প্রেমঘোর#৮৩#৮৪ 💜💜

0
1833

#প্রেমঘোর#৮৩#৮৪
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
“আস্তে হাঁটুন না…..এতো জোরে হাঁটা যায় নাকি??”
“কে বলেছিলো তোমায় এতো বড় গাড়ি কিনতে???যেটা গ্রামের রাস্তায় এভাবে আটকে যায়??”
“আমি কি জানি,আমাকে এমন গ্রামে আসতে হবে তাহলে তো একটা সি এন জি কিনতাম……তাহলে অন্তত্য এভাবে হাঁটতে হতো না…..”
“ওয়াট,তোমার কি মনে হয় আমার গাড়ি সি.এন.জি??”
“আমি আবার সেটা কখন বললাম??”
“তো???”
“শুনুন আমার পচ্ছন্দ হয়েছে বড় গাড়ি কিনেছি।তাতে আপনার কি??”
“আমারও ইচ্ছা হবে জোরে হাঁটবো তোমার তাতে কি??”
“আরে আজব!!!দাঁড়ান…..আমি শাড়ি পড়ে এভাবে দৌঁড়াবো আপনার পিছু পিছু???খোলে যাবে তো পেন্ট দিয়ে শাড়ি??বাপের জন্মে শোনি নি…..
দাঁড়ান……..আরে শুনুন….”
রিদির গাড়ি টা একটু বড় তাই গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভেতরের দিকে যাচ্ছে না।পরশের গাড়ি টা মিডিল ছিলো সেটা আসতো এই রাস্তায়।পরশ ঠিক বুঝতে পারে নি,যে রিদির গাড়ি ঢুকবে না-অনেক দিন আসা হয় নি তাই।
কিন্তু রাগে হাঁটছে তো জোরে জোরে।অথচ রিদি হাঁটতে পারছে না।
শার্ট দিয়ে ব্লাউজ আর পেন্ট দিয়ে পেডিকোটের কাজ চালিয়ে কি এতো দৌঁড়ে চলা যায়???
বাধ্য হয়ে রিদি রাস্তার পাশে বসে পড়লো।
ভাবতে লাগলো কিছুক্ষণ আগের কথা।
পরশ রিদির শার্টের নিচের তিনটা বোতাম খোলে দিয়ে রিদির চোখ টা মুছে দিয়ে বলেছিলো,
“এখন শার্ট টা গুছে নাও বা তোমরা যে ঐ যে কটির মতো করে বাঁধো ঔভাবে বেঁধে ব্লাউজের মতো করে নাও……”
অবাক হয়ে তাঁকিয়ে ছিলো রিদি।কি ভেবেছিলো ও,আর কি হলো!!!!!
“এভাবে তাঁকানোর কিছু নেই……পিন আছে না??”
“…….”
“কি হলো পিন আছে তো??”
মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছিলো রিদি।
“তাহলে পিন আপ করে শার্ট টা দিয়েই কাজে লাগাও…..আর এতো ভাবার কিছু নেই….আমি দেখি নি তোমার পেট…..অন্য দিকে তাঁকিয়েই খোলে ছিলাম…..এখনও তাঁকায় নি।….তবে তোমার নাভী তো আমি দেখবোই বাট বিয়ের পর।আর পেন্টে গুজেই পেডিকোট চালিয়ে নাও…”
পরশ বাইরে চলে গেলে,রিদি শার্ট টা ভালোভাবে গুছে ব্লাউজের মতো করে নিয়েছিলো।বেশ কয়েক টা পিন লাগিয়ে মোটামোটি ঠিক ঠাক করে নিয়েছিলো।ভাগ্যিস শাড়ি ভলো করে পড়তে পারে তা নাহলে কিছুতেই আজ শার্র পেন্ট দিয়ে নতুন শাড়ি পড়তে পারতো না।
অনেক কষ্ট করে শাড়ি পরেছিলো।আয়নায় তাঁকিয়ে দেখলো-অন্য রকম সুন্দর লাগছে তাঁকে।
তবে কেনো এতো আলাদা লাগছে জানে না সে।
ভাবে নি বেশিক্ষণ পরশকে ডাকার জন্য গাড়ি থেকে নেমে আসে।
পরশ উল্টো হয়ে স্মোকিং করছিলো।
“এই যে শুনছেন….আমার হয়ে গেছে…..”
পরশ রিদির দিকে তাঁকায়েই ওর হাত থেকে সিগারেট টা এমনিতেই পড়ে যায়।
“এ কি আপনি সিগারেট খান???”
রিদির কথা কানে আসে নি পরশের।চোখ আটকে গেছে রিদির রূপে।
বুঝায় যাচ্ছে না রিদি শার্ট পেন্টের উপর শাড়ি পড়েছে!!কি সুন্দর কাজ করতে পারে রিদি!!!!এভাবে কেউ ম্যানেজ করতে পারে জানা ছিলো না পরশের।
পরশ মাঠের মাঝেই রিদির খুব কাছে এসে পড়ে।রিদি সরে আসতে চাইলে হাত ধরে ফেলে পরশ।জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে।পরশের গরম নিশ্বাস রিদির ঘাড়ে পরছিলো।
কাঁপছিলো রিদি।পরশ রিদির চুলের কাঁটা টা খুলে দিলো।
কমড়ের একটু উপর পর্যন্ত সিল্কি স্টাইট চুলগুলো সারা পিঠে শীতল পাটির মতো ছেয়ে গেছে।মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো পরশ।নক ডুবিয়ে দিয়েছিলো রিদির এমন সৌন্দর্যে।মাতাল করা একটা ঘ্রাণ।পাগল করা গন্ধ।সব মিলিয়ে ঘোরে আটকে যাচ্ছিলো পরশ।
চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছিলো রিদি।ভাগ্যিস গ্রাম।তাই আশেপাশে লোক নেই কোনো।ফাঁকা জায়গা পেয়ে পরশের রোমান্স করার সুযোগ তা না হলে কপালে আর মাঠে রোমান্স জুটতো না।
পরশ রিদির কানে ঠোঁট লাগিয়ে বলেছিলো,
“আই লাভ ইউ,রিদি মনি……
খুব কিউট লাগছে…..যদি বিয়ে টা হয়ে যেতো না তাহলে আশোকের মতো আমিও আমার প্রিয়তামার সাদ মিটাতাম গাড়িতেই….আফসোস সুযোগ টা নেই…..তবে খুব তাড়াতাড়ি করবো……”বলেই কানে আতলো করে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলো।
আর অন্যদিকে হঠাৎ পরশ পেছনে তাঁকিয়ে দেখলো রিদি রাস্তার কোণায় বসে আছে।অথচ সে নিজে কতটা পথ এসে গেছে।পরশ রাগে হনহনিয়ে আবার রিদির কাছে যায়।
“এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার হ্যাঁ???”
পরশের ফাঁটা বাঁশের মতো গলার ধমকে রিদি কল্পনা থেকে ফিরে আসে।
“কি হয়েছে???এতল চিল্লান কেনো সব সময়??”
“তো??এখানে ধান পাহারা দিচ্ছো নাকি??এভাবে বসে আছো কেনো???”
“আপনিই তো কি জোড়ে জোড়ে হাঁটছেন…..পারি নি তো….এমনি ই বার বার পায়ের সাথে শাড়ি লেগে যাচ্ছিলো বার বার……..পেন্ট দিয়ে শাড়ি!!!যতসব……এতো জোড়ে হাঁটলে না খুলে যাবে….”
“তো প্রবলেম কি তাতে….”
উঠে দাঁড়ালো রিদি।আঙুল তুলে বললো,
“আপনার মতো বেহায়া পুরুষ মানুষ কম দেখেছি আমি।আমার শাড়ি খুলে যাবে আর আপনি বলছেন কোনো প্রবলেম নেই???”
পরশ মুঁচকি হেঁসে রিদির উঠনো আঙুলে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
“আওওও……..মা গো…..”
বেশ জোড়েই দিয়েছে কামড় টা।পরশ রিদিকে কমড়ে ধরে নিজর বুকে সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
“সুন্দরী,আসলেই তুমি নাগিন….এতো তেজ….আই লাইক ইট…….আমার আবার সাপ না হলে চলেই না……আর তুমি তো বিষে ভরা নাগিন একদম…..ভেঙে দিবো বিষ দাঁত একবার সুযোগ টা পাই….সারা জীবন আমার হয়ে থাকবে…….কিন্তু তোমার বিষ দাঁত ভাঙলেও তো বিষ কমবে না……প্লিজ বউ হয়ে ছোবল দিও…..আমি ওয়েট করবো খুব তোমার ছোবলের……ভাবতে পারছো তুমি আমি যখন তোমার বিষ দাঁত ভাঙবো তুমি কতটা ছটফট করবে…….ইশশশশ প্রথমবার কি কষ্ট হবে তোমার!!!!ছটফটানি টা কবে দেখবো!!!!!!”
রিদি চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে মুখ করে আছে।এতোটা অসভ্য কেউ হয়??মুখে বিন্দু মাত্র লাগাম নেই।
পাশ দিয়ে দু তিনজন কৃষক হেঁটে যাচ্ছিলো।পরশ আর রিদিকে দেখে বলছে,
“আল্লাহ্….আইজ কাইল কার পোলাপান…..শরমের নাম নাই…..সড়কের মধ্যে পিরিতে করে…..ঘষাঘষি করে ছিঃ ছিঃ কি রকম পোলাপান…….”
পরশের হোশ আসে সে যে রাস্তায়।
স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।
রাগ হচ্ছে রিদির।এই পরশের জন্য গ্রামের লোক কি না কি বলে গেলো।
“আপনার জন্য আমার মান সম্মান সব যাবে…….”
পরশ কোনো কথা না বলে রিদি কে কোলে তুলে নিলো।
রিদি প্রস্তুত ছিলো না।পড়ে যাচ্ছিলো প্রায় তাই পরশের গলা জড়িয়ে ধরলো।
“আরে,কি করছেন???আবার কেউ কিছু বলবে…..নামান প্লিজ……”
“কত কেজি তুমি???”
“মানে???নামান আপনি???আমি কত কেজি তাতে আপনার কি???”
“কত কেজি বলো…না হলে ধান ক্ষেতে ছুড়ে মারবো এখনি…”
এই পরশকে বিশ্বাস নেই।আবার সত্যি করেই যদি ধান ক্ষেতে ফেলে দেয়-মান সম্মান সব কাঁদার সাথে মিশে যাবে।তাই বললেই ফেললো,
“চৌয়ান্ন কেজি…….”
“এজন্যই ভিমের মতো দেখতে……”
রিদি মোটেই ভীমের মতো না।ওর উচ্চতার সাথে ওর ওজন একদম ঠিক।পাঁচ ফুট তিন আর ওজন চৌয়ান্ন কেজি।শুকনা নাও না মোটাও না ঠিক ঠাক বডি একদম।যাকে বলা যায় সোনায় সোহাগা।
“কি আমি ভীম????বলতে পারলেন আপনি????আপনি জানেন কত ছেলে আমার জন্য পাগল ছিলো???হ্যাঁ??জানেন আমার ফ্রেন্ডসরা আমার ফিগার দেখে আপফোস করে????…আর আপনি????নামান আমায়??”
“আস্তে আস্তে….পুরোই নাগিন….এতো ফুসফুস করো কেনো???”
“জানেন আপনি আমার এক ফ্রেন্ডের বর ওকে নাকি বলেছিলো “এতো স্লিম কেনো তুমি???রিদি কে দেখো কি পারফেক্ট”….ফেন্ডস আমাকে বলেছিলো….অবশ্য ভাইয়ার সাথে ঝগড়াও করেছিলো যে ভাইয়া আমার দিকে নজর দিয়েছিলো এই ভেবে….ভাইয়া কথা টা বলে রাগ ভাঙাতেই হিমশিম খেয়েছিলো ওর…..কিন্তু এটা তো সত্যি আমি পারফেক্ট বডির….আর আপনি জানেন আমার B.M.I 19.25……তার মানে সব ঠিক ঠাক।আপনি কি না……ধুর….এই ছিলো আমার কপালে……”
পরশ রিদির বকবল শোনে হাসছে খুব।ভালোও লাগছে অনেকটা।
“আবার হাঁসে???কি আপনি??”
“তোমার বাচ্চার বাবা……”
ধুক করে উঠলো রিদির ভেতরটা।বাচ্চা!!!!!!
এই জিনিস টা নিয়ে সব মেয়েই কম বেশি ভাবে।রিদিও ভেবেছে,এতোটা না হলেও স্বপ্ন তো ছিলোই।কিন্তু আজ পরশের মুখে বাচ্চার কথা শোনে এমন কেনো লাগছে??
সুখ??নাকি অন্য কিছু???
ভাবতে পারছে না রিদি!!!!
পরশ আবারও মায়াবী গলায় বললো,
“হবে তো আমার বাচ্চার রিদি???রানী করে রাখবো তোমায়….রাজকুমার আর রাজকুমরী এনে দিবো তোমার কোলে…..হ্যাঁ জ্বালাবো খুব সবাই মিলে……..ভালোবাসবো সবাই…….তুমি কি পারবে রিদি??”
রিদি কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।একটা মানুষের এতো রাগ থাকার পরও এমন মায়া নিয়ে কথা বলতে পারে???এতো আবেগ থাকতে পারে জানা ছিলো না রিদির।রিদি না চাওয়া সত্বেও ভেতরের কোনো নির্দেশ থেকে পরশের বুকে মাথা রাখলো,আরও শক্ত করে চেঁপে ধরলো পরশকে।হয়তো এই বুকে নিজের আসল ঠিকানা টা খুঁজার চেষ্ঠা করছে বা পরশের প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
পরশ মুঁচকি হেঁসে তার ভালো থাকার কারণ টা আগলে ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।পথটা শেষ না হলেই পরশের জন্য ভালো হবে হয়তো।সারা জীবন এভাবে হেঁটে যেতে পারলে ওর জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া থাকবে না।
.
নৌশিন সাওয়ার নিয়ে এসে চুল মুচ্ছিলো।পেছন থেকে সাদাদ এসে জড়িয়ে ধরলো।মুখ গুজলো নৌশিনের পিঠে।
“সাদাদ,ছাড়ো…..”
“উমহু…..গন্ধ টা খুব সুন্দর…..”
শুকছিলো নৌশিনের পিঠ,চুলের গন্ধ টা বেশ লাগে সাদাদের।
নৌশিন সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওর দিকে ফিরলো,
“এই কি হয়েছে তোমার হ্যাঁ….সারাক্ষণ তাই না??”
সাদাদ নৌশিনের কোলে মাথা রেখে পেটে মুখ গুছে বললো,
“নেশা হয়ে গেছে…..”
নৌশিন সাদাদের চুলে হাত বুলিয়ে মুঁচকি হেঁসে বলছে,
“তাহলে আমি করবো??”
“তুমি কি করবে মানে???পূরণ করো আমার নেশা…..”
“ইশশশশ…..আসছে…..যাও সাওয়ার নাও……”
“ঐ খবর দাড়….তাড়াবে না……..”
“যাও তো সাদাদ….সাওয়ার নাও….তুমি থাকো কিভাবে??খারাপ লাগে না…..”
“না লাগে না……(নৌশিনকে ড্রেসিং এর সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ দিয়ে)….খুব আদর করতে ইচ্ছে করে…..খুব…..”
“সাদাদ,কেউ এসে যাবে….”
“আসবে না…..অরূপ তো বাসায় নেই…..সো নো চান্স……”
সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে এক টান দিতেই দুজনে এক সাথে বিছানায় পড়ে যায়।সাদাদের উপর নৌশিন………হাঁসছে সাদাদ,নৌশিন সাদাদের বুকে মাথা রেখে হাঁসছে………
“জান…..”
“হুম…..”
“লাভ ইউ…….”
নৌশিন সাদাদের বুকে থুতনি ঠেকিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে।
“ঐ আমি হাঁসির কথা বলেছি???”
নৌশিন মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলো।
সাদাদ চটে গিয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।নৌশিনের শরীরে সমস্ত ভর দিয়ে রেখেছে।কিন্তু সাবধানেই করছে যেনো নৌশিনের পায়ে না লাগে।
“খুব হাঁসি পায় না তোর??”
নৌশিন আবারও হেঁসে বললো,
“হুম….”
“আচ্ছা!!!!!!”
হাঁসছে নৌশিন এখনোও।সাদাদ নৌশিনের গলায় কামড় বসিয়ে দিলো একটা দুষ্টুমির ছলে।
“আওওওওও……”
“কেমন লাগে??হাঁসো…..দেখি আবার দিচ্ছি…..”
বলেই গলার ওপর পাশে আরও জোরে একটা কামড় দিলো।
“ওহুহুহু…..সাদাদ!!!!রাক্ষস একটা….সরো…..”
“হাঁসো আরও….”
“হি হি হি হাঁসবোই তো……সরো তো….উঠবো……”
সাদাদ নৌশিনের গলায় মুখ গুজে কামড়ের জাগয়া থেকে শুরু করে চুমুতে ভরিয়ে তুলছে।সাদাদ তো সব সময় নৌশিনকে এতো ভালোবাসে তবুও নৌশিনের এতো নতুন লাগে কেনো সব সময়!!!ভেবে পায় না নৌশিন।ভাবতে চায়ও না।পুড়াক সাদাদ,যত খুশি পাড়ে ভালোবাসা দিক।আগুন জ্বালাক মনের গহীনে।কোনো বাঁধা নেই।
নৌশিন সাদাদের শার্ট আর মাথার পেছনের চুল আকড়ে ধরে।সাদাদের মুখ গলার আরও গভীরে যায়।গলা থেকে কমশ্র ঠোঁটেও চুমুতে ভরিয়ে তুলছে………ভালোবাসা যদি কখনো শেষ না হতো তবে বেশ হতো।
সাদাদ নৌশিনের ঘাড়ে,গলায়,ঠোঁটে,কানের আশে পাশে সুখের ছোঁয়া দিচ্ছে।নৌশিন সাদাদকে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে নিজের কাছে।সাদাদের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো নৌশিনের ঘাড়ে খুব সুড়সুড়ি দেয়।
“আহ্……সাদাদ!!!”
পরক্ষণেই সাদাদ চুমু দিয়ে আয়ত্তে আনার চেষ্ঠা করে।কিন্তু লাভ হয় না।চাঁপা দাড়ি তো।লাগে ভালোই নৌশিনের গলায় আর ঘাড়ে।সাদাদও কম যায় না,ইচ্ছে করেই বেশি করে ব্যথা দিতে চায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি দিয়ে।নৌশিনের খুব ভলো লাগে এই জিনিস টা।
নৌশিন জড়িয়ে ধরে সাদাদকে।মাথা থেকে হাত সরিয়ে দু হাতে সাদাদের পিঠ খমচে ধরে।সাদাদের শার্টের বোতাম দুটো খুলে সাদাদের বুকেও লাভ বিট দিচ্ছে।
বুকে ঠোঁট রেখে বলছে,
“আই লাভ ইউ জান…..আই লাভ ইউ সো মাচ…..”
সাদাদও নৌশিনের ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে জবাব দেয়,
“আই লাভ ইউ টু……”
সাদাদ নৌশিনকে বুকে নিয়ে ঠিক হয়ে শুয়ে পড়ে।
নৌশিনের চুলগুলো সাদাদের সারা বুকে ছড়িয়ে দিয়েছে নৌশিন।
“এই ছাড়ো…….”
“থাকো না বুকে….কোনো কাজ নেই তো…..আমি তো কিছু করছি না যে গোসলের ভয় লাগবে তোমার??”
“ইশশশশ……হয়েছে….মাথায় হাত বুলিয়ে দাও…ঘুমাবো….”
“খাবে না??”
“পড়ে….দাও তো…”
“মহারানী রে…..”
“এই শোনো আমার একটা আবদার আছে…….”
“হুম বলো….”
“দাঁড়ি রাখতে হবে তোমাকে……”
সাদাদ অবাক!!!!!দাঁড়ি???
“দাঁড়ি????এই বয়সে???”
“সাদাদ,সুন্নত এটা।আর শোনো দাঁড়িতে আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে।”
“আমি জানি তো……বাট বুড়ু বুড়ু লাগলে তোমাকে লোকে বুড়ুর বউ বলবে না???”
“এটা ভুল কথা সাদাদ।দাঁড়ি রাখলে কেনো বুড়ু বুড়ু লাগবে?বরং দাঁড়ি রাখলে আরও ভালো দেখাবে……আমি তো ভাইয়াকেও বলেছি দাঁড়ির কথা।ভাবীকেও বলে এসেছি এখন বাচ্চা হয়েছে একটা,আল্লাহ্কে খুশি করার জন্য এখন দাঁড়ি রাখতে যেনো ভাইয়াকে রাজি করায়……কিন্তু পরে শুনলাম ভাইয়া নাকি যে দিন রাফিনকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে দিন ই ভাবীকে বলেছে দাঁড়ি রাখা শুরু করবে……আমার যে কত ভালো লেগেছে কথা টা শোনে বলে বুঝাতে পারবো না তোমাকে………।।আমি তো এটাও চিন্তা করেছি রাফসা ভাবীকেও বলবো ভাইয়াকে কথা টা বলতে……..”
নৌশিন সাদাদের বুকে থুমনী রেখে,চোখে চোখ রেখে আবারও বলা শুরু করে,
“আমার বরকে কেউ বুড়ু বলবে না….যারা বলবে তারা নিজেরাই হয়তো আসল বিষয় টা জানে না বা জেনেও বোকার মতো কাজ করে….আল্লাহ্ তাঁদের হেদায়াত করুক।বাট তোমাকে এর পর থেকে সেফ করতে দিবো না আমি।ক্লিয়ার???”
সাদাদ নৌশিনের দিকে অপলক চেয়ে আছে।
আজ কাল কার যুগে ভার্সিটি পড়ুয়া কোনো মেয়েও এমন হতে পারে!!!!তাও আবার ডিপার্টমেন্টের প্রথম স্থান অধিকারী!!!!!
সাদাদ নৌশিনকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে জবাব দিলো,
“অনেক ভাগ্য আমার।তোমার মতো বউ আমার কপালে জুটেছে।আধুনিক যুগে তো এসব কেউ ভাবেই না।বরং দাঁড়িওয়ালা ছেলেকে দেখলে এনালগ ভাবে…….”
“সবার সাথে তো আমার তুলনা না সাদাদ।এনালগ তো সে যে ইসলামকে আয়ত্তেই নিতে পারে নি,আমি আমার হাসবেন্ডকে পরকালেও চাই।চাই আমি না গেলেও সে যেনো জান্নাতে থাকে।তারপর আমার যখন জাহান্নামে থেকে সব পাপ মোচন হবে তখন অত্যন্ত তার সাথে থাকতে পারবো। তাতেই আমার হবে।”
“চুপ,একদম না…..আল্লাহ তোমাকে জাহান্নামে নিবে না।ইসলাম মতে ‘যে স্ত্রী তার স্বামীকে খুশি রাখতে পারে সে তো আল্লাহর কাছেও প্রিয়’….আর তুমি তো আমাকে সব চেয়ে সুখী করে দিয়েছো নৌশিন।তাহলে??”
“তবুও,কত পাপ করি চলার পথে আমরা….”
“আমরা ক্ষমাপার্থী।আল্লাহ্ আমাদের সকলকে ক্ষমা করবেন,ইনশাল্লাহ্।এই দোয়াই করো তুমি।”
“অবশ্যই…..তুমিও….”
“আলহামদুলিল্লাহ….. ”
“তাহলে রাখছো তো দাঁড়ি….”
“আল্লাহর বরকতে……আর আমার বউয়ের সৎ বুদ্ধিতে”
“অনেক ধন্যবাদ প্রাণ প্রিয় স্বামী….এবার মাথার কাজ টা করুন….আমি ঘুমাই…….আর সাওয়ার নিবে তল আবার???তোমার তো আবার দিনে তিন চার বার না করলে হয় না….”
“হুম নিবে একটু……তখন তল সে কাজের পরে নিয়েছিলাম…নামায থেকে আসতে আসতে রাস্তায় ঘেমে গেলাম…..”
“হয়েছে।।।করো গোসল…আগে ঘুম পড়াও আমায়…..”
“ওকে….জান……”
বলেই মাথায় হাত বুলাতে লাগবো।নৌশিন পরম সুখে সাদাদের বুকে মাথা রেখে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো।
সাদাদ নৌশিনের ঘুমন্ত মুখ টা দেখে মুঁচকি হাঁসলো।
চুল গুলো বালিশের পাশে মেলিয়ে খুব সাবধানে মাথার নিচে বালিশ খুজে উঠে আসে বিছানা থেকে।
কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে ওয়াশরোমে চলে যায়।
ওয়াশরোম থেকে বেরিয়ে সাদাদ তো অবাক।
অরূপ নৌশিনের একটা হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।একটা পা নৌশিনের দু পায়ের মাঝখানে আর অন্য একটা পা নৌশিনের কমড়ের উপর।
সাদাদ কাছে গিয়ে বুঝতে পারলো অরূপও বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।কখন এলো এই বিচ্ছু???
নিশ্চয় নতুন গাড়ি দেখাতে এসেছিলো নৌশিনকে।এসে দেখছে নৌশিন ঘুমাচ্ছে তাই সে ও ফ্লোরে খেলানা রেখে শুয়ে পড়ে নৌশিনের সাথে।
সাদাদ গাড়ি টা টেবিলের উপর রেখে মুঁচকি হাসতে থাকে।
কিভাবে জড়িয়ে ধরেছে নৌশিন অরূপকে।যেনো বুকের মাঝে ডুকিয়ে ফেলবে ওর বাচ্চা কে।এই দৃশ্য টা ক্যামেড়া বন্ধি করলো সাদাদ।
.
সোফায় বসে কাজ করছে।
রাফসা অরূপকে ডাকতে ডাকতে রোমে আসে।
“কি হলো বাবু,তোমার খেলনা দেখানো এখনো শেষ হয় নি???খাবে কখন???”
“আরে ভাবী???”
“হ্যাঁ,অফিস যাস নি??”
“না আসলে নৌশিনের শরীর টা বেশি ভালো ছিলো মা সকালে তাই…..”
“ও এখন কেমন আছে??”
“ভালো….খাবার হাতে??কাকে খাওয়াবে??”
“কাকে আবার তোর বিচ্ছু ভাই পো কে….কি দুষ্টু হয়েছে আজ কাল।।।আসার সময় গাড়ির জন্য মাথা টাই বান করে দিচ্ছিলো।এখন মারুফের মতো সেইম গাড়ি পেয়ে সেটা আবার নৌশিনকে দেখাতে এসেছে….কোথায় সে এখন??”
সাদাদ আঙুল দিয়ে খাটের দিকে ইশারা করে।
রাফসা মুগ্ধ নয়নে দেখছে অরূপ আর নৌশিনকে।
কেউ দেখলে মনে করবে মা ছেলে ঘুমিয়ে আছে।
দুজনের মাঝে এতো ভালোবাসা আলাদা করার উপায় ই নেই।
“পাগল দুটোই……”খাবার টা ওখানেই ডেকে রেখে অরূপের কপালে চুমু খেয়ে চলে আসে রাফসা।
!
পরশ রিদিকে ওর দাদুর সাথে দেখা করিয়ে বেশিক্ষণ থাকে নি সেখানে।ওর দাদু খুব জোড় করছিলো কিন্তু সারা রাত রিদি ওর সাথে বাইরে শোনে আর জোড় করে নি।তবে রিদিকে ওনার খুব পচ্ছন্দ হয়েছে।
আলমারি থেকে পুরানো একটা ভারী হার রিদির গলায় পড়িয়ে দিয়েছেন ওনি।পরশ ওর দাদুকে শহরে আনতে চাইলে আসলো না বুড়ি।বিয়ে আগে আগে নাকি যাবে।একাই পড়ে থাকে গ্রামের বাড়িতে।যদিও পরশের জেঠি থাকে ওনার সাথে।আর পরশের কাজিন দুটোও দেশের বাইরে।তাই দুই শাশুড়ি বউ মা গ্রামেই শশুড়ের ভিটা আগলে পড়ে থাকে।পরশের জেঠিও রিদিকে দেখে খুব খুশি।ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।রিদি ভাবতেই পারে নি,ওর আগমনে কেউ এতোটা খুশি হতে পারে।
পরশ রিদিকে নিয়ে ডাকার উদ্দশ্যে রওনা হয়।বিকেলে জেঠি রান্না করে দুজনকে জোর খাইয়ে দিয়েছে।পরশ খেতে চাইছিলো না,ওর জেঠি বললো,
“তোকে কে খেতে বলছে???আমাদের বউ মা খাবে…..”
রিদির খুব ভালো লাগেছিলো কথাটা।সন্ধ্যার দিকে রিদিকে নিয়ে ঢাকায় আসে পরশ।
বাড়ির সামনে গিয়ে,
“নামো…….”
“আপনি??”
“আমি মানে???”
“না আপনি বাসায় আসবেন না???”
“না তুমি যাও……আর তোমার গাড়ি কাল সকালে পাঠিয়ে দিবো…..”
“না…..”
“ওয়াট???”
“আপনি বাসায় আসুন আগে…..তারপর….. ”
“বাহ্…..জামাই আদর শুরু করবে নাকি??”
“আপনার সব সময় বাজে কথা না বলেই নয়???গোসল করেছেন কালকে???আজও তো করা হয় নি…..নিজে এক খচ্চর আমাকেও দু দিন ধরে খচ্চর বানিয়ে রেখেছেন…….বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে যান……ভালো লাগবে…..”
“বাব বাহ্……বউ আমার এতো কেয়ার করছে…….এতো সৌভাগ্য……..”
“আপনি না আসলেই…….ভালোও বলতে নেই……”
“রাগও করো???”
“ধ্যাত……..যতসব…..”
রিদি বেরিয়ে আসলো গাড়ি থেকে।গার্ডেনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এমন সময় কেউ পেছন থেকে বাগানের ভেতরে নিয়ে যায়।
“আআআ……..”
মুখ চেঁপে ধরলো পরশ রিদির।
“আজব!!!!আপনি???”
“একা রেখে যাচ্ছো যে???”
“এতো বোরিং না আপনি…..আসলেই……আমি বলেছিলাম তো আপনাকে আসতে……..আপনি ই তো আসলেন না…….”
“হ্যাঁয় আমি বোরিং???”
“ইশশশশ….ছাড়ুন তো দু দিন গোসল করতে পারি নি আমার জন্য….শরীর ঘিনঘিন করছে…..”
“আমি করিয়ে দিবো……”
“পরশ,ছাড়ুন প্লিজ…..যদি ভেতরে আসেন তাহলে চলুন……”
“শাড়িগুলো???”
“একটাও তো প্যাক করেন নি যে হাতে করে নিয়ে যাবো।।।।”
“ভেতরে আসুন আপনি,আমি ভাবীকে বলছি ওনিই ব্যবস্থা করবেন…..”
পরশ আর রিদি দুজনেই এলসাথে বাড়ির ভেতরে ডুকলো।সবাই বেশ খুশি ওদের দুজন কে একসাথে দেখে।বিশেষ করে রাফসা।
রাফসা রিদির দিকে এসে রিদিকে জড়িয়ে ধরে।
কপালে ব্যথার কথা জানতে চায় সবাই।পরশ সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছে।রাফসা রিদিকে টেনে নিয়ে উপরে চলে আসে।
সাদ আর বাকী সবাই পরশকে সঙ্গ দিচ্ছে।প্রাপ্তির মা পরশয়ের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে শুরু করেছেন ইতিমধ্যে।
“এই,দু দিন!!!!!কি হলো বলো না রিদি???”
“ভাবী!!!!কি আবার হবে????”
“বা রে….লোকাচ্ছো কেনো???”
“কিছুই হয় নি ভাবী….”
“শাড়ি কোথা থেকে এলো???”
“পরশ কিনে দিয়েছে…..ওর দাদুর বাড়ি যাওয়ার সময়…..অফিসে যাওয়ার সময় শার্ট পেন্ট পড়া ছিলো তো…..”
“আচ্ছা!!!!!”
“গাড়িতে আরও আছে….”
“আরও???”
“হুম,কাউকে দিয়ে এনাও….অনেকগুলো…..”
“বাহ্…..প্রথম দিনেই এতো…এই কিছু হয় নি???একলা পেয়ে মনে তো হয় না এমনিতেই ছেড়ে দিয়েছে…..”
রিদি লজ্জা পেয়ে রাফসাকে জড়িয়ে ধরে।
“বাব রে….এতো লজ্জা??”
“ভাবী পরশ একটা লুচু……”
“আচ্ছা!!!!!”
“ধুর,মজা করছো তুমি….”
“এই একদম না……খুব ভালো লেগেছে আমার তোমাকে আর পরশকে একসাথে দেখে…..”
“ভাবী,আমি সাদাদকে ভুলতে চাই……” ছলছল চোখে বললো রিদি।
রাফসা রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“ইনশাল্লাহ্,বোন পাড়বে…..”
“জানো ভাবী,আমি না কখনো কাউকে এতোটা কাছ থেকে বুঝতে পারি নি…..সত্যি বলতে আমি না সাদাদকে জড়িয়েও ধরেছিলাম জোর করে কিন্তু কোনো সুখ পায় নি…..কারণ সাদাদ তো আগলেই নেয় নি কোনো দিন…..আর কাল,আজ পরশ না আমার খুব কাছে এসেছিলো….আমার কেমন জানি হচ্ছিলো…সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো…….জানি না সাদাদকে সরিয়ে আমার মাথায়,মনে ওনাকে ডুকাতে পারবো কি না….তবে এই দুই দিনে না এটা বুঝে গেছি ওনি আমাকে অন্য রকম ভাবে কাছে আসার উপলদ্ধি দিয়েছেন।আমি ওনাকে জড়িয়ে না ধরলেও ওনার ছোঁয়ায় আলাদা একটা কিছু ছিলো…….”
রাফসা রিদির দুগালে হাত রেখে বলছে,
“এমনি হয় রিদি।বলেছিলাম না কেউ আসে আগুন হয়ে,বীরপুরুষ রূপে।এই সেই তোমার জীবনে।সাদাদ কেউ না…..বিশ্বাস করো সাদাদ তোমার আমার জীবনে জাস্ট আত্মীয় ছাড়া আর কিচ্ছু না।আমার জীবনে তো সব চেয়ে মহামূল্যবান “সাদ”।ওর পরে অন্যকিছু।আর নৌশিনের জীবনে একমাত্র “সাদাদ”।সে দিক থেকে তোমার জীবনে এখন শুধু “পরশ”।সবার উপরে ওর স্থান।তারপর বাকী সব……..”
রাফসা রিদির হাত ধরে বললো,
“যাও এবার আর কিছু ভাবতে হবে না।সাওয়ার নিবে তো???”
“হুম…..”
“এক কাজ করো তুমি তাড়াতাড়ি সাওয়ার নাও।পনেরো মিনিটের বেশি নিবে না।পরশ আছে তো….এতল দেরী করো না।আর শোনো শার্ট পেন্ট না পড়ে সুন্দর দেখে একটা থ্রি-পিস পড়ে নাও।শাড়ি পড়তে হবে না।আমি নিচে যাচ্ছি।পরশকে কিন্তু তোমার রোমে পাঠিয়ে দিবো পাক্কা বিশ মিনিট পড়।সো যা করার তাড়াতাড়ি…….হুম☺☺”

#প্রেমঘোর#৮৪#

রিদি সাওয়ার নিয়ে নীল রঙের একটা লিলেন থ্র-পিস পড়ে বের হয়।রিদিকে সাধারণত সব ড্রেসেই মানায়।কোনো দিক থেকে কমতি না থাকায় সৌন্দর্য যেন নীল রঙের লিলেনে উঁপচে পড়ছে।
টাওয়েল মাথায় পেঁচানো অবস্থায় যেনো সৌন্দর্য টা বহুগুণ বেড়ে যায়।
ড্রসিং এর সামনে বসে ক্রিম লাগচ্ছিলো রিদি।টাওয়েল টা তখনো মাথায়।
হঠাৎ দরজা বন্ধের শব্দে পেছন ফিরে তাঁকায়।
বুকের ভেতর ধুকধুক শব্দটা যেনো বেড়েই যাচ্ছে।
লৌশন হাত নিয়েছিলো গায়ে দেওয়া জন্য কিন্তু তা আর হয়ে উঠে নি।তার আগেই পরশ রিদির খুব কাছে এসে গেছে।
রিদি যেনো স্ট্যাচু হয়ে গেছে।
টুল থেকে উঠার সাহস পাচ্ছে না।পরশকে দেখলে ওর শরীরের সব শক্তি যে কোথায় হারিয়ে যায়;তার কোনো জবাব খুঁজে পায় না রিদি।
পরশ রিদির হাতের তালুতে লৌশন দেখতে পায়।
মুচকি হেঁসে প্রশ্ন করে,
“সাওয়ার নিয়েছো???”
“হুম……”
“বুঝেছিলাম,মাথায় টাওয়েল পেঁচানো দেখে……”
পরশ ফ্লোরে হাঁটু গেরে বসে আছে রিদির সামনে।রিদি কিছু বলতে পারছে না।গলার আওয়াজ বুঝি পরশকে দেখলে বন্ধ হয়ে যায়।
পরশ অপলক রিদির দিকে তাঁকিয়ে আছে।রিদি থ্রি-পিস পড়েছিলো ঠিকি কিন্তু লৌশন দিবে বলে ওড়না টা সরিয়ে রেখেছিলো।দুষ্টু পরশের চোখ এড়ায় না বিষয় টা।বেশ কিছু ক্ষণ পর রিদি বুজতে পারে পরশের চোখ টা কোথায় কোথায় যাচ্ছে।
সমাধান স্বরূপ,পাশে থাকা ওড়না টা গায়ে নিয়ে নেয়।
নিজেকে স্বাভাবিক করে দুহাতে লৌশন টা মিক্স করে হাতে লাগাবে তার আগেই ওর হাতে শক্ত কোনো হাতের ছোঁয়া পায়।পরশ রিদির দু হাতের সাথে দুহাতের ঘর্ষণ দিয়ে লৌশন টুকু নিজের হাতে নিয়ে নেয়।আতকে উঠে রিদি পরশের এমন ছোঁয়ায়।
পরশ রিদির পেছেনের দিকে ফ্লোরে বসলেও রিদির চেয়ে উচু্ঁ ই হয়ে আছে।ছেলে মানুষ হাটুঁতে ভর দিলে যা হয় আর কি।আয়নায় মুগ্ধ হয়ে দেখছে পরশ তার বাগদত্তাকে। উমহু বাগদত্তা না,এই বাড়ির একটা নিয়ম আছে।ইনগেজমেন্ট করানোর সময় ছেলে মেয়েদের রেজিস্টেশন করিয়ে ফেলা হয়।কারণ রিং পড়ানোর পর সব ছেলেরা মেয়েদের কাছাকাছি আসতে চায়।
এতে দুজনে একটু আধটু শারিরীক মিশ্রণে আবদ্ধ হয়।
যেমন,হাত ধরা,জড়িয়ে ধরা,কিস করা এসব।যা হাসবেন্ড ওয়াইফের কাজ।
বিয়ে ছাড়া এসব করা ইসলামিক দিক থেকে পাপ।
তাই সাদাদের বাড়িতে ইসলামিক দিকটা বিবেচনা করে রেজিস্টেশন টা করিয়ে দেয়।তার মানে বিয়েও হয়ে যায়।আর যে দিন মেয়েকে তুলে নেওয়া হয় বা বউ বাসায় আনা হয় সে দিন জাস্ট হুজুর দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে আনুসাঙ্গিক কাজগুলো করা হয়।
তো সে দিক থেকে পরশ আর রিদি হাসবেন্ড ওয়াইফ।
চাইলে ওরা সব করতে পারে।
যাই হোক অপরূপ লাগছে রিদিকে পরশের চোখে।পরশের গরম নিশ্বাস রিদির ঘাড়ে পড়ছে। আবেশে চোখ বন্ধ করেছে রিদি।
এই কয়েক দিনকে পরশকে চেনা হয়ে গেছে তার।তাই ভেতর টা এমনিতে শিহরিত হয়ে উঠে পরশ থাকলে।
কি কি করতে পারে পরশ কিছুটা হলেও ধারণা হয়েছে রিদির।কিন্তু পরশ যে রিদিকে এমন একটা অভিঙ্গতা দিবে ভাবতে পারে নি রিদি।
পরশ রিদির হাতা টা একটু ভাঁজ করে নিজ হাতে রিদির দু হাতেই কনুই এ লৌশিন লাগিয়ে দিচ্ছ।
আতঁকে উঠে চোখ খুলে রিদি।কি করছে পরশ!!!কাঁপছে রিদি।কাঁপার তো কথাই পরশ যে পরম যত্নে রিদির হাতে লৌশন মালিশ করছে।
দু পা দিয়ে কার্পেট আকড়ে ধরে রিদি।পারছে না নিজেকে সামলাতে।
পরশ যেনো এক কাজ টা করতে পেরে নিজেজে ধন্য মনে করছে।
হাতে আরও লৌশিন নিলো পরশ।রিদি কার্পেটের উপর নিজের পা শক্ত করে চেঁপে ধরেছিলো দেখে মুঁচকি হাঁসলো।রিদির একটা পা ওর হাঁটুর উপর নিয়ে নেয়।লজ্জায় পা সরাতে চাইলে সরাতে দিলো না পরশ।পায়জামার হুক খুলে যতটা সম্ভব উঠানো যায় উঠিয়ে নিলো।
ভাগ্যিস প্লাজো ছিলো না তাহলে তো এই পরশ লুচু আরোও উপরে উঠতো।চুরি পায়জামা তাই বেশি উঠাতে পারে নি।ভাবে খুব হাসি পাচ্ছে রিদির।
কিন্তু পরশ যখন পায়ে লৌশন মালিশ করা শুরু করলো।
পিলে চমকে গেলো রিদির।
পায়ের পাতাও বাদ দিচ্ছে না পরশ পরম যত্নে ধীরে ধীরে মহান কাজটি করছে।সহ্য হচ্ছে না রিদির।হার্ট এতো টাই বিট দিচ্ছে এই বুঝি ফেঁটে যাবে।রিদি পরশের চুল খামচে ধরছে নিজেকে সামলাতে।নিশ্বাস তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।পরশ উপভোগ করতে পারছে রিদির সব রকমের স্পন্দনগুলো।
দু পায়ে লৌশন দেওয়া শেষে
রিদির দিকে তাঁকায় পরশ।অসম্ভব কাঁপছে রিদি।
বুঝতে পারে পরশ।এই মেয়ে বয়সে বড় হলেও ছেলেদের ছোঁয়ায় খুব কাঁচা।তৃপ্তির হাঁসি হাঁসে পরশ।রিদির দু পায়ে চুমু এঁকে দেয়।রিদি শেষ!!!কি করলো পরশ এটা???
পা থেকে একটা ঝি ঝি শুরু হয়ে যেনো সারা শরীরে পরশের ঠোঁটের ছোয়া রক্তের মধ্য দিয়ে কমশ্র মস্তিককেও গ্রাস করছে।
আর পারবে না রিদি।পরশকে ঠেলে টুল থেকে উঠে যেতে চাইলো।কিন্তু পারলো না।
পরশ এতটাই চালাক বুঝতে পেরেছিলো রিদি উঠে যাবে।তাই আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো রিদিকে আটকাতে হবে।
আগের মতোই বসিয়ে দিলো রিদিকে।
পরশ উঠে দাঁড়ায়।হাতে আরও একটু লৌশন নেয়।রিদি নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।পরশ আচমকা রিদির ঘাড়ে আর গলায় যে টুকু জাগয়া জামার গলার বাইরে সেটুকুতেও লৌশন দিতে শুরু করে।
রিদির দম গলায় আটকে গেছে এবার।পরশ কি করছে???পাগল হয়ে গেছে নাকি!!!
রিদির ভেতরে এতটাই ঝড় উঠেছে চোখেরর কোণায় পানি এসে গেছে।
অবশ্য পরশ নিজের কাজ টা করে ফেলেছে এতক্ষণে।টান দিয়ে রিদির টাওয়েল টা খুলে দিলো বেচারা।রিদি আর পারে নি নিজেকে সামলাতে।
পেছন ফিরে মুহুর্তেই পরশকে জড়িয়ে ধরে।
পরশ বেশ খানিক টা অবাক হয়।রিদি এই প্রথম তাকে জড়িয়ে ধরলো।
পরশও আগলে নিলো রিদিকে।
দুজনেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।
বাট পরশ টা একটু বেশি ই দুষ্টু।রিদির খোলা ভেজা চুল গুলো সরিয়ে কাঁধে মুখ গুজে।
রিদি আকড়ে ধরে পরশের চুল।
পরশ রিদির দু গালে হাত দিয়ে রিদির দিকে তাঁকিয়ে আছে।
রিদি চোখ বন্ধ করে আছে।
পরশের দিকে তাঁকানোর সাহস হচ্ছে না ওর।
পরশের বেহায়াপনায় চমকে ওঠে চোখ খুলতে বাধ্য হয় বেচারী।
এমন কথা বলে নাকি কেউ!!!!
“রিদি,তোমাকে লজ্জা পেলে বেশ লাগে।কিন্তু ওড়না ছাড়া আরও বেশি সুন্দর লাগে।যাকে বলে হ…”
রিদি এমন কথায় চোখ খুলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পরশকে।তাই পরশ পুরো কথাটা শেষ করতে পারে নি।রিদি তাড়াহুড়ু করে ওড়না টা নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়।
নিয়েছিলো ওড়ানা একটু আগে।কিন্তু পরশ দুষ্টু টা গলায় লৌশন দেওয়ার সময় সরিয়ে রেখেছিলো।
পরশ রিদির কান্ডে হাসতে হাসতে শেষ।রিদি পরশের হাসি দেখে মুখ ভেঙছি দিয়ে চলে আসে রোম থেকে।
রিদির মুখ ভেঙচি কাটার দৃশ্য টা চোখ এড়ায় নি পরশের।
অনেক কিউট লাগছিলো রিদিকে সে সময়।
!
পরশ রিদিদের বাসা থেকে খাওয়া দাওয়া করে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বাড়ি ফিরে যায়।রিদির গাড়ি টাই নিয়ে গেছে।চাইলে ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলতে পারতো বাসা খুব একটা দূরে না।তবুও রিদির গাড়ি নিয়ে যায় যেনো কাল সকালে রিদির সাথে দেখা করতে পারে।
পরশ যাওয়ার সময় সবাইকে বললেও রিদির সাথে কথাই বলে নি।
রিদির মেজাজ টাই চটে যায়।রোমে চলে আসে রাগে।
!!!সবার সাথে খেয়ে গেলো।আমি খায় নি কি না একবার জানতেও চাইলো না।আর বলেও গেলো না একবার!!!
“আফা,কি কন একলা একলা….” একজন কাজের মেয়ে পরশের দেওয়া কাপড়গুলো রাফসার কথা মতো রিদির কার্বাডে রাখছিলো।রিদি খেয়াল করে নি।রোমে এসেই বকবক শুরু করে।
“তুই কি করিস??”
“আপনার কাপড়….”
“যা গুছাতে হবে না আর….”
“এমনেই থাকবো??”
“হ্যাঁ…থাক তুই যা এখন….”
মেয়ে টা চলে গেলে রিদি।দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
প্রাপ্তি খাওয়ার জন্য ডাকতে আসলে বলে দেয় খাবে না সে।
রাফসাও এসেছিলো ডাকতে।কিন্তু যায় নি।খুব রাগ হচ্ছে পরশের উপর।একটা কথাও বললো যাওয়ার সময়।
এসব ভাবতে গিয়ে একটা সময় ঘুমিয়ে যায় রিদি।
ঘুম ভাঙে ফোনের শব্দে।
একটা অপরিচিত নম্বর।তাই কেঁটে দেয়।কিন্তু বারবার কল আসায় রিসিভ করে কলটা।
“হ্যালো….”
“থাপ্পর দিয়ে তোমার ঘুম বের করবো রাবিশ…..”
ওপায় থেকে রাগী কন্ঠা টা শোনে চোখের ঘুম কোথায় উড়ে গেলো কে জানে।
লাফিয়ে উঠে খাটের মাঝ খানে বসে।
“আমি কি জানি এটা আপনার নম্বার…..”
“তো ফোন কাটছিলে কেনো??”
“আমি ভেবেছি কে না কে….”
“তার মানে অপরিচিত লোক তোমায় কল করে ডিস্টার্ব করে নাকি??”
“কিহ??”
“যা বললাম সোজা সাপ্টা উত্তর দাও…..”
“করলে করুক।তা তে আপনার কি??”
“রিদি মেরে ফেলবো জাস্ট….”
“বেঁচে যাই কাজ টা করলে….”
“কি বললে??”
“খুন করলে বেঁচে যাই।আপনার জ্বালা সহ্য হয় না আমার….”
“হা হা হা হা।।।হটি গার্ল….বোকার মতো কথা বলতে নেই জানেমন……”
“এই আপনি আমাকে একদম ঐসব নামে ডাকবেন না……”
“তোমাকে খুন করার কথা বলি নি রে বউ।।।যারা তোমাকে ডিস্টার্ব করবে তাদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবো…..”
“হয়েছে আপনার বকবকানি??”
“এই রিদি….”
“কি??”
“রাগ করেছো??”
“কেনো??”
“বলে আসি নি যে..”
“সেটা আপনার ইচ্ছা…..”
“আচ্ছা!!!”
“হুম….ভালোই তো পারেন,সাদাদের সাথে আড্ডা দিতে।”
“আরে ভালো ছেলে।আগে থেকে চিনতাম।তাই আড্ডা জমে গেলো খাওয়ার সময়…”
“তার জন্য নৌশিনের সাথেও আড্ডা?”
“আরে ভালো লাগে মেয়ে টাকে….”
“মানে??????”
“আস্তে
ভয় পাওয়ার কিছু নেই।তুমি কি খেয়াল করো নি ওকে আমি তুই করে ডাকছিলাম??”
“তুই??”
“হ্যাঁ।ওর ভাইয়ার সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব।সে সূত্র আমি ওকে আগে থেকেই তুই করে বলি।বোনের মতো।আমার তো আর ছোট বোন নেই।”
“তাহলে বিয়েতে এসেন কি কেনো??”
“ঐ কি বলো???আসি নি মানে???”
“কই??”
“তাহলে তোমার ওড়নায় পেছন থেকে গিট টা কে দিয়েছিলো??”
“মানেেে????আপনি?????”
“ইয়াহ বউ।তোমার লেহেঙ্গার গলা টা একটু বড় ছিলো।সাদ ভাইয়ার জন্য তোমাকে কিছু করতে পারি নি।যে ভাবে আগলে রাখে সবাই তোমাকে।নিজের বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম না।খুব ভাগ্য করে ওদের মতো রিলেটিভ পেয়েছো…….ইশশশ যা সেক্সি লাগছিলো না তোমায়।তাই একটু পেছনে ছিলাম তোমার।বিশ্বাস করো।।।।ইচ্ছা করছিলো পিঠে চুমুতে ভরিয়ে তুলি।পাড়ছিলাম না সামলাতে।হাত তোমার ওড়নায় চলে গেছিলো।তুমি টের পাওয়া আর পাওয়ার কথাও না।আমি সাবধানেই ধরেছিলাম।আমি তোমাকে ঐ দিন খুব কাছে থেকে দেখেছিলাম।আগে তো দূর থেকে দেখেছি।।।।।বউ রে পাগল করে দিয়েছিলি আমায়……”
রিদির বুক টা ধুক করে উঠলো।কারণ ও জানে সাদাদ নৌশিনকে খুব ভালোবেসে তুই করে বলে মাঝে মাঝে।
এই গুণ টা পরশের মাঝেও আছে।তার মানে সাদাদ যতটা ভালো নৌশিনকে বাসে,পরশও কি বাসে রিদিকে।
সাদাদ তো নৌশিনের জন্য পারলে নিজের জীবন দিয়ে দিবে।পরশও কি তাই???
ভাবতেই কান্না পাচ্ছে রিদির।
পরশের আরও কিছু বেহায়াপনার কথা শুনতে হলো রিদিকে।এতো কাহিনী করছে আর রিদি ধরতেই পারে নি।
পারবে কি করে ভাবেই নি রিদি কেউ ওকে এতোটা ভালোবাসতে পারে।
!
দিনগুলো এভাবেই কাটে যাচ্ছিলো।রিদি আজকাল নৌশিনের মায়ায় পড়ে যাচ্ছে।
নৌশিনকে এখন আর কষ্ট দিতে ইচ্ছা হয় না।ওর হাঁসি মুখ টা দেখলে মনে হয়–ছোট্ট একটা হালকা পাতলা পবিত্র পাখি তার চারপাশে সুখের আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
নিজের ছোট বনের মতো মনে হয়।পরশের বলা কথাগুলো ভাবলে,ভালো লাগে।পরশ যে বলেছিলো এমন রিলেটিভ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আসলেই রিদি তা বুঝতে পারছে এখন।সাদাদের পরিবারের প্রতিটা সদস্য ই এতো কেয়ার করে রিদিকে।কোনো দিক থেকে বাড়ির মেহমান মনে হয় না রিদিকে।
তবে রিদিও আজও সাদাদকে পুরোপুরি সরাতে পারে নি ওর মন থেকে।তবে পরশকে অনেকটাই জায়গা দিতে পেরেছে।
আজ নিপা আসবে।
সারা বাড়ি খুশিতে ভরপুর।
নৌশিন একটু বেশি খুশি
কারণ তুবাকে দেখতে পারবে সে।তুবা ওয়ালিদ আর নিপার মেয়ে।অরূপের দু বছরের বড়।
সাদের চেয়ে নিপা পাঁচ বছরের ছোট হলেও নিপার বিয়ে টা আগে ই দেওয়া হয়।কারণ চার দিক থেকে এতো বিয়ের সমোন্ধন আসছিলো মেয়ে ইন্টার পাশ করার পর পর ই।
রাজশাহীতে আইবিএ তে চান্স পেয়েও পড়তে পারে নি মানুষের জ্বালায়।
শেষে বাধ্য হয়ে ওর বাবা কাকা ঢাকায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে মেয়েকে।নর্থ সাউথে ভর্তি করিয়ে দেয়। একই ডিপার্টমেন্টে।তবুও যেনো সুন্দীরর উপর থেকে চোখ সরছিলো না মানুষের।সাদ তো কত মারামারি করেছে রাস্তা ঘাটে বোনের জন্য।যেমনটা নৌশিনের ভাই করতো।কিন্তু নৌশিনের ভাই খুব বেশি ভয়ঙ্কর ছিলো তাই নৌশিনের দিকে চোখ তুলার সাহস কারও হতো না।হয়েছিলো একজনের,যে নৌশিনের মন চুরি করেছিলো।আর ওর ভাইকেও সম্মান দিয়ে পটাতে পেরেছিলো।সে হচ্ছে সাদাদ।
সাদাদও মাঝে মাঝে বোনের জন্য নিজের চেয়ে বড়দের সাথে ঝগড়া করতো।কিন্তু আল্লাহ কপালে রাখলে যা হয় কি।শহরের সব নামী দামী বিসনেস ম্যান রাও তাদের ছেলের জন্য নিপাকে চাইছিলো।
ভার্সিটি থেকে অনেক দিন কেঁদে বাসায় ফিরেছে নিপা।কারণ ছেলের মায়েরা নাকি নিপাকে ভার্সিটিতে দেখতে গিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করতো।আর বেচারী বোকা বনে যেতো।এসে মা-চাচীর সাথে কান্নায় ভেঙে পড়তো।
কোনো এক ওরিয়েন্টশনে এই ওয়ালিদ দ্বিতীয় বর্ষের নিপাকে দেখে প্রেমে হাবুডবু খায়।ওয়ালিদ তখন ওর বাবার সাথে বিসন্যাসে যুক্ত ছিলো।
ওয়ালিদের বাবা কিছুতেই ছেলের পচ্ছন্দ হাত ছাড়া করে নি।নিপা অবশ্য ওয়ালিদকে দেখে নি।প্রথম যে দিন ওর বাসায় আসে সে দিন ই দেখেছিলো।নিপার বাবা সাফ না করে মেয়ে কে এতো কম বয়সে বিয়ে দিবে না।সাদাদ তখন ইন্টারে পা রাখলো মাত্র।
কিন্তু ওয়ালিদের পরিবার কিছুতেই না সোনার পাত্র নয়।মেয়ে তাদের চাই ই চাই।
কি আর করার হয়তো আল্লাহ চাইছিলেন তাই নিপা তৃতীয় বর্ষে উঠা মাত্রই একুশ বছর বয়সে ওয়ালিদের সাথে বিবাহ বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে।
নিপা প্রথম দিকে না এতো কিছু বুঝতো না।ওয়ালিদ আটাশ আর ও একুশ। ভালোই বড় ছিলো ওয়ালিদ।
নিপার বাড়ীর লোক তো বিয়ে ঠিকি দিয়েছিলো বাট মেয়ের জন্য চিন্তায় ঘুমাতে পারতো না কেউ।
নিপার এক অবস্থা,ওয়ালিদ যখন কাছে আসতো প্রায় সময় ভয় পেতো।
কান্নাও করতো মাঝে মাঝে।
বাড়িতে আসলে মন চাইলে,ওয়ালিদকে বলতে পারতো না।সাদাদকে,আর সাদ কে ফোন করে কান্না করে দিতো।
আর মা,তার সাথে তো রাত তিনটায় ও কথা বলতো মাঝে মাঝে।
কিন্তু ওয়ালিদ খুব সার্পোটিভ ছিলো।বুঝতে পেরেছিলো নিপা ছোট। ওকে সময় দিতে হবে।তাই প্রথমেই নিজের যৈবিক চাহিদা আদায় করে নি।সহজ একটা রিলেশন তৈরী করে নিয়েছিলো প্রথমে।
আস্তে আস্তে নিপাও বুঝতে পারে ওয়ালিদকে।ভালোবাসতে শুরু করে।
এক হয় দুজনে।
আর যখন নিপার স্টাডি কমল্পিট তখন তুবা আসে ওর গর্ভে।তুবা হয়ে যাওয়ার পর নিপাকে ওর বাবা বিদেশের ব্যবসা দেখাশোনা করতে বলেন।ওয়ালিদকেও দায়িত্ব দেন।সে সুত্রে নিপা আর ওয়ালিদ তুবা কে নিয়ে কানাডায় বাস করে।
তুবাও মা আর খালা(প্রাপ্তি) এর মতো ধবধবে সাদা।আর দেখতে সাদ,সাদাদের মতোই বলিষ্ঠ।আর নাক মুখের গঠন সেইম রিদি।কেউ দেখলে প্রথমবারে ই বুঝতে পারবে রিদির সাথে এর কোনো সর্ম্পক আছে।
!
নৌশিন এতটাই খুশি যে রিতী মতো লাফালাফি শুরু করছে অরূপের সাথে।দুজনে অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন তুবা বাসায় ডুকবে।একজন রিয়েলে দেখবে আর অন্যজন খেলবে।সাদাদ নৌশিনকে ধমক দিয়েছে একবার যেনো না লাফায়।পা ভালো হলেও যদি বেশি চাপ লাগে তাই।
কিন্তু শুনলে হয় সাদাদের কথা,নৌশিন তো অরূপের দলে আজ।☺☺☺☺
রিদির মা-বাবা ছেলে,ছেলের বউ আর নাতনী আসবে শুনে ঢাকায় এসে গেছে।রিদিও বেশ খুশি।কারণ তুবা যে রিদির চোখের মনি।একমাত্র ভাতিজি বলে কথা।
কম আদর পায় নাকি তার ফুপুর কাছে!!!!!
সাদাদের বিয়ের সময় ওয়ালিদ আর নিপা আসলেও তুবা আসে নি।ওর দাদা দাদী তখন কানাডায় ছিলো তাই দাদুদের সাথে কানাডায় থেকেছিলো।
আর স্কুল থেকে সে সময় ভ্রমণ চলছিলো তাই বিয়ে থাকা সত্বেও আসতে পারে নি।
উন্নত দেশের স্কুলগুলো তো এমনি হয় ক্লাসে যেমন তেমন হোক,জিওগ্রাফিক বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞানের সময় স্টুডেন্টদের ছাড়বে না।
তাই সবার যেনো তুবাকে নিয়েই বেশি আগ্রহ।
বলতে গেলে পুরে বাড়িতে ঈদের আগের দিনের আমেজ আজ।
সবার অপেক্ষা কখন ঈদের চাঁদ উঠবে!!!!!!!!!!!
.
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here