#প্রেমঘোর#৭৮#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
রিদি রোমে এসে আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
সারা রাত কেঁদেছে তাই চোখ দুটো ফুলে আছে।
প্রায় এক ঘন্টা যাবত একটা সাওয়ার নিয়ে নিলো।
রাফসা সব কিছু ঠিক ঠাক করে,অরূপের খুজ নেওয়ার জন্য গেলো।
এতক্ষণ হয়ে গেছে ছেলেকে দেখতে পায় নি আর এতো কাজের মাঝে নিজেও ফ্রেস হতে পারে নি।সব কিছু করা শেষ হয়ে গিয়েছিলো,তারপর শশুড় আর কাকা শশুড় এসে যাওয়ায় ওদের সবাই খাওয়াতে গিয়ে সময় চলে গেলো।
ঘরে ডুকে দেখলো,অরূপ ওর বাবার বুকে মুখ দিয়ে শুয়ে আছে।
কাছে গিয়ে হাত মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“ঘুমিয়ে গেছে আমার মানিক টা…….”
ফিরে তাঁকালো অরূপ,মুখ টা এমন করে রেখেছে যেন সব চেয়ে অসুখী মানুষ সে।
ছেলেকে জড়িয়ে ধরে,রাফসা আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,
“অনেক কাজ ছিলো আব্বু,রাগ করে রাজা আমার…….উমমমম্মা……”
“তুমি শুধু কাজ করো,আব্বু আর আমি এখনো খাই নি……তুমি তো ভুলেই গেছো আমাদের……”
“না আব্বু,তোমাদের ভুলি নি তো…….দেখো,তোমরা খাও নি তাই আমিও তো খাই নি…….তোমাদের তো ডেকে গেলো তোমার মিতু আপু….যাও নি তো তোমরা!!”
“তুমি তো আর ডাকো নি তাই যাই না,তাই না আব্বু???”
“রাইট ব্যাটা,তোর আম্মুর কাছে কাজ টাই বড় কথা,তুই আর আমি অনেক পরে…..”
“সাদ,কি বলছো বল তো…..কাজ ছিলো একটু….একটা মেয়েকে দেখতে আসলে কি কম ব্যবস্থা করতে হয়।ঘর দূর থেকে সব পরিষ্কার করে কত কি রান্না…..”
“দেখেছিস অরূপ…..এখনও কাজের আলাপ…….”
“হুমমমম……”
অরূপ হাত দুটো বেটে…..পায়ের উপর পা রেখে মুখটা ঘুমড়া করে বিছানায় বসে পড়লো।
“আম্মুর সাথে আড়ি……..”
“না বাবা,আড়ি না…..ভাব করো না বাবু……”
“করিস না অরূপ,আমিও তোর মতো তোর মায়ের সাথে আড়ি করলাম……”
“না……অরূপ,আব্বু তুমি শোনবে না আমার কথা????
কষ্ট হবে তো আমার বাবা…..”
“………….”
“উমমমমমমম্মা,,,,ুমমমমম্্মমমাাায়…..” চুমু দিয়ে ছেলের সারা মুখ ভরিয়ে দিলো রাফসা।
“মানিক,আমার আর রাগ করে না……….এই দেখো কত্ত আদর করে দিলাম…..আসো আসো খাবে চলো….কত বেলা হয়ে গেছে তাই না??”
অরূপ চোখ বেটে ওর মায়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
রাফসা দু হাতে পেটের দি সাইডে একটু সুড়সুড়ি দিতেই অরূপ খিলখিল করে হেঁসে দিলো।যে হাঁসিতে বিশ্ব জয় করা যাবে💜💜💜💜💜।
“এই তো সাত রাজার ধন আমার………(কোলে তুলে নিয়ে)চলো চলো….খাবে চলো….”
মুঁচকি হাঁসছে সাদ মা আর ছেলের কান্ড দেখে।
“কি হলো সাদ,চলো…..একটু পর তো মেহমান চলে আসবে…….পড়ে কখন কি করবে??”
“অরূপ,নামো…..তোমার আম্মু একটু ফ্রেস হয়ে নিক তারপর আমরা তিনজন একসাথে খাবো……..”
“তোমরা দু জন আগে খাও তো…পরে ফ্রেস হয়ে নিবো আমি…….”
“হ্যায়,অরূপ নামো…..আর তুমি যাও ফ্রেস হয়ে নাও….লাগলে সাওয়ার ও নাও……”
“আজব!!ওর ক্ষুদা লেগেছে তো…..”
“ওকে বিস্কুট খাইয়ে ছিলাম…..তুমি যাও…..”
“ওফফফ…..”
“যাওওওওও………”
রাফসা জটজলদি সাওয়ার শেষ করলো।
তিনজন একসাথে খাওয়ার সময় যেন অরূপ আর সাদের দুষ্টুমি বহুগুন বেড়ে যায়।আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
খাওয়া শেষে সাদ ড্রয়িং রোমে বসে অপেক্ষা করতে থাকে পরশ দের জন্য।
আর রাফসা অরূপকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রিদি তৈরী হয়েছে কি না সেটাই দেখতে গেছে।
রাফসা রিদির রোমে ঢুকে খেয়াল করলো,রিদি কিছুটা চটে আছে।কিন্তু তা সত্বেও শাড়ি পড়ে সাজ কমপ্লিট।
কিন্তু!!!!!!
একি বিপত্তি!!!রিদি যে হাতা কাটা ব্লাউজ পড়েছে।বাংলাদেশের মানুষ যতই আধুনিক হোক ছেলের বউ দেখতে এসে নিশ্চয় হাতা কাটা ব্লাউজ পচ্ছন্দ করবে না।
“রিদি,তুমি এই ব্লাউজ টা কেনো পড়েছো????বর পক্ষের সামনে প্রথম দিন এভাবে যাবে?তারা যদি……”
“ওহ.লিসেন্ট ভাবী……আমি নিজেকে কি ভাবে প্রকাশ করবো সেটা কি তোমার কাছে শিখতে হবে????তা ছাড়া আমি তো নৌশিনের মতো এনালগ নই যে ফুল হাতা,ব্যান গলার ব্লাউজ পড়ে মাথায় হিজাব দিবো……..যতসব”
“রিদি,ভালো ভাবে কথা বলো….ভাবী হই তোমার….”
“সরি……”
“ব্লাউজ টা চেন্স করে নাও…..আর ওদের সামনে যাওয়ার সময় মাথায় একটু কাপড় দিও…….”
কিছু বললো না রিদি…..জানালার দিকে তাঁকিয়ে থেকে অন্য ধ্যানে তাঁকিয়ে থেকে বললো,
“ভাবী……”
“হুম…….”
“ফুল হাতা ব্লাউজ আর ফুল কলার,হিজাব এগুলো পড়লে কি সাদাদ আমাকে পচ্ছন্দ করবে???”
রাফসা জানে এসব তবুও রিদির মুখে প্রথম শুনছে এসব…….তাই চমকে উঠেছে “মানে??”
আচমকা রিদি পেছন ফিরে এসে রাফসাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না শুরু করে।
রাফসার ভেতরটাও কেঁপে উঠে রিদির কান্নায়।
“ভাবী,আই লাভ সাদাদ,ভাবী,আমি সাদাদকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না……..”
রাফসা কি করবে???যে ভাবে কাঁদছে রিদি…..ওর ই বা দোষ কি ও তো ভালোবেসেছে সাদাদকে।আচ্ছা!!!এমন কেন হয়???যদি যে যাকে পচ্ছন্দ করে তার সাথেই সারা জীবন কাঁটানো যতো তাহলে তো কাউকেই আর কষ্ট পেতে হতো না।
কিন্তু বাস্তবতা যে উল্টো।’আমি যার লাগি বাঁধি ঘর,সে যে বাঁধে অন্য কারও ঘর’।
রিদির ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে।তার মন জোড়ে শুধু সাদাদ।কিন্তু সাদাদের পুরো দুনিয়া জোরে শুধু নৌশিন।নৌশিন আর সাদাদের পৃথিবীতে যে রিদির সামন্য জায়গা টুকুও নেই।ইশ এমন যদি হতো,রিদি সাদাদের মনের মতো ভালো,খগব কেয়ারিং একজন মানুষ হয়ে সাদাদের সাথে সারা জীবন পার করে দিতো।আর নৌশিন সাদাদের সামনেই না আসতো।অন্য কারও সাথে ঘর বাঁধতো।বা রিদির মনে সাদাদ কখনো জায়গা না করে নিতো।
বেশ হতো তাহলে!!!!অতন্ত্য রিদিকে কষ্ট পেতে হতো না এভাবে।বেচারী যে নিজের মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছে না।বেহায়া মন শুধু সাদাদকেই চায়।বুঝতেই চায় না সাদাদ যে বিবাহিত।
“রিদি,বোন প্লিজ এভাবে কেঁদো না…….দেখো আমি সব টা জানি…….কিন্তু কি করার বলো??এমন তো না যে সাদাদ অবিবাহিত,ওর সাথে তোমাকে জোরে দিবো…..জিন্তু সাদাদ তো বিবাহিত আর নৌশিনকে নিয়ে সুখে আছে তাই এখানে তোমার সাথে ওর কি করে রিদি??তুমি তো বুঝো বলো???”
“ভাবী,কেন এমন হলো???আমি তো কত বাইরে থেকেছি যত ছেলে বন্ধু ছিলো আছে।।।কত কলিগ কিন্তু আমার মনে শুধু কেনো সাদাদ!!!আল্লাহ্ যদি সব ভালোর জন্যই করে তাহলে কেন আমার সাদাদকে মনে ধরার পর নৌশিনকে ওর জীবনে পাঠালো।আমি না চাইলেও নিজেকে বুঝাতে পারি না……..কি হতো সাদাদ আমার হলে!!!!আমি না খুব ভালোবাসি সাদাদকে…….”
“রিদি,রিদি দেখি…..মুখ তুলো….ছিঃ এভাবে কাঁদতে নেই বোন……তুমি দেখবে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।তোমার ভাইয়া বলেছে আজ যারা আসছে তারা খুব ভালো মানুষ।আর ছেলেও নাকি মাশাল্লাহ্,তুমিও নাকি চিনো!!!!দেখবে কিছু সময় পর ঠিক তুমি পরশের সাথে সুখী থাকবে।তখন সাদাদের কথা ভাবার সময় ই পাবে না।নিজের পরিবার,হাসবেন্ড,বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে মেতে থাকবে সারাক্ষণ…….”
রিদি এখনো রাফসাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।।।।
“দেখি,বোকা মেয়ে মুখ তুলো।।।।।……”
রাফসা জোর করে রিদিকে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা করছে।
“একদম কাঁদবে না……”(চোখের পানি মুছে দিয়ে)
“আর শোনো….কি কম আছে শুনি???হুম???ছবি দেখেছি আমি তোমার ভাইয়ার ফোনে….সাদাদের চেয়ে অনেক হ্যান্ডসাম……”
“কি হবে ভাবী তাতে??আমার মন যে……”
“দেখো রিদি,জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে….এই তিনটা বিষয় আমাদের কারও হাতে থাকে না……এমনতো হতে পারতো,সাদাদ-নৌশিন একে অপরকে ভালোবাসার পরও ওদের মিলন হতো না কিন্তু ওদের ভাগ্যই ওদের মিলিয়ে দিয়েছে…..আর আমাকেই দেখো না কোনো দিন বাংলাদেশেই আসি নি,ডাক্তার হওয়ার জন্য এলাম আর বাংলাদেশী হয়ে গেলাম….কেউ বলতে পারি না আমরা কার কপালে কি আছে….হয়তো তোমার কপালে সাদাদ নেই তাই তোমার মনে সাদাদের জন্য জায়গা থাকলেও সাদাদের মনে অন্য কেউ….সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা…..তবে এই টুকু বলতে পারি,বিয়ে টা হোক তোমার,দেখবে তোমার মনে সাদাদের জন্য কোনো জাগয়া থাকবে না…….সাদাদের কথা ভাবার সময়ই পাবে না……”
সাদ রাফসাকে ডেকে পাঠালে রাফসা চলে যায়।
রিদি রাফসার কথা মতো ব্লাউজ টা চেন্জ করে নিলো।
আসলেই আজ অন্য রকম সুন্দর লাগছে রিদিকে।
ফুল হাতা ব্লাউজ,তবে নৌশিনের মতো ফোল ব্যান গলা তো ওর নেই তাই পড়তে পারে নি।মুঁচকি হাঁসলো রিদি।
কালোর রঙের ব্লাউজ,মিষ্টি রঙের শাড়ি-কালো জমকালো পাড়……মেচিং গয়না…..কানের ঝুমকো দুটো একটু বড়…..হাত ভর্তি চুরি…..বেশ লাগছে রিদিকে আজ।
রিদি আগে কখনো এমন করে সাজে নি,আজ কেনো যেন রাফসা যেভাবে বলে গেছে সেভাবেই সাজলো।💜💜💜
!