#প্রেমঘোর
#পর্ব_৭৬_৭৭
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সাদাদ রিদিকে ছাড়ানোর চেষ্ঠা করছে কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।রিদি আরও জোরে জড়িয়ে ধরছে।
সাদাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“রিদি,ছাড়ো বেশি হচ্ছে কিন্তু…..”
সাদাদ বুকে মাথা ঘেষে আরও শক্ত ভাবে চেপে ধরে বললো,
“না,আই লাভ ইউ জান…..”
সাদাদের রাগ এবার চরম পর্যায়ে উঠে যায়,সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় রিদিকে।
খেয়াল করে রিদির দিকে তখন তো সেজেই ছিলো আর এখন শর্ট একটা টপ আর স্কিন এজাস্ট হোয়াট পেন্ট পড়েছে।যেগুলো সাদাদ একদম পছন্দ করে না।তবে, রিদি সব সময় সাদাদকে নিজের কাছে টানতে এসব পড়ে থাকে।
কিন্তু সাদাদের যে শাড়ি পরিহিতা নৌশিনকে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর লাগে।
“কি দেখছো???”
“তুমি এখানে কেনো??যাও আমার রোম থেকে……”
“ওহ….সাদাদ প্লিজ…..আজ তো নৌশিন নেই….আমার থাকতে কি প্রবলেম বলো….”
“রিদি,মাথা গরম করো না আমার।।।।যাও বলছি…..তুমি কি সোজা কথা বুঝতে পারো না??নাকি বুঝতে চাও না??”
“সাদাদ দেখো না,কেমন দেখাচ্ছে আমায়??”
“রিদি…..আই সে জাস্ট আউট ফ্রম মাই রোম….”
রিদি আবারও সাদাদকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে আসলে,সাদাদ নিজের রাগ সামলাতে না পেরে রিদির গালে অনেক জোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
পরমুহুর্তেই রিদি নিজের গালে হাত দিয়ে আবারও সাদাদের কাছে আসে।অন্য কোনো মেয়ে হলে এত জোড়ে একটা থাপ্পর খাওয়ার ফলে কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যেতো।রিদিরও ভেতর থেকে কান্না আসছে,তবুও কাঁদলো না….সাদাদের থাপ্পরের মাঝে হলেও সাদাদের স্পর্শ অনুভব করতে চায় ও।
সাদাদের চোখে চোখ রাখলো রিদি।সাদাদ কি করবে??একটা মেয়েকে এতো করে অপমান করার পর আজ এতো জোরে আঘাতও করলো…আর কিভাবে একজন মেয়ের মাথা থেকে এসব ভুত সরানো যায় সাদাদের জানা নেই।
“দেখো রিদি,তোমাকে ভালো ভাবে বলছি,সরে যাও আমার জীবন থেকে…..আমার জীবনে তোমার কোনো জায়গা নেই….আর তুমি খুব ভালো ভাবে জানো নৌশিন আমার সব…….”
“সাদাদ প্লিজ,নৌশিনের নাম টা আজ নিও না…..”
সাদাদের ঘাড়ে একটা হাত রেখে অনেকটা কাছে এসে বললো,
“আজ শুধু তুমি আর আমি…..”
সাদাদের অসহ্য লাগছে,মেয়েটা কি করে এতো বেহায়া হতে পারে।
রাগে চোখ বন্ধ করে রিদির সব কথা শোনছে সে।
“নৌশিন তো অসুস্থ সাদাদ,সুস্থ হতে মিনিয়াম দেড় মাস লাগবে…….এই কটা দিন আমি কি পেতে পারি না……শোনো না সাদাদ,তুমি এই দেড় মাস আমার সাথে স্টে করো দেখো নৌশিনের চেয়ে আমার সাথে বেশি সুখী হবে……..”
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে রিদির মতো মেয়ের সাথে কোনো দিন কমপেয়ার করতে চায় না।আর রিদির মুখে নৌশিনের নামও শোনতে বিষ মনে হয় সাদাদের কাছে।
“রিদি,নৌশিনের নাম তোমার মুখে এনো না…..নৌশিনের যোগ্য তুমি হও নি এখনও আর হবেও না কোনো দিন”
রিদির চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠে,সাদাদের থেকে একটু দূরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
“নোশিন!!!!কি আছে ওর মাঝে???যা আমার মাঝে নেই???”
“এনাফ রিদি,নৌশিনের মাঝে কি আছে মানে??কি বুঝাতে চাও তুমি??”
“দেখো সাদাদ,আমি মানছি নৌশিন সুন্দরী কিন্তু আমি কি কম সুন্দর???বরং নৌশিনের চেয়ে গায়ের রং আমার বেশি ফর্সা……দেন,তোমার বড় চুল লািক বেশি আমার না হয় নৌশিনের মতো এতো বড় গাইয়া চুল নেই…তাই বলে আমার চুল কোনো দিক থেকে কম না…….আর মোস্ট অফ অল লোক এট মি সাদাদ……”
সাদাদ অন্য দিকে তাঁকিয়ে আছে দেখে,রিদি সাদাদের মুখ ঘুরিয়ে নিজের দিকে তাঁক করায়…….”লোক এট মি সাদাদ………আমার ফিগার টা একবার দেখো……নৌশিনের ফিগার তো আমার তুলনায় কিচ্ছু না…….প্রেমাতাল গল্পে মৌরি আপু তো বলেছিলো’বাংলাদেশের সব ছেলে ছত্রিশ বডির ফিগার লাইক করে’আর তুমি কি যে আমি বুঝি না,নৌশিনের ফিগার বত্রিশ হবে বলে আমার মনে হয়……..কি পাও ওর মাঝে……..ওকে ডান সাদাদ,তুমি শুধু আজ রাত টা আমার সাথে স্টে করো দেখো,নৌশিনকে ভুলে যাবে একদম……আমিই তোমায় সব উজাড় করে দিবো সাদাদ,প্লিজ…..আমি আর পারছি না তোমাকে ছাড়া,মাছের যেমন অক্সিজেন দরকার আমারও যে তোমার স্পর্শ চাই সাদাদ…..ভালোবাসি তোমায় খুব……খুব……..(আবারও জড়িয়ে ধরলো সাদাদকে)…….তোমাকে ছাড়া আমার প্রতিটা দিন কত কষ্টে কাঁটে আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না……আই লাভ ইউ সাদাদ…..আই লাভ ইউ সো মাচ……তোমাকে ভাইয়ার বিয়েতে প্রথম দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে যাই আর আজও ভুলতে পারি নি…..তোমার নাম টা আমার মস্তিকে গেঁথে গেছে সাদাদ…..”
আর কিছু শোনতে পারছে না…মনে হচ্ছে কেউ কানে সিসা গলিয়ে ঢালছে।
এই ধরনের মন মানসিকতার মেয়ের সাথে আদৌ কি কোনো কথা বলা যায়!!!যে মেয়ে স্বইচ্ছায় কোনো ছেলের সাথে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেয়,তাঁকে কি মেয়ে বলে??নাকি নষ্টা মেয়ে বলে??
ভেবে পাচ্ছে না সাদাদ।
এধরনের খারাপ মানুষের সাথে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে।আর সে কি না সাদাদকে জড়িয়ে ধরছে,বুকে মাথা রেখেছে!!!!যেখানে তাঁর প্রবিত্র নৌশিন মাথা রাখে!!!!!
এই কথা টা ভাবতেই নৌশিনের ঘুমন্ত মুখ টা সাদাদের বুকের উপর রাখার দৃশ্য ভেসে উঠে..
সারা শরীরে শিহরণ দেয়….শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নষ্টা মন মানসিকতার রিদিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো।
তাল সামতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায় রিদি।
হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে দাড় করিয়ে নিলো সাদাদ।এতক্ষণ শুধু শোনে গেছে………এবার বলার পলা…..রোমে ধমকাধমকি করলে কেউ শোনতে পারে…….তাই টানতে টানতে ছেদে নিয়ে যায় রিদিকে…….এতক্ষণ একটা কথাও বলে নি রিদি…………
সাদাদ ধাক্কা দিয়ে ছাদের কর্ণারের দিকে নিয়ে গেলো রিদিকে………
বলা শুরু করলো সাদাদ,
“কি বলছিলি তুই???নৌশিনের ফিগার তাই না????তাহলে শোন তোর ঐ ছত্রিশ ইন্সি সস্তা ফিগারের চেয়ে আমার নৌশিনের বত্রিশ ইন্সি ফিগার আমাকে পাগল করে তুলে….ওর ঐ ফিগার দেখলে আমার মাথা ঘুরে যায়…..নেশা ধরে আমার ওর প্রবিত্র শরীরে….আরে তোর এই সস্তা শরীর তো তুই সারা বাড়ি,রাস্তা,স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি,অফিস সবাইকে দেখিয়ে বেরাস……বছরে একবার শাড়ি না পড়লেও ফ্লাগুনে মাথায় ফুল লাগিয় চুল ছেড়ে সাদা-লাল শাড়ি পড়ে ঘুরে বেরাস….শরীরের বড়াই করিস??রূপের বড়াই করিস??রাত কাটাতে চাস আমার সাথে????
তুই জানিস টানা চার টা বছর প্রেম করেছি আমার প্রাণ পাখির সাথে……..বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে মাত্র একদিন ওর চুল দেখেছিলাম….বিয়ে ঠিল হয়ে যাওয়ার পর যখন ভার্সিটি থেকে বাসায় ড্রপ করতাম নিজের ইচ্ছায় গাড়ির জানালা টা লাগিয়ে দিতো তারপর হিজাব খুলে চুল দেখাতো যেন আমি ছাড়া ঐ সৌন্দর্য কেউ না দেখে……কত ক্যান্টিনে বসে খেয়েছি ওর ফ্রেন্ডরা পর্যন্ত বলতো আমাকে খাইতে দিতে আমার হাতে খেতে সব সময় বলতো একাবরে বিয়ের পর…….নিজের ইচ্ছায় কখনও চার বছরের মাঝে একটা দিনও আমার হাত ধরে নি…আমাকেও ধরতে দেয় নি,একদিন ভার্সিটিতে অসুস্থ হয়ে গেলো ক্লাসে শুধু সেই দিন কোলে তুলে ছিলাম……নজর দেই নি ওর শরীরে…..ওর প্রবিত্র শরীরে চোখ লাগিয়ে অপবিত্র করতে চায় নি……ভার্সিটিতে মেয়েরা নানা রঙের শাড়ি পড়ে চুল ছেড়ে সেজেগুছে বেড়ায়…..কিন্তু আমার নৌশিন কখনও শাড়ি পড়ে নি…..দেখায় নি নিজের সৌন্দর্য খুলা মেলা ভাবে……..
রাত কাটাতে চাস আমার সাথে???আমার নৌশিনকে আমি অনেক আগেই আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে দিয়েছিলাম ঐ দিন….শাড়ি পড়তে পারতো না বন্ধুদের জোড়াজোড়িতে পড়েছিলো,সামান্য একটু পেট দেখা যসচ্ছিলো আমার কথায় ঠিক করতে গিয়ে আরও গোলিয়ে ফেলে,বিশ্বাস করেছিলো আমায় কিন্তু ছেলে আমি ভালোবাসার মানুষকে ঐ ভাবে দেখে লোভে পড়ে যাই….জৈবিকতা কাজ করে চাইলে পারতাম ঐ রাতে ওর সবটা নিজের করে নিতে…নৌশিনও পাড়তো কিন্তু ও শুধু এই জীবনে না পরকালেও আামাকে চায় তাই সে গভীর রাতেও আমার সাথে থেকেও নিজের সতত্বি বিলিয়ে দেয় নি বরং আমি কিস করেছিলাম বলে কান্না কাটি করেছিলো আর তখনি বাবা-মায়ের সামনে আমার স্ত্রর করে নিই ওকে……আর ছয় মাস পর ওর পরিবারের থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি…..শরীর মন দুটো জোরেই শুধু নৌশিন….ছয় মাসের যে কোনো দিনই ওর সাথে রাত কাটাতে পারতাম,বর ছিলাম ওর….কাটায় নি তবুও কেনো জানিস??ওর শরীর টাকে চায় না আমি মন চাই আমার…..আরে শরীর তো আল্লাহ্ সবাইকে দিয়েছে সেটা তো সব ছেয়েমেয়েরই জৈবিক চাহিদা থাকে তাই বলে তোর মতো নষ্টা গিরি কেউ করে না যারা করে তারা পতিতালয়ে যায়……এতোই যদি পরপুরুষকে সুখ দিতে ইচ্ছা করে তো যা না পাশেই তো পতিতালয় নাম লিখিয়ে আয়…..সুখ পাবি আর দিতেও পারবি……মন শরীর দুটোই শান্ত হবে তোর………”
দুকানে হাত দিয়ে চেপে ধরে রিদি,
“ব্যাস,সাদাদ…….ব্যাস….আর না…..আর না…..”
“এই সস্তা চেঁচাবি না একদম…..তোমাকে এতো দিন দেখতে ইচ্ছা করতো না আজ থেকে তোকে ঘৃণা করি আমি….নৌশিনের সাথে তুলনা করিস??নৌশিনের নখের যোগ্য কোনো দিন হতে পারবি না…..এখনও সময় আছে তওবা কর….আমার নৌশিন বলে ‘আল্লাহ্ সব ক্ষমাশীল’….আমিও তাই বিশ্বাস করি সময় আছে ভালো হয়ে যা…..এই শরীর,ক্লিভেজ মানুষকে না দেখিয়ে হাসবেন্ডের হক টা ঢেকে রাখ….সুখ টা হাসবেন্ডেকেই দিস……..”
চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে গিয়ে আবারও কি ভেবে রিদির সামনে এসে দাঁড়ায়,
“আর একটা কথা….বললি না দেড় মাস লাগবে নৌশিনের সুস্থ হতে…..দেড় মাস কেনো দেড় যুগও যদি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে তাহলেও আমি শুধু ওকেই ভালোবাসবো….ফিগার যদি শুকিয়ে আটাশও হয় ঐ ফিগারেই সব ভালোবাসা উজাড় করে দিবো…….পবিত্র ও,ভালোবাসতে জানে ও….আর শোন তুই তো এইগুলোই শোনতে চাস…স্বামী স্ত্রীর বিষয় আল্লাহ কাউকে বলতে না করছে তবুও শোন…
বললি না আমাকে নৌশিনের চেয়ে বেশি সুখ দিবি??পারবি না কোনো দিন পারবি না…..
বয়সে অনেক বড় ওর আমি,শারীরিক গঠনেও ওর চেয়ে স্ট্রং অনেক….যেদিন আমার কাছে নিজের সব টা বিলিয়ে দিয়েছিলো মেয়েটা,খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর এক সময় সহ্য করতে না পেরে কেঁদেও ফেলে তবুও সরিয়ে দেয় নি,ব্যাথাতেই সুখ করে নিয়েছিলো হারিয়ে গিয়েছিলো আমার সাথে……যেটা তুই কোনো দিন পারবি না!!!আরে আমার তল এটা মনে আমার যদি তোর হাসবেন্ড তোকে সে সুখ কোনো এক সময় দিতে না পারে তুই পরকীয়া করবি…আর আমার নৌশিন কখনো সেটা করবে না,যাকে একবার স্বামী বলে মেনেছে যার ভালোবাসায় সব বিলিয়ে দিয়েছে সে যদি আজ থেকে সেসব দেওয়ার ক্ষমতা হারায় তবু আমার পাশে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে……ছিঃ আর তার সাথে কি না তুই নিজের তুলনা করছিস…..আরে আমার নৌশিনের সম্মান নষ্ট হবে তুই যদি ওর নাম মুখে নিস…….”
নিজের মনের সমস্ত রাগ,ঘৃণা ফেলে চলে যাচ্ছিলো সাদাদ…
রিদি এসব কিছু শোনে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো,চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পরছিলো……..
সাদাদ ছাদের দরজা খুলার সময় পেছন থেকে বলে উঠলো,
“শেষ করে দিবো তোমার নৌশিনকে……..সরিয়ে দিবো তোমার জীবন থেকে……”
আবারও ফিরে আসে সাদাদ,
“ঠাসসসসসসসসস…..”
করে বসিয়ে দেয় আরও একটা………
সাদাদ কিছু বলার আগেই রিদি বলা শুরু করে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ মারো যত খুশি মারো,যত পারো অপমান করো তবুও তোমাকেই ভালোবাসি…..কেনো ভালোবাসো না আমায়….বাসো না একটু……আর যদি না বাসো তাহলে কাল তো শুধু পা পড়িয়ে সে পা আবার কাঁচ দিয়ে কেঁটেও দিয়েছি,এবার যখন কিছু করবো জাস্ট পুরো শেষ করে দিবে আমি ঐ মেয়েকে……অনেক সুখ পেয়েছে তোমার সাথে আর না…আর পেতে দিবো না….”
সাদাদ তো ভাবেই নি যে এই কাজ টা রিদি করছে।এতটাও খারাপ ভাবে নি সে রিদিকে।ছিঃ কোনো মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে একটা মেয়েকে এভাবে পুরাতে পারে….আর শুধু পুরায় ই নি কেঁটেও দিয়েছে……….
এতটা অমানুষ রিদি!!!ভাবেই পারছে না সাদাদ……
এবার ওকে থাপ্পর দিতেও সাদাদের ঘৃণা লাগছে,
রিদির মতো মেয়ের গায়ে আর নিজের হাত টাও ঠেকাতে চায় না সাদাদ।ইচ্ছে করছে,খুন করে ফেলে দিতে।যার জন্য নৌশিন এতটা কষ্ট পাচ্ছে….
“ছিঃ রিদি,আর কত নিচে মানবি তুই??আমি তো ভেবেছিলাম আমার নৌশিন কাজ কম করে তাই বেসামাল ভাবে এই ঘটনা টা ঘটে গেছে….আমারি ভুল ভাবা উচওত ছিলো ‘আমার নৌশিন সব কাজ দায়িত্ব নিয়ে করে’ ছিঃ…ইচ্ছা হচ্ছে তোকে খুন করে লাস টা শহরের মাঝ খানে ঝুলিয়ে দিই কিন্তু সেটাও আমি করবো না……কেনো জানিস???
তুই যে পাপ করেছিা না,তোকে খুন করলে সেগুলো দায়ভার পরকালে আমার উপর এসে পড়বে,আর আমি আমার নৌশিনকে হারিয়ে ফেলবো তখন তাই তোর মতো সস্তা মেয়েকে মারার কোনো সস্তা ইগোও আমার নেই……লজ্জা থাকা উচওত তোর……বুঝিস না কতটা ভালোবাসি আমার বউকে……ওর ভালোর জন্য সব করতে পারবো….আর দূরে সরাবি আমার থেকে নৌশিনকে….তার আগে এই বাড়ি থেকে তোকে কি করে বের করতে হয় সেটা তুই দেখতে থাক….ভাবতেই পারছি না তোর মতো কেউ নাকি ওয়ালিদ ভাইয়ার বোন!!!আমার বোনের ননদ……ছিঃ একটা পাপী তুই…..সময় থাকতে পাপ গুলো ঝরে ফেল….যদি পারিস আমার নৌশিনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস,আমার নৌশিন অনেক ক্ষমাশীল…..এক নিমিষেই তোকে ক্ষমা করে দিবে”
আর এক মুহুর্তও দাঁরালো না সাদাদ……ছাদের দরজাটা খুলতেই রিদি ছুটে এসে সাদাদের পা জড়িয়ে ধরলো,
কেঁদে দিয়ে বললো,
“প্লিজ সাদাদ,এমন করো না….তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না….বিশ্বাস করো নৌশিনের কোনো ক্ষতি আমি করতে চাই না কিন্তু তোমার কারণে যখন ওর মুখে হাঁসি দেখি সামতালে পারি না আমি নিজেকে…….হিংসা হয় খুব তখন পিচ্চি মেয়ে টাকেই…..আমার কি দোষ বলো??আমি অনেক চেষ্ঠা করেছি তোমাকে ভুলে থাকার কিন্তু পারি নি…….”
সাদাদ পা হুচট দিয়ে রিদির কাছ থেকে নিজের পা ছাড়িয়ে নিচে নামতে থাকে……..
আবারও সিড়ি এসে সিড়ি আগলে দাঁড়ায় রিদি,
“সাদাদ,প্লিজ….শোনো শোনো….আমি বাপ্পি আর মম কে বলবো,ভাইয়াকেও রাজি করাবো আমি জানি তোমার সম্পত্তি চাই না আমি তোমাকে দিবো না তোমার নিতেও হবে না….যা কিছু আছে সব নৌশিনের নামে লিখে দিবো….নৌশিন সারা জীবন পাড় করে দিবে অনায়াসেই কোনো কষ্ট হবে না ওর…..তুমি ওকে ডির্ভোস দিয়ে আমার কাছে আসো প্লিজ……..”
হাঁসলো সাদাদ…পাগল হয়ে গেছে বোধহয় সাদাদের শোকে……..”আরে রিদি প্লিজ হাঁসিয়ো না…..তুমি ভালো করেই জানো নৌশিনের বাবা ভাইয়ের যা আছে…তোমার বাবা আর আমার বাবার চার পুরুষের সম্পত্তি এক করলেও তার সমান হবে না…..আর সে নৌশিনকে তুমি টাকা দিয়ে সুখী করতে চাও!!!হাঁসালে…….সরো সামনে থেকে…..”
রিদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে,সাদাদ হাঁসতে হাঁসতে নিজের রোমে চলে গেলো।
দরজা লাগিয়ে লাগিয়ে লাইট অফ করে ফোন টা তে হাতে নিয়ে মায়ের নম্বরে কল করলো।
নৌশিনের খবর নিয়ে নিশ্চত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
আর রিদি সিড়িতে বসে পাগলের মতো কাঁদছে…….!
!
#প্রেমঘোর#৭৭#
💜💜
এর্লামেরর শব্দে ঘুম ভাঙে সাদাদের।নৌশিন থাকলে নৌশিন ডেকে দিতো কিন্তু নৌশিন তো হাসপাতালে।
তাই কাল রাত ঘুমানোর আগে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলো পাঁচ টার।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ৫.৩০।তার মানে আধা ঘন্টা ধরে ফোন বেজে চলেছে।তাহলে তাঁকে জাগাতে নৌশিনের কতটা কষ্ট হয়!!
ভাবতেই মুঁচকি হাঁসলো সাদাদ।
ফ্রেস হয়ে এসে নামায পড়ে,কুরআন শরীফ পড়লো কিছুক্ষণ।একজন সার্ভেন্ট এসে কফি দিয়ে গেলে,কফিট মগ হাতে নিয়ে মায়ের নম্বরে কল করলো।
ফোন ধরলো নৌশিন,
“আসসালামু আলাইকুম…..”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,উঠে গেছো???”
“হুম……আযানের সময়….কি করছো??”
“এই তো আমার জানের সাথে কথা বলছি…..পায়ে ব্যাথা আছে???”
“না তবে জ্বলে খুব…….”
“অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার আমি কিছুই করতে পারছি না…..”
“না,একদম বলবে না এগুলো……আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না…..তুমি পাশে থাকলে আমার কোনো কষ্ট নেই…….”
“থাক,আর লুকাতে হবে না….মা রা কোথায়??”
“দুই মা কে ই বাইরে পাঠিয়েছি……..”
“কেনো???”
“আমি পাঠায় নি,আমি শুধু বলেছি আমার ক্ষুদা লেগেছে দুজনই পাগলের মতো কোথায় গেলো আমাকে কিছুই বললো না………”
“ক্ষুদা লেগেছে তোমার ফল তো ছিলো সেখানে নৌশিন,মায়েরা কেটে দেয় নি???”
“আমার ভালো লাগে না সাদাদ……..আমাকে বাসায় নিয়ে যাও……”
“কিহ???”
“প্লিজ……”
“একটা থাপ্পর দিবো…..আমি তোমাকে খাবারের কথা বলেছি আর তুমি বাড়ি আসার কথা বলছো??”
“তো কি করবো!!!এখানে এভাবে আর কতদিন শুয়ে থাকবো?আজকে দিন পাড় হলে তিন দিন হবে…….ভালো লাগছে না আমার……..”
“আসছি আমি,ফোন রাখো….”
“না……খেয়ে তারপর আসো….”
“নৌশিন!!!!”
“……..”
“গ্রেপ ধুয়া আছে পাশে খাও…..ততক্ষণে আমি পৌঁছে যাবো……”
“……….”
“কি হলো????”
“কি???”
“আঙুর ধোঁয়া আছে খাও…….”
“ভালো লাগে না আমার এগুলো…..দুই মা তো গেছে নিশ্চয় কিছু ব্যবস্থা করবে সেগুলো খাবো…..”
“ওফফ….আপাতত তো সেগুলো খেতে পারিস….”
“……..”
“প্লিজ খাও…..”
“খাচ্ছি…..বাট তুমি বাসা থেকে খেয়ে তারপর আসবে কিন্তু….”
“ওকে…..রাজকন্যার মাম্মাম…..”
“ইশশশশ……”
“আহা রে…..”
“ধ্যাত……”
“আচ্ছা!!!রাখছি আর খেয়েই আসছি……”
“ওকে….ওমমমমম্মা……”
“লাইভে হবে ডারলিং…..”
টুট টুট টুট…..লজ্জা পেয়ে ফোন রেখে দিলো নৌশিন।
সাদাদ হেঁসে দিয়ে কফির মগ টা রেখে ফ্রেস হয়ে একবারে রেডি হয়ে নিলো।খাওয়ার জন্য নিচে নামতেই দেখলো,অরূপ শার্ট প্যান্ট পড়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পরিপাটি।সোফায় গালে হাত দিয়ে বসে অপেক্ষা করছে মনে হচ্ছে।
“কি আব্বাজান???স্কুলে যাও নি??”
রান্না ঘর থেকে রাফসা এগিয়ে এসে বললো,
“গেলো কই!!!নতুন বউয়ের কাছে যাবেন ওনি….তিন দিন মিস হলো স্কুল……”
“এই ব্যাপার!!!তাহলে মন খারাপ কেনো???”
“বকেছি একটু তাই…..বলছি বিকালে আমি যাবো….প্রাপ্তি এসে বললো ও যাচ্ছে তোর সাথে তাই সে ও পাগলে হয়ে লেগেছে যাবে…..”
“ওকে ডান,চাচ্চু….উঠো…..”
“……..”(আগের মতোই বসে আছে অরূপ)
“কি হলো যাচ্ছিস না কেনো??”(রাফসা)
“বকছো তো….বকা শেষ করো আগে,পড়ে যাই……”
“অরূপ!!!!!!বেশি কথা শিখে গেছো তাই না…….আদর খেয়ে খেয়ে নষ্ট হচ্ছো তুমি…”(রাফসা)
“ভাবী,বাদ দাও…… খাবার দাও আমাকে…..খেয়ে ওদের নিয়ে বের হবো…..”
“আয়…. দিচ্ছি……..এই মিতু দেখ তো তোর বড় ভাইজান আর প্রাপ্তি আপা কি করে,ডেকে আন ওদের……”
.
প্রাপ্তি আর অরূপকে নিয়ে সাদাদ হাসপাতালের উদ্দশ্যে রওনা হয়।
এদিকে নৌশিনেরর জন্য ওর মা আর শাশুড়ি মা ভাত,ডিম ভর্তা,সিম ভাজি,টমেটো ভর্তা,ধনে পাতা আর লেবু পাতা একসাথে ভর্তা করে নিয়ে এসেছে নৌশিনকে খাওয়ানোর জন্য।
নৌশিনের চোখ তো খুশিতে টলোমলো।ওর মাছ গোস্ত খেতে একদম বোরিং লাগে।
এটা দুই মা খুব ভালো করে জানেন….তাই তো হসপিটালের কিচেনে গিয়ে দুজনে মেয়ের জন্য নিজ হাতে এতো কিছু করেলেন যেন ভাত টা একটু বেশি খায়।
সাদাদের মা খাইয়ে দিচ্ছে নৌশিনকে।খুব তৃপ্তি করে গরম ভাত আর প্রিয় জিনিসগুলো খাচ্ছে নৌশিন।পাশে বসে ওর মা মেয়ের জন্য ফলমূল ধুয়ে কেটে রাখছেন।
“আর খাবো না মা…..”
“সেকি,বউমা……এতটুকু হলে হবে না মা….দু দিনের জ্বরে মুখ শুকিয়ে গেছে,এইটুকু ভাত না খেলে কি করে হয় বলো তো….দেখি হা করো…..”
কি আর করার জোর করে আরও অনেকগুলো ভাত খাইয়ে দিলো বেচারীকে।
সাদাদ,প্রাপ্তি,অরূপ সবাই একসাথে কেবিনে ডুকে।
সাদাদ এসে নৌশিনকে ঔষধ গুলো ঠিক ঠাক মতো খাইয়ে দিলো।
অরূপ তো নৌশিনকে পেয়ে সে কি আদর!!!জড়িয়ে ধরে গালে গলায় হাত বুলিয়ে চুমু খেয়ে সে এক বিশাল কারবার।
সবাই চলে গেলে শুধু সাদাদ রয়ে গেলো।
অরূপ যেতে চাই নি,তবুও বাচ্চাকে হসপিটালে রাখা ঠিক না তাছাড়া পুরা পা রোগীর কেবিনে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া অনেক কিছু সমস্যা।
সাদাদ নৌশিনকে বসিয়ে চুলগুলো আচড়িয়ে সুন্দর একটা বেণুনী করে দিলো।
আর ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ বুঝে ঘাড়ে উষ্মতা ছোঁয়াতে ভুল করে নি।
সেভলন দিয়ে নিজেই পা পরিষ্কার করে দিচ্ছে আর ব্যাথায় নৌশিন “উউু… আ করছে…”
চোখ দিয়ে পানিও আসছে।
কাজ শেষে চোখের পানি মুছে দিয়ে দু চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিলো সাদাদ।
নৌশিন সাদাদকে টুলে বসতে না দিয়ে ওর বেডে বসিয়ে হাতে হাত রেখে বললো,
“বাসায় যাবো……”
সাদাদ এক হাত জড়িয়ে ধরে জবাব দিলো,
“না বাবুর মাম্মাম….পায়ের অবস্থা ভালো না যে….”
“কি হয়েছে তাতে বাসায় গিয়ে ট্রিটমেন্ট নিবো…..”
“পাগলী,বাসা আর হসপিটাল এক না….আমি আছি তো এখানে………তাহলে??”
“উহুু,ভাল লাগে লাগে না আমার…..কোনো কথা শোনো না তুমি!!!খালি জোর আর জোর…….”
সাদাদ নৌশিনের কপালে একটা চুমু এঁকে দুগালে হাত রেখে বললো,
“তা তো একটু করবোই জান…”
“হুহুহু…..”
“হা হা হা হা হা…….”
নৌশিনও মুঁচকি হাঁসলো……
.
দুপুরের দিকে সাদ ফোন করে রিদিকে অফিস থেকে বাসায় আসতে বললো।
ওয়ালিদকে ছেলের ছবি অলরেডি পাঠিয়ে দিয়েছে সাদ।ছেলে দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ্।সাদ বললে কখনো বাসায় আসতে রাজি হতো না রিদি,ওয়ালিদ আদেশ করায় বাধ্য হয়ে বাসায় আসতে হচ্ছে।
“রাফসা,রাফসা………”
সোফায় বসে হাঁক ছাড়ছে সাদ…
রান্না ঘর থেকে জলদি ছুটে আসে রাফসা……
“কি হয়েছে???আর তুমি বাসায় এখন???”
“আসবো না নাকি??”
“তা কখন বললাম আমি???তুমি তো লান্স করোই না বাসায় আজ হঠাৎ দুপুরেই আসলে তাই বললাম……”
“কথা ফুটলো তাহলে মুখে….”(বিরবির করে বললো সাদ)
“কি কি বলো ফিসফিস করে…..”
সাদ আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো কেউ নেই…তাই টান দিয়ে রাফসাকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো……শাড়ির আঁচল কমড়ে গোজা ছিলো তাই পেট টা একটু বেরিয়ে আছে….হাত চেঁপে ধরলো সাদ রাফসার পেটে……….
“আরে,কি করছো???ড্রয়িং রোম এটা???”
ঘাড়ে মুখ গুজে সাদ জবাব দিলো,”তো??”
“ছাড়ো…..কেউ দেখে ফেলবে…”
“আগে বলো….কাল থেকে কথা কেনো বলছিলে না???”
“ইচ্ছে হয়েছে তাই…..ছাড়ো তো…..”
“উমহু……ছাড়ছি না….আগে বলো…..”
“ভালো হবে না কিন্তু!!!”
“ঠিক করে নিবো আমি…..”
“কেউ এসে যাবে সাদ……..”
“বলো আগে এড়িয়ে কেনো যাচ্ছিলে কাল থেকে……”
“ছাড়ো তো….তুমি তোমার ধোঁয়া নিয়েই থাকো….আমার চেয়ে ধোঁয়াই বেশি প্রিয় কি না তোমার!!!আর শোনো ছেলের সামনে যদি আর কোনো দিন ঐ সব আজেবাজে জিনিস বের করো না তো তোমার একদিন,আর আমার যতদিন লাগে….”
“আরে একটুই তো…..তাই এতো রাগ করার কি আছে…..”
“এই ছাড়ো তো…..বললাম তো তুমি একটু খাও আর সারাদিন খাও….কোনো আপত্তি নেই আমার…..বাট আমার ছেলের সামনে না……আর কি বলেছো তুমি ওকে’ছোট রা খায় না বড় রা খায়….’তার মানে আর একটু বড় হলে সে খাবে…কেনো খাবে না তার বাবাই তো বলেছে বড় হলে সিগারেট খাওয়া যায়….তাই না??”
সাদ আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাফসাকে…..ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
“এক মাস পর ঐ দিন একটু খেয়েছিলাম,বুঝতে পারি নি অরূপ এতো তাড়াতাড়ি আইসক্রিম শেষ করে ফেলবে…..তাই ওকে সামাল দিতে বলে ফেলেছিলাম…..”
“আচ্ছা!!!!!আর ছেলে যেন আমাকে না বলে তাই তাঁকে ঘুষ খাওয়াও শিখালে!!!বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রেও অন্যের আর নিজের দোষ ডাকতে ঘুষ ব্যবহারের সুযোগ করে দিলে???”
“ওয়াট????এখানে ঘুষ কোথা থেকে আসলো?”
“ছেলেকে তিনটা আইসক্রিম খাইয়ে,আমার কাছে কথা গোপন করা শিখিয়েছো এটা ঘুষ না???”
“ও ছোট্ট….. ঘুষের কি বুঝে??”
“হ্যাঁ,ছোট তাই বলছি….বড় হলে তো শিখানো লোভ টা থেকেই যায় তাই না???”
“ওকে ওকে….আম সরি….তোমার ছেলেকে নেক্সট টাইম আর এমন কিছু বলবো না এন্ড করবোও না……..”
“মনে থাকে তোমার??”
“আজব!!!সব প্রেম ছেলের জন্য।।।।তাই না???কতদিন দুপুরে আসি না বাসায় কোথায় একটু আমার সাথে প্রম করবে তা না….. শুধু ছেলে আর ছেলে………আগে জানলে নিতাম ই না……”
“এই কি বললে তুমি???নিতে না মানে???তোমার কাছে বোঝা মনে হচ্ছে ওকে????”
“আরে সেটা কখন বললাম…..আমি তো এটা বলতে চেয়েছি আগে জানলে মেয়ে নিতাম……”
“ওফফ…..খালি মেয়ে আর মেয়ে…….তোমার সাথে কথা বলা টাই আমার বেকার……ছাড়ো বলছি…..”
সাদ একচুলও নড়লো না……রাফসার পেটে আরও চাঁপ দিয়ে বললো,
“রাফসা,ড্রালিং শোনো না…..একটা রাজপুত্র তো আছেই তোমার আমার রাজ্যে আর একটা রাজকন্যা চাই আমার……..”
“আব্বু!!!!রাজকন্যা কি????”
সিরি দিয়ে নামছে অরূপ,শোনতে পেয়েছিলো বাবার বলা শেষ কথা……তাই প্রশ্ন করে বসলো,
সামনে অরূপকে দেখে নিজেকে সাদের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্ঠা করেও ব্যর্থ হলো রাফসা…………
অরূপ এতক্ষণ খেয়াল না করলেও সামনে এসে দেখলো যে ওর মা তার বাবার কোলে বসে…….
“আম্মু!!!!!তুমি আব্বুর কোলে?????”
“না তো…..”
“আম্মু…….তুমি তো আব্বুর কোলেই বসে আছো!!!!”
“এদিকে আসো……তুমিও তোমার আম্মুর কোলে বসো তারপর আমি বলছি……”
দৌঁড়ে আসে অরূপ সাদের কথায়….সোফার উপর পা রেখে মায়ের কোলে চড়ে বসে……………
কি সুন্দর বসার জায়গা…..সোফার উপর সাদ,সাদের কোলে রাফসা,আর তার কোলে অরূপ……💜💜💜💜💜
“অরদপ,উঠো আব্বু……আমি উঠবো….”
“আম্মু মজাই তো লাগছে….আমরা তিনজনে….”
“অরূপ বাবা…..তোর মা যা ভারী……”
সাদের কথায় চোখ রাঙিয়ে পেছন ফিরে তাঁকায় রাফসা…
হাঁসলো সাদ রাফসার অগ্নিদৃষ্টিতে…………………
“হি হি হি হি……আব্বু,আম্মু যে বড় তাই তো ভারী…..”
“এই সর তো…….বাপ বেটার রং লেগেছে মনে…….”
অরূপ মুখ টা একটু ঘুরিয়ে নরম দু হাতে ওর মায়ের গালে হাত বুলিয়ে বললো,
“রাগ করে না সোনা…….”
সাদ,রাফসা দুজনেই হা😱😱
অরূপ তার মায়ের দু গালে চুমু দিয়ে আবারও বললো,
“বেস্ট আম্মু……..আই লাভ ইউ মা…….”
রাফসা ছল ছল চোখে মিষ্টি হেঁসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে সারা মুখে চুমু এঁকে দিলো।
“রাগ করি নি সোনা,তোমরাই তো আমার সব….তোমাদের উপর রাগ করতে পারি বলো???”
“হি হি হি হি…..দেখেছো আব্বু,আম্মু রাগ করে নি…..তুমিও আমার মতো আদর করে দাও তাহলে দেখবে তোমার সাথেও আর রাগ করবে না…….করো করো……..”
সুযোগ পেয়ে গেছে সাদ,হাত ছাড়া করার কোনো প্রশ্নই উঠে না😆😆😆…..
কিন্তু বাঁশ তো রাফসার মাথায়…..বাপের সামনে ছেলের আদর খাওয়া যায় কিন্তু ছেলের সামনে ছেলের বাপের আদর!!!!!!
নবম আর্শ্চযের ব্যাপার😆😆
“না না,তার দরকার নেই আব্বু,তুমি করেছো তো তাতেই সবার উপর রাগ কমে গেছে….”
“ইটস নট ফেয়ার রাফসা,একজনের আদরে হয় নাকি!!!আমার আদর টাও তো দরকার…….”
রাফসা সাদের পেটে কনুই মরে,চোখ বেটে তাঁকালো।
মাথা গেছে মনে হয় সাদের।
ছেলের সামনে কি না বলে।
“দেখি বাবা সরো……রান্না পুরলো মনে হয়……”
“আরে উঠুক এতো তাড়া কিসের……”
“ধুর ছাড়ো তো…..বাপ ব্যাটাই বসো…….”
রাফসার জোরাজোরিতে অরূপ উঠতে বাধ্য হলো আর সাদের ই বা কি করার ড্রয়িং রোমে তো রোমান্স করা যাবে না…..যে টুকু করেছে সে টুকুই এনাফ…….তাই ছেড়ে দিলো।
রাফসা রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে,অরূপকে কোলে নিয়ে আবার ডাকা শুরু করলো সাদ।
“আরে,আসল কথাটা তো শোনো….”
রান্না ঘরে যেগে যেতেই রাফসা উত্তর দিলো “বলো,শুনছি….”
“বাসায় মেহমান আসছে,বিকালে…..”
দাঁড়িয়ে যায় রাফসা।আজ আবার কে আসবে!!
“মানে???”
“রিদিকে দেখতে……”
রাফসা দ্রুত সাদের সামনে আসে……”কি???”
“হ্যাঁ,বিকালে কিছু লোক আসবে,কিছু লোক বলতে ছেলে,ছেলের মা আর বোন….”
অবাক হচ্ছে রাফসা!!!বিকালে বাড়িরএকটা মেয়েকে দেখতে আসবে,আর এই খবর টা নাকি দুপুরএকটার পর দিচ্ছে সাদ।
তার উপর বাড়ির যা অবস্থা।
“সাদ,তোমার মাথা ঠিক আছে??বিকালে মেয়ে দেখতে আসবে আর তুমি এটা এখন বলছো আমায়???”
“আজব!!!!”
“অরূপ আব্বু তুমি উপরে যাও তো সোনা…….আর্ট করো যাও…..”
“ওকে,আম্মু……”
.
“সাদ,তুমি ঠিক আছো???বাসার এই অবস্থা!!!আর তুমি মেয়ে দেখানোর লোক আজকে বাসায় আনছো??”
“তুমিই তো কালকে বললে…..”
“ওফফ,কালকে বলছি আর আজ ই???”
“হুম….ভালো ছেলে….রিদিও চিনে….আর আমি সব শোনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিদির বিয়ে টা দিতে চাই…..ওয়ালিদ,নিপা ওদের বলে দিয়েছি মামনির(নিপার মেয়ে) এক্সাম শেষ হলেই যেনো দেশে ফিরে,এক মাস পর নয় -এক্সাস শেষ হতে মানে আর চৌদ্দ দিন পর ওরা দেশে ফিরবে……..”
“তাই বলে আজ পাত্র পক্ষ!!!মা-বাবা জানে???আর রিদিই তো বাসায় নেই…….”
“বাবাকে আমি বলে এসেছি,বাবা তিনটার আগেই চলে আসবে,আর কাকাকে বলে রেখেছি…..এখন তুমি মা,আর কাকি মনি কে বলবে…”
“আর রিদি??”
“রিদি অফিস থেকে আসছে……”
“তুমি বললে আর ও রাজি হয়ে গেলো??”
“পাগল!!এই চিনছো ওকে???
আমার ধার ধারার মেয়ে নাকি ও?এ বাড়িতে থাকে তাই জাস্ট ফরমালিটি টুকু পালন করে…..
ওয়ালিদ বলায় আসছে আসছে অফিস থেকে…..”
“ও……..তা এই কথা টা আমাকে সকালেও তো বলা যেতো নাকি????এখন আমি কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো???কম কাজ!!!! তার উপর মেয়ে বাড়ি বলে কথা,কম খাতির করতে হবে….”
“সার্ভেন্ট কম আছে???তোমায় কেনো এতো চাপ নিতে হবে???আর তুমি খুব ভালো করেই জানো,তোমার এই সারা বাড়ির কাজ,রান্না বান্না আমি মোটেও এলাও করি না…..”
“হয়েছে আমি গেলাম…..”বলেই রাফসা উঠে চলে গেলো।কারণ সাদ কখনো চায় না রাফসা এতো কাজ করুক।কিন্তু রাফসা নিজের ভালো লাগা থেকেই সব করে।
এখানে আরও একটু সময় থাকলে সাদ কথা আরও পেঁচাবে যার ফলে রাফসার আর লাজ করা হবে না।তাই এক রকম পালিয়ে এলো সাদের কাছ থেকে।
শরীফ চাচাকে লম্বা একটা লিস্ট দিয়ে তৎক্ষনাৎ বাজারে পাঠিয়ে দিলো।
মা আর কাকিকে রান্না ঘরে ডেকে এনে মেহমানের কথা বলায় ওরা তো অবাকের উপর অবাক।
সব সার্ভেন্টকে কাজের কড়া অর্ডার দিচ্ছে সাদের মা।
এদিকে রিদিও বাসায় এসে গেছে।
রাফসা দু তিন সার্ভেন্ট এক সাথে লাগিয়ে দিয়েছে ড্রয়িং রোম পরিষ্কার করা আর গোছানোর জন্য।
প্রাপ্তির মাআর সে তো কি ছেড় কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না।
মেয়ে দেখতে আসলে কি কম কাজ!!!!
আর সে দিকে যাকে দেখতে আসবে সে তো……………………
!
চলবে…..