#স্বপ্নতরী (পর্ব:10)
♡আরশিয়া জান্নাত
পরীক্ষা শেষে রিমি আর পুজা সিরিয়াস মুখ নিয়ে বসে আছে। নীরা ওদেরকে কি একটা জরুরি কথা বলতে ডেকেছে। নীরার ভাবভঙ্গি আরো বেশি গম্ভীর। সে একটু পরপর উঠে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। নিজে নিজে কিসব বিরবির করে আবার বসছে।
পুজা আর ধৈর্য রাখতে না পেরে বললো, কি হইছে তোর বলবি তো? ঘটনা কি?
ঘটনা কি সেটা বুঝতে পারছিনা বলেই তোদের থাকতে বলেছি! কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতেছি না।
পুজা–তুই কি কোনো কিছু নিয়ে সমস্যায় পড়েছিস?
রিমি– কেউ প্রপোজ করছে?
পুজা– কোনোকিছু নিয়ে ব্ল্যাকমেইল?
রিমি–বিয়ে ঠিক হয়েছে? ছেলে দেখছে নাকি?
নীরা– আহ! এক বান্ধবী বিয়ে প্রেম ছাড়া কিছু বুঝেনা আরেকটা খালি সমস্যার কাহিনী।
পুজা– এই দুইটার মধ্যে কোনো একটা তো হবেই।
নীরা–দোস্ত শোন তোরা, জানিনা কিভাবে রিয়েক্ট করি বাট আই থিংক আমার আশেপাশে কোনো স্পাই আছে! আর সে সর্বক্ষণ আমাকে ফলো করছে।
পুজা– মানে খুলে বল? এমন মনে হচ্ছে কেন?
নীরা–মানে হচ্ছে আমি কি করি না করি ঐসব এর পাশাপাশি আমার সিক্রেট কিছু কার্যকলাপ যা তোরাও জানিস না ঐসবও সে জানে!!
রিমি ওর কথা শুনে মনে মনে হাসতেছে। ওর বুঝতে বাকি নেই নীরা কার কথা বলছে। তবুও মনোযোগী শ্রোতার মতো শুনছে।
পুজা–তোর কি কাউকে সন্দেহ হচ্ছে? কে করতে পারে?
নীরা এবার নড়েচড়ে বসলো। খানিকটা সামনে এগিয়ে গলার স্বর নামিয়ে বললো, আই থিংক ইটস আলিফ!
রিমি– আরেহ না! ও হতে যাবে কেন? তুই অযথাই ওকে সন্দেহ করছিস।
নীরা– উহু আমি সিওর। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ও আমাকে ফলো করছে কেন?
পুজা– না বোঝার কি আছে আলিফ তোকে পছন্দ করে তাই হয়তো!
নীরা– এমনটা হবে না।
রিমি– কেন হবে না? হতেই পারে।একটা ছেলে অকারণে নিশ্চয়ই কোনো মেয়েকে ফলো করবেনা।
নীরা– তোরা মেবি জানোস না আলিফের সাথে রিয়ার রিলেশন আছে।
রিমি– কে বলছে তোকে?
নীরা–সেদিন সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েরা বলাবলি করছিল, রিয়া আর আলিফ ডেট এ গেছে। গ্রুপে ছবিও নাকি আপলোড করছে।
রিমি– ওকে নিয়ে গুজবের তো শেষ নাই। আর তুই কবে থেকে এসব শুনে বিশ্বাস করিস?
নীরা– তুই বিয়ের পর থেকে বেশি দেবর পাগল হয়ে গেছিস। আমি যা বলছি এজ এ ফ্রেন্ড শুনে জাজ কর। ভাবীর মতো না প্লিজ।
পুজা– রিমির কথাটা কিন্তু ভাবীর মতো না। এই কোশ্চেন আমিও করতাম।
নীরা– ওকে আরো ডিটেইলসে বলি রিমি নিশ্চয়ই জানিস নাতাশার সঙ্গে আলিফের বিয়ের ইস্যু ছিল? ঐটা বন্ধ করেছে কে সেটা জানিস?
রিমি–কে আবার নাতাশা। ও নাকি আলিফকে পছন্দ করে না।
নীরা– নাতাশা করেছে তবে আলিফকে পছন্দ করেনা সেজন্য না। রিয়ার জন্য। রিয়া নাতাশার ফুফাতো বোন। রিয়া আলিফের প্রতি কতোটা ক্রেজি তা তো ক্যাম্পাসের সবাই জানে।
পুজা– প্যাঁচাল হচ্ছে মূল কথা বল। ধরলাম রিয়া আলিফকে পছন্দ করে তো কি? তাই বলে আলিফের সঙ্গে ডেট হবে? আর যদি আলিফ রিলেশনে থাকে তোকে ফলো করবে কেন?
নীরা– এক্স্যাক্টলি আমিও তো সেজন্যই প্যাঁচে পড়ে আছি। আমাকে আলিফ ফলো করছে কেন!
রিমি– দেখ যা বুঝলাম ঘটনাটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু প্যাঁচ লেগে গেছে রিয়ার জন্য। তুই বরং এক কাজ কর সরাসরি আলিফকে জিজ্ঞাসা কর। দেখ কি বলে?
নীরা– আমি? পাগল নাকি! এটা তোর কাজ তুই তোর দেবরকে জিজ্ঞাসা করবি। আমি নাই এসবে।
রিমি– আমি জিজ্ঞাসা করলে পার্সোনাল ম্যাটারে এন্টারফেয়ার করছি ভাবে যদি?
(যদিও রিমি ঠিক করে রেখেছে সে জিজ্ঞাসা করবেই। এতো বড় ঘটনা হজম করার মেয়ে ও না)
নীরা–তুই আমার ফ্রেন্ড না? আমরা একসঙ্গে ছোট থেকে বড় হইছি না? এইটুকু করতে পারবি না?
এই আমাদের বন্ধুত্ব? মানুষে বান্ধবীর জন্য চুরি ডাকাতি পর্যন্ত করে ফেলে আর তুই!!!
রিমি– আচ্ছা যা জিজ্ঞাসা করমু।
নীরা– আমার লক্ষী বাবুতা।
রিমি– ঢং।
🌼🌼🌼🌼
শোনো না বলছি কি নীরার জন্য একটা ভালো সমন্ধ এসেছে। ছেলে আমার মেঝ আপার শ্বশুরবাড়ির। দেখতে শুনতে বেশ ভালো তার উপর সরকারি চাকরি করে। তুমি অনুমতি দিলে ওদেরকে নিয়ে আপা আসবে।
সায়মন সাহেব পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললেন, তোমার মেয়ে যে সিঙ্গাপুর যাওয়ার প্ল্যান করছে জানো? এখন বিয়ের কথা তুললে ও কিভাবে রিয়েক্ট করবে ভেবে দেখো।
নীরা সিঙ্গাপুর যাচ্ছে? কই আমাকে তো বলেনি কিছু!
নিজের মেয়ের ট্যালেন্ট চোখে পড়েছে কখনো? ও অনেক আগে থেকেই সেখানে ট্রায় করে আসছে। গুড নিউজ হলো এবার ওর আর্ট করা বেশকিছু ছবি সিলেক্ট হয়েছে। ওরা চাচ্ছে নীরা সেখানে পার্টিসিপেট করুক।
এতোকিছু ঘটে গেছে আমি কিছুই জানি না? তোমার মেয়ে কিসব হাবিজাবি এঁকে বিদেশ চলে যাচ্ছে! কি বলো তুমি?
হাহা তুমি আসলেই পারো! একেবারেই যাচ্ছেনা এটা একটা কম্পিটিশন। আমি চাই আমার মেয়ে সেখানে পার্টিসিপেট করুক, হারুক বা জিতুক সেটা ম্যাটার করে না। জীবনে সফলতা আসার জন্য ধরাবাধা সেক্টর রাখা ঠিক না। সবখানেই চেষ্টা করা উচিত, কোন সেক্টরে সাকসেস হবে কেউ বলতে পারেনা।
বলি কি শুনো প্রয়োজনে আলাপটা একটু পিছিয়ে আনবো তাও কথা বলে রাখি? দেখতে আসলেই তো বিয়ে হয়ে যায় না। এতো ভালো ছেলে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।
এখন না পরে।
নূরনাহার খানিকটা মিইয়ে গেল যেন। এই লোকটার কাছে মেয়ের বিয়ে নিয়ে কিছু বলা যায় না। এতো চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত বাসায় একটা ছেলে আনতে পারেননি। আল্লাহই জানে শেষপর্যন্ত মেয়েটার কপালে বিয়ে থাকে কি না।
রিমি আলিফের দরজায় নক করতেই আলিফ দরজা খুলে দিলো। রিমির হাতে লেবুপাতা দেখে আলিফ মুচকি হাসলো। রিমি চেয়ারে বসে বললো, ঘটনা একটা রটেছে শুনেছ?
কত রটনাই রটছে ভাবি। কোনটার কথা বলছো?
সব তো নীরার কানে আসে না। আর আসলেও পাত্তা দেয়না। এবার যেহেতু দিচ্ছে মানে বুঝতে পারছো?
ঝেড়ে কাঁশো তো
নীরা তোমার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তুমি ওকে ফলো করছো এই বিষয়ে ও মোটামুটি কনফার্ম। তবে রিয়ার ব্যাপারটার জন্য ও বিষয়টা ঠিকঠাক দাঁড় করাতে পারছেনা। আমাকে দায়িত্ব দিলো আসল ঘটনা বের করতে।
ও কি ভাবছে আমি ওকে পছন্দ করি?
নাহ। যদিও ভাবার মতো রিজন ছিল।
আমি কি করবো এখন?
তোমার ইচ্ছে। হয় ইগ্নোর করো নাহয় ওকে বলে দাও।
ও যদি রিজেক্ট করে?
করবে না মে বি। দিন দুনিয়ার সব পাত্তা না দেওয়া মেয়েটা যখন তোমাকে নিয়ে গসিপ আড়িপেতে শুনেছে এটাকে পজিটিভ সাইন ভাবতেই পারো।
কিন্তু একটা কথা বলোতো রিয়াকে নিয়ে হঠাৎ এমন কিছু ছড়ালো কেন।
সেটা আমিও বুঝতে পারছি না। বাট ডোন্ট ওরি আমি এটা খুঁজে বের করবো।
বাই দ্য ওয়ে ভাবি আমি খুব খুশি হয়েছি। টেক ইওর বেস্ট কেয়ার।
রিমি হাসলো। তাশফিক থাকতে ওর নিজের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন আছে?
আলিফ ভাবছে নীরাকে এবার মনের কথা বলেই দিবে। তার তো জানার অধিকার আছে কেউ একজন তাকে কতোটা ভালোবাসে! এতে যদি নীরা গর্দান ও নেয় আলিফ হাসিমুখে তার হাতে শহীদ হতে রাজী।
চলবে,,,,