#প্রেমঘোর#৮০#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
নয় তারিখ নৌশিনকে বাসায় নিয়ে আসে সাদাদ।নৌশিনের খুশি যেনো আর ধরে না।
সাদাদের মা নৌশিন বাসায় আসবে শোনে সকাল থেকে সারা বাড়ি নিমাইল দিয়ে বেশ কয়েকবার করে ধুইয়েছে।
যাতে নৌশিনের পায়ে কোনো প্রকার জীবাণু না লাগে।
ঐ হাসপাতালে নৌশিনের প্রিয় সব খাবারের তালিকা জেনে নিয়ে রান্না করেছিলো।
অবাক হয়েছিলো এটা ভেবে,
‘আজকের আধুনিক যুগে রাজধানীতে থেকেও কারও এসব ভালো লাগতে পেরে ভেবে’।
সত্যি বলতে সময় আর স্থান কোনো বিষয় না,মাটির প্রতি ভালোবাসা টাই মূল কথা।
সেটা থাকলে আমেরিকা বসেও লেবু পাতার গন্ধের জন্য মন কাঁদে।পান্তা-পিঁয়াজের লোভ জাগে মনে।খিঁচুরি-ইলিশ ভাজা আর সাথে বেগুন বিহারের আবাশে চোখে পানি আসে।যখন বৃষ্টি হয় মনে হয়,হৃদয় পুরে খাই।পেট তো বার্গারেও ভরে কিন্তু হৃদয় কি আর ভরে নাকি!!!হৃদয় তো চায় মাটি!!!খাটি ঘ্রাণ………….
নৌশিন আজ আগের চেয়ে ভালো হাঁটতে পারছে।তবুও বেশি ভালো ভাবে না।আস্তে আস্তে পা ফেলছে।যাতে পায়ে বেশি চাপ না লাগে।এমনিতে শুকনা,আর এতো দিন হসপিটালে অসুস্থ অবস্থায় থেকে শরীর টা আরও নেতিয়ে গেছে।রাফসা সিরি দিয়ে রোমে যাওয়ার জন্য সাহায্য করলো নৌশিনকে।হাত-মুখ নিতে বললো কিন্তু নৌশিন গোসল করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো।এমনিতে যা খুতখুতে নৌশিন।এতো দিন সাদাদের ভয়ে হসপিটালের পরিবেশে ছিলো শুধু।ঠিক মতো বেশি পানি দিয়ে গোসলও করতে পারে নি।
“এখন সাদাদ রোমে এসে যদি দেখে তুই সাওয়ারে,তাহলে রাগারাগি করবে,একবার তো করেছিস গোসল হসপিটালে।।।কাল করিস…..”
“প্লিজ,ভাবী……আমার শরীর টা না আমার কাছেই হসপিটাল হসপিটাল গন্ধ করছে……একটা ভালো সাওয়ার নিলে আমার অনেক ফ্রেস লাগবে আর শান্তিতে রাতে ঘুমাতেও পারবো…..”
“আচ্ছা….ঠিক আছে যা…..তবে তাড়াতাড়ি করিস….বেশিক্ষণ থাকলে আবার ঠান্ডা লাগতে পারে….বেলা শেষের দিকে…..”
“ওকে……আচ্ছা!!অরূপ কোথায়??ওকে তো দেখলাম না……”
“অরূপ বায়না করছিলো ওর নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য তাই তোর ভাইয়া সকালে দিয়ে এসেছে……….রাতে আসার সময় নিয়ে আসবে…….”
“ওরা না সিলেটে???”
“পাপা আর মা এখানে দু তিন মাস যাবত আছে….ঢাকার বাড়িতেই…..দাদীর শরীর টা তো ভালো নেই বেশি তাই…..”
“ওহ…..তুমি তো দু মাসে একবারও গেলে না ওরা সবাই যেহেতু ঢাকায়???”
“তুই যা তো গোসল কর……পরে কথা হবে…….”
“আচ্ছা…..যাচ্ছি……..”
.
নৌশিন পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে বের হলো।রোমে এসে দেখে সাদাদ খাটের উপর বসে আছে।নৌশিন রোমে ডুকছে বুঝতে পেরে সাদাদ তাঁকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে।
নৌশিন ভয়ে শেষ!!!সাদাদ যেভাবে তাঁকিয়ে আছে!!!!
মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
নৌশিন সাদাদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সাবধানে পা ফলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো।
অবেলায় গোসল করছে তাই হিটার অন করে…..চুল গুলো শুকাতে লাগলো।
আর মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকছে যাতে করে সাদাদ রাগারাগি শুরু না করে।
হঠাৎ করে নৌশিনের হাত থেকে হিটার টা অন্য কেউ নিয়ে নেয়।আয়নায় দেখতে পেলো নৌশিন,এটা আর কেউ নয় তার সাদাদ।
নৌশিনের চুল শুকিয়ে দিচ্ছে সাদাদ,কিন্তু কোনো কথা বলছে না।নৌশিন খুব বুঝতে পারছে যে সাদাদ রাগে ফায়ার।
সাদাদ নৌশিনের চুলগুলো শুকিয়ে দিয়ে,ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসলো।নৌশিন বোধহয় খুব ঘষামাজা করেই গোসল করেছে আজ।ক্ষত পায়ের বেশ সাবান লাগিয়েছে,দেখেই বুঝতে পারছে সাদাদ।
কটনে সেভলন লাগিয়ে মুছতে নিলেই পুরা চামড়া গুলো উঠে আসছে।
সাদাদের রাগ আরও বেড়ে গেলো।এই মেয়ে টা সুযোগ পেয়ে ইচ্ছা মতো সাবান লাগিয়েছে পায়ে।ডক্টর বার বার বলেছিলো পায়ে বেশি সাবান না লাগাতে।তাতে কাঁটা অংশে প্রবলেম হতে পারে।
সাদাদ নৌশিনের দিকে মুখ খুললো এবার,
“বেশি বুঝো তুমি তাই না?????আধা ঘন্টা যাবত রোমে এসেছি…..এতোক্ষণ লাগে সাওয়ার নিতে……সারা শরীরে সাবান তো দিয়েছোই ইচ্ছা মতো এই পা টাও বাকী রাখো নি………কাল গোসল করলে কি হতো???হসপিটালে হয় নি গোসল!!!এক ট্যাঙ্ক পানি দিয়ে সাওয়ার নিতে হয় তোমার!!!!কি করেছো পা টা………..দেখি নড়বে না একদম।।।।কাজ করতে দাও……..”
“উহু……ব্যাথা পাই তো……”
“সেটা সাবান লাগানোর সময় মনে ছিলো তোমার!!!!…….”
সাদাদ নৌশিনের পায়ে একবারে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।
সাদাদ রোম থেকে চলে যাওয়ার পর নৌশিন হাঁসতে শুরু করে।বেশ লাগছিলো সাদাদের রাগী মুখখানা।
বেশ কিছক্ষণ পর সাদাদ কফির মগ হাতে রোমে ডুকলো।
নৌশিনের পাশে বসে বললো,
“এখন,কেমন লাগছে??”
“ভালো……”
“তাহলে কফিটা খেয়ে নাও….ঠান্ডা কেটে যাবে…..”
“তুমিও খাও……শেয়ার করে খাবো দুজনে…….”
“ওকে……..(কফিতে চুমুক দিয়ে)……..এবার তুমি খাও…..”
মুঁচকি হেঁসে নৌশিনও কফির মগে চুমুক দিলো।
দুজনে শেয়ার করে শেষ করলো কফিটুকু।
“এখন,চুপচাপ শুয়ে থাকবে…..মাগরিবের আযান দিলে জাস্ট ওঠে নামায পরবে…..আমি বাইরে যাচ্ছি,নামায পরে একেবারে আসবে……”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো নৌশিন…..সাদাদ নৌশিনের দু গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“যা রাগ উঠে গিয়েছিলো না!!!!’ব্যাথা পাই’ বলে দিয়েই বেঁচে গেছেন……”
মুঁচকি হাঁসলো নৌশিন সাদাদের কথায়।
.
রাতে খাবারের সময় সবাই এক সাথে। আজ বেশ কয়েক দিন ধরে সাদাদকে দেখা হয়ে উঠে নি নৌশিনের।এ কয়েক দিনে রিদির বেশ পরিবর্তন হয়েছে।কেমন একটা চুপচাপ হয়ে গেছে।আগের মতো কারও সাথে রাগারাগি করে না।আর রাগারাগি তো পরের কথা মন খোলে কথাও বলে না।নিজের কেয়ারও করছে না ঠিকমতো।রিং পড়ানোর দিন ওর বাবা মা এসেছিলো।পরের দিন ওকে নিয়ে বাসায় যেতে চেয়েছিলো ওরা,কিন্তু রিদি কাজের দোহায় দিয়ে যায় নি।
সবার আগে রিদি খাওয়া শেষ করে নিজের রোমে চলে যায়।
বেশ অবাক হয় সাদাদ,কারণ রিদি কখনো এমন করে না।
তবে অনেকটা ভালোও লাগে সাদাদের।সাদাদও সবার মতো চায় রিদি সুখে থাকুক।তাঁর পেছনে পড়ে না থাকে নিজের মতো করে বাঁচুক।
“ভাবী,অরূপ কোথায়????”
রাফসা গম্ভীর গলায় বললো,
“তোর ভাইয়াকে জিঙ্গেসা কর…….”
সাদাদ সহ সবাই সাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
“সাদ,তুই কিভাবে করলি এই কাজ????দাদুভাই থেকেছে কখনো ওর মা কে ছাড়া???রাতে উঠে কান্না কাটি শুরু না করলেই হয়………..কি যে করিস না তুই…..”(প্রাপ্তির বাবা)
“মানে???অরূপ কোথায়????”(সাদাদ)
“সাভারে,রেখে এসেছে ওনি…..দরদ যে বেশি ওনার…..”(রাগে গজগজ করে উঠলো রাফসা)
এই মুহুর্তে রাফসার ইচ্ছা করছে সাদের মাথায় বাসার সব প্লেট গুলো এক এক করে ভাঙতে।লোক টা কি!!!!ছোট বাচ্চা ছেলে নানা-নানির কাছে রেখে এসেছে ঠিক আছে কিন্তু রাতে নিয়ে আসার কথা-সেটাও করে নি।নানা নানির কাছে আছে…….ভালোই আছে।
কিন্তু রাফসার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।জীবনে প্রথম তাঁর ছেলেকে ছাড়া ওনি পুরোটা দিন কাটিয়েছে আর এখন সারাটা রাত ওর বুকবুক খা খা করবে।নৌশিনের সাথে একদিন অর্ধেক রাত ছিলো তাতে কত কষ্ট হচ্ছিলো।আর এখন ছেলে বাসাতেই নেই।
“বউ মা,ঠিক আছে তো দাদুভাই…….মন খারাপ করো না”(সাদাদের বাবা)
সবার খাওয়া প্রায় শেষ…….
“বউ মা খেয়ে নাও……আর তোমার বেশি খারাপ লাগলে ফোন করে কথা বলো দাদুর সাথে……”(সাদাদের মা)
“ঠিক আছে মা……”
সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রোমে চলে যায়।সাদাদও নৌশিনের জন্য খাবার টা উপরে নিয়ে যায়।
কিন্তু খাওয়া শেষ হলেও সাদ এখনো টেবিলে বসে আছে।
এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে রাফসার দিকে।রাফসা খেয়াল করছে সাদকে কিন্তু তাতে ওর যায় আসে না।মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে ওর।
রাফসা সব কিছু ঠিক ঠিক সাদকে রেখেই উপরে চলে যায়।এমনকি রাতের খাবার টা পর্যন্ত খেলো না।বিকালেও খেতে পারে নি।ছেলেকে ছাড়া সকালেও খেলেও বিকাল থেকেই থাকতে পারছে না আর।
.
রাফসা একপাশ হয়ে একটা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে।হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রোমে আসে সাদ।
রাফসার পাশে বসে,কাঁধে হাত রাখতেই রাফসা ছিটকে সরিয়ে দেয় সাদের হাত।
“খেয়ে নাও…….কাল সকালে গিয়েই নিয়ে আসবো তো……থাকুক না একদিন….ওর নানা নানির কাছেই তো আছে……..”
“………….”
“উঠো………সরি আমি……না খেয়ে থাকবে তাই বলে…….”
“খাবো না আমি…..”(কাঁদতে কাঁদতে বললো রাফসা)
“এই এই…..কাঁদছো তুমি!!!!!ওয়াট দা রাফসা!!!!উঠো…..”
সাদ জোড় করে রাফসাকে উঠিয়ে বসালো।চোখ ফুলে আছে রাফসার তার মানে অনেকক্ষণ যাবত রাফসা কাঁদছে।
“ওহ্….মাই গড!!!!!!এভাবে কাঁদো তুমি ছেলের জন্য……”
“ওকে ছাড়া কখনো থেকেছি আমি????”……..
!!!!!
#Extra part of
#প্রেমঘোর#৮০#
💜💜
Writer:Ripa.
💜💜💜💜💜
“কাল সকালে গিয়ে নিয়ে আসবো তো……”
“লাগবে না আমার,সকালে তো আমিও যেতে পারবো…. “তাহলে যাও না কেনো???দু মাস হলো তোমার পাপা,মা ঢাকায় আছে,একবারের জন্যও বাসায় যাও নি….অথচ আগে সিলেট যাওয়ার জন্য কত বায়না করতে…..এক মাসও যেতে পারতো না,পাপা-মা-দাদী কে দেখার জন্য সকাল বিকাল বলাবলি করতে…..এখন কি হয়েছে রাফসা?????বলো??”
ডুঁকরে কেঁদে উঠে রাফসা।
জড়িয়ে ধরলো সাদ,
“আমি জানি,বাবা একটু রাগী,তোমাকে কেস উঠানোর ব্যবস্থা করার কথা বলা হলে তুমি বাবাকে না করে দিয়েছিলে।তাই বাবা একটু রেগে আছে।সেজন্য তুমি যদি মন খারাপ করো তাহলে ওনাদের কত খারাপ লাগতে পারে ভাবো তো।
জানি কষ্ট টা তোমার সবচেয়ে বেশি হয় এই ব্যাপার টাতে।তোমাকে সান্তনা দেওয়ার অধিকার আমারও নেই।তবে কি জানো!!!তুমি তো আমার লাইভের হাফ পার্ট,তোমার কোনো কারণে কষ্ট হলে তো আমারও ভালো লাগে না।
কাল সকালে গিয়ে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে ছেলেকে নিয়ে আসবো দুজনে।”
রাফসা সাদের বুক থেকে মাথা তুলে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“যে দিন অরূপের জ্বর হলো,ঐ দিন পাপা বল আমি নাকি বোরিং!আমাকে ডাক্তার বানিয়ে ওনি নাকি ভুল করেছেন।যেখানে নিজের বাবা ই মেয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে সাধারণ মানুষ কেনো করবে না?????”
কাঁদার জন্য বারবার কথা গুলো আটকে আসছিলো রাফসার।সাদ কি বলবে রাফসাকে বুজতে পারছে না।রাফসার বাবা এই কথাগুলো রাফসাকে না বলতেই পারতেন।মানুষ টা ছোট বেলা থেকে কষ্ট করে মানুষ হয়ে এক রকম বদমেজাজি মানুষ হয়ে উঠেছেন।তবে মন ভালো থাকলে ওনার মতো ভালো মানুষ আর দুটো হয় না।
“রাফসা,বাবা রাগী একটু!!!রাগে বলেছে।তুমি সেসব কথা ধরে বসে থাকবে।মা কত বার ফোন করলো তোমার কথা বললে না,বাসায় আসতে চাইলো সে দিন তবুও বারণ করলে,
তোমার যেমন তোমার ছেলের জন্য কষ্ট হয়।তোমার মায়েরও তো তার একমাত্র সন্তানের জন্য একরকমের কষ্ট টাই হয় রাফসা।এই যে দেখো না,তুমি অরূপ কে ছাড়া কোনো দিন থাকো নি।আমি থাকেছি……বাট বিশ্বাস করো,খুব মিস করি তখন ওকে।দু-তিন ই তো দেশের বাইরে যাই তবু ছয় সাত মাসে একবার।মনে হয় কলিজা রেখে যাচ্ছি।ঘুমের ঘুরে কেউ ওপাশ থেকে তার মাকে টপকিয়ে যখন তার বাবার বুকে না শুয়ে থাকে তখন আমারও তো কষ্ট হয়।তেমন তোমার বাবারও হচ্ছে,নিজের মেয়ের গায়ে সাদা এপ্রোণ না দেখতে পেয়ে ওনার অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে। আর যেটা ওনি প্রকাশ করতে পারছেন না।
তুমি-আমি একদিন আমাদের ছেলেকে না পেলে হাঁপিয়ে উঠছি।আর ওনাদের কথা ভাবো তো,বাসায় কেউ নেই…..সারাদিন দু জন আর দাদী তো অসুস্থ,একমাত্র অবলম্বন তুমি।আর সে তুমিই কি না ওদের উপর অভিমান করে আছো।”
“আমার কি কষ্ট হয় না????ইচ্ছে করে না ওদের দেখতে???”
“বোকা মেয়ে,ছেলের মা হৈ গেছো আর এভাবে কাঁদছো!!!!একটা পিক তুলে রাখি বলো….তোমার ছেলে আসলে দেখানো যাবে-তাঁর মা কিভাবে চোখের পানি আর নাকের পানি এক করছে……..হা হা হা হা…..”
রাফসা নিজের চোখ মুছে সাদের পায়ে আস্তে একটা চড় দিয়ে বললো,
“বাজে লোক……..!!!
আমি যাবো কালকে…..”
সাদ কিছু না বলে আবারও পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে নিলো রাফসাকে।কিছু সময় পর বললো,
“অবশ্যই যাবে,আমিও যাবো…কতদিন বউয়ের সাথে নিজের শশুড় বাড়ি যাই না।কব্জি ডুবিয়ে খাবো কাল।শশুড় বাড়ির খাবারের মজা টাই আলাদা।আর সেখানে জামাই যদি হয় মাত্র একটা…….”
“ধুর……ওনি আছে ওনার খাওয়া নিয়ে…….ফোন করবো মাকে,অরূপ কি করছে কে জানে…..”
“ম্যাডাম,আপনার ছেলেকে কেউ অযত্নে রাখে নি….আগে খেয়ে নাও…”
“না আগে কথা বলে নিই….”
“ওকে এজ ইউর খায়েশ…….”
.
রাফসা বেশ কিছুক্ষণ ওর মা আর অরূপের সাথে কথা বললো,
“হয়েছে,শান্তি এবার???ছেলের সাথে কথা হলো তো!!!এবার খায়ে নাও”
“ভাবতে পারছো তুমি আমার অরূপ,বাড়ি ছেড়ে…বাবা মাকে ছেড়ে দিব্বি নানা-নানীর সাথে হাঁসি ঠাট্টায় মেতে আছে….কত বড় হয়ে গেছে আমার ছেলে”
“হ্যাঁ……হবেই তো….আর কিছু বছর যাক দেখবে বউ নিয়ে আলাদা ফ্লেটে উঠবে…..বাবা-মায়ের ধার ধারবে নাকি!!!!”
সাদের এমন কথায় রাফসার বুক টা অজানা একটা ভয়ে ধুক করে উঠলো।সত্যিই কি ওর ছেলে বড় হয়ে আলাদা ফ্লেটে উঠবে???না না তা কি করে হয়????ছেলের বাবা তো এমন করে নি।
তাহলে ছেলে কেনো করবে??
“এই শোনো আবুল তাবুল কথা বলবে না,আমার ছেলে মোটেই এমন করবে না,যথেষ্ঠ ভালো হবে ও।মা কে সম্মান দিতে যানে।আর বউ তো বউয়ের জায়গায়।তুমি তো আলাদা হয়ে যাও নি বিয়ের পর তাহলে তোমার একমাত্র ছেলে কেনো আলাদা হতে যাবে যতসব ফালতু কথা…..”
“আরে চটে যাচ্ছো কেনো??আজকাল যা হচ্ছে আশে পাশে তাই বললাম আর কি।তবে আমারও বিশ্বাস আমাদের ছেলে তেমন কিছু করবে না।ওর মা বাবা তো আর চিপ মাইন্ডের না এমন কি আমাদের বংশে কারও বউয়ের এমন চিপ মাইন্ড ছিলো না যে হাসবেন্ডকে নিয়ে আলাদা সংসার করবে।”
রাফসা সাদের কিছুটা কাছে গিয়ে বললো,
“এই বংশ তাই না??”
“হুম…..রক্ত বলেও কিছু একটা হয়……বৈশিষ্ঠ্য তো থাকবেই…..”
“আচ্ছা!!!!আমাদের ছেলের বউ যদি অন্য রকম মানসিকতার হয়,তাহলে??”
“তাহলে আর কি বুড়ো বয়সে তুমি আর আমি…..
আর ছেলে বউয়ের সাথে মর্ডান ফ্লেটে…….”
“না…….”
“আস্তে…..এতো জোরে বলছো যেনো তোমার ছেলে আজকেই বউ নিয়ে ভাগলো!!!”
“না না…..শোনো না….আমার মাথায় না একটা আইডিয়া আছে,বংশেরও যেহেতু একটা ব্যাপার আছে।তাহলে না আমি আমার ছেলেকে বাইরের কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবো না।”
“মানে???”
“আরে মানে বুঝো না,সাদাদের মেয়ে হলে ওর সাথে আমি আমার অরূপের বিয়ে দিয়ে দিবো।ব্যাস,হয়ে গেলো।এক রক্তের ছেলে মেয়ের সাথে বিয়ে।আর আমার যা বিশ্বাস নৌশিনের পেটের মেয়ে কখনো ছোট মন মানুষিকতার হতে পারে না।”
রাফসার কথা শোনে তো সাদ হা হয়ে আছে।যার এখনো বাচ্চা হওয়ার খবরই নাই তার মেয়ের সাথে নাকি ছেলের বিয়ে।
“আরে এমন হা করে আছো কেনো,নৌশিন খুব তাড়াতাড়ি মা হবে।আর হাঁসির কথা কি জানো!!!নৌশিন একটা বাচ্চা পাগলি,বিয়ের পর থেকেই সাদাদের মাথা খেয়ে ফেলছে বাচ্চার জন্য।আর সাদাদ নৌশিনের কথা ভেবে রাজি ই হচ্ছিলো না।বাট নৌশিন হাল ছাড়ার পাত্রী না,বলে কি না “বিয়ের দরকার নেই,বেবী হলেই হবে”।।।।।ভাবতে পারছো???…..হা হা হা হা…বাধ্য হয়ে সাদাদ রাজি হয়েছে নৌশিনের পরীক্ষার পর।আমার মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি একটা সুখবরব পাবো……”
সাদ কিছু বললো না।রাফসার কথা শোনে মিটমিট করে হাঁসলো শুধু।
রাফসার হাঁসিটা সাদকে খুব কাছে টানছে।সাদ আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে রাফসার দিকে।
রাফসার কমড়ে হাত রেখে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো।
রাফসা বুঝতে পারছে,সাদের মাথায় কি চলছে।ওরও একটা ইনটেনশন কাজ করছে।প্রিয় মানুষের কাছে থাকলে যা হয় আর কি।
“ম্যাডাম,সাদাদের মেয়ে হবে কি না জানি না।তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে কি না সেটাও জানি না।আমি তো শুধু এটা জানি,আজ তোমাকে আমি শেষ করবো!!!খালি ছেলে ছেলে তাই না,ছেলের বাপের খবরও নাও….অনেক দিন পাই না কাছে।আজ তো তোমার পেটে মেয়ে আনবো আমি।আমার যে রাজকন্যা চাই সেক্সি লেডি।ইশশশশ লজ্জা পেলে না আরও সেক্সি লাগে……. ”
রাফসার ভেতরে রকেট গতিতে লজ্জার সমপ্রবাহ হচ্ছে।কি বলছে সাদ এসব।
লজ্জায় মুখ লুকায় সাদের বুকে।জড়িয়ে নিলো সাদ রাফসাকে।চুলগুলো খুলে দিয়ে একপাশ করে মুখ ডুবিয়ে দিলো ঘারে।
ঘাড়ে ঠোঁট রেখেই বললো,
“আমার রাজকন্যা চাই রানী……”
কাঁপছে রাফসা।সাদ রাফসাকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দিলো।
নিজের টি শার্ট টা ছুড়ে ফেলে হামলে পড়লো রাফসার উপর।ঠোঁট আকড় নিলো দুজন দুজানার।
গাল,ঘাড়,গলার কমশ্র নিচে আদরে ভড়িয়ে তুলছে।
হাতের প্রতিটা আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুছে দিয়ে,অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রাফসার দিকে।
“সাত বছর আগে যে ভাবে প্রথম রাতে ঘায়েল করেছিলাম তোমায়।আজ ঠিক সে ভাবে শেষ করবো আমার ডাক্তারনীকে…..”
কথাটা শেষ করেই আঁচল টা সরিয়ে নিলো।ভালোবাসায় মাতাল করে দিচ্ছে রাফসাকে।
চোখ বন্ধ করে আছে রাফসা।সাদ রাফসার উপর থেকে সরে গিয়ে পাগলের মতো রাফসাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিলো।ব্লাউজের পেছনের দিকের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে বললো,
“খাও নি তো তুমি রাতে আজ।এনেছিলাম তো খাবার,ছেলের সাথে কথা বলেই সময় নষ্ট করেছো।আমার কি দোষ বলো??আমি যে খাবারের লোভ সামলাতে পারছিলাম না আর।”
হোক শেষে ফিতা একটানে খুলে নিয়ে ব্লাউজ টাও ঘরের কোনো কোণায় ছুড়ে ফেললো সাদ।
নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিলো রাফসাকে।
“ইশশশশ,আমার ডাক্তারনী আগের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর আর সেক্সি হয়ে গেছে তো….”
উথাল পাতাল ঢেউ বয়ে যাচ্ছে রাফসার বুকে।আর সাদ হয়ে উঠেছে আরও অশান্ত।
“আজ,আমি তোমার পোশাক হবো জানপাখি….আরও বেশি আদর করবো……”
গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো আবারও।রাফসার পাগল হয়ে যাচ্ছে সাদের ভালোবাসায়।
সাদ গলার নিচেও পাগলের মতো চুমু,লেহন,বিট সব করছে।যেনো কত দিনের তৃষার্থ আত্না।
রাফাসা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সাদের পিঠে খাঁমচি দিচ্ছে।এতে সাদ আরও নেশাতুর হয়ে যাচ্ছে……।
এক সময় সাথ প্রশ্ন করে রাফসাকে,”তুমি কি আমার রাজকন্যা এনে দিতে চাও???আমি চাই তোমার ছেলের আদরের একটা ছোট বোন হোক…..বলো দিবে তো????”
রাফসা লজ্জা শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।যা করছিলো সাদ,তাতে তো যে কোনো মেয়েই শেষ হয়ে যাবে।
কিন্তু রাফসা যে সাদের করা প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারছে না গলা আটঁকে আসছে ওর।
সাদ আবার একই প্রশ্ন করলে রাফসা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।
সাদ মুঁচকি হেঁসে আবারও রাফসাকে ভালোবাসায় হারাতে থাকে।দু জনে মেতে উঠে ভালোবাসার খেলায়।
হারিয়ে যাচ্ছে অতল ভালোবাসার সাগরে।
কোনো একটা জানা উদ্দশ্যে পাড়ি দিচ্ছে ভালোবাসার সেরা মুহুর্তগুলো।ছাড়িয়ে যাচ্ছে সকল অনুভূতি গুলোকে।.
আর এদিকে,নৌশিন সাদাদও যেনো আজ দু জনের মাঝে নেই।
আজ নৌশিন স্বইচ্ছায় তার সাদাদের কাছে আবদার করছে।তার অনেক আদর চাই।ব্যাস সাদাদের জন্য তাই যথেষ্ঠ ছিলো।সে ও আজ তাঁর প্রাণ প্রিয়াকে ছুঁয়ে দিচ্ছে মনের মতো করে।হারিয়ে যাচ্ছে মহাসুখে।প্রেমঘোরে মাতোয়ারা হয়ে আছে দুজনেই।💜💜💜💜
ইশশশ!!!দুটি জুটির ভালোবাসা যদি এখানেই থমকে যেতো।শেষ যদি না হতো খুব ভালো হতো।
💜💜💜💜💜💜💜💜
তবে এ বাড়িতে এতো সুখের মাঝেও একজনের মনে আগুন জ্বলছে।
রিদি!!
ভাবতে পারছে না,সে কি করবে।
আজও পরশ রিদিকে জ্বালিয়েছে অনেক।রিদি যেনো বাঁধা দিতে পারছে না পরশকে।এখনো বার বার ফোন দিচ্ছে পরশ।বার বার কেঁটে দিচ্ছে রিদি।রাগে এক সময় ফোন টাও অফ করে দিলো।রিদি লাইট বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়লো।ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।কারণ ও যে তার সাদাদকে আর কোনো দিন পাবে না সেটা খুব ভালো করে বুঝে গেছে।
হঠাৎ প্রাপ্তির জন্মদিনে,নৌশিন যখন কেক ধোয়ার জন্য বাথরোমে গিয়েছিলো সে কথা মনে পড়লো।ধোয়ার প্রয়োজন পড়ে নি নৌশিনের।সাদাদ লেহন দিয়েই সব নিজের মাঝে নিয়ে নিয়েছিলো।আর পরশসুখে সাদাদকে শক্ত করে আকঁড়ে ধরেছিলো নৌশিন।
হ্যাঁ সে দিন রিদিই ছিলো।
বাথরোমে ওদের প্রেম টা রিদিই দেখেছিলো।নৌশিন বাইরে তাঁকানোর সাথে সাথে পালিয়ে এসেছিলো।
রোমের দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিলো অনেক।কি করতো বেচারী!!!খুব যে ভালোবাসে সাদাদকে!!!
সে দিনের কথা ভাবতেই চোখে আবারও অশ্রুকণা এসে ভীর করলো।………..
To..be..continue…