#কাগজের_তুমি_আমি
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#৯ম_পর্ব
কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটি কল আসে অনলের ফোনে। নাম্বারটা অচেনা লাগছে অনলের। কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে অচেনা স্বরের কেউ বলে উঠে,
– আপনার সাথে একান্ত গোপনীয় কথা আছে মিস্টার অনল মাহমুদ। আপনার কি সময় হবে?
– আপনি কে বলছেন? আমি মনে হয় আপনাকে চিনি না। আপনার পরিচয়টা আমাকে দিবেন প্লিজ
বেশ স্বাভাবিক ভাবেই অনল বলে। সে আসলেই অপরপাশের পুরুষালি কন্ঠটিকে চিনতে পারছে না। হুট করে কে এমন একান্ত গোপনীয় কথা তাকে বলতে চায়? অনলের উত্তরের স্বপক্ষে অপজিটের মানুষটি বলে,
– আমাকে আপনি চিনবেন না। কিন্তু আমি আপনার স্ত্রীর খুব পরিচিত।
– নামটা বলা যায় কি?
– দিগন্ত
অনল নামটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। ধারার মুখে নামটি কখনো শুনে নি, কিন্তু কেনো যেন মন বলছে এই ছেলেটা ধারার বাচ্চার বাবা। বেশ ঠান্ডা ভাবে অনল তাকে বলে,
– জ্বী বলুন কি কথা?
– আপনি ধারার সম্পর্কে সব জেনে শুনে কি বিয়েটা করেছেন?
– মানে?
– মানেটা খুব সোজা, আপনার বউ যাকে আপনি সতীসাবিত্রী ভাবছেন সে আসলে তা নয়।
কথাটা কানে যেতেই মাথা গরম হয়ে গেলো অনলের। ধীরে ধীরে কান লাল হতে লাগলো, চোয়াল শক্ত হতে লাগলো। শক্ত কন্ঠে বললো,
– একটু খোলসা করে বলবেন।
– আপনি হয়তো জানেন না আপনার ওয়াইফ কিছুদিন আগে প্রেগন্যান্ট হয়েছিলো, আমার বাচ্চার সাথে।
-……
– বিশ্বাস হচ্ছে না তাই না? এটাই স্বাভাবিক। নিজের নতুন বউ এর সম্পর্কে এরকম কথা শুনলে যে কারোর মাথা ঘুরে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা সত্যি, চাইলে আপনি ওকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। অবশ্য ও যে মেয়ে ও নিশ্চিত চেপে যাবে। আপনার সাথে বিয়ের তাগিদায় সে আমার বাচ্চাটিকে মেরে ফেলেছে। আমি জানি আপনার আমাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আমি একটা কথাও মিথ্যে বলি নি। আপনার ওয়াইফ ভার্জিন নয়। আপনাকে বিশ্বাস করানোর মতো কোনো প্রমাণ আমার কাছে নেই। কিন্তু আমি এটা বলতে পারবো তার শরীরে কতটা তিল আছে। এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন।
– আপনি কিভাবে জানলেন যে, আমাকে তারা এতো বড় কথাটা লুকিয়ে গেছে?
এতোক্ষণ চুপ করে দিগন্তের সব কথাগুলো শুনছিলো অনল। কিন্তু দিগন্তের শেষ কথায় যেন মেজাজ তুঙে উঠে যায়। তাই এই প্রশ্নটা বেশ কড়া ভাবেই ছুড়ে মারে অনল। দিগন্ত যেন বেকুব হয়ে যায় প্রশ্নটি শুনে। অনল একটু থেমে বলা শুরু করে,
– আমার নাম যেহেতু আপনি জানেন, তাহলে এটা আমি আশা করতেই পারি আপনি এটাও জানেন সম্পর্কে আমার বউ হওয়ার আগে ধারা আমার মামাতো বোন। এতো বড় ব্যাপারটা যে আমার কাছ থেকে মামা-মামী লুকিয়ে যাবেন না এটাই স্বাভাবিক। আমি আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে দেই আমি সব জানি এব্যাপারে। আর ধারার প্রেগ্ন্যাসির কথাটা আমি ই মামা-মামীকে জানিয়েছিলাম। আর এবোর্শনের কথাটা বলছেন তো। আমি নিজে ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম এবোর্শন করাতে।
অনলের কথাটা শুনে দিগন্ত কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না। চুপ করে শুধু কথাগুলো হজম করে যাচ্ছিলো। অনল আবার বলতে শুরু করে,
– আসলে কি বলুন তো, আপনাদের মতো ছেলেদের কারণেই মেয়েরা ছেলেদের বিশ্বাস করতে চায় না। আপনাদের মতো মানুষের কারণে মানুষ ভাবে ভালোবাসা মানেই মেয়েদের শরীরের খাজে নিজের কামনা মিটানো। আজ এতো সাহস নিয়ে আমাকে ফোন করে নিজের কৃতিত্ব জাহির করার কারণটা এটাই যে আপনি চেয়েছিলেন আমি যাতে আপনার কথায় এক্সাইটেড হয়ে ধারাকে ছেড়ে দেই। আচ্ছা, যখন হাত ধরার সময়টা আসে তখন কেনো এই সাহস টা থাকে না। পারতেন তো এই সাহসটা দেখিয়ে ধারার হাতটা ধরতে। তাহলে হয়তো আমার ধারার সম্মান বাঁচাতে তাকে বিয়ে করতে হতো না। যাক গে, আপনার কথা আমি শুনেছি। ভালো লাগলো আপনি আমার এতোটা বড় শুভাকাঙ্ক্ষী এটা ভেবে। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন, সামনে থেকে আমাকে আর ফোন করে ডিসটার্ব করবেন না। ধারা ভার্জিন কি না তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। আমি আপনার মতো শরীরের খাজে ভালোবাসা খুজি না।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো অনল। রাগে গা রি রি করছে, দিগন্তকে সামনে পেলে হয়তো মেরেই ফেলতো। এতো বড় কাপুরুষ হয়তো জীবনেও দেখে নি সে। অপরদিকে, দিগন্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই ঠায় বসে পড়লো। তার কাপুরুষত্ব তাকে ধারার কাছ থেকে এতোটা দূর করে দিয়েছে। নিজের মনের ভেতর একটা হাহাকার শুরু হয়েছে তার। এই হাহাকার অগ্নির ফুলকির মতো তাকে জ্বালাচ্ছে, হয়তো সারাটাজীবন জ্বালাবে_____
ফোনটা রেখে পেছনে ফিরতেই চমকে উঠে অনল। তার পেছনে ধারা দাঁড়িয়ে আছে। ছলছল নয়নে সেক নজরে তাকে দেখে যাচ্ছে। অনলের বুঝতে বাকি রইলো না ধারা তার এবং দিগন্তের কথোপকথন শুনেছে। হয়তো এজন্যই লজ্জা পাচ্ছে। নিজের কৃতকর্মের গ্লানি তার চোখের অশ্রুর রুপ নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। অনল ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো, মুখের কণায় দুষ্টু হাসি টেনে বললো,
– তুই আমার স্পাইগিরি করা থামাবি না তাই না?
অনলের কথাটা শোনা মাত্র আশেপাশে না দেখেই ধারা তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। হু হু করে কেঁদে উঠলো সে। অনলের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা অশ্রুর রুপে প্রকাশ করতে লাগলো৷ ঘটনার আকর্ষিকতায় বেশ অনাক হয়ে গেলো অনল৷ পরক্ষণে নিজেকে সামলে ধারার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
– আর কতো কাঁদবি? এমনেই সাকচুন্নির মতো দেখতে, এখন তো সারারা গুলো হয়ে যাবি। মেহমান সব ভেগে যাবে রে।
অনলের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো ধারা। নিজেকে সামলে অনলকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। অনুগত স্বরে বললো,
– তুমি এতো ভালো কেনো অনল ভাই?
– ওমা তুই আমার প্রশংসা করছিস বুঝি? আমি তো ভাবতাম তুই শুধু গালি দিতেই পারিস। মতলব কি রে?
– তোমার মতো মতলব খুজি বেড়াই নাকি আমি?
– তাহলে আজ প্রশংসা করছিস যে?
– ইচ্ছে হলো তাই, আর একটা কথা ধন্যবাদ
– বাব্বাহ মেয়ে এখন ধন্যবাদ দিতেও পারে! তা কেনো বলতো?
– এতোদিন বলতে পারি নি, আজ তোমাকে ধন্যবাদ বলতে খুব ইচ্ছে করছে তাই।
বলেই চোখের পানি মুছে নিলো ধারা। মনের মাঝে একটা প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে ধারার। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে ধন্যবাদ বলাটাও কম হবে। সারাটাজীবন তার দাসি হয়ে থাকলেও বোধ হয় এই ঋণ দিতে পারবে না সে। বেশ অনুগত স্বরে বলে উঠে,
– এতো ভালো হওয়ো না অনলভাই, আমি এই ঋণ দিতে পারবো না তোমার।
– এতো বকিস কেনো রে তুই? জানিস তাওকে সকাল বিকাল শুধু চাপড়ানো দরকার। আমি কি তোকে কিছু বলেছি? আমি কি বলেছি তুই আমার ঋণ কিভাবে দিবি? একটা কথা মাথায় রাখবি আমি যা করছি সেটা আমার মায়ের জন্য করছি। আর যে আসছে তার জন্য করছি। তাই ঋণের কথা তো আসবেই না। আরেকবার যদি শুনি না চাপরে গাল লাল করে দিবো।
ধমকের স্বরে গড়গড় করে কথাগুলো বলে হাটা দিলো অনল। ধারা অনলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। লোকটাকে যত দেখে তত অবাক হয়, উপরওয়ালা একে কি দিয়ে বানিয়েছে কে জানে। সারাক্ষণ বকবে সে ধারাকে কিন্তু অন্য কেউ ধারাকে নিয়ে কোনো কথা বললেই ক্ষেপে তার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে দিবে। একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে লোকটার প্রতি, এটা কেনো সেটা ধারা নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। এই ভালোলাগাটা কেবলমাত্র কৃতজ্ঞতার কারণেই। কারণ সে তো অনলকে পছন্দ করে না আর তাকে পছন্দ করাটাও সম্ভব নয়। এই যুক্তিতর্ক দিয়ে ধারা নিজের মনকে বেশ শক্ত করে বুঝেই দিলো। নিজের মনকে বুঝ দিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে হাটা দেয় সে অনুষ্ঠানের দিকে। দুটো আলাদা মানুষের ভাগ্য তাদের এক সম্পর্কে বেধেছে, না জানি এর পরিণতিটা কি রুপ হবে তা তারা কেউ জানে না___
সকাল ৯টা,
ধারাদের বাসার ডাইনিং টেবিলে বসা অনল এবং ধারা। সুরাইয়া বেগম জামাই আদরের কমতি করছেন না। এমনেই অনলকে ছেলে হিসেবে তার খুব পছন্দ। এখন তো সে তার জামাই, তাই আদরটাও দ্বিগুণ। ধারা মাথা নিচু করে শুধু খাবারটা গিলছে। সুরাইয়া বেগম এখনো তার সাথে দেইড়া কোনো কথা বলেন নি। এমনকি জিজ্ঞেস ও করেন নি সে কেমন আছে। ধারা তাই চুপচাপ শুধু একটা শৈবালের মতো ডাইনিং টেবিলে বসে রয়েছে। সে শুধু দিন গুনছে কখন এ বাড়ি থেকে যাবে। হঠাৎ……..
চলবে
[পরবর্তী পর্ব ইনশাআল্লাহ আগামীকাল রাতে দিবো। দয়া করে কার্টেসী ব্যাতীত কপি করবেন না]
মুশফিকা রহমান মৈথি