শিমুল_ফুল #০১

0
1173

#শিমুল_ফুল
#০১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

“এই পিচ্ছি এদিকে আয়।”

ঠান্ডা কন্ঠের ধমক শুনে পুষ্প থমকে দাঁড়ায়।সে শিমুলকে দেখেও না দেখার ভান করেছে কিন্তু শিমুল সেই ডাক ডাকলই।পুষ্প ভয়ে কাধের ব্যাগ খামচে ধরে।করুণ চোখে পাশের প্রিয় বান্ধবী শিলার দিকে তাকায়,শিলা চোখ চিকচিক করে শিমুলের দিকে তাকিয়ে আছে।পুষ্প শিমুলের দিকে সরাসরি না তাকিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে দেখল গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,বহু কষ্টে বললো,

“কলেজে দেরী হয়ে যাচ্ছে শিলা।”

শিমুল বাইক থেকে নেমে চোখ থেকে রোদচশমা খুলে হাতে নেয়,

“আরেব্বাস!শিলা তোরা আজকাল বেশী পড়ুয়া হয়ে যাচ্ছিস নাকি?”

শিলা গদগদ হয়ে বলল,
“না।শিমুল ভাই কি যে বলেন!আমরা তো আজকে একঘন্টা আগে বের হয়েছি,হাতে অনেক সময়।”

পুষ্প হাত দিয়ে শিলার হাতে চিমটি দেয়।শিলা এসবের তোয়াক্কা করে না কথা চালিয়ে যায়,
“কেন ডেকেছেন ভাইয়া?”

শিমুল পূর্ণদৃষ্টিতে পুষ্পর দিকে তাকায়।মেয়েটা তার দিকে তাকাচ্ছে না।খুব ভয় পায় কিনা!আচ্ছা মেয়েটা এতো ভয় পায় কেন?
“পুষ্প”

শিমুলের ডাক শুনে পুষ্প কাচুমাচু করে তাকায়,
“জ্বি।”

শিমুল স্পষ্ট করে বলে,
“বড় ভাই দাঁড়িয়ে আছি চোখে পড়ে না,সালাম না দিয়ে কেন চলে যাচ্ছিলি?”

পুষ্প আমতা-আমতা করে বলল,
“খেয়াল করিনি।সরি ভাইয়া।”

“সরি কি হ্যাঁ?কানে ধর।কানে ধরে উঠবস কর।দশ বার।”

পুষ্প আৎকে উঠে বলে,
“কি?”

“দশবার বলেছি,দেরী করলে আরো বাড়বে।জলদি।”

পুষ্প এই ছেলেটাকে এইজন্যই পছন্দ করেনা।কাজে অকাজে পুষ্পকে অপমান করিয়ে ছাড়ে।এমন না যে দুজনের পরিবারে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে,শুধু দুজনের বাড়ি একি গ্রামে।পুষ্পর আব্বার বাজারে খাবারের হোটেল আছে,পুষ্প তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে।স্কুলের পরিক্ষার ফিসের জন্য বাবার কাছে গিয়েছিলো।ওখানে গিয়ে দেখে শিমুল তার বন্ধুদের নিয়ে নাস্তা করছে।পুষ্প শিমুলকে মুখচিনা চিনে,কখনো কথা হয়নি।সোজা বাবার কাছে চলে যায়।
শিমুল কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
“এই মেয়ে সালাম টালাম দিতে পারো না?”

পুষ্প শিমুলের এমনতর কথা শুনে ভয় পায়।আড়চোখে তার আব্বার দিকে তাকায়।
মিজান শেখ বলেন,
“শিমুল বাবা এটা আমার ছোট মেয়ে পুষ্প।পুষ্প এটা তোর চেয়ারম্যান কাকার ছোট ছেলে শিমুল।দে সালাম দে ভাই লাগে।”

পুষ্প তার ডাগর চোখ মেলে ছেলেটাকে দেখে।কাপড়ে চোপড়ে শহুরে একটা ভাব আছে।বোকাবোকা গলায় বললো,
“আসসালামু আলাইকুম।”

শিমুল ঠোঁট টিপে হাসে।অথচ গলার রুক্ষতা কমে না,
“শোন এখন থেকে দেখলেই সালাম দিবে।মনে থাকে যেন।”

পুষ্পর সাথে এমন কড়কড়ে গলায় কেউ কথা বলেনা।শিমুলের কথা শুনে তার চোখে পানি আসে।সেই থেকে আজ পর্যন্ত শিমুল পুষ্পকে যেখানে পায় সেখানেই সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে শাস্তি দেয়। কথায় কথায় কাঁদায়।শুধু কাঁদিয়েই ছাড়ে না ধমকও দেয় সেই কি ধমক! পুষ্পর বুক কেঁপে ওঠে।

শিমুল মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে আবার ধমকে উঠে,
“যা বাড়িয়ে দিলাম।পনেরো।”

পুষ্প অতীত থেকে ফিরে মাথা নাড়িয়ে চারপাশে তাকায়,কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে,সবার মূল আকর্ষণ পুষ্পরা।অনেকেই বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে,এই বারবার ফিরে তাকানোর আসল কারন হলো শিমুল।নামের মতোই তার দেহ,শিমুল ফুলের মতো টকটকে।ফর্সা শরীরে কালো শার্ট,শক্ত সামর্থ শরীরের গড়ন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।পুষ্প ভালো করে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল তার কলেজের চিরশত্রু তানিয়াও তাকেই দেখছে,এখন কানে ধরে উঠবস করা দেখলেই কলেজের ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে।এই সবার সামনেই কানে ধরে উঠবস করতে হবে এটা ভেবেই তার অপমানে,লজ্জায় কান্না চলে আসে।কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে,
“পরে নেই।”

শিমুল কিছুক্ষণ পুষ্পর ভিজা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর শিলাকে বলে,
“এতো তাড়াতাড়ি কলেজে কি?”

শিলা এতোক্ষন দম বন্ধ করে পরিস্থিতি দেখছিল শিমুলের কথা শুনে বলল,
“ভাইয়া আমাদের কলেজে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা।আমরা দলীয় নাচ করব,তার প্রেক্টিস করতেই আগে যাচ্ছিলাম।”

অনুষ্ঠানের কথা শিমুলের অজানা নয়।সে ভ্রু’কুচকে পুষ্পর দিকে তাকায়,

“এই পিচ্ছিও নাচবে?”

শিলা অতি উৎসাহে বলল,
“বলেন কি ভাইয়া!পুষ্পই তো প্রধান চরিত্রে থাকবে।”

মূহূর্তেই শিমুলের নাকের পাটাতন ফুলে উঠে,চোখ গরম করে,কর্কশ কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“পুষ্প তুই নাচবি না।নাচলে খবর আছে।”

শিমুলের কথা শুনে পুষ্প হতবাক হয়ে যায়।একি বলছে শিমুল! কতদিন ধরে প্রেক্টিস করে নাচটা আয়ত্ত্বে আনা হলো এখন নাচতে না পারলে কিভাবে হবে!পুষ্পর ভিষন রাগ হলো,ফট করে বলে ফেলল,
“আমি নাচব’ই।”

পুষ্পর এমনতর কথা শুনে শিমুলের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়,তার দিকে একপা এগিয়ে বলে,
“আচ্ছা!যা নেচে দেখা।”

পুষ্প যানে এই কথার মানে কি।দুঃখে,কষ্টে চোখে পানি চলে আসল,শিলাকে পেছনে ফেলেই হনহন করে কলেজের পথে হাটা ধরল।তার আর কিছু ভালো লাগে না,সবসময় এমন করবে।পুষ্পর সব ব্যাপারে নাক গলানো যেন শিমুলের স্বভাব।শিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকেই পুষ্পর পিছনে পিছনে দৌড় দেয়।আহা শিমুলকে না বললেই বুঝি ভালো হতো?পুষ্পর ঝাড়ির ভয়ে তার মুখটা ফেলে দেওয়া আমের আটির মতো হয়ে যায়।শিলা কাছে যাওয়ার পরে পুষ্প দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
“দেখলেই শিমুল ভাই শিমুল ভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে,পেটের কথা সব বলে দিতে হয়?এখন শান্তি তো?শিমুলের চামচা কোথাকার।”

শিলা কাচুমাচু করে বললো,
“আমি কি জানতাম নাকি উনি না করবে?”

পুষ্প রাগে নিজের হাত নিজেই খামচে ধরে।কলেজে গিয়ে পড়ে আরেক জামেলায়।অনার্স পড়ুয়া তিন্নি পুষ্পকে ডেকে নেয়।
“শিমুল ভাই তোর কি হয় পুষ্প?”

পুষ্প মাথা নেড়ে বলে,
“কিছু হয় না।এক গ্রামে বাড়ি তাই ভাই ডাকি।”

“রাস্তায় দেখলাম অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বললি।”

শিলা পাশ থেকে বলে,
“আপু, ভাইয়া কলেজের অনুষ্ঠানের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।”

“অহ আচ্ছা।পুষ্প,একটা কাজ করে দিতে পারবি?”

পুষ্প মাথা নাড়িয়ে বলে,
“কি আপু?”

তিন্নি বইয়ের ভাজ থেকে একটা খাম বের করে বললো,
“এটা শিমুল ভাইকে দিবি।”

চিঠির খাম দেখে পুষ্প মাথা নাড়িয়ে বললো,
“আমি পারবনা।”

তিন্নির আব্বা কলেজের প্রিন্সিপাল।সেই দাপট তিন্নি খুব ভালো করেই দেখায়।পুষ্পর দিকে চোখ খুচ করে তাকিয়ে বল্ললো,
“যদি কথা না শুনিস তাহলে পরিক্ষায় ফেল করিয়ে দেব।”

ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়া পুষ্প ভয়ে চিঠিটা হাতে নেয়।মাথা নিচু করে চুপচাপ কলেজ শেষ করে,বাড়ির রাস্তা ধরে।এই সময়টা শিমুল মোড়ে হিজল গাছের নিচে প্রিয় বন্ধু তিয়াশ,ফাহিম,আবিরের সাথে আড্ডা দেয়।প্রতিদিন এমনটাই হতে দেখেছে।আজকে আছে কিনা কে যানে!শিলা পটপট করে এটা সেটা বলছে,কিন্তু পুষ্পর টেনশন হচ্ছে।মোড়ে এসে দেখে শিমুল বাইকের উপরে বসে আছে আর তার বন্ধুরা হিজল গাছের মোটা শিকড়ে বসে আছে।পুষ্প কাছে গিয়ে থামে।তিয়াশ ইশারা করে পুষ্পকে দেখায়।শিমুল পুষ্পকে দেখে বললো,
“কি চাই?”

পুষ্প কোন কথা না বলে বইয়ের ভাজ থেকে খামটা হাতে নিয়ে বললো,
“তিন্নি আপু দিয়েছে।”

খামের ভেতরে কি থাকতে পারে
উনত্রিশ বছরের শিমুলের বুঝতে অসুবিধা হয় না।শান্ত চোখে পুষ্পকে দেখে।গলার স্বর গম্ভীর রেখে বলে,
“পড়।”

পুষ্প বুঝতে পারে না কি পড়তে বলছে,
“কি?”

“কি লেখা আছে এটা পড়।”

পুষ্প পড়ে।পুরো চিঠিজুড়ে বলা আছে শিমুলের সাথে প্রেম করতে চায় সেই ইচ্ছার কথা।শিমুল উঠে দাঁড়ায়।পুষ্পের সামনে এসে বলে,
“সকালের দশবার এখন দশবার মোট বিশবার কানে ধরে উঠবস কর।”

শিলা তার ভাই তিয়াশকে দেখে সাহস করে বললো,
“দশবার বাড়লো কেন ভাইয়া?”

শিমুল হাতের মোবাইল পকেটে রাখতে রাখতে বলল,
“পিয়নগিরি করার জন্য।”

পুষ্প করুণ চোখে তাকিয়ে থাকে।এই ছেলেটা এমন করে কেন তার সাথে?কেন?কেন?এতো এতো কেন’র উত্তর পুষ্পর জানা নেই।পুষ্পর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।শিমুল কিছুক্ষণ মৌন হয়ে তাকিয়ে থাকে।তার সামনের বড়ো অবুজ,নদীর মতো শান্ত মেয়েটার দিকে।মেয়েটা কি এতোটাই অবুজ?একটা ছেলের চোখের ভাষা পড়া কি এতোই কঠিন?কঠিন’ই হয়তো শিমুল তো কখনো তার তুলোর মতো নরম মনটা খুলে দেয়নি।যানবে কিভাবে?দিয়েছে একরাশ রুক্ষতা।শিমুল তার কোকড়া চুলে হাত বুলিয়ে বলে,
“আচ্ছা যা মাফ করে দিলাম।কিন্তু নাচ টাচ ক্যানস্যাল।অকে।”

পুষ্প চোখ তুলে কিছু বলবে তার আগেই শিমুল বললো,
“আমি বলেছি তাই ক্যানস্যাল।আর কোন কথা নয়।”

পুষ্প মাথা নিচু করে সেখান থেকে চলে আসে।এই ছেলে দিনে দিনে তার দুই চোখের বিষ হয়ে গেছে।একদম পছন্দ নয়।কলেজের অনুষ্ঠান চলে যায়,পুষ্প অঅংশগ্রহণ করতে পারে না।রাগে,দুঃখে পুষ্প পাঁচদিন বাড়ির বাহিরে গেল না।অসুস্থতার বাহানা ধরে মরার মতো বিছানায় পড়ে থাকে।

শওকত তালুকদার অনন্তপুর গ্রামের চেয়ারম্যান।বর্তমানে গ্রামের দাপুটে লোক।পুরো বংশের রক্তে রক্তে রাজনীতির ছোঁয়া লেপ্টে আছে।শুধুমাত্র তার বড় ছেলে পলাশকে ছাড়া।পলাশ এই রাজনৈতিক কাজকর্ম একদম পছন্দ করে না,সোজাসাপ্টা জীবনই সে বেছে নিয়েছে।বর্তমানে সরকারি কলেজের ইংরেজি শিক্ষক।শওকত তালুকদার ভাবে এভাবে রাজনীতি তো ছেড়ে দেয়া যায় না,তাই তিনি তার ছোট ছেলেকেই রাজনৈতিক কাজে উৎসাহিত করে নিজের আসনের পাশে বেশ পোক্ত হাতে গেড়ে ফেলেছে।শিমুল লেখাপড়া শেষ করে ফেলেছে।রক্ত টগবগানো তাগড়া যুবক।মাত্র উনত্রিশ বছর বয়সেই ছাত্র লিগের লিডার পদে আসন নিয়েছে।বাড়ির সবাই বেশ মানে শিমুলকে।গম্ভীরচিত্তে থাকে প্রায় সময়।কিন্তু যখন হুংকার দিয়ে উঠে তখন আশেপাশের মানুষের বুক কেঁপে যায়,অস্থির হয়ে শিমুলের থেকে দূরে সরে যায়।এই এতো কঠিন মনের শিমুলের’ও একটা নরম মনের মানুষ আছে,অনেক বছর ধরে যাকে লালন করছে মনের ছোট পিঞ্জিরায়।যাকে না দেখলে,শক্ত সামর্থ্য শিমুলের শরীর দুর্বল লাগে।চোখের তারায় খেলে যায় একরাশ অস্থিরতা।বুকে চেপে ধরে অসহ্য যন্ত্রনা।এখন ঠিক এমন অবস্থাই শিমুলের,হাত জ্বলন্ত সিগারেট পুরুষালী কালচে ঠোঁটে চেপে হিজল গাছের চারপাশে কয়েকবার চক্কর দিয়ে ফেলেছে।আজকেও দেখা হলো না।অস্থিরতার সীমা তখন আকাশছোঁয়া।কালো ট্রাউজারের পকেটে হাত দিয়ে আবার নতুন সিগারেট নেয়।পুষ্প আজকাল বেশ একরোখা হয়ে গেছে।আগের মতো কথা শুনেনা,সামনে আসতে চায় না,কিন্তু শিমুলের যে দেখতে হবে,চোখের তারায় শান্তি শান্তি ছোঁয়া লাগাতে হবে,জ্বলন্ত মনে বরফগলা পানি ঢালতে হবে।এই মেয়েকে বুঝাবে কে?বড়ই অবুজপানা তার জেদ।নাচতে মানা করাতেই কিনা কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলো?তিয়াশকে বলে শিলাকে কয়েকবার পাঠিয়েছে কিন্তু ওই একি কথা শরীর খারাপ।এদিকে যে শিমুলের মনে বেশ অসুস্থতা চেপে ধরেছে এটা কি কেউ বুঝে?খবর নেয়?সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ রাতের গভীরতা বাড়ে।শিমুল হিজল গাছের গোড়ায় চুপচাপ বসে আছে,কিছুক্ষণ পরে তিয়াশ আসে।
“কিরে ক্লাবে যাবিনা।”

শিমুল কিছু বলেনা।যারা নেশা করে তারা বুঝে একদিন নেশা না করলে কেমন অনুভূতি হয়।ডাগর চোখের মেয়েটা যে তার চোখের নেশা।আর শিমুল আজকে পাঁচ দিন ধরে দেখছেনা,কথা শুনছেনা,কিচ্ছু না।চাঁদের আলোয় তিয়াশের দিকে তাকায়,
“শিলাকে আবার পাঠা।”

তিয়াশ বললো,
“আসে না।বলে শরীর খারাপ।”

শিমুল চুপ করেই অনেক্ক্ষণ বসে থাকে।তারপর কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায়।উদেশ্য তিয়াশদের বাড়ি।রাত বারোটা,শিলা তখন ঘুমিয়ে কাঁদা।তিয়াশ গিয়ে ডেকে তুলে।অসময়ে ভাইয়ের ডাকে বড়ই বিরক্ত সে।তিয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হয়েছে ভাই।”

“পুষ্পরে একটু ফোন দে তো।”

ঘুমে শিলার চোখ জ্বলছে।পাশেই রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে বললো,
“পুষ্পর কাছে তো মোবাইল নাই,চাচীর কাছে মোবাইল থাকবে।”

তিয়াশ বললো,
“এক কাজ কর তুই ফোন করে বল,জরুরি নোটের জন্য ফোন দিছিস।”

শিলা মাথা চুলকে ফোন দেয়।এই শিমুলের হাবভাব সে বুঝতে পারছেনা।তার জন্যই তো পুষ্প নাচতে পারলো না তাই শিলারা নাচের প্রতিযোগিতায় হেরে গেলো।এখন আবার কি চায়?

রাতে পুষ্পর ছোট খালা ফোন দিয়েছিলো,পুষ্প কথা বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলো,তাই তার কাছেই ছিলো মোবাইল।এতো রাতে মোবাইলটা চিৎকার করে ডেকে উঠাতে পুষ্প দরফরিয়ে উঠে বসে,শিলার নাম্বার দেখে ফোন ধরেই বলে,
“কিরে এতো রাতে ফোন দিলি কেন?”

পুষ্পর গলা শুনে শিলা মোবাইল তিয়াশের হাতে দেয়,তিয়াশ উঠোনে দাঁড়ানো শিমুলের কাছে নিয়ে যায়,পুষ্প কোন কথা শুনতে না পেয়ে বললো,”শিলা,”

শিমুল মোবাইল হাতে নিয়ে,উঠোনের দক্ষিন দিকে জলপাই গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।শীতল কন্ঠে বললো,
“পাঁচ দিন ধরে কলেজে যাচ্ছিস না কেন?”

শিলার ফোনে শিমুলের কন্ঠ শুনে পুষ্প কান থেকে ফোনটা নামিয়ে আবার নাম্বার চেক করে।শিলার নাম্বারই তো!
শিমুল’ই আবার বললো,
“কথা বলতেছিস না কেন?”

পুষ্প বুকে থু থু ছিটিয়ে দম নেয়।এমন কড়া কন্ঠের গলা শুনলে পুষ্পর ভয় হয়।
“শরীর অসুস্থ ছিলো।”

“এখন শরীর ভালো হয়েছে?”

পুষ্প বললো,
“জ্বী।”

“তাহলে দেখা কর?”

শিমুলের এমন বেপরোয়া কথায় পুষ্পর চোখ পাথরের মতো স্থির হয়ে যায়।এতো রাতে দেখা করবে মানে কি?তার কন্ঠে বিষ্ময় ঝুলে পড়ছে,
“এতো রাতে?”

“হ্যাঁ।এখনি দেখা করবি।আমি মোড়ের হিজল গাছের নিচে আছি।কুইক”

পুষ্পর বুক ধরফর করে,এই ছেলে এমন কেন?এতো রাতে কেউ দেখা করে?যেন পুষ্প তার প্রেমিকা লাগে।
“বারোটা বাজে শিমুল ভাই।”

শিমুল ত্যাড়া গলায় বলে,
“বাজলে বাজুক।”

পুষ্প গলা শুকিয়ে যায়,নিচু গলায় ফিসফিস করে বললো,
“আব্বা ঘরে আছে,শুনতে পাবে।”

শিমুল কড়কড়ে গলায় বললো,
“তোর আব্বার গুস্টি কিলাই।”

পুষ্প মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে,বুঝানোর চেষ্টায় বললো,
“প্লিজ।”

“আচ্ছা তুই দরজা খোল আমি আসছি।”

শিমুল যা বলে তাই করে,বড্ড একরোখা,জেদি,পুষ্প উপায় না পেয়ে বললো,
“আচ্ছা আমি আসছি।”

শিমুল ফোনটা তিয়াশের কাছে দিয়ে হিজল গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়।পুষ্পদের বাড়ি থেকে এখানে আসতে এক মিনিট লাগবে।কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারে এক মানবী হেটে আসে সাথে নিয়ে আসে শিমুলের বুকের ওষুধ।বুকে যে এতোক্ষণ প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছিলো!পুষ্পর খুব লজ্জা লাগছে সাথে ভয়ও।এতোরাতে একটা ছেলের সাথে দেখা করতে বুকটা কাঁপছে বেশামাল ভাবে।শিমুল এগিয়ে আসে।মোবাইলের স্কিনে টাচ করে আলো দেয় পুষ্পর মুখে।গুনে গুনে দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে শিমুলের মনে হলো অভুক্ত শিমুল খেতে পেলো,মনের খাবার।উতপ্ত বুকে একরাশ ঠান্ডা বৃষ্টি হয়ে গেলো।অথচ বালিকা কিছুই বুঝলো না।আচ্ছা এই যে শিমুলের বুকে উত্তাল তুফান বইছে এটা কি পুষ্প দেখে না?কবে দেখবে?আর কত?দুজনের একজনও কোন কথা বললো না।কিছুক্ষণ পরে শিমুল নরম স্বরে বললো,
“কালকে থেকে কলেজে যাবি।”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“যাব।”

“যদি না যাস তো?”

পুষ্প মাথা তুলে বললো,
“তো?”

“আজকের মতো রাত বারোটায় ডেকে আনবো,আর না আসলে বাড়িতে চলে যাবো।”

পুষ্প বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে থাকে ছাইরঙ্গা টিশার্ট পড়নে ছেলেটার দিকে।কি বিশাল অধিকার নিয়ে কথা বলে?

শিমুল তখনো পুষ্পকে দেখছে।দিন দিন যেন মায়াবতী হয়ে যাচ্ছে।পুষ্পর নরম গাল ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছায় শিমুলের হাত নিশপিশ করে,বড্ড জ্বালায় মেয়েটা।শিমুল মাথার চুল টেনে অন্যপাশে ফিরে যায়।

চলবে তো????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here