#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২৪
*
*
হালকা চোখ খুলতেই চারদিক ঝাপসা দেখতে লাগলাম।মাথাটাও প্রচন্ড ভারী লাগছে আর শরীর তো ঘেমে পুরাই ছিপছিপে।চারদিকে চোখ বুলাতে মাকে আর ভাবীকে দেখতে পেলাম।
ভাবী আমার চোখ খুলতে দেখে মাকে বলে উঠলো..
“মা মা..ফুল চোখ খুলেছে”।
ভাবীর কথায় মা আমার দিকে একনজর তাকিয়ে চলে গেলেন দ্রুত।আর ভাবী এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
“শরীর কেমন লাগছে এখন”?(ভাবী)
“জানিনা ভাবী।আমি তো ভার্সিটি ছিলাম।আমার খারাপ লাগার কারণে আমি,জুমু,তাসফিয়া ক্যান্টিনের সমানে দাঁড়িয়ে ছিলাম গাড়ির জন্যে। এরপর কি হলো মনে নেই।কিন্তু মনে হচ্ছিলো সাদিফ ভাইয়া ছিলো আমার আশে পাশে”।(দুর্বল গলায় ভাবীকে বললাম)
“হ্যাঁ,ভার্সিটির এক ছেলে নাকি তোমাদের ড্রপ করে দিয়েছিল। এরপর সাদিফ ই তো তোমায় কোলে করে নিয়ে এসেছিল রুমে।ডক্টর কল করে বাসায় আনিয়েছিলো।ছেলেটা একটু আগেই গেলো বাসায়”।(ভাবী)
“ওহ…! তাই বলো। ক”টা বাজে ভাবী”?
“রাত ১০ টা”….
“কী!!!আমি ভেবেছিলাম সন্ধ্যা এখন।এত টাইম কবে হলো”!
“আচ্ছা এত ভাবতে হবে না। উঠো ফ্রেশ হবে।মা খাবার আনতে গিয়েছে। সাদিফ একেবারে খাবারের চার্ট বানিয়ে নিয়েছে ডক্টর থেকে।এখন থেকে তোমাকে খাবারের চার্ট অনুযায়ী খেতে হবে খাবার।কারণ তোমার অনেক উকনেস আছে।এভাবে চললে সামনে বড় কিছু হতে পারে।আর সাদিফ তোমার হেলথ নিয়ে রিস্ক নিয়ে চায় না।তাই তো এত কান্ড তার তোমায় ঘিরে”।(ভাবী)
” আমায় নিয়ে উনার এতো মাথা ব্যাথা কেনো আল্লাহ্ জানেন”।
“সেটাই ব্যাপারটা আমাকেও ভাবাচ্ছে অনেক”।(ভাবী)
“আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা।আফ্রা কোথায়?আর প্লিজ ভাবী আমি এই ড্রেস চেন্জ করতে চায়।ঘেমে একাকার আমি”।
“আফ্রু ওর বাবার কাছে।আচ্ছা আসো চেঞ্জ করিয়ে দিই”।
কাপড় চেঞ্জ করার আগেই ভাইয়ারা আর বাবা এসে আমায় দেখে গেলেন।সাথে অনেক আদর করলেন।
ভাবীর সাহায্য কষ্ট করে উঠলাম শোয়া থেকে।পুরো শরীরে যেনো পাথর ভর করেছে।এত্ত ভারী লাগছে শরীর।ভার্সিটির জন্যে পড়নে কামিজ পাল্টে হালকা একটা সুতির টপস আর পালাজো পড়ে নিলাম।
মা এসে আমাকে দুধ,পাউরুটি আর কিছু ফ্রুটস খাইয়ে দিলো। যে আমি দুধের ধারে কাছে যায় না সে আমি আজ হাফ গ্লাস দুধ খেয়ে নিলাম।আসলে মায়ের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ ছিলো।কারণ আমি মায়ের কথা না শুনেই আমার শরীরের এই হাল করেছি।তাই মায়ের চোখ রাঙানো দেখে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।
ওষুধ খেয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম।আর মা রুমের এলোমেলো কাপড়গুলো ঠিক করছে।
তখনই ভাবী এলো আফ্রাকে নিয়ে।
আমি হাত বাড়িয়ে বাবুকে নিয়ে নিলাম কোলে।বাবুটার বয়স মাত্রই আড়ায় মাস। আফ্রাকে কোলে নিলে একটা আলাদা ভালো লাগে।
বাবুকে কোলে নিয়ে টুকটাক কথা বলতেই,খালামণি আর সাদিফ ভাইয়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
খালামণি আর সাদিফ ভাইয়া আমার রুমে আসতেই মা আর ভাবী খালামনির সাথে কথা বলতে লাগলো।
আর আমি একনজর সাদিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ আবার বাবুর দিকে দিয়ে দিলাম।
কারণ সাদিফ ভাইয়াটা প্রচন্ড রাগী চেহারা বানিয়ে রেখেছেন।এই চেহারা দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।
খালামণি মায়ের সাথে কথা বলা শেষেই,আমার কাছে এগিয়ে এলো।আর সাদিফ ভাইয়া সেই বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
“ফুল কেমন লাগছে এখন”?(খালামণি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন)
“আলহামদুলিল্লাহ্ খালামণি।বেশ ভালো লাগছে এখন”।(আমি ভাঙ্গা গলায় বললাম)
“এখন আলহামদুলিল্লাহ্ বলছে সে!নিজের শরীরের প্রতি কোনো যত্ন নেই তার।উল্টোপাল্টা কাজ করবে সে আর আমাদের ছোটাছুটি করতে হবে।এরপর সে সুস্থ হলে বলবে আলহামদুলিল্লাহ্।আসলে আলহামদুলিল্লাহ্ ই বলা উচিত তোর।কারণ তোর জন্যে আল্লাহ্ আমাদের মাথা দিয়েছেন টেনশন করতে।সো তুই অসুস্থ হবি আর আমরা টেনশন করবো”।
সাদিফ ভাইয়ার গম্ভীর মার্কা কথা শুনে আমি পাল্টা জবাব দিলাম না কারন একে তো আমার শরীরে কোনো এনার্জি নেই এই গন্ডারের সাথে যুদ্ধ করার আবার আমার কোনো ইচ্ছেই নেই উনাকে কিছু বলার।
তাই চুপচাপ আফ্রাকে কোলে নিয়ে বসে রইলাম।
“উফফ সাদি!চুপ করবি তুই?বাচ্চা মানুষ সে।বুঝে উঠতে পারে না ব্যাপারগুলো।থাক বাবা তুই আর কিছু বলিস না ওকে”।(খালামণি)
“বড় আপা, সাদি একদম ঠিক বলেছে।এই মেয়ে কারো কথায় শুনে না।তাই তো আজ তার শরীরের এই হাল”।(মা)
এতোক্ষণ মা চুপ থাকলেও সাদিফ ভাইয়ার সাথে তাল মিলিয়ে মায়ের মুখে এখন কথার বুলি ফুটেছে।
হঠাৎ আফ্রা কান্না করে উঠায় মা এসে আফ্রাকে কোলে নিয়ে নিলেন।ভাবী ভাইয়া আর খালামনির জন্যে ডিনার রেডি করতে গিয়েছেন।
মা বাবুকে কোলে নিয়ে খালামনির সাথে কথা বলতে লাগলেন।আর এইদিকে সাদিফ ভাইয়া আমার কাছে এসে বসেছেন বেডে।
আমি একটুও তাকায়নি উনার দিকে।কেনো তাকাবো? উনার এত কটু কথা শুনে আমার মন বিষিয়ে গিয়েছে।
“এই যে”?
সাদিফ ভাইয়ার ডাকে আমি উনার দিকে মাথা তুলে তাকালাম।
উনার কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
আমার তাকানোতে উনি আবারো বলে উঠলেন..
“কি সমস্যা?মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না”??
” আমি কি বলবো বলেন তো”?
“কিছু বলতে হবে না।কিন্তু আজকে থেকে যদি মেডিসিন আর খাবারের নিয়ম মিস করো তবে তোমাকে আমি কামড়ে শেষ করে ফেলবো”।
(ফিসফিসিয়ে)
লাস্ট কথা শুনে আমি আমার কোলের উপর রাখা কাঁথা টা খামচে ধরলাম।
“আজকে থেকে কোনো বাড়াবাড়ি করা চলবে না।আর এমন করে চলতে থাকলে ফিউচারে আমারই কষ্ট করতে হবে। কিন্তু,আমি ফিউচারে সুখ করতে চাই। যার কারণে তোকে বর্তমানে ভালো করে নিজের হেলথের দিকে খেয়াল রাখতে হবে”।
এই কথাগুলোও ফিসফিসিয়ে বললেন উনি।
“আজব আমার সাথে আপনার ফিউচারের কি সম্পর্ক”?
ভ্রু কুঁচকে উনার কাছে প্রশ্ন করতেই… উনি হালকা করে হাসলেন।কিন্তু উনার এই হালকা হাসির কারণেও উনার শরীর হালকা দুলে উঠলো।
“আমি কি জোক বলেছি?আপনি কেন হাসছেন”?
“কিছুনা বেবি।খাবার খেয়েছো,মেডিসিন নিয়েছো।এবার ঘুমিয়ে পড়ো”।
আমার ডান হাত স্পর্শ করে বললেন।
“আপনি কেমনে জানেন আমি খাবার আর ওষুধ খেয়েছি”?
সাদিফ ভাইয়া উনার চোখ দিয়ে ইশারা করে আমাকে বেডের পাশের ছোট্ট টেবিলটা দেখিয়েছেন।
টেবিলের উপরে খাবারের প্লেট আর ওষুধের খোলস দেখতে পেলাম।
ওহহ..তার মানে উনি এইখান থেকেই জানতে পেরেছেন খাবার আর ওষুধের কথা।
একটু পরেই ভাবী ডাকতে এলো সবাইকে খাবার খেতে।
মা আর খালামনি আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেলো।আর সাদিফ ভাইয়াও উঠে দাঁড়ালেন।
“ভালো মতে থাকিস।দুইদিন ভার্সিটি যেতে হবে না।বাসায় রেস্ট কর।আর এই টপস এ তোকে বেশ মোহনীয় লাগছে।এই জ্বরের ফেসেও তোকে আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।আর তোর দেখছি জ্বরের ঘোরে মাথাও গেলো।আমার সামনে ওরনা ছাড়া বসে আছিস ভালো কথা।বাট জ্বর হোক আর যায় হোক।অন্য কারো সামনে এই দিকে একটু খেয়াল রাখিস”।
(শয়তানি হাসি দিয়ে বললেন)
সাদিফ ভাইয়ার এমন কথায় নিজের দিকে তাকালাম একবার।সুতির টপস টা গায়ের থেকে একটু সরে আছে সাথে উপর দিকে জামাটা একটু হা হয়ে আছে।
তাড়াতাড়ি করে কাঁথা গায়ের দিকে টেনে নিলাম। ছি ছি!
মা ভাবী কি আমাকে একটু বলতে পারেনি এই কথাটা?
উনি এখন কি না কি দেখেছেন আল্লাহ্ জানেন।
এসব কথা ভাবতেও গাল গরম হয়ে এসেছে আমার।
আস্ত লুচু তো এই লোক!
“হয়েছে,আর লজ্জা পেতে হবে না।টমেটো লাগছে দেখতে।কিছু দেখার হলে আমিই দেখতাম অন্য কেউ তো আর দেখতো না!বাই দা ওয়ে,আমি অমন ভাবে কিছু দেখিনি।এখনো আমার করে নিই নি।তাই দেখার অধিকারও আমার নেই”।
কথাগুলো বলেই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চলে গেলেন উনি।
উনার কিছু কথা আমাকে খুব ভাবায়।যেমন এখনের কথাগুলো।আমি বুঝি না এই লোক পাজেলের মতো কথা বলে কেনো।
ধুর যা হবে দেখা যাবে।এখন থেকে হুঁশ জ্ঞান হারালে চলবে না। মান ইজ্জত এর কথা মাথায় রাখতে হবে।নাহলে উনি আবার কোথায় কোথায় নজর দেন আল্লাহ্ জানে।তওবা তওবা!
*
দুইদিন ভালো করে রেস্ট করলাম বাসায়।এই দুইদিন জুমুও যায়নি ভার্সিটি।কারণ আমি যায়নি তাই।
আজকে ভার্সিটি যাবো।নিউ নিউ ক্লাস এখন.. বেশি মিস দিলে পরে স্যারদের চোখে খারাপ স্টুডেন্টের খাতায় নাম লিখাতে হবে।
তাই ডেইলি রুটিনের নাস্তা ওষুধ খেয়ে নিলাম। কামিজ পড়ে,গায়ে ওরনা জড়িয়ে..চুলগুলোতে সুন্দর করে একটা বেণী করে নিলাম।আর সামনের কাটা চুলগুলো বের করে দিলাম।
ব্যাগ আর হাতে মোবাইল নিয়ে বের হয়ে এলাম বাসা থেকে।
গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকার চার মিনিটের মাথায় জুমুর
গাড়ি এসে থামলো।
গাড়িতে উঠেই জুমুর সাথে বক বক করতে লাগলাম।
ভার্সিটিতে পৌঁছানো মাত্রই তাসফিয়াকে দেখতে পেলাম।আমাদের দেখতে পেয়ে তাসফিয়া দ্রুত আমাদের কাছে আসলো।
“দোস্ত,ভালো আছিস তুই”?(তাসফিয়া)
“হ্যাঁ।ভালো আছি।তোর কি খবর”?(আমি)
“আছি ভালো “(তাসফিয়া)
“হ্যাঁরে!তোর ঐ অমানুষ ভাইটা ঐদিন গাড়ি নিয়ে এতো কাহিনী করলো কেনো”?(জুমু)
“ও ভার্সিটি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো।মাঝপথে গাড়ির নাকি টায়ার ঠিক করতে হয়েছিলো। তাই আসতে লেট হচ্ছিলো”।(তাসফিয়া)
“ওহ আচ্ছা “(জুমু)
“দেখ দেখ..! এরা কিভাবে প্রেম করছে ওপেন প্লেসে।ইসস আজকে যদি একটা বফ থাকতো,আমিও এমন চুটিয়ে প্রেম করতাম!
তাসফিয়ার কথায় আমরা তিনজন হা হা করে হাসতে লাগলাম।
দূর থেকে ইজহার তার গ্যাং এর সাথে বসে শেফাকে সুক্ষ্ম নজরে দেখতে লাগলো।যদিও ইজাহারের গ্যাং এর সবাই অন্য আলোচনায় ব্যস্ত কিন্তু ইজহার শেফাকে দেখতে ব্যস্ত।
শেফার হাসি মাখা মুখটাতে ইজহার যেনো তার সর্বসুখ খুঁজে পেলো।সাথে সাথে মনেও তীব্র ইচ্ছা জাগলো শেফার গোলাপী আভাময় গালটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে।
চলবে…❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।
আর সাইলেন্ট রিডার্স আপনারা গল্প পড়ে চলে যান।লাইক কমেন্ট করেন না কেনো হুহু??আমার বুঝি কষ্ট লাগে না আপনাদের এই কাণ্ডে??
হ্যাপী রিডিং ❤️