কাগজের_তুমি_আমি #দ্বিতীয়_অধ্যায় #৮ম_পর্ব

0
385

#কাগজের_তুমি_আমি
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#৮ম_পর্ব

বুকটা কেনো জানে টিপটিপ করছে। কেনো সেই উত্তর জানা নেই ধারার। যতই হোক বিয়ে তো হয়েছে। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে ধারার। দরজা ঠেলে অনল রুমে প্রবেশ করে। অনলকে আজকে বেশ সুন্দর লাগছে, গোল্ডেন শেরোয়ানিতে বেশ মানিয়েছে তাকে। এমনেই মাশাআল্লাহ শারীরিক গঠন তার উপরে বরের সাজসজ্জা তাকে আরোও অসহ্যরকম হ্যান্ডসাম করে তুলেছিলো। অবশ্য ধারাকেও আজ লাল বেনারসীতে বেশ চমৎকা্র লাগছিলো, যেন লালে মোড়া কোনো মায়াবতী। সবার এক কথা ছিলো বিয়েতে বর বউ এর জুটি নাকি অনেক মানিয়েছে। ধারা এক নজরে অনলকে দেখে যাচ্ছে। কেমন জানে বিধ্বস্ত লাগছে, যেনো মনের সাথে হাজারো যুদ্ধ করে সে ক্লান্ত। অনল রুমে প্রবেশ করতেই ধারা ধীর পায়ে তার নিকট এগিয়ে যায়। তাকে দেখতেই অনল ভ্রু কুচকে থমথমে কন্ঠে বলে,
– তুই এই রুমে? আমি তো বলেই ছিলাম তুই মার সাথে থাকবি

অনলের এরুপ কথায় বেশ আমতাআমতা করেই ধারা জানায়,
– আসলে, আমি ফুপিকে বলেছিলাম। কিন্তু উনি বললেন নতুন বউ বাসরের রাতে শাশুড়ির সাথে থাকবে এটা কেমন দেখায়, তাই আজ রাতে এখানে থাকতে বললেন।

ধারার কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে অনল। অনলের নীরবতা দেখে ধারার পুনরায় তাকে বলে,
– তোমার যদি কোনো সমস্যা থাকে আমি নিচে শুয়ে যাচ্ছি।
– থাবা খাইছোস?
– হ্যা?

অনলের এমন কথায় বেশ হতবাক হয়ে যায় সে। অনলের বিশ্বাস নেই, থাবা মেরেও দিতে পারে। কিন্তু ভুল কি বললো সেটাই তো বুঝতে পারছে না ধারা। গালে হাত দিয়ে অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে অনলের দিকে এবং জিজ্ঞেস করে,
– কেনো?

এবার অনল ধমকের সুরে বলে,
– বাচ্চার মা হতে যাচ্ছিস বুদ্ধি হবে কবে? ঠান্ডার সময় নিচে শুয়ে ঠান্ডা লাগাবি আর দোষ হবে আমার বউ অত্যাচারের। বুঝি না আমি? যা ফ্রেশ হয়ে খাটে ঘুমা
– তুমি?
– আমার চিন্তা তোর করতে হবে না।

বলেই বারান্দায় চলে যায় অনল। আজ রাত তার ঘুম হবে না, মনটা বেশ অস্থির তার। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত সে। ধারা আর কোনো কথা বলে না, ভারী পোশাক ছেড়ে একটা হালকা সালোয়ার কামিজ পড়ে নেয় সে। অনল তখন একের পর সিগারেটে সুখ টান দিতে ব্যাস্ত। নিজের অস্থিরতা নিকোটিনের ধোয়ায় উড়াতে ব্যস্ত সে। তখন পিছন থেকে ডাক পড়ে,
– তুমি ফ্রেশ হবে না?

কথাটা শুনেই পেছন ফিরে তাকায় অনল। ধারাকে দেখে মনের মাঝের অস্থিরতাটা যেনো দ্বিগুন হয়ে যায়, গোলাপি সালোয়ার কামিজে বেশ মনোমুগ্ধকর লাগছে ধারাকে যেনো কোনো ভাস্কর্যের হাতের নিপুন শিল্প। মুখের কাছে লেগে থাকা পানি গুলো যেনো মুক্তদানার ন্যায় লাগছে। পরক্ষনেই নজর সরিয়ে নিলো অনল। কি করছে সে, দূর্বলতার কোনো স্থান নেই তার মনে। ধারার প্রতি সম্পর্কটা কেবল এবং কেবল কাগজের। কোনো কথা না বলে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে যায় অনল। অনলের মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না ধারা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। নিজের মনে একটা খচখচানি রয়েই গেলো, অনল কি বিয়ে টা করে পচতাচ্ছে!

রাত ২টা,
ধারা গভীর ঘুমে মগ্ন, অনল তখন ও বারান্দায় বসা। আজকে দিনটার অপেক্ষা পাঁচ বছর আগেও তার ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাকে সেদিন রিক্ত হস্তে ফেরত দিয়েছিলো। মনটা আজ হু হু করে উঠছে বারবার। প্রিয়তমার শুন্যতা আজ মনকে ব্যাহত করে তুলছে। দুঃখ ভুলাতে মদের বোতলে হাত বাড়ায় অনল। আচ্ছা মানুষটা না থাকলে কি ভালোবাসাও উবে যায়? চোখ ছলছল করছে অনলের, পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সিক্ত নয়নে দেখতে থাকে। হোমস্ক্রিনে মায়াবী মুখশ্রী ভেসে উঠে। কি কোমল হাসি মেয়েটার, শ্যাম বর্নের এই নারীর বাস অনলের হৃদয়ে সর্বক্ষণ। ছবিটির দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো অনল বলে,
– অনন্যা, আমি তোমাকে দেওয়া কথা রেখেছি, বিয়ে করে নিজের জীবনে একটা পুতুলের মতো বউ এনেছি। কিন্তু আমি যে তোমার স্থান কাউকে দিতে পারবো না। আমার বুকে তোমার জায়গা ছিলো, আছে এবং থাকবে। আমার ভাবনার গহীনে তোমার বিচরণ অনন্যা, অন্য কোনো নারীকে কিভাবে সেই স্থান দিবো অনন্যা। আমি ক্লান্ত, না চাইতেও ধারার প্রতি এক রকম আকর্ষণ কাজ করছে। কি করবো আমি অনন্যা? আমি যে ক্লান্ত। তোমাকে ছাড়া আমার শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, কাউকে বলতে পারি না। সবাই ভাবে আমি অনেক ভালো আছি। কিন্তু কাউকে বোঝাতে পারি না আমার ভালো থাকার উপায়টাই আমার কাছে নেই। কেউ বুঝে না অনন্যা। কেনো আমাকে একা করে দিলে তুমি? ভালোবাসি বললেই আমাকে একা হয়ে যেতে হয়। আমি তাই আর কোনো দিন কাউকে ভালোবাস বলবো না, কখনো না

রাতের আধারে অনলের অশ্রুগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে। কেউ টের না পেলেও কেউ ঠিক ই সাক্ষী হচ্ছে এই অশ্রুগুলোর। এতো কঠোর মানুষ ও কাঁদতে পারে সেটা তার ধারণা ও ছিলো না। চোখ বুঝে অনলের দুঃখগুলো অনুভব করতে পারছে ধারা। কিন্তু নীরব থেকে মূহুর্ত গুলোর সাক্ষী হলো সে। হয়তো এটাই তাদের ভেতরের সম্পর্কের সুতো। তারা নিজেরাও জানে না তাদের এই সুতো কতোটা মজবুত। এই সুতোটাই হয়তো তাদের সম্পর্কের নতুন আরম্ভ হবে, কে জানে______

সূর্যের প্রখর রশ্নি মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় অনলের। মাথাটা টনটন করছে তার। কাল রাতে ইমোশোনাল হয়ে একটু বেশি নেশা করে ফেলেছে সে। চোখ ঢলে উঠে বসে সে। হঠাৎ খেয়াল করলো তার গায়ে একটা চাদর দেওয়া। যতটুকু তার মনে আছে কাল রাতে বারান্দায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে। এবং তার কাছে কিছুই ছিলো না। কিন্তু এখানে তার গায়ে চাদর দেওয়া শুধু সেটাই না একটা বালিশে তার মাথা ছিলো। ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে সামনে রাখা মদের বোতল কিংবা এশট্রে টাও নেই। তার অগোচরে এগুলো কে করলো? ধারা। রুমে সে ব্যাতীত কেউ নেই ও। কিন্তু সে তো ঘুমিয়ে ছিলো। উফফফ মাথাটা টনটন করছে, এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না।
– মুখটা ধুয়ে চা খেয়ে নাও

কথাটা শুনে মুখ তুলে তাকালে দেখতে পায় সামনে ধারা কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধারা। নীল শাড়ি পরিহিতা নারীকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। ভেজা এলোকেশে দাঁড়িয়ে আছে সে। অনল ভ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ধারা বলে,
– মেহমান যতোদিন থাকবেন আমাকে এই রুমেই থাকতে বলেছেন ফুপি। আর একটা কথা মানুষকে তো সারাক্ষণ জ্ঞান দিতে থাকো অথচ ডাক্তার হয়ে নিজের লিভার নিজেই নষ্ট করছো। এটা যদি তোমার প্যাশেন্টরা জানতে পারে, তোমার কাছে আসবে? ভেবে দেখো

বলেই হাটা দিলো ধারা, এই প্রথম অনলকে দু কথা ঠেস মেরে বলতে পেরেছে সে। মজা লাগছে ধারার। সারাটাক্ষণ তাকে খুব ধমকের উপর রাখে লোকটা। কাপে চুমুক দিতে দিতে মুখে একটা হাসির রেখা ফুটে উঠে অনলের। মেয়েটা একটু স্বাভাবিক হতে লেগেছে। এখন সময়ের প্রতীক্ষা যখন তার জীবনধারার স্বাভাবিকতার_____

_______________________________________________________________________________________________________________

রাত ৮টা,
আজ অনল ধারার বৌভাত। ধারাকে গোলাপী ল্যাহেঙাতে বেশ সুন্দর লাগছে। ধারার পরিবারের সবাই এসেছে শুধু সুরাইয়া বেগম ব্যাতীত। সুভাসিনী বেগম যখন সেলিম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, প্রতিউত্তরে তিনি বলেন,
– একটু পর জামাই মেয়ের আসবে সেটার প্রস্তুতি করছে সে।

সুরাইয়া বেগমের না আসার কারণটা সুভাসিনী বেগমের বেশ ভালো করেই জানা। তাই বেশী ঘাটান না তিনি। ধারাকে দেখে লাবণী দৌড়ে যায় তার কাছে, হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে,
– আপু কেমন আছিস রে?
– আলহামদুলিল্লাহ, তুই?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
– মা কে দেখছি না ( আশেপাশে দেখে)

লাবনী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
– আপু তোকে খুব সুন্দর লাগছে
– কথা ঘুরাচ্ছিস?
– না আসলে
– থাক, মায়ের রাগ পড়লেই না হয় তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো হবে।
– বাদ দে না আপু। আচ্ছা তোর কথা বল, ফুপি, অনলভাই ভালো তো?
– খুব ভালো তারা। এতো ভালো মানুষ হয় নারে?
– আচ্ছা অনল ভাই কই রে? আসার পর থেকে দেখছি না
– অনল ভাই তা কলিগদের সাথে আছে।
– তুই এখনো তাকে ভাই বলেই ডাকবি? সে বুঝি তোর ভাই হয়?

বলেই খিলখিল করে হেসে উঠে লাবনী। ধারাও বেশ লজ্জা পেয়ে যায়। আসলেই তার মুখ থেকে ভাই বাদে কিছু বের হতে চায় না। তার কি দোষ!

অপরদিকে,
অনলের সব কলিগরাও এসেছে। শামীম, রাফিদরা মজার ছলে অনলকে বলে,
– ভাই, আপনারে তো বিয়ের পর আরো বেশি হ্যান্ডসাম লাগতেছে। ভাবী আপনার প্রেমে মনে হয় প্রতিনিয়ত পড়ে। (শামীম)
– ভাবী কি কম সুন্দর নাকি? (রাফিদ)
– তোদের পগানোর কারণটা কি রে?
– পগাবো কেনো? যাহা বলি সত্য বলি

শামীম বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠে। এর মাঝেই মাইসা বলে উঠে,
– ভাই বলেন না ভাবী আগে প্রপোজ করেছে নাকি আপনি?
– সিক্রেট।

বলেই চোখ টিপ্পনী দেয় অনল। সে বিয়েতেও মাহিকে দেখে নি, আজ ও মাহি আসে নি। তাই কৌতুহল কন্ঠে মাহির কথা জিজ্ঞেস করতেই মাইসা তাকে জানায়,
– মাহি আপুর শরীর ভালো নেই ভাই। তাই আসতে চায় নি। এই দুদিন হাসপাতাল থেকেও ছুটি নিয়েছে সে।

অনল কথাটা শুনে চুপ হয়ে যায়। সে খুব ভালো করেই জানে মাহি জেদের বশে কাজ গুলো করছে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটি কল আসে অনলের ফোনে। নাম্বারটা অচেনা লাগছে অনলের। কলটা রিসিভ করতেই………

চলবে

[গতকাল গল্পটা না দেওয়ার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। গতকাল মনটা ভালো ছিলো না তাই লিখতে পারি নি। আজ একটু বড় করে লিখেছি। পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাতে দিবো। দয়া করে কার্টেসী ব্যাতীত কপি করবেন না]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here