#শুভ্রময়_পুরঁজন
পর্ব_২১
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা
২১.
ব্রাউন টরটিলা রঙের বোরকায় আপাদমস্তক আবৃত করে দানীন ভার্সিটি পৌঁছালো। সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠার সময় তার সহকারী শিক্ষিকা শাহানাজ আপার সঙ্গে দেখা।
তিনি দানীনকে দেখেই সুর তুলে বলে ওঠলেন,
“হেই ড্যানীন। ড্যানডেনা, ডেনা ডেনা।”
দানীন তার দুই ভ্রুর মাঝখান কুঞ্চিত করে প্রশ্ন নিক্ষেপ করলো,
“কি সমস্যা?”
শাহানাজ বিগলিত হেসে বললো,
“অনেক সমস্যা।”
আরও কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাথা কাত করে বললো,
“সমস্যা নম্বর ওয়ান- তোমার মতো মেঘমেদুর রূপবতীর নিঃসঙ্গতা আমার হৃদয় চুলার আগুনের মতো দাউ দাউ করে ওঠে। গভীর চিন্তায় আমার মাথার উকুনগুলোও গণহারে আত্নহত্যা করে।
সমস্যা নম্বর টু- আশেপাশের সুদর্শন পুরুষদের দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়েও তাদের দিকে মুখ ভেঙচি কেটে তাকানো– এই দৃশ্য আমার নিকট এক অজানা আশংকা ন্যায় ঠেকছে। ভুমণ্ডলের সম্মোহিনী মিস দানীন কী পুরুষের প্রতি বিকর্ষণ বোধ করে? ও মাই গড!
সমস্যা নম্বর থ্রি- বিয়ে খেতে মন চাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশের ফকিরগুলো বিয়ে না করে সন্ন্যাসী হওয়ার পায়তারা করছে।”
দানীন তার এতো সমস্যাবলীর সমাধানের উত্তর স্বরূপ বললো,
“আপনার মুখমণ্ডলের চমৎকারিত্ব ঠাহর করে তো বোধ হচ্ছে না যে আপনি কোনোভাবে চিন্তিত আপা।”
শাহানাজ সঙ্গে সঙ্গে অসহায় মুখ করে ফেললো। যেনো এই জীবনাঙ্গনে সে নিরবলম্বন যার চলার পথ একাকিত্বে গুটানো।
দানীন মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“ঢঙী মহিলা!”
শাহানাজ পূর্বের বিগলিত হাসি হেসে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“আদ্রিয়ান স্যার কেমন আছে দানীন আপা?”
দানীন তার হ্যান্ড ব্যাগটি এগিয়ে দিলো। দিয়ে বললো,
“এটার ভিতরে উঁকি মারুন আপা। আদ্রিয়ান স্যারকে ব্যাগে ভরে পুরো ক্যাম্পাস চক্কর দিচ্ছি। চাইলে আপনিও টুপ্পুস করে ঢুকে পড়তে পারেন। দুই আমেরিকান হোতকা বিড়ালকে একসঙ্গে হাটিয়ে আনবো।”
শাহানাজ কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“ছিঃ, আপা! আমাকে না হয় যা তা করতে পারো। তাই বলে আদ্রিয়ান স্যারকেও তাই করবে? তোমার হৃদয়ে টান পড়বে না?”
দানীন চোখ পাকিয়ে বললো,
“হৃদয়, কলিজা, পাকস্থলী, বৃক্ক ও তার ভিতরে থাকা তিন সেন্টিমিটারের নেফ্রন তো সব আপনারই জ্বলে যায়। অন্য মানুষের জ্বলা-জ্বলির আর সম্ভাব্যতা বিদ্যমান থাকে কী।”
শাহানাজ দেদার হেসে বললো,
“আমি হলাম প্রভাবক। সেই প্রভাবে প্রভাবিত করে তোমার মনে আমার চেয়ে চারগুণ বেশি জ্বলা-জ্বলি উৎপন্ন করতে চাই। তাই তো এতো তোড়-জোড় কষ্ট ভালোবেসে গ্রহণ করছি।”
দানীন ফুস করে নিশ্বাস ফেললো। এই আদ্রিয়ান নামক বাক-বিতণ্ডা চাইলে সারাদিন অব্যাহত রাখা যাবে। কিন্তু দানীনের আপাতত এতো ইনার্জি নেই। দানীন সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করে ওপরে উঠবে ঠিক তখনই আগমন ঘটলো আদ্রিয়ানের।
আদ্রিয়ানকে দেখেই শাহানাজ লাজুক হেসে প্রশ্ন করলো,
“ভালো আছেন আদ্রিয়ান স্যার?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছেন দানীন ম্যাম?”
দানীন সৌজন্যমূলক হাসি উপহার দিয়ে গটগট করে হাঁটা দিলো।
আদ্রিয়ান তাকে পিছু ডেকে থামিয়ে বললো,
“ম্যাম খাতার বান্ডেলটা আমাকে দিন। আমি আপনার ক্লাসরুমে দিয়ে আসছি।”
এরপর হুট করে কেড়ে নিয়ে গটগট করে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে লাগলো। দানীন কুপিত কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে কিন্তু শাহানাজের উচ্চস্বরের চিৎকারে সেই চিন্তন স্থগিত হলো।
“ও মাই আল্লাহ, দানীন আপা! আমি জিগ্যেস করলাম কেমন আছেন, প্রত্যুত্তরে তুমি কেমন আছো জিগ্যেস করলো। মানে আশেপাশে অন্য কেউ আছে কি নেই চোখেই পড়ে না।”
দানীন কিড়মিড় করে বললো,
“দেখবে কিভাবে? দিনকানা যে যে একটা! সেই সঙ্গে আপনিও।”
শাহানাজ মোটেও দানীনের কথা গায়ে মাখলো না। হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। আর দানীন ছুটলো আদ্রিয়ানের পিছন।
তার প্রথম ক্লাস যেই ফ্লোরে হয় আদ্রিয়ান সেখানে তার খাতা নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দানীন গিয়েই একটা ধমক মারলো।
“কি সমস্যা স্যার? মেয়ে মানুষের জিনিসপত্র টানাটানি করছেন তা-ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামক স্থানে। এতো সাহস?”
আদ্রিয়ান থতমত খেলো।
“মা-মা-নে ম্যা-ম?”
“মানে কি হ্যাঁ? এখন যদি আমি কর্তৃপক্ষের নিকট বিচার নিয়ে উপস্থিত হই যে একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষিকার জিনিসপত্র টানাটানি করেছে? সোজা তো খাতাগুলোর মতো ফিক্কা মেরে চাকরি থেকে বের করবে।”
আদ্রিয়ান কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো,
“আপনি এভাবে কেন বলছেন ম্যাম?”
“কিভাবে বলবো? আরও জোড়দাড় ব্যবস্থা নেবো?”
এরপর মৃদু নমনীয় গলায় বললো,
“দেখুন, আপনিও টিচার, আমিও টিচার। এভাবে অন্য টিচারের ব্যাগপত্র নিলে অন্যান্য টিচার-স্টুডেন্ট খারাপ বলবে।”
আদ্রিয়ান নুইয়ে যাওয়া ভেড়ার ছানার মতো বললো,
“আমি তো শুধু সাহায্যের জন্য..”
“আমি সাহায্য করতে বলেছি? এতো সাহায্য করার ইচ্ছা অন্তরে জাগলে, বগলে কাতুকুতু দিলে বাসায় এসে হান্ডি-পাতিল ধুয়ে দিয়ে যাবেন।”
আদ্রিয়ান কণ্ঠে অসহায়ত্ব ফুঁটিয়ে জিগ্যেস করলো,
“সত্যি ম্যাম? আপনার বাসায় কাজের লোক নেই?”
পরক্ষণেই কষাটে গলায় বললো,
“অবশ্য এখানের কাজের মহিলাগুলো এতো ফাঁকিবাজি করে। কিছু বললেও খেই খেই করে ওঠে যেনো আমরা কামলা খাটতে এসেছি আর তারা আমাদের আজ্ঞাবহ মালিক।”
দানীন ভেবেছিলো আদ্রিয়ানকে কাজের লোকের সঙ্গে তুলনা করলে খানিক দমবে। কিন্তু নাক, মুখ দিয়ে যে ঝরণার মতো তার জন্য দরদ উতলা হয়ে পড়বে তা কি জানতো! দানীনের অবস্থা এখন এরকম, “আকাশ-বাতাস, দরজা-জানালা, পাতাল সব ফাঁক হও, আমি ভিত্তে ঢুকি।”
হঠাৎ দানীনের দৃষ্টি আটকালো আদ্রিয়ানের গলায় মাফলারের ভিতর থেকে উঁকিঝুঁকি দেওয়া লকেটে।
দানীন আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করে বললো,
“কি ওটা?”
আদ্রিয়ান মাফলারটা খুললো।
“ওহ, এটা?”
“জি, কিন্তু আপনার নাম তো এ লেটার দিয়ে। লকেট যে এস লেটার দিয়ে?”
আদ্রিয়ান লকেটটি লম্বা করে টেনে ধরে বললো,
“আসলে ম্যাম আমাদের দুই ভাইয়ের নাম মায়ের নামানুসারে এ দিয়ে আর বাবার নামানুসারে এস দিয়ে। আর আমাদের দুই ভাইয়ের গলাতেই সেইম ডিজাইনের এস লেটার দিয়ে লকেট আছে। আমার এক মামা পোল্যান্ড থাকে। বাবা সেখান থেকে অর্ডার দিয়ে আনিয়েছেন।”
দানীনের মনে হচ্ছে এরকম লকেট সে আগে কোথাও দেখেছে। কিন্তু কোথায় কার গলায় দেখেছে এখন ঠিক মনে পড়ছে না। একবার ভাবলো তাকে জিগ্যেস করবে এস দিয়ে তার নাম কি। আবার থেমে গেলো। জিগ্যেস করলেই তিনি মনে করতে পারেন দানীন তার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী, যা দানীন মোটেও নয়। তাই সে লকেটের ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করে আদ্রিয়ানকে রেখে ক্লাসের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো।
ক্লাস শেষে দানীন আর শাহানাজ বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। দূর থেকে ইউসরা দৌঁড়ে দানীনের কাছে এলো।
এসেই দানীনকে ঝাঁপটে ধরলো,
“আপু, আপু!”
শাহানাজকে জিগ্যেস করলো,
“আসসালামুআলাইকুম, ভালো আছেন ম্যাম?”
শাহানাজ হেসে জবাব দিলো,
“ওয়াআলাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। কিন্তু তোমার আপু তো ভালো নেই।”
ইউসরা চিন্তিত দৃষ্টিতে দানীনের দিকে তাকালো।
দানীন হাত নাড়িয়ে বললো,
“তুই এই মহিলার কথা কানে নিস না। মিথ্যা ও ভাঁওতাবাজ মিশ্রিত কোনো বেটি মানুষ দেখতে চাইবি তো আমার পাশে তাকাবি।”
শাহানাজ গাল ফুলালো। ইউসরা হেসে দানীনের হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।
তারা যখন কলাভবনের কাছে, তার সামনেই অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটির পাশে দুজন তরুণ একে অপরের মুখোমুখি হয়ে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তার মধ্যে একজন আদ্রিয়ান। আরেকজন, তেনা বাবা! তেনা বাবা এতো সিরিয়াস অঙ্গবিক্ষেপে হাতের আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলছে, মনে হচ্ছে আর্মি অফিসারদের ন্যায় কাঠিন্যতা পুরো মুখমণ্ডল জুড়ে বিরাজ করছে।
দানীনের মতো ইউসরাও থেমে দাঁড়ালো। শাহানাজও দাঁড়িয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে ইউসরার মাথায় হালকা করে চাটি মেরে বললো,
“কন্ট্রোল সোনা, কন্ট্রোল। আদ্রিয়ান তোমার শিক্ষক ভুলে যেও না। এতো বড় বড় ঢোঁক গিলার দরকার নেই।”
ইউসরা অদ্ভুতভাবে শাহানাজের দিকে তাকালো।
“শিক্ষক?”
হ্যাঁ, তা নয় তো কি?
শাহানাজ চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“তুমি কী অন্য কিছু ভাবতে চাইছো নাকি?”
ইউসরা দানীনের দিকে তাকালো। তাকে নড়াচড়া করতে না দেখে ইউসরা হালকা করে গুঁতা মেরে বললো,
“এই আপু। এভাবে ভ্যাঁদা মেরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? এটাই কী তোমার সুদর্শন পুরুষ? বরফ কাটা চিবুক, চওড়া কাঁধ, ফারিহ’কে..
ইউসরার কথা শেষ করার পূর্বে শাহানাজ চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে বলে ওঠলো,
“হোয়াট! তুমি কি বললে ইউসরা? কার সুদর্শন পুরুষ?”
তেনা বাবা দানীনকে খেয়াল করে তার উদ্দেশ্যে তার শুভ্রময় হাসি নিক্ষেপণ করলো। আদ্রিয়ান পিছন ফিরে সে-ও দানীনকে দেখে মুচকি হাসলো। দানীন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে আবার দৌড় দিবে নাকি তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানকে তেনা বাবা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। এই ডেঞ্জারাস ছেলে আদ্রিয়ানের মতো হাবলু চাচার সঙ্গে কি কথা বলছে?
তারাই উল্টো এদিকে এগিয়ে এলো।
ইউসরা আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্যে বললো,
“হ্যালো স্যার।”
“হ্যালো ইউসরা, কি খবর?”
ইউসরা সৌজন্যমূলক হাসি হেসে মাথা নাড়লো।
আদ্রিয়ান সবার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
“আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে? বাসায় যাচ্ছিলেন?”
দানীন কিছু না বলে চোখ তুলে আরসালানকে দেখছে। আরসালানের দ্ব্যর্থ দৃষ্টি দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
শাহানাজ বললো,
“বাড়িতেই যাচ্ছিলাম। দানীন আপার সুদর্শন পুরুষ নিয়ে একটু কথাবার্তা হচ্ছিলো আরকি।”
দানীন চমকে উঠে শাহানাজের দিকে তাকালো।
আরসালান বাঁকা হেসে জিগ্যেস করলো,
“সুদর্শন পুরুষ? ম্যাম চাইলে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। ভবিষ্যতের জন্য ভালো পরামর্শ দিতে পারবো। আমরা তো সবাই বন্ধু বন্ধুই।”
দানীনের শরীর দিয়ে কেমন একটা শিহরণ বয়ে গেলো।
শাহানাজ মুচকি হেসে চুল কানের পিছনে গুঁজে লাজুক গলায় বললো,
“তা তো অবশ্যই আরসালান স্যার। আমরা সবাই তো কাছের মানুষই।”
তার কথা শুনে দানীন তার দিকে প্রশ্নবোধক চেহারা নিয়ে তাকালো।
আদ্রিয়ান তা দেখে দানীনের উদ্দেশ্যে বললো,
“ম্যাম তো আমার ভাইয়াকে আগে কখনো দেখেননি। এই যে ইনি হলেন আমার বড়ো ভাই, আরসালান। আপনাকে যার কথা বলেছিলাম, বরিশাল থাকে যে।”
দানীনের অক্ষিগোলক বেরিয়ে আসার উপক্রম। উৎকণ্ঠিত গলায় জিগ্যেস করলো,
“ইনি আপনার ভাই!”
প্রশ্নের জবাবে দানীনের তথাকথিত তেনা-তুনা বাবা বললো,
“জি ম্যাডাম। আমিই উনার ভাই। সবাই তো বলে আমাদের দেখতে নাকি একদম নন-আইডেন্টিকাল জমজ ভাইয়ের মতো মনে হয়। এরপরও আপনি বুঝতে পারেননি?”
ইউসরা নাক সঙ্কুচিত করে বিরবির করে বললো,
“নিজের চেহারাই মনে থাকে না। আর কার না কার দুই ছাওল, তাদের চেহারা দেখে বুঝতে যাবো ভাই-ভাই নাকি মামা-ভাগ্নে।”
আরসালান তার নিকট খানিক অগ্রসর হয়ে মুখে হাসি বজায় রেখে জিগ্যেস করলো,
“কিছু কি বলছো?”
দানীন হন্তদন্ত হয়ে বললো,
“না, না। আমি কিছু বলছি না। আমি আসলে খানিক চিন্তিত।”
আদ্রিয়ান জিগ্যেস করলো,
“কি নিয়ে ইউসরা?”
দানীন আড়চোখে ইউসরার দিকে তাকালো। ইউসরাও দানীনের দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো,
“আপুকে মানে, দানীন ম্যামকে কয়দিন আগে বরিশালে এক লোক কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল।”
শাহানাজ, আদ্রিয়ান দুজনে আঁতকে ওঠলো,
“কিহ!”
ইউসরা ভঙ্গিমা করে বলতে লাগলো,
“হ্যাঁ, শুধু তাই না। লোকটা নাকি অনেক সুদর্শন এবং সুন্দরী সুন্দরী সব মেয়েদেরই তুলে নিয়ে যায়। একই দিনে তিনটা লাল, হলুদ আর নীল জামা পরা মেয়েকে ধরতে চেয়েছিল। তারা কোনোমতে বেঁচে সেই কি কান্না!”
দানীন অক্ষিগোলক বৃহদাকার করে ইউসরার দিকে তাকালো।
আরসালান কোমরে এক হাত রেখে উষ্ণ গলায় জিগ্যেস করলো,
“একটা লোক তা-ও আবার সুদর্শন এতগুলো মেয়ে দিয়ে কি করবে? কিছু যৌক্তিকতা তো থাকা দরকার?”
“মেয়েবাজ!”
শাহানাজ চেঁচিয়ে ওঠলো।
নাক ছিটকিয়ে বললো,
“লুইচ্চা বেটা। একটা মেয়ে হয় না তাই আরও মেয়ে ধরে। পায়খানার বদনা কোথাকার। আমাদের দানীন আমাকে কিভাবে ধরতে আসে? আপা তুমি তার জায়গা মতো দিয়ে এসেছো তো?”
আরসালান দানীন একসাথে কাশতে শুরু করলো। দানীন মৌন গলায় বললো,
“জায়গা মতো না দিলেও নাক বরাকর দিয়ে এসেছি।”
তখন সব কয়টা আঁখিজোড়া আরসালানের দিকে তাকালো। আর আরসালান চোখ গরম করে দানীনের দিকে তাকালো।
দানীন আবার ক্ষীণ গলায় নখ খুটতে খুটতে বললো,
“সবার ম্যাথের সমাধান এক হলেও প্রসেস এক না।”
ইউসরা মাথা নাড়িয়ে বললো,
“ওহ, ইয়েস রাইট রাইট।”
আদ্রিয়ান এবার খানিক হতবিহ্বল দৃষ্টিতে একবার ভাইয়ের দিকে আরেকবার দানীনের দিকে তাকাচ্ছে।
ইউসরা বললো,
“আমরা তাহলে এবার আসি। আসসালামুআলাইকুম। আপু চলো।”
দানীন মাথা নাড়িয়ে আরসালান ও আদ্রিয়ানকে পাশ কাটিয়ে হাঁটা দিলো।
আরসালান দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বারকয়েক ডানে বামে মাথা নাড়ালো।
“না, পারছি না। এতো অপমান আমার মতো পূত-পবিত্র মানুষ আর নিতে পারছে না।”
আদ্রিয়ান মাথা ঘুরিয়ে জিগ্যেস করলো,
“অপমান?”
“এটা তোর ম্যাডাম! মানে মানুষকে একটু, জাস্ট একটু তো ইজ্জত বাঁচানোর পথ রাখবে। তা-ও আবার অন্য দুজন মেয়ে মানুষের সামনে। আমি মেয়েবাজ? লুইচ্চা?”
“মানে ভাইয়া তুমিই ম্যামকে কিডন্যাপ..”
আরসালান চোখ গরম করে বললো,
“এই হাদা আমার আর কোনো কাজ নেই? জাস্ট দুই মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল। এর মধ্যে আমি উনাকে কিডন্যাপ করে তুলে নিয়ে গেছি?”
আদ্রিয়ান মুখ কালো করে বললো,
“আমি কি জানি।”
আরসালান কপাল হাত রেখে বললো,
“আর কি কি কাহিনী সবাইকে শুনিয়েছে আল্লাহ জানে। সদ্য জন্মানো ন্যাংটা বাচ্চারও বুঝি আমার থেকে বেশি ইজ্জত রাখতো।”
(চলবে)