স্বপ্নতরী (পর্ব-12) ♡আরশিয়া জান্নাত

0
519

#স্বপ্নতরী (পর্ব-12)

♡আরশিয়া জান্নাত

নীরা মনের সুখে পুকুর ঘাটে বসে পানি নিয়ে দুষ্টুমি করছে। পানিতে ডুবিয়ে হাত দিয়ে পানি ছুড়ে মারছে যতদূর পারা যায়। ওর এসব কান্ড দেখলে যে কারোই মনে হবে কিশোরি মেয়ে প্রথমবার পানি দেখলে যা করে! নীরার দাদী পেছনেই বসে নাতনিকে পাহারা দিচ্ছেন।
দূর থেকে একজন বহুক্ষণ ধরেই নীরাকে পর্যবক্ষেণ করছে। নীরার রোদে রাঙা মায়াবী মুখটা রোদের মৃদু প্রতিফলনে যেন আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। একটু পরপর যখন পানির ঝাপটা মুখে দিচ্ছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক আবেদনময়ী অপ্সরী। দূরের মানুষটার কাছে আপাতত সে সৌন্দর্যের দেবী বলেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই চোখ ঝলসানো সৌন্দর্য বেশিক্ষণ অবলোকন করা তার পক্ষে সম্ভব না। এই মেয়েটাকে ওর চাই চাইই যে করেই হোক। ভেতরের উন্মাদনায় শরীর কাঁপতে লাগলো, লোভাতুর দৃষ্টিতে চোখ চকচক করে উঠলো।

–আস্সালামু আলাইকুম দাদী আম্মা। কেমন আছেন?
–ওয়ালাইকুমুস্সালাম। সাদেক না রে? মাশাআল্লাহ দাদুভাই লায়েক হয়ে গেছস!
–কি যে কও! তা আছোনি ভালোই?
–রাখছে আল্লাহ তোর কি খবর?
–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
–শুনলাম নীরারে নিয়া আসছো। তাই ভাবলাম যাই দেইখা আসি।
–ভালা করছোস। মর্জিনা ও মর্জিনা সাদেকের জন্য চা নাশতা আন আর নীরারেও ডাইকা দে।
–তা দাদী আছো নি কয়দিন নাকি চইল্লা যাইবা?
–না গো ভাই থাকতে আসি নাই। এমনিই দেখতে আইছি সবাইরে।
— তো চলেন একদিন আমাগো হেনে? একবেলা খাইবেন গরীবের ঘরে?
–তুই কইছোস এতেই খুশি হইছি ভাই। এবার আর সম্ভব না। কালকে সকালেই চলে যামু।
–ওমা কি কন এত তাড়াতাড়ি চইলা যাইবেন? তাহলে আইজ রাতেই দাওয়াত। আর কোনো কথা শুনমু না।
জাহানারা বেগম আর না করতে পারলেন না। তাছাড়া ওদের বাড়ি তেমন বেশি দূরেও না। তবুও কেন জানি ইচ্ছে করছেনা রাতবিরেতে নীরাকে বাইরে নিতে। সাদেক চলে যাওয়ার পর নীরা এসে বললো, দাদী ডাকছিলা?

এতক্ষণে আইছোস! যে জন্য ডাকছি সে তো চইলা গেছে। আইচ্ছা বুবুন শুন আইজ রাতে একজনে দাওয়াত দিছে। সম্পর্কে তোর চাচাতো ভাই। দক্ষিণ বাড়ির মোস্তফার পোলা।

দাওয়াত দিছে যাবা। সমস্যা কই?

তুই যাবি না?

নাহ! তুমি জানো আমার কারো বাসায় যাওয়া পছন্দ না।

ওরা মনেকষ্ট পাইবো তো। গ্রামের মানুষ পরে নানান কথা কইবো।

দাদীজান আমিতো এখানে বসে থাকবোনা ওদের কথা শুনতে। তোমারে দাওয়াত দিছে তুমি যাও। আমি যাবো না। তাছাড়া আমি ডায়েটে আছি। রাতে হেভি খাওয়া অসম্ভব। ঐখানে গিয়ে যদি শুধু সালাদ খাই ওরা নিশ্চয় খুশি হবে না!

তবুও দাওয়াত রক্ষা করতে যাওয়া লাগে।

কিন্তু নীরা নাছোড়বান্দা সে যাবে না তো যাবেই না। শেষে বাধ্য হয়ে জাহানারা আব্দুলকে সঙ্গে নিয়েই সেখানে গেলেন।

খাওয়া দাওয়া শেষে সাদেকের বাবা মোস্তফা বললেন, নীরা মামণি আসলে বেশি খুশি হইতাম চাচী। যাক সমস্যা নাই ওর জন্য খাবার পাঠাই দিতাছি। তয় আমার একখান আরজি আছে। বেয়াদবি না নিলে সরাসরিই কইতে চাই।

কি কথা কইতে চাও মোস্তফা?

সাদেকরে তো দেখছেন, আপনাগো হাতেই মানুষ। পড়ালেখা কইরা এখন সরকারী চাকরি করে। আমরা ওর লাইগা মাইয়া দেখতাছি।

সে তো ভালা খবর। বিয়েশাদী করানো বাপ মায়ের ফরজ কাম।

হ চাচী। কইতাছিলাম কি নীরা মামণির বিয়ের ব্যাপারে কি খেয়াল আছে?
মানে যদি সাদেকের জন্য ওরে চাই,,,

দেখো বাবা বরই গাছ থাকলে লোকে তো ঢিল দিবোই এইডা কোনো ব্যাপার না। বলছো শুনছি। মাইয়া তখন আছে বিয়া তো দিমুই। এখানে গার্জিয়ান তো আমি একা না। ওর বাপ ভাই আছে নিজের মতামত আছে। সব জাইনা শুইনা তারপর কিছু কইতে পারমু।

জ্বি চাচি ঐডা আমিও জানি। আপনারে কইয়া রাখলাম আপনি দেখেন হইলে আমরা অনেক খুশি হমু। নীরারে রাজরাণীর মতো রাখমু ভরসা রাইখেন।

জাহানারা বেগম ফেরার পথে আব্দুল বললো, চাচী এইখানে সমন্ধের কথা চিন্তাও কইরেন না। সাদেক পোলাডা বিশেষ সুবিধার না।

জাহানারা বেগম কোনো কথাই বললেন না। আপাতত ঢাকায় ফেরাটাই আসল।
🌼🌼🌼🌼🌼🌼
হ্যালো মিস আর্টিস্ট!

তুমি? আমার নাম্বার পাইলা কৈ?

এমনভাবে বলতেছ যেন নাম্বার কালেক্ট করা কঠিন ব্যাপার!

তা হঠাৎ কি মনে করে?

আজ বিকেলে ফ্রি আছ?

কেন?

কাজ আছে তাই। এতো প্রশ্ন না করে বলো।

হ্যাঁ ফ্রি আছি।

মিট করতে পারবা?

তোমার সাথে মিট করবো?

কেন আমি বাঘ না ভাল্লুক নাকি সংবিধানের কোথাও লেখা আছে আমার সাথে দেখা করা নিষিদ্ধ?

সংবিধানে লেখা নাই তবে তোমার চারপাশে যতোগুলো সিসিটিভি আছে! এদের টপকে দেখা করার সাহস নাই আমার।

ভার্সিটিতে আর নাই আমরা! এখনো এসব ভয় পাচ্ছ?

আচ্ছা বলো কোথায় আসতে হবে?

লোকেশন টেক্সট করছি। দেখা হচ্ছে তাহলে।

ওকে।

নীরা ফোন রেখে ভাবতে লাগলো হঠাৎ সাক্ষাতকারের মানে কি। প্রপোজ ট্রপোজ করবে নাকি আবার হিহিহি!!

আলিফ আরো কয়েকজনকে ফোন করে সবকিছু এরেঞ্জ করলো। আজ সে নীরাকে মনের কথা বলবে। যতোটা সুন্দরভাবে মনের কথা উপস্থাপন করা যায় সে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে।

রিমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে। পাঁচমাসে পেট অনেকটাই বড় হয়েছে, শরীরটাও কেমন মুটিয়ে এসেছে। মেজাজ এই ভালো তো এই মন্দ। সারাক্ষণ কত আজেবাজে চিন্তা আসে। সে যতোই চেষ্টা করছে নিজেকে হাসিখুশি রাখতে ততোই বিরক্তি লাগছে। তাশফিক তাকে অনেক কেয়ার করে, বাসার সবাইও খুব কনসার্ন তার প্রতি, যখন যা খেতে চায় সামনে হাজির করে। তবুও রিমির কিছু ভালো লাগে না। শুধু কান্না আসে। হুটহাট কান্নাকাটি করে সব ভাসিয়ে দিতে মন চায়। তাশফিক বুঝে উঠে না কি করলে রিমির এইসব দূর করা যায়। ওদিকে ডেলিভারির সময় যত ঘনিয়ে আসছে রিমির আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তাই বেশি হচ্ছে। ওর মনে হচ্ছে ও স্বাভাবিক মেয়ে না। সব মেয়েরা বলে প্রেগনেন্সিতে অনেক আনন্দ অনুভব হয় অনাগত বাচ্চাকে ঘিরে, তবে তার কেন হচ্ছে না? সে কি মাতৃত্বের স্বাদ অনুভবে ব্যর্থ? ডিপ্রেশনে পড়ে যায় সে। না এই বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতেই হবে।
তাশফিক রুমে ঢুকে দেখে রিমি একমনে আয়নায় তাকিয়ে আছে। সে রিমিকে পেছন থেকেই জড়িয়ে ধরে কাঁধে চুমু খেয়ে বলল,তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে! দিনদিন এতো সুন্দর হচ্ছো কেন বলো তো?

ঢং করছো তাই না! কতো মোটা হয়েছি খেয়াল করেছ?

কই বেশি না তো!

হুহ এখন তো এমন বলবাই। কয়দিন পর আর ভালো লাগবেনা। বাচ্চার মা হয়ে গেলে বৌকে আর সুন্দর লাগে না।

কে বলেছে তোমাকে এসব? সত্যিকার পুরুষের চোখে তার সন্তানের মা কোনোদিন অসুন্দর হয় না। ইনফ্যাক্ট দিন দিন আরো রূপসী হয়।

তুমি অনেক ভালো। সবসময় এমনই থেকো!

রিমি বিশ্বাস হয় না?

কি?

আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি!

হয় তো।

তাহলে এতো টেনসড থাকো কেন?

জানি না কিছু ভাল্লাগেনা।

এটা স্বাভাবিক এই টার্মে অনেক কিছু ফিল হবে। এসবকে পাত্তা দিও না সোনা। আমি চাই আমার হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল বৌ টা সবসময় হ্যাপি থাকুক।

আচ্ছা থাকবো।

তাশফিক মিষ্টি করে হাসলো। রিমির মনে হলো এই হাসিটার জন্য হলেও সে হ্যাপি থাকবে।



আলিফ একদম রেডি হয়ে বসে আছে। বারবার মনকে নানান কথা বলে স্বাভাবিক রাখার বৃথা চেষ্টা করছে। কিন্তু নার্ভ সিস্টেম তাকে সঙ্গ দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এসির নীচে বসেও তরতরিয়ে ঘামছে আর একটু পরপর টিস্যু দিয়ে ঘাম মুছছে। সে কখনোই ভাবেনি সে এমন নার্ভাস ফিল করবে। নীরাকে কি কি বলবে সব গুছিয়ে ভেবে রেখেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লাইন সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। নীরা না আসতেই এই হাল ও আসলে কি হবে কে জানে!
উফফ নীরা এখনো আসছে না কেন? ও আসতে আসতে ও না আবার গলে শেষ হয়ে যায়।

ও নীরা তুমি কোথায়। আলিফ যে আর অপেক্ষা করতে পারছে না। চটজলদি চলে আসো তো।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here