#স্বপ্নতরী (পর্ব-6)
♡আরশিয়া জান্নাত
“কাহিনী কিছুই বুঝলাম না,আলিফের হিডেন প্রিন্সেস নীরা কবে হলো! আমরা কিছুই টের পেলাম না কেন? নাকি এটা জাস্ট রিউমার?”
“আরে না না রিউমার না। তুই ছবিগুলি দেখিস নি? ”
“ছবি দেখে আমি বিশ্বাস করিনা। তোর তো দেবর লাগে যা গিয়ে জিজ্ঞাসা কর কাহিনী কি। হুদাই আমাগো বান্ধবীরে ফাঁসাইলো ক্যান!”
“আচ্ছা আমি বুঝলাম না,নীরাকে পছন্দ হওয়া টা কি খুব অস্বাভাবিক? কোনদিক দিয়ে নাই ও বল? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও আলিফের ক্রাশ হতেই পারেনা!”
“ধুরর সেটা বুঝাবো কেন। কিন্তু দেখ আমরা সবাই আলিফকে নিয়ে গসিপ করি কিংবা আশেপাশে লক্ষ্য রাখি। নীরা কিন্তু এসব করেনা। ওকে আমাদের ক্লাসের সবাই চিনে কিনা সন্দেহ সেখানে অন্য ডিপার্টমেন্টের কেউ ওকে ফলো করছে এটা কেমন না? ও তো জনসমাগমে থাকে না বললেই চলে!”
“আমার সেটা মনে হয় না। তুই মুভিতে দেখিস না এক পলক দেখেই কেমন প্রেমে পড়ে যায়। হতে পারে আলিফ ও প্রথম দেখায় খতম হয়ে গেছে- Tum pas ayee eyun muskurayee
Tumne na jane keya Sapne dekhaaiye…
Ab toh mera dil jage na sota hai
keya karoon hay kuch kuch hota hai…
আহা আহা”
“তোর কথা আর কি বলমু। সারাক্ষণ কুছ কুছ হোতা হ্যায় লাগাই রাখস। উফফ”
“তুই এসব বুঝবিনা পাগলী। ভালোবাসা নিয়ে আমার জান শাহরুখ যা বলে সব সত্যি!!”
“তাশফিক ভাইরে খবর দিতাছি দাঁড়া”
“যা যা দে। লাভ নাই সে জানে শাহরুখ আমার প্রথম প্রেম,,”
“বেচারা!!”
নীরাকে ক্যান্টিনে ঢুকতে দেখে রিমি আর পুজা খানিকটা অবাকই হলো। আশেপাশের সবাই ওকে দেখেই ফিসফিস করা শুরু করে দিয়েছে। নীরা সেইসব এড়িয়ে পুজাদের টেবিলে গিয়ে বসলো।
“কিরে তুই আসলি আজকে? আমিতো ভাবছি আগামী কিছুদিন তুই আসবিই না,,”
“কেন আমি আসবোনা কেন? কে একটা গুজব ছড়িয়েছে আর অমনি সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিস এসব এড়াতে আমি ক্লাস মিস দিবো? এখানে আমার কি দোষ হ্যাঁ?”
“আরে দোস্ত রিমির কথায় ক্ষেপিস নাতো। বস তুই বস মাথা ঠান্ডা কর। সত্যিই তো এখানে তুই ভয় পাওয়ার কি আছে।”
“আমি বলছি নাকি তোর দোষ। আমি ভাবছি তুই তো গসিপ পছন্দ করিস না এবার আরো তোকে নিয়ে হচ্ছে তাই আর কি,,,,”
“শোন রিমি আমি যদি এসবে প্রভাবিত হই তবে তোর বিয়েও এটেন্ড করতে পারবোনা। যেহেতু বিয়ে করতে যাচ্ছিস আলিফের বড় ভাইকে! কিন্তু আমি আসলেই এফেক্টেড নই। আর ছবিগুলি নেহাতই কাকতালীয়,এসব নিয়ে মাথা ঘামানো বোকামি ছাড়া কিছুই না।”
শেষ লাইনটা অনেকটা জোর গলায় বললো নীরা, আশেপাশের সবাই যে ওর দিকে ফোকাসড তা তার অজানা নয় বলেই তাদের শুনিয়ে বলেছে।
তারপর ঝড়ের গতিতে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে ক্লাসে চলে গেল। ওদিকে পুজা আর রিমি বোকার মতো চেয়ে রইলো। তাদের কনফিউজড ভীতু নীরা আজ এমন করে কথা বললো তাদের যেন বিশ্বাসই হচ্ছেনা!
🍁🍁🍁🍁🍁
সপ্তাহে একদিন শুক্রবার সকালে নীরার বাবা সায়মন আহমেদ বাজার করতে বের হন। সেদিন নীরাও তার বাবার সঙ্গে যায়। বাবার একটা আঙুল ধরে বাজারে দরদাম দেখা নীরার ছোটবেলার অভ্যাস। নূরনাহার শত বারণ করেও বাপ বেটির এই অভ্যাস বদলাতে পারেননি। এমন ধিঙ্গি মেয়ে বাজারে যাওয়া খাটে? কিন্তু কে শোনে কার কথা, নীরা দিব্যি তাঁর বাবার পিছে পিছে নাস্তা খেয়েই ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরে।
“মেয়ের যা অভ্যাস করেছ বিয়ের পর শ্বশুরের সাথেই না যেন বাজারে চলে যায়!”
সায়মন সাহেব হোহো করে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতেই মাকে ডেকে বললেন,মা শুনছো তোমার বৌমা কি বলে! আমার মেয়ে নাকি শ্বশুরের সঙ্গে বাজার করতে যাবে। হাহাহা
“এমন করে হাসার কি আছে। যা মনে হচ্ছে তাই বলছি।”
“শহরের বাড়িতে এসব কোনো ব্যাপার না নাহার। তুমি অযথাই এসব নিয়ে চিন্তা করো।”
“মা আপনিই আপনার ছেলেকে কিছু বলেন। মেয়ের সাথের গুলোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অথচ উনি এখনো মেয়ের বিয়ের চিন্তা করছেনা। এখনো মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাজার করতে যায়। এমন তো নয় তোমার ছেলে নেই। ওদের কাউকে নিয়ে যাও না!”
জাহানারা বেগম কিছু বললেন না। তার কথা বলতে একদম ইচ্ছে করছেনা। তিনি নিরবশ্রোতার মতো বসে বসে সব শুনছেন।
।
।
পুজা আর নীরা গ্রীণ আর সিলভার কম্বিনেশনের সারারা পড়েছে।
দুজনেই চুল একপাশে এনে অপরপাশে গোলাপ গেঁথেছে। খুব সুন্দর করে পার্লার থেকে সেজেগুজে তারা একদম প্রস্তুত রিমির হলুদ ফাংশনের জন্য।
নীরার ছোট ভাই সোহান আর মেঝ ভাবী তুবা নীরার সঙ্গে রিমির হলুদে এসেছে।
“দোস্থ তোদেরকে দেখতে যা সুন্দর লাগতেছে।আমিতো ভাবতেছি লোকে আমারে ছাইড়া তোগোরেই নাকি দেখতে থাকে”
“দেখ তোর লাইনতো হইয়াই গেছে এখন তোরে দেইখাও লাভ নাই। তোরে খালি জামাইবাবু দেখলেই চলবে।”
“ঐ হাঁদারামের নাম ও নিস না। সে আমারে দেখবে এ আমার বিশ্বাস হয় না। আজ পর্যন্ত যতোবার মিট করছি সে টিস্যু দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে সময় শেষ করছে। আমি সিওর কোন কালারের ড্রেস পড়ছি সেটা পর্যন্ত দেখে নাই আমারে দেখা তো বহুত দূর।”
“আরেহ দেখছে দেখছে ঠিকই দেখছে। ছেলেদের যেই চোখ! ওরা দেখেনা বললেও অনেক কিছু দেখে।”
“তুই এতো বিচক্ষণ হয়েও অভিদার টাই বুজলি না!”
“কে বলছে বুঝিনা। বুঝি সবটাই শুধু অপেক্ষা করতেছি কোনদিন সে নিজে বলে।”
“বাহ বাহ তোরও লাইন হয়ে গেছে। আমার মা যদি শুনে এবার আমারে কইবো তোরই খালি কেউ নাই।
একটা প্রেম ও করতে পারলিনা! তোরে দিয়ে কিচ্ছু হইবোনা।”
রিমি আর পুজা নীরার কথায় হাসতে লাগলো।
অনুষ্ঠান শুরু হবার বেশ খানিকক্ষণ বাদে ছেলেপক্ষ থেকে আলিফ আর কিছু কাজিন এলো।
রিমির বাড়ির সবাই তাদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
“হ্যালো রিমি ভাবি!”
“হ্যালো দেবরজী।”
“তোমাকে কিন্তু দারুণ লাগছে। আমার ভাই তো বলে দিয়েছে তার হলুদমাখা বৌয়ের ছবি তুলে নিতে। চলো সেলফি তুলি।”
বেশ কিছু সেলফি তোলার পর হঠাৎ আলিফ বললো,তোমার ঐ আন্ধি বান্ধবী টা কই আসেনাই?
“নীরার কথা বলছো? ব্যাপার কি বলো তো হঠাৎ তোমার আমার বান্ধবীতে ইন্টারেস্ট, গুজবটা তাহলে সত্যি?”
“আরেহ ভাবী তোমার প্রতি আমার কত্ত টান জানো? অন্য কেউ যদি তোমার জাঁ হয় তাহলে তো বনিবনায় সমস্যা হবে তাইনা? সেজন্য তোমার বান্ধবীকেই নিবো ভাবছি। আমি আবার শান্তিপ্রিয় মানুষ। ফ্যামিলিতে অশান্তি দেখতে চাই না।”
“বাব্বাহ! তুমি তো কত কি ভেবে ফেলেছ! মনে মনে এতোকিছু?”
“হাহাহা। তোমাকে বললাম তুমি কাউকে বলোনা। আপাতত এটা সিক্রেট ই থাক।”
“কিন্তু পুরো ক্যাম্পাসে তো রটে গেছে ,,,”
“ঐসব নিয়ে ভেবোনা। গসিপ করবে কিছুদিন তারপর ঠিক হয়ে যাবে।”
“তাহলে কি ধরে নিবো ক্যাম্পাসের হার্টথ্রোব আলিফের মনে আসীন হয়ে আছে নীরা?”
“আবার জিগায়! তা কই তিনি?”
“খুঁজে দেখো আশেপাশেই আছে।”
“আজকে ওকে নিশ্চয়ই অনেক সুন্দর লাগছে তাইনা ভাবী? দেখো সানগ্লাস নিয়ে এসেছি। তোমার বান্ধবীকে খালি চোখে দেখা আমার জন্য অসম্ভব কঠিন কাজ! দেখলেই কেমন চোখ জ্বলে।”
রিমি আলিফের কথায় হাসতে লাগলো। মনে মনে বললো, নীরা তুই এই ছেলেকে এভাবে কাত করে ফেললি!! তুই নিজেও জানিস না সে তোর প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে টইটম্বুর হয়ে গেছে!
একদিকে আনন্দই হচ্ছে এক বাড়িতে দুই বান্ধবী থাকবে। এই আনন্দটা কিভাবে প্রকাশ করা যায়?
চলবে,,,,