প্রেম ঘোর #পর্ব_৫৮_৫৯

0
1398

#প্রেম ঘোর
#পর্ব_৫৮_৫৯
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
ঐ দিন রাতের বেলায় বাচ্চাকে বাসায় আনা হয়।
নরমাল ভাবেই বাচ্চা হয়।
বাচ্চা বেশ নাদুসনুদুস আর সুস্থ হলেও বাচ্চার মায়ের শরীর টা একটু খারাপ হয়ে পড়েছে।কিন্তু বেচারী কোনো মতেই হাসপাতালে থাকতে রাজি না।নৌশিনের ভাই অনেক রোজাজুরি করলেও কোনো কাজ হয় নি,মেয়েটা ঠিকই কান্নাকাটি কে শশুড়কে রাজি করিয়ে ফেলেছে।
লাবীব(নৌশিনের ভাই)এতে একটু রাগ করলেও বাচ্চার মায়ের সাথে রাগ দেখাতে পারলো না….তারউপর ওর বাবা ওকে সার্পোট করছে তাই।
আর ডাক্তারও ছাড়তে চাইছিলো না তাই ডাক্তারের পরার্মশে দুজন নার্স আনা হয় বাড়িতে বাচ্চার মায়ের দেখাশোনা করার জন্য।শারীরিক ভাবে বাচ্চা হওয়ায় কিছুটা অসুস্থ হলেও নৌশিনের ভাবীর মনের জোর অনেক….আছে না কিছু মেয়ে অনেক স্ট্রং মেন্টালির হয় তেমন আর কি।সাদাদ আর নৌশিনও এ বাড়িতেই আছে।নৌশিন ওর শশুড় বাড়ির সবাইকে বলে এসেছে আর এটাও বলেছে যে “আমরা আমার সাথে সবাই চিটিং করেছো,দু দিন কথাই বলবো না তোমাদের সাথে”😂…….অরূপ আসার জন্য খুব বায়না করছিলো কিন্তু ওর মা সামলে নিয়েছে………..
বাসার এসেছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে,নৌশিন বাসার সার্ভেন্ট আর নার্স দুটো ছাড়া কারও সাথে কোনো কথা বলে নি।এখনও খারাপ লাগছে ওর।মজা করে মানুষ…ঠিক আছে…..তাই বলে এভাবে??আর বেশি রাগ হচ্ছে ওর বাবা-মা আর সাদাদের উপর….কি সব কথা বলেছিলো যার জন্য কত কি ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলো নৌশিন…তাই অভিমান করে কথা বলছে না কারও সাথে………..
নৌশিন বাচ্চা নিয়ে ড্রয়িং রোমে বসে বাচ্চাটাকে অনেক ভাবে আদর করছে।বাচ্চা পেলে মেয়েটার আর কিছু লাগে না।এমনকি বাচ্চা পেয়ে বাসায় এসে ফ্রেস পর্যন্ত হয় নি।যদিও ওর মা আর সাদাদ অনেক বার বলেছে এসব ভারী জিনিস চেন্জ করে নিতে….আর নৌশিনেরও এগুলো পরে থাকতে খুব খারাপ লাগছিলো।কিন্তু ওদের ওপর জেদ দেখিয়ে আর চেন্জ করে নি।বাচ্চা নিয়ে বসেছে।।।।।।।।
“কি রে ওকে দে…..একদিনের বাচ্চার সাথে এতো কি করিস তুই??”(নৌশিনের মা)
নৌশিন বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে আর হাত পা একটু করে বুলিয়ে দিচ্ছে…..কোনো জবাব দিলো না তার মায়ের কথায়।ওর মা আবারও বললো,
“দে মা…ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসি……সেই কখন থেকে তো রাখলি….”
আর বাচ্চা টাও কি আজিব…ফুপুর কোলে উঠে কোনো কান্না কাটি করছে না।
“দে মা,ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসি…..”
নৌশিন কিছুটা বিরক্ত ভাব নিয়ে মুখ খুলে এবার,
“আমি তো রাখছি….”
নৌশিনের মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাদ নৌশিনের কুল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে ওর শাশুড়ির কোলে দিয়ে দেয়।নৌশিন সাদাদের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে “ধ্যাঁত”বলেই নিজের রোমে চলে যায়।সাদাদও রোমে এসেছে।নৌশিন পা তুলে বিছানায় বসে আছে।সাদাদ যে পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে দেখেছে তবুও কিছু বলছে না।ভালোই লাগছে না ওর…..কি করবে বেচারী আর তারউপর সাদাদ বারবার ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে ওকে।আর তার সাথে তাল মিলিয়ে নৌশিনের ভাইয়াও নানা রকম দুষ্টুমি করেছে।আর বাসার আসার পর সাদাদ বিকেলে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা এমন কি ও কি কি বলছে সেটাও নৌশিনের বাবা আর ভাইয়ের সাথে শেয়ার করেছে।আর নৌশিন যে বিকালের কাহিনীর জন্য সাদাদের ওপর রাগ দেখায় নি তার জন্য সবাই মিলে খুব মজাও নিয়েছে।
আর একটু নৌশিন একটু শান্তিতে বসেছিলো বাচ্চা টা নিয়ে ওর মায়ের কত তাঁড়া।
আর সাদাদ তো আছেই…….
এখন একটু চুপচাপ বসে আছে তারও উপায় নেই,সাদাদ পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই হাত টেনে নিয়ে হাত ভর্তি চুরি নিয়ে নাড়াচ্ছে।
নৌশিনের দু হাত এক সাথে করে দু হাতের চুরি একসাথে করে বাজাচ্ছে।আপনারাই বলুন,কার না মেজাজ টা গরম হয়???
অবশেষে সাদাদের জ্বালা সহ্য করতে না পারে ফিরে তাঁকায় সাদাদের দিকে………
“ইশশশশশ…….ব্যাথা লাগে কিন্তু আমার!!”
এইবার সাদাদ নৌশিনের সামনে গিয়ে বসে পড়ে…..
হাত দুটো আগের মতোই একসাথে করে বাজাচ্ছে…
হাত ভর্তি সোনার চুরি আর বালা সেগুলো কি কম ভারী নাকি!!এভাবে বাজাচ্ছে হাতেও তো লাগছে………
“উফফফ……কি ফাজলামী শুরু করছো তুমি??ব্যাথা পাই না আমি??”
হাত দুটো নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে সাদাদ নৌশিনের একদম কাছে গিয়ে বসে করুণ শুরে বলছে,
“ও জান….আমি তো সরি বলেছি…..এখনও মন খারাপ করে থাকবে.??সরি তো!!সরি না বলো??”
নৌশিনের খুব হাঁসি পাচ্ছিলো সাদাদের মুখের এমন ভাব দেখে…..তবুও হাঁসলো না……..
“জানু ও জানু….লাভ ইউ না???দেখো না কি সুন্দর একটা বাচ্চা এসেছে…..তোমার বাচ্চা আরও সুন্দর হবে…..আমি খুব তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করে দিবো জান……অন্য কারও বাচ্চা আর বেশি দিন কোলে রাখতে হবে না….তোমার কোল ই ভরিয়ে দিবো……প্রমিজ জান…. আর এমন দুষ্টুমি করবো না…….আমি তো তোমার রাগ দেখার জন্য এমন করে বলেছিলাম…আর খাওয়ার কথা বলেছি!আমি চেয়েছিলাম তখনি তুমি রেগে গিয়ে আমার কলার ধরে বলবে”আমার বাপের কি তোর চেয়ে কম আছে??যে তোর বাড়িতে খেতে আসবে”…….”
নৌশিন সাদাদের এমন সব কথা শুনে না হেঁসে পারলো না…………
“তুমি!!!!!!!!”(হাঁসতে হাঁসতে)
ভালোবাসার মানুষের সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকা যায় নাকি।তার উপর সে যদি হয় সাদাদের মতো কেয়ারিং আর দুষ্টু।
“যাক বাবা…..হাঁসি এলো মুখে…..কতক্ষণ ট্রাই করার পর…..আমি আর তোর রাগী এই কান্নার রূপ দেখতে চাই না…মেয়ে মানুষ রাগলে ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে জানতাম…বাট কথা না বলে চুপচাপ কাঁদে কিছু না বলে তা জানা ছিলো না…..আমার তোর রাগ দেখার ইচ্ছা চলে গেছে রে ভাই…….”
নৌশিনেরর চোখে পানি আর মুখে হাঁসি….সাদাদের বুকে ঘুষি দিতে দিতে বলছে…..
“তুমি না….. তুমি আসলেই খগব খারাপ…. বাজে লোক তুমি……”
সাদাদ হাঁসতে হাঁসতে নৌশিনের হাত দুটো আটকিয়ে
নিলো……”বরকে মারতে নেই জানু…….আদর করতে হয়…. বেবি দিবো তো……”
নৌশিন তো নিজেই সব সময় বাচ্চা বাচ্চা করে কিন্তু আজ সাদাদের মুখে এই কথাটা শোনে কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে আর লজ্জাও লাগছে খুব।নৌশিনের হাত দুটো সাদাদের হাতে…লজ্জায় মাথা নিঁচু করে আছে নৌশিন…অসম্ভব ভালো লাগছে তাঁর কারণ সাদাদ বলেছে তাকে আর বেশি ওয়েট করাবে না কোল জোরে একটা ফুটফুটে কাউকে এনে দিবে।
“ওরে আমার লজ্জাবতী লতিকা আর লজ্জা পেয়েও না গো……..”
নৌশিন কিছু বললো না….ওর মুখে বলা একটা শব্দ যেটা প্রায় ই বলে “ধ্যাত”সেটা বলেই সাদাদের বুক মুখ লুকায়।
সাদাদও হেঁসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে নৌশিনকে।💜💜💜💜
!পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

#প্রেমঘোর#৫৯#
💜💜

নৌশিন ভারী ভারী সব গহনা,শাড়ি খুলে নিয়ে সাবেক নৌশিনের মতো ড্রেস আপ নিয়ে গুন গুন করে ওয়াশরোম থেকে বের হচ্ছে।কালো প্লাজো,বাদামী রংয়ের শর্ট জামা আর কালো ওড়না…….এই সব ড্রেসে না আমাদের নৌশিন টাকে একদম বাবু বাবু লাগে।গুন গুন করে ড্রসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে যায় নৌশিন……চুল আচরিয়ে নিচ্ছে আর আয়নার ভেতর দিয়ে সাদাদের সাথে চোখাচোখিতে মুচকি মুচকি হাসছে…..সাদাদ তো সেই কখন থেকে নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে…….এই বেসে বেশ লাগে নৌশিনকে অবশ্য সাদাদের কাছে নৌশিন সবসময়ের জন্য হুরপরী………..
নৌশিন বেনুনী শুরু করে টুল থেকে উঠে এসে সাদাদের সামনে বসে….
“বলছি,,,শুনো না…..”
উঠে বসে সাদাদ…..নৌশিনের দিকে তাকিয়ে বলল,”কি বলো শুনি…..”
“আমি কিন্তু এক সপ্তাহ থাকবো…….”
সাদাদ কথা টা শোনা মাত্রই মনে হলো আকাশ থেকে পড়লো……বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে…..
“কি হলো!!!এভাবে কি তাঁকিয়ে আছো???আমি থাকবো অনেক দিন……”
মুখ খুললো সাদাদ,
“পাগল!!!!”
“মানে??”
“মানে আবার কি??তুমি ওয়ান উইক থাকবে এখানে??”
“তো??তুমি কিন্তু একদিন বলেছিলে আমি চাইলে হাইয়েস্ট ওয়ান উইক থাকতে পারি….তাহলে???”
সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে অর্ধেক করা বেনুনী টা নিয়ে সুন্দর করে শেষ পর্যন্ত বেঁধে দিলো……….
তারপর নৌশিনেরর দুগালপ হাত রেখে বলল,
“আমি কি করে থাকবো??”
“কেন??”
“কেন মানে??তোকে ছাড়া এক সপ্তাহ!!!আমি পারবো না তো….”
“কেন?আমাকে ছাড়া থাকবে কেন??তুমি রোজ আসবে….তাহলেই তো হলো….”
“সেটা হয় নাকি??শশুড় বাড়ি রোজ আসলে লোকে তো সোছা বলবে রে আমায়….”
“সাদাদ!!!!…..”
“আরে বাবু তা না…..দেখো ট্রুলি বলতে গেলো আমি তো এই বাড়ির জামাই….আই মিন মেহমান….আমি চাইলে তোমার সাথে দু দিন থাকতেই পারি তাই বলে তুমি এক সপ্তাহ থাকবো বলে যে আমিও থাকবো…সেটা তো কেমন দেখায়!!!তা ছাড়া আমার শশুড় বাড়ি তো একদম কাছে আমি যখন খুশি চলে আসতে পারি……দূরে হলে না হয় বউকে নিয়ে আরাম করে এক সপ্তাহ থেকে আসতাম বছরে এক বা দু বার কিন্তু বাসা তো কাছেই তাই বলছিলাম যে…..”
“তাই কি বলছিলে???”
“প্রতি মাসে আনবো……”
“তো??”
“প্রতিমাসে দু দিন এসে থাকবে……আসলে এক সপ্তাহ না আমার জন্য কষ্ট হয়ে যাবে…..অভ্যাস হয়ে গেছিস তুই……সকালে কে ডেকে দিবে??চোখ খুলে কার মিষ্ট মুখ টা দেখবো?রাতে কে বুকে মাথা রাখবে???”
নৌশিন কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না…….সে ও তো সাদাদকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না আজ কাল……তবুও ঘটনা সামলাতে বলল,
“ওকে….এক সপ্তাহ না আমি তিন দিন থাকবো…….”
“এ্যা??”
“আবার কি??আমি তো ঐ দিন হাফ রাত এন্ড হাফ ডে থাকলাম….বেবী টা হয়েছে একটু আদর করবো না?….”
সাদাদ নিশ্চুপ হয়ে নৌশিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে….নৌশিন সাদাদের হাত ধরে আল্লাদী কন্ঠে বলে উঠে,
“ও সাদাদ……উমমমম…..”
সাদাদ ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি টেনে বলে,
“আজ কিন্তু একটা রাত পাড় হয়ে গেলো…..আজ আমি আছি…..দু দিন থাকবে তুমি…..পরের দিন বিকেলে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো……”
নৌশিন না কে??ওর মতো খুশি আর কেউ না….তারমানে নৌশিন আজ রাত বাদে দু রাত বাপের বাড়ি থাকার সুযোগ পাচ্ছে………”উম্মাহ….থ্যাঙ্ক ইউ…. থ্যাঙ্ক ইউ…. ”
“হেয়য়য়য়…..”
“উমমমমম……আমারও কিন্তু কষ্ট হবে….কার বুকে মাথা রাখবো??”
“আাহা রে বাবা আদুরী,স্বামী সোহাগী রে…..”
“কিহ???”
“জ্বি যুশরী…..”
“এই যুশরী টা আবার কি??”
সাদাদ নৌশিনকে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
“যুশরী হলো যুবতী আর কিশোরীর সংমিশ্রণ…..আমার জান পাখি টা বয়সে যুবতী হলেও চলন বলন আর মুখের কাঠামোতে পনেরো বছরের কিশোরী আর বয়সের যৌবনতায় কুল কিনারা ভরা একটা যুবতী……ইশশশশশ…..কি যে না!!….”
সাদাদ নৌশিনের মুখেরর দিকে এমন ভাবে তাঁকিয়ে কথা গুলো বলছে,নৌশিন তো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে……..
“হয়েছে…আর লজ্জা পেও না যুশরী…..যৌবন যে ফুটে উঠে…..এই যুবকের নেশা লেগে যাবে তো…..ঐ লজ্জা মাখা মুখ যে আমার মাতালের সুরী…..মাতাল হতে এক মুহুর্তও লাগবে না……”
কথাগুলো বলেই সাদাদ নৌশিনের লাল টুক টুক মুখ দেখে হা হা করে হাঁসতে থাকে।আর এতে নৌশিন আরও লজ্জা পায়…..মুহুর্তেই সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়…………
!
পর দিন সকালে সাদাদ খাওয়া দাওয়া করে নৌশিনদের বাড়ি থেকে নিজের অফিসে চলে যায়।
রোজকার মতোই আজও নৌশিনের কপালে একই রকম ভালোবাসার ছোঁয়া জুটে।এই উষ্মতারর আবেশ টা যেন সব কিছু ছাড়িয়ে যায়….ভালোলাগার সব সীমানা পেড়িয়ে ভালোবাসার সীমানায় কড়া নাড়ে…..আবেশ টা যেন শেষ হওয়ার নয়….সবটা জোড়ে শুধু একটা ঘোর সৃষ্টি করে রাখে….প্রেমঘোরে আবদ্ধ করে রাখে দুটি আত্মাকে।
আজ সাদাদ বিকেলে আসবে না এখানে….ওর বাসাতে যাবে বলে গেছে সবাইকে।নৌশিনের সারাটা দিন বাচ্চা টাকে নিয়েই কেটে যায়…..মাঝে মাঝে শুধু দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার মা বাচ্চা টাকে কাছে পেয়েছে বাকী টা সময় বাচ্চা নৌশিনের কাছে ছিলো। এত কিছুর মাঝে সাদাদ কে খুব মিস করছিলো নৌশিন….আর ঐ বাড়ির সবাইকেও…কেমন যেন মায়া লেগে গেছে ওদের সবার উপর বিশেষ করে অরূপের উপর। তাই অনেকবার সাদাদের সাথে কথা বলেছে তার সাথে বাসায়ও ফোন করে নিয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে বাচ্চাকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।এই টুকু বাচ্চার তো মায়ের আবেশ দরকার তাই।একজন নার্স নৌশিনের ভাবীর খেয়াল রাখছেন আর অন্য জন নৌশিনের সাথে বসে ড্রয়িং রোমে আলাপ করছে ওনিই এতক্ষণ দেখভাল করছিলেন এখন একটু রেস্ট নিচ্ছেন আর কি…
কথার ফাঁকে নার্স টা নৌশিনকে জিঙ্গেস করে,
“ম্যাডাম,আপনার স্বামী কিন্তু ওনের হ্যান্ডসাম….ওনাকে দেখে শোনে রাখেন তো??”
নৌশিনের কাছে নার্সের প্রশ্ন টা ঠিক যুতসই মনে হলো না…..একে তো বললো সাদাদ খুব হ্যান্ডসাম তার মানে সে সাদাদকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছে তারউপর আবার এটাও জানতে চাইছে যে নৌশিন তার বরকে দেখে শোনে রাখে কি না!!!আজব ধরনের কথা একটা…….
নৌশিনকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে নার্স টা আবারও বলে,
“ম্যাডাম…..আমি মনে হয় আপনার চেয়ে বয়সে অনেক বড় হবো…..আমি কিন্তু বিবাহিত….আর সব কিছু বুঝেই আপনাকে বলছি,পুরুষ মানুষ….একটু দেখে শোনে রাখবেন….”
নার্স টা কথা বলার সময় চোখ মুখ কেমন একটা অদ্ভুদ করে রাখলো…দেখে এটা বুঝা যাচ্ছে যেন সাদাদ ওনার কত দিনের চেনা….আর ওনি সাদাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে এমন বলছেন।নৌশিনের ভালো লাগছে না এই মহিলা কে।নৌশিন এইসব সন্দেহবাজ মহিলাদের খুব কম পচ্ছন্দ করে।ওর কথা একটাই….”মনে হয় মানুষ…সে মনে যদি অন্য কেউ এসে যায় তাহলে সেখানে জোরাজোরি করার কিছু নেই আর মন একটাই হয় যদি মনের মানুষকে সত্যিই একবার মন দেওয়া হয় তাহলে সে মনে কোনো রূপসী ই হোক আর কোনো মোস্ট ড্যাসিং বয় ই হোক তার কোনো জায়গা নেই….সে জায়গা শুধু ভালোবাসার মানুষের জন্য”
নৌশিন নার্সে ওনার কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উঠে যায় সেখান থেকে।মাকে সাহায্য করার জন্য রান্না ঘরে যায়।আরফানরা আসবে আজ আাচ্চা দেখতে তাই ওর মাকে অনেক কিছু করছে সাথে সাথে নৌশিনও হাত লাগাচ্ছে।
“আচ্ছা মা….ভাবীর আট মাসেই বেবী হয়ে গেলো….”
“আট মাসে না রে পাগলী…..তোর ভাবী তো প্রথম দিকে ডেট ঠিক ঠাক বলতে পারে নি আর ডাক্তারের হিসেবে আট মাস দু সপ্তাহ ছিলো তোর বিয়ের সময়….আর আমার হিসেবে নয় মাস পড়েছে এটা…..ডাক্তার তো বলেছিলো পরের সপ্তাহে সিজারের কথা…..কিন্তু আল্লাহর রহমতে আগেই হলো সেগুলোর দরকার হলো না…….”
নৌশিন কি যেন ভেবে।।।কিছু সময় পর আওয়াজ দিলো,
“মা…..”
“হুম…..”
“আমিও বেবী নিবো…..”
মেয়ের মুখে এই কথা শুনে নৌশিনের মা খুব বেশী খুশি হয় নি….সেটা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে……
“কি বলছিস তুই??”
“হুম…আমিও বেবী নিবো….আমার বাচ্চা খুব ভালো লাগে মা…..”
নৌশিনের মা ভাবছে সাদাদ নিশ্চয় নৌশিনকে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছে না হলে ঐ বাড়ির কেউ….তাই ওনি কড়া ভাষায় নৌশিনকে জানায়,
“না,বিয়ে হয়েছে দু সপ্তাহ হলো আর ওনার বাচ্চার শখ হয়েছে….আমি তোর শাশুড়ির সাথে কথা বলবো….এখন এসব না….শরীরে নাই কিছু আমার মেয়ের…আর ওরা বললেই বাচ্চা নিতে হবে…..বউ মা কি নাদুস নুদগস তাই জীবন যায় যায় আর আমার ছোট একটা মেয়ে ওর আবার বাচ্চা…..”
নৌশিন ঠিক বুঝতে পারছে ওর মা কি ভেবেছে…..তাই ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“না মা…সাদাদ আমাকে ঐসব কিছু বলে নি…আর ঐ বাড়ির অন্য রাও না….আমি ই সাদাদকে বলেছি ও না করে দিয়েছ….প্লিজ তুমি ঐ মা কে কিছু বলো না…..”
নৌশিনের মা নৌশিনকে নিজের সামনে এনে ধমকের সুরে বলল,
“কি??তুমি বলেছে সাদাদকে বেবীর কথা??”
ভয় পেয়ে হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ায় নৌশিন……
“বাহ্….ভালোই বড় হয়ে গেছো তুমি!বাইশ বছর বয়সে বাচ্চা হয় মানুষের স্বাভাবিক কিন্তু বাইশ বছর বয়সে তেতাল্লিশ কেজি ওজনের মানুষ কম ই হয়…..তাই আগে নিজেকে তৈরী করো….তার পর এসব চিন্তা ভাবনা করো…..”
নৌশিন প্রায় কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা……
“তোমার ভাবীর একত্রিশে বাচ্চা হলো…..আগের টা তো টেকে নি আর নিজেও মরার মতো হয়ে গেছিলো…দেখেছো তো তুমি…..তোমার চেয়ে হেলদি ছিলো আর বয়সও ছিলো তারপরও কি হলো!!বাচ্চা টা টিকে নি আর তোমার ভাবী!!তাই আমি চাই না তুমি ঝুঁকের বসে কিছু একটা সিধান্ত নাও….সময় হোক তারপর এসব……”………….
………………..
চলবে।

পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here