শুভ্রময়_পুরঁজন পর্ব_২৮

0
362

#শুভ্রময়_পুরঁজন
পর্ব_২৮
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

২৮.
দানীন গেইটের কাছে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিহ আর খালু বস্তা ভর্তি বাজার-সদাই নিয়ে ঘরের দিকে এগোচ্ছে। নাকিদ আর ফুফা ব্যস্ত হস্তে অন্যান্য কাজকর্ম সামলানোর চেষ্টা করছে। তার বাবা বাগানের কাছে চেয়ার পেতে বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছেন।
দিলরুবা খাতুন এসে স্বামীকে অমর্ষিত গলায় বললেন,
“আপনি এমনে ভ্যাঁদা মাইরা বইয়া আছেন কেন? আর কুনু কাম নাই?”
নাইমোল্লাহ সাহেব বিগলিত হেসে স্ত্রীর হাত ধরলেন। বললেন,
“তুমিও বও। আমরার দানীনের বিয়ার পর আমরার আর কুনু কাম নাই। আরাম হরাম খালি।”
কাজের মহিলার সঙ্গে কথাবার্তা বলা তার বোনকে তিনি ডাকলেন,
“এই জেসমিন তোর ভাবিরে একখান মোড়া পাইতা দে। আর নাকিদের বউরে ক চা থাকলে চা দিতো।”
দানীনের জেসমিন ফুফু হেসে চেয়ার এনে দিলে দিলরুবা খাতুন বসলেন। স্বামীর পাশে বসে ইচ্ছে করছিলো তার কাঁধে মাথা রাখে। এতো খুশি সে সত্যি কখনো হয়নি। খুশি নয় ঠিক, স্বস্তি। দুঃখের কথা স্মরণ আর ব্যক্ত করে তো আর শেষ করা যাবে না। বড় বোনের আগে ছোট বোনের বিয়ে, কাউকে দ্বারা ধোঁকা, সবার অপমান-তুচ্ছতাচ্ছিল্য আপাতত বাদ রাখ যাক। ভাবা যাক তার মেয়ের সুন্দর মুখশ্রী। সদ্য জন্মানো কৃষ্ণবর্ণ শিশুর মসৃণ আঙ্গুলের স্পর্শ, কিশোরী বয়সে লুকিয়ে প্রথম তার মায়ের শাড়ি পরা, কাজলে ঢেকে গভীর চোখ দুটোতে অমাবস্যার গম্ভীর ভাব জাগ্রত করা। ভাবা হোক মেয়ের স্বামীর ঘর যাওয়ার প্রস্তুতি, দুঃশ্চিন্তা আর খানিক লাজুকতা।
নাইমোল্লাহ সাহেব তার হাত ধরে করতলে চুমু খেলেন। তিনি দানীন থেকে চোখ ফিরিয়ে জলে ভরা দৃষ্টি নিয়ে হাসলেন।

দানীন সবার কার্যকলাপ দেখছে আর ফুসফুস ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ইউসরা পাশে এসে দাঁড়ালো।
“আপু।”
দানীন একবার তাকে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
ইউসরা আরেকটু পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো,
“আজকে নাকি তোমাকে দেখতে আসছে। জানো তো। নাকি না জানিয়েই..এবার তো মনে হচ্ছে তোমাকে ধরে-পিটে বিয়ে দেবেই।”
দানীন নাক কুঁচকে বললো,
“আর দেখাদেখি। দুই বান্দরের ঢঙ আর তাদের মা জননীর নাটক।”
ইউসরা তার কাঁধ দ্বারা দানীনের কাঁধ ধাক্কা মেরে বললো,
“ছিঃ, এভাবে বলে না। আজ বাদে কাল তোমার শাশুড়ি।”
“তুই এখানে এসব পে পে করতে এসেছিস?”
“জি, না। জানতে এসেছি দুই বান্দরের মধ্যে তোমার সত্যিকারের সোয়ামি কে। গতকাল তো চিল্লাচিল্লি করে বললে যে আদ্রিয়ান স্যার বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আরেকটু হলে আমার কান খসে যেতো। আর এখানে এসে শুনছি ছেলের নাম আরসালান। মানে কী?”
দানীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো,
গতকাল তার মা পাত্রের নাম আদ্রিয়ান বলতে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। ফুফা-ফুফি জিগ্যেস করলে আবারও একই নাম বললে নাকিদ পাশ থেকে হতাশ গলায় মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“আরে মা আদ্রিয়ান না, আরসালান। আরসালান শুভ্র। আর শাহ আদ্রিয়ান হলো তার ছোট ভাই।”
নাকিদের কথায় তার মা বিগলিত হেসে বললেন,
“ও মনু, এতো বড় নাম মনে থাহে? মাজেমইদ্যে ভুইলা যাই। মুই শুভ্র কইয়াই ডাহুম নাইতে।”
দানীন শুভ্র নাম শুনে আটকে রাখা নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। পরক্ষণেই সে চমকে ওঠলো। দুই ভাই মিলে এতোদূর এগিয়েছে!
এরপর শুভ্রর মায়ের কাছে তার মায়ের কাঁদো কাঁদো স্বরে কথা।
শেষে না পেরে দানীন গালে হাত দিয়ে বসে রইলো। নিজেকে নিয়ে দানীনের আজ অনেক গর্ব হচ্ছে।

কাহিনী শুনে ইউসরা খিলখিল করে হেসে ওঠলো। সেইসঙ্গে দানীনও।
“আচ্ছা ইউসরা।”
“হ্যাঁ, বলো।”
“আগের কুত্তার বাচ্চাটাকে দেখে তুই শুরু থেকে মানা করছিলি। আরসালানকে দেখে তোর কি মনে হয়?”
“উনাকে তো দেখেছি একবার। আজকে তারা আসুক এরপর পুরো পরিবার দেখে বলবো। এরমধ্যে তুমি ভাবো।”
দানীন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো,
“আমি কি ভাববো? আমি কী ভাবতে পারি নাকি।”
“আপু, একজনকে দেখে খুশি হওয়া যায়, অনেককে দেখেও খুশি হওয়া যায়। কাউকে ভালো লাগে। অনেকজনকে ক্ষেত্রবিশেষে ভালো লাগে। সেই ভালো লাগার মানুষের সঙ্গে সুখে থাকা যায়, হাসিমুখে থাকা যায়। কিন্তু সবার সঙ্গে স্বস্তিতে থাকা যায় না। একটা মানুষকে তোমার মস্তিষ্ক ভালো লাগার স্থান দিয়েছে বলে ভালো লাগে। কিন্তু সবচেয়ে অপছন্দের ব্যক্তিটিও হয়ে উঠে স্বস্তির কারণ। রূপ,গুণ, চামড়া দেখে যেহেতু আমরা সুখ খুঁজি, সেহেতু স্বস্তিটাকে আর ফিরে পাই না। বুঝতে পারি না নাক ছিটকানো ব্যক্তিটিও মানসিক স্বস্তির নিদর্শন। তুমি ভাবো আপু। কাকে তুমি নিয়ে খুশি হতে চেয়েছিলে আর কে তোমাকে খুশি দিচ্ছে। ভালোবাসা সুন্দর।”
“তুই কাউকে বাসিস?”
“বাসি, ভবিষ্যৎ স্বামীকে।”
হেসে ইউসরা ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
দানীন অস্ফুট স্বরে বললো, “ভালোবাসা..”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here