#শিমুল_ফুল
#১২,১৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
১২
রোকসান অনেকদিন ধরেই সন্দেহ করছিলো আজকে যখন বিয়ের কথা বলাতে পুষ্প কেঁদে দিয়েছে তখনি সন্দেহ আরো গুরুতর হয়।রাতে ভাত খেতে ডাকলে তখন দেখে পুষ্প মোবাইলে কি জানো করছে।পরে তিনি চেক করে কিছুই পায়নি।কিন্তু রোকসানা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে পুষ্প প্রেম করে।তার এতো ছোট মেয়েটা প্রেম করে ভাবতেই গা শিউরে উঠে।নিজেই নিজের মনকে বুঝ দেন যে এমন কিছুনা,পুষ্প এসবে পা বাড়াবেনা।রাত একটার দিকে প্রাকৃতিক ডাকে রোকসানার ঘুম ভেঙ্গে যায়।বাথরুম থেকে এসে কি মনে করে পুষ্পর দরজা ধাক্কা দেয়,পুষ্প সচরাচর দরজা বন্ধ করে ঘুমায়।আজকে খোলা পেয়ে তিনি ভেতরে ঢুকে।ঘুটঘুটে অন্ধকারে হঠাৎ মনে হলো মেয়েটাকে দেখে যাই,লাইট জ্বালিয়ে রোকসানার প্রান পাখি উড়ে চলে যাবার অবস্থা।পুষ্প বিছানায় নেই, দরজা বাহির থেকে আটকানো।তিনি বুঝতে পারলনা কি করবে,মিজানকে ডাকবে নাকি নিজেই খুঁজতে যাবে।পুষ্প বিয়ের কথা শুনে পালিয়ে গেলো?এসব ভেবে তিনি নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।কতো আশা ছিলো মেয়েটাকে নিয়ে আর পুষ্প এটা কি করলো?সিদ্ধান্ত নিলেন যতোক্ষণ পুষ্প না আসে অপেক্ষা করবেন।
পুষ্প চোখের মনি অস্বাভাবিক বড় দেখাচ্ছে।আড়চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে আজকে দরজা বন্ধ করার কথা মনে ছিলো না।ভয়ার্ত চোখে তার আম্মার দিকে তাকায়।রোকসানা এগিয়ে আসে।পুষ্পর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
“কই গিয়েছিলি?”
পুষ্প জ্বিব দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।তার নিশ্চুপতা দেখে রোকসানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“কথা বল।কই গিয়েছিলি?”
পুষ্প মিথ্যা করে বললো,
“আম্মা শিলা আসছিলো।জরুরী নোট নিতে।”
“রাত আড়াইটা বাজে নোট নেয়?কই গিয়েছিলি বল।”
পুষ্প বুকটা অস্বাভাবিকভাবে কাঁপছে।কি বলবে ভেবে পায় না,
“আম্মা প্রস্রাব করতে গিয়েছিলাম।”
“ঘরে বাথরুম থেকে বাহিরে যাবি কেন?
আগুন আগুন প্রশ্নের মুখে পড়ে পুষ্পর নাকের পাটাতন ফুলে চোখ গড়িয়ে জল পড়ে।রোকসানা পুষ্পর দুই গালে হাত দিয়ে চেপে ধরে হিসহিস করে বললো,
” কু,ত্তার বাচ্চা।কই গিয়েছিলি সত্যি করে বল।তা না হলে জ,বাই করে ফেলবো কিন্তু।”
পুষ্পর দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ে।তোতলে বললো,
“আম্মা বিশ্বাস করো আমি…”
রোকসানা বললো,
“রাত একটা বাজে যে মেয়ে ঘরে থাকেনা ফিরে আসে আড়াইটা বাজে।তাকে বিশ্বাস কিভাবে করবো?”
পুষ্প কেঁপে কেঁপে কাঁদে।রোকসানার চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে।
“এই অসভ্য নিলজ্জ মেয়ে তুই আমাদের ঘুমে বেঁচে ফেললি?”
থেমে আবার বললেন,
“ছেলেটা কে?”
পুষ্প চোখ তুলে তার আম্মার দিকে তাকায়।
“নাম কি?”
পুষ্প চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।রোকসানার এই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা সহ্য হয় না।পুষ্পর নরম গালে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,
“নাম বল।”
পুষ্প তারপরেও কিছু বলেনা দেখে তিনি হাত দিয়ে এতো জোড়ে চাপ দিলেন যে ঠোঁট কেঁটে,দাতের সাথে গালের নরম চামড়া লেগে কেঁটে রক্ত বের হয়ে যায়।পুষ্প ককিয়ে উঠলেও তিনি ছাড়েন না।আবারো জিজ্ঞেস করে ছেলেটার নাম বলার জন্য।পুষ্প বলেনা।রোকসানা রাগে শরীরের সব শক্তি দিয়ে পুষ্পর গালে থাপ্পড় দেয়।পুষ্প ছিটকে গিয়ে টেবিলে পড়ে কপাল ফুলিয়ে ফেলে।রোকসানা পিছন থেকে পুষ্পর চুলের মুঠি ধরে টেনে বলে,
“একবারো আমাদের কথা ভাবলি না?নিজের গায়ে কলংক লাগাতে চলে গেলি?তোর আব্বার তোকে নিয়ে কতো স্বপ্ন সেটা বুঝলি না?এখন তোর আব্বা এসব শুনলে তো স্ট্রোক করবে।আল্লাহ আমার পেটে এ কেমন ব,দমায়েশের জন্ম দিয়েছি।”
এটা বলে তিনি নিজের কপালে নিজে থাপ্পড় মারতে থাকে।পুষ্প ফুপিয়ে কেঁদে বলে,
“আম্মা”
রোকসানা টেবিলের উপর থেকে স্টিলের স্কেল হাতে নেয় পুষ্প কিছু বুঝার আগেই এলোপাথাড়ি মারতে থাকে পুষ্প আর্তনাদ করে সরে গেলে টেনে বিছানায় ফেলে মারে।পুষ্প কেঁদে কেঁদে বলে,
“আম্মা আর মাইর না আম্মা।”
রোকসানা থামে না।এমন মেয়ে জন্ম দিয়েছে!যে কিনা এতো রাতে ছেলের কাছে চলে যায়।পুষ্পর চুল খামচে বললো,
“নাম বল।”
সারা শরীরে মরণব্যথা নিয়ে পুষ্প চুপ করে বিছানায় পড়ে আছে।রোকসানা আবারো স্কেলে দিয়ে আঘাত করে,পুষ্প আর সইতে পারে না।অস্ফুট স্বরে বললো,
“শিমুল।শিমুল ভাই।”
চেয়ারম্যানের ছেলে শিমুলের নাম শুনে রোকসানা স্তব্ধ হয়ে যায়।এই মেয়ের মাথা কি ঠিক আছে?কতো বড় শিমুল তার সাথে নাকি প্রেম করে,আবার এতো গভীর রাতে দেখাও করে।তার মেয়েটা ঠিক আছেতো?অজানা ভয়ে রোকসানার কলিজা কাঁমড়ে উঠে।
ধপ করে পুষ্পর বিছানায় বসে বললো,
“শিমুল?”
পুষ্প ঠোঁট কামড়ে কাঁদে।মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।রোকসানা কপালে হাত রেখে শব্দ করে কাঁদে।
“আল্লাহ কি বলে এই মেয়ে?কই শিমুল কই তুই?মাথা ঠিক আছে?”
পুষ্পর এই মূহুর্তে ভিষন অসহায় লাগছে।মায়ের কান্না দেখে দম আটকে আসতে চায়।মনে হয় এই প্রেম না করলেই ভালো ছিলো।রোকসানা বলে,
“কতো দিনের প্রেম?”
পুষ্প সত্যিটা বলে না।মাথা নামিয়ে বললো,
“কিছুদিন।”
“আর কবে থেকে রাতে দেখা করিস?”
পুষ্প মিথ্যা করে বললো,
“আজকেই প্রথম।”
রোকসানার বিশ্বাস হয় না।
“সত্যি করে বল।”
পুষ্প নিজের মাথায় হাত রেখে বললো,
“মাথায় হাত দিয়ে বলছি আম্মা আজকেই প্রথম।”
রোকসানার চোখে শিমুলের উঁচু লম্বা গড়ন ভেসে উঠে।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“তুই ঠিক আছিস তো?সত্যি বলবি।”
পুষ্পর মা কিসের কথা বলছে পুষ্প বুঝতে পারে।তার শিমুল তো এতো খারাপ না।উপর নিচ মাথা নেড়ে বললো,
“আমরা খারাপ কিছু করিনি আম্মা।”
পুষ্পর দিকে তাকিয়ে রোকসানা বলেন,
“তাহলে রাতে কিসের দেখা?এতো বড় ছেলের সাথে কিসের সম্পর্ক? ছেলেদের কি চিনিস তুই?কতোটুকু চিনিস,একবার সব আদায় করতে পারলে রাস্তায় ছুড়ে মারতে এক মূহুর্ত দেরী করবেনা।”
পুষ্প বিশ্বাসের সাথে বললো,
“শিমুল ভাই এমন না।”
রোকসানা তেতে উঠে।
“বেশী চিনে ফেলেছিস? চেয়ারম্যানের ছেলে সর্বনাশ করে চলে গেলে কি করতে পারবি?”
তারপর পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাদের কথা একবারো ভাবলি না?কিভাবে এমন খারাপ হলি তুই?তোকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম।”
পুষ্পর সারা শরীরে ব্যাথা,অন্তরে ব্যাথা।মায়ের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।তার শিমুলের উপর তার বিশ্বাস আছে শিমুল তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
রোকসানা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ পরে বললো,
“এখন থেকে শিমুলকে ভুলে যাবি।সাফিন ভালো ছেলে বিয়ে হলে শহরে থাকবি।শিমুলের থেকে ভালো রাখবে তোকে।”
শিমুলকে ভুলে যাবে?পুষ্প সব ব্যাথা ভুলে রেগে বললো,
“কখনো ভুলবো না।”
“সাফিন এর থেকে ভালো ছেলে।”
পুষ্প রোকসানার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার শিমুলকে চাই।”
রোকসানার চোখের পানি পড়ছে।মেয়ে এতটা খারাপ কবে হলো টের পেলো না!এমন উগ্র আচরনে তার মেজাজ আকাশ ছুঁয়ে যায়।হাতের স্কেল দিয়ে আবার পুষ্পকে আঘাত করে বললো, “সাফিনকেই বিয়ে করবি।বেশী নড়চড় হলে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেবো।জন্ম যখন দিতে পেরেছি মারতেও পারবো।”
গায়ের জোড় দিয়ে আঘাত করে মনের রাগ মিটায়।পুষ্প ছুটে রোকসানার পায়ে ধরে বললো,
“আম্মা আর মাইরো না আম্মা মরে যাচ্ছি।”
“তাহলে বল সাফিনকে বিয়ে করবি।”
পুষ্প আহাজারি করে বললো,
“আমাকে মেরে ফেললেও আমি শিমুলকে ছাড়বো না।”
রোকসানা পুষ্পকে টেনে বিছানায় ফেলে ইচ্ছামত থাপ্পড় দিয়ে বলে,
“তাহলে মরে যা।তোর মতো মেয়ে লাগবেনা।নিলজ্জ বেহায়া,অসভ্য।”
এবার পুষ্প আর চোখ খুলে তাকাতে পারে না নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে।মনে মনে বলে ‘শিমুল তুমি কই জান দেখোনা তোমার ফুলকে কিভাবে মেরেছে।আমি আর সইতে পারছিনা’ কিন্তু শিমুল তো বুঝতেও পারে না তার ফুলের নির্মম পরিনতি।
রোকসানা যাওয়ার আগে বলে,
“কালকে দেখতে আসবে কোন উলটাপালটা কিছু করলে আমি আর তোর আব্বা একসাথে বিষ খেয়ে মরে যাবো।”
তারপর চুপচাপ তার স্বামীর কাছে যায়।সিদ্ধান্ত নেয় আপাতত কাউকে কিছু বলবে না।বাকি রাত নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে।
সকালের দিকে পুষ্পর জ্বর চলে আসে।সারা শরীরে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে।আজকে ঢাকা থেকে দেখতে আসবে এই অবস্থায় কিভাবে দেখাবে।রোকসানা জ্বর আর ব্যাথার ঔষুধ খাইয়ে দিলেন।নয়টার দিকে শিলা আসে।রোকসানা শিলাকে দেখে বললো,
“শিলা পুষ্প আজকে কলেজে যাবে না।”
“কেন চাচী?”
রোকসানা গরুর মাংস ধুয়ে নিতে নিতে বলে,
“সাফিনকে দেখেছো না সাফিনের পরিবার আজকে পুষ্পকে দেখতে আসবে।”
শিলা চমকে রোকসানার দিকে তাকায়।তারপর বলে,
“কিন্তু চাচী আজকে তো কলেজে রেজিষ্ট্রেশন করার ডেট।একটা সিগনেচার লাগবে।”
“পরে দিলে হবে না?”
“না চাচী আজকেই দিতে হবে।”
আজকে মেহমান না আসলে রোকসানা নিজে পুষ্পকে কলেজে নিয়ে যেতো।কিন্তু নতুন মানুষ আসবে হরেক রকমের রান্না করতে হবে।তাই শিলাকে বললো,
“শিলা পুষ্পর তো জ্বর তুমি নিয়ে যাও কাজ শেষ হলে একটা রিক্সা করে দিও।”
“আচ্ছা চাচী।”
পুষ্পর রুমে গিয়ে পুষ্পর অবস্থা দেখে
শিলা মৃদু আর্তনাদ করে।পুষ্প শিলাকে দেখে সব খুলে বলে।শিলা তখনি শিমুলকে এসএমএস করে জানায়,”পুষ্প দেখা করবে কলেজে যাওয়ার পথে।”
শিমুল আর তিয়াশ ক্লাবে বসে ছিলো।সব ছেলেপেলে মিছিলে পাঠিয়েছে।শিলার মেসেজ পেয়ে কপাল কুচকে যায়।দ্রুত পায়ে গিয়ে রাস্তার সামনে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণ পরে শিলা আর পুষ্প আসে।শিমুল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।বুকে সুক্ষ ব্যাথা অনুভব হয়।কালকে রাতেও তো সুস্থ ছিলো আজকে কি হলো যে হাটতে পারছেনা!শিলাকে ইশারা করে ক্লাবের ভেতরে আসতে।
শিমুলের অফিস রুমে পুষ্পকে বসিয়ে শিলা আর তিয়াশ বাহিরে চেয়ারে বসে পড়ে।শিমুল একনজরে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে আছে।এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
“কি হয়েছে?”
পুষ্প নিঃশব্দে কাঁদে।শিমুল হাতে ধরে দাঁড় করাতে নিলে পুষ্প কেঁদে উঠে।শিমুল ওরনা সরিয়ে হাত দেখে বললো,
“এগুলা কি পুষ্প?”
“আম্মা সব জেনে ফেলেছে।”
“কিভাবে?”
“রাতে এসে রুমে পায়নি আমি তখন বাহিরে ছিলাম।”
শিমুল চোখ ভুলিয়ে বললো,
“সারা শরীরে মেরেছে?”
“হ্যাঁ।”
জামার উপর দিয়ে যতোটুকু দেখা যায় দেখে শিমুল বললো,
“তোর মা কি মানুষ?এভাবে কেউ মারে?”
পুষ্প শিমুলের সানিধ্যে এসে যেন আরো গলে যায়।কেঁদে কেঁদে বলে,
“আমি আপনাকেই ভালোবাসি,আপনাকেই বিয়ে করবো।সাফিনকে না।”
শিমুল খুব সাবধানে পুষ্পকে নিজের বুকে নেয়।
“তুই আমারই জান।আর কেউ নিতে পারবেনা।”
পুষ্প শিমুলের বুকে মাথা রেখে শান্তি পায়।
“আমাকে বিয়ে করবেন?”
শিমুল পুষ্পর মুখে হাত রেখে বললো,
“এখন করবি?চল তাহলে”
“পরে।”
পুষ্পকে সামনে দাঁড় করিয়ে দেখে,তার ছোট্ট ফুলের গায়ের প্রতিটি আঘাত তাকে কষ্ট দিচ্ছে।পুষ্প শিমুলের চোখে পানির অস্তিত্ব লক্ষ করে।শিমুল পুষ্পর কালসিটে দাগে অনেক অনেক চুমু খেয়ে বললো,
“এভাবে কেউ মারে?পাগল টাগল নাকি?আমি কি কথা বলবো?”
পুষ্প শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে।শিমুল আবারো পুষ্পকে বুকে নেয়।কালো দাগে আলতো করে চুমু খেয়ে বললো,
“আমি তোর আব্বার সাথে কথা বলে নেবো।”
পুষ্প তখনো শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।শিমুল চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বললো,
“খুব খারাপ লাগছে জান?”
পুষ্প ঠোঁট উল্টে বললো,
“আপনি ভালোবাসলে সব সইতে পারবো।”
শিমুল তাকিয়ে থাকে তার ফুলের দিকে কতটা যন্ত্রণা পেয়েছে মেয়েটা!
“আর কয়টা দিন তারপর একদম কাছে নিয়ে আসবো।”
শিমুল গলা উচিয়ে তিয়াশকে ডাকে,তিয়াশ আসলে বলে,
“বাজার থেকে ব্যাথার অয়েন্টমেন্ট নিয়ে আয়।জলদি।”
তিয়াস চলে গেলে পুষ্প বললো,
“এসব লাগবে না।”
“আমার লাগবে।”
তারপর আবারো পাগলের মতো পুষ্পর শরীরে আলতো আদরে যেন ব্যাথা কমানোর বৃথা চেষ্টা করে।পুষ্প চোখ বন্ধ করে ভাবে,’এমন ভালোবাসলে মার খেতেও ক্ষতি নেই।’
“খুব ভালোবাসি শিমুল ভাই।”
“সরি রে জান।খুব ব্যাথা হচ্ছে?”
শুষ্ক মুখে হেসে পুষ্প বললো,
“আপনি আদর করলে সব ব্যাথা পালিয়ে যায়।”
শিমুল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে,এতো ভালো কেন মেয়েটা?
পুষ্প কপালের ফোলাটা দেখিয়ে বললো,
“এখানে একটা চুমু দেন না।”
চলবে…….
#শিমুল_ফুল
#পর্ব_১৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
দুপুরে শিমুল মিজান শেখের হোটেলে যায়।দুপুরের সময় মানুষ হুড়মুড়িয়ে ভাত খেতে আসছে,মিজান শেখ ক্যাশে বসে আছে।শিমুলকে দেখে তাকায়।চেয়ারম্যানের ছেলে তার উপরে ছাত্রলীগের সভাপতি একালায় বেশ দাপট তার।রাগী,একরোখা অতিরিক্ত ধূমপান করা শিমুলকে তার খুব বেশী একটা পছন্দ না।কিন্তু সামনা-সামনি ভালোই ব্যবহার করে,বাজারে হোটেল চালায় নেতাদের তোষামোদ না করলে কিভাবে হবে?
শিমুল এগিয়ে গেলে মিজান শেখ বললো,
“কালু শিমুল বাবা আসছে খাওন দে জলদি।”
শিমুল টেবিলে না বসে মিজান শেখের পাশের চেয়ারে বসে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে কথা গুছিয়ে নেয়।আজকে এখানে আসার আগে অনেক ভেবেছে তার মনে হয়েছে ঝামেলা করার চেয়ে আগে পুষ্পর বাবার সাথে কথা বলাই ভালো।মিজান শেখ বললো,
“বাবা কি দিয়ে ভাত খাবে বলো।”
শিমুল মাথা নেড়ে বললো,
“চাচা ভাত খেতে আসিনি।”
“তাহলে কেন এসেছো?কোন কাজ ছিল নাকি এদিকে?”
“চাচা আমাকে বাবা থেকে জামাইবাবা বানানো যায় না?”
শিমুলের কথা শুনে মিজান শেখ স্তব্ধ হয়ে যায়।জামাই বাবা মানে!পুষ্পকে বিয়ে করতে চায়?তিনি মাথা নেড়ে বললেন,
“কি বললে বুঝলাম না।”
শিমুল মাথাটা নিচু করে গোপনে শ্বাস নেয়।নিজের বিয়ের কথা নিজে বলতে কেমন যেন লাগছে।তারপরেও বলতে হবে।পুষ্পকে নিজের করে নিতে হবে।
“পুষ্পর কথা বলছিলাম।”
মিজান অবাক হয়ে সামনে বসা তে*জী ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।কই শিমুল আর কই পুষ্প!দুজনের বয়স,পরিবার সব কিছুই অসাদৃশ্য।তারপরেও কি কঠিন আবদার!মিজান শেখের মুখের আদল মূহুর্তেই শক্ত হয়ে যায় গম্ভীর গলায় বলে,
“কি বলছো এসব মাথা ঠিক আছে?”
শিমুল সোজা হয়ে বসে বললো,
“জ্বী।”
মিজান শেখ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।কোনভাবেই তার নিষ্পাপ মেয়েকে এমন রা*গী,চ*ন্ডাল ছেলের কাছে বিয়ে দেয়া যাবে না।
“এটা কোনভাবেই সম্ভব না শিমুল।”
শিমুলের কপাল কুঁচকে যায়।
“কেন সম্ভব না?”
“তুমিই ভালো বুঝ কেন সম্ভব না।”
“আমি বুঝেই আপনার কাছে আবদার করেছি।”
“তোমার বয়স আর পুষ্পর বয়সের পার্থক্য দেখেছো?”
“মনের মিল থাকলে বয়সের পার্থক্য দিয়ে কি হবে?”
“এটা সম্ভব না।”
শিমুল ঠোঁট চেপে হাসে।
“আপনার মেয়ে বলেছে আজকে যারা দেখতে আসবে পুষ্প সে ছেলেকে বিয়ে করবেনা।”
মিজান শেখ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।তার মেয়ে বলেছে মানে?তারপর বিস্মিত নয়নে শিমুলের দিকে তাকালে শিমুল বলে,
“পুষ্প আর আমি দুজন দুজনকে ভালোবাসি।সুতরাং পুষ্পকে আমিই বিয়ে করব।”
মিজান শেখ অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।শিমুল আবার বললো,
“আজকে যারা আসে বলে দিবেন যে এখন বিয়ে দিবেন না।”
“আমি তোমার কাছে মেয়ে কখনোই দেবো না।”
শিমুল মাথা নেড়ে বলে,
“কেন বুঝেন না চাচা?আমার কাছেই আপনার মেয়ে সুখে থাকবে।”
মিজান শেখ কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে থাকে।শিমুল মিজান শেখের হাত ধরে বললো,
“চাচা আপনার মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসি,রানির মতো করে রাখবো।”
“যে ছেলে রাজনীতি করে যার পদে পদে শ*ত্রু তার কাছে আমি মেয়ে কখনোই বিয়ে দেবো না।”
“চাচা এগুলো কোনো ব্যাপার না।”
“শিমুল এসব নিয়ে আর একটা কথাও না।”
শিমুল ভাবে তার কথাগুলো কি বেশী কড়া হয়ে গেলো?আসলে সব জায়গায় এমন লেকচার দিতে দিতে কখন যে লেকচার চলে আসে খেয়াল থাকে না।সে উঠে দাঁড়ায়।মিজান শেখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“চাচা আমাদের সম্পর্কের কথা শুনে পুষ্পকে আবার মাই*রেন না।আর যা বললাম মনে রাখবেন।পুষ্পকে আমিই বিয়ে করবো”
মিজান দাঁতে দাঁত চে*পে তাকিয়ে থাকে।শিমুল তার মতো চলে যায়।রেখে যায় এক বাবার বুকভরা হা*হাকার।মিজান পুষ্পকে নিয়ে এমন কথা কখনো আশা করেনি।পুষ্পকে পাখির মতো উড়তে দিয়েছিলো।
দুপুর দুইটায় ঢাকা থেকে সবাই আসে।সাথে আসে মুন্নী।পুষ্প প্রচন্ড জ্বর আর ব্যা*থা নিয়েও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে।ব্যা*থার দাগ ঢেকে রাখতে ফুলহাতা জামা পড়ে নেয়।সাফিনের মুখ থেকে হাসি সরছেই না।সবাই রাজি পুষ্পও রাজি।এবার বুঝি পুষ্প তার হয়েই গেলো।মিজান শেখ আসেন তার কিছুক্ষণ পরে।পুষ্পর দিকে একবার তাকিয়ে রা*গে শরীর রি রি করে উঠে।মেয়েটা এ কার সাথে জড়িয়ে গেলো?সেই তখন থেকে মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে,প্রেসারটা বোধহয় বেড়ে গেছে কাউকে কিছু বলল না,সবার সাথে হাসি-খুশি মুখেই কথা বলে।পুষ্পকে সাফিনের বাবা মায়ের খুবই পছন্দ হয়।তাছাড়া ছেলের যেহেতু এতো পছন্দ তাহলে আর অমত করার প্রশ্নই আসে না।উনারা জানায় সামনের শুক্রবার সাফিনের দাদী আর বোন আসলে ফাইনাল ডেট করা হবে।মাগরিবের সময় সবাই চলে যায় শুধু মুন্নী থাকে।
পথে হঠাৎ করেই সাফিনদের সি এন জি ন*ষ্ট হয়ে যায়।সি এন জির ড্রাইভার নেমে ঠিক করার চেষ্টা করে সাথে সাফিনও নামে।
তখনি বাইক এসে সাফিনের কাছে থামে।সাফিন শিমুলকে দেখেই চিনে ফেলে সেদিনের উ*গ্র ছেলেটাই এটা।
শিমুল এগিয়ে এসে কাছে দাঁড়ায়।
“কেমন আছেন?”
সাফিন অবাক হয়ে যায় দুজনের পরিচয় হয়নি যে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার কোন দরকার আছে।সে চুপ করে থাকে।শিমুল আবার বলে,
“পুষ্পদের বাড়িতে গিয়েছিলেন?”
“জ্বী।”
শিমুল সোজা সাপটা বলে,
“আমি আর পুষ্প একে অপরকে ভালোবাসি।আমাদের রাস্তায় আসলে পেটের না*ড়ি*ভুঁ*ড়ি বের করে হাতে ধরিয়ে দিবো।”
সাফিন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটা ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিচ্ছে!শিমুলের এলাকায় কোন কথা বলেও লাভ নেই তাই সাফিন কথা না বাড়িয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সাফিনের এই নিরুত্তর থাকা শিমুলের সহ্য হয় না।শক্ত হাতে সাফিনের শার্টের কলার ঠিক করে বলে,
“ফোন করে জানিয়ে দেবেন আপনি এই বিয়েটা করবেন না।এখনি ফোন করেন না করুন।”
সাফিন আড়চোখে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুন্নীর নাম্বারে ফোন দেয়,
“ভাবী আমি আপনার বোনকে বিয়ে করতে পারবোনা।”
মুন্নী আৎকে উঠে বললো,”কেন?”
“এমনি।”
এটা বলে ফোন কেটে দেয়।
শিমুল বলে,
“গুড বয়।আর যেনো এই এলাকায় না দেখি।শিমুলের ফুল তুলতে চাইলে শিমুল গাছের কাটা ফুটতেও সময় লাগবেনা।আর একবার কাটা ফুটলে যন্ত্র*নায় ম*রা ছাড়া উপায় থাকবে না।”
সি এন জি ড্রাইভারের হাতে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে শিমুল চলে যায়।সাফিনের খুশির জোয়ারে ভাটা পড়ে।উচ্ছাসে ফুলানো বুক হাহা*কারে নেতিয়ে যায়।শিমুল চলে যাবার পরে ড্রাইভার গাড়ি চালু করে সাফিন বুঝতে পারে গাড়ি ন*ষ্ট এটাও শিমুলের ইশারা ছিলো।
মুন্নী খুব আশা নিয়ে বলেছিলো সাফিন পুষ্পকে খুব পছন্দ করে।এখন হঠাৎ না করে দেওয়াতে মুন্নী ঘাবড়ে যায়।এদিকে মিজান শেখের প্রেশার বেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে।রোকসানা মাথায় তেল পানি দিয়ে তেতুলের শরবত বানিয়ে খেতে দেয়।মুন্নী যখন এই খবর বলে,তখন মিজান শেখ বুঝতে পারে এটাও শিমুলের গুটি নাড়ার চাল নাহলে পথেই কি এমন হলো যে না করে দিলো।তিনি অ*সুস্থ শরীরে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়।পুষ্পর সামনে গিয়ে দুইগালে দু’টো থা*প্পড় দিয়ে বললো,
“বেশী বড় হয়ে গেছিস?”
পুষ্পকে হঠাৎ আ*ঘাত করায় ছিটকে পড়ে।মিজান শেখ থামে না,পুষ্পর পিঠে দুমদাম করে কি*ল বসিয়ে দেয়।পুরুষ মানুষের জোড়ালো আ*ঘাত পুষ্প সইতে পারে না।সে তার স্বরে চেচিয়ে উঠে।
মিজান শেখের গলায় তখন হুংকার।
“এতোই যখন প্রেম করার সাধ আমাকে বলতি আমি বিয়ে ঠিক করতাম।কি করলি এটা?সন্ত্রাসের খপ্পরে গিয়ে পড়লি,নিজেও মরবি আমাদেরও মারবি।”
রোকসানা বুঝতে পারে মিজান শিমুলের ব্যাপারটা জেনে গেছে।
মিজান আবার তেড়ে মারতে গেলে রোকসানা সামিনে দিয়ে গিয়ে আটকায়,
“আর মেরো না,কালকে অনেক মেরেছি।”
মিজান রোকসানার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
“তুই কই থাকিস?তুই থাকতে তোর মেয়ে নোংরামি করে বেড়ায় কেমন করে?ওই ছেলের সাথে কিভাবে সম্পর্ক হলো?চোখ কই থাকে তোর?”
রোকসানা হতবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।বিয়ের এতো বছরে মিজান কখনো গায়ে হাত তুলেনি,আজকে মেয়ের জন্য মা*রলো!নিভে যাওয়া গলায় বললো,
“কালকে জানতে পেরেছি।আমিও জানি না।”
মিজানের সব রা*গ যেনো রোকসানার উপরে গিয়ে পড়ে।চুলের মুঠি ধরে বললো,
“মাইয়ারে কি বানাইছিস?তোর মাইয়া আর পোলা পায় নাই?আর পাইতে হবে কেন বাবা মায়ের অপেক্ষা করা গেলো না।”
রোকসানা লজ্জায় চিৎকার করতেও ভুলে যায়।মুন্নী আর পুষ্প মিজানকে ছাড়ায়।পুষ্প বলে,
“আব্বা আম্মারে ছেড়ে দাও আব্বা।”
সাথে সাথে মিজান রোকসানা কে ছেড়ে পুষ্পর গলা টিপে ধরে,
“তুই আমারে আব্বা ডাকবি না।আমার পুষ্প মরে গেছে,যেই পুষ্প অনেক লেখাপড়া করে বড় অফিসার হওয়ার ইচ্ছা ছিলো সেই পুষ্প আর নাই।”
বলিষ্ঠ হাতের আঙুলের চা*পে পুষ্পর দ*ম আট*কে যায় মুন্নী টেনে তার আব্বাকে সরায়।
কালকের আঘা*তের ব্যা*থাই এখনো তাজা।আজকের আ*ঘাত পেয়ে পুষ্পর পাখির মতো ছোট্ট নরম শরীর নেতিয়ে পড়ে যায়।আলমারির হাতল ধরে কোনরকম দাঁড়িয়ে থাকে।রোকসানা চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে পুষ্প সেদিকে তাকিয়ে গলা ফাটিয়ে কাঁ*দতে ইচ্ছা করে কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মুন্নী মায়ের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে।মিজান শেখের শরীর কাঁ*পছে,মাথা ঘুরিয়ে আবার পুষ্পর দিকে তাকায়।কতো স্বপ্ন ছিলো মেয়েটাকে নিয়ে।তিনি তো বিয়েও দিতে চায়নি।রোকসানা জানে বিধায় এতো চাপ দিচ্ছিলো।আজকে শিমুলের বলা কথাগুলো মনে পড়ে আবার শরীরে রাগ তরতর করে লাফিয়ে উঠে,তাকে বলে কিনা পুষ্পকে না মা*রতে।কতো সাহস তার মেয়ের উপর অধিকার খাটাতে আসে।আবার বলে কিনা বিয়ে করবে।বিছানায় থাকা টর্চ লাইট হাতে নিয়ে আবার পুষ্পর কাছে যায়।কেউ কিছু বুঝে উঠার আগে,
“পুষ্পর চুল টেনে পিঠে টর্চলাইট দিয়ে আ*ঘাত করে।এবার যে আ*ঘাতের পরিমান আরো বেশী পুষ্প চুপ করে থাকতে পারে না শব্দ করে আম্মা আম্মা বলে কেঁদে উঠে।রোকসানা পাগলের মতো এসে মেয়েকে ঝাপটে ধরে বলে,
“কি করো মেরে ফেলবা নাকি?বাপে মেয়ে মারা অমঙ্গল।”
মিজান রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
“মেরেই ফেলবো।এমন অবাধ্য সন্তান লাগবে না।”
পুষ্প তখন হাত দিয়ে তার পিঠ ঢলে যাচ্ছে এতো ব্যাথা মনে হচ্ছে ম*রে যাবে।
মুন্নী তার আব্বার হাত থেকে লাইটটা নিতে নিতে বললো,
“কি শুরু করলা আব্বা?”
এবার মিজান মহিলাদের মতো কেঁদে উঠে,
“কি শুরু করছি?তোর বোন কি করে এগুলা?শিমুল আমাকে হোটেলে এসে হু*মকি দিয়ে যায়।এই হু*মকি ধামকি শুনার জন্য মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম?আল্লাহ আমি মরি না কেন আল্লাহ।এতো অবাধ্য সন্তান কিভাবে হলো?”
তারপর কেঁদে কেঁদে বলে,
“আমাকে তোর বোন বলে অফিসার হবে, মা বাপের দায়িত্ব নিবে এই তার নমুনা?স*ন্ত্রাসের ঘরে গিয়ে লাঠি*পেটা খেয়েই তো কুল পাবেনা আবার দায়িত্ব?মুন্নী ওরে বের হয়ে যেতে বল,আমার পুষ্প ম*রে গেছে।”
পুষ্প তার আব্বাকে খুব ভালোবাসে।ছোটবেলা থেকেই সে বাবার আহ্লাদী মেয়ে।যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।এখন তার আব্বা এই আহাজারি শুনে পুষ্পর ম*রে যেতে ইচ্ছে করে।ব্যা*থা-বে*দনা সয়ে ছলছল নয়নে তার আব্বার দিকে তাকিয়ে আছে এই প্রথম তার আব্বা তার গায়ে হাত তুললো।মুন্নী মিজান শেখের মাথায় পানি ঢালছে।প্রেসার বেড়ে চোখ লাল হয়ে গেছে।রোকসানা পাশে বসে কাঁদছে।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে,
“সর্ব*নাশী রে তুই কি সর্ব*নাশ ঘরে আনলি।আমার সুখের সংসারে আ*গুন লাগিয়ে ছাড়লি।”
পুষ্প চোখ বন্ধ করে শিমুলকে দেখে।তার শিমুলকে সে খুব ভালোবাসে অনেক বেশি।কিন্তু তার থেকেও তার আব্বাকে সে ভালোবাসে।সারা দুনিয়ার সবার চেয়ে বেশী ভালোবাসে।তার আব্বার ক*ষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।পুষ্প ধীরপায়ে গিয়ে তার আব্বার পায়ের কাছে দাঁড়ায়।মিজান পুষ্পকে দেখে বলে,
“মুন্নী ওরে এখান থেকে যাইতে বল।”
পুষ্প হঠাৎ করে মিজানের পা ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে বললো,
“আব্বা আমার ভুল হয়ে গেছে আব্বা।আমি আর কখনো শিমুলের সাথে দেখা করবো না।তোমরা যেখানে বিয়ে দিবে সেখানেই বিয়ে করবো।আব্বা তুমি আর টেনশন কইরো না আব্বা।”
মিজান,মুন্নী,রোকসানা সবাই কাঁদে।পুষ্প মিজানের পা আঁকড়ে ধরে বসে থাকে।
“আব্বা আব্বা আমারে মাফ করে দাও আব্বা।আমি ভালো মেয়ে হয়ে থাকবো আব্বা।তোমাদের কথার অ*বাধ্য হবো না।আজকে থেকে শিমুলের সাথে সব সম্পর্ক শেষ।আর দেখা করবো না কথা বলবো না।কথা দিলাম আব্বা।”
বাড়ির বাহির থেকে তিয়াস শক্ত করে শিমুলের কোমড়ে জড়িয়ে আ*টকে রেখেছে।শিমুল ফুসে ফুসে বলে,
“তিয়াস ছাড়।”
তিয়াস হাতের বাধন শক্ত করে পেছনে টানতে টানতে বলে,
“না ভাই।”
উনত্রিশ বছরের রা*গী এক*রোখা শিমুলের বুকে ব্যা*থা হয়,পুরু ঠোঁট মৃদু কাঁপে নাকের পাটাতন ফুলে চোখের বর্ন হয় লাল।পুষ্পর শেষ কথাগুলো শুনেই কিনা বুকটা চিনচিন করে ব্যা*থা করে চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দুই ফোট পানি।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে,”পুষ্প!তিয়াশ পুষ্প কি বললো রে?”
চলবে…..
❝মিজান বা রোকসানা দুজনকেই খারাপ মনে হতে পারে বা ভাবতে পারেন এতো মারার কি আছে?আসলে সব বাবা মা চায় ছেলে মেয়েকে দেখেশুনে ভালো বিয়ে দিতে।কিন্তু যদি শুনে রাজনীতি করে উগ্র মেজাজ,একরোখা টাইপের কারো সাথে মেয়ের সম্পর্ক তখন কেমন লাগবে?খুবই খারাপ লাগে বাবা মায়ের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবুন।❞
❝আর প্রেমিক প্রেমিকার ব্যাপারে কিছু বলার নেই,প্রেমে পড়লে নাকি মানুষ পাগল হয়ে যায়।প্রিয় মানুষকে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছা মাথায় ঝেকে বসে।কি ভালো কি মন্দ সেটা দেখার অবকাশ থাকে না।তখন নেশার মতো একটা কথাই মাথায় ঘুরে তাকে চাই যেকোনো ভাবে তাকেই চাই।এই জন্যই তো বলে,যে প্রেমের মরণ বি*ষ পান না করে সে কখনো এর জ্বালা বুঝতে পারে না।❞
❝আজকের পর্বের মতো এমন হাজারো ঘটনা চারদিকে ঘটে।হয়তো আমরা জানতেও পারি না,কতোশত মন পরিবারের দিকে তাকিয়ে ভেঙে যায়।❞
(ছেলেরা পরিবার থেকে বকা খায়,কিন্তু মাই*র বেশী খায় মেয়েরা।)
❝আজকে সবার মন্তব্য আশা করছি,যা মন চায় লিখে যাবেন।❞