি। তাছাড়া কহিনুরের ভিসার কাজ আগেই করেছিলাম। আপাতত যেভাবে আছো বেরিয়ে পড়ো। সূর্য উঠলে দাদুর ঘুম ভাঙবে। ড্যাডের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে না।
জামসেদ জড়তা ছাড়া কথাগুলো বলে দিলো কিন্তু জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> আমাদের সাহায্য করে তোমার তো কোনো লাভ হবে না। আমি যতদূর জানি যারা কালো যাদুর সঙ্গে জড়িত ওরা আমানতকারীর খেয়ানত করতে উস্তাদ। তাছাড়া ওরা মানুষকে ঠকায় কৃতজ্ঞতার ধার ধারে না। কিভাবে তোমাকে বিশ্বাস করবো? মিথ্যা বলতে পারো। তুমি আমার মায়ের হত্যাকারী। আমার সঙ্গে যেটা করেছো ভূলে যায়নি। তোমার জন্য আমি তিনমাস হাসপাতালে ছিলাম। ম/রে যেতাম আল্লাহ সহায় ছিল নয়তো কখনও স্ত্রী কন্যার মুখ দেখা হতো না। আমার স্ত্রীর দিকে খারাপ নজর দিয়েছো সবটা জানা আছে। কিছু বলার আছে তোমার?
জুবায়ের নিজের রাগটা প্রকাশ করে দিলো ও কথা চেপে থাকতে পারে না। রাগ উঠলে হড়বড় করে পেটে যা আছে বলে দেয়। অধরা ওর হাত খামচে ধরে থামার ইঙ্গিত দিয়েছিল কিন্তু জুবায়ের ওকে পাত্তা দিলো না। বহুদিনের রা/গ ক্ষো/ভ বেরিয়ে আসলো।
তাছাড়া ওর বলা প্রতিটা কথায় সত্যি। জামসেদ হাত জোড় করে বলল,
> আমি বলেছি তো আমি ভালো না। আমি খারাপ তবে সব সময় চোখের দেখাও ঠিক হয়না। দৃষ্টির অগোচরে কিছু থাকে যা আমাদের জানার চেষ্টা করতে হয়। তোমার অভিযোগ গুলো আমি মাথা পেতে নিচ্ছি তবে সত্যিটা যেদিন সামনে আসবে সেদিন আমি এভাবে থাকবো না। মাথা উচু করে তোমার সামনে থাকবো। আমাকে যায় বলো মানছি তবে প্লিজ এই বাড়িতে থেকো না। কহিনুরকে বাঁচাও।
জুবায়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। জামসেদ সত্যি বলছে কি তাঁর চক্ষুস প্রমাণ নেই মুখের কথা ছাড়া । শয়/তা/নের কাজ মানুষকে ধোঁ/কা দেওয়া জামসেদ যে ধোঁকা দিচ্ছে না তাঁর প্রমাণ কি? মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু খটকা তো থাকছে আধার নামের ছেলেটাকে নিয়ে। অধরা নিজে বলেছে ওই ছেলে চোখেমুখে রহস্য ছিল। থাকতেই পারে সমুদ্রের তীরে পড়ে থাকা লকেট পেয়ে মালিকের বাড়িতে পৌঁছে যায় কিভাবে মানুষ? সব শক্তির খেলা। জুবায়ের কথাটা ভেবে বলল,
> অধরা দ্রুত কক্ষে যাও কহিনুরকে আনো। আমি লাগেজ নিয়ে আসছি। সঙ্গে কিছু নিতে হবে না।
কথাটা শুনে জামসেদ দম ফেলে বাঁচলো। জুবায়ের ওকে বিশ্বাস করেছে এটাইতো অনেক। মীরা ঘুমিয়ে আছে। মেয়েটার শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। বিয়ে তো সেই কবেই করে নিতো। দাদু নয়তো ড্যাড ওকে লুকিয়ে রেখেছিল বোধহয়। তাছাড়া মেয়েটা মানব নিষিদ্ধ মানবি ছিল বিধায় জামসেদের সঙ্গে ওকে মানতে পারেনি। নিজেদের বিপদ আটকাতে আর জামসেদকে হাতের মুঠোয় নিতে ওদের এই জঘন্য পরিকল্পনা। মীরাকে এখানে রাখা চলবে না তাই ওকে নিজের গোপন জায়গায় রেখে এসেছে। মেয়েটা কথা বলতে পারছে কিন্তু আর বাকিরা পারছে না কেনো ওর জানা নেই। সে যাইহোক সব দূরুত্ব এভাবে ঘুচে যাবে। আজকের মধ্যেই ও মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলবে। দাদুর চোখে খারাপ হলে সব সর্বনাশ। কথাটা ভেবে ও কক্ষে ফিরে গিয়ে একটা লাগেজ এনে জুবায়েরকে দিয়ে বলল,
> টাকা নিয়ে চিন্তা নেই। এখানে যথেষ্ট টাকা আছে। দরকারি কাগজপত্র রাখা আছে। ওখানে গিয়ে আমাকে ফোন করো না। আমি ঠিক তোমাদের খুঁজে নিবো। আর কহিনুরকে বাইরের চলাফেরাটা শেখাতে হবে।
কিছুক্ষণ থেমে ও পকেট থেকে একটা লকেট বের করে বলল,
> এটা ওর জন্য। যতক্ষণ এটা সঙ্গে থাকবে কেউ ওর আশেপাশে আসবে না। নিরাপদ থাকবে। এটা দাদু আমাকে দিয়েছিল। বেরিয়ে পড়ো। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি দেখা হচ্ছে। জানি কহিনুর নিজেই ফিরবে।আর লক্ষ রাখবে ওর শরীরে যেনো আঘাত না লাগে। র\ক্ত না ঝরে। তাহলে সমস্যা হবে।
জামসেদ কথাগুলো বলে থামলো। অধরা মেয়েকে নিয়ে চলে এসেছে। জুবায়ের লাগেজ নিয়ে আসল। কহিনুরকে লকেটটা পরিয়ে দিয়ে ওরা সুলতান ভিলা থেকে বেরিয়ে আসল। আসার সময় অনুরোধ করলো ঐশ্বর্যকে দেখে রাখতে। ঐশ্বর্য চৌধুরী বাড়িতে আছে। চৌধুরী সাহেব ওকে নিয়ে গেছেন। জুবায়ের ওকে সঙ্গে নিতো কিন্তু মেয়েটা প্রচণ্ড রাগী। ওর জন্য কহিনুরের ক্ষতি হবে। নিজের র\ক্ত কে বাঁচাতে হলে একটু স্বার্থপর হতে হচ্ছে। তাছাড়া কহিনুর হচ্ছে সুলতান পরিবারের বহু বছরের করা পাপ মুক্তির হাতিয়ার। ওকে বাঁচতে হবে। কথাগুলো ভেবে ও আর পিছুটান রাখলো না। পরের মেয়েকে নিজের ভেবে বড় করে বিয়ে দিয়েছে এবার নিজের মেয়েকে রক্ষা করার পালা।
**************
সুলতান ভিলাতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। দাদুর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা ভীষণ চটে আছে। জামসেদ অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে চোখে পানির ফোয়ারা। পাশে ওর মম আর ড্যাড বসে আছে। নীরবতা ভেঙে দাদু হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো,
> তুমি থাকতে ওরা পালিয়েছে কিভাবে জামসেদ? বাড়ির বাইরে থাকা গার্ডগুলো কি করছিলো?
জামসেদ চোখ বন্ধ করে বলল,
> মীরা ওদেরকে নিয়ে পালিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা অসুস্থ তাই কক্ষে রেখে ও কোথায় ছিল সেখানে সন্ধান করছিলাম সেই সুযোগে ও আমাকে আবারও ধোকা দিয়েছে। বাইরের গার্ড জুবায়েরকে দেখে কিছু বলেনি। তুমি চিন্তা করো না। আমি মীরাকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবো । জামসেদকে ঠকানোর শাস্তি সে পাবে।
দাদু ওকে ধমক দিয়ে বলল,
> মীরা জা/হা/ন্নামে যাক কিছু যায় আসে না। আমার কহিনুরকে চাই। ওকে দরকার। দেশে বিদেশে যেখানে পারো খোঁজ লাগাও। দরকার হলে অদৃশ্য ওদের সাহায্য নাও তবুও।
জামসেদের চোখে পানি কিন্তু ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলা করছে। এবার থেকে কাহিনী বদলে যাবে। জামসেদ সবটা পাল্টে দিবে।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্পে মীরা কোনো নতুন চরিত্র না। ওর উপস্থিতি আমি আগের পর্বগুলোতে আংশিক প্রকাশ করেছিলাম। একটা রহস্য ঘাটতে গেলে আরেকটা সামনে এসে যাচ্ছে। দোষ দিবেন না। আমি এক ঘটনা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখতে পারছি না কারণ গল্পের সঙ্গে যাচ্ছে না।যেভাবে ভেবেছি সেভাবে নিজের মতো লিখতে হচ্ছে। প্রথম খণ্ডে যে প্রশ্নগুলো রেখে শেষ করেছিলাম সেগুলো সামনে আনতে হলে এটা জরুরী। সবাইকে ধন্যবাদ।