#শিমুল_ফুল
#৩৬,৩৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
৩৬
সকাল থেকেই পুষ্প খুবই খুশী।খুশীর মূল কারণ হলো আজকে পলাশ আর নিধি আসছে।তারই কলেজের শিক্ষিকা তার জা এটা ভাবতেই খুশীতে নাচতে ইচ্ছে করে।বারোটার দিকে পলাশ আর নিধি আসে।রাবেয়াকে দেখে নিধি মা বলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে,নিধির মনে হয় রাবেয়ার শরীর থেকে কেমন মা মা ঘ্রান আসছে,রাবেয়াকে দেখে বুঝতে পারলো পলাশ তার মায়ের মতোই হয়েছে শান্ত,স্নিগ্ধ।রাবেয়াও পরম স্নেহে নিধিকে কপালে চুমু দেয় সবার সাথে আলাপচারিতা করার পরে গম্ভীর মুখে শওকত হাওলাদার আসে।উনাকে দেখে নিধির চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে,এই সেই লোক যে নিধির জীবনটা দুর্বি/ষহ করে দিয়েছে,চরিত্রে দাগ লাগাতে দু’বার ভাবেনি,তাকে মে/রে ফেলতে লোক পাঠিয়েছিলো।উনাকে দেখে নতুন করে আবার সব কালো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে।এমন মানুষকে বাবার জায়গায় স্থান দিতে মন টানে না।তারপরেও উনি পলাশের বাবা সেই সম্মান থেকেই আলতো গলায় সালাম দেয়।শওকত হাওলাদার নিধির দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় মেয়েটা তো ফর্সা না,দেখতেও আহামরি সুন্দরী না এই মেয়ে কিভাবে তার রাজপুত্রের মতো ছেলেকে কাবু করলো?উনি সালামের উত্তর দিয়ে চুপচাপ গম্ভীর মুখে বসে থাকে।পলাশ তার মায়ের কাছে গেলে নিধি আড়ষ্ট হয়ে যায়।উনার সামনে এভাবে বসার মানে হয় না।উঠে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই শওকত হাওলাদার গমগমে গলায় বললো,
“পরিকল্পনা তো সফল।”
নিধি অবাক হয়ে বললো,
“কিসের পরিকল্পনা?”
“আমার আলাভুলা ছেলেকে যে পটালে আর বিয়েও করে ফেললে।”
নিধি হালকা করে ঠোঁট বাকিয়ে জিতে যাওয়া হাসি হাসে।
শওকত হাওলাদার সেদিকে তাকিয়ে বললো,
“কি মনে করেছো জিতে গিয়েছো?”
“কি জানি।”
শওকত হাওলাদার গা জ্বা/লানো হাসি দিয়ে বললো,
“চেয়ারম্যানের সাথে টক্কর দেওয়া এতো সহজ না।”
নিধি নির্লিপ্ত গলায় বললো,
“আচ্ছা।”
“আচ্ছা!সামনে যা হবে মুখ দিয়ে আর আচ্ছা বেরুবে না।”
নিধি চমকে শওকত হাওলাদারের দিকে তাকায়।এই লোক আবার কি ষ/ড়য/ন্ত্র করতে চায়?
“আপনি আর কিছু করতে চাইলে খা/রাপ হবে কিন্তু।”
“কি করবে?”
উনার এতো ভাবলেশহীন ভাবে কথার ভঙ্গি দেখে নিধির বুকটা ভ/য়ে মুচ/ড়ে উঠে।এই জ/ল্লা/দ ধরনের মানুষটা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।শওকত গম্ভীর গলায় বললো,
“পলাশের থেকে তোমাকে আলাদা করার দায়িত্ব আমার।”
নিধির গলায় কথা আটকে যায়।এই লোক এতো সহজে সব মেনে তাদের বাড়িতে আসতে বলবে এটা নিধি আর পলাশের বিশ্বাস হয়নি।এতো সহজে হারার পাত্র উনি না।তাহলে উনি কি করতে চাইছেন?দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এমন কিছু করবেন না।”
“তোমাকে কুড়িগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।তারপর দেখা যাবে তোমার পাশে পালাশ কই থেকে আসে।”
উনার কথার অর্থ নিধির বোধগম্য হয় না।
“মানে?”
শওকত হাওলাদার এর উত্তর দিলেন না।তিনি নিজের মতো করে বললো,
“কিভাবে ছেলেদের মাথা নষ্ট করতে হয় এগুলো তোমার বাবা মা’ই শিক্ষা দিয়ে গেছে নাকি?না মানে কতো নিখুঁতভাবে কাজটা করলে।”
মৃ//ত্যু বাবা মায়ের নিয়ে এমন কথা শুনে নিধির চোখে পানি টলটল করে উঠে।নিধির চোখের পানি দেখে শওকত হাওলাদার বললো,
“আসলেই বাবা মায়ের থেকেই….”
উনার কথা শেষ হবার আগে নিধি ভাঙা গলায় বললো,
“আপনি একটা ছোট/লোক,নি//লজ্জ অ//মানুষ।”
ছেলের বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে শওকত হাওলাদারের চোখ রা/গে লাল বর্ণ হয়,চোখের আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে।সটান দাঁড়িয়ে গেলো।কখন যে মজিব হাওলাদার এসে দাড়িয়েছেন তা কেউ খেয়াল করলো না।নিধি কিছু বুঝে উঠার আগেই মজিব হাওলাদার তার মুখে চে/পে ধরে বললো
“আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে উল্টাপাল্টা বলার সাহস কই থেকে পাও?এখন মুখটা ভে/ঙে দেই?”
এতোক্ষণ আড়াল থেকে পলাশ সব শুনছিলো এখন মজিব হাওলাদারের কাজ দেখে হনহন করে বেরিয়ে আসে।দাদার গায়ে সর্বশক্তি দিয়ে ধা/ক্কা দিয়ে বললো,
“আমার বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার আপনি কে?আমি এখন আপনার হাত ভে/ঙে দেই?”
মজিব হাওলাদার বললো,
“তোর বউ তোর আব্বাকে কি বলছে শুনেছিস?”
“শুনেছি।তাই বলে আপনি গায়ে হাত দিবেন।অ//সভ্য।”
শওকত হাওলাদার তেড়ে আসে।
“কার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস ভুলে গেলি নাকি?মুখ সামলে কথা বল।”
পলাশ তার আব্বার দিকে তাকায়।এই লোকটাকে আব্বা বলে পরিচয় দিতে ঘৃ/ণা হয়।কিছুক্ষণ আগে কলেজের প্রিন্সিপাল ফোন করে পলাশকে জানালো নিধির ট্রান্সফার প্রায় হয়ে গেছে কুমিল্লা কুড়িগ্রামে সরকারি কলেজে।পলাশ অবাক হয়ে বললো,
“কিন্তু আমরা তো এপ্লিকেশন করিনি।”
“তোমার আব্বা উর্ধতন কর্মকর্তাকে দিয়ে বদলি করাচ্ছেন,আমিও কিছুক্ষণ আগে জেনেছি।”
পলাশের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।এর জন্যই আজকে বাড়িতে ডেকে আনা?তিনি আবারো নিধি আর পলাশকে আলাদা করতে চাইছেন!পলাশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে থমকে যায়।আড়ালে দাঁড়িয়ে শওকত আর নিধির কথোপকথন শুনে।পলাশ চিৎ/কার করে বললো,
“আপনি এতো বড়ো মাপের খেলোয়াড় জানা ছিলনা তো।”
শওকত হাওলাদার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।পলাশ কখনোই এমন জোড়ে কথা বলেনা।পলাশের চিৎ/কার শুনে বাড়ির সবাই ছুটে আসে।
শওকত হাওলাদার অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
“এভাবে চেচা/চ্ছো কেন?”
পলাশ মাথা নেড়ে বললো,
“বছরখানেক আগে যদি এভাবে চেচা/তে পারতাম,প্রতি/বাদ করতে পারতাম তাহলে আজকে এই দিন আসতো না।”
শিমুল পলাশের কাছে এসে দাঁড়ায়।
“ভাই কি হয়েছে?”
পলাশ শিমুলের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে উঠে।শওকত হাওলাদারের দিকে আঙুল তুলে বললো,
“উনি এতো নি/ষ্ঠু/র কেন শিমুল?উনার মতো পা/ষা/ণ মানুষ তো আমাদের বাবা হওয়ার কথা ছিলো না।”
শওকত হাওলাদার বললো,
“উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।কি করেছি আমি?”
পলাশ শওকত হাওলাদারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি জানেন না কি করেছেন?বাহ বাহ।নিধির বদলি করতে চাইছেন কেন?আমার বউ আমার কাছে থাকলে আপনার সমস্যা কি?আমাকে সুখী দেখতে ভালো লাগেনা?”
শওকত হাওলাদার ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।উনার নিশ্চুপতা দেখে সবাই যা বুঝার বুঝে নিলো।পলাশ বললো,
“নিধিকে দূরে সরিয়ে ওর ক্ষ/তি করবেন।তারপর আপনার ছেলে আবার আপনার কোলে ফিরে আসবে এটাই ভাবেন?তাহলে আপনি ভু/ল।এই জন্যই বাড়িতে ডেকে এনেছেন?”
শওকত হাওলাদারের মুখের কাছে গিয়ে পলাশ কেটেকেটে বললো,
“আজকে থেকে আপনি আমার আব্বা না।আর কখনো জন্মদাতার দাবী দেখাতে আসবেন না।”
পেশকারা বেগম এতোক্ষণ সব দেখে গেছে।নিধিকে তার একদম পছন্দ না।এই মেয়ের জন্য কিনা পলাশ তার ছেলের সাথে বেয়া/দবি করছে!উনি নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিধির মাথায় একটা খোঁচা দেয় তারপর গালে খোঁচা দিয়ে বলে,
“পলাশ এই মেয়ে তো কালিনি।কি দেখে পা/গল হয়েছিস?আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো এরে তা//লাক দিয়ে দে।”
উনার কথায় নিধি আৎকে উঠে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।পেশকারার এমন আচরণে পলাশ এগিয়ে আসে।
“তুমি ওর গায়ে হাত দিলেন কেন?তোমাকে আমি খোঁচা দেই?অ//সভ্য মহিলা।সারাজীবন আমার আম্মাকে জ্বা//লিয়ে পু//ড়িয়ে শেষ করে ফেলেছে এখন আবার নাতী-বউদের উপরেও কৃতিত্ব ফলাতে চায়।ম//রার সময় হয়েছে মনে কিছু ভয় ডুকাও।আমার বউ আমি ছাড়ি না রাখি এটা বলার তুমি কে?কোন চ্য/টের বা/ল। তোমারে গনায় ধরে কে?কিছু বলিনা দেখে মাথায় উঠে নাচবা?আমার সামনে আরেকবার এমন চটরপটর করতে আসলে ম//রার আগে ক//বরে রেখে আসবো।”
পলাশের এমন তেতে উঠা কথায় সবাই অবাক।যেনো সমুদ্রের পানি থেকে আ/গ্নে/য়গি/রি লা/ভা হলকা দিয়ে বেরোচ্ছে।শিমুল হাসে তার ভাইকে এমন শক্তই তো দেখতে চেয়েছিলো।কুকুরের ঘাড়ে মুগুর না তুললে আজকাল হয় না,নীতিবাক্য মেনে চলতে গেলে জীবনের স্বাধ পাওয়া সম্ভব না।
পলাশ শওকত হাওলাদারের দিকে ফিরে বললো,
“অপমান করার জন্য বাড়িতে ডেকে এনেছেন?”
“এই মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারিসনা।”
“আপনি আপনার অ/হং/কার বাড়ানোর জন্য আমার সাথে নিধির সাথে কি করছেন এগুলো?আপনি কি মানুষ?মেয়েদের সম্মান দিতে পারেন না বিধায়ই আপনাকে আল্লাহ মেয়ে দেয়নি।”
পলাশ রাবেয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“আম্মা তোমার ছেলে সবসময় তোমার।আর কখনো এই বাড়িতে আসতে বলবেনা।আমি ফোন দেবো।”
“আব্বা কোথাও যাবিনা।যাবিনা।”
“আম্মা যেখানে আমার নিধির সম্মান নেই সেখানে আমি কিভাবে থাকি বলো?নিধির ভালো রাখার দায়িত্ব যে আমি নিয়েছি।”
শওকত হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে বললো,
“একদিন আমাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে আপনি চোখের পানি ফেলবেন মনে রাখবেন।”
শওকত হাওলাদার অবহেলার চোখে নিধির দিকে তাকায়।রাবেয়া মুখে হাত চেপে ডু/কড়ে কেঁ/দে উঠে।রাবেয়ার কপালে মায়ার চুম্বন এঁকে পলাশ নিধির হাত ধরে বেড়িয়ে যায়।যেখানের বি/ষা/ক্ত বাতাসে তার সুখের চোখে পানি আসে সেখানে না থাকলে পলাশের কিচ্ছু হবে না।বাইকে উঠে নিধি শক্ত করে পলাশকে জড়িয়ে ধরে।পলাশ বাইক চালানো অবস্থায়ও নিধির শরীরের কাঁপন বেশ বুঝতে পারছে।পলাশ বাইক থামিয়ে ঘাড় পিছনে ফিরিয়ে বললো,
“এতো ভ/য় পাও কেন?আমি আছি না?আমি থাকতে তোমার কোনো ভ/য় নেই।আমি ঠিক সব সামলে নেবো।”
নিধি কান্নাভেজা মুখে হালকা হাসে।মুগ্ধ হয়ে পলাশকে দেখে।
এই ভরসাটুকুইবা কয়জনে দেয়?পলাশ যে তার জন্য এতো কাতর এটা আজকে নিজ চোখে দেখে পলাশের প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যায়।এমন স্বামী পাওয়ার ভাগ্য কয়জনের হয়?নিধির হয়েছে নিধি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী।সুখে আবার ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।পলাশ কি বলবে বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।
চলবে….
পলাশ নাকি শিমুল?
#শিমুল_ফুল
#৩৭
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
নিধি বাসায় গিয়ে নিঃশব্দে কাঁ/দে।প্রথমবার স্বামীর বাড়ি গিয়ে এমন অপ/মানিত হবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিলো।পলাশ স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে আছে,চোখের দৃষ্টি নিধির পানে,নিধি কাঁ/দছে,তার কা/ন্না দেখে পলাশের বুকটা পু/ড়ছে।নিধি ফ্লোরে হাটুতে চোয়াল ঠেকিয়ে বসে আছে।সে ভাবছে তার জন্য পলাশের কতোগুলো কথা শুনতে হলো।ভেজা নয়ন মেলে পলাশের দিকে তাকায়,নিধির তাকানো দেখে পলাশ হাসার চেষ্টা করে।নিধি হাসে না এক ধ্যানে পলাশকে দেখে।তারপর উঠে গিয়ে পলাশের গা ঘেষে বসে কাধে মুখ লুকিয়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে।পলাশ এই দীর্ঘশ্বাসের অর্থ বুঝে,হাত বাড়িয়ে নিধিকে বুকে নেয়।চোখের পানি মুছে বললো,
“এখনো কাঁ/দছো যে!তোমার কা/ন্না দেখলে আমার ভালো লাগেনা নিধি।”
নিধি পলাশের কাতর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার জন্য তোমাকে কতো কথা শুনতে হলো।”
“না।আমি তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি,যা অনেক আগেই করার দরকার ছিলো।আমি থাকতে আমার স্ত্রীকে অপ/মান করে কথা বলবে এটা হয় না।তোমার অপ/মান মানে আমার অপ/মান।”
“আমাকে যে বদলি করে দিচ্ছে,তোমাকে ছেড়ে থাকবো কিভাবে?”
“করবে না।এই ব্যবস্থা আমি করবো।দেখি,চোখ মুখ ফুলিয়ে কি অবস্থা।আর কেঁ/দো না তো।”
নিধি পলাশের খোচাখোচা দাড়িতে হাত রেখে বললো,
“তুমি এতো ভালো কেন পলাশ?”
পলাশ কিছু বলেনা।মায়ের জন্য তার বুকটা পু/ড়ছে।আহা তার জনম-দুঃ/খিনী মা পলাশের চলে আসাতে নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে!পলাশ মনে মনে ভাবে যে কোনো-ভাবেই তার আম্মাকে তার কাছে নিয়ে আসবে।বাবা মা হারা এতিম মেয়েটিকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়,তার বুক ছাড়া এই মেয়েটির আর আশ্রয়স্থল নেই,পলাশ চায় না মেয়েটি এই স্থানটাও হারিয়ে নিঃ/স্ব হয়ে যাক।সে এই মেয়েটাকে সুখী দেখতে চায় তাইতো সব পায়ে ঠেলে নিধির দুয়ারে উজার করে দিয়েছে তার সীমাহীন রাজ্যের ভালোবাসা।
পলাশ বাড়ি ছাড়ার পর থেকেই বাড়ির পরিবেশ থ/ম/থ/মে।নিধি রাবেয়ার সাথে ফোনে কথা বলার পর রাবেয়া কিছুটা হাসিখুশী,নিয়মকরে প্রতিদিন নিধি ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে।এই কয়দিনে সুইটির চুল কিছুটা বড় হয়েছে।এখন সে পুষ্পর সাথে খা/রাপ ব্যবহার আরো বেশী করে,খারাপ ব্যবহারের মূলে রয়েছে তার নানা,নানী।পুষ্প চুপচাপ থাকে,বড়ো ভাইয়ের বউয়ের সাথে যা হলো এখন যদি পুষ্পর সাথেও একি ঝামেলা করে সেই ভ/য়ে পুষ্প কিছু বলেনা আর না শিমুলকে জানায়,আসলে পুষ্প এই ঝ/গড়া ঝা/মেলা পছন্দ করেনা।আজকে পুষ্প শশুড়বাড়ি থেকে প্রথমদিন কলেজে গিয়েছে।কলেজে যাওয়া নিয়ে সকালে তো মজিব হাওলাদার ঝা/মেলা বাধিয়ে দিয়েছিলো।অবশ্য শিমুল সামলে নিয়েছে।পুষ্পকে কলেজ ড্রেস পরা দেখেই মজিব হাওলাদার সবার সামনে বললেন,
“আহ,কই ছিলো এমপির ভাগনী!শুনলাম মেয়েটা নাকি পুলি/শের এসপি হিসেবে জয়েন করেছে।আর এই ছেলের কিনা এই ইন্টার পড়ুয়া মেয়েকে পছন্দ হলো!”
তারপর পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিয়ে হয়েছে এইসব ডং বাদ দেও।আর পড়ে কি করবে শুনি?”
পুষ্প ভালো ছাত্রী।পড়ালেখায় ভীষণ আগ্রহ।তার যে অফিসার হতে হবে।প্রেম করে বাবা মাকে যতোটুকু ক/ষ্ট দিয়েছে জীবনে বড়ো কিছু করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করে যদি সেই ক/ষ্ট কিছুটা কমানো যায়।কিন্তু যদি পড়তেই না পারে তাহলে!পড়া বন্ধ হওয়ার প্রসংগ আসাতে সে আজকে আর চুপ করে থাকলো না।স্পষ্ট গলা অথচ আস্তে করে বললো,
“লেখাপড়া বন্ধ করা সম্ভব না।বিয়ের জায়গায় বিয়ে পড়ার জায়গায় পড়া।আমি পড়তে চাই।”
পুষ্পর মুখে এই কথা শুনে শওকত হাওলাদার মুখ তুলে তাকায়।
“এমন ভাব করছো মনে হচ্ছে কোনো বড়ো অফিসার হয়ে যাবে।সেই তো হাড়ি-পাতিল,বাচ্চা সামলেই জীবন কাটবে।মনে হয় পড়ে দুনিয়া উল্টিয়ে ফেলবে!”
শিমুল গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,
“আচ্ছা আমি বুঝলাম না আমার বউ নিয়ে তোমাদের এতো আগ্রহ কেন?আমার বউ পড়বে না ম//রবে সেটা দেখার জন্য আস্ত আমি আছি,আর কাউকে দেখতে হবে না।কোনো কেয়ারটেকার লাগলে আমি নিজ দায়িত্বে জানাবো।”
শিমুলের পাকনা কথা শুনে শওকত হাওলাদারের গা জ্ব/লে উঠে।
“এই বাড়িটা আমার সুতরাং এখানের সব গতিবিধি আমার জানতে হবে।”
শিমুল বিরক্ত মুখে বললো,
“আব্বা এবার ক্ষেমা দেন প্লিজ।ভুলে গেছেন হয়তোবা বাড়িটা আপনার বউটা কিন্তু আমার।”
শওকত হাওলাদার শিমুলের কথায় থ/ম/থ/ম খেয়ে যায়।কথা ঘুরিয়ে বলে,
“তুই পড়াবিই?”
শিমুল দাঁত কেলিয়ে বললো,
“অবশ্যই।সেদিন বললাম না অফিসার বানাবো।”
“বউ পড়াবি?পরে দেখিস তোরেই।সম্মান দেবে না।”
“এই চিন্তা-চেতনা ভুল।”
মজিব হাওলাদার মুখ ঝামটা মেরে বললো,
“অহ অফিসার হবে?হা হা হা।ফকিন্নির বাচ্চা আবার অফিসার হওয়ার শখ!তা বলি এতো অফিসার হওয়ার শখ হলে প্রেম করছিলো কেন?অল্প বয়সে বেশী জ্বালা তাইতো….”
শিমুল ওনার কথা শেষ করতে দেয় না।চেয়ারে লাত্থি মেরে উঠে দাঁড়ায়।হাতের আঙুল উঁচিয়ে বললো,
“এটা আমার বউ।এর সম্পর্কে বাজে কথা বলার আগে দুই’বার ভাববে।তা না হলে মুখটা ভেঙে হাতে ধরাতে একটুও দেরী করবো না।”
তারপর তার আব্বার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আব্বা আপনার মা বাপেরে বলেন আমার বউকে নিয়ে কুটনামি কম করতে।আর আপনার বোন ভাগনীকে বলেন শিমুলের আশা ছেড়ে ঢাকা ফিরে যেতে,আমি মরলেও পুষ্পকে ছাড়বো না,আর এই ঠুল্লা সুইটিকে বিয়ে তো পরের কথা।আর যদি কেউ গরম দেখাতে আসে জনমের মতো ঠান্ডা করে দেবো।”
মজিব হাওলাদার পুষ্পর দিকে বিরক্ত চোখে তাকায়।বিরবির করে কিছু বলে শিমুল পাত্তা দেয় না,পুষ্পকে নিয়ে কলেজে যায়।নাতীর এমন অ/বাধ্য,রু/ক্ষ ব্যবহারের পেশকারার চোখে পুষ্প দো/ষী হয়,বারবার এটাই মনে হয় এই মেয়ে সবার সামনে ভেজা বিড়াল হয়ে থাকে,রুমে হয়তো শিমুলকে তোতাপাখির মতো পড়িয়ে তাদের বিরো/দ্ধে নিচ্ছে।পুষ্পর প্রতি রা/গটা আরো বেড়ে যায়,এতোটুকু একটা মেয়ে!
সারাদিন ফোটা ফোটা বৃষ্টি হয়েছে।রাতে বৃষ্টির পরিমাণ যেনো আরো বাড়ে।ঘুমানোর আগে শিমুল আবদার করে শাড়ি পড়তে।তখন রাত বারোটার কাছাকাছি।পুষ্প বললো,
“এতো রাতে শাড়ি?”
“দেখতে ইচ্ছে করছে যে।”
“এমন উল্টাপাল্টা ইচ্ছে হয়?”
“হয়।বাহিরে ওয়েদার দেখেছো?মাখোমাখো।”
পুষ্প মাথা নেড়ে বললো,
“ওয়েদার আবার মাখোমাখো হয়?কে শিখায় এগুলো?”
“এগুলো শিখানো লাগে না অনুভব করার শক্তি থাকলে এমনিতেই সব বুঝা যায়।”
“এসব বুঝতে হবে না।আর শাড়িও পড়বো না।”
“আরে,আমার জন্য সাজলে তো তোমার সওয়াব হবে।যতোক্ষণ সাজবে ততোক্ষন সওয়াব।”
পুষ্প এটা জানে যে হাজবেন্ডের জন্য সাজলে সওয়াব।তারপরেও অবাক হওয়ার বান ধরে বললো,
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ।এখন সাজো আর সওয়াব কামাও।”
পুষ্প বললো,
“এতো সওয়াব লাগবে না।ঘুমাও যাও।”
শিমুল বোধহয় অভিমান করে।কেমন গাল ফুলিয়ে বললো,
“লাস্ট বার বলছি পড়বে কিনা বলো?”
শিমুলের অভিমানি মুখের দিকে তাকিয়ে পুষ্প হাসে।তারপর খয়েরী রঙের একটা শাড়ী বের করে,বাথরুমে যেতে নিলে শিমুল তারস্বরে চেচিয়ে বললো,
“এখানেই পড়ো।”
পুষ্প ভ্রুকুটি করে বললো,
“এখানে কেন?”
“কিভাবে পড়বো দেখবো তাই।”
“শাড়ি পড়া আবার দেখার কি আছে?”
“তা তুমি বুঝবেনা।আমি বর আমি বুঝি,বউদের এসব বুঝতে হয় না।”
পুষ্প হাসে।সে জানে,বুঝে তাও শিমুলকে প্রশ্ন করে,প্রিয় পুরুষের মুখে এসব আদুরে আবদার শোনার এক আলাদা আনন্দ আছে,এই যে পুষ্পর বুকে আনন্দের বাতাস বইছে শিমুলের পাগলামি দেখেই’তো। মেয়েরা মাঝে মাঝে বো/কা সাজে,সব বুঝেও না বুঝার ভান করে এই সবকিছু করে প্রিয়জনের থেকে আদুরে আহ্লাদে গা ভাসাতে।পুষ্প এক এক করে নিজেকে শাড়ির আবরনে সাজায়,শিমুল বিছানায় বসে প্রিয় রমনীর আঁকাবাঁকা শরীরের মোহনীয় সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়,থেমে থেমে তার শরীর ঝিমঝিম করে উঠে,একি নে/শা একি যা/দু যা নিমিষেই শরীরে তরঙ্গ বয়িয়ে দিতে পারে।সে বসে বালিশে হেলান দিয়ে তাকিয়ে থাকে,পুষ্প হালকা সেজে আয়নায় শিমুলকে দেখে।শিমুলের নে/শা ধরানো চোখের দৃষ্টিতে পুষ্পর অন্তরা/ত্মা কেঁপে উঠে।এই চোখে তাকালে যেনো এখনো প্রথম কাছে আসার অনুভূতি জাগে।শিমুল হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকে।পুষ্প লাজুক হেসে কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।শিমুল তার তুলোর বস্তাটাকে টেনে তার কোলে বসায়।দুজনের শরীরের নিজস্ব ঘ্রানে আবদ্ধ অনুভূতি ছোটাছুটি করে জানান দেয় মধুর প্রণয়ের।শিমুল মিষ্টি করে হেসে বললো,
“খুব সুন্দর লাগছে,মাশা-আল্লাহ ।”
“ধন্যবাদ।”
শিমুল তার প্রনয়ীনিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“বউটা আসলেই তুলোর বস্তা।”
পুষ্প লজ্জা পায়।ছটফট করে বললো,
“যাহ,ফাও কথা।”
“সত্যি কথা।এই তুমি মাখোমাখো ওয়েদার কাকে বলে জানো না?”
“না।”
“আচ্ছা,চলো আমি শিখাই। শিখবে?”
পুষ্প শিমুলের কোকড়া চুলে হাত ভুলিয়ে দেয়।এই কথা পাল্টাতে বললো,
“শিমুল ভাই?”
শিমুলের চোখ চিকচিক করে উঠে।তাকে ভাই ডাকা হচ্ছে?ভাই ডাকার জন্য এতো কষ্ট করে বিয়ে করেছে?ব্যাথা দেয়ার জন্য একটু জোড়েই পুষ্পর গাল কামড়ে বললো,
“ভাই!কিসের ভাই?কে ভাই?”
শিমুলের হঠাৎ আক্রমণে পুষ্প ককিয়ে উঠে।মাথা নেড়ে বললো,
“না না ভাই না,ভাই না।”
শিমুল তখন রমনীর ছোঁয়ায় দিশেহারা।বৃষ্টির কারনেই কিনা হালকা শীত লাগছে।শরীর কেমন ঠান্ডা।শীতল নাক পুষ্পর গলায় ঘষে বললো,
“তাহলে কি?”
পুষ্প চোখ বন্ধ করে নেয়।শিমুলের ছোঁয়ায় তলপেটের প্রজাপতির ঝাক জেগে গেছে,উড়াউড়ি করে তাকে অনুভূতির রাজ্যে ডাকছে।সে নিভু নিভু জড়ানো হালকা গলায় বললো,
“জান,কলিজা,পাখি।”
শিমুল হাসে।তার একহাতে পুষ্পর আঙুলের ভাজে আঙুল পুড়ে আরেক হাতে শাড়ি গলে রেশমের মতো নরম পেট আঁকড়ে ধরেছে।পুষ্প কেঁ/পে ওঠে,আবেশে চোখ বন্ধ হয়।শিমুলের ছোঁয়া পেয়ে প্রজাপতির দল আরো জেগে যায়,তার পেট মুচরে উঠে।শিমুল তার নে/শার বাক্স,সে আজ আয়োজন করে নে/শার বহর খুলে বসেছে এই নে/শা উপেক্ষা করার শক্তি পুষ্পর নেই।সে নিমিষেই ভ*য়ং*কর মা*তাল হয়ে যায়।ফিসফিস করে বললো,
“আমাকে মে**রে না ফেললে চলে না?”
শিমুল ততক্ষণে রাজা হয়ে রাজ্য পরিদর্শনে বেরিয়ে গেছে।পুষ্পর মতোই ফিসফিস করে বললো,
“না চলে না।তোমায় প্রতি মূহুর্তে ভালোবাসার জলে ডুবিয়ে মা**রতে চাই।আমার সোনা পাখিটা,তুমি আমার অতল সাগরে ডু*ববে তো?”
পুষ্প জলভরা চোখে হাসে।সম্মতি হিসেবে আঁকড়ে ধরে শিমুলের কোকড়া চুল।শিমুল পুষ্পকে নিয়েই ডুবে।রাঙ্গিয়ে দেয় ভালোবাসার মিষ্টি আদর,দুষ্টু কথায়,মাতাল স্পর্শে।পুষ্পর মনে হয় সে বেশীদিন বাঁচবে না একদিন ঠিক ম**রে যাবে এতো ভালোবাসা নিয়ে বাঁচা যায়?যায় না তো।শিমুলের এতো সুখ তার কপালে সইবে?খুব চিন্তা হয়।প্রনয়পুরুষের এলোমেলো ভালোবাসায় চিন্তা দৌড়ে পালায়।পাগ**লা শ্বাসের সাথে গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা চোখের পানি।শিমুল চোখে চুমু দেয়,সে জানে এ কা*ন্না দুঃ*খের নয় বরং অ*সহ্য রকম সুখের।তাইতো প্রতিনিয়ত পুষ্পকে সুখে কাঁদাতে চায়।বৃষ্টি ভেজা রাত্রিরে নিশ্চুপ রুমে দুজনের ভালোবাসার উন্মাদনায় লজ্জা পায় অন্ধকার।শিমুল ফিসফিস করে বললো,
“এতো সুখ,এতো আদর!যদি পাগ*ল হয়ে যাই,পেশকারা তোমাকে জেলে পুড়ে দিবে।”
পুষ্প অন্ধকারেই শিমুলের গাল হালকা টেনে খিলখিল করে হেসে উঠে।
চলবে….