৬৮-৭০
প্রেমঘোর
#পর্ব_৬৮_৬৯
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সাদাদ রোমে ডুকে দেখে নৌশিন বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে তার পাশে শুয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
সাদাদ বুঝতে পারছে নৌশিন কতটা বাচ্চা পাগলী।কতটা ভালোবাসলে এমন ছোট্ট বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে এমন মায়াবী নজরে দৃষ্টিলোক করতে পারে একটা মেয়ে!
সাদাদ নৌশিনের পাশে গিয়ে হাটু গেরে বসে…..
নৌশিন একহাতে ভর দিয়ে একমনে বাচ্চার মুখ টা দেখে যাচ্ছে…তাই বুঝতেই পারে নি যে ঘরে সাদাদ এসেছে।
সাদাদ নৌশিনের গায়ে স্পর্শ করতেই নৌশিন বাস্তবে ফিরে আসে।
সাদাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নৌশিন সাদাদের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে খুব সাবধানতা বশত বলল,
“আস্তে…..বাবু ঘুমাচ্ছে…..”
সাদাদ নৌশিনের আঙ্গুল টা সরিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ওককে…..বাট নিচে তো সবাই রেডি তুমি রেডি হবে না???”
নৌশিনও ফিসফিসিয়ে জবাব দেয়,
“হবো তো……”
“কখন??”
“এখনি……”
“হুপ…..তাড়াতাড়ি উঠো…..”
“আস্তে পড়ে যাবো তো…..উঠছি……”
“হারি আপ……”
সাদাদ নৌশিনকে ঠেলে তুলে ওয়াশ রোমে পাঠিয়ে দেয়……নৌশিন ফ্রেস হয়ে এসে দ্রুত শাড়ি,গহনা সব বের করে সাদাদকে ফ্রেস হয়ে নিতে বলে।কেননা এখন পর্যন্ত দুবার নিচ থেকে খবর এসেছে তাদের জন্য।
নৌশিন শাড়ি টা পড়ে নিলো সাদাদ ওয়াশরোম থেকে বের হওয়ার আগেই।
রানিং……..
সাদাদ ওয়াশরোম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল স্পাইক করতে থাকে……
“আরে সাদাদ সরো…..আমি রেডি হচ্ছি তো……”
“দাঁড়াও না একটু…….”
নৌশিন সাদাদের পেটে কুনুই মেরে বলছে,
“আমি আগে তুমি তো পিছনে দাঁড়িয়েও হতে পারো…..”
“ওফফ……ওককে।।।।।”
নৌশিন টুলে বসে সাজচ্ছে আর সাদাদ নৌশিনের পেছনে গিয়ে নিজের চুল টা স্পাইক করে নিলো……..
নৌশিন আজ নিজের ইচ্ছায় অনেক গহনা পড়েছে।
মেরুন রঙের গর্জিয়াস শাড়িতে শরীরের রঙ টা আরোও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে….মেরুন রঙের লিপস্টিক,চোখে সুন্দর করে মেকাপ…… চুল টা উপরের দিকে খোপা করে নিয়ে সাদা রঙের একটা হিজাব খুব সুন্দর করে পড়ে নিলো নৌশিন।
এতক্ষণ যাবত সাদাদকে একবারও খেয়াল করে নি নৌশিন।
কিন্তু সাজ শেষ হওয়ার পর পেছনে তাঁকিয়ে রীতিমত থতমত হয়ে যায় নৌশিন।
!
সাদাদ যে এখনও শার্ট টাও পড়ে নি…..পড়বে কি করে বেচারা এতক্ষণ বউয়ের সাজ দেখেছিলো মুগ্ধ নয়নে…………………….
পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/
!
#প্রেমঘোর#৬৯#
“সাদাদ,রেডি হও নি কেন এখনও???”
সাদাদ হাতের টাওয়েল টা ফেলে দিয়ে নৌশিনের দিকে এগুতে থাকে….
নৌশিন বেশ বুঝতে পারছে সাদাদের মাথায় কি চলছে……..
বেচারী পেছনের দিকে যাচ্ছে আর আঙ্গুল তুলে সাদাদকে বলছে,
“দেখো,একদম ভালো হবে না কিন্তু…….কাছে আসবে না একদম……”
সাদাদ কি কারো বারণ শোনার পাত্র নাকি!!ঠিক ধরে ফেললো নৌশিনকে……
নিজের উন্মুক্ত বুকের সাথে চেপে ধরলো একদম………
সাদাদের চোখে চির একটা নেশা দেখতে পেলো নৌশিন।কিন্তু বাইরে যে অনেক গেস্ট সে টাও তো মাথায় রাখতে হবে……….
সাদাদ পলকহীন দৃষ্টিতে নৌশিনকে দেখছে……..
নৌশিনের মনেরও যে বিশাল ভালো লাগা কাজ করছে….তবে সময় যে বড্ড বেঈমান……নিজের গতিতে চলে যাচ্ছে………
“সাদাদ,ছাড়ো প্লিজ….সব গেস্ট এসে গেছে…….”
সাদাদের ঘোর যেন কাঁটে না…..কান পর্যন্ত যায় নি কথাটা……..নৌশিন সাদাদের বুকের একটা লোম ধরে বেশ জোরে একটা টান দিতেই সাদাদ যেন বাস্তবে ফিরে আসে….
কিন্তু তখনও নৌশিনকে একইভাবে আগলে রেখেছে………..
“আওওওচচচচ….হেয় স্টুপিড গার্ল….. দেখতে দাও না আর একটু…..”
“ধ্যাত….ছাড়ো তো…..লেট হয়ে যাচ্ছে……সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য……প্লিজ রেডি হয়ে নাও…..”
“আচ্ছা!!!নিচে প্রাপ্তির ছেলে ফ্রেন্ডরা কেউ আছে??”
“সাদাদ!!এখন এটা বলার সময়??তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও না….প্লিজ”
“আজকে ঐ পিচ্চি ছেলেগুলোও আমার বউয়ের প্রেমে পড়ে যাবে…..”
নৌশিনের চোখপুড়ো রসগোল্লা…..”মানেনে???”
“আম সো সিরিয়াস…..আমার যা হচ্ছপ তোমাকে দেখে….আল্লাহ ই জানে…..”
নৌশিন সাদাদের বুকে ইচ্ছামতো কিল ঘুষি দিতে থাকে…….
সাদাদ হাঁসছে…..বলল,
“আহা….কি নরম ছোঁয়া রে……”
“সাদাদ!!”
“থামলে কেন??মারো নিজের বিয়ে করা বর কে মারো….”
“তুমি না আসলেই!!!”
নৌশিন মুচকি হেঁসে সাদাদকে জড়িয়ে ধরলো।
সাদাদও বেশ শক্ত করে আগলে রেখেছে। এমন সময় ওদের ডাকতে হঠাৎ রিদি সরাসরি সাদাদের রোমে ডুকে যায়।
আর তার চোখে দৃশ্যমান হয়….সাদাদ আর নৌশিনের একে অপরের চোখ বন্ধ করে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য।বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে রিদির।
সে ও আজ শাড়ি পড়ছে….নিজে পচ্ছন্দ করে না তবুও সাদাদকে দেখাবে বলে পড়েছে।
আর সাদাদ তার বউয়ের সাথে উন্মুক্ত বুক নিয়ে প্রেম করছে!!এটা মানতে পারছে না রিদি….মাথার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে তার।
নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,
“যদি তোমাদের পারসোনাল কাজ শেষ হয় তবে নিচে আসতে পারো সবাই অপেক্ষা করছে….”
নৌশিন দ্রুত চোখ মেলে তাঁকায়…..সাদাদের হোস আসে পেছনে কারও গলা শোনে।মুহুর্তের মাঝেই দুজন দুজনে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।
নৌশিন বেশ লজ্জা পাচ্ছে…যদিও রিদি মেয়ে তবুও স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার টা অন্য কেউ দেখে ফেললে কেমন একটা!!!
সাদাদ তো বেশ খুশি…
কেননা সাদাদ জানে রিদির মন মানসিকতা কেমন!!!
নৌশিন আয়ানার দিকে ঘুরে গিয়ে শাড়ি,হিজাব এগুলো ঠিক করার ভান ধরে রিদিকে বলল,
“আপু এই তো আসছি….আপনি যান…..”
রিদি সাদাদের দিক আড় চোখে তাঁকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ….আসো….”
চলে গেলো রিদি…..
সাদাদ সে রকম ভাবে দেখেই নি রিদিকে।
রিদি দৌঁড়ে নিজের রোমে গেলো….দরজা বন্ধ করে কাঁন্না করছে আর বলছে,
“হে আল্লাহ্….আমি কেন পারছি না সাদাদকে ভুলতে??কি নেই আমার??সব আছে…তাহলে কেন সাদাদের মনে আমার জন্য কিছু নেই….ওর সব টা জোরে শুধু নৌশিন…..আমি কি পাপ করেছি??আমি তো কারও ক্ষতি করি নি…..আমি তো শুধু সাদাদকে চাই…. আল্লাহ…আমায় কেন ভুলতে দাও না??? যদি হেদায়াত তোমার হাতেই থাকে তাহলে আমার মন থেকে কেন সাদাদকে মুছে দিচ্ছো না??আর যদি সেটা না করো তাহলে কেন সাদাদের মনে আমার জায়গা করে দিচ্ছো না??”
!
নৌশিন সাদাদকে রেখেই নিচে চলে এসেছে…….
প্রাপ্তির সব মেয়ে বন্ধুরা তাঁকে ঘিরে রেখেছে…..
আজ যে প্রাপ্তিকেও কোনো রাজকন্যার চেয়ে কম লাগছে না……সাদা ধবধবে গায়ের রং….তার উপর সাদা গর্জিয়াস স্টোনের কাজ করা ফ্লোডটাইস পড়ছে….তার উপর মেচিং করে হালকা অলংকারও পড়িয়ে দিয়েছে ওর মা…
চোখ দুটো যেন একটা বাচ্চা পরীর মতো সাজানো….নীল রঙের হিজাবে দেখতে ঠিক একটা নীল-সাদা পরী।
নৌশিন আসা মাত্রই সবাই মিলে নৌশিনকে ঘিরে ফেলে….প্রাপ্তি নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ওয়াও….ছোট ভাবী তোমাকে জাস্ট মিস.ওয়ার্ল্ড লাগছে…..”
নৌশিনকে দেখে সবাই খুব খুশি….এতো সুন্দর স্লিম বডিতে হলুদ ফর্সা রঙের উপর এতো ভালো সাজ নৌশিনের সৌর্ন্দয বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবার সাথে অনেক গল্প গুজুব করছে নৌশিন।
সাদাদ নামছে…..গেস্টদের চোখ সিরির দিকে…..কিসের সালমান খান!!সে তো অভিনয়ে শত শত ফ্লিম করে মানুষের জনপ্রিয়তা পেয়েছে।আর সাদাদকে যদি কোনো ফ্লিমের শুধু মাত্র ট্রায়েলের জন্যও দেওয়া হয় তবে সব মেয়েরা তার জন্য লাইন ধরবে।তার উপর আজ তো কথাই নেই…..কালো জিন্স,নীল শার্ট, কালো কোর্ট ব্ল্যাক হোয়াইট সো…বলতে গেলে জাস্ট চরম লাগছে সাদাদকে।
নৌশিনও পুরো ফিদা…..
অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে সাদাদের দিকে….কোথা থেকে রাফসা এসে চোখের সামনে তুরি দিতেই ঘোর কাটে নৌশিন।
রাফসা হাঁসি দিয়ে বলল,
“পড়ে দেখিস বোন…..”
নৌশিন লজ্জা পেয়ে গেলো…….”ভাবী!!!”
সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো সেও নৌশিনের এমন অবস্থা দেখে মিটমিটি হাঁসছে।
আজকে তো সাদাদ,নৌশিন,প্রাপ্তি আর রাফসার লোক টা দেখার মতো…….
সবার নজর যেন তাদের দিকেই।
সাদ এখনও আসে নি উপর থেকে…..নৌশিন ভাবীকেও আজ বেশ লাগছে তবে এক মাস হলো বাচ্চা হয়েছে তাই এতটাও সুস্থ নন তিনি….বাচ্চা ওঠে যাওয়ায় সে উপরে চলে যায়।
সবাই রিদিকে খুছজে….সাদাদের মা একজন সার্ভেন্টকে পাঠান রিদি আর সাদ কে ডাকার জন্য।
সাদকে ডাকার আগেই সাদ হাজির।এমনিতে হান্ডসাম তার উপর আজ আবার সবকিছু বেশ পরিপাটি…
রাফসা তো নৌশিনের মতো হা করে তাঁকিয়ে আছে তার বরের দিকে।রাফসা,সাদ এদের কে দেখে মনে হওয়ার উপয়ি নেই তাদের একটা বাচ্চা আছে।
!
সবার বিকেলের খাওয়া শেষ হওয়ার পর রিদি আসে।
“কি রে মা এতো দেরি করলি কেন??”(সাদাদের মা)
“আন্টি আসলে না আমার মাথা টা ধরে গিয়েছিলো….”
“সে কি…ঔষধ লাগিয়েছিস??”
“হ্যাঁ…আন্টি…..”
“এখন কেমন লাগছে??”
রিদি মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে বলল,
“ভালো…..”
পাশ থেকে কোনো মহিলা বলল,
“বাহ্….ভাবী….আপনাদের মেয়েকে তো দারুণ লাগছে….রিদি তো শাড়ী পড়েই না….আজ পড়েছে বেশ মানিয়েছে কিন্তু….”
“আর বলতে…..আমার এই মেয়ে কম কিসে!!বরং বেশি….রাজকন্যা একদম….শুধু এখন রাজপুত্রের অপেক্ষা….”
রিদি কিছু বললো না শুধু হেঁসে তাঁদের সাথে তাল মিলিয়ে গেলো।
এই বাড়ির সব কয়টা মেয়ে,বউ আজ একদম পরিপূর্ণ সাজে।
সন্ধ্যা লেগে আসছে…..
প্রাপ্তির বন্ধুরা কেক কাটার জন্য তারা দিচ্ছে।
!
সবাই কেক কাঁটার জন্য উপস্থিত হয়ে যায়।
প্রাপ্তির পাশেই নৌশিন দাঁড়িয়ে আছে…তার পাশেই সাদাদ। আর সাদাদের সাথে ঠিক গা ঘেষে দাঁড়িয়েছে রিদি।
কেক কাটলো প্রাপ্তি।
কিন্তু এখানে কোনো মম বাতি নিভানো হয় নি।
একটা জন্ম তো আলোর স্বরূপ তাই এমন দিনে আলো নিভিয়ে আনন্দ করার কোনো মানে হয় না।
প্রাপ্তি কেক টা কেটে নিয়ে সবার আগে ওর মা,বাবা,জেঠি,জেঠু আর ভাই বোনদের খাইয়ে দিলো।
একে একে সবাই একে অপরকে কেক খাইয়ে দিলো।
এই অল্প কিছু সময়ের মধ্যে নৌশিন প্রাপ্তির সব বন্ধুদের সাথে খুব ভালো ভাবে মিশে গেছে।
তাই প্রাপ্তির সব মেয়ে বন্ধুরা নৌশিনের সাথে দুষ্টুমি করে নৌশিনকে কেক খাওয়ানোর সময় সারা মুখে লাগিয়ে দিয়েছে।
রিদি সাদাদকে কেক খাইয়ে দিয়েছে যেহেতু সবার থেকে খেয়েছে তাই সবার সামনে তাকে রিজেক্ট করলে বিষয় টা খারাপ দেখায়….তাই খেয়ে নিলো।
“আমাকে খাওয়াবে না??”
সাদাদের ইচ্ছে করছিলো না রিদিকে খাইয়ে দিতে কিন্তু নৌশিন বলায় এক টুকরা কেক নিয়ে রিদিকে খাইয়ে দিলো।
রিদির ভেতর টা খুশি তে থইথই হয়ে উঠেছে
স্বয়ং সাদাদ তাঁকে কেক খাইয়ে দিয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না তার কাছে।
আর কারও চোখে পড়ুক বা না পড়ুক সাদাদ ঠিক উপলব্ধি করেছে রিদির মনের অবস্থা….. কিন্তু এখানে সাদাদের করার কিছু নেই কারণ সে যে শুধু নৌশিনের💜💜💜💜💜আর এটাও বুঝতে পেরেছে যে রিদি কেক খাওয়ার সময় ইচ্ছে করে সাদাদের হাতে নিজের ঠোঁটের আবেশ দিয়ে দিয়েছে….যেটা রিদির উপর সাদাদের রাগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।……………….
!
চলবে।
#প্রেমঘোর#৭০#
💜💜
প্রাপ্তির সব বন্ধুরা রাতের খাবার খেয়ে যাবে।
ওদের প্রত্যেকের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে,ওদের সবাইকে প্রাপ্তিদের গাড়ি করেই যার যার বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে।
বাকী মেহমান রাও এখনও আছে।নৌশিনের মা অবশ্য তাড়া দিচ্ছেন চলে যাবে বলে।সাথে ছোট বাচ্চা আছে তার উপর বাচ্চার মাও এতটা সুস্থ নন।নৌশিনের ভাইয়া অনেক বার ফোনও করে ফেলেছেন এর মধ্যে।কিন্তু নৌশিন যে তাদের বিদায় জানাতে আসবে সে উপায় টুকু নেই মাত্র।
আসবে কি করে??সেই কখন থেকে মুখে কেক লাগানো অবস্থায় বসে আছে প্রাপ্তির বন্ধুদের সাথে…..বসে আছে বললে ভুল হবে,সব কয়টা নৌশিনকে জাস্ট পুতুলের মতো করে বসিয়ে রেখে দেখছে।
!
বিচ্ছুগুলোর খাওয়ার ডাক পড়লে নৌশিন হাফ ছেড়ে বাঁচে।এই সুযোগে তাড়াতাড়ি মুখ টা ধুঁয়ার জন্য ড্রয়িং রোমের পেছনের দিকে ওয়াশরোম টাতে ছুটে যায়।
ওয়াশরোমের দরজা লাগাবে নৌশিন কিন্তু পারছে না………
আবারও চেষ্ঠা করছে কিন্তু না কাজ হচ্ছে না……..
ঘটনা বুঝার জন্য দরজার বাইরে নজর দিতেই বুজতে পেরে যায় ব্যাপারটা।
অন্য কোনো কিছু না স্বয়ং সাদাদ দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নৌশিন ভ্রু কুঁচকে সাদাদের দিকে তাঁকায়………
সাদাদ একি ভাবে নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে…….
“সাদাদ,দরজা ছাড়ো…..দেখেছো মুখের অবস্থা???? ধুতে হবে তো নাকি??”
সাদাদ মুচকি হেঁসে ওয়াশরোমের ভেতরে ডুকে যায়……..নৌশিনের কাছে যাওয়া শুরু করে………
“সাদাদ,দেখো….এই সময়ে কোনো দুষ্টুমি করবে না একদম…..বাড়ি ভর্তি মেহমান মাথায় যেন থাকে……..”
সাদাদ হাঁসির রেখাটা আরও বড় করে নৌশিনের একদম কাছে চলে আসে…….কমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে লাগিয়ে দাঁড় করায়……………
“সাদাদ,কি করছো???ছাড়ো???মা-ভাবী ওরা চলে যাবে এখন….আমাকে যেতে হবে ওদের কাছে……”
“হুসসসসসসস……”
“সাদাদ!!!”
“একটু দেখতে দাও না রে ভাই……এতো তাঁড়া কেন তোমার???আমার বউকে আমি দেখবো তাতেও???”
“ইশশশ….সাদাদ!!!পরে দেখো তো এখন ছাড়ো……মা চলে যাবে……”
“তোমাকে না বলে তো আর যাচ্ছে না…..সো…..”
“সো??????”
“চুপচাপ আমাকে আমার কাজ করতে দাও……..”
“প্লিজ সাদাদ……”
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে কথা বলতে বাঁধা দেয়…..
পলকহীন ভাবে তাঁকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে……….
নৌশিনও স্থির হয়ে গেছে সাদাদের মায়াভরা নেশাতুর দৃষ্টিতে………..
সাদাদেরর এক হাতে নৌশিনের কমড়ে আর অন্য হাত টা আস্তে আস্তে ডান পাশের গালে স্লাইড করতে ব্যস্ত….গাল থেকে হাতে লাগা কেক টুকু সাদাদ পরম সুখে নিজের আঙ্গুল থেকে খেয়ে নেয়………..
সাদাদ ছোঁয়াতে হারিয়ে আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে নৌশিন……..সাদাদের লোভ যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে……..
সাড়া মুখে লেগে থাকে কেকের অংশ যেন ক্ষুদা তৈরী করে দিচ্ছে খুব………….
সাথে নৌশিনের এমন স্থিরতা💜💜
সাদাদ নৌশিনের ঘাড়ের পেছনের দিকে হাত রেখে আরও কাছে এসে যায় নৌশিনের মুখের……ধীরে ধীরে নিজের মুখটাও এগিয়ে নিয়ে যায়…………..
খুব বেশি সময় লাগে নি…..সাদাদ তার প্রিয়তমার গালে লেগে থাকা কেকে লেহন দিতে শুরু করে…….দু গালে,কপালে,থুতনিতে পাগলের মতো লেহন শুরু করে সাদাদ……..পাগল না হয়ে নৌশিন যাবে কোথায়!!!
ভালোবাসার ঘোরে সাদাদ তাঁকে সব সময় ডুবিয়ে মারবে…………..
সাদাদ নৌশিনের কমড় রাখা হাতটাও নৌশিনের ঘাড়ের উপর নিয়ে আসে…..অন্য হাত টা গালের এক পাশে……সাদাদ যা করলো এতক্ষণ তাতে মুখে আর কেকের অংশ মাত্রও নেই………তবুও সাদাদ যে বন্ড তৃষার্থ…….ঠোঁটে ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে পরম আবেশে তলিয়ে গেছে দুজন…….দুহাত দিয়ে কোঁটের পেছন খামছে ধরে রেখেছে মেয়েটা…………………
আবেশ…..ঘোর…..পরম শান্তি…….দুটি মানুষকে ঘিরে আছে…………
.
হঠাৎ নৌশিন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সাদাদকে…..হাতে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরে আছে সে……….
করুণ দৃষ্টিতে সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে…….
সাদাদ বুজতে পেরে নৌশিনের কাছে এসে,দু কাঁধে হাত রেখে বলল,
“সরি বাবু……লেগে গেছে……”
নৌশিন নিজের ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে সাদাদের হাত দুটো সরিয়ে দিয়ে বলছে,
“তোমাকে কতবার বলি??যে আমাকে সরি বলবে না…….ভালো লাগে না আমার তোমার মুখে এই ওয়ার্ড টা শুনতে……”
সাদাদ আবারও একটা স্মাইল দিয়ে এসে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে, “আচ্ছা বাবু….সরি আর এমন কথা বলবো না……”
নৌশিন সাদাদের ঘাড়ে চিমটি কেঁটে বলল,
“আবার কিন্তু বললে!!!”
“ওকে ওকে……আর বলবো না…….”
“হয়েছে???ছাড়ো এবার……সোখানে যাই……”
“থাকো না বুকে আরোও একটু……”
নৌশিন সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েতেই ওর মনে হলো কেউ যেন ওয়াশরোমের বাইরের দিক থেকে দৌঁড়ে ড্রয়িং রোমে ডুকে গেলো……….সাদাদ কিছু বলতে চাইছিলো তার আগেই নৌশিন একরকম ছোটে ওয়াশরোমের বাইরে যায় কিন্তু কে একটু আগে এখানে ছিলো?আর কেন ই বা লুকিয়ে এভাবে ছুটে পালালো তার কোনো হদিস পেলে না নৌশিন……….
নৌশিনকে হঠাৎ এভাবে বের হতে দেখে সাদাদও ওয়াশরোম থেকে বের হয়ে আসে……
“কি হয়েছে??এভাবে কেন আসলে???”
নৌশিন চারদিকে চোখ বুলতে থাকে…. সাদাদের দিকে না তাঁকিয়েই বলে,
“সাদাদ এখানে না কেউ ছিলো…..মানে দরজার আড়ালে…….বাট আমি বাইরের দিকে তাঁকাতেই দৌঁড়ে ড্রয়িং রোমে চলে গেলো…….”
সাদাদ একটা বিশাল হাঁসিতে মেতে ওঠে……এমন ভাবে হাঁসছে যেন নৌশিন বিশ্ব সেরে কোনো কৌতুক বলেছে……..
“সাদাদ তুমি হাঁসছো??আম সো সিরিয়াস……”
“হা হা হা হা…..নৌশিন তোমার তো লজ্জার আর শেষ থাকলো না………”
অবাক হয়ে জানতে চায় নৌশিন,
“মানে????”
সাদাদ নৌশিনের পাশে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলছে,
“আমি যে তোমার সাথে এতক্ষণ রোমান্স করছিলাম সেটা নিশ্চয় কেউ দেখে নিয়েছে……….. আর তারপর যখন বুজতে পেরেছে যে তুমি বাইরে নজর দিচ্ছো তখন বেচারা নিজেই লজ্জা পেয়েছে পালিয়েছে………”
“সাদাদ!!!!!যদি বড় কেউ হয়.????ইইই…… সব দোষ তোমার……..”
“এখন আমার!!!!তাই না??”
“তো???আমার???আমি এসেছিলাম পেছন পেছন???আল্লাহ ই জানে কে না কে দেখেছে ঐ অবস্থায়……..”
নৌশিন মিনিট দু এক নিরবতা পালন করে আবারও বলা শুরু করল নৌশিন,
“কিন্তু সাদাদ,……..”
“আবার কি কিন্তু???কে দেখবে???দেখুক না…..আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ…….আর যে দেখেছে তোমার কি মনে হয় সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সব দেখেছে??নিশ্চয় ওয়াশরোম আসছিলো তোমাকে আর আমাকে এক সাথে দেখেই তাড়াতাড়ি সরে গেছে……..এখানে তো তোমার লজ্জায় নাক কাটা যাওয়ার কিছু নেই………”
“আমার কিন্তু ব্যাপার টা সোজা মনে হচ্ছে না……”
“মানে??”
“সাদাদ আমার মনে হয় কেউ আমাদের ইচ্ছা করেই দেখছিলো……আর আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সে সব টা দেখেছে…….”
সাদাদ নৌশিনের দু কাঁধে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
“বাই এনি চান্স তোমার কি ভয় লাগছে????”
নৌশিন কোনো জবাব না দিয়ে খুব দ্রুততার সাথে সাদাদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে………
সাদাদের আর বুজতে বাকী রইলো যে নৌশিনের মনে ভয় কাজ করছে……..
“নৌশিন নৌশিন……তাঁকাও আমার দিকে…..তাঁকাও…….”
আবারও দুজনের চোখ এক আঙ্কিকে আপাতিত হয়….সাদাদ বলছে,
“আমি আছি না??সো কেন এমন ভাবছো???আর কেউ যদি ইচ্ছে করে আমাদের কাজ টা দেখলো তো সেখানে আমাদের কি করার???উই আর হাসবেন্ড ওয়াইফ…..আর আমরা তো সবার সামনে কিছু করতে যাই নি…….ওয়াশরোমে ছিলাম আমরা আর এই দিকে গেস্ট বা বাড়ির অন্য কেউ আসবে না সো কেউ যদি ইচ্ছে করে আমাদের দিকে নজর রাখে -তোমার আমার সেখানে কিছু করার নেই…….তাই না??”
“তার মানে??তোমারও মনে হচ্ছে???? তাহলে কেন দেখবে কেউ???আর কেন ই পালালো??”
“নৌশিন যে ইচ্ছা করে আমাদের দেখছিলো সে কি সামনে আসবে নাকি আমাদের….. অবশ্যই পালাবে…….”
“এই কে আসবে???তোমার আমার শত্রু নাকি???আমার কিন্তু……..”
“চুপ…..একদম চুপ……..তুমি আমি রোমান্স করছি এটা মে বি কেউ শিখছিলো……আর শত্রু হলে হতেও পারে তোমাকো আজ যা সুন্দর লাগছে হয়তো বা কেউ এসেছিলো তোমাকে ফলো করে এই পর্যন্ত…..বাট পরে আমাকে দেখে তার মনে আগুন লাগলো আর শেষ টাও দেখে গেলো……..হা হা হা হা…..”
“ধুর…..সাদাদ!!!…….”
“আচ্ছা….আচ্ছা…..এবার ভেতরে যাই আমরা…..তা না হলে পুরো হল রোম এসে যাবে এখানে……”
“ওকে দাঁড়াও….আমি মুখ টা ওয়াশ করে নিই……”
সাদাদ একটা চোখ মরে বলল,
“আমি তো ক্লিন করেই দিলাম…….আর কি ওয়াশ করবে…….”
নৌশিন লজ্জায় পুরো লাল……
“ধ্যাত…..”মুচকি একটা হাঁসি দিয়েই ওয়াশরোমে ডুকে যায়……..
ট্যাপ টা চালু করে বলে,
“ওয়েট করো সাদাদ,যাবে না কিন্তু…..আমি দু মিনিটেই আসছি……”
বাইরে থেকে সাদাদের জবাব,
“জি মহারানী…..আছি পাহারাদাঁড় হয়ে………”
“সাদাদ!!!!!……”
“ওকে ওকে……..আমি পাহারাদাঁড় না তোমার বর…..আছি এখানেই…….”
!
নৌশিন সাদাদ হল রোমে পৌঁছালে নৌশিনের মা-ভাবী সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।
রাত প্রায় সাড়ে আট টা…….
সব গেস্ট চলে গেছে…….সাদাদের বাড়ির চার টা গাড়িই প্রাপ্তির বন্ধুদের যার যার বাসায় পৌঁছে দেওয়ায় ব্যস্ত……….প্রাপ্তি তো ড্রেস চেন্স না করেই সবার দেওয়া গিফ্ট গুলো খুলে খুলে দেখছে………..বাট একটা গিফ্ট খুলে বেশ খানিক টা অবাক হয়…………………………………….
সচরাচর এমন ধরনের গিফ্ট কেউ বার্থডে তে দেয় না………..
!
গিফ্ট আর কেউ না-নৌশিন দিয়েছে…..আর সেটা হচ্ছে একটা হাদিসের বই……..প্রাপ্তির সবার দেওয়া সব উপহারের মাঝে এই জিনিস টা সব চেয়ে বেশি ব্যতিক্রম আর ভালো লাগে…..
তাই দৌঁড়ে নৌশিনের রোমে চলে যায়…..নৌশিন জাস্ট শাড়ি টা চেন্স করে ফ্যানের নিচে বসেছে আর সাদাদ বিছানায় শুয়ে……প্রাপ্তি হুট করে এসে নৌশিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে…..হঠাৎ হওয়ায় চমকে যায় নৌশিন……
“আরে ভাবী…..তুমি না!! ভয় পাও কেন এতো??আমি আমি……”
“ওরে দুষ্টু আমি ভয় পাই তাই না???হঠাৎ এলে আমি কি করবো শুনি??”
“ওকে ওকে বাদ এই টপিক টা…….তোমাকে অনেক গুলো ধন্যবাদ ভাবী……উমমমম্মমা…..”
“উমমমমম……আস্তে……..এতো খুশি কেন তুমি??কি করেছি আমি??”
“আমাকে এই বইটা দেওয়ার জন্য……থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ ভাবী……লাভ ইউ……. ”
“লাভ টু বিউটি কুইন……..আচ্ছা নিপা আপু কি পাঠিয়েছে তোমার জন্য দেখেছো??”
“হ্যাঁ….হ্যাঁ….দেখেছি…. একটা ওন্ডারফুল ক্লক…….আমার তো খুব ভালো লেগেছে…. আপনি এই ফার্স্ট কানাডিয়ান কোনো জিনিস পাঠালো আমার জন্য….. আগে যা দিতো সব বাংলাদেশ থেকে কিনে দিতো…..বাট আই মিস হার ডিপলি……”
“মন খারাপ করো না…….আপু তো আসবে কিছু দিন পরেই…..”
“হুম….তবুও…..বার্থ ডে ছিলো আজ…..আমি না কখনও বাবার ব্যবসায় ডুকবো না….কি এতো কাজ বলো???যে বিদেশের টা আপনি কে দেখতে হচ্ছে আর এখানে দাদাভাই…..আর কিছুদিন পর ভাইয়াও এড হবে…..খালি কাজ আর কাজ……..জানো জেঠু মনি আর জেঠি মনিও খুব মন খারাপ করে ছিলো আপনির জন্য……..”
নৌশিনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাদাদ বলল,
“প্রাপ্তি,তুই যা সবার গিফ্ট গুলো খুলে দেখ……আর আমার এতো টাকার গিফ্টের কোনো কমপ্লিমেন্ট তো এখনও পেলাম না আমি??শুধু শুধু এতগুলো টাকা নষ্ট করলাম…..”
“ভাইয়া!!!!!!”
সাদাদ জলদি ঘটনা পাল্টায় কারণ তারও যে ভেতর টা জ্বলছে….আশে পাশে সবাই থাকা সত্ত্বেও যখন নিজের একমাত্র মাতুল্য বড় বোন টা থাকে না তখন যে মনের ভেতর কি চলে কেবল মাত্র সেই বুজতে পারে…………………….
প্রাপ্তি চলে যাওয়ার পর নৌশিন খোলা চুল গুলো সাদাদের উপর দিয়ে মেলিয়ে দিয়ে সাদাদের বুকে মাথা রাখে……..”আমি জানি আপুকে সবাই খুব মিস করেছে আজ…..ইভেন তুমিও….কিন্তু সাদাদ প্লিজ এর জন্য মুড অফ করে রেখো না……আপু তো আসবেই আগামী মাসে….আর আমি তো আপুর মেয়েকে দেখি নি এখনো….কি মজা হবে বলো তো…..সবাই এক সাথে……..”…….
!
চলবে।
পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/