শিমুল_ফুল #১৬,১৭

0
637

#শিমুল_ফুল
#১৬,১৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
১৬

রোকসানা শিলাদের উঠোনে শিমুলের বাইকটা দেখেই যা বুঝার বুঝে গেছে।পুষ্পকে বললো,
“কখন এসেছিস?”

পুষ্পর বুকটা কাঁপে,
“পাঁচ মিনিট হবে আম্মা।”

রোকসানা তীক্ষ্ণ চোখে পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।পুষ্প মায়ের চোখে রাগের ঝলক দেখে শুকনো ঢোক গিলে।
“কেন এসেছিস?”

পুষ্প মিথ্যে কথা গুছিয়ে বললো,
“কয়দিন কলেজে যাচ্ছি না তো তাই পড়া নিতে এসেছিলাম।”

রোকসানা ভেতরটা রাগে ফেটে যায়।ইচ্ছে করছে পুষ্পর চামড়া তুলে রোদে শুকিয়ে নিতে।কি সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলছে।রোকসানা কি এতো বোকা?দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“বলে আসলিনা?”

“তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আম্মা।”

শিলার আম্মা এসে পাশে দাঁড়িয়েছে।রোকসানা পরের বাড়িতে নিজেদের কথা বাড়াতে চাইলো না।পুষ্পর দিকে ইশারা করে বললো,
“বাড়িতে চল।”

পুষ্প শিলার মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে তার মায়ের পিছু পিছু বাহির হয়।শিমুল পাশের রুম থেকে মা মেয়ের সব কথা শুনে।পুষ্পর ভয় জড়ানো কন্ঠ শুনে বলে,”আর কয়টা দিন তোকে আর ভয় পেতে হবে না পুষ্প।আব্বাকে খুব শীঘ্রই পাঠাচ্ছি।”

রোকসানা বাড়িতে গিয়ে পুষ্পকে ধরে।
“তুই আমাকে জন্ম দিয়েছিস নাকি আমি তোকে জন্ম দিয়েছি?”

পুষ্প মায়ের চোখের বর্ণ দেখে ভয় পায়।তার মা যে আসল ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে এটা বেশ বুঝতে পারছে।চুপ করে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকে।পুষ্পর চুপ থাকা যেনো উনার আগুনে ঘি ঢালে।

“নিজেকে খুব চালাক ভাবিস?তুই গাছের পাতায় পাতায় চললে আমি ওই পাতার শিরায় শিরায় চলি।”

পুষ্প একদম নিশ্চুপ।তার আম্মা এতো চালাক!কিভাবে বুঝে গেলো?

“লজ্জা করেনা তোর?”

পুষ্প মাথা নিচের দিকেই করে রাখে।
“তুই না তোর আব্বাকে কথা দিয়েছিলি?তাহলে আবার শিমুলের সাথে দেখা করতে গেছিস কেন?”

পুষ্প বললো,
“আমি শিলার কাছে গিয়েছিলাম আম্মা।”

রোকসানা জোড় দিয়ে বললো,
“ওখানে শিমুল ছিলো।”

পুষ্প প্রেমে পড়ে খুব ভালো মিথ্যা বলা শিখে গেছে।না ঘাবরে বললো,
“না কেউ ছিলো না।”

রোকসানা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“আমি অন্ধ না চোখ আছে।

পুষ্প আবার বলে,
“সত্যি আম্মা আমি শিলার কাছেই গিয়েছিলাম।”

“এতো মিথ্যা বলতে পারিস?এই তোর লজ্জা নেই?”

পুষ্প কি বলবে।মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে তাকায়।রোকসান পুষ্পর এই নির্লিপ্ততা দেখে বলে,

“চেয়ারম্যানের ছেলের কাছে যাস তাই না?কিভাবে ভাবলি শিমুলের মতো ছেলে তোকে বিয়ে করবে?শরীর দেখে পাগল হইছে বুঝেছিস?শরীর পাওয়ার জন্য এসব ভাওতাবাজি।অভিনয় করে মন গলায় তারপর চাহিদা মিটে গেলে ছুড়ে ফেলতে একবার ভাববে না।তোকে চিনবেও না।তখন কি করবি তুই?”

শিমুলের নামে এই নোংরা কথাগুলো পুষ্পর সহ্য হলোনা।সামনে দাঁড়ানো মহিলাটাকে শত্রু মনে হলো।ত্যাড়া গলায় বললো,
“শিমুল এমন না।”

“শিমুল কেমন?”

পুষ্প কথা বলেনা।রোকসানা বলে,
“এতো বড় হয়ে গেছিস যে পুরুষের সানিধ্য লাগবে তাই না?নিজেই পুরুষ খুঁজে নিয়েছিস?”

নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে পুষ্পর খুব লজ্জা লাগে।কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায় না।

“দাঁড়া তোর বিয়ের ব্যবস্থা করছি।”

পুষ্প হঠাৎ করেই ফুসে উঠে বললো,
“শিমুলকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবনা।”

রোকসানা পুষ্পর চুলে ধরে বলে,
“বিয়ে করে ভালোও বলবি।”

পুষ্প সমানতালে তর্ক করে,
“করবো না বিয়ে।কি করবা?”

“যা করা দরকার।”

“আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে আমি বি*ষ খেয়ে ম*রে যাবো তাও শিমুলকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবনা।”

রোকসানার রাগ আকাশ ছুঁয়ে যায়।নিজের মেয়ের এই অধঃপতন সহ্য হয় না।ইচ্ছা করে মেরে মাটিচাপা দিয়ে দিতে।পুষ্পর চুলের মুঠি ধরে সজোড়ে দেয়ালের সাথে আঘাত করে।পুষ্প চিৎকার করে উঠে।রোকসানা থামে না পরপর তিনটা আঘাত করে পুষ্পকে ছাড়ে।
পুষ্প দেয়াল ঘেষে ফ্লোরে বসে পড়ে,হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে।কপালে কেটে র*ক্ত বের হচ্ছে।পুষ্প শব্দ করে কেঁদে দেয়।রোকসানা তখন বিছানায় পড়ে কাঁদছে।সব অভিযোগ পুষ্পর প্রতি।উনার আহাজারিতে ঘর নিরব হয়ে যায়,পুষ্প ব্যাথায় কাঁদতে ভুলে যায়।কপাল বেয়ে রক্ত পড়ে অথচ পুষ্প মায়ের আহাজারি দেখছে।তার হঠাৎ করেই মনে হলো,এই দুনিয়া বড়ই কঠিন।ম*রে গেলেই বুঝি শান্তি।

শিমুল রাতে ঘুমাতে পারে না।সারা শরীর কেমন জ্বালাপুড়া করছে।পুষ্পকে মনে পড়ে বুকটা অসহনীয় ভাবে জ্বলে।বারবার শুধু মনে হয় পুষ্প ভালো আছে তো?পুষ্প যে তাকে কতো বেশী ভালোবাসে তা শিমুলের বোঝা হয়ে গেছে।আজকে পুষ্প নিজ থেকে শিমুলকে ছুঁয়ে দিয়েছে।যখন বারবার শিমুলকে আঁকড়ে ধরছিলো তখন শিমুলের ইচ্ছা করছিলো ঠিক বুকে ঢুকিয়ে নিয়ে আসতে।মেয়েটা তার জন্য এতো কষ্ট সহ্য করছে এর বদলে যদি আল্লাহর নামে কবুল করতে না পারে তাহলে হবে?হবে না।পুষ্পকে ভালোবাসায় পূর্ণ করতে হবে।চোখের পানির দাম দিতে হবে।তা না হলে যে শিমুল প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ।

শিমুল সকালে নাস্তার টেবিলে নাস্তা করতে যায়।উদ্যেশ্য পুষ্পর ব্যাপারে কথা বলা।শিমুলকে দেখে মজিব হাওলাদার বলে,
“দাদা একটা মেয়ে দেখেছি তোর জন্য।”

দাদার মুখে এমন কথা শুনে শিমুল চমকে যায়।মাথা ঘুরিয়ে তার আব্বার দিকে তাকায়।শওকত হাওলাদার নির্লিপ্ত ভাবে নাস্তা করছে।তারমানে পুষ্পর কথা তার দাদাকে বলেনি।সে তার আব্বাকে বললো,
“আব্বা আপনাকে কিছু বলেছিলাম।”

শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার মুখে এসব কথা যেন আর না শুনি।”

শিমুলে মুখের খাবার গিলতে ভুলে যায়।চোখের আকৃতি ইতোমধ্যে বড়ো আকার ধারন করেছে।তার আব্বার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিন্তু আব্বা…”

শওকত হাওলাদার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে শিমুলের কথার মাঝেই বলেন,
“যা বলেছো সব ভুলে যাও।”

শিমুল অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে।তার আব্বার কথা সে বিশ্বাস করেছিলো।কিন্তু উনার মুখেই এখন উল্টা কথা।মজিব হাওলাদার বলেন,
“শিমুল কিসের কথা বলে শওকত?

শওকত হাওলাদার বলেন,
” আপনার নাতীর মনে রঙ লাগছে আব্বা।যেই সেই রঙ না হোটেলের মালিক মিজানের মেয়েরে বিয়ের রঙ।”

মজিব ভ্রু কুচকে শিমুলের দিকে তাকায়।আর শিমুল বিস্ময় নিয়ে তার আব্বার এমন কথাগুলো হজম করে।
মিজান চাচারা গরীব না মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি।এমন অবঙ্গা করে কথা বলতে হবে কেন?
শওকত টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।সাথে সাথে শিমুলও উঠে দাঁড়ায়।তার কন্ঠে না চাইতেও তেজ চলে আসে।
“আপনি বলেছিলেন আমার ইচ্ছার গুরুত্ব দিবেন।”

“আ-জায়গায়,কু-জায়গায় পছন্দ করলে কি গুরুত্ব দিতে হবে?আমাদের বংশের একটা নাম আছেনা?নাম অনুযায়ী জায়গায় যাইতে হয়।”

পাশ থেকে শিমুলের বুবু পেশকারা বেগম বললেন,
“আর জায়গা পাইলি না?ছিহ ছিহ।”

মজিব হাওলাদার বলেন,
“ঢাকা যা ঘুরাফিরা করে আয় এসব মন থেকে উড়ে যাবে।”

সবার কথাগুলো শিমুলের বি*ষের মতো লাগে।এমনিতেই পুষ্প খারাপ অবস্থায় আছে এখন সবার কথাগুলো মাথায় লাগছে।গলার স্বর নমনীয় করার চেষ্টা করে সে তারা আব্বাকে বলে,
“আমি পুষ্পকেই বিয়ে করবো।আপনি প্রস্তাব নিয়ে যান।”

শওকত হাওলাদার শান্ত গলায় বলেন,
“এসব আশা ছেড়ে দাও।এই মেয়েকে নিয়ে আর একটা কথাও বলবেনা।”

শিমুল কিছু বলার আগেই তিনি চলে যায়।মজিব হাওলাদার বলেন,
“তোর জন্য চাঁদের মতো মাইয়া পাইছি।বিয়েটা করে নে।সুন্দরী বউ ঘরে থাকলে আর কারো কথা মনে পড়বেনা।”

শিমুল বুঝতে পারে ঘরের মানুষ কেউ তার পছন্দে খুশী না।দাদার কথা শুনে তেতে উঠে বলে,
“তোমার এতো পছন্দ হলে তুমিই বিয়ে করে নাও।”

শিমুল তার রুমে চলে যায়।নিজেকে অসহায় লাগছে।সমাজ,বংশ,অহংকার এসবের তুপে তার ভালোবাসা হারাতে পারে না।যেকোনো ভাবে হোক পুষ্পকে তার করে নিবেই।এসময় পেশকারা আসে।শিমুলকে বলে,
“ভাই সত্যি কইরা ক তো।মিজানের বাড়িত গিয়া কিছু খাইছিলি?”

শিমুল অবাক হয়ে বললো,
“কি খেতে যাবো?”

“আমার মনে হয় তোরে খাবারের সাথে কিছু খাওয়াইয়া তাবিজ করছে।তা না হলে হাওলাদার বাড়ির পোলা ওই বাড়িতে যাইবো কেন?”

বুবুর চিন্তা ভাবনা দেখে শিমুল অবাক হয়।রুম থেকে ঠেলে তার বুবুকে বের করে বলে,
“তোমার মন মানসিকতা এতো নোংরা কেন?বিয়ে করবো বলেছি করবোই।এতো কথা মজা লাগেনা।যাও।”

এলাকার ডাক্তারকে ডেকে আনা হয় শিমুলের সেলাই ড্রেসিং করানোর জন্য।ওনি এসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনেক কথা বললেন।একপর্যায়ে বললেন,
“কালকে মিজান কাকার মেয়ের মাথাও কেটে গিয়েছিলো।আমার কাছেই নিয়ে আসছে সেলাই করার জন্য।বাবা কি শক্ত মেয়ে সেলাই করলাম একটু উহু পর্যন্ত করলো না।চুপ করে বসে ছিলো।”

শিমুল চমকে উঠে বলে,
“কিভাবে কেটেছে?”

“মিজান কাকা নিয়ে এসেছিলো উনিই বললো,বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে কেটেছে।”

শিমুলের বুকটা দুমড়েমুচড়ে হাহাকার করে উঠে।বুকে রক্তক্ষরণ হয়,নাকের ডগা অদৃশ্যভাবে কেঁপে উঠে।নিজেকে খুব অসহায় লাগে,শিমুলের জন্য এতো মার খাচ্ছে অথচ শিমুল কিছুই করতে পারছেনা।কিভাবে কেটেছে এটা বুঝতে একটুও কষ্ট হয় না।উনারা কি আদো বাবা মা এভাবে কেউ মারে?তাদের উপর শিমুলের খুব রাগ হয়।রাগ হয় নিজের উপরেও।

শিমুল তার মা রাবেয়াকে ডাকে।তিনি আসলে উনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বলে,
“মা তুমিও কি আমার পছন্দের বিপক্ষে?”

ছেলের ব্যাথাতুর মুখটা দেখে রাবেয়ার ভালো লাগেনা।
“তোর পছন্দই আমার পছন্দ।আমার ক্ষমতা থাকলে আজকেই তোকে বিয়ে করিয়ে দিতাম।”

মায়ের কথা শুনে শিমুলের ভালো লাগে।একটা মানুষ তো আছে যে কিনা শিমুলের পছন্দের পক্ষে।
“আব্বাকে একটু বুঝাও না মা।ওরা না হয় একটু কম বড়লোক।তাতে কি!আমি তো বউ আনবো শশুড় বাড়ির বড়লোকি দিয়ে কি করবো?”

রাবেয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে।এই বাড়ির লোকের যে চাই ক্ষমতা আর পয়সা।কিন্তু তারপরেও ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো,
“আচ্ছা বলবো।”

সারাদিন শিমুল তার আব্বার অপেক্ষা করে।চেয়ারম্যান হয়েছে বিধায় এমপি সাহেবের সাথে দেখা করতে গিয়েছে।গভীর রাতে বাড়ি আসে।খাওয়া দাওয়ার পরে শিমুল উনার রুমে যায়।রাবেয়া বিছানা ঠিক করছেন শওকত হাওলাদার টিভি ছেড়ে খবর দেখছে।শিমুল পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“আব্বা।”

শওকত হাওলাদার টিভির দিকে তাকিয়েই বলে,
“তুমি কি আবার আগের কথাগুলোই বলতে এসেছো শিমুল?”

শিমুল বলে,
“আমি জলদি বিয়ে করতে চাই।”

শওকত বলেন,
“মেয়ে ঠিক করে ফেলেছি।”

“আমি পুষ্পকে বিয়ে করব।”

শওকত হাওলাদার ঠান্ডা চোখে তাকায়।
“পুষ্পকে বিয়ে করলে হোটেলে ফ্রী ভাত খেতে পারবে এর বেশী কিছু না।আর যে মেয়ে ঠিক করেছি তাকে বিয়ে করলে তোমার ক্ষমতা বাড়বে।”

শিমুল রেগে যায়।তাকে কিনা ক্ষমতার লোভ দেখায়?
“আমার পুষ্প হলেই চলবে ক্ষমতা লাগবে না।”

শওকত ছেলের নির্লজ্জতা দেখে অবাক হয়।এমপির সাথে সম্পর্ক করার এতো বড়ো সুযোগ হাত ছাড়া করা বোকামি।কিন্তু ছেলের কথা শুনে তারও চোয়াল শক্ত হয়ে আসে,
“আমি যেখানে বলবো সেখানেই বিয়ে হবে।রাত হয়েছে ঘুমাতে যাও।”

শিমুল যায় না।ঘাড় ত্যাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকে।রাবেয়া এগিয়ে আসে।স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বললো,
“শিমুলের যখন এতো পছন্দ,তাহলে একটু ভেবে দেখেন না।সংসার তো ওই করবে।”

রাবেয়ার কথা শুনে শওকত হাওলাদারের মেজাজ তরতরিয়ে বাড়ে।রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয় যেন শিমুলের রাগ রাবেয়ার উপর ঝাড়ে।রাবেয়া গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে।
শওকত হাওলাদার শাসিয়ে বলে,
“ছেলেকে একদম লাই দিবিনা।যদি লাই দিয়েছিস তাহলে তিনকথা শুনবি।মনে থাকে যেন।”

শিমুল চিরবিরিয়ে বলে,
“আব্বা আপনি আমার মা কে মারলেন কেনো?খবরদার মার গায়ে হাত তুলবেন না।”

শওকত বলেন,
“কি করবি হাত তুললে?তোর রুমে যা।আর ছোটলোকের ভুত মাথা থেকে নামা।”

রাবেয়া ছেলের রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে ঠেলে শিমুলকে বের করে দেয়।শিমুল রুমে এসে বসে।রাগে তার হাত কাঁপছে।কাঁপা কাঁপা হাতেই সিগারেট ধরায়।সারারাত ঘুমাতে পারে না।তার পুষ্প ভালো নেই,প্রতিনিয়ত কষ্টে ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।এই কষ্ট পাওয়ার মূলে আছে শিমুল,অথচ শিমুল কিছুই করতে পারছেনা।একবার ভাবে পুষ্পর সাথে দেখা করতে যাবে কিন্তু পুষ্পর বাবা মা দেখলে যদি আবার মারে!ইচ্ছেটা বহু কষ্টে ধামাচাপা দিয়ে চুপচাপ বিছানায় বসে থাকে।

পুষ্পর আব্বা পুষ্পকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো।একটা সেলাই লেগেছে।মিজান শেখের বুঝতে দেরী লাগেনি এটা যে রোকসানার আঘাতের কারনেই কেটেছে।পুষ্পর নিরবতা,আর রোকসানা আঁচলে বারবার চোখ মুছে যাচ্ছে।মিজান শেখ আর কিছু বলে না।পুষ্প যে শিমুলকে ভুলতে পারেনি এটা তিনি বুঝে।কিন্তু কিছু বলেনা,লেবু বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায়।
পুষ্পর সাথে রোকসানা কথা বন্ধ করে দিয়েছে।কিন্তু নিজে নিজেই খুচিয়ে খুচিয়ে এটা সেটা বলছে,এই কথাগুলো শুনতে পুষ্পর খুব খারাপ লাগে।সারাদিন পুষ্পকে খেতেও বলে না।পুষ্পর কান্না পায় সারাদিন কিছুই খায়নি।রাতে ঘুমানোর সময় হঠাৎ করেই তার ইচ্ছা করছে মরে যেতে।শিমুলকে না পাওয়ার দুঃখ,বাবা মায়ের হাহাকার মিশ্রিত নিঃশ্বাসের শব্দ তাকে পোড়ায়।এখন মনে হয় সে মরে গেলেই সব শান্ত হয়ে যাবে।সিলিংফ্যানের দিকে একমনে তাকিয়ে ভাবে কিভাবে ওরনা ঝুলালে ভালো হবে।খাটে চেয়ার রেখে ফ্যান নাগাল পাওয়া যাবে কিনা।

চেয়ারম্যান বাড়িতে ছোট বেলা থেকেই ফুলি কাজ করে।ছোট থেকে এখন বড় হয়েছে পনেরো বছরের মেয়ে।সকাল সকাল গোসল করে ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক দিয়ে হাসি হাসি মুখে ড্রয়িংরুমের ফার্নিচার মুছে যাচ্ছে।শিমুল রুম থেকে বেরিয়ে ফুলিকে দেখে বিরক্তিতে চোখ বাকায়।
“ফুলি সর।আর সকাল সকাল সং সেজেছিস কেন?”

ফুলি শিমুলকে দেখে খুশীতে ঝুমঝুম করে বলে,
“আরে ভাইজান আপনে এই পুরান টাওজার পইরা হাটেন কেন?বউ আইতাছে নতুন কাপড় পরেন গিয়া যান।”

বউ মানে?আব্বা কি পুষ্পকে মেনে নিয়েছে?শিমুল বললো,
“কার বউ?”

ফুলি যেন অবাক হয়।মাথায় হাত দিয়া বলে,
“আল্লাহগো যার বিয়া তার খবর নাই,পাড়া পরশীর ঘুম নাই।আপনার বউ।এমপি সাহেবের ভাগনীর লগে বিয়া ঠিক হইতাছে যানেন না নাকি?আজকে উনারা আসবো।বউ ও নাকি আইবো।বিয়ার আগেই জামাইর বাইত আইতাছে বেডীর শরম নাই।”

ফুলি আরো অনেক কিছুই বলে কিন্তু শিমুলের কানে যায় না।দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে মায়ের কাছে যায়।হরেক রকমের রান্নার ঘ্রানে ঘর মৌ মৌ করছে।রাবেয়া ছেলেকে দেখেই বুঝে ফেলে।
শিমুলের হাত ধরে টেনে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।
শিমুল বলে,
“এসব কি শুনি মা?আমি কিন্তু আগুন লাগিয়ে দিবো।”

রাবেয়ার চোখে পানি টলটল করে।ছেলেকে এমনভাবে দেখতে খারাপ লাগে।কিন্তু তিনি যে অসহায়।শিমুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আব্বা আজকে চুপ করে থাক।তুই উল্টাপাল্টা কিছু করলে তোর আব্বা আমাকে তালাক দিয়ে দিবে।”

শিমুল স্তব্ধ হয়ে যায়।তার আব্বা যানে তার মা তার দূর্বল জায়গা তাই রাবেয়াকে হাতিয়ার বানিয়েছে।মায়ের অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলে রাবেয়া বলে,
“তুই না আমার আব্বা।”

শিমুল আর কিছু বলেনা দ্রুত পা ফেলে বিকট শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়।পল্টিবাজ বাপ সবজায়গায় গুটি জিতে নিতে যায়।স্বার্থপর লোক।

খুব ভোরে চেচামেচির শব্দে পুষ্পর ঘুম ভেঙ্গে যায়।বিছানা ছেড়ে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ায়।বাহিরে গিয়ে বুঝতে পারে পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে।মিজান শেখ আর রোকসানা সেখানেই।পুষ্প কি ভেবে আবার ঘরে আসে।রোকসানার বালিশের কাছেই মোবাইলটা পড়ে রয়েছে।পুষ্প দ্রুত হাতে শিমুলের নাম্বারে ডায়াল করে।শিমুল কেঁটে দেয়।সেকেন্ড পড়েই মোবাইলটা তার স্বরে চেঁচিয়ে উঠে।পুষ্প রিসিভ করে,
“হ্যালো।”

পুষ্পর গলা শুনতে পেয়ে শিমুল চোখ বন্ধ করে ফেলে।পুষ্প বাচ্চাদের মতো করে কাঁদে।
“এই তুমি কথা বলোনা কেন?”

পুষ্প এই প্রথম শিমুলকে তুমি করে বলছে শিমুলের খুশী হওয়ার কথা ছিলো অথচ কান্না পাচ্ছে।দীপ্তিময় চোখজোড়া লাল লাল হয়ে পানি জমে।লঘু গলায় বলে,
“ভাল আছিস জান?”

শিমুলের আদুরে কথায় কষ্টরা বুক চেপে ধরে।পুষ্প ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“একটুও ভালো নেই।”

শিমুলের ঠোট কাঁপে।এই মেয়েটাকে সে একটুও শান্তি দিতে পারছেনা।আবার আজকে কিনা অন্য মেয়ে তারই বাড়িতে বউ হওয়ার জন্য চলে আসছে!শিমুলের বুকটা ব্যথা করে।নিঃশ্বাস আটকে বলে
“খুব ভালোবাসি আমার ফুলকে।”

পুষ্প ঢুকরে কেঁদে উঠে।এই দুনিয়ার বেড়াজাল তার আর সহ্য হয় না।
“ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেন শিমুল?আমি সইতে পারছিনা।ম*রে যাবো!”

খুব গোপনে শিমুলের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।পুষ্পর কান্না বুকে ছুড়ির মতো বসে যাচ্ছে।পুষ্পর কথা শুনে বলে,
“আমাকে সাথে নিয়েই ম*রিস পুষ্প।খবরদার একা ম*রতে যাবি না।”

পুষ্প বলে,
“আমাকে বিয়ে করবা তো?”

শিমুল বলে,
“করবো তো।শিমুলের ফুল ছাড়া শিমুল গাছের দাম নেই যে।”

“আম্মা এতো মারে আমি সহ্য করতে পারছিনা।আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও না।”

শিমুল চোখ বন্ধ করে তার ফুলের নিষ্পাপ কথাগুলো শুনে।
“খুব শীঘ্রই কাছে নিয়ে আসবো।”

পুষ্প বলে,
“অশান্তি লাগে।”

“আমারো।”

“তোমার বাড়িতে জানিয়েছো?”

শিমুল দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।পুষ্পকে কেই মেনে নেয়নি অথচ আজকে অন্য মেয়ে তার বাড়িতে আসবে এটা যদি পুষ্প শুনতে পায়?ছোট মেয়েটা এই এত এত বিরহ নিতে পারবেনা।

“জানিয়েছি।”

পুষ্প খুব আদুরে গলায় বলে,
“শোন,আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া মরে যাবো।মনে রেখো।”

শিমুলের চোখ দিয়ে পানি পড়ে।বেশী কথা বলতে পারে না।ছোট করে বলে,
“রাখবো।”

“রাখি আম্মা চলে আসবে।”

শিমুল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে।
“আচ্ছা।”

ফোন কাটার পরে শিমুলের ইচ্ছা করছে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে কিন্তু পারে না।তার পুষ্প তার কাছে আসতে চাইছে কিন্তু পুষ্পর বদলে আসছে আরেকজন।

চলবে….
(বাবা মায়ের জায়গায় বাবা মা সঠিক।)
(প্রেমে মাতাল হলে দুনিয়ার আর কিছুই ভালো লাগে না।একমাত্র প্রিয় মানুষটাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছা খুবলে খায়।)

(মন্তব্য করেন না কেন?)

#শিমুল_ফুল
#১৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

গতকাল শওকত হাওলাদারের মুখে শিমুলের আহত হবার খবর শুনে এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ আসতে চায়।জানায় শিমুলের অসুস্থ অবস্থায় দেখা উচিৎ তাই তিনি আসবেন।উনি নিজেই আসতে চাইছে না করে কিভাবে?শওকত হাওলাদার বলেন,
“ভাইজান অবশ্যই আসবেন।সাথে আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসলে আরো খুশী হবো।”

ইউসুফ সাহেব মাথা নেড়ে জানায় আসবে।শওকত হাওলাদার বাড়িতে এসে আয়োজনের ব্যবস্থা করে।কোনকিছুতে যেন কমতি না পরে।এই সুযোগ যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে তার কপাল খুলে যাবে।কিন্তু শিমুল গর্দভটাই বুঝলো না।কই এমপির বাড়ি আর কই মিজানের বাড়ি ভাবলেই তার গা কিটকিট করে উঠে।ছেলের রুচি যে এতো নিচে যাবে তা তো ধারনা ছিলো না।মজিব হাওলাদার বলেন,
“কোনভাবেই ওই হোটেল ওলার মাইয়া এই বাড়িতে আনা যাবে না।”

শওকত বললো,
“কিন্তু আপনার নাতীর ঘাড় কিন্তু তেড়া।

“ত্যাড়া ঘাড় সোজা করে নিবি।”

শওকত হাওলাদার মাথা নাড়ে।দুপুরের দিকে এমপি সাহেব তার পরিবার নিয়ে আসে।উনার মূল উদ্যেশ্য ছিল শিমুলের সাথে উনার ভাগিনীর দেখা করানো।উনারা এসে হাওলাদার বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে।কিন্তু শিমুলকে কোথাও দেখতে পায় না।ইউসুফ সাহেবের ভাগনী অন্তরা এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে তার মামার বর্ননা অনুযায়ী ছেলেটাকে খুঁজে কিন্তু চোখে পড়ে না।শওকত হাওলাদার কয়েকবার তার আব্বার দিকে তাকিয়ে উশারা করে শিমুলকে নিয়ে আসার জন্য মজিব হাওলাদার উঠে শিমুলের রুমের দিকে যায়।

শিমুল গাড়ির শব্দ,মানুষের কথাবার্তার শব্দ সবই শুনতে পায়।শওকত সাহেব বলেছিলো উনারা আসলে দরজায় গিয়ে এগিয়ে আনতে কিন্তু শিমুল ইচ্ছা করেই যায়নি।এই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তাকে কিনা অন্য মেয়ে দেখতে এসেছে এর চেয়ে বিষাক্ত অনুভূতি আর কিছুই হতে পারেনা।ক্ষমতার লোভে তার বাপ দাদা তাদের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে একটুও কৃপনতা করছেনা।শিমুল কখনোই এই বিয়ে করবেনা।তার যে প্রিয় ফুল আছে যে ফুলটা শিমুলের একান্ত প্রিয় ফুল।আচ্ছা পুষ্প যদি এসব জানতে পারে তাহলে কি শিমুলকে ভুল বুঝবে?শিমুল ভাবতে পারে না দুই হাতে চুল টেনে ধরে।

মজিব হাওলাদার দরজা ঠেলে ভেতরে আসে।
“শিমুল ওনারা এসে পড়েছে।দেখা করবি চল।”

দাদার কথা শুনে শিমুল ভ্রু কুচকে বললো,
“আমি এই বিয়ে করবনা।দেখা টেখাও সম্ভব না।”

মজিব হাওলাদারের মুখ অন্ধকার করে বললো,
“তুই বিয়ে করবি না বললে তো হবে না।আলাদিনের দৈত্য চেরাগ নিয়ে এসেছে তাকে কি ফিরিয়ে দেয়া যাবে?”

উনার কথা শুনে শিমুল বলে,
“তোমরা এতো লোভী!পুষ্পকে ছাড়া আমি কাউকেই বিয়ে করবো না।”

মজিব হাওলাদার বললো,
“জলদি আয় তা না হলে কি হবে বুঝতেও পারবিনা।”

এটা বলে উনি চলে যায়।শিমুল যায় না।নাকের পাটাতন ফুলে ফুলে রাগ বাড়ছে।মনে হচ্ছে তার আব্বার সাথে তার দাবা খেলতেই হবে,সুন্দর করে বললো কথার দাম দিলোনা এবার একটু খারাপ হোক।বেয়াদবের তকমা গায়ে লাগাক।তারপরও পুষ্পকে তার চাই-ই চাই।
কিছুক্ষন পরে ফুলি আসে,
“ভাইজান আপনারে ডাকে আইয়েন।”

ফুলির হাসিখুশী মুখ চুপসে গেছে।শিমুল বলল,
“এতোক্ষণ লাফালি এখন মুখ এমনে রাখছিস কেন?”

“ভাইজান হেছা কতা কই।মাইয়াডা সুন্দরী কিন্তু লাস শরম নাই।গেলেই বুঝবেন ছি ছি ছি।”

অজানা মেয়ের বদনাম শুনতে শিমুলের ভালো লাগে।সে বলে,
“আচ্ছা যা।”

শিমুল ড্রয়িংরুমে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়।মুখটা অন্ধকার রেখে যেনো বুঝিয়ে দিচ্ছে তার অমতের কথা।অন্তরা শিমুলকে দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।তার মামার বর্ননার থেকেও সুন্দর।সবার সামনেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।শিমুল এই মেয়ের বেহায়াপনা দেখে রাগে দুই ঠোঁট চেপে ধরে।তাকে এমন করে দেখবে শুধু পুষ্প অন্য কেউ দেখলে তার জ্বলে,সহ্য হয় না।মেয়েটা উগ্র কাপড়চোপড় পরে এসেছে আর এই জন্যই ফুলি ছি ছি বলছিলো।ইউসুফ সাহেবের সাথে শিমুল এটা সেটা বলে।কিছুক্ষণ পরে বলা হয় দুজনকে একান্তে কথা বলার জন্য।শিমুল দাঁতে দাঁত চেপে তার মায়ের দিকে তাকায়।রাবেয়ার খুব অসহায় লাগছে,মেয়েটাকে তার মোটেই পছন্দ হয়নি,তার উপর ছেলে পুষ্পকে ভালোবাসে।কিন্তু স্বামী শশুড়ের উপরে কথা বলার কোন সাহস নেই।অনিচ্ছা থাকা সত্বেও শিমুল উঠে দাঁড়ায়।এই মেয়েকে যদি পুষ্পর কথা বলে বুঝানো যায়!শিমুলের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হলো তাদের বাড়ির ছাদ।কিন্তু অন্তরাকে নিয়ে সে মোটেই ছাদে গেলো না বাহিরে বাগানে গেলো।পছন্দের জায়গায় পছন্দের মানুষ নিয়ে যেতে হয়।শিমুল বাগানে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না তার শুধু মনে হচ্ছে পুষ্পকে যদি দেখে বা শুনে তাহলে ম*রে যাবে।অন্তরাই বলে,”আপনাকে আমার ভালো লেগেছে।”
শিমুল মাথা তুলে তাকায়।মূহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এই মেয়ে তো ভারী নিলজ্জ।শিমুল পুষ্পর কথা বলবে তখনি মজিব হাওলাদার এসে উপস্থিত হয় উনি জানতেন শিমুল পুষ্পর কথা বলবে তাই তো এসেছেন।
“কি কথা বলো তোমরা?আমি শুনলে সমস্যা হবে?”

অন্তরা হেসে বলে,
“না দাদু সমস্যা নেই।”

শিমুল বুড়ার ভিমরতি দেখে মনে মনে গালি দিয়ে জাত উদ্ধার করে নেয়।মাথা নেড়ে বললো,
“তোমরা কথা বলো আমি আসছি।”

ক্ষেপা সিংহের মতো দ্রুত পায়ে হেটে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।পুষ্প ছাড়া দুনিয়ার আর কোনকিছু ভালো লাগছে না।আজকে রাতে এর বিহিত করতে না পারলে পুষ্পকে নিয়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যাবে।যারা সমাজকে গুরুত্ব দিয়ে তার ইচ্ছার কথা ভাবে না তাদের মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে আর কোনো লাভ নেই থাকুক তারা তাদের সমাজ নিয়ে।

অন্তরা শিমুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটা রেগে আছে নাকি?রাগলেও এতো ভালো লাগে?মজিব হাওলাদার অন্তরার মনের ভাব বুঝে হাসে।মাছটা টোপ গিললেই হয়!

সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এমপির ভাগিনীর সাথে চেয়ারম্যানের ছেলে শিমুলের বিয়ে।রোকসানা পাশের বাড়ির ভাবির থেকে শুনলেন।তারপর পুষ্পর রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন।তার চিন্তাই ঠিক হলো।শিমুল কখনোই এই বাড়িতে বিয়ে করতে আসবেনা।
পুষ্প আজকাল বেশীরভাগ সময় শুয়ে থাকে।সে তার মা’কে দেখে উঠে বসে।
রোকসানা পাশে বসে,
“তোকে বলেছিলাম পুষ্প আমরা গরীর বড়লোকের চোখে যেতে পারি কিন্তু মনে না।”

মায়ের কথা বুঝতে না পেরে পুষ্প তাকিয়ে থাকে।রোকসানা আবার বলে,
“তারা ব্যবহার করে ফেলে দিতে যানে।পুষ্প তোর আর শিমুলের মাঝে কিছু হয়েছে?আম্মা না ভালো আমারে সত্যি করে বল।”

মায়ের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পুষ্পর কষ্ট হয় না।তাকে নিয়ে তার আম্মার চিন্তাধারা কতো নিচে নেমে গেছে এটা ভেবেই খারাপ লাগে।শিমুল চাইলে কবেই এসব হতে পারতো গভীর রাতে যখন হিজল গাছের নিচে দেখা করতো তখন শিমুল চাইলেই পুষ্পকে একান্ত নিজের করে নিতে পারতো।কিন্তু শিমুল যে ভিন্ন।আগে পুষ্পর ইচ্ছার গুরুত্ব দেয়,পুষ্প এগিয়ে গেলেই শিমুল সঙ্গ
দেয়।তাদের মধ্যে কোন নোংরামি নেই।মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা আমি আর শিমুল এতো খারাপ না।প্রেম করলেই মানুষ খারাপ হয়ে যায় না।”

পুষ্পর বিশ্বাস দেখে রোকসানার খারাপ লাগে।শিমুলের বিয়ের কথা শুনলে মেয়েটা কিভাবে নেবে।
“আমি যানতাম শিমুল তোকে বিয়ে করবে না।”

পুষ্প শান্ত গলায় জোড় দিয়ে বললো,
“বিয়ে করবে আম্মা।আমি জানি।শিমুল আমাকে কথা দিয়েছে।”

“আজকে শিমুলের বাড়িতে তার হবু স্ত্রী এসেছে।সারা গ্রামে হইচই পড়ে আছে।”

পুষ্প কপাল কুচকে তার আম্মাকে দেখে।পাগলের মতো কি বলে?শিমুল কি তাকে ছাড়া অন্য কোথাও বিয়ে করবে?এটা কি সম্ভব?নাকি শিমুলের দিক থেকে তাকে ফিরানোর জন্যই তার আম্মা মিথ্যা বলছে।মাথা নেড়ে বললো,
“আমি বিশ্বাস করিনা।তুমি মিথ্যা বলছো।”

রোকসানা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।
“এমপির ভাগনীর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।এতো বড়লোক ছেড়ে আমাদের মতো গরীবের ঘরে আসবে?”

পুষ্পর ডাগর চোখে পানি জমে।তার মায়ের মুখ দেখে মনে হচ্ছেনা মিথ্যা বলছে।চোখ ঘুরিয়ে ওরনার কোনা দিয়ে চোখ মুছে।রোকসানা বলে,
“সারা এলাকার মানুষ জানে।আর তুই কিনা এই বেইমানের জন্য আমাদের কষ্ট দিলি?”

পুষ্প বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।তার শিমুল এমন কাজ করবে কেন?গলার স্বর কেঁপে যায়।তার আম্মাকে বলে,
“তোমার ফোনটা একটু দাও শিলাকে একটা ফোন দিবো।”

রোকসানা সঠিক খবর জেনেই পুষ্পকে বলেছে।তাই তিনি ভাবলেন শিলাকে ফোন দিলে কি আসে যায় বিয়ে তো ঠিকই।ফোনটা পুষ্পকে দিলে পুষ্প ফোন হাতে উঠোনে চলে যায়।রোকসানা জানে পুষ্প আরো কাঁদবে।

পুষ্প শিলাকে ফোন দেয়।শিলা পুষ্পর ফোন ধরে।পুষ্প উত্তেজিত গলায় বলে,
“শিলা শিমুলের নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”

শিলা চুপ করে থাকে।কিভাবে বলবে?শিলার চুপ থাকা দেখে পুষ্পর বুকে ভয় নেড়ে উঠে।মনে মনে আল্লাহর কাছে বলতে থাকে সব যেনো মিথ্যা হয়।
“শিলা!”

শিলা বলে,
“আমি জানি না।”

পুষ্পর বিশ্বাস হয় না।তিয়াস শিমুলের কাছের বন্ধু সবার আগে তিয়াসের জানার কথা।শিলার প্রথমে নিশ্চুপতা এর পরে হঠাৎ করে বলা কথার মানে ধরতে পেরে পুষ্প জরজর করে কেঁদে দেয়।
“সত্যিই শিলা?”

“হ্যাঁ।আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।”

পুষ্প জোড়ে শ্বাস ফেলে,পিছন ফিরে দেখে কেউ আছে কিনা তারপর বললো,
“উনাকে ফোন দিয়ে বলবি রাত বারোটায় হিজল গাছের নিচে আসতে।আমি থাকবো।বলবি এটা পুষ্পর লাস্ট আবদার।”

পুষ্প ফোন কেটে দেয়।চুপচাপ ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।রোকসানা আর মেয়ের কাছে যায় না।থাকুক একলা,বুঝে নিক কিসে ভালো,কিসে মন্দ।পুষ্পর বুকটা বোবা কান্নায় ভেঙে যাচ্ছে।এতো কষ্ট হচ্ছে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা শিমুল তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বউ বানাবে।শিমুল কি সব ভুলে গেছে।পুষ্প নিজের হাতে নিজে কামড় দেয়।নিশ্চুপভাবে কাঁদে।কান্নার দমকে শরীর কেঁপে উঠে।সে শিমুলকে ছাড়া বাঁচতেই পারবেনা,তবে শিমুল পারবে।না পারলে কি আর বিয়ে ঠিক হতো?কিন্তু তার বিশ্বাস হতে চায় না,শিমুলকে যে খুব বিশ্বাস করে,তার শিমুলের উপর ভরসা আছে।তার সব কষ্ট বৃথা,ভালোবাসা বৃথা,সব বৃথা।

সন্ধ্যার দিকে শিলা ফোন করে জানায়,পুষ্প দেখা করতে চায়।শিমুল বুঝতে পারে পুষ্প অবদি খবর চলে গেছে।পুষ্পর সামনে কিভাবে যাবে?সেখানে মেয়ে হয়েই পুষ্প প্রতিদিন লড়াই করে যাচ্ছে আর সে কিনা বিয়ের আসরে যোগ দিচ্ছে।রাগে শরীর রি রি করে উঠে।রাত দশটার দিকে শিমুল শওকত হাওলাদারের কাছে যায়।তিনি তখন ড্রয়িংরুমে বসে তার আব্বার সাথে কথা বলছিলেন।
শিমুল গিয়ে বললো,
“আব্বা এই বিয়ের কথা বার্তা এখানেই থামিয়ে দিবেন।”

শওকত হাওলাদার বললেন,
“তোমার কথা শুনতে হবে নাকি?”

“জীবনটা আমার তাই আমার কথাই প্রথম।”

শওকত হাওলাদারের রাগ হয়,শিমুল বদমেজাজী কিন্তু আজকের মেজাজ তার ভালো লাগছে না।
“বেয়াদব মুখে মুখে তর্ক করে।থাপ্পড় দিয়ে গালের দাঁত ফেলে দেবো।”

শিমুল তার আব্বার চেয়েও রেগে যায়।চিল্লিয়ে বলে,
“মারেন আর যাই করেন বিয়ে আমি করব না।আমার পুষ্পকেই লাগবে শুনেছেন?”

পুষ্পর নাম শুনে শওকত হাওলাদারের কপালের রগ রাগে ভেসে উঠে।দুই পয়সার মেয়ের জন্য কিনা চাঁদ হাতছাড়া করবে?
“আর এককবারো ওই ফকিন্নির নাম নিবিনা।ছোটলোকের বাচ্চা কোথাকার।চেয়ারম্যানের ছেলে দেখে মেয়েকে লেলিয়ে দিয়েছে।বে*শ্যা মেয়ে।”

শিমুল এগিয়ে এসে বললো,
” বাজে কথা বলবেন না।”

“কি করিবি বললে?”

“যে মুখে আমার পুষ্পর নামে বাজে কথা আসবে সেই মুখ ভেঙে দেবো।”

উপস্থিত সবাই শিমুলের কথায় চমকে যায়।শওকত হাওলাদার শিমুলের গালে প্রচন্ড জোড়ে থাপ্পড় দেয়।শিমুল চোখ বন্ধ করে হজম করে।তারপর দ্রুত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।এই বাড়িটা তাকে শান্তি না অশান্তি দেয়।

আজকে পুষ্পর ভাগ্য ভালো রোকসানা পিছনের দরজায় তালা দেয়নি।বারোটার কাটায় যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগে পুষ্প বেরিয়ে পরে।আজকে হয় বাঁচবে না হয় মরবে।কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।সন্ধ্যা থেকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে উঠেছে।দ্রুত পায়ে হিজল গাছের নিচে গিয়ে দেখে শিমুলের বাইক দাড় করানো।শিমুল গাছে হেলান দিয়ে বসে আছে।
পুষ্পকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।পুষ্প শিমুলকে দেখে মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠে।সামনে দাঁড়ানো মানুষটা তার না,এই বুকের শান্তি পুষ্প আর কুড়াতে পারবেনা এটা ভেবে পুষ্পর শরীরে হারানোর বিষ ব্যাথা ছেয়ে যায়।পরিনতি যদি এমন হয় তাহলে এতো মধুর সূচনার কি দরকার!ধীর পায়ে এসে শিমুলের সামনে দাঁড়ায়।শিমুল কিছু বলার আগে পুষ্প কাঁপা গলায়,থেমে থেমে বলে,
“কখন এসেছো?”

পুষ্পর কাঁপা গলার স্বর শুনে শিমুলের মন খারাপের আলাপন আরো বেড়ে যায়।আস্তে করে বলে,
“কিছুক্ষণ আগে।”

অথচ শিমুল গত দুউ ঘন্টা ধরে এখানে বসে আছে।পুষ্প মাথা উঠিয়ে তাকায়।শিমুল দেখে লাল চোখ জোড়ায় ব্যাথারা ভীড় জমিয়েছে।পুষ্প ঠোঁট মৃদু কাঁপে কথা বলার চেষ্টা করে দেখে কথা বের হচ্ছে না বহুক্ষণ পরে বললো,
“এটাও হওয়ার ছিলো?শেষমেশ তুমিই আমাকে মে*রে ফেললা?কিভাবে পারলা শিমুল?বুক কাঁপলো না?”

পুষ্প হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে।সেই কখন থেকে চোখ মুছতে মুছতে চোখের বর্ণ লাল আকার ধারন করেছে।

শিমুলের বুকটা কষ্টে কাঁমড়ে উঠে।তার পুষ্প যেনো তাকে ভুল না বুঝে।একপা এগিয়ে বলে,
“এগুলো কি বলো?”

পুষ্প কেঁদে কেঁদেই বলে,
“বিয়ে তো করতেছো।জানি সব।”

শিমুলের খুব অসহায় লাগে ঘরেও কাউকে বুঝাতে পারেনা বাহিরেও পারেনা।গলার স্বর মরে যায়।চুপ করে থাকে।শিমুলের চুপ থাকায়
পুষ্প হঠাৎ করেই চিৎকার করে বললো,
“আমি তোর জন্য কি না করেছি?প্রতিদিন মাইর খাই,বকা খাই,আব্বা আম্মার প্রিয় মেয়ে এখন চোখের বিষ,আমার সাথে কেউ কথা বলেনা।আর তুই কিনা বিয়ে করতেছিস?বেইমান।”

পুষ্পর ক্ষতবিক্ষত কথাগুলো শুনে শিমুলের চোখে পানি চিকচিক করে।এই মেয়েটা তাকে ভুল বুঝলে সে মরে যাবে।উতলা হয়ে বুঝানোর জন্য বললো,
“আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবনা।বিশ্বাস নাই আমার উপরে?”

পুষ্পর খুব বিশ্বাস আছে।জীবনের প্রতিটা পথে বিশ্বাস করতে চায় কিন্তু মেয়ে কেনো আসবে?বিয়ে কেন ঠিক হবে?আর বিয়ে ঠিক হয়েছে হয়ে যেতে কতোক্ষন।
“আমি সব শুনেছি।”

“ভুল শুনেছো।”

পুষ্প শিমুলের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে শিমুলের বড় বড় উজ্জ্বল চোখ থেকে ফোটা ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে।তা দেখে পুষ্পও নিজের চোখের পানি মুছে বলে,
“কাঁদো কেন?”

“তুমি কাঁদো কেন?”

“হারিয়ে ফেলতেছি যে তাই কাঁদি।”

শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বলে,
“বলেছিলাম তো আমাকে বিশ্বাস করতে হবে,ভরসা করতে হবে।তা না করে উল্টো ভুল বুঝা হচ্ছে?এই মূহুর্তে তোমার সাপোর্ট না পেলে আমি শক্তি পাবো কই জান?”

পুষ্প বললো,
“বিয়ে ঠিক আর কি শুনবো?”
তারপর থেমে শিমুলের বুকে হাত রেখে বললো,
“এই বুকে আমার রাজত্ব শেষ।”

শিমুল সাথে সাথে পুষ্পকে বুকে চেপে ধরে বললো,
“এই শিমুলের উপর শুধু তোর রাজত্ব।এই উলটাপালটা কথাগুলো আর বলিস না ফুল।”

তারপর একে একে শিমুল পুষ্পকে সব খুলে বলে।সব শুনে পুষ্প শিমুলের প্রসস্থ বুকে নিজেকে মিশিয়ে দেয়।তখনো চোখে দিয়ে অজোড়ে পানি পড়ছে।
শিমুল দুই হাত দিয়ে পুষ্পকে ধরে রাখে।যেন ছাড়লেই হারিয়ে যাবে।
“আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম।এই বুঝি আমার শিমুল অন্যকারো হয়ে গেলো।”

শিমুল শান্ত চোখে পুষ্পকে দেখে।তারপর পুষ্পর কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“শিমুল বেঁচে থাকলে পুষ্পর আর মরে গেলে তো গেলোই।”

পুষ্প শিমুলের গালে হাত রেখে বললো,
“জান এতো ভালোবাসি।”

পুষ্পর কথা শুনে শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খায়।এই মেয়েটাকে দেখলেই শান্তি লাগে।বুকটা ভরে যায়।
“এতো কাঁদে কেউ?কি অবস্থা করেছে।”

পুষ্প কান্নাভেজা মুখে হাসে।কিছুসময় দুজনেই চুপকরে থাকে।কান্না ভুলে দুজনের মুখে ফুটে মুচকি হাসি।প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে বুঝি এমনই শত কষ্টের পরেও কাছে আসলে দেখলে মন প্রান উভয়ই ঠান্ডা হয়।পুষ্প শিমুলের বুকে মাথা রেখে খুব আস্তে করে ডাকে,
“শিমুল।”

শিমুলের বুকটা সুখে ভরে যায়।
“হুম।”

“একটু শান্তি লাগবে।”

শিমুল পুষ্পর মুখটা তার দিকে করে বললো,
“শান্তি হচ্ছে না?”

পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“না।”

শিমুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“আর কি চাই?”

পুষ্প কথা বলেনা।শিমুলের ছাইরঙা টিশার্ট শক্ত করে ধরে।শিমুল বালিকার অব্যক্ত ইচ্ছা বুঝে নেয়।হাসে।মাথা নিচু করে বললো,
“একবার ভুলে হয়েছে বিয়ের আগে আর না।এগুলা খারাপ কাজ।”

“আজকে একটু খারাপ হই?”

কি অবুজপনা আবদার!পুষ্প নিজে এমন বলছে!শিমুল তো পুরুষ,তার উপরে পাগল প্রেমিক এমন আবদার উপেক্ষা করে কি করে?মাথা নিচু করে আফিম বক্স খুলে দেয়,পুষ্প টুপ করে শিমুলের ঠোঁটে চুমু খায়।তারপর মাথা নিচু করে বলে,”বাড়ি যাব।”

শিমুলের হাতের বাধন শক্ত হয়।নিঃশ্বাস ততক্ষণে আকাশ ছোঁয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।ফিসফিস করে বললো,
“নিজের শান্তি খুঁজে নিলেই কি হবে?আমারো চাই।”

পুষ্প মাথা নিচু করে।শিমুল পুষ্পর মতো করেই টুপটাপ চুমু খেয়ে বলে,
“খুব শীঘ্রই বেশী খারাপ হওয়ার রাস্তা বের করছি।”

পুষ্প কিছু বলেনা শক্ত করে শিমুলকে আবার জড়িয়ে ধরে।এতো জোড়ে ধরে যে যেন বুকেই ঢুকে যাবে।শিমুল হেসে বলে,
“বুকে ঢুকে পড়বা নাকি?”

পুষ্প চুপ করে আছে।শিমুলও তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে নরম শিমুল তুলোকে ধরে বলে,
“তোমাকে বুকে নিলে এতো শান্তি লাগে কেন?সব কষ্ট দূর হয়ে নিজেকেই সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।”

চলবে…..
❝কি লিখেছি যানি না।❞

❝অনেকেই বলেন বিয়ের আগে এতো কাছে আসা ভালো না।আসলে এই শিমুল আর পুষ্প কিন্তু আমরাই আমরাই কাছে আসি ছুঁয়ে দেই।গল্প সেতো বাস্তবেরই খেলা।❞

❝ভুল থাকতে পারে,পেলে ধরিয়ে দিবেন।
অবশ্যই মন্তব্য করবেন।আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার শক্তি।❞

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here