#প্রথম_প্রেমের_উষ্ণতা
#পর্বঃ২
#ফারজানা_আক্তার
বাকরুদ্ধ হয়ে নিবিড়ের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিক্তা। নিবিড় রিক্তার তাকানোকে পাত্তা না দিয়ে গর্জে বলে উঠে “এখন কী বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবো? ঘরে ঢুকবো না?”
নিবিড়ের এমন চিৎকার দেওয়া কন্ঠে হুশ ফিরে রিক্তার। নিবিড়ের পাশে বঁধু বেশে অদ্ভুত দৃষ্টিতে রিক্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মায়া। মায়া হলো নিবিড়ের ভালোবাসা যার জন্য সে রিক্তার হৃদয়ে এতো বড় আঘাত কাঁটলো। মায়ার সাথে নিবিড়ের পরিচয় কলেজ লাইফে তবে তখন থেকে ওদের সম্পর্ক থাকলেও মাঝে কিছু কারণে অনেকগুলো দিন তাদের মাঝে কোনো যোগাযোগ-ই ছিলোনা আর সেই সময়টুকুর মাঝেই জায়েদা সুলতানা রিক্তাকে নিবিড়ের বউ করে নিয়ে আসেন, মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে মায়ার কথা বলার সাহস সেদিন নিবিড়ের ছিলোনা কারণ তখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। রিক্তা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালে নিবিড় মায়ার হাত ধরে ঘরের ভেতরে পা রাখতেই জায়েদা সুলতানা ঠাস করে থা’প্পড় লাগিয়ে দেয় নিবিড়ের ডান গালে, স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো ঘর। রিক্তা পেটে হাত দিয়ে দেওয়ালের সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে, মায়া কিছুটা ভয় পেয়ে এক পা পিঁছিয়ে যায় কিন্তু নিবিড় মায়ার হাত ছাড়ে না তখনও। রাগে দুঃখে জায়েদা সুলতানা গট গট করে বলতে লাগলেন “লজ্জা করেনা তোর? কিভাবে পারলি তুই এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে এভাবে ধোঁকা দিতে, তোর পছন্দ অন্য থাকলে তখন কেনো তুই কিছু বললিনা আমাকে আর তখন বলতে না পারলে এখন কিভাবে এই নির্লজ্জ মেয়েকে নিয়ে আমার সামনে আসলি? এই মেয়ে কি জানেনা তুই বিবাহিত, তোর বউ আছে? জেনেশুনে কিভাবে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ করলো এই মেয়ে? তুই কি এই তিন বছরেও রিক্তাকে একটুও চিনতে পারলিনা, তুই কী একটুও অনুভব করতে পারিসনি যে রিক্তা তোকে কতটা ভালোবাসে? তোদেরকে আমি অভিশাপ দিলাম, কখনোও সুখী হতে পারবিনা তোরা, কখনোই না।”
জায়েদা সুলতানা কথাগুলো বলে কান্না করে দিলেন, রাগান্বিত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে নিবিড়। মায়া নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বলল “আমার খুব ক্লান্ত লাগছে, চলো রুমে যায়”
মায়ার মুখে এমন কথা শুনে রিক্তার বুকটা ক্ষেপে উঠে, বুক জুড়ে হাঁহাঁকার, যে রুমে সে তিন বছর কাটিয়েছে নিবিড়ের বুকে সেই রুমে এখন নিবিড়ের সাথে অন্য নারী এটা যেনো মানতে পারছেনা রিক্তা।৷ চোখের সামনে নিবিড়কে অন্যের হাতে হাত রাখতে দেখে রিক্তা সহ্য করতে পারছেনা। মায়ার কথা শুনে জায়েদা সুলতানা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন “এই ঘর এখনো আমার নামে আছে, আমার স্বামী আমার নামেই লিখে দিয়েছিলেন এই বাড়ি তাই আমি যা বলবো তা-ই হবে। নিবিড় আর রিক্তার এখনো ডিভোর্স হয়নি, নিবিড়ের রুমে এখনো রিক্তার অধিকার শুধু, নিবিড় তুই তোর সব জিনিস নিয়ে অন্য রুমে চলে যা এই নির্লজ্জ মেয়েটাকে নিয়ে, রিক্তার রুম রিক্তা ছাড়বেনা।”
কথাগুলো বলেই নিবিড়ের সামনে ডিভোর্স পেপার টা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেন জায়েদা সুলতানা।
ডিভোর্স পেপার ছিড়তে দেখে নিবিড় বলে “মা এটা কি করছো তুমি? রিক্তার সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না, রিক্তা সন্তান জন্ম দেওয়ায় অক্ষম, ও কখনোই তোমাকে দাদি হওয়ার সুখ দিতে পারবেনা। মায়াকে মেনে নাও মা প্লিজ। মায়া আমাদের কে নিরাশ করবেনা।”
আর সহ্য করতে পারছেনা রিক্তা, এক ছুটে চলে গেলো শাশুড়ীর রুমে। একটা মানুষ এতোটা স্বার্থপর হয় কিভাবে? আর কিছু ভাবতে পারছেনা রিক্তা। কষ্ট হচ্ছে খুব রিক্তার। রিক্তা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পরে।
ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে অন্য কারো সাথে সহ্য করার শক্তি সবার থাকেনা, রিক্তারও নেই। পারছেনা রিক্তা সহ্য করতে তবে কিছু করারও নেই আর রিক্তার। এভাবে হুট করে বিয়ে করে চলে আসবে নিবিড় তা ভাবনার বাহিরে ছিলো রিক্তার। রিক্তা মেনে নিতে পারছেনা চোখের সামনে সবকিছু কিন্তু ভাগ্য খারাপ বলে মেনে নিতে হচ্ছে। এখানে পরে থাকলে মায়ের যত্ন হলেও পাবে যেটা বাপের বাড়িতে কখনোই পাবেনা। রিক্তার সৎ মা আর সৎ ভাইবোন গুলো রিক্তাকে মোটেও সহ্য করতে পারেনা। রিক্তার বাবা রিক্তার সৎ মাকে ভয় পায়, মহিলা টা বড্ড খারাপ। মুখের ভাষাও খারাপ। তাই রিক্তার বাবা ওই মহিলার কথার উপরে কোনো কথা বলেননা। জায়েদা সুলতানা কোনো মতেই রিক্তাকে সেই বাসায় পাটাবেননা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাই ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে ফেলেন আর তিনি জানেন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ডিভোর্স হয়না। রিক্তার নিষেধাজ্ঞা বলে নিবিড়কে বলতেও পারছেনা এতো বড় খুশির খবর টা। জায়েদা সুলতানা কিছুতেই রিক্তাকে হারাতে চান না, এই তিন বছরে রিক্তার প্রতি একটা অন্যরকম মায়া জন্মে গিয়েছে জায়েদা সুলতানার মনে।
_____________
সন্ধ্যায় রিক্তার ঘুম ভাঙতেই সে লাফিয়ে উঠে বসে। উঠে বসতেই কেমন জানি মাথাটা ঝিম ধরে গেছে রিক্তার। কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে তারপর ধীরে ধীরে উঠে রুম থেকে বাহিরে যেতেই দেখে ডাইনিং টেবিলে বসে নিবিড় আর জায়েদা সুলতানা আবার ঝগড়া করছে। রিক্তার আর ভালো লাগছেনা এসব তাই সে তার কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে ঘর থেকে তখন জায়েদা সুলতানা কান্না করে দেন, জায়েদা সুলতানার কান্নাতেও যখন রিক্তা থামছেনা তখন তিনি রিক্তার পা ধরতে গেলে রিক্তা ধরে ফেলে উনাকে।
“ছি মা, কি করছেন আপনি এসব? প্লিজ মা আপনি আমাকে এতোটা ছোট করে দিবেননা। মা কি কখনো মেয়ের পা ধরতে পারে এভাবে? বলুন মা।”
কান্না করতে করতে ঢেঁকুর তুলে বলে রিক্তা কথাগুলো। কান্নার ঢেঁকুর এতোই তীব্র যে রিক্তা স্পষ্ট করে কথাগুলো বলতে পারছেনা তবুও কষ্ট করে এতটুকু বলেছে।
জায়েদা সুলতানা কান্নামিশ্রিত হাঁসির সাথে বলেন “মেয়ে কি কখনো এভাবে মাকে একা করে চলে যেতে পারে? মেয়েকে ছাড়া যে মায়ের কোনো অস্তিত্ব নেই রে পাগলী।”
রিক্তা হাত থেকে ব্যাগ ফেলে দিয়ে জায়েদা সুলতানাকে জড়িয়ে ধরেন। মায়ের এমন আবদার উপেক্ষা করে চলে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব না রিক্তার পক্ষে।
জায়েদা সুলতানা নিবিড়ের রুমে যেয়ে ওর সব জামা কাপড় গুছিয়ে এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন “যদি এই বাড়িতে থাকার ইচ্ছে থাকে তবে অন্য রুমে যেয়ে থাক আর যদি থাকতে ইচ্ছে না করে তবে চলে যেতে পারিস দরজা খোলা আছে।”
মায়ের এমন কথায় বেশ চমকে যাচ্ছে নিবিড়। রিক্তাকে আঁটকালো আর তাকে বেরিয়ে যেতে বলল এমন বিচার কিছুতেই মানতে পারছেনা নিবিড়। নিবিড় কয়েক পা বাড়িয়ে রিক্তার সামনে যেয়ে বলে “আমাকে হাতের মুঠে আনতে না পেরে আমার মাকে বশ করেছিস, এতোটা নিকৃষ্ট তুই?”
কথাটা নিবিড় মুখ থেকে বের করতে দেরি নিবিড়ের গালে চর পরতে দেরি হয়নি। রিক্তা নিজের অজান্তেই নিবিড়ের গালে আঘাত করে ফেলে। রিক্তা নিজেও অবাক হয়ে আছে নিবিড়ের সাথে। এমনটা করার কোনো পরিকল্পনাও ছিলোনা রিক্তার। জায়েদা সুলতানা খুশি হয়েছেন কিছুটা তবে মায়ার মুখটা প্যাঁচার মতো হয়ে আছে। রিক্তা সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে। জায়েদা সুলতানাও রিক্তার পেঁছনে যায় রিক্তার জামা-কপড়ের ব্যাগ নিয়ে।
নিবিড় রাগের বশে দেওয়ালে আঘাত করতে লাগলো ডান হাত দিয়ে। হাত বেয়ে টুপটাপ রক্তের ফোঁটা ঝড়ছে। মায়া তা দেখে ছুটে গিয়ে নিবিড়ের হাত ধরে ফেলে। নিবিড়ের মাথায় এখন প্রচন্ড রাগ রিক্তা থা’প্পড় দেওয়ায় তাই সে মায়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই তাল সামলাতে না পেরে মায়া মেঝে তে পরে হাঁটুতে হালকা ব্যাথা পায়। মায়া বুঝতে পারেনি বিষয়টা এতোটা জটিল হবে, এমনটা হবে জানলে মায়া কখনোই নিবিড়ের সাথে আবার সম্পর্কে জড়াতো না নতুন করে। মায়া আর কিছু না বলে চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়। রক্তাক্ত হাত নিয়ে নিবিড় বসে আছে সোফায়।
রিক্তা মাগরিবের নামায শেষ করে জায়নামাজে বসে থাকে অনেক্ষণ, জায়েদা সুলতানা নিজের রুমে নামায পড়ছেন। রিক্তার হঠাৎ করে খুব পিঁপাসা পাওয়াতে সে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগুতেই লক্ষ করে নিবিড়ের হাতের রক্ত। রিক্তা রান্নাঘরে না যেয়ে আবার রুমে যেয়ে ঔষুধপত্র নিয়ে আসে নিবিড়ের হাতে লাগিয়ে দেওয়ার জন্য। রিক্তা ঔষুধ লাগানোর জন্য নিবিড়ের হাত ধরতেই___
#চলবে_ইনশাআল্লাহ