সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৯
,
,
,
,
,
মনের অজান্তেই মন দিয়ে বসেছিলো আদ্রি। হয়তো একটু ভালোবাসার আশায় এটা ভুলে যে তার ও অতীত আছে যে অতীত এর কথা শুনলে কেউ তার পাশে দাঁড়াবে না। কিন্তু তবুও অবুঝ মন ভেবেছিলো হয়তো কেউ আগলে নিবে তাকে। দিন শেষে কেউ হবে যার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারবে সে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে আদ্রি বুঝতে পারেনি।সামনে থাকা এক বন্ধ ট্রাক হঠাৎ চালু হয়ে ধেয়ে আসতে লাগে আদ্রির দিকে।আদ্রি সেটা বুঝতে পারেনা।
হঠাৎ হাতে ব্যাথা পাওয়ায় সম্মতি ফিরে আসে আদ্রির। তার সাথেই উল্টো হয়ে পরে আছে এক ছেলে। সেও হয়তো ব্যাথা পেয়েছে।
আদ্রি কোন রকমে উঠে বসে।ততক্ষনে ছেলেটাও নিজেকে ঝেড়ে ঝুড়ে উঠে দাঁড়ায়। আদ্রির দিকে হাত এগিয়ে দেয় সেটা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আদ্রি।নিজেকে সামলে একাই উঠে দাঁড়ায় আদ্রি।কিন্তু পায়ে ব্যাথা পাওয়ায় দাড়াতে না পেরে পুনরায় পরে যেতে নেয়। ছেলেটা ধরতে গেলে হাত দিয়ে নিষেধ করে দেয়।
আদ্রি খুড়িয়ে খুড়িয়ে সামনের রাস্তার দিকে হাটা দেয়।ছেলেটা কিছুক্ষন আদ্রির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উল্টো রাস্তায় হাটা ধরে।ঠোঁটের কোনে লেগে আছে তার প্রলোয়কারী হাসি।
আদ্রি কিছুদূর যেতেই কেউ একজন এসে তার হাত ধরে পিছনের দিকে হাটা দেয়।আদ্রি তাকিয়ে দেখে নির। আদ্রি হাত ছাড়ানোর কোন প্রকার চেষ্টা করেনা। আর না কোন টু শব্দ করে। কি বলবে সে তার কি আদৌও কিছু বলার বাকি আছে যে ছেলে তার শুনে তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে আদৌ সে ছেলেটা কোনদিন তাকে ভালোবেসেছিলো।আদ্রি নিজের ভাবনায় নিজেয় অবাক হয়। নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলে উঠে!
আদ্রিঃতুই আসলেই গাধী এতো বড় বিজনেস ম্যান । যার পিছনে মেয়েদের লাইন লেগে থাকে সে কি না তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসবে।দুই কথা হেসে কি বলে ফেলেছে তুই ভেবে নিয়েছিস তোকে ভালোবাসে। (নিজেকে নিজেই মনে মনে কথা গুলো উঠে)
———
২ মাস পরে,,
সময় কারো জন্য থেমে থাকেনা। সে তো চলমান এক জিনিস।আল্লাহ র এই এমন একটা জিনিস ই আছে যেটা কখনো থেমে থাকেনা। এটা চলমান এক ধারা।
আদ্রির মধ্যে পরিবর্তন এসেছে মেলা আগের মতো হাসেনা কথা বলেনা প্রয়োজন ছাড়া। সারা দিন কাজ আর রাতে তার আম্মুর কবর ব্যাস এই রুটিন রোজ দিন এর।
নির দেড় মাস হলো লন্ডনে চলে গেছে। কেনো গেছে কি করতে গেছে কেউ জানেনা। আদ্রিয়ান আর নওমির জীবনেও পরিবর্তন আসচ্ছে। নওমি এখন আর বাচ্চামো করেনা মেন্টালি এখনো পরিপূর্ণ ভাবে ঠিক না হলেও ঠিক হওয়ার পার্সেন্টেজ বেড়ে গেছে।বেস্ট চিকিৎসার জন্য আদ্রিয়ান নওমিকে নিয়ে গেছে কলকাতা।
সবাই সবার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু কেউ যে মনে মনে ভেংগে চুরমার হচ্ছে সেটা দেখার জন্য আদৌও কেউ আছে।আদ্রি রোজ চিৎকার করে কাদে কিন্তু দেখার কেউ নেয় এই প্রকৃতি আবার কেরে নিয়েছে তার কাছ থেকে সব।
প্রতিদিন এর রুটিন এর মতো আজকেও ভোর এর দিকে কবরস্থান থেকে ফিরে বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিসের পেন্ডিং কাজ গুলো কম্পিলিট কর রেডি হয়ে নেয়। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছাতেই মাথা ঘুরে উঠে আদ্রি বুঝতে পারে প্রেশার পুনরায় পল করেছে কিচেনে যেয়ে একটা ব্রেড খেয়ে ঔষধ খেয়ে বের হয়ে যায়।
অফিস এ ঢুকে রোজ দিন এর মতো আজকেও সর্বপ্রথম নির এর রুমে যেয়ে সব কিছু গোছগাছ করে নিজের কেবিনে চলে যায়।
মাথা নিচু করে পেন্ডিং কিছু ফাইলস দেখছিলো আদ্রি।হঠাৎ মুখের সামনের ফুলের তোড়া ধরায় বিরক্ত হয়।
রোজ দিনের মতো আজকেও ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ(২ মাস আগে এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে যে ছেলে টা বাচিয়েছিলো।কিছুদিন পরেই অফিসের ম্যানেজার পোস্টে জয়েন হয় সে)
আদ্রিঃকি সমস্যা টা কি আপনার বলবেন আমাকে রোজ রোজ কি শুরু করেছেন। অফিসের সকল স্টাফ মনে করে আমাদের মধ্যে কিছু আছে।আমি জাস্ট আর নিতে পারছিনা এগুলো আপনারা কি আমাকেই দেখেন হ্যারেস করার জন্য।
(চিল্লিয়ে বলে উঠে আদ্রি)
অফিসের সকল স্টাফ কেবিনের বাহিরে এসে জোড় হয়ে যায়। আয়াজ সেসব এর পরোয়া না করে সবার সামনে আদ্রির সামনে হাটু গেরে বসে পরে।
আয়াজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন করতালি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই ভয়ে জোড়সোড় হয়ে যায়।কারন রক্তচুক্ষ নয়ন নিয়ে আদ্রির কেবিনে প্রবেশ করে নির।
নিরঃবাহ ভালোয় আমার অবর্তমানে দেখি এখানে ভালোই গার্ডেন বানায় নেওয়া হয়েছে।উপস সরি মুভি সেট তাইনা।
সবাই মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে যায়।আয়াজ নির এর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে সরি বলে সেও সেখান থেকে চলে যায়।
আদ্রির কোন দিকে কোন খেয়াল নায় কতোদিন পরে দেখছে মুখটা। এতো দিনে হারে হারে টের পেয়েছে নির তার লাইফে কতোটা প্রয়োজনীয়। যাকে ছাড়া যে নিশ্বাস নেওয়াটাও কষ্টের।নাই বা নির ভালোবাসুক ওকে সে তো ভালোবাসে তাকে। নাহয় এক পক্ষী ভালোবেসে যাবে।সবার ভালোবাসা সার্থক হবে তার তো কোন মানে নেয়।
নিরঃতো মিস আদর আমার অনুপুস্থিতি তে তো ভালোয় দিন কাটাছেন দেখছি।ফুলের তোরা বাহ খুব ইঞ্জয় করছো বুঝি (সামনে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুজে)
হঠাৎ নির এর স্পর্শ আদ্রির সমস্ত শরীর জুরে আলাদা এক শিহরণ বয়ে গেলো।
হুট করে নির আদ্রির চুল মুঠো করে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।
নিরঃবেশি বার বেরেছিস তাই না হ্যা সাহস কি করে হয় ওই ছেলেটার তোর সামনে হাটু গেরে বসার বল ওই ওতো সাহস পায় কই। কেন সে তোকে রোজ রোজ ফুল দিবে। বল আর তোর চুল কেন কাটা হ্যা কেন কেটেছিস কার সাহসে কেটেছিস।
নির এর প্রশ্নে আদ্রির মনে পরে গেলো ১ মাস আগের ঘটনা।সেদিন খুব মনে পরচ্ছিলো নির এর কথা তার। নিজেকে সব কিছুর জন্য দায়ী করছিলো সে। সে মেজাজ নিয়েই সেদিন গেছিলো আদ্রি অফিসে।আর আয়াজ সেদিন আদ্রির চুলে হাত দিয়ে বলেছিলো “খুব সুন্দর লাগে তোমার বড় বড় চুলো গুলো “..
সেদিন আয়াজ এর কথা টা তার মটেও পছন্দ হয়নি তাই তো বাসায় এসে চুল গুলো কেটে কাধ অবদ্ধি করে ফেলেছিলো।
আদ্রিঃআমার বিষয়ে এতো কেনো ভাবনা আপনার। আমি একা ফিমেল স্টাফ তো না। আর আমি চুল কাটি বা যার তার সাথে রাত কাটায় আপনার কি কিসের এতো অধিকার খাটাচ্ছেন আমার উপর(চিল্লিয়ে)এতো যখন চিন্তা ছিলো কই ছিলেন এই দেড় টা মাস।
নিরঃবড্ড বার বেরেছে না তোর আজকে থেকে জাহান্নাম এর দিন গুলো শুরু তোর লাইফ এ শুধু আমার রুল চলবে।
নির আদ্রির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আদ্রির মনে পরে গেলো সেদিন এর রাত টা
সেদিন ও ঠিক এই ভাবে নিয়ে যাচ্ছিলো নির তাকে বাসায় এনে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় আদ্রির গালে।তার অপরাধ একটাই ছিলো সে কেনো নির এর পিছনে না যেয়ে। অন্য রাস্তায় চলে গেছিলো।
আজকে ঠিক একই ভাবে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায় দিলো। গাড়ি চলছে ফুল স্প্রিডে। আদ্রি জানেনা তার সাথে কি হতে চলছে। কিন্তু মনের কোন এক শূন্যে জায়গাটা আজকে আর শূন্য লাগছেনা।কেউ একজন সত্যি আছে যে তাকে আপন ভাবে। তাকে নিয়ে ভাবে। কেন ভাবে আদৌও সে যেটা ভাবছে সেটা সত্যি কি না সে জানেনা তবুও ভালো লাগছে তার খুব ভালো!!!!
চলবে!!!