#প্রেমঘোর
#পর্ব_৭৩_৭৪
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
নৌশিনকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে।
পা যতটুকু কেটেছে সেটুকু নরমালি কাঁটলে তিন থেকে চারটা সিলি লাগাতো।কিন্তু পা তো পুরে গেছে ভয়াবহ ভাবে তাই সেখানে সিলি করার কোনো উপায় নেই।
ঢুকে যাওয়া কাঁচের টুকরাগুলো বের করে জাস্ট ড্রেসিং করে দিয়ে মেডিসিন লাগানো হয়েছে তার উপর।
পুরা+কাঁটা….পুরার কারণে বেন্ডেজও করা সম্ভব না।
অনেক আগেই তো নৌশিন ভয় আর ব্যাথায় অঙ্গান হয়ে গেছে।তাই যেন আপাতত ব্যাথার সম্মুখীন হতে না হয় সে জন্য ঘুমের ইনজেকশন।
.
সাদাদ নৌশিনের বেডের পাশে মাথা নিঁচু করে বসে আছে।
আর নৌশিনের কাল রাতের কথাগুলো ভেবে তাঁর ভেতর টা চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে……….
“””আচ্ছা,সাদাদ শোনো না পরশু তো রাঙামাটি যাবো…..আমি তো আগে কখনো যাই নি…….তুমি কিন্তু বারণ করতে পারবে না যে ওখানে যেও না এখানে যেও না…..আমি সব ঘুরে ঘুরে দেখবো…….”
“সেটা আমি পরে দেখে নিবো……..”
“এই না…..প্লিজ প্লিজ…….আর আমার কিন্তু সেখানকার বাঁশ কোরল চাই ই চাই…….”
“সেটা দেওয়া যাবে……”
“এই তুমি এমন করে কথা বলছো যেন তোমার কোনো আগ্রহ ই নেই………”
নৌশিনের দিকে চেয়েছিলো সাদাদ,মুঁচকি একটা হাঁসি দিয়ে বলেছিলো,
“আমার তো একটা জিনিসেই যত আগ্রহ…..”
বুঝতে পেরেছিলো নৌশিনও….তাই তো সাদাদের বুকে ঘুষি দিয়ে বলেছিলো,
“ধুর….আমি বলি কি আর সে বলে কি……তোমার খালি…..”
সাদাদ জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,
“আমার খালি তুই রে নৌশিন……..”
“বলছি যে…….. আজ তো কোনো প্রটেকশন হয় নি…..তো আজকের জন্য তো আমি মা হয়ে যেতে পারি……..”
“হেয়…….এতো বাচ্চা চাই তোমার???”
“হ্যাঁ চাই…..তুমি জানো আমি বিয়ের আগে ফ্রেন্ডসদের বলতাম’আমার বিয়ে না হোক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু বেবী তো চাই চাই……'”
সাদাদ তো অবাক………চোখ কপালে তুলে বললো,
“বিয়ে ছাড়াই বাচ্চা!!!”
“আরে না না তুমি যা ভাবছো তা না,আমি তো ওদের জাস্ট এটা বুঝাতে চেয়েছিলাম যে আমি বাচ্চা কতটা ভালোবাসি…….”
“তাই বলে এই কথা বলবা…….আচ্ছা!ধরো তোমার বিয়ে যদি না হতো তবে বাচ্চা কোথা থেকে আসতো??”
“উহু….সাদাদ তুমি না…….এখন চাইলে যে কেউ মানে যে কোনো এডাল্ট মেয়ে মা হতে পারে তবে সেটা হবে টেস্টটিউব বেবি……..বুঝলা??”
“হায় আল্লাহ্…….বলে কি বউ আমার…..শেষ মেষ টেস্টটিউব বেবী নিবে নাকি!!!”
“ধ্যাত……থামবে তুমি…..যেটা বলি আগে শোনো সেটা…….ধরো কারও হাসবেন্ড আনএবল তো ক্ষেত্রে তো হয়….নাকি???আর আমি তো জাস্ট কথার কথা বলছিলাম……….”
“তারমানে আমি অক্ষম নাকি??”
“আল্লাহ্।কি সব বলো না বলো।।।।।আমি বলছি বিয়ে না হলে বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে……..আর তুমি……..”
“হুম।।।।।বুঝলাম আর মন খারাপ করতে হবে না।।”
“ওকে…..এই শুনো না।।।।”
“বলো না…….”
“বলছি যে আমি না পাহাড়ে খুব বেশি উঠতে পারি না।।।।উইল ইউ কেরি মি?”
“ওয়াট ইউ সে মাই ডিয়ার আম এলোয়েজ রেডি ফর দেট…….ইউ নো না?”
“হুম।তা জানি…..বাট সাদাদ আমার না এবার একটা বেবি চাই ই চাই……এই যে আজ যেমন কোনো প্রটেকশন ছাড়া ই হলো সবকিছু।।।।।তুমি তো সেখানে গিয়েও তোমার দুষ্টুমি গুলো ছাড়বে না সো আমি চাই……..”
“এই ওয়ান মিনিট,ওয়ান মিনিট……কি বললি তুই….??সেখানে গিয়ে আমি দুষ্টুমি ছাড়া থাকবো না মানে কি?আমি কি সেখানে সাধু বেশে যাবো…???… ”
সাদাদ নৌশিনকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,”যাবো তো তোকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবাসা দিতে………..আর আমাদের প্রেমঘোরে ছোট্ট একটা ভালোবাসার আগমনের জন্য………”
“আমি খুব করে চাই…….দুটো নরম হাত,ছোট্ট দুটো পা……আমাদের দুজনের মাঝখানে হামাগুড়ি দিয়ে যখন আসবে,কতটা মায়া কাজ করবে তার প্রতিটা ছোয়াতে!!!!”
“পাগলী একটা…….তোমার মতোই কিউটি হবে দেখো…..”
“উমহু…..তোমার মতো ডেসিং আর সুঠাম হবে আমাদের ছেলে টা……..”
“নো ওয়ে……আমার তো মেয়েই চাই……….”
“যাও তো…..দোয়া করো যেন ছেলে হয়……”
“দোয়া যদি করতেই হয় তবে এটা কবর যে ‘আল্লহ্ আমার ঘরে একটা জান্নাত দিও না'”
নৌশিন আর কিছু বলে নি……
পরশ সুখে সাদাদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো……….
.
কিছুক্ষণ পর নৌশিন আবার বলা শুরু করলো,
“সাদাদ,তুমি যে কালো মেকাপ টা এনে দিলে অনেক দিন হয়ে গেলো……..আমি রাঙামাটি গিয়ে কালো সাজবো…….”
“ওরে আমার হুরপরি….মনে আছে তোমার??আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমার কালো সাজের কথা……”
“হুম….সারা দিন মাথায় কাজ ডুকিয়ে রাখলে তো ভুলে যাবেই…….বাট আমার ক্ষেত্রে তো তা না-তাই আমার সবি মনে থাকে……”
“আচ্ছা!!!…….”
“হুম……”
“ঘুম পাচ্ছে??”
“একটু একটু…..আর তুমি তো মাথায় মাথা বুলিয়ে দিচ্ছো তাই বেশি বেশি পাচ্ছে……”
“আচ্ছা…..ঠিক আছে….অনেক রাত হয়ে গেছপ আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন…….”
“তুমিও ঘুমাও…..”
“ঘুমাবো…..আমার হুরপরি টার ঘুমন্ত ঘুম আমার বুকের উপর দেখতে যে আমার খুব ভালো লাগে……….”
“পাগল……..”
“তোর জন্য……..”
“আচ্ছা….একটা কোয়েশ্চেন…..”
“সিউর……”
“আমরা যে দিন ফরজ গোসল করি……আমি খেয়াল করেছি তুমি অফিসে যাওয়ার আগে আবার গোসল করো….কেন???সকালে দু বার করার কি দরকার??”
“সেটা অভ্যাস হয়ে গেছে অফিসে যাওয়ার আগে গোসল করা…..আর এখন গরমকাল সকালে দুবার ব্যাপারি না…..”
“তোমার জন্যই সম্ভব এক বেলাতে দুবার গোসল করা….আমি তো ঠান্ডা লেগেই ভুতুম হয়ে যেতাম…..”
“হা হা হা হা হা……পাগলী ঘুমা এখন……”
“হুম……”
তখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো নৌশিন সাদাদের বুকে…..সাদাদ নৌশিনের ঘুমন্ত মুখটা নিজের বুকের উপর রেখেই কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে নিজেও তলিয়ে গিয়েছিলো ঘুম রাজ্যে……………………….
.
কল্পনা থেকে ফিরে আসে সাদাদ…….যে মেয়ে কাল রাতেও কতটা হাঁসি মুখে ঘুমাচ্ছিলো আর আজ সকালে!!
কত আশা করেছিলো নৌশিন কালকের রাঙামাটি ভ্রমণ টা নিয়ে……..ঘুম থেকে উঠেই তো আপসেট হয়ে যাবে,ভাবতেই সাদাদের এলোমেলো লাগছে….আর তার উপর পায়ের কনডিশন দেখে তো ভেতরে স্লাইকোন বয়ে যাচ্ছে….
.
ঐদিকে সাদাদের বাসায়…….
সকাল এগারোটা বেজে গেছে কেউ পানি টা পর্যন্ত খায় নি…..শুধু মাত্র রিদি ব্রেড আর বাটার খেয়ে সবার আগে নিজের কর্মস্থলে চলে গেছে…..
তার কাছে রোজকার দিনের মতো আজও একটা সাধারণ দিন বরং তার চেয়েও অনেক ভালো একটা দিন……………….
অরূপকে খাওয়ানোর জন্য ওর বাবা অনেক রকম চেষ্ঠা করে যাচ্ছে কিন্তু বাচ্চা কোনো রকমেই খাচ্ছে না…..প্রাপ্তি রান্না ঘর থেকে ভাজা পাপড় গুলো এনে দিলেও মুখে পর্যন্ত তুললো না অরূপ…..বরং পাপড় দেখে কেমন একটা ভাব নিয়ে ওর বাবাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেন খুব ভয় পেয়ে গেছে……কেউ আর জোর করলো না…..স্বাভাবিক করার জন্য টিভিতে কার্টুন অন করে দিলো সাদ,প্রাপ্তির কোলে দিতে চাইলে গেলো না সে…..বাবার কোলে বসেই বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টিভির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাঁকিয়ে আছে-অন্যদিনের মতো লাফালাফি করছে না আজ……না হলে এমনিতে তো কার্টুন দেখে সারা বাড়ি হাঁসতে মাতিয়ে রাখে…………….
.
ঘড়ির কাঁটা একটা ছুঁই ছুঁই সাদাদ এখনও আগের মতোই বসে আছে….ওর বাবাকে জোর করে অফিসে পাঠিয়ে দেয়….প্রাপ্তির বাবাও এসেছিলো – নৌশিনের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যান খুব….তবে সাদাদের জোরাজোরিতে তাঁকেও অফিসের দিকে ছুটতে হয়…….
সাদ ফোন করে অরূপের অবস্থা জানানোতে রাফসা সাদাদকে সবকিছু বলে বাসায় চলে এসেছে………….
মা কে দেখা মাত্রই অরূপ ওর বাবার কোল থেকে নেমে মায়ের কোলে চড়ে বসে…….
গলায় জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে…….ঘাবড়ে যায় রাফসা,তাঁর ছেলে তো এমন করে কখনও কাঁদে না…..
হাতে রাখা ব্যাগটা সাদের হাত দিয়ে….ছেলের মুখ উপরে তুলার চেষ্ঠা করে যাচ্ছে রাফসা,
“বাবা,দেখি……. বাবা আমার কাঁদে না……….সোনা বাবা…..দেখি দেখি……”
অনেক ছলাবলায় মায়ের কাঁধ থেকে মুখতুলে অরূপ………..
“আল্লাহ্…..আব্বু….কি হয়েছে তোমার???এতো কেঁদেছো তুমি???মানিক আমার খাও নি কেন এখনও…..”চুমু দিয়ে ভরে তুলছে ছেলের মুখ…………
ছেলেকে নিয়ে সোফায় বসে রাফসা,
মাকে পেয়ে আগের চেয়ে অনেক টা স্বাভাবিক সে….কাঁদছে না কিন্তু চোখে মুখে কেমন একটা ভয়ের ছাপ দেখতে পারছে তার মা……….
“আব্বু,খাবে না???”
মাথা নাড়িয়ে না জানায় অরূপ……
“কেন আব্বু?সেই সকাল থেকে তো কিচ্ছু খাও নি……… ”
“খাবো না……”
“কেন বাবা……আমি তো খাইয়ে দিবো……”
“উমহু…..নতুন বউ আসলে খাবো…….”
“তুমি খেয়ে নাও তোমার নতুন বউয়ের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে……..”
“আগে নিয়ে যাও…..”
“তুমি যদি না খেয়ে যাও সেখানে তাহলে তোমার নতুন বউ তো তোমার সাথে কথাই বলবে না…….আচ্ছা,তুমি পাপড় খেয়েছো.?”
“না খাই নি….ঐ পাপড় পঁচা খাবো না আমি…….আমার খুদা পেলো যে ভাত খাবো একটু পরে নতুন বউ যাবো…..”
“এই তো আমার সোনা বাবা……..মিতু(সার্ভেন্ট) আমার সোনাবাবার জন্য ভাত আর ডিম পোস নিয়ে আয় তো……”
বলতে বলতে ভাত আর এগ পোস নিয়ে হাজির হয় মিতু…..
অনেক চেষ্ঠা করে তিন চার নোলা ভাত খাইয়ে…..ঘুম পাড়িয়ে দেয় অরূপকে…………
.
নৌশিনের ঘুম ভাঙলে…..উঠে বসতে চায়….সাদাদ আস্তে করে ধরে বসিয়ে দেয়…….নিজের পায়ের দিকে তাঁকিয়ে ভয় পেয়ে যায় নৌশিন…..অনেক জ্বালাও করছে……সাদাদকে ধরে ডুঁকরে কেঁদে উঠে সে…………..
“জান,জান…..প্লিজ কেঁদো না…..”
“আমার পা……”
“কিচ্ছু হবে না…..সব ঠিক হয়ে যাবে……..”
নৌয়িনকে শান্ত করে সাদাদ জোরপূর্বক খাবার খাইয়ে দিলো তাঁকে……ডক্টর এসে মেডিসিন দিয়ে যায়………….
আবারও শুয়ে আছে নৌশিন..
পা টা নাঁড়াতেই পারছে না……
সাদাদ টুলের উপর বসে নৌশিনের সাথে গল্প করছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যাতে করে নৌশিনের মনোযোগ তার পায়ের দিকে না থাকে………..
!
হসপিটাল থেকে জানায় নৌশনকে বেশ কয়েক দিন এখানে ভর্তি থাকতে হবে।
না হলে পায়ের যা অবস্থা যে কোনো মুহুর্তেই সেফটি ধরে যাবার ভয় আছে।
বিকালের দিকে সাদাদের মা,প্রাপ্তি,রাফসা আর অরূপ নৌশিনকে দেখার জন্য আসে।
ভিজিটিং আওয়ার জেনেই এসেছে সবাই…….তাছাড়া হসপিটালের বেশির ভাগ ডাক্তার রাফসার চেনাশোনা হওয়ার কোনো প্রকার জোরাজোরি ছাড়াই সবাই একসাথে কেবিনে ডুকতে সক্ষম হয়।
নৌশিন ঐ সময়েও ঘুমাচ্ছিলো।
পায়ের ব্যাথার জন্য পেইন কিলার দেওয়া হয়েছে এজন্যই এতো ঘুম।সাধারণত যে কোনো ব্যথার ঔষধ,এর্লাজির ট্যাবলেট এগুলো খেলে ঘুম একটু বেশিই হয়।
সাদাদের মা তো পা দেখে হুড়মুড়িয়ে কাঁদতে শুরু করে….
প্রাপ্তির চোখেও পানি এসে গেছে……আসার কথাই তো!
সকালে তো জাস্ট কালো দেখা গিয়েছিলো আর রক্ত….আর এখন পুরা জায়গাটা মিনিমাম দুই ইন্সি ফুলে গেছে,সাথে কাঁটা অংশ বিশাল হা হয়ে আছে……ভেতরের লাল চামড়া ভেদ হয়ে সাদাদ গোস্তও ফাঁক হয়ে আছে জাগয়াটুকুতে………
সবার এমন অবস্থা দেখে অরূপও কান্না শুরু করে………..
রাফসা তাড়াতাড়ি ছেলেকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে…………
একজন নার্স এসে সাদাদকে কিছু প্রেসক্রাইব করে যায়……
রাফসা সেগুলো একজন কমপাউন্ডারকে দিয়ে আনিয়ে নিলো এমন সময় প্রাপ্তির বাবা,সাদ এরাও আসে……..
এক এক করে সবাই নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে………
সবাই বাইরে ওয়েটিং রোমে বসে আছে…..কি থেকে হয়ে গেলো…..যা অবস্থা নৌশিনের মিনিমাম দশ-পনেরো দিন হসপিটালে থাকতে হবে…..পুরা তার উপর সিলাইছাড়া কাঁটা টা বাসায় নেওয়া মানে সেফটি ধরানো পায়ে…..আর পুরুপুরি সুস্থ হতে দেড় মাস তো লাগবেই…….
“আচ্ছা,আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝলাম না….এত দিন হলো নৌশিন তো এমন হালকা কাজ কখনো করে না…..সব কাজ গুছানো ওর….তাহলে এত বড় একটা কড়াই ওর পায়ে কি করে???”(প্রাপ্তির বাবা)
“আমারও এক প্রশ্ন…..নৌশিন তো গা ছাঁড়া কাজ করে না….আর ধরলাম হঠাৎ হয়ে গেছে তবুও সবটা তেল ওর পায়ে দেন আবার ঐ জায়গাতেই কাঁচের বাটি পড়লো তারউপর এত ভারী একটা লোহার কড়াই……ভাবা যায়!!!!হাউ কেন ইট পসিবল???”(সাদ)
“আমার মাথায় কিচ্ছু ডুকছে না…..কড়াই টা তো আর পাতলা না যে হাতের একটু ছোঁয়া লেগে অসাবধানতার কারণে পরে যাবে……আর সাদ,তোমার মনে আছে দাদী গ্রামের বাড়ি থেকে যে কড়াই টা গতবার আমাদের সাথে পাঠিয়ে দিলো??”(রাফসা)
“হ্যাঁ,আসার সময় কড়াই টা তো মেপেও আনলাম আমি…বড় মায়ের রেখে যাওয়া কড়াই……সাড়ে তিন কেজি ওজন…… ”
“হ্যাঁ…সেটাতেই পাপড় ভাজা হচ্ছিলো……আর তাতে আমি পুরো পাঁচ লিটারের গেলন টা ঢেলেছিলাম…..তাহলে সাড়ে তিন কেজি প্লাস পাঁচ লি. টোটাল ওজন ছিলো সাড়ে আট……তোমাদের কি মনে হয় নৌশিনেরর মতো মেয়ের একটু হাতের ছোঁয়াতেই সেটা পড়ে যাবে????”
“মানে কি বউ মা,তুমি কি বুঝাতে চাইছো???”
“আমি কিছু বুঝাতে চাইছি না কাকা….আমি নিজেই তো কোনো হিসাব মিলাতে পারছি না……….”
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালো সাদ………
রাফসা ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিলেই সবাই বাসায় চলে যাবে……..সবাই সে জন্যই বসে আছে…………….
রিদও সরাসরি অফিস থেকে নৌশিনকে দেখার জন্য হাসপাতালে এসে যায়……..
ওয়েটিং রোমে সবাইকে দেখে বেশ চিন্তিত একটা ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে,
“নৌশিন কেমন আছে???”
“কেমন আর থাকবে……যাও দেখে আসো……”(রাফসা)
রিদি কেবিনের দিকে পা বাড়াতেই অরূপ হঠাৎ কি মনে করে ওর মায়ের কোল থেকে বিদ্যুৎ গতিতে নেমে এসে পথ আগলে দাঁড়ায় রিদির………
মুহুর্তেই বাচ্চা ছেলেটার মুখের সমস্ত ভয়ের ছাপ রাগে পরিণত হয়েছে….এই ভয়-রাগের ক্রিয়া টা আর কেউ বুঝুক না বুঝুক রাফসা বুঝে গেছে……….
অরূপ চোখ দুটো বড় করে তাঁকিয়ে আছে রিদির চোখের দিকে….এমন একটা ভাব যেন রিদি মস্ত বড় কোনো ক্রিমিনাল আর তার তদন্তকারী হচ্ছে এই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটা…………
অরূপকে এমন করতে দেখে রিদি একটু নিঁচু হয়ে….অরূপের মুখের সামনে মুখ এনে বললো,
“আব্বু,যেতে দাও আমায়….তোমার নতুন বউকে একটু দেখে আসি……..”
কথা বলা শেষ হতেও একটু সময় লাগলো কিন্তু ওর মুখে অরূপের দু হাতের খামচি পড়তে একবিন্দু সময়ও লাগলো না……….
দু হাতে বেজির মতো খাঁমচে ধরেছে অরূপ রিদিকে…………
“তুমি পঁচা….তুমি পঁচা…….পঁচা…..পঁচা………”
রিদি কোনো মতো নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অরূপের কাছ থেকে…..দু হাতে রিদির গালে,গলায় খামচি দিয়ে লাল করে দিয়েছে অরূপ…..
অরূপের মা তো ছেলের এমন রূপ দেখে রীতিমতো সাত আসমানে উঠে গেছে……….
ছেলেকে সামলাতেই পারছে না কোনো ভাবে……..
রিদি এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে,অরূপ আবারও ওর মাকে সরিয়ে দিয়ে রিদির কাছে ছুটে যায়……রিদি দাঁড়িয়ে আছে তাই মুখে আর খামচি দেওয়া সম্ভব না সেজন্য পড়নের টপ ধরে টানছে আর উরুতে ওর সব শক্তি দিয়ে চড় বসাচ্ছে………..
“পঁচা….পঁচা……..যাও যাও……..পঁচা যাও……….. “…..
“নতুন বউয়ের কাছে যাবে না তুমি……যাও যাও পঁচা তুমি……খুব বাজে……পঁচা তুমি……..বেড গার্ল………চলে যাও,যাও………..”……………!!
!
#প্রেমঘোর#৭৪#
💜💜
রাফসা অরূপকে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
মায়ের কোলে উঠেও অরূপ রিদির দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে বলছে,
“যাবে না তুমি…..পঁচা মেয়ে যাবে না নতুন বউয়ের কাছে……পঁচা…. পঁচা……”
“বাবা,বাবা,কি হয়েছে তোমার??? এমন করে না সোনা………শান্ত হও….”(রাফসা)
অরূপ বারবার কোল থেকে নেমে পড়তে চাইছে…….কিন্তু পেরে উঠছে না-বাচ্চা তো……..
“আব্বু তুমি না গুড বয়….তাহলে এমন কেন করছো??”
“রিদি আন্টি যাবে না নতুন বউয়ের কাছে…..ও পঁচা একটা….”
“না বাবা,রিদি আন্টি তো অনেক ভালো…..কত ভালোবাসে তোমায়….”
“না ও পঁচা মেয়ে একটা…..”
“এই একটা চড় খাবি…..”(পেছন থেকে সাদ)
বাবার কথা শোনে অরূপ ঠোঁট উল্টিয়ে দেয়……….
“বেশি ফাজিল হয়ে গেছিস তুই…..বড়দের মারতে শিখে গেছিস…….”
এবার কেঁদেই দিলো বাচ্চাটা……..
রাফসার হয়েছে যত জ্বালা…
“আহ্,সাদ প্লিজ……..”
“হ্যাঁ সামলাও তোমার ছেলেকে….দুষ্টুমির সাথে সাথে বাজে ব্যবহারও করছে আজ কাল…..”
“সাদ,প্লিজ…..বাচ্চা ও……”
“দেখি বাবা,এই বাবা……তাঁকাও না আমার দিকে…..কাঁদে না সোনা….বকে দিবো তোমার আব্বুকে…….. কাঁদতে নেই তো বাবু…..”
ছলে বলে ছেলের কান্না থামায় রাফসা…..পরম আদরে সাদ কোলে নেয় ছেলেকে………..
“বকলেই কাঁদতে হয়??”
ফিক করে হেঁসে দেয় অরূপ…
“আবার হাঁসিও পায়…..দুষ্টু হয়ে গেছো খুব…..মারলে কেন তোমার আন্টিকে….সরি বলবে তোমার আন্টিকে…..”
আবারও মুখে একই রাগের চিহ্ন…… একই রকম জেদ এনে বললো,
“না বলবো না সরি…..ও একটা পঁচা……”
“অরূপ!!!!”(চোখ রাঙিয়ে)
ভয় পেয়ে যায় অরূপ ওর বাবার রাগী চোখ দেখে….
“ইশশশ….সাদ প্লিজ…এমন করো না…..দাও ওকে আমার কাছে……”
দিলো না সাদ,রাফসার দিকেও রাগী লোক করে বললো,
“দেখতে দাও আমাকে……”
“বড় রা পঁচা হয় না…..বুঝতে পেরেছো????”
“না ও পঁচা……”
“অরূপ!!!!!!!!!!!!”
রাফসা এবার জোর করে ছেলেকে নিজের কোলে টেনে নেয়,কি শুরু করছে সাদ বাচ্চাটার সাথে…..ও কি এতো কিছু বুঝে নাকি…
শান্ত করাচ্ছে ছেলেকে রাফসা……কাঁদতে কাঁদতেই বারবার বলছে,
“ও পঁচা….ও পঁচা…….”
“আব্বু…কাঁদে না এভাবে……”
সাদ বিরক্ত হয়ে চলে আসছিলো সেখান থেকে….
ওর মাকে বলা অরূপের কথা শোনে দাঁড়িয়ে যায়….
“ও তো পঁচাই আম্মু…..রিদি আন্টি নতুন বউয়ের কাছে গেলে আবার মারবে নতুন বউকে…..আবার ব্যথা দিবে……..”
ফিরে আসে সাদ,মনে প্রশ্ন জেগে উঠেছে ‘আবার’ কেন বললো ছেলে???
শান্ত গলায় প্রশ্ন করে অরূপকে,
“আবার কেন মারবে???তোমার রিদি আন্টি কেনো মারতে যাবে???”
সাদ সহজে রাগ করে না কিন্তু নিজের ছোট্ট ছেলে যদি তারই আন্টির গায়ে হাত তুলে তাহলে যে কোনো বাবার একটু রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক।
অরূপ বাবার কাছে বকা খেয়েছে তাই এখন আর ওনার সাথে কথা বলবে না কিছুক্ষণ।😂
জেদ একদম সাদাদের মতোই😂😂
……..
অরূপ মায়ের কোলেই আছে…..কাঁদছে না আর…কাঁধে মাথা রেখে মায়ের শাড়ির পুতি ধরে খেলছে……
ছেলের অবস্থা দেখে সাদ মুঁচকি হেঁসে বললো,
“আব্বাজান,বকলে কথা বলতে হয় নাকি!!!আব্বু তো বকতেই পারে…….”
কাঁধ থেকে মুখ তুলে সাদের দিকে তাঁকিয়ে উত্তর ছুড়ে দিলো অরূপ,
“আমি তো কত্ত বড় হয়ে গেছি তবুও বকো……আম্মু তো রোজই বকে…..আর এখন তুমিও বকো………”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রাফসা,পিচ্চি ছেলে ওর কোলে থেকেই ওর নামে নিজের বাবার কাছে নালিশ করছে,
“এই তোকে রোজ বকি তাই না???আদর করি না……”
“বকোই তো,খাওয়ার জন্য বকো….জোর করে সাওয়ার করাও…..পড়া না পাড়লে বকো…..”
“দেখেছিস তোর মা তোকে কত বকা দেয় তবুও তুই তোর মায়ের কোলেই আছিস,আর আমি তো খালি আজকে বকা দিলাম তাতেই এতো!!!আয় আমার কাছে………”
অরূপ দু হাত বাড়িয়ে দেয় ওর বাবার দিকে,কান্ড দেখে হাঁসতে শুরু করে রাফসা।
“আইসক্রিম খাবো আব্বু……”
“ও এজন্যই এতো কাহিনী করে কোল চেন্জ করা হলো….”
মায়ের কথার দাম না দিয়ে আবারও বাবার কাছে আবদার করলো,
“আব্বু,খাবো……”
“আচ্ছা খেয়ো…….এখন বলো তো,তুমি তো তোমার আম্মুকে বলছিলে কি জেনো বলছিলে???”
“কি??”
“ঐ যে তোমার রিদি আন্টি নাকি তোমার নতুন বউকে ব্যাথা দিবে আবার কেন বললো??”
“হুম….দিবেই তো……আন্টি সকালে কনুই দিয়ে এম্নে করে(ওর বাবার বুকে আস্তে করে কনুই মেরে দেখিয়ে দিলো) কড়াইয়ের তেল ফেলে দিয়েছি আমি দেখেছি…….আর তখনি তো নতুন বউ ফ্লোরে বসে পড়লো……..তখন পরে কড়াইটাও ফেলে দিয়েছে,চুলার পাশে একটা বাটি ছিলো সেটাও নতুন বউয়ের পায়ে ফেলে দিয়েছে তার উপরে যখন কড়াই পড়েছে বাটি টা ভেঙে গেছে পায়ের উপরেই………কি রক্ত বের হয়েছিলো জানো আব্বু…..”
রাফসা খেয়াল করলো কথাগুলো বলার সময় অরূপ কেমন একটা কাঁপছে……সাদ তো অবাক এসব শোনে….সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার…..কিন্তু রাফসার যা বুঝার সে সব বুঝে গেছে এতক্ষণে…..
সে ও যে এমন একটা কিছু সন্দেহ করছিলো………………….
“আব্বু,রিদি আন্টি না ইচ্ছা করে ফেলে নি……তোমার আন্টিও কাজ করতে গিয়েছিলো তখন হাত লেগে পড়ে গিয়েছিলো…….”
“না আম্মু…..আমি দেখেছি তো……”
“হ্যাঁ তুমি দেখেছো কিন্তু সেটা তো ইচ্ছাকৃত হয় নি…..একটা দুর্ঘটনা সেটা……”
“দুর্ঘটনা???”
“মানে একসিডেন্ট আর কি…..”
“ও…..তাহলে নতুন বউ যখন চিৎকার করলো তাহলে রিদি আন্টি হাঁসলো কেন??আমি যখন মারুফ(পাশের বাসার পিচ্চি)কে মারি তখন আমিও তো হাঁসি…..আর ও যখন আমাকে মাথা ফাটিয়ে দিলো সেদিন আমি কান্না করছিলাম আর ও হাঁসছিলো……..”
“আব্বু……মারুফ তোমার সেম এইজ….তোমাদের ব্যাপার টা আলাদা….তোমরা দুই ফেন্ডস…খেলতে খেলতে কত কি হয়….আর তুমিই বলো তুমি তো মারুফকে ছাড়া থাকতেই পারো না কত লাভ করো ওকে….ওর বার্থ ডে তে কত্ত সুন্দর গিফট দাও……ও তো কত কি দেয়……….তাহলে একটু ব্যাথা দিলেই সে কি পঁচা হয়ে যায়??যদি হতো তাহলে তুমি তো মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পরের দিন ওর সাথে খেলতে যেতে না….আর সে ও তোমাকে সরি বলে তোমার জন্য চকলেট আনতো না……”
“তাহলে রিদি আন্টিও কি এখন নতুন বউকে চকলেট দিয়ে সরি বলবে???”
“হ্যাঁ সোনা বলবে…..আর তুমিও তো রিদি আন্টিকে খাঁমচি দিয়েছো,ব্যাথা দিয়েছো তাহলে তোমার কি করা উচিত বলো তো??”
“তাহলে আমিও সরি বলে দিবো…..কিন্তু চকলেট দিবো না আন্টি তো বড়……তাই…..”
রাফসা হেঁসে দিয়ে বলছে,
“আচ্ছা তোর চকলেট দিতে হবে না…..শুধু সরি বললেই হবে……”
“ওকে……ও আব্বু এখন আইসক্রিম খাবো…….চলো না আব্বু……”
“চলো যাই……..”
“সাদ,সন্ধ্যা হয়ে গেছে….তুমি ওর কথায় সায় দিচ্ছো এখন?”
“আমার বাবা আমি যা খুশি খাওয়াবো তাতে তোমার কি???তাই না ফাদার…..”
অরূপ মুখে আঙ্গুল ডুকিয়ে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললো,
“হুম….হুম……”
“আচ্ছা!!!বাবা ছেলে মিলে এখন এগুলো করবে তাই না….ঠান্ডা লাগুক তারপর দেখবো কার কি হয়…….”
“আব্বু চলো…….খাবো তো…..”
“হ্যাঁ…..এই তো……..”
“বাবা,বেশি খেও না কিন্তু…..পরে গলা ব্যাথা হবে….”
“নো টেনশন আমি আছি তো….”
“আচ্ছা…তাড়াতাড়ি এসো….আমি ডাক্টরের সাথে কথা বলে সবাইকে নিয়ে বের হচ্ছি……..”
“হুম….যাও…..”
“বাই বাই আম্মু…….”
“বাই বাই সোনা……দুষ্টুমি করবে না একদম…..”
“হি হি হি হি হি হি হি হি…….”
.
রাফসার ডাক্তারের সাথে কথা বলা শেষ হলে সবাই বাসায় চলে আসে।
সাদাদকে ফ্রেস হওয়ার জন্য জোর করে বাসায় আসতে বলা হলেও কারও কোনো কথা শোনে নি সাদাদ।ঠাঁই বসে রয়েছে।দুপুরে নৌশিনের বায়নার অল্প ভাত ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কিছু খায় নি বেচারা।
.
শুয়ে আছে নৌশিন….একটু আগে সাদাদ ড্রেস চেন্জ করিয়ে দিয়েছে।
খুব জ্বলছে পা টা।আর কাঁটা অংশটুকু ব্যাথা করছে খুব।
নড়াতে পারছে না একটুও।
উঠতে চাইলে সাদাদ ধরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো…..
“খারাপ লাগছে খুব,তাই না???”
মাথা নেড়ে না জানালো নৌশিন……..
“মিথ্যা কেন বলছো?আমি কি বুঝি না…… ”
“অল্প তো……”
জড়িয়ে ধরলো সাদাদ নৌশিনকে।চোখ দিয়ে পানিও গড়িয়ে পড়ছে…….
“এই…..কাঁদছো কেন তুমি??ঠিক হয়ে যাবে তো…..দেখো বেশি দিন লাগবে না তোমাকে আগের মতোই জ্বালাবো……”
“কতটা কষ্ট হচ্ছে…….আসলে কি বলো তো আমার এখন মনে হয়,’আমি তোমার খেয়াল রাখতে পারি না’…..”
আর কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের মুখে আগলে ধরে আঙ্গুল দিয়ে……
“একদম না….এটা একটা এক্সিডেন্ট….তোমার এখানে করার কিছু নেই….আর আমি কত ভাগ্যবতী যে তোমার মতো স্বামী পেয়েছি…না হলে কটা মেয়ে আছে যার হাজবেন্ড তাদের অসুস্থতার সময় এতো সেবা করে……!!!”
“তুমি কিন্তু একদম মোড অফ করে থাকবে না……কখন কি কষ্ট হচ্ছে সেটা সাথে সাথে আমাকে জানাবে…….ডক্টর নার্স তো আছেই…….”
“বলবো তো……খেয়েছো কিছু???আর আমি সকাল থেকেই দেখছি একটা শার্ট পরে আছো চেন্জ করো নি কেন??”
“করবো……..তুমি রেস্ট করো…..”
“হুম….পা টা ফেলতেই তো পারছি না……দেখেছো তোমার মনের আশা পূরণ হলো…..”
“মানে????”
“তুমি না ঐ বললে আমার কমড় ভাঙলে ভালো হতো….যেন আমার সব কাজ তুমি করে দিতে পারো সেজন্য আজ পায়ের এই অবস্থা হলো যাতে করে শাস্তি পাও তুমি…..হা হা হা…..”
“চুপ….একদম চুপ….আমি তো এমনিতেই তোর সব কাজের ভার নিতে চাই…….তোর কষ্ট আমার পোষায় না….একদম না……..”
নৌশিন সাদাদের কপালে পড়ে থাকে চুলগুলোতে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
“ভালোবাসি……..”
মুঁচকি হাঁসেসে সাদাদ…..”ভালোবাসি না শুধু অনেক ভালোবাসি……”
“হুম…..আমি জানি তো…..”
“আচ্ছা!!!”
“হুম…..আচ্ছা রাতে তো পেসেন্টের বাড়ির কাউকে কেবিনে এলাও করে না….তাহলে তুমি কি করে আছো???”
“একা থাকবে তুমি??পাগল আমি!!!!আমার পক্ষে সম্ভব না…..আর বাসার সবাই এসে দেখে গেছে তোমার সন্ধ্যার একটু আগে……মা তো কোনো মতেই যেতে চায় নি…..থাকবে নাকি ওনি….অবশেষে কাল সকালের দোহাই দিয়ে বাসায় পাঠিয়েছি………আর ভাবী বলে দেওয়ায় আমাকে এখানে সব সময় এলাও করা হয়েছে….”
“কি বলো??সবাই এসেছিলো….”
“হ্যাঁ তুমি ঘুমাচ্ছিলে……..তাই আর ডাকে নি কেউ……..”
একজন নার্স ঘরে ডুকে…….
“স্যার আপনাকে এখন একটু বাইরে যেতে হবে……”
“কেন???”
“ম্যাডামের পায়ের ড্রেসিং করানো হবে এখন তাই……স্যার ড্রেসিং করানোর সময় অন্য লোক এলাও করেন না……”
নৌশিনের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।সাদাদ উঠে বাইরে চলে যেতে চাইলে হাত ধরে ফেলে নৌশিন,
করুণসুরে বলে,
“না যাবে না ও……সাদাদ তুমি যাবে না প্লিজ….আমার ভয় করছে…….”
“এই পাগলী ভয়ের কিচ্ছু নেই….আর আমি তো দরজার বাইরেই আছি…….তা ছাড়া আমার শরীরে কত রকম জীবাণু পাওয়া যাবে সেজন্য ড্রেসিং এরসময় সমস্যা হবে…..”
“না প্লিজ যেও না……..”
“হেয়….কাঁদছো কেন??ওকে যাচ্ছি না…..চুপ……”
নৌশিনের চোখ মুছে দিলো সাদাদ……….বের হলো না আর কেবিন থেকে।
নার্স বলে উঠলো,
“স্যার এটা নিয়ম তো…….”
“আমি দেখে নিচ্ছি সেটা……আপনার কোনো প্রবলেম হবে না,নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন…….”
.
ডাক্তার এসে সাদাদকে দেখে বাইরে যাওয়ার কথা বলেন,
“যা বাইরে এখন…….ভাবীর ডেসিং করবো এখন…….”
সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের ধরে থাকা হাতটা শক্ত করে খামচে ধরে বললো,
“না ও থাকবে……..”
“ভাবী,আপনি ভয় কেন পাচ্ছেন…..ভয় পাওয়ার কিছু নেই….আমি খুব ইজিলি কাজটা করবো…..আর বন্ধুর বউকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়ার কোনো ইনটেনশন নেই আমার…….এগুলো কাজে বাইরের লোক না থাকাই ভালো……”
নৌশিন সাদাদের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে,বুঝতে পারছে সাদাদ নৌশিন কি চায়,
“আচ্ছা,দোস্ত….কর না রে ভাই….আমি থাকি কোনো প্রবলেম হবে না আমার….তুই তো এজন্য বলছিস যেন ডেসিং দেখে আনএজি ফিল না হয়!!আর ওর করা হবে ওর কেমন লাগবে!!….”
“ওকে থাক তাহলে……..”
ডাক্তার ডেসিং করার জন্য তৈরী হয়ে যায়।ডেসিল এর আসল কাজ মূলত পরিষ্কার করা যেন জীবাণু না থাকে আর এ জন্যই ডেসিং করার সময় অবসাধকরণ কোনো ইনজেকশন দেওয়া হয় না শরীরে,যেটা সেলাইয়ের সময় দেওয়া হয়। তাই ডেসিং করলে জীবাণুনাশক আর ঘষাঘষার ক্রিয়ার জীবন যায় অবস্থা হয়ে যায়।
আর এর উপর নৌশিনের পায়ের যা অবস্থা….ডেটল/সেভলন পুরার উপর পরলে তবু কথা হা করে কেটে যাওয়া জায়গাও আছে।
“উহু……উহু…..উহুহুহুহুহুহুহুহু……”
কষ্ট হচ্ছে নৌশিনের…..জ্বলে যাচ্ছে পা টা……ডাক্তার খুব ভালো করেই কাজ টা করছে…….সাদাদ হাত যতটা সম্ভব জোরে চেপে ধরে,চোখ বেটে,ঠোঁটে ঠোঁট চেপে সহ্য করছে নৌশিন তবুও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে আর মুখ দিয়ে অনায়াসেই কাতর আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।
সাদাদ জাস্ট নিতে পারছে না এসব……মনে তো হচ্ছে ওর বুকে কেউ ডেসিং করে দিচ্ছে।
তবুও নৌশিনকে জোর দেওয়ার জন্য নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্ঠা করছে।
ডেসিং শেষে চলে যায় নার্স।ডাক্তার টা সাদাদকে ঔষধের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে নৌশিনের সাথে কথা বলে বেরিয়ে যায়।পরিচিত হলে যা হয় আর কি!!
.
সাদাদ নৌশিনের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মুখটা শুকিয়ে গেছে একদম মেয়েটার।চোখের নিচে এই কয়েকঘন্টার ব্যবধানেই কালি পড়ে গেছে।আল্লাহ যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ করে এই আশায় করছে সাদাদ।
চোখের কোণা বেয়ে এখনো পানি আসছে নৌশিনের।আসবেই তো জ্বলছে যে😞😞.
সাদাদ চোখের পানি মুছে দিয়ে,কপালে ভালোবাসার উষ্মতা দিয়ে দিলো।
“জান কেঁদো না,তুমিই তো বলো উপরওয়ালা ঠিক করে দেয় সবকিছু…..তাই না??”
নৌশিন এমন কথায় আবারও ডুকরে কেঁদে উঠে,”জ্বলছে খুব…..”
আসলে কি অনেক কষ্টের সময় যদি নিজের সব চেয়ে আপন মানুষটা সামনে বসে সাত্বনা দেয়,তখন মনে হয় ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলে বোধহয় সব কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে।নৌশিনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর সাদাদ নৌশিনকে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর ডেকে খাবার আর ঔষধ টা খায়িয়ে দিবে।আপাতত জ্বলা টা কমুক।জেগে থাকলে জ্বালা টা নিতে কষ্ট হবে খুব।
সাদাদ এই ফাঁকে এশার নামায আদায় করতে বসে যায়।কেবিনের ভেতরেই পড়বে,বাইরে যেতে চায় না নৌশিনকে ছেড়ে।
.
সাদাদদের বাসায়,
সবাই একসাথে ডিনার করছে,কারও মুখে কোনো কথা নেই।বাসার প্রাণ টাই যেন হারিয়ে গেছে কোথাও।
“রাফসা মা,কি অবস্থা ঐদিক কার??”
“বাবা,আমি ফোন করছিলাম মিনিট পাঁচেক আগে…..ডেসিং করে গেছে ডক্টর……”
“ও…..কি অবস্থা যে মেয়েটার…..আচ্ছা ওর মা-বাবাকে জানানো হয়েছে??”
“না বাবা,কি করে বলবো সেটাই বুঝতে পারছি না…..যে মেয়েকে এতো যত্নে মানুষ করেছেন ওনারা ঐ মেয়ে কি না আমাদের বাড়িতে এসে এই অবস্থা!!!”
দীর্ঘশ্বাস ফললেন সাদাদের বাবা।
“এতে ভয় পাওয়ার কি আছে??একটু দেখে শোনে কাজ করলেই হয়….আর তা ছাড়া কোন বাড়ির মেয়ে মা-বাবার বাড়িতে আদরে বড় হয় না….তাই আমার মনে হয় ওদের ফোন করে সবটা বলা উচিত……”
খাবার মুখে দিতে দিতে বললো রিদি।
রাফসার শরীর রাগে ফেটে যাচ্ছে।নেহাত শশুড়-শাশড়ী সামনে না হলে উল্টা পাল্টা কিছু বলে দিতো।তবুও রাগ চাঁপা দিয়ে বললো,
“দেখো রিদি,সবাই যে তাদের মেয়েকে আদরে মানুষ করে আমরা সবাই জানি,আর নৌশিন ওর বাড়ির কি সেটাও আমরা জানি,এই যে দেখো না আমাদের নিপা আর প্রাপ্তি….নিপার জন্য কিন্তু আমাদের এতো বেশি চিন্তা হয় না যতটা প্রাপ্তির জন্য হয়….নিপাকে একা ছেড়ে দিলে অনায়াসেই সে দুইশত দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশে ঠিক ফিরে আসতে পারবে…ব্যবসা আর ভ্রমণের কার্যকলাপে সে এখন দক্ষ একজন মানুষ….আর প্রাপ্তিকে একা যদি দশ নম্বর সেক্টরেও পাঠানো হয় না আমাদের বুক টা ধুক ধুক করতে থাকে…..আর সে জায়গায় নৌশিনও পড়ে….বাবা মায়ের আদর ছেড়ে জাস্ট কয়েক মাস হলো এ বাড়িতে এসেছে…তবুও বাপ-ভাইয়ের চোখে মনি সে….যেমন টা প্রাপ্তি ছোট বলে সাদ আর সাদাদের কাছে ঠিক ও তো বাড়ির ছোট মেয়ে তার উপর বংশের একমাত্র মেয়ে সে ওর ডিমান্ড টা ভাবতে পারছো তাহলে??”
কিছু বললো না রিদি চুপচাপ খেতে লাগলো।
সবার খাওয়া প্রায় শেষ।
খাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে চলে যাচ্ছে।সাদ,প্রাপ্তির বাবা আর রিদির খাওয়া এখনো শেষ হয়নি…..রাফসা কাকা শশুড়ে পাতে তরকারী উঠিয়ে দিতে গিয়ে বললো,
“রিদি তোমার কনুই এ কিসের দাগ গো এটা??আগে তো দেখে নি কোনো দিন……”
চমকে উঠে রিদি,মনে পড়ে সকালের কথা……যখন কড়াইয়ের তেল নৌশিনের উপর ফেলতে যায় কনুই দিয়ে কড়াইয়ে ঠেলা দেয় আর লোহার কড়াই আগুনে তপ্ত ছিলো খুব সেজন্য ওর কনুইয়ের ঐ জায়গাটুকুতে তখন ছেঁকা লেগে পুরে গেছে।
সেই দাগ টা নজর এড়ায় নি রাফসার…..এড়ানোর প্রশ্নই উঠে না,রাফসা তো আগে থেকেই রিদিকে সন্দেহ করছে আর ওনার ছেলে সেই সন্দেহ টা মিটিয়ে একদম ঠিকঠাক করে দিয়েছে………..!
রিদি পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“ও……এটা???”
“হ্যাঁ……”
“আসলে কি বলো তো ভাবী,সকালে যখন নৌশিনের এক্সিডেন্ট টা হলো আমি তো ছিলাম তখন তাই ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমারও একটু লেগে গিয়েছিলো এই জায়গাটুকুতে……”
“বাঁচাতে গিয়ে????”
“মানে কড়াই টা ফিরাতে গিয়ে আর কি!!……….”
“ও আচ্ছা…….বার্নাল লাগিয়ে নিও ঠিক হয়ে যাবে……..”
“হ্যাঁ সিউর………..”
.
রাফসা সবার খাওয়া শেষ হলে সব কিছু গুছিয়ে রেখে রোমে চলে যায়।সাদ লেপটপে কাজ করেছে আর অরূপ ঘুমাচ্ছে…..
রাফসা ওয়াশরোম থেকে এসে সাদ কে উদ্দশ্য করে বললো,
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো???এখন বলবো নাকি ইম্পরটেন্ট কোনো কাজ করছো???”
“না না তেমন ইম্পরটেন্ট কিছু না……বলো কি বলবে??”
“রিদি তো সাদাদের সম বয়সী তাই না??”
“হ্যাঁ……তো??”
“তো মানে???একটা মেয়ের উনত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেছে ওর বিয়ের কথা কেউ ভাবছো না কেন???আর বয়স টা ফেক্ট না যদিও এর পরে অনেকের বিয়ে হয় এস্টাববিস হওয়ার জন্য কিন্তু রিদি তো এস্টাবলিস এলরেডি তাই না??কেরিয়ার গড়ে ফেলেছে….নিজের ভালো টাকা পয়সাও আছে,আল্লাহর রহমতে দেখতেও মাশাল্লাহ….আমার মনে হয় এবার ওর বিয়ে নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত……”
সাদ লেপটপ টা বন্ধ করে খাটের রেলিং এ মাথা রেখে বললো,
“হ্যাঁ ভাবা যায়……”
রাফসা সাদের এমন গাছাড়া উত্তরে একটু রেগে যায়….ধমকের সুরে বললো,
“আম সিরিয়াস সাদ…..”
হাঁসলো সাদ,”আচ্ছা ওকে ওকে…..কিন্তু ওর ও তো আলাদা কোনো বিষয় থাকতে পারে………”
“আলাদা বিষয় মানে???”
“আলাদা বিষয় বলতে যদি কাউকে লাইক করে থাকে…..”
“সেটা সম্ভব না……”
“ঠিক বুঝলাম না……”
“না কিছু না…….”
বিছানায় বসে চুল বাঁধতে বাঁধতে বললো রাফসা।
সাদ টান দিয়ে রাফসাকে নিজের বুকে ফেলে দিলো,
“আরে,চুল বাঁধছিলাম তো…..”
সাদ রাফসার চোখে চোখ রেখে বলছে,
“কি লুকাচ্ছো আমার থেকে??”
রাফসা চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
“কি লুকাবো??”
“রিদির ব্যাপারে……আমার তো মনে হচ্ছে তুমি রিদি আর নৌশিনের সর্ম্পকে এমন কিছু জানো যা আমি জানি না……নৌশিনের মতো মেয়েকে রিদি কেন এতটা কষ্ট দিবে???”
“সাদ,তুমিও না…..তোমার ছেলের কথা ধরে বসে আছো….রিদি কেন নৌশিনকে ব্যাথা দিতে যাবে…….”
“কি লুকাচ্ছো রাফসা…..তোমার ছেলেকে তুমি ভদ্রতার শেখানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ঘটনাকে ওর মতো করে বুঝাতে পারলেও আমাকে কিন্তু পারবে না……”
“দেখি ছাড়ো,চুল বাঁধবো……”
“সেটা পরেও করা যাবে,আমি করে দিবো…..আগে তুমি আমায় এটা বলো,রিদির কি সম্ভব না??আর আমি কেন বাসার সবাই খেয়াল করে রিদি নৌশিনের সাথে এডজাস্ট না….”
“রিদি তো সবার সাথে এডজাস্ট হতে পারে না তাই হয়তো…..দেখো না সব সার্ভেন্টদের সাথে কেমন একটা করে….সব সময় রাগারাগী……..”
“নৌশিন কিন্তু এ বাসার সার্ভেন্ট না….তাই সার্ভেন্ট আর নৌশিনের মধ্যে ব্যাপার টা এক না……তাছাড়া নৌশিন রিদির চেয়ে বেশ কয়েক বছরের ছোট……এজন্য যে কেউ ই রিদির কাছে নৌশিনের জন্য ভালো কিছু আশা করবে……এখন তুমি আমায় এটা ক্লিয়ার করো কি জানো তুমি??”
“সাদ,প্লিজ…..”
“ওকে আমি বলছি প্লিজ…..প্লিজ বলো…..প্লি….”
রাফসা সাদের মুখের উপর হাত দিয়ে আটকে দিলো,
বুকে মাথা রেখে সাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“প্লিজ কেনো বলছো আমায়??আদেশ করো……আমি তোমার মুখে প্লিজ শুনতে চাই না…..কতবার বলবল এ কথা….”
সাদ রাফসাকে আগলে নিয়ে বললো,
“তাহলে কেন বলছো না আমায়???আমার তো এটা মনে হয় না রিদির অসাবধানতার কারণে ঘটনা টা হয়েছে…..রিদি তল ভুলেও চুলার আশ পাশ যায় না যে পরিমাণ স্কিন কেয়ার করে ও…..আর যদি এমন হতো তাহলে আমাদের ছেলে তো বললো ‘ও হাসছিলো’…..আর ছেলেকে তুমি যেভাবে মানুষ করেছো ও ফেন্ডসদের সাথে দুষ্টুমি মারামারি যাই করুক কখনও বড়দের সাথে বেয়াদবি করে না,আর আজ?সারা মুখ গলায় খামচি?তারপর বেশ কয়েকটা থাপ্পরও দিলো…..আমি আর কাকা তো অবাক….কাকা বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না অরূপের এই রূপটা……..”
“আসলে………”
“হুম বলো……”
“রিদি নৌশিনকে নিতে পারে না……”
“সেটা আমার কাছেও ক্লিয়ার…..কারণ টা বলো….”
“সাদ……”
“আমার কাছে কোনো কিছু লুকাও নি তুমি এই সাত বছরে….আশা করছি আজও লুকাবে না-যেখানে আমি নিজে কিছু জানতে চাইছি…..”
কিছুক্ষণ নীরব থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে রাফসা,
“রিদি ইচ্ছা করেই নৌশিনের সাথে এমন টা করেছে আজ….আর মনে আছে তোমার নৌশিন যে অন্ধকারে থাকার কারণে কতবড় সমস্যায় পড়েছিলো নৌশিন!!সে দিন তুমি প্রশ্ন করেছিলে যে সব ঠিক করার পরও লাইট কি করে নিভে যেতে পারে…….উত্তর টা আমি সাদাদের কাছ থেকে পেয়ে ছিলাম,রিদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সে কাজ টাও করেছিলো……”
সোজা হয়ে বসে সাদ,
“মানে???”
“হ্যাঁ….রিদি সঙ্গানে সাদাদের রোমের সব লাইটিং কানেকশন কেটে দিয়েছিলো যার কারণে এসি চলছিলো সে দিন কিন্তু একটা বাল্বও জ্বলছিলো না….আর শুধু তাই না কাজটা করার পর নৌশিনকে নিয়ে যখন হাসপাতাল থেকে বাসায় আসা হলো সাদাদ ওদের রোমের বারান্দায় রিদির নিজের হাতের লেখা একটা চিরকুট পায়….যেখানে রিদি নিজের কাজের স্বীকারউক্ত দিয়ে নিজের মহাসুখ প্রকাশ করে……..”
সাদ অবাক না হয়ে পারছে না,যে রিদিকে এতো কাছ থেকে এতো দিন ধরে চিনে সে এমন কোনো কাজ করতে পারে!!মাথায় ধরছে না সাদের………………….
“আর এসব কিছুর মূলে হলো ‘সাদাদ’……..”
কথাটা শোনা মাত্রই বিশাল একটা শকড খায় সাদ……
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প্রশ্ন করে রাফসাকে,
“কি বলছো তুমি??”
“হ্যাঁ….আমি একদম ঠিক বলছি……রিদি সাদাদকে ভালোবাসে…..”
চমকে উঠে সাদ,”ওয়াট?????”
“অবাক হচ্ছো তো….আমিও হয়েছিলাম….তবে আমার অনেক আগে থেকেই রিদির ব্যাপার টা ভালো লাগতো না…. সব সময় সাদাদের সামনে নিজেকে তুলপ ধরা….সাদাদের গা ঘেষে চলা,প্রথম প্রথম আমি এটা ভেবেছিলাম যে দুজন সমবয়সী তাই হয়তো এত কাছাকাছি……কিন্তু এক সময় বুঝলাম যে না ওদের সর্ম্পকটা একপাক্ষিক মানে আমি কোনো দিন এটা দেখি নি যে সাদাদ ইচ্ছে করে রিদির সাথে কথা বলছে বা ওর পাশে বসছে ইভেন সাদাদ তো সব সময় রিদির থেকে দূরে থাকার চেষ্ঠা করে…..তখন আমার মনে হয়েছিলো নিশ্চয় রিদি আর সাদাদের মধ্যে কোনো গন্ডগোল আছে……..আর যেদিন নৌশিনের বাড়ি থেকে লোক আসে ওদের বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে ঐ দিন তো রিদির মুখ টা দেখার যোগ্য ছিলোই না…..বিয়ের দিনও সবার সামনে ভালো থাকার চেষ্ঠা করলেও পারে নি….আর তারপর থেকে তো জানোই নৌশিনকে একদম নিতে পারে না…..আমি এসব আগে থেকে সন্দেহ করলেও ঠিকঠাক কিছু জানতাম না,ওদের বিয়ের পর জেনেছি….যখন রিদি বার বার সাদাদকে কাছে পাওয়ার চেষ্ঠা করতো আর সাদাদ সব সময় বাঁধা দিতো আগের মতো করেই কিন্তু রিদি বোকার মতো নৌশিনের ক্ষতি করার জন্য লেগে পড়লো,ও জানতো অন্ধকারে নৌশিনের কত কষ্ট হয় আর এতে এধরনের রোগীর বিশাল বড় বিপদ হতে পারে জেনে শোনে এই কাজ করেছে ও……..”
“আমার তো মাথা কাজ করছে না…….তুমি আগে কেনো বলো নি??”
“কি বলতাম??তোমার বোনের ননদ তোমার ভাইয়ের সাথে প্রেম করতে চায় সেটা বলতাম???যেখানে তোমার ভাই ভালোবাসে অন্য জনকে….আর তারর উপর সাদাদ এখন ওর ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করেছে…..রিদি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না………….ওর তো বুঝা উচিত,’ভালোবাসা একজনে হয় না’……আর আমার মনে হয় কি বলো তো!!!রিদি ভালোই বাসে না সাদাদকে,এটা সাদাদের প্রতি ওর একটা মৌহ…..মিথ্যা জেদ,কোনো দিন কোনো কিছুতে হার মানে নি তো তাই এই আবেগের কাছেও ও হারতে চাইছে না,না হলে নৌশিনের মতো অল্প বয়সী একটা মেয়ের সাথে ও কখনো এমন করতে পারতো না……..”
সাদ কিছু বলবে,তার আগেই ওদের মহারাজা মানে অরূপ কাঁশতে শুরু করে ঘুমের মধ্যে…………
“কি হলো এটার আবার???”
সাদের পাশ থেকে উঠে ছেলের কাছে যায় রাফসা…..এখনও কাঁশছে,এসি টা বন্ধ করে শরীরে কাঁথা দিতে যাবে…..গায়ে হাত লাগতেই গরম অনুভব করে,
কপালে হাত দিয়েই চমকে উঠে রাফসা……….”ও মা গো…….হায় আল্লাহ্…..”
রাফসার এমন বাক্যে সাদ সাদাদ আর রিদির চিন্তা ফেলে রাফসার দিকে তাঁকায়,
“কি হয়েছে???”
ছেলেকে কাঁথা মুরি দিয়ে,জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় রাফসা উত্তর দিলো,
“গা তো জ্বরে পুরে যাচ্ছে ছেলেটার…………….”
সাদ কপালে হাত দিয়ে দেখে এতো শুধু জ্বর না বিশাল পরিমাণ জ্বর………………….
রাফসা তাড়াতাড়ি ওঠে গিয়ে জলপট্টি দেওয়ার জন্য বাটিতে করে পানি আর রুমাল নিয়ে আসে………..
ছেলের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করে সাদকে,
“এই তুমি কয়টা আইসক্রিম খাইয়েছো ওকে???”
থতমত খেয়ে ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে সাদ………
রাফসা বিরক্ত নিয়ে বলা শুরু করে,
“কতদিন বলেছি,আইসক্রিম খাওয়ানোর কোনো দরকার নেই,খেলেই ঠান্ডা লাগে,গলা ব্যাথা শুরু হয়….আমার কোনো কথার তো দাম দাও না………..”
রুমাল দিয়ে ছেলের মুখ মুছে দিচ্ছে আর বলছে,
“ইশশশশশ কি জ্বর টাই না উঠেছে বাবা টার………”
এমন সময় কাঁশতে কাঁশতে উঠে বসে অরূপ,কাঁথা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরে রাফসা…..এই মুহুর্তে সাদাদ,রিদি,নৌশিন কারও কথার সামন্য সময় নেই রাফসার কাছে…………
মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমস্বরে অরূপের বক্তব্য,
“আম্মু শীত করে……………..”
!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
.
চলবে..