স্বপ্নতরী (পর্ব-13) ♡আরশিয়া জান্নাত

0
516

#স্বপ্নতরী (পর্ব-13)

♡আরশিয়া জান্নাত

নীরা! আজকে তোমাকে আমি আমার মনে চলতে থাকা বহুদিনের তান্ডবের কথা বলবো। আমি জানিনা সবটা শুনে তোমার কি মনে হবে। তোমার রিয়েক্ট ই বা কেমন হবে আমার কোনো আইডিয়া নেই। তবে আমি এই দহন একা আর বইতে পারছিনা! তাই তোমাকে বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছি।
আমি বরাবরই চিল মুডে সব হ্যান্ডেল করা মানুষ। আমাকে নিয়ে রোজ অনেক ইস্যু তৈরি হয়, আমি সেসব বিশেষ পাত্তা দেই না। তোমাকে প্রথম দেখেছি তেমনই এক সময়। জানিনা এটাকে লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলা যায় কি না। তবে আমার মনে হয়েছে তুমি বিশেষ মানুষ। হয়তো এতোটাই বিশেষ যে অনেকর মাঝে থেকে আমার দৃষ্টিআকর্ষণ করেছ। আমি সবসময় তোমার আশেপাশে ছিলাম, তোমার গতিবিধি পর্যবক্ষেণ করা আমার সুখকর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল। তুমি যখন আশেপাশে থাকো তোমাকে যতোটা না অনুভব করি তারচেয়ে বেশি অনুভব করি যখন তুমি থাকো না! আমার মাথায় তুমি এতোটাই ঝেঁকে বসেছ খেতে বসতে সব জায়গায় তোমায় দেখি। আমার তোমাকে ভাবতেই ভালো লাগে। তুমি আমার মেন্টাল পিস। আমি শান্তি পাই তোমায় নিয়ে ভাবতে, তোমায় ভাবতে।
আমাকে সবাই না চাইতে এটেনশন দেয়, সেটা আমার অসহ্য লাগে। সেই আমিটাই তোমার এটেনশন পেতে কত কি করেছি। কিন্তু তুমি আমায় চোখেই দেখতে না যেন! আমার ভেতরের অনুভূতিটা যদি তোমায় দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো বুঝতে, মুখে কতখানি প্রকাশ করতে পারছি জানি না।
নীরা! আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমি চাই তোমার সঙ্গে জীবনের বাকিটা পথ একসঙ্গে চলতে। আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি তোমার সান্নিধ্যে থাকতে চাই এবং মৃত্যুর পরের জীবনেও তোমাকেই চাই!
তুমি কি আমার জীবনসঙ্গী হবে??

নীরা মনে মনে আনন্দিত হলেও মুখে গাম্ভীর্য টেনে বললো, এই চলছিল তোমার মনে না? কোনো মেয়ে বৃষ্টিবিলাস করলে তাকে লুকিয়ে দেখা কত বড় অন্যায় জানো? তোমাকে তো সেজন্য শাস্তি দেওয়া উচিত! তোমার জন্য আমি একটু ঝেড়েও কাশতে পারতাম না, সারাক্ষণ দুটো চোখ নজরদারি করছে এটাতো বুজেছিলামই! এই যে একটা বন্দিনী টাইপ ফিল করালে এর শাস্তি কয়বছরের যাবজ্জীবন হবে হিসেব আছে?

আলিফ মাথা চুলকে বললো, আপনার জেলখানায় আজীবনের কয়েদি হতে রাজী আছি শেহজাদি! আপনি কেবল আপনাকে ভালোবাসার গোস্তাখি কবুল করুন। এই গোলাম বাকি সব শাস্তি অনায়াসে গ্রহণ করবে।

নীরা মুগ্ধ হয়ে আলিফের চোখে তাকালো, আলিফের চোখেমুখ হাসছে যেন, সেই চোখে ডুব দিলে বুঝি এই জীবন যথেষ্ট হবে না?
কত মুহূর্ত কেটেছে কেউই জানেনা একে অপরের চোখে দৃষ্টি আবদ্ধ হয়েই যেন সবকিছু থমকে গেছে, পেছনে বাজছে পিয়ানোর মৃদু সুর।
🌼🌼🌼🌼
পুজা নীরার রুমে বসে আছে, নীরা বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে।
পুজা কত কি প্রশ্ন করলো অথচ নীরা মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না। এদিকে রিমি সেই কখন থেকে কল দিয়েই যাচ্ছে পুজা রিসিভ করে আর কতবার বলবে নীরা এখনো বালিশেই ডুবে আছে?

“নীরা তুই কি কিছু বলবি নাকি আমি চলে যাবো? ”

নীরা এবার মুখ তুলে তাকালো পুজাকে বললো,গতকাল আলিফ আমাকে প্রপোজ করেছে।

হ্যাঁ তারপর?

ও অনেক সুন্দর করে প্রপোজ করেছে।আমার ফেভরেট লাল শাপলা দিয়ে!

বাহ! তুই কি বললি?

আমি কিছু বলিনি

মানে? হ্যাঁ না কিছু বলিস নি?

না!

কেন?

আমি হারিয়ে গেছিলাম ওর চোখে। একটা ছেলে মানুষের চোখ এতো সুন্দর হয় কিভাবে? মনে হচ্ছিল আমি ওখানে সাঁতার কাটতে পারবো।

কি! তুই ওর চোখে সাঁতার কাটবি?

হু! পুজা ও যখন আমাকে শেহজাদি বলেছে আমার কি যে ভালো লেগেছে, ওর কথার প্যাঁচে পড়ে গেছি আমি। আমার স্টোমাকে একটু পরপর মোচড় দিয়ে উঠছে। এতো পেটব্যথা!!

কি বলোস তুই প্রেমে পড়লে কারো পেটব্যথা হয়? এই প্রথম শুনেছি আমি।

বাকি কথাটা শুনলে হাসবি নিশ্চিত।

কি শুনি?

আমি ওখানে যা করেছি! উহুহুহু আলিফ আমাকে কি ভাবলো! লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছা করতেছে পুজা।

কি করেছিস বলবি তো।

বললাম না পেট মোচড়াচ্ছিল!

হু তো?

আমি ওখানেই বমি করে দিয়েছি!

কিহ! তুই আলিফের মনের কথা শুনে বমি করে দিয়েছিস!!! সিরিয়াসলি?

নীরা বালিশে মুখ লুকিয়ে বললো, দোস্ত এই মুখ আমি কিভাবে দেখাবো কাউকে বল! মানুষ আবেগপ্রবণ হলে হার্টবিট বাড়ে, ব্রিদিং এ সমস্যা হয় নাটক সিনেমায় এমনই তো বলে। আমিই কেন এই কাজ করেছি! আমার ইন্ট্যারনাল সিস্টেম এমন অদ্ভুত ক্যান?

পুজা হাসতে হাসতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। নীরা অসহায়ের মতো মুখ করে বললো, তুই হাসছিস?

শুন দোস্ত তোর সাথেই এটা যায়! আমি আমার জীবনে এতো মজা আর কিছুতেই পাই নাই। আবেগে মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, পাকস্থলীতে চাপ অনুভব হবার বিষয়টাও শুনেছি। মনে হচ্ছে ফিলিংস এর ক্ষেত্রে তোর হৃদপিন্ডের চেয়ে পাকস্থলী বেশি এক্টিভ হেহেহে হোহো হিহিহি

নীরা ভোঁতা মুখ করে পুজার হাসি দেখতে লাগলো। আলিফের সামনে সে কি জঘন্য পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছে এই লজ্জা সে কোথায় লুকাবে? এদিকে তার বান্ধবী হেসেই লুটোপুটি খাচ্ছে! হাহ!!

আলিফ নীরাকে কাল রাত থেকেই কল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়েটা ফোন অফ করে বসে আছে। আলিফ বুঝতে পারছেনা এইটুকু বিষয়ে এতো ইমবেরেস ফিল করার কি আছে! শেষে উপায় না পেয়ে রিমির কাছে গিয়ে বললো, ভাবি তোমার বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ করার অন্য কোনো উপায় থাকলে বলো তো!

রিমি ততোক্ষণে পুজার কাছ থেকে সবটা জেনে গেছে। রিমি আলিফকে বললো, আলিফ একটা কথা বলি শুনো, নীরা ছোট থেকেই একটু অন্য রকম। ফাঁকা রাস্তায় পড়ে আছাড় খাওয়ার ঘটনা ওর জীবনে কম নেই। আমার ধারণা ওর নার্ভ সিস্টেম একটু বেশিই দূর্বল! সে যাই হোক গতকালকের ইনসিডেন্টটা নিয়ে ও খুব লজ্জিত। তাই তোমার থেকে পালাতে সবকিছু অফ করে রেখেছে। তুমি কি মনে করলে এই নিয়ে,,,

ভাবি আমাকে তোমার এই মনে হয়? তুমি এক কাজ করোতো ওকে টেনে বাইরে কোথাও আনো। আমি ওর সঙ্গে কথা বলবো।

ও আসবেনা সিওর থাকো। আমার মনে হয় সিঙ্গাপুর থেকে ফেরা অবধি ওর দেখা আর পাচ্ছ না!

আলিফ সোজা বেরিয়ে গেল নীরার বাসার উদ্দেশ্যে। নীরার লাগেজ গোছানো প্রায় শেষ। কাল ভোরে তার ফ্লাইট তাই মাঝরাতেই বেরিয়ে পড়তে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। সবকিছু ঠিকঠাক করে বেলকনীতে দাঁড়াতেই দেখে আলিফ বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদের বাসার সামনের রোডে।
নীরা চট করে মুখ ফিরিয়ে নিল! আলিফ কি পাগল হয়ে গেছে এতো রাতে এখানে কেন এসেছে?
নীরা ওর দিকে তাকাতেই ইশারায় বললো কল দিতে। নীরা ফোন অন করতেই আলিফ কল করলো, তুমি কি ভেবেছিলে আমার থেকে পালিয়ে বেড়াবে? আমার উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছ? তিন ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। হয় নীচে আসো নাহয় আমি আসবো,,,

পাগল তুমি? কয়টা বাজে দেখেছ? এখন আমি কিভাবে নীচে আসবো?

ওকে দ্যান আমি আসি?

নাহ!

তাহলে?

তুমি বাসায় যাও।

নাহ যাবো না।

এসব পাগলামির মানে কি?

আমি জানি তুমি চলে যাচ্ছ। আমার এমনিতেই ভালো লাগছেনা তার উপর তুমি আমাকে ইগ্নোর করছো! সবকিছু অফ করে বসে আছ মেসেন্জারেও এক্টিভ নেই তুমি। আমি কি করবো আর? তোমার জবাব যদিও আমার জানা হয়ে গেছে তবুও আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
নাহয় আমি এখানেই সারারাত থাকবো।

সব জেনে এমন করাটা ঠিক হচ্ছে?

ঠিক বেঠিক জানি না আমি। যা বলেছি তাই করো। হয় নীচে আসবা, নাহয় মুখে বলবা। চয়েজ ইজ ইউরস।

যদি কোনোটাই না করি?

ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!

নীরা চমকে বললো, এমন চিৎকার করে বলতে হচ্ছে কেন!

আমি তোমার মতো ভীতু না। পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে বলবো ভালোবাসি তোমাকে।

নীরার ইচ্ছে হলো বলতে কিন্তু বলে দিলেই তো আলিফ চলে যাবে তাই না? স্বার্থপরের মতো মন চাইছে আলিফ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকুক আর নীরা তাকে প্রাণভরে দেখুক। ইশ আর ক’টা দিন আগে বললে কি হতো? নীরার যে এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।।।।।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here