26-30
#প্রেমঘোর#২৬#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹ঘড়ির কাটায় সকাল ৮.১৫
“নৌশিন……..নৌশিন……..কি রে ঘুম হলো তোর?…….”
দরজার বাইরে নৌশিনের ভাবী কড়া নাড়ছে কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সারা না পাওয়ায় নৌশিনের নাম ধরে ডাকাডাকি করছে বাট তবুও কারও কোনো পাত্তা নেই…………
“এই নিউ কাপল…..আপনাদের কি ঘুম হলো?নৌশিন……কি রে আর কত ঘুমাবি?আমি কিন্তু এবার দরজা ভেঙে ভেতরে ডুকবো………..”
বাইরে ডাকাডাকির শব্দে সাদাদের ঘুম ভেঙে যায় অবশ্য ডাকা ডাকি তে সাদাদের ঘুম সহজে ভাঙে না কিন্তু সাদাদ রোজ আট টায় ঘুম থেকে উঠে জিম করে তাই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেও অভ্যাসবসত এসময়ে ডাক পড়ায় ঘুম টা ভেঙে যায়…..
চোখ খুলে সাদাদ,দেয়াল ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে দেখে ৮.২০।।।।।আর বুকের উপর ঘুমন্ত একটা পরী……
সাদাদ ডাকাডাকির ধরণ শোনেই বুঝতে পারে যে ‘ভাবী ডাকছে’……………
তাই নৌশিনকে ডকতে শুরু করে…..”নৌশিন,…….উঠো….সাড়ে আট টা বাজে…….”
নৌশিন নিশ্চুপ………
সাদাদ নৌশিনের গায়ে একটু নাড়া দিয়ে “নৌশিন….উঠবে না?।।।।”
নৌশিনের জন্য ঘুমের পারফেক্ট সময় এটা…..
তাই এ সময় সাদাদ ডাকাতে নৌশিন একটু বিরক্ত ই হয়….অবশ্য এই সময়ে ও রোজ ই বিরক্তিকর বোধ করতো ওর বাবা মায়ের ডাকাডাকির চোটে……
আর আজ এই সাদাদ ডাকাডাকি শুরু করেছে…..
সাদাদের নাড়া খেয়ে নৌশিন সাদাদকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে…..
ঐ দিকে বাইরে নৌশিনের ভাবী এখনও দরজার বাইরে ডেকে চলেছে……
“নৌশিন উঠো টেডি বেয়ার,ভাবী ডাকাডাকি করছে……”
“ইশশশ,আর একটু ঘুমাই….”
নৌশিনের ঘুম ঘুম গলার আওয়াজ সাদাদ এতো দিন ফোনে শুনতো,আর আজ রিয়েল লাইভে……
বেশ লাগছে সাদাদের!!!
আবারও যেন মুগ্ধ হয়ে গেছে এমন ঘুম ঘুম কন্ঠে….
বাইরে ভাবী দাঁড়িয়ে ডেকে চলেছে,
“আরে ভাবী আসছে……”
“আর একটু প্লিজ…..”
সাদাদ আর ডাকাডাকি না করে নৌশিনকে আস্তে করে ছাড়িয়ে বালিশের উপর মাথা রেখে নিজেই দরজা খুলে দেয়…………….
“আরে,তুমি?তা তোমার বউ এখনও উঠলো না?…..”
“ঘুমাচ্ছে আর কি…..”
“হুম,ওর যত ঘুম তো সকাল বেলা,তা আপনারও কি সকালবেলা ঘুমের অভ্যাস আছে নাকি?”
“সাড়ে সাতটা বা আট টা….”
“আহা রে,আর একটু বেশি হলেই দু জন সেইম হতো….তাহলে কিন্তু একটা ফেভার হয়ে যেতো দুজনে সকালে ঘুম আর রাতে…….”
সাদাদ ঘাড় চুলকিয়ে মুচকি হাঁসে,আর সাদাদকে ব্লাশিং হতে দেখে ভাবী ও হেঁসে ফেলে……….
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে জামাইবাবু,দেখি আপনার বউয়ের কি অবস্থা………..”
ভেতরে ডুকে দেখেন নৌশিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন…….
“নৌশিন…….নৌশিন……এই মেয়ে……উঠ….”
এমনি ডাকায় কাজ না হওয়ায় গায়ো ঠেলা দিতে শুরু করেন ভাবী………….
“ঐ ঘুম পাগলী উঠ……পড়ে ঘুমা…….এখন উঠ।…….”
“উমমম….আর একটু…..”
“না তুই এখনি উঠ….উঠ বলছি….মা ডাকছে তোকে,কি রে উঠ…….”
সাদাদ নৌশিনকে এভাবে ডাকতে দেখে হাঁসি থামিয়ে রাখতে পারছে না……………
“ভাবী এভাবে বোধহয় হবে না……এই নাও এটা কাজে লাগাও………”(সাদাদ)
ভাবী সাদাদের দেওয়া পানির গ্লাস টা হাতে নিয়ে অল্প পরিমাণ পানি নৌশিনের মুখে ছিটিয়ে দেয়…..আর নৌশিন “ইশশশশ…….”বলে একটু বিরক্ত হয়ে পাশে থাকা একটা বালিশ নিয়ে নিজের মুখের উপর দিয়ে রাখে কিন্তু চোখ এখনও খুলে নি…………
“তুই কি উঠবি না……..”ভাবী নৌশিনের হাত ধরে একটু ঝাঁকি দেয়……….নৌশিন তন্দ্রায় ডুবে ঘুম ভাঙা স্বরে বললো,
“সাদাদ জান প্লিজ রাতে অনেক হয়েছে আর কিছু করো না……..একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ সোনা……..”
ভাবী নৌশিনের কথা শুনে সাদাদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে এমন একটা ভাব দেখালো,মনে হয় যেন ওনি জানেন না রাতে কি হয়……
তারপর আবার পর মুহুর্তেই অট্ট হাঁসিতে মেতে উঠে…….আর সাদাদ টাল সামলাতে একটু লজ্জা লাগলেও নিজেও হেঁসে ফেলে…………
ভাবী এবার নৌশিনের মুখের বালিশ সরিয়ে আবার পানি ছিটিয়ে,
“আরে আমি তোর ভাবী,তোর জান-সোনা না…..”
“হু….ম……” এখনও ঘুমিয়ে ই আছে……….
সাদাদ নৌশিনকে এমন মরার মতো ঘুমাতে দেখে ভাবীর হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পুরো পানি নৌশিনের মুখে ঢেলে দেয়……আর নৌশিন সাথে সাথে চমকে উঠে এক লাফে বসে পড়ে……..
চোখ খুলতেই দেখে এক পাশে সাদাদ আর অন্য পাশে আর অন্য পাশে ভাবী…….নৌশিন হাবলার মতো একবার সাদাদের দিকে তো আরেক বার ভাবীর দিকে তাঁকাচ্ছে…..
ভাবী আর সাদাদ নৌশিনের কান্ড দেখে হাঁসতে হাঁসতে শেষ……
তার উপর নৌশিন আবার ঘুম ঘুম গলায় বলে,
“কি হয়েছে…………”
এতে ওদের দু জনের হাঁসির মাত্রা আরও বেড়ে যায়………ভাবী কোনো মতো হাঁসি থামিয়ে বললো,
“কিছু হয় নি জান,রাতে কি হয়েছিলো সোনা??……”বলেই আবার হাঁসি শুরু করে………
নৌশিন সাদাদের মুখের দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে রোমে কি হয়েছে বুজার চেষ্ঠা করছে……
পরক্ষণে ভাবী আবার বলে উঠে, “কি হয়েছিলো জান রাতে,বললা না তো……….”
নৌশিন কিছু একটা বুজতে পেরে চোখ বড় করে দুজনকে দেখে এক লাফে খাট থেকে নেমে দৌঁড়ে ওয়াশরোমে চলে যায়……..
ওয়াশরোম থেকে বের হয়ে দেখে ঐ দুটো বকবক করছে আর পাগলের মতো হেঁসে চলেছে………………………
Extra Part:
নৌশিন মুখ মুছতে মুছতে ভাবীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়……
ভ্রু কুঁচকে বলে “খবিশদের মতো হাসছো যে?কি হয়েছে,,,দুই বদমাইশ আমার আরামের ঘুম নষ্ট করে এখন হাঁসা হচ্ছে তাই না??”
“না জান,কিচ্ছু না…..তা সোনা,তোমার ঘুম হয়েছে কাল রাতে?”(ভাবী)
“কি সব জান,সোনা বলছো,ছিঃ……লজ্জাও নাই তোমার ভাবী……..”(নৌশিন)
“ও,আমি বললেই লজ্জা নাই আমার তাই না?আর নিজে বললে কিছু না…..”
“আমি!!!…….”
“তা বরকে জান,সোনা এসব ডেকে কি বেঁধে রাখার ফন্দি করছেন আপি জি……..”
নৌশিন লজ্জা পেয়ে গেলো-
ও কিছুটা মনে করতে পারছে,কারণ ও জানে ঘুমের ঘুরে অনেক কিছু ই বলে……..
“ভাবী…….”
“হা হা হা……..ঠিক ই আছে……”
“হুম কিচ্ছু ঠিক নেই,ওকে আমি এসব বলে বেঁধে রাখতে যাবো কেন??ও কি গরু না ছাগল…….গরু ছাগলকে বেঁধে রাখা যায় স্বামীকে না……আর সে তো এমনি ই আমার তাই বেঁধে রাখার প্রশ্ন ই আসে না…….”
সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাঁসে নৌশিন……..
“বাব্বাহ্ আমার ননদিনী তো অনেক কিছু বুঝে রে…..হুম,দোয়া করি যেন সারা জীবন তোর ই থাকে……..বাঁধে নয় ভালবাসায় আকড়ে রাখিস…….”
“আরে ব্বাস……..আমি তো সুপার ম্যান হয়ে গেলাম ভাবী……”(সাদাদ)
“জি না,আপনাকে সুপারম্যান হতে হবে না……ম্যান হয়ে ই থাকুন……..আর হ্যাঁ অন্য কারও না শুধু আমার হয়ে……..”
“হা হা হা হা……….”(সাদাদ)(ভাবী)………
!
“হয়েছে হয়েছে চল এবার,সেই কখন মা ডাকতে পাঠিয়েছে …এখন না গেলে মা নিজে ই ডাকতে আসবে…..অনেক্ষণ হলো খাবার রেডি……কাল রাতে তো কিচ্ছু খান নি আপনারা…….সো জলদি আসেন……আমি গেলাম….”
ভাবী চলে নিলে….নৌশিন পেছন থেকে চিল্লায়,
“আরে শোনো এতো সকালে আমি খাবো না……..”
পেছন না ফিরে ই ভাবী জানায়,
“তোর খেতে হবে না তোর বর কে নিয়ে আয়…….”
………………………………….
“যাহ্,চলে গেলো…..এতো সকালে মানুষ খায় নাকি….নয় টা বাজতে এখনও পনেরো মিনিটের বেশী সময় আছে,ধুর ভাল লাগে না………”
“আমার পেটে কিন্তু বিড়াল নাঁচানাঁচি করতেছে…….সো প্লিজ চলো…..”(সাদাদ)
“এই তোমার এতো ক্ষুদা লাগে কেনো বলো তো?আর আমি তো শুনছি ক্ষুদা লাগলে নাকি পেটে ইঁদুর বা চুচু দৌঁড়ায় তোমার পেটে ডিরেক্ট বিড়াল!!?….”
“আরে বোকা…….আমার বেশি ক্ষুদা লাগছে তাই ইঁদুর বিড়ালে কনর্ভাট হয়ে গেছে…..আর এখন ভাবীর মুখে খাবারের কথা শুনে বিড়াল টা বেশি লাফালাফি করতেছে……আফটার অল শশুড় বাড়ির খাবার বলে কথা ব্যাপার টা ই আলাদা…..কত কিছু খাবো!…..আহ!…….”
নৌশিন ভেংচি কেটে,
“রাক্ষস একটা…..”
“হুপপপ……..কাল রাতেও কিন্তু শশুড় বাবার সামনে খাওয়া নিয়ে বলছো আর এখন আবার…..বেশি বললে সব বাদ রেখে সারা দিন তোমাকে খাবো……”
চোখ টিপি দিয়ে “তখন ভালোভাবে বুজবে ‘রাক্ষস কি জিনিস’……”
“ছিঃ ছিঃ…….চলো….”
সাদাদ মুঁচকি হেঁসে বললো,
“হুম….চলুন….”
!
দুজনে খাবার টেবিলের দিকে যেতে থাকে,নৌশিনের বাবা আর ভাই আগে থেকে ই ওদের জন্য ড্রয়িং রোমে ওয়েট করছিলো…….সাদাদ আর নৌশিনকে দেখে নৌশিনের বাবা উঠে দাঁড়ায়,
“এই তো সাদাদ এসে গেছে……চলো বাবা ব্রেকফাস্ট সেরে নিবে…..”
“রিমা তোমাদের হলো?…”(নৌশিনের ভাই)
“হ্যাঁ,হ্যাঁ……সব রেডি এসো তোমরা….”(রিমা-নৌশিনের ভাবী)
……………সাদাদ,নৌশিন,নৌশিনের বাবা,ভাই সবাই মিলে ডায়নিং এর দিকে এগিয়ে যায়……
“বসো সাদাদ……”(নৌশিনের ভাইয়া)
“আরে!আমি কি মানুষ না গরু…..আমি ও তো খেতে ই এসেছি আর তোমরা শুধু ওকে ই বলে যাচ্ছো তখন থেকে……আমার নাম তো মুখেই আসছে না তোমাদের……”
“হা হা হা,পাগলী মেয়ে……তুমি তো ইজিলি আসে বসতে পারবে মা আর সাদাদ বাবা তো নতুন…..তাই আর কি…..”
“হুম,ছাই……সব আদর এখন সাদাদের জন্য……আমার জন্য কিছুই না……”
“আরে,তোকে খাবারের সময় কি আদর করবো বল তো?তুই কি খেতে জানিস নাকি??”
“এএএ,বললেই হলো,আমি অনেক খেতে পারি,জানো ভাইয়া কাল না আমি বিফ খেয়েছি…….”
“আল্লাহ্ গো কন কি আফা,আপনে গরুর গোসতু খাইছেন…….”(একজন সার্ভেন্ট)
“তাই নাকি??কিভাবে সম্ভব……”(ভাই)
“আরে,সাদাদ জোর করে মুখে ডুকিয়েছে আর আমি গিলেছি শুধু বমি ই করতাম বাট সবার খাওয়া নষ্ট হবে তাই পানি খেয়ে কোনে রকম আটকিয়ে রেখেছিলাম……..”
মেয়ে টার কমন সেন্সের একটু অভাব না হলে,বাবার সামনে বলে নাকি যে ‘বর জোর করে মুখে খাবার দিয়েছে’……….
“যাক….তাইলে দোলাবাই আপনারে মানুষ করবার পাইবো…….”(সার্ভেন্ট)
“আরে,তোর কি মনে হয় রে আমি মানুষ না??”
“হ মানুষ……তবে খাওইয়ো মানুষ না……দোলাবাই আপনে আপা রে খাওয়া ডা একটু শিখাইয়া নিয়েন…..”
সাদাদ মুচঁকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়……..
………একটা অল্প বয়সী ছেলে দৌঁড়ে এসে নৌশিনের পাশে বসে,
“আরে আপু,তুই তো জামাই পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি একদম…..আমি যে তোদের বাসায় আছি সেটা তোর খেয়াল ই নেই….তোর বর কি আমার চেয়ে হ্যান্ডসাম নাকি যে আমাকে তোর মনে ই পড়ে না…..”(আরফান-নৌশিনের মামাতো ভাই)
“হুহু…..তোর মতো হ্যান্ডসাম কেউ আছে নাকি??আর আমি তোকে একদম ভুলি নি,কাল আমি যখন আসছি তুই ঘুমাচ্ছিলি আর আমি কেবল উঠে এলাম……সো তোকে ডাকার চান্স পাই নি…….”
“হয়েছে তোর আর বলতে হবে না…….তুই তোর বরকে নিয়ে ই সুখে থাক…..আমার কথা তোর ভাবতে হবে না……”
“হাই ভাইয়া……আমি…”
“আরফান,রাইট?….”(সাদাদ)
“একদম পাক্কা…….আচ্ছা ভাইয়া বলো তো আমি কি কোনো দিক থেকে কম হ্যান্ডসাম?তবু তোমার বউ টা আমার মন বুজলো না………”(আরফান)
“কে বলেছে,তুমি শুধু হ্যান্ডসাম ই না একদম পারফেক্ট হ্যান্ডসাম,তোমার তুলনায় আমি তো জিরো…..”
আরফান নৌশিনের চুল ধরে টান মেরে,
“দেখছিস খালি তুই ছাড়া সবাই আমার মর্ম টা বুজলো…..”
“আহ্……হারামি চুল ধরিস কেন?তোর মর্ম আমার বুজা লাগবে না,বেশি পেঁচাল না পেরে চুপচাপ খেয়ে নে……”
“হু,তোর মতে না যে না খেয়ে ই থাকবো…..ও ফুপি খাবার দাও তাড়াতাড়ি……”
দু-তিন জন সার্ভেন্ট একের পর এক খাবার ডিস রেখে যাচ্ছে………নৌশিন তো পুরো হা………..
“আরে আরে,আর কত খাবার আসে?এতো খাবার কে খাবে?”
“ঐ তুই চুপ কর তো আপু,তোর খেতে হবে না তুই শুধু দেখ আমরা খাই……”(আরফান)
“খা খা….রাক্ষসের দল সব…..”(নৌশিন)
এতো খাবার টেবিলে জায়গা ই টান পড়ে যাওয়ার মতো……..আসলে নতুন জামাই য়ের খাতির করবে বলে কথা তার উপর আবার বড় লোকের কারবার,
“আরফান,আমিও তোমার সাথে একমত বাট খাবার আসলেই ওভার দেখা যাচ্ছে…..”(সাদাদ)
“কি বলো বাবা,কিচ্ছু ওভার হয় নি……সব কিন্তু খেতে হবে…..”
“এ্যা…..”
“জি ভাইয়া এ্যা না বলো হ্যাঁ,তুমি না পারলে আমি তো আছি……….”(আরফান)……….
নৌশিনের ভাবী হাতে একটা ট্রে নিয়ে খাবার টেবিলে রাখে,
“এই চুপ কর তো আরফান,চুপচাপ খা…..”(ভাবী)
সাদাদ এতো খাবার দেখে যত টা না অবাক হয় তার চেয়ে বেশি অবাক হয় ভাবীর আনা ট্রে তে খাবার বাটিগুলো দেখে………
“সাদাদ অবাক হওয়ার কিছু নেই,এগুলো তোমাকে খেতে হবে না……এগুলো তোমার ওনির খাবার…….”
নৌশিন এতক্ষণে বাটিগুলোর দিকে তাঁকায়……খাবার দেখে তো মহা খুশি…………
“আ……ভাবী……উমমম-লালশাক,আলু ভর্তা,মলা শুটকি,লেবু পাতা ভর্তা…….আআআ,প্রাণ তো জুড়িয়ে গেলো আমার,তাড়াতাড়ি গরম গরম গরম ভাত দাও……..আর সামলাতে পারছি না…….”
বলেই নৌশিন নিজের প্লেট ওর ভাবীর দিকে এগিয় দেয়…….
“আরে দাও দাও আগে আমাকে সাদা ভাত দাও,পরে তোমাদের জামাই আদর শুরু করে…..আমার আর তর সইছে না……..”
“এই থাম তো তুই…..”(নৌশিনের ভাইয়া)
“ভাইয়া,তুমি জানো কত দিন পর মলা শুটকি খাবো আমি…..ইইইইই ভেবে ই আমার নাঁচতে ইচ্ছে করছে…..”(নৌশিন)
“তবু আমার অন্য জনকে রাক্ষসী বলে,শালা শুটকিখোর…….”(আরফান)
রান্নাঘর থেকে,
“আরফান,কি সব ভাষা তোর?দাঁড়া তোর কপালে থাপ্পর আছে….”(নৌশিনের মামী)
আরফান আবার নৌশিনের চুল ধরে টেনে ফিসফিসিয়ে বলে,
“হারামি তোর জন্য আম্মুর কাছে বাঁশ খেতে হয়……”
“আআআআআআ……মামী,তোমার ছেলে আামার চুল হাত দিচ্ছে কিন্তু…….”
“আরফান……..কি করছিস তুই,দাঁড়া আমি আসছি…..”
নৌশিনের দিকে চোখ পাঁকিয়ে,
“ওমমমমম……”
“এই আরফান,বাবা দুষ্টুমি করে না…….খেয়ে নাও-তোমার ফেবারিট ডিসও তো আছে দেখছি……”
“জ্বি আঙ্কেলে…….হুম হুম…..”
সাদাদ শুধু বসে বসে ওদের কান্ড দেখছে,একে তো জামাই আদরের খাবার ওভার দেখা যাচ্ছে…..দ্বিতীয়ত নৌশিন আর আরফানের খুনসুটি,আর সবচেয়ে অবাক হচ্ছে নৌশিনের খাবার ডিস দেখে যার জন্য নৌশিন এতো এক্সসাইডেড হয়ে গরম,সাদা ভাতের জন্য প্লেট পেতে বসে আছে………………………………….
#প্রেমঘোর#২৭#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
“ও ভাবী,আগে আমাকে দাও না পরে সাজাও এগুলো…….”(নৌশিন)
“আরে বাবা,দাঁড়া ঠিক করে রাখি একটু……”(ভাবী)
“তাড়াতাড়ি…..প্লিজ…..”(নৌশিন)
“হুসসসস……থাম তো….”(আরফান)
“তুই চুপ থাক……তুই বুজবি না…..”(নৌশিন)
“আমার বুজার দরকার নাই,দেখ তোর ছোছড়ামি দেখে তোর বর ও হাঁসছে….”(আরফান)
“এই তুমি হাঁসছো কেন??তুমি কি জানো লেবু পাতা ভর্তার সাথে মলা শুটকি কত্ত মজা,জাস্ট অমৃত…..আর তার সাথে বেগুন ভাজা হলে তো সোনায় সোহাগা……..ও ভাবী কত কিছু রান্না করলে আর আমার জন্য একটা বেগুন ভাজলে না…….”
(নৌশিন)
সাদাদ নৌশিনের কাণ্ড দেখে মুচকি হেঁসে যাচ্ছে……
“আরে সময় তো লাগবে নাকি…..আমি তো এই শুটকি ই ভাজতে চাইছিলাম না-মামি জোর করলো তাই ভাজলাম…..”(ভাবী)
“আপাতা খা তোর এই কুখাদ্য,তারপর বেগুন ভাজা করে দিবে…….”(ভাই)
নৌশিন মন খারাপ করে বললো,
“ভাইয়া,এগুলো কু খাদ্য না…..অনেক টেস্ট চাইলে খেয়ে দেখতে পারো…..”(নৌশিন)
“তুই খা…..তোর তো ভালো খাদ্য পেটে শয় না……”
“বাবা,দেখলে তো ভাইয়া কি বলে…..তুমি ই বলো এগুলো তো নেচারাল খাবার…..এগুলোর সাথে আর কোনো কিছুর তুলনা হতেই পারে না…..”
“আচ্ছা আচ্ছা…..এই নে তোর সাদা ভাত……এখন খাওয়া শুরু কর…….”
“আহ্……উননননমমম কি সুন্দর ঘ্রাণ আসছে……”
“হুম,আসলেই লেবু লাতা ভর্তার গন্ধ টা জোশ…….এই যে নে তোর সব বাটি সামনে দিলাম,তুই নিয়ে নিয়ে খা……আর এইইইই যে তোর বেগুন ভাজা…….”
“আআআআআআআআ………ভাবীীীীীীীী…..ওওওওও,বেগুন ভাজা……আল্লাহ একদিন আমার ফেবরিট সব খাবার……ওওও দারুণ দারুণ………..”
“যাহ্…..বেগুন ভাজা ও করেছো ওর জন্য,এই না বলল করো নি….সব ওর জন্য ই করেছো ভাবী,এটা কিন্তু একদম ঠিক করো নি…”(আরফান)
“আরে হিংসা কেন করছিস….দেখ তোর প্রিয় কাতলা মাছের বিহারও তো করেছি……”(ভাবী)
“ঔ একটা ডিস ই করেছো আমার নিয়তে আর সব তোমার ননদের জন্য,দেবর তো পঁচে গেছে তাই না…..আর বেগুন ভাজা এনে ঢেকে রাখা হয়েছে দেন সারপ্রাইজ ও দেওয়া হলো……..”
“ওর সব খাবার বানাতে জাস্ট পনেরো মিনিট লেগেছে,আর তোদের এক এক ডিস বানাতে পুরো সকাল লেগে গেছে সব কটা লোকের…….এখন তো খেয়ে নে,দেখ অনেক কিছু ই আছে,লান্সে তোর জন্য তোর সব ফেবরিট ডিস করে দিবো আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে,এখন চুপ চাপ খা…..”
“হুম…..দেখা যাবে……”
ভাবী সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে,
আর নৌশিন নিজের টা নিয়ে অলরেডি কথা বন্ধ করে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,সাদাদ চেয়ে চেয়ে নৌশিনের খাওয়া দেখছে,
হাফ প্লেট গরম সাদা ভাত দেওয়া হয়েছে ওর প্লেট সামনে ছোট ছোট বাটিতে করে সব ভর্তা-নৌশিন প্রথমে ই লেবু পাতা ভর্তা নিয়ে ভাত মাখতে শুরু করেছে,তারপর লালশাক নিয়ে এক লোকমায় ভরে খেয়ে নিলো,দু-তিন লোকমা লাল শাক খেয়ে,
“ওম.।..জাস্ট ওসাম ভাবী,লেবু লাতা টা ওয়াও হয়েছে আর লাল শাকে ঝাল টা একদম পারফেক্ট নিশ্চয় লাল শাক টা মামী করেছে??আর লেবু লাতা ভর্তা তুমি….এম আই রাইট?”
ভাবী হেঁসে বলে,
“হ্যাঁ রে পাগলী,লেবু পাতা ভর্তা আর তোর শুটকি ভাজা আমি করেছি,মামী লাল শাক,আলু ভর্তা করেছে আর মা বেগুন ভাজা করেছে…..এবার তুই চুপচাপ সব ভাত শেষ কর……..”
“হুম, অবশ্যই করবো,তুমি জানো যদিও আমি খাবার কম খাই-কিন্তু খাবার নষ্ট করি না…..”
“হ্যাঁ,খা এখন……আরে সাদাদ খাওয়া শুরু করো ভাই……”(নৌশিনের ভাই)
“জ্বি ভাইয়া করছি…….”(সাদাদ)
“আরে খাও খাও…….তোমার জন্য ই তো কত কিছু করলো……”(নৌশিন)
ভাবী নৌশিনের কথা শুনে ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে,
“নৌশিন………”
নৌশিন আবার চুপ হয়ে খাওয়া শুরু করে,
লেবু পাতা ভর্তা দিয়ে আবার বেশ কিছু ভাত মাখিয়ে বেগুন ভাজা দিয়ে খাচ্ছে আর বাম হাতে মলা শুটকি নিয়ে এমনি ভাতের সাথে চিবিয়ে খাচ্ছে……….
“আরে,কি সব খাচ্ছো তুমি?এগুলো মানুষ খায়?”(সাদাদ)
“কি বলো তুমি,এগুলোর যা টেস্ট না খেলে তুমি বুজবে না……..এই নাও খেয়ে দেখো…..”-কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ই নৌশিন সাদাদের প্লেটে একটু লেবু পাতা ভর্তা আর একটা বেগুন ভাজা তুলে দেয়…………….
“আরে কি করছিস এটা,তেহেরীতে লেবু পাতা দিলি কেন?আজব তো…….
”
সাদাদ নৌশিনের দিকে চোখ বড় করে তাঁকিয়ে আছে,যে ছেলে চামচ ছাড়া খায় না সে খাবে লেবু পাতা ভর্তা………
“সাদাদ দাঁড়াও আমি প্লেট পাল্টে দিচ্ছি…….”
যদিও সাদাদ এসব খায় না তবুও বউ পাতে তুলে দিলো,শশুড় বাড়িতে এসে এখন খাবার প্লেট টা চেন্স করলে নিজের ইমেজ টা নষ্ট না হলেও-নৌশিনের খুশির জন্য প্লেট চেন্স করলো না সাদাদ…….
“না না ভাবী ঠিক আছে,চেন্স করতে হবে না……”
“ভাবী,খেয়ে দেখুক না একটু…….”
“একটু টেস্ট করো যদিও তেহেরীর সাথে এটা ভালো লাগবে না তবে গন্ধটা শুকে দেখো জোশ লাগবে আর বেগুন ভাজা টা তেহেরীর সাথে খাওয়া যাবে………রাগ করো না একটু খাও……”
সাদাদ চামচ দিয়ে খাচ্ছিলো,সেই চামচ দিয়েই নৌশিনের প্লেট থেকে সাদা ভাত তুলে নিয়ে লেবু পাতা ভর্তা দিয়ে খায়…..নৌশিন তো এই দৃশ্য দেখে পুরো হা…..নৌশিনকে আরও অবাক করে দিয়ে সাদাদ বেগুন ভাজা টাও খেয়ে নিলো……..
“হুম,আসলেই অন্য রকম খাবার…….যদিও বেগুন ভাজা আমি খেয়েছি কিন্তু লেবু পাতাও যে এভাবে খাওয়া যায় আজ জানলাম……”
“বাহ্…….ভালোই তো,তোমাকে দিবো আর একটু?….”(ভাবী)
Extra part:
“তুমিও কি নৌশিনের মতো পাগল হয়ে গেলে,কি বলছো?এতো সব রেখে এগুলো খাবে নাকি??….”(ভাইয়া)
“তাও তো বটে,নাও সাদাদ তুমি তেহেরী টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও,নৌশিন বলেছিলো তোমার নাকি মটরশুঁটির পরটা অনেক প্রিয় আগে তেহেরী টা শেষ করে নাও-তারপর মটরশুঁটির পরটা সাথে মাটানও আছে……….”
“কি বলো ভাবী,মটরশুঁটির পরটা আগে বলবে না তাহলে তো আমি তেহেরী টা নিতাম ই না…..”(সাদাদ)
“বাবা,সব খেতে হবে কিন্তু……কোনো না শুনা হবে না…..”
“আরে খাও,তেহেরী একটু ই তো নিয়েছো-তারপর তোমার যতখুশি মটরশুঁটির পটরা খাও কেউ করবে না…….”
নৌশিনের বাবা সবজি দিয়ে দু টো রুটি খেয়ে ই উঠে পড়েন,বেচারা ডায়াবেটিসেরর রোগী,কত খাবার ইশ কিচ্ছু খেতে পারলো না………..
সাদাদকে নৌশিনের ভাবী জোর করে তেহেরী,বেশ কয়টা মটরশুঁটির পটরা,আর মাছ মাংসের কত রকমের ডিস কাবাব থেকে শুরু করে গরুর ফুফডেড পর্যন্ত প্রায়সব কিছু…..সাদাদের শেষ মেষ তো অসহ্য ই লাগছিলো…….অবশ্য নৌশনকে অনেক বার ইশারা করেছে যে ‘ভাবীকে না করতে’……কিন্তু নৌশিন তা না করে সাদাদের মুখ দেখে মিটমিট করে হাঁসছিলো আর ভাবী তো ভাবী ই জোর করেই খাবার তুলে দিচ্ছিলো………..
আরফানও খেয়ে দেয়ে উঠে যায়-নৌশিনের ভাইয়া খাবার সেরে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে……………………………..
নৌশিন সবটুকু ভাত শেষ করেছে ভর্তাগুলো আর শুটকি দিয়ে…………
খাওয়া শেষে সাদাদ-নৌশিন রোমে চলে যায়……
রোমে ডুকেই সাদাদ ধাপ করে বিছানায় শুয়ে,
“আল্লাহ্…….শশুড় বাড়ির আদর খাবো কত এক্সসাইটেড ছিলাম বাট তাই বলে এতো-গলায় লবণ ডুকার জায়গা টুকু বাকী নেই…….”
“হা হা হা……..”
“এই হাঁসবে না একদম……”
“আমি আবার কি করলাম?হাঁসলেও দোষ…….হুহুমমমম….”(নৌশিন)
“তবে আমি আজ খুব খুশি কতদিন পর আমার প্রিয় সব খাবার খেলাম….আহা প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো…….”(নৌশিন)
!
শুয়ে থেকে সাদাদের চোখ টা জাস্ট লেগে এসেছে,নৌশিন আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করছে………………….
আর এমন সময়………….
#প্রেমঘোর#২৮#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
“এই আপু কি করিস?”(আরফান)
“দেখছিস না?”(নৌশিন)
“হুম,তোর এই ঘোড়ার লেজ ঠিক করছিস আর কি……”(আরফান)
“আআআআআ!!আরফান ব্যাথা লাগে কিন্তু!এমন করে কেউ চুল টানে,যত্তসব…….”
আরফান আর নৌশিনের বকবকে সাদাদের তন্দ্রা কেঁটে যায়-তারপর আবার আরফান চুল টান দেওয়ার কারণে নৌশিন চিৎকার করলো,তাতে কি আর সাদাদের ঘুম থাকে নাকি,
“আরফান,আমার সামনে আমার বউয়কে ব্যাথা দিচ্ছো??”(সাদাদ)
“ওরে ব্বাস,তোমার বউ কিন্তু আমার পুরনো জিএফ সো তোমার আগে ওর উপর আমার অধিকারগুলো বলবৎ হবে….”
“আচ্ছা!!!!”(সাদাদ)
“এই নাও……”বলেই আরফান নৌশিনের চুল ধরে জোরে একটা টান দেয়,আসলেই এবার বেশি লেগে গেছে,
“অওওওওও,ও মা গো…………..(নৌশিন)
“আরে,আস্তে ভাই লেগে যাবে………”(সাদাদ)
“হা হা হা হা হা……..”(আরফান)
“দাঁড়া তোর হাঁসি বন্ধ করছি,…….” আরফানকে থাপ্পর দেওয়ার জন্য উঠা মাত্রই দৌঁড়ে রোম থেকে বের হয়ে যায়-পেছন পেছন নৌশিনও ছুটতে থাকে,
ড্রয়িং রোমের সোভাকে ঘিরে নৌশিন আর আরফান ছুটাছুটি করছে,
“এই কি হলো তোদের??”(মামী)
“দেখো মা,আপু আমাকে মরার জন্য তাড়া করছে….”(আরফান)
“মামী,তোমার ছেলে আমার চুল ধরে টানাটানি করে…..আমার কি লাগে না!তুমি ওকে কিছু বলো…..”(নৌশিন)
“আরফান,তোকে কতবার বলেছি,’যে আপুর চুলে হাত দিবি না’?…..তোর বাবা আসুক,দেখ তোর কি করি……”
“এই এই,এখানে বাবা আসলো কোথা থেকে…..আচ্ছা!এই বসলাম আমি,আপু আয় আমার চুলে টান দে-তো হয়ে গেলো না শোদবোধ?…..আয় দে…..”
নৌশিন আরফানের চুল ধরার সাথে সাথে আরফান নৌশিনের চুল ধরে জোরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে এক দৌঁড়ে নিজের রোমে,
“আআআআআআআ,ওমাগো………আমি শেষ……..আআআআআআ”(নৌশিন)
“আরফান!!!!!!”(মামী)
“ওওওও……হারামী তুই বের হ একবার রোম থেকে তোর খাওয়া বন্ধ দুপুর বেলা-দেখছো মামী তোমার ছেলে কি বদমাইশ?।।।সকাল বেলা ই মাথা ব্যাথা তুলে দিলো একদম………”
“রাগ করিস না মা,জানিস ই তো দুষ্টু একটু তাও শুধু তোর সাথে ই করে………”
“উফফফ,মামী কি যে বলো না তুমি-রাগ করতে কেন যাবো!…….”
“আচ্ছা,মা শোন না-বলছি যে তোর শশুড় বাড়ির লোকগুলো কেমন রে?মানে একদিন তো ছিলি কেমন বুজলি?”
এতক্ষণে নৌশিনের মা ও নৌশিন আর আরফানের চিল্লাচিল্লিরর জন্য ড্রয়িং রোমে আসেন,
নৌশিনের পাশে বসে,
“হ্যাঁ,মা বল…..আমি ই জিঙ্গেড করবো ভালছিলাম এখন তোর মামী ই করে দিলো……বল তো একটু…..”
“মা,মামী…….কিসব বলো না তোমরা খারাপ কেন হতে যাবে সবাই খুব ভালো…..”
“না না খারাপ তো বলছি না,শুধু জানতে চাইলাম তোর সাথে কেমন?…”(মামী)
“হুম….সবাই ভালো মামী…..”(নৌশিন)
“তবে রিদি তোর সাথে রাতে খারাপ ভাবে কথা বলেছিলো কেন?”(মা)
কাল রাতে সাদাদের বাড়ি পৌঁছালে সবাই নৌশিনকে নিয়ে মাতামাতি করছিলো আর রিদি নামের মেয়ে টা নৌশিনকে এমন সব প্রশ্ন করেছিলো সবার সামনে যেসব মোটেই ভালো মানের নয়,
“কি হলো?বল…..”(মামী)
“তোমরা কি করে জানলে?”(নৌশিন)
“আমরা কি করে জানলাম তোর জানার দরকার নেই,তুই শুধু বল রিদি কি তোকে খারাপ কিছু বলেছে??”(মামী)
“না গো মামী….তেমন কিছু ই বলে নি…..তাছাড়া রিদি আপু এমনি একটু ওমনি….সবার সাথে লাউডে কথা বলে……বলো না তোমাদের কে বললো?”
“ড্রাইভার…..কালকে আমাদের একটা গাড়ী ওদের কিছু গেস্টকে ড্রপ করে দিয়ে গেছে ভালুকা থেকে যেটা তোদের গাড়ির পেছনে ই ছিলো আর তোর শশুড় মশাই জোর করে ওনাকে বাসার ভেতরে নিয়ে যায়-আর তখন তুই হল রোমে ছিলি তোকে নাকি রিদি কি সব প্রশ্ন করছিলো?….”(মা)
“মা,সেসব কিচ্ছু না….তুমি টেনশন করো না……তাছাড়া সবাই তো খুব ভালো….রিদি আপু এমনিতে সারা দিন অফিসেই থাকে আর সাদাদ ও ওকে খুব বেশি পচ্ছন্দ করে না তাই ওর সাথে সারা দিনে আমার খুব বেশি একটা কথা হবে না……”
“তোকে কি বলেছে ও?”(মা)
“ও মা,তুমি কি শুরু করলে বলো তো?আমি বসে আছি তোমাদের কাছে আর তোমরা আমাকে আদর না করে কিসব নিয়ে পড়ে আছো,রিদি আপু আমাকে যেসব বলছে সেগুলোর উত্তর আমি তো দিয়েছি নাকি….তাছাড়া আমার জা রিদি আপুকে তখনি সবার সামনে বারণ করে ‘আমার সাথে এমন করে কথা বলতে’ তাহলে তো আর কিছু আসে যায় না……..এখন বাদ দাও না সেসব কথা……”
“আচ্ছা!আচ্ছা!বাদ দিলাম,কিন্তু শোন কোনো সমস্যা হলে জানাবি কিন্তু তোর যা চাপা স্বভাব নিজে নিজে চেঁপে রাখছিস না কিছু আমাদের থেকে আমাদের টেনশন হবে মা…..”(মামী)
“তোমরা কেন এতো চিন্তা করছো,বলো তো,আমার কোনো প্রব হলে বলবো তোমাদের…..হয়েছে এবার?”
“আচ্ছা যা এখন রোমে যা,দেখ জামাইয়ের কিছু লাগে কি না-আর শোন ওর কাছে জানতে চাস দুপুরে কি কি খেতে ভালোবাসে……আবার সরাসরি বলিস না যে ‘মা জানতে চেয়েছে’…….”
“আর কত খাওয়াবে?সকাল বেলা ই তো দুপুরের সব খাওয়া খাইয়ে দিলে…..”
“হা হা হা মেয়ে কি বলে রে সোহানা(নৌশিনের মামী)…..”(নৌশিনের মা)
“আরে বুদ্ধু-নতুন জামাই একটু খাতির যন্ত না করলে হয়!….. “(সোহানা বেগম)
“এখন যা,রোমে যা…….”(মা)
“হুম,যাচ্ছি……”(নৌশিন)
নৌশিন রোমে ডুকে দেখে সাদাদ ঘুমাচ্ছে আর নৌশিনের অর্থব ফোন টা বেজে চলেছে,ফোন হাতে নিয়ে দেখে আন-নন নাম্বর,
নৌশিন কোনো কথা বলার আগেই ওপাশ থেকে,
“স্যার,আসসালামু আলাইকুম………”
নৌশিনের ততক্ষনাৎ মনে পড়ে যায় ‘ওর ফোনে সাদাদের সিম’…….
তাই কোনো জবাব না দিয়ে হুট করে ফোন টা কেটে দিয়েয়ে,সাদাদ কে ডাকতে শুরু করে,
“সাদাদ……সাদাদ…..শুনছো?…..”(নৌশিন)
সাদাদ একটু নড়েচড়ে শুলো বাট কোনো সারা দিলো না………
“এই সাদাদ,বলছিলাম তোমাকে মে বি অফিস থেকে কল করেছিলো…..”
“হুমমম…..”(সাদাদ)
“হুম কিসের,উঠো……”
নৌশিন ধাক্কা দিতেই সাদাদ চোখ মেলে তাঁকায়,
“কি হয়েছে,ডাকাডাকি করো কেনো.?”(সাদাদ)
“ঘুম কন্ঠ টা ঠিক করে,কল এসেছিলো সেটা ব্যাক করেন……”
সাদাদ কোনো কথা না বলে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে আছে শুধু,
“কি হলো?ফোন টা ব্যাক করো,অফিস থেকে কেউ…..”
কথাটা পুরোপুরি বলার আগেই সাদাদ নৌশিনকে টেনে ওর বুকে নিয়ে নেয়,
“কিইইই……..”(নৌশিন)
“কিছু না,জাস্ট জড়িয়ে ধরলাম……..”(সাদাদ)
“ছাড়ো তো,ফোন এসেছিলো-আমার তো মনেই ছিলো না তোমার সিম ডুকানো তাই আন-নন একটা নম্বার থেকে কল আসলো দেন ধরলাম,যখন স্যারর বলে সালাম দিয়েছে তখন মনে পড়ছে তোমার সিমের কথা…..তাই কোনো কথা না বলে মুখে ওপর কল কেঁটে দিয়েছি…….”
“বেশ করেছো……এখন আমার সাথে রোমান্স করো…..”
নৌশিনের এলোমেলো চুলগুলো সাদাদের চারপাশ ঘিরে রেখেছে,কিছু চুল মুখেও পড়েছে-সেগুলো সরিয়ে নিয়ে সাদাদ নৌশিনকে বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে নিজে নৌশিনের ওপর,
“এই কি করছো???দরজা খোলা…..”
“থাকুক কেউ আসবে না…..”
নৌশিনের মুখের দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সাদাদ,
“আরে,ভাবী বা আরফান ডুকে পড়বে কিন্তু…..ছাড়ো আমায়……”
“একদম না…..দরজা কেন লক করে ডুকো নি?”
“আজিব তো,আমি কি জানি নাকি তোমার রোমান্সের শখ জাগবে এখন…….”
“আজকের পর থেকে আমি যখন রোমে থাকবো আর তুই যখন রোমে একা আসবি তখন অবশ্যই দরজা টা ভেতর থেকে লক করে আসবি…….কজ আমার না সব সময় তোর সাথে রোমান্স করার ইচ্ছে হয়……..”
“ধুর…..সরো তো……”
“উমম হুমমম……”
নৌশিনের চুলে নাক ডুবিয়ে,
“এতো কিসের স্মেইল?….চুলেও এতো সুভাস?…..”
“তুমি না……..প্লিজ আগে কল টা ব্যাক করো….আর দরজা খুলা যদি আরফান ডুকে পড়ে তাহলে আমার মান সম্মান সব শেষ,প্রাপ্তির চেয়ে ডাবল বিটিশ ও…..কখন কিভাবে কার পিক নেয়,আল্লাহ্ ই জানে….প্লিজ প্লিজ প্লিজ উঠো…..”
“ওফফ,বোরিং রোমান্স করবো তার উপায়ও নেই….”(সাদাদ)
“হি হি হি……”(নৌশিন)
“হাঁসিস না বেশি কিউট দেখায়……”
মুচকি হাঁসে নৌশিন,
“আচ্ছা ঠিক আছে,কল টা ব্যাক করো……..”
“হুম…..কি আর করার……”
!
সাদাদ উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অফিসের একজন স্টাফ ফোন করেছে,
কল ব্যাক করে,
“হ্যালো…..”
“স্যার,কবির বলছিলাম,একটু আর্জেন্ট ছিলো….”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন….কি ব্যাপার…..”
“স্যার আপনি কি ঢাকার বাইরে আছেন? না মানে কল টা কেটে গিয়েছিলো….”
“না না আমি উত্তরাতে আছি,নম্বার সেভ করা ছিলো না এটা,তোমার ভাবী রিসিভ করেছিলো আমি একটু ঘুমাচ্ছিলাম,দেন ডেকে দিলো……”
“ও আচ্ছা,কথা বলেন নি তো তাই ভেবেছিলাম সার্ভারে প্রবলেম হচ্ছে…..”
“না না,বলুন কি যেন বলতে চাচ্ছিলেন…..”
“জ্বি স্যার,আসলে গতকাল যে মিটিং টা বস ক্যান্সেল করেছিলো,সে ক্লাইন্ড রা আজ ই-মেইল করেছে ‘ওরা আজ মিটিং না করলে কাল কানাডায় ব্যাক করবে’….বসকে বললাম ওনি বললেন আপনাকে জানাতে…….”
“আচ্ছা তাহলে ওনাদের আসতে বলো…….আমি এটেন করছি মিটিং এ……”
“ওকে স্যার…..স্যার,টাইম কয়টায় ফিক্সড করবো?”
“ওনারা যেহেতু কাল ফেরার চিন্তা করেছেন তাই আগে ভাগেই ওনাদের কাজ শেষ করে দিবো……..ওমমম এখনো দশ টা বাজে নি তুমি সাড়ে বারো টায় টাইম জানিয়ে দাও ওদের…….”(সাদাদ)
“ওকে স্যার…….”
“হুম…..বাই….”
“জ্বু স্যার আসসালামু আলাইকুম…….”
……………………………..
সাদাদ ফোন রাখলে-নৌশিন বলছে,
“তুমি কি আজ অফিস যাবে?”
“হুম,যেতে হবে কালকের মিটিং টা আজ করে ফেলতে হবে-বস কালকে এটেন্ড করে নি…..আজ না করলে এই মাসে আর প্রজেক্ট টা করা হবে না তাই যাবো………”
“ও,কখন যাবে?”
“এখনি বের হবো,প্রজেক্ট ফাইল চেক করে দেন মিটিং এ…….”
“তারমানে তুমি দুপুরে এখানে আসছো না বাট মা তো তোমার জন্য কত কিছু করছে…..”
“কাল তো আসছি…….কাল সব খাবো আর একটু আগে যা খেলাম তাতে দু-তিন না খেয়ে থাকতে পারবো………”
“যাও তো,তোমার চেয়ে আমি আজ বেশি খেয়েছি…….”
“কিহ্???”
“হুম।।।।।সত্যি ই তো বললাম…..”
“ঐ হাফ প্লেটেরও কম ভাত আর দুটো বেগুন ভাজা…….হাঁসিও না আর…..”
“বেশি বলবা না কিন্তু আমি অনেক খেয়েছি আজ……..”
“আচ্ছা মানলাম তোমার কথা,হয়েছে???”
“হুম…..”(মুঁচিক হাঁসে নৌশিন)
“ওকে,তাহলে দাও আমার ড্রেস বের করো……”
“তুমি ফ্রেস হও,দিচ্ছি……..”
সাদাদ ওয়াশ রোমে গেলে নৌশিন সাদাদের ড্রেস বের করে রাখে………….
তারপর আবার আয়নার সামনে বসে চুল ঠিক করতে লাগে,মেয়টার চুল ঠিক করতেই যেন হিমশিম লেগে যাওয়ার অবস্থা,
সাদাদ ওয়াশরোম থেকে এসে দেখে নৌশিন বেনুনি করছে,
“ওয়াও……..ফার্স্ট দেখলাম……”
“কি??”
“এই যে বেণুনী করছো……দাঁড়াও তো দেখবো….”
“আগে করে নিই,শেষ করে নি তো………”
“হুম জলদি……”
#extra prt::::
নৌশিন বেণুনী শেষ করে পাশে নিয়ে সাদাদের সামনে গিয়ে সুন্দর একটা হাঁসি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
“লুক………”
সাদাদ নৌশিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে,
“কি বলবো??”
“কি বলবে??তুমি ই তো দেখতে চাইলে………”
“আগে বেণুনী করে দেখাও নি কেনো?”
“এমনি…..আমি কি বাইরে কোনো দিন বেণুনী করে গেয়েছিলাম যে তুমি দেখবে……”
“এতো কিউটি কিউটি লাগছে আমার লোভ লাগছে তোমার বেণুনীতে…..”
“থু থু…..নজর দিবা না……”
“এই কি করলে এটা…..”
“থু থু দিলাম যেন নজর না লাগে……”
“হ্যাৎ,সব তো আমার জন্য ই তাই নয় কি…??”
“হুম,তাই……সেজন্য ই বিয়ের আগে দেখায় নি…..বুজলে…..”
বেণুনী টা হাতে নিয়ে সাদাদের মুখে একটা বারি দিয়ে অন্য দিকপ ঘুরে যায় নৌশিন,
“আউউউ…….”
“সরি সরি,বেশি জোরে লাগছে……আমি আস্তে দিতে চেয়েছিলাম…….”
“এটা চুলের বারি ছিলো?নাকি চাবুকের?…..”
“হি হি হি,বেশি লোভ লাগেছিলো না তাই এতো জোরে লাগে গেছে…….”
“খুশি লাগছে তাই না?তাড়া না থাকলে বুজিয়ে দিতাম……”
“সরি তো,আর হবে না……”
“কি আর হবে না,বাসায় সব সময় বেণুনী করো তুমি বলেছিলে বাট আমি কত পিক চেয়েছিলাম দাও নি সো তোমার নতুন বাড়িতে গিয়ে সবসময় এই ভাবে বেণুনী করে ছুটে বেড়াবে আর আমি দেখবো,বেশ লাগে তোমায় বেণুনীতে জাস্ট লাইক পনেরো বছরের কিশোরী……. ”
“কিহ্,শাড়ীর সাথে বেণুনী করবো?”
“কিসের শাড়ী,তুমি শাড়ী কি পরিমাণ সামলাতে পারো আমার জানা আছে…..শুধু মাত্র ফরমালিটির জন্য শাড়ি পরার দরকার নেই-তুমি যেটা তে কমফরটেবল ফিল করবে সেটা ই পড়বে………..”
“ওকে ওকে……সে পড়ে দেখা যাবে…….এখন বলো চা না কফি?”
“চা……চিনি এক চামচ……”
“ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে নাও,আমি আনছি।।”
নৌশিন চলে যাচ্ছিলো,
“শোনো……”(সাদাদ)
পেছন ফিরে,
“হুম……”(নৌশিন)
“চা কিন্তু তুমি করে আনবে……”
নৌশিন মিষ্টি হেঁসে জবার দেয়,
“ঠিক আছে…..”
!
রান্নাঘরে……………………..
“কি রে মা রান্না ঘরে কেনো এলি?
“মা সাদাদ অফিস যাবে,তাই একটু চা করতে এলাম…..”
“কিহ্,অফিস যাবে মানে কি?”(ভাবী)
“হ্যাঁ,একটা জরুরি মিটিং পড়ে গেছে,আজকে না গেলে নাকি এক মাস পরে করতে হবে তাই যাচ্ছে……”
“তাই বলে,আজও……পারেও বটে,মনে হয় তোর ভাইয়ার মতো কাজ ছাড়া কিছু চোখে দেখে না……”
“কি আর করার জরুরি কাজ পড়ে গেছে,দুপুরে আসবে না?”(মামী)
“মনে হয় না……”(নৌশিন)
“ও মা সে কি,কত কিছু রান্না করার আছে জামাইয়ের জন্য….আর ও আসবে না?”(মা)
“আমি জানি না মা,তোমার জামাইকে জিগেঙ্গ করো-আমাকে চা করতে বলেছে আমি করে নিয়ে যাই…..আর কিছু জানি না”(নৌশিন)
“তোর করতে হবে না,আমি করে দিচ্ছি নিয়ে যা……”(ভাবী)
“না না ভাবী তুমি কাজ করো এক কাপ চা ই তো আমি করে নিচ্ছি……”(নৌশিন)
“আচ্ছা কর……চিনি ঠিক করে দিস……”(ভাবী)
“ওকে…….”
!
চা নিয়ে রোমের দিকে এগুচ্ছে নৌশিন,
“কি রে,কার চা….”(আরফান)
“তোর ভাইয়ার…..”(নৌশিন)
“আমার জন্যও একটু করে দে না আপু……”
“তুই পুচকে ছেলে তোর চা খেতে হবে না…..”
“আমি পুচকে?????তোর এতো বড় সাহস…..”
“এই সর তো তোর সাথে বকবক করার সময় নেই,চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে……সাদাদ অফিসে যাবে……..”
“যা আজাইরা…………..।।।
#প্রেমঘোর#২৯#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
“তোমার চা……..”
“হুম…..”
চা মুখে নিয়ে,
“এটা কি??চিনি দাও নি কেন?”
“দিলাম তো……এক চামচ দিতে বললে না……”
“এক ফোঁটাও চিনু নেই…….যত্তসব……”
“আমি চিনি দিয়ে আনছি,প্লিজ বসো একটু…….”
“টেস্ট করে দেখো কতটা চিনি লাগবে সে আন্দাজে চিনি দিবে……”
“আমি?….”
“হুম,তুমি দিবে না তো আমি টেস্ট করবো নাকি?একটা চা ও ঠিক ঠাক বানাতে পারো না…….”
মাথা নিঁচু করে নৌশিন সরি বলে……
“থাক আর সরি বলতে হবে না,যেটা বললাম সেটা করো…..”
নৌশিন চায়ে চুমুক দিয়ে,সাদাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকায়,
“চিনি তো ঠিক ই আছে……”
“দাও…….”
“কি হলো কাহিনী টা?”
“কিছু না…..কাপ দাও…..”
সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে চা নিয়ে খাচ্ছে,
“এইবার মিষ্ট টা পারফেক্ট……”
“আজিব তো……”
সাদাদ নৌশিনকে এনে নিজের পাশে বসায়-
“আরে বুদ্ধু তোর ঠোঁটের ছোঁয়া ছাড়া সব কিছু তিতো….”
“ইশশশ….ঢং……”
“সে যাই বলো……চা টা ভালো ছিলো…..”
“হয়েছে…..আর বলতে হবে না….”
“আচ্ছা এখন আসি…..”
“হুম,আসসালামু আলাইকুম…..আর প্লিজ আস্তে ড্রাইভ করো….”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আর নো টেনশন আমি আস্তেই ড্রাইভ করবো……”
“মিটিং শেষ করে কল করবে কিন্তু……”
“ওকে ম্যাম…..চার বছর ধরে তো সেটাই করে আসছি….যে কেনো জরুরি কাজ শেষে প্রথমে আপনাকে ফোন……”
“হুম……আর শোনো না-আজ আসবো তো??”
“না কিছু কাজ আছে,পেপারসগুলো সব বাসায় তাই আজ আর আসবো না-ইনশাল্লাহ কাল আসবো আর আল্লাহ চায় তো লান্স এন্ড ডিনার টাও শশুড় বাড়িতে করবো…..আর হ্যাঁ পরশু দিন কিন্তু ব্যাক করতে হবে……”
ব্যাক করার কথা শোনে নৌশিনের মন টা যে একটু খারাপ হয়ে গেলো সাদাদের সেটা বুঝতে বাকী রইলো না…………..
“কিছু দিন পর আসবো আবার,বাসা তো জাস্ট শ্যামলী টু উত্তরা……..ইচ্ছে হলেই আসবে…….”
“হুম……..পরশু?”
“মা বলছিলো……”
“আচ্ছা…..”(মন খারাপ করেই জবার দেয় নৌশিন)
সাদাদ নৌশিনের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে,
“প্লিজ মন খারাপ করে না,আমি তো আছি নাকি?তোমার যখন আসতে মন চায় আসবে………আমি না নিয়ে আসতে পারলে গাড়ি নিয়ে তোমার যে দিন মন চায়……”
“মন খারাপ করি নি…..ঠিক আছে……”
“তাহলে হাঁসো…..”
নৌশিন জোর করেই ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফোঁটিয়ে তুলে,সাদাদ নৌশিনকে ভালোবাসে তাই ভালোবাসার মানষের নকল হাঁসি টাও সহজে ধরে ফেলে………………
সাদাদ নৌশিনকে আবারও জড়িয়ে ধরে-কপালে একটা আলতো করে চুমু এঁকে দেয়,
“আসি……কল করবো….ওকে?”
“হুম….আল্লাহ্ হাফেজ……”
সাদাদ বাসার সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে যায়…..ওর শাশুড়ী আর আমি শাশুড়ী অনেক করে বলে দিয়েছে বিকেলে চলে আসতে-কিন্তু সাদাদের কাজ আছে তাই বলছে কাল আসবে………
………………………………..
সাদাদ অফিসে কাজে ব্যস্ত,
আর নৌশিন ওর মা,মামী আর ভাবীর সাথে গল্প করছে………..মেয়ে কে পেয়ে গল্পের বাঁধ খুলে ফেলেছেন নৌশিনের মা…….
“আচ্ছা নৌশিন যা তো একটু ঘুমা…..অনেক গল্প হয়েছে……”(ভাবী)
“হুম……যা মা একটু ঘুমা….”(মা)
“না মা এখন আর ঘুমাবো না…..তুমি না বলেছিলে আমাকে পাপড় বানানো শিখাবে………”
“আজ??”
“হুম….আজকে পারবে না….”
“আজ না,আরেক দিন-অনেক কিছু করে রাখতে হবে….এখন করে রাখলে রাতে বানাতে হবে…..তার চেয়ে বরং আরেক সময় শিখিয়ে দিবো….তুই যা একটু শুয়ে নে……আযান দিলে আমি ডেকে দিবো…..”
“আচ্ছা……..”
সাদাদ রোমে গিয়ে দেখে ১১.২৫ বাজে,তারমানে সাদাদের মিটিং শুরু হয় নি-কাজ করছে……তবু একট ফোন তো দেওয়া যায়……তাই ভেবে নৌশিন ওর মায়ের ফোন নিয়ে এসে সাদাদ কে কল করে,
সাদাদের কাছে নম্বর টা আন-নন তবুও কল রিসিভ করে,
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম…….”
“……………..”
“হ্যালো কে বলছেন?”
“……………..”
“আপনি কি কথা শোনতে পারছেন?হ্যালো……”
“………….”
“ডেমেইড……যত্তসব…….”
বলেই সাদাদ ফোন কেঁটে দিতে যাচ্ছিলো তখনি নৌশিন বলে উঠে,
“আমি………”
সাদাদ আমি শোনে ই মু্ঁচকি হেঁসে বলছে,
“কথা বলছিলেন না যে??”
“এমনি…..”
“আচ্ছা!মিস করছিলেন??”
“উম হুম……..তবে একটু….”
“যাক,বেশি করতে হবে না-একটু একটু করো……তা কি করছিলে?”
“ঘুমাতে বলছিলো মা…..”
“একা ঘুমাবে?”
“তো দুকলা কোথায় পাবো?”
“আসবো??”
“হুম এসো……”
“এতো টা?”
“কিসের এতটা?তোমাকে আসতে বলেছি নাকি-তুমি আসতে চাইলে তাই আমি হ্যাঁ জানালাম…….”
“থাকে আর বলতে হবে না…….”
“তুমি কি করছিলে?”
“কাজ করছিলাম…..”
“ড্রির্স্টাব করলাম আসলে আমার ভয়েস শুনতে ইচ্ছে করছিলো তাই……..”
“তোমার এসব ফরমালিটি আমার অসহ্য লাগে……….যখন খুশি কল করো তুমি রিসিভ না করলে বুঝবে মিটিং এ….বাকী সব সময় কথা বলতে রাজি……
“ওকে,ওকে!রাগ করতে হবে না….আমি এখন ঘুমাবো না-মায়ের সাথে রান্না করবো দেন খেয়ে দেয়ে ঘুম….তুমি কাজ করো আর হ্যাঁ ফোন দিবে কিন্তু………ও এটা মায়ের নম্বার……”
“আচ্ছা আচ্ছা,যাও………রাখছি….”
ফোন রেখে নৌশিন রান্না ঘরে যায়……নৌশিনদের বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কোক নেই-রান্না টা নৌশিনের মা আর ভাবী মিলেই করেন…….তবে কেনো দরকার পড়লে রান্নার কাজে কোনো সার্ভেন্টকে জাস্ট কুটি নাটি করতে বলেন, নৌশিনের মায়ের এক কথা-‘ঘরের বৌ এর তৈরী খাবার নাকি ঘরের সব মানুষকে সুস্থ্য সবল রাখে তাই তিনি নিজের ছেলের বউকে হাতে কলমে সব শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছেন…….এই সুবাধে তিনি নিজের মেয় কে ও প্রায় সব রান্না শিখিয়েছেন…………
সাদাদের বাড়ীর সাথে নৌশিনের বাড়ীর এই জায়গাতে অনেক মিল-যদিও সাদাদের বাড়িতে একজন রান্নার লোক আছে-তিনি শুধু ভাজাভাজি তে ই ব্যস্ত থাকেন আর পুরো রান্না সাদাদের কাকি আর ভাবী মিলে করে-সাদাদের মা ও দেখাশোনা করেন তবে বয়সের তাদিগে পড়ে গেলে যা হয় আর কি………………
নৌশিনের ভাবী,মামী জোর করলেও নৌশিন রান্না ঘর থেকে সরে নি,
“প্লিজ ভাবী,একটু কিছু করি…..”
“আচ্ছা আচ্ছা কর……”
“কি করবি??”
“তুমি বলো……”
“আচ্ছা এক কাজ কর….আরফানের জন্য মুগের ডাল টা করে দে……”
“ওকে ওকে……আই লাইক ইট…..”
“হুম খালি রান্না করতে খেতে না……”
নৌশিন ডাল টা খুব ভালোই করতে পারে….তাই অল্প সময়েই করে ফেলে…..
আর ওর ভাবী সকালের সব খাবার তেহেরী,ভাত,মাটান,গরুর বিফকেড,নৌশিনের বেগুন ভাজা সব গরম করে রাখে-নৌশিনের ডাল রান্না শেষ হওয়ার সময় টুকুতে…..
“মা,আর কি করবো???তেমার ছেলে অফিসে ই লান্স করে নিবে….আর বাবা তো এসে যা খাবে তা তো আছেই……আর কিছু করবো নাকি?সাদাদ তো আসবেই না……”(ভাবী)
“কি আর করবে,যা আছে তাতে ই কেটে যাবে,…..ও হ্যাঁ বৌ মা-তোমার মামা আসছে সিলেট থেকে ভুলে গিয়েছিলাম……এক কাজ করো মাংস তো আছেই তুমি ভাইয়ের জন্য চিংড়ি মাছের মালাইকাড়ি করো একটু……আরফানেরও প্রিয়…… ”
“ঠিক আছে মা……”
রান্না শেষ করে বাসার সবাই নামায পড়ে নিয়ে খেতে বসে,নৌশিনের মামাও সিলেট থেকে এসে গেছেন……….আরফান তো সকালের প্রিয় মাছের ডিসের সাথে নৌশিনের রান্না করা মুগ ডাল পেয়ে মহা খুশি…….সবাই সব কিছু খেলেও নৌশিন শুধু বেগুন ভাজা আর একটু মাটান দিয়ে ই তৃপ্তি করে খায়……….
খাওয়া শেষ করে যে যার রোমে রেস্ট নিচ্ছে,
নৌশিন ঘুমানোর জন্য এপাশ ওপাশ করতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে যায়……..সাদাদের মিটিং শেষ হয় নি তখনও……..
ঘড়ির কাঁটায় ২.৩০……..
বাসার ল্যান্ড ফোন বেজে চলেছে,ফোন উঠায় নৌশিনের মা……..
“হ্যালো,কে বলছেন?”
“আসসালামু আলাইকুম ভাবী,আমি সাদাদের মা বলছিলাম……”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম…আল্লাহ্!আপা যে,কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ….. আপনি?”
“ভালো ভালো…..বাড়ির সব খবর ভালো?”
“হ্যাঁ ভাবী…..ভাবী একটা কথা ছিলো….”
“জ্বি বলেন…..”
“বলছিলাম…..সাদাদের দাদু কাল গ্রামে যাবে তো ওনি বৌ মা একটু দেখে যেতে চাইছেন…..বুজতেই তো পারেন বৃদ্ধ মানুষ….আর নীলাও আজ রাতে চলে যাবে……যদি ছোট বৌ মা কে…….”
নৌশিনের মায়ের কি আর বুঝার বাকী আছে ওনি কি বলবেন-মনের ভেতর টা কেমন জানি দুমড়ে-মুচড়ে উঠেছে,মেয়টা আসলো রাতে একটা দিনও পার হয় নি তবুও সব কিছু চেপে রেখে জবাব দেয়,
“বুজেছি বুজেছি আমার মেয়ে চাই তো…..এতো এভাবে বলার কি আছে আমার মেয়ে তো এখন আপনাদেরও মেয়ে আপা…..আমি বলছি নৌশিনকে পৌঁছে যাবে….কিন্তু আপনারা কেউ এসে ওকপ নিয়ে যাবেন তো?মানে প্রথম বার বাপের বাড়ি থেকে নতুন বউ কে তো শশুড় বাড়ির লোক রা এসে নিয়ে যায়…..”
“ভাবী,আজ কেউ যাতে পারছে না…..আমার শাশুড়ি মায়ের শরীর টা খুব একটা ভালো না হলে আমি যেতাম….তবে কথা দিচ্ছি কিছু দিন পরেই বউ মা কে আবার পাঠাবো…..তখন সবাই মিলে যাবো…..আজ আমি সাদাদকে ফোন করে দিচ্ছি ও কাজ শেষ করে বিকেল নাগাদ বউ মা কে নিয়ে আসবে…….আপনি একটু বউ মা বুঝিয়ে বলবেন, ‘বুজেন ই তো ছোট মানুষ’…..”
নৌশিনের মায়ের মনও যে মানছে না………..হাজার হোক মা তো,
“আচ্ছা,আপনি চিন্তা করবেন না……..”
“আচ্ছা ভাবী, রাখছি-কষ্ট নিয়েন না…..”
“আরে না না….রাখি-আসসালামু আলাইকুম….”
…………….ফোন রেখে নৌশিনের মা কান্না যেনো থামাতে পারছে না-মেয়ে কে কি করে বলবে ‘আজি যেতে হবে’……………..
নৌশিনের ভাবীকে ডেকে সাদাদ আসার খবর জানায়……নৌশিনের ভাবীরও মন টা খারাপ হয়ে যায় নৌশিনের যাওয়ার কথা শোনে…..তবুও মায়ের কথা মতো রান্না করতে যায়…………
……………………………..
“নৌশিন, নৌশিন…..মা উঠ…..”
বিকেল বেলা তাই একটু ডাকে ই নৌশিনের ঘুম ভাঙে,
“হুম…..”বলেই নৌশিন মায়ের কোলে মাথা রাখে,
“মা,একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও……”
মা যেন আর চোখের পানি সামলে রাখতে পারছে না-দু ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে যায়…….
শক্ত হয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“মা,উঠ….রেডি হয়ে নে…..”
চোখ বন্ধ করেই নৌশিন জানতে চায়,
“কেনো মা??কোথাও যাবো?”
“হ্যাঁ,সাদাদ আসবে ও বাড়িতে নিয়ে যাবে….”
মায়ের মুখপ হঠাৎ এমন কথা শুনে এক রকম চমকে উঠে নৌশিন……চোখ খুলে মায়ের মুখের দিকে তাঁকায়,
“কি বলছো???ও তো বললো পরশু যাবো তাহলে আজ কেনো?”
“তোর শাশুড়ি মা ফোন করেছিলো আজকে যেতে বলেছে আবার কিছু দিন পর…….”
কথা শেষ করার আগেই নৌশিন বলে,
“ও মা….এসেছি তো একটা দিনও হলো না….শুনেছি সবাই নাকি দু-তিন থাকে….তাহলে??”
“আজ দরকার…..সোনা মা আমার রেডি হয়ে নে….তোর ভাবী সব গুছিয়ে দিবে…….”
নৌশিন এবার কেঁদে ফেলে মাকে জড়িয়ে মা ও আর সামলে পারছে না….মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওনিও কান্না শুরু করে,
“ও মা আজ না,কাল যাই
??”
মা অনেক কষ্ট করে নিজেকে সামলে নেয়-কারণ ওনি না সামলালে ওনার মেয়ে যে আরও ভেঙে পড়বে,
“না মা,আজ যা-কিছু দিন পর আমরা যাবো……আর তোকে নিয়ে আসবে…..”
নৌশিনের কান্না যেন থামেই না…………
“আমার মা না তুই,এভাবে কাঁদে না………..প্লিজ মা কাঁদিস না……চোখ মুছ….”
“মা আমার যেতে মন চাইছে না আজ……সাদাদ তো সকালেও বলে গেলো পরশু দিন যাবো…….”
“মা মা, কান্না থামা….সাদাদ ও জানতো না ওর মা ওকে ফোন করে বলবে বিকালে তোকে নিতে যেতে……….”
“মা………………”
………………………………..
#প্রেমঘোর#৩০#
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
নৌশিন সব গুছিয়ে নিচ্ছে ওর ভাবী হেল্প করে দেওয়ায় তাড়াতাড়ি ই সব গুছানো শেষ………………..
“কি রে মন খারাপ?”(ভাবী)
মাথা নেড়ে বারণ করে নৌশিন…………
“মিথ্যা কেন বলিস,শোন আমরা যাবো তোর বাসায় তুই একদম মন খারাপ করিস না প্লিজ………..”
“তোমাদের খুব মিস করবো….. ”
বলেই নৌশিন আবারও কান্না শুরু করে দেয়……
ভাবী গিয়ে জড়িয়ে ধরে,
“বোন আমার এভাবে কাঁদিস না……….”
ভাবীও চোখের পানি আটকে রাখতে পারছে না-ভাবী,ননদের সর্ম্পক টা যে বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম হয়ে উঠে নি এতো দিন তাই দূরে যাওয়ার কষ্ট টা যে লুকিয়ে রাখা দায়…….
ভাবী নৌশিনকে ছেড়ে ওর চোখ মুছিয়ে বলছে,
“এই পাগলী,কাঁদবি না…..আমরা কি চলে যাচ্ছি নাকি?যে তুই এভাবে কাঁদছিস?রোজ কথা হবে আর সাদাদ আছে না সে বাড়িতে দেখবি আস্তে আস্তে ঐ বাড়ির সবাই তোর কত আপন হয়ে গেছে…..তখন তো আমাদের কথা তোর মনেই পড়বে না…..”
“ভাবী………”
“এই যে আবার কান্না করে……..থাম,চুপ একদম চুপ……..”
“তাহলে কি করে বললে তোমাদের ভুলে যাবো?……”
“ধীরে ধীরে যে সো বাড়ি ই তোর সব হয়ে যাবে,ভুলবি না জানি সেটা তো কথার কথা বললাম দেখবি এমন এক সময় আসবে ‘এই বাড়িতে আসে দু দিনেরর বেশি থাকতে ভালো ই লাগবে না….আর যত দিন থাকবি মন পড়ে থাকবে ও বাড়িতে………”
“আমাকে কিন্তু দিন কয়েক বার কল করবে ভাবী……”
“আচ্ছা,সেটা করবো এখন চল রেডি হয়ে নে…….”
“কি পড়বো??”
“কি আবার শাড়ী পড়বি…..”
“আমার ভালো ই লাগছে না এলাম চব্বিশ ঘন্টাও হলো না……সবাই কত দিন থাকে…..”
“কি আর করার বল……থাক মন খারাপ করে তো আর লাভ নেই তুই সাদাদকে নিয়ে যেদিন মন চায় আসবি বাসা তো জাস্ট এক ঘন্টার রাস্তা……”
“আচ্ছা আর কোনো কথা না বলে শাড়ি বের কর,আবার সাদাদ এসে যাবে………”
“বের করে দাও কোন শাড়ি পড়বো………”
“দিচ্ছি……”
এরমধ্যে আরফান ঘরে ডুকে,
“আপু,তোর ফোন-ফুপু দিলো…..”
“কে কল করেছে?”
“বললো ভাইয়া দিয়েছে…..”
“ওও……আচ্ছা তুই যা…..”
……………………………..
নৌশিন কল ব্যাক করে কোনো সালাম দেয় নি আজ,সাদাদ খুব ভালো করেই বুজতে পারছে নৌশিনের ভীষণ মন খারাপ……..বিয়ের দিন যেভাবে কান্না করছিলো আজও নিশ্চয় কান্না করবে………………..
“হ্যালো,কল করেছিলে?”
“হুম……”
“আসছো কখন?”
“মন খারাপ করো না জান প্লিজ,আমি কিছু দিন পর ই তোমায় নিয়ে আসবো দেন অনেক দিন থাকবে……..”
“না মন খারাপ করি নি……মিটিং শেষ?”
“হ্যাঁ,আধা ঘন্টা আগে শেষ হলো…….লান্স করেছো?”
“হুম….তুমি?”
“কফি,টাইম হয় নি আর কিছু খাওয়ার……”
“সে কি……চার টা বেজে গেলো প্রায় আর তুমি লান্স করো নি এখনো…..”
“কি করবো বলো চাপ ছিলো……”
“আচ্ছা তুমি তাড়াতাড়ি এসো,বাইরে কিছু খাওয়ার দরকার নেই এখন……এখানো এসো তাড়াতাড়ি…….”
“হুম,গাড়িতে বসেই তোমায় ফোন করেছি…….”
“ও….তাহলে আমি রাখছি……তৈরী হতে হবে…..আল্লাহ হাফেজ…..”
“হুম…..”
“আস্তে ড্রাইভ করো…..”
“ওকে ম্যাম,রাখছি……”
……………………………….
#Extra part:::
!
!
নৌশিন কালো স্কাই কালারের একটা জামদানী পড়ছে-শাড়ির পাড়টা অবশ্য কালো………শাড়ি টটা এতো গর্জিয়াস না,আর নৌশিনও এতো জাকজমক পচ্ছন্দ করে নে,শাড়ীটাতে বেশ মানিয়েছে মেয়ে টাকে……………
ওর ভাবী ওর চুল রেডি করে দিচ্ছে,এমন সময় সাদাদ এসে যায়………………..
“ও সাদাদ এসে গেছো,বসো ভাই……..”
“জ্বি ভাবী……”
নৌশিন কোনো কথা বলছে না সাদাদের সাথে……সাদাদ আয়নার দিকে চোখ রেখে নৌশিনকে দেখলেও নৌশিন মাথা নিচু করে আছে………..
খোপা করে দেওয়ায় শাড়ীটার সাথে বেশ মানানসই লাগছে…..সাথে কানে ঝুমকো,গলায় মাঝারি সাইজের একটা সোনার হার….হাতে বালার সাথে কিছু চুরিও আছে-হালকা কাজল,হালকা রঙের লিপস্টিকে বলতে গেলে সাধারণের মাঝে অসাধারণ লাগছে………………………..
নৌশিনের মা রোমে এসে,
“সাদাদ বাবা চলো,খেয়ে নিবে……”
“হ্যাঁ সাদাদ যাও ভাই…….”
“বৌ মা,তুমি জামাই কে নিয়ে আসো আমি সব রেডি করে রাখছি…….”
“আচ্ছা,মা যান আমি আসছি…..”
…………………..নৌশিনের মা চলে গেলে ভাবীও চলে যায়-সাদাদকে যেতে বললে ও জানায় একটু পর আসছে,ভাবী বুজতে পারে নৌশিনের সাথে কথা বলবে তাই আর জোরাজোরি না করে তিনিও রোম থেকে চলে আসেন…………………………
নৌশিন রেডি হয়ে খাটে গিয়ে বসে,সাদাদকে বলছে,
“খেয়ে নাও…….”
সাদাদ নৌশিনের পাশে গিয়ে বসে…………….
“আমি একা যাবো???”
“ও….আচ্ছা চলো……”
নৌশিন উঠতে চাইলে সাদাদ হাত ধরে আবার বসিয়ে দেয়…..নৌশিন এখনও সাদাদের দিকে মুখ তুলে চায় নি……সাদাদ দু হাতে নৌশিনের মুখ টা উঁচু করে বলে,
“কার কাছে কি লুকাচ্ছো??ভালোবাসি তোমায়-তোমার কখন মন খারাপ হয় আমি বুজবো না?……”
নৌশিনের চোখ দুটো ছলছল করছে,সাদাদের মুখের তাঁকিয়ে যেন আরও কান্না পাচ্ছে………………কান্না আটকে দিতে সাদাদ নৌশিনকে বুকে জড়িয়ে নেয়-খুব শক্ত করে আগলে নিলো…….”একদম চোখ থেকে পানি বের করবে না-দাদী অসুস্থ গ্রামে যাওয়ার আগে তোমাকে দেখতে চাইছে না হলে মা কোনো দিন আজ তোমায় নিতে বলতো না…..আমি কথা দিচ্ছি তোমার ক্লাস অন হওয়ার আগে ই তোমায় নিয়ে আবার আসবো……….”
সাদাদের বুকে মাথা রেখেই নৌশিন জবাব দেয়,
“আমি সবাইকে খুব মিস করবো…..”
“আমি জানি হয়তো তোমার মতো এত টা ফিল করতে পারছি না তবুও আমি যতটা বুঝি ‘তোমার সাথে যখন একদিন দেখা না হতো রিলেশন কালীন মনে হতো এই বুঝি সব শেষ আমার’ তো সেই সুবাদে এট লিস্ট এটা বুজি নিজের ভালোবাসার মানুষদের না দেখতে পেলে কতটা কষ্ট হয়……তবুও নিয়ম বলে একটা কিছু আমাদের সবাইকে বেঁধে রেখেছে আমি চাইলেও এখন তোমাকে এ বাড়িতে আগের মতো রেখে যেতে পারবো না খুব বেশি হলে এক সপ্তাহ আর নরমালি হলে দু-এক দিন……বাট আগের মতো না…..আজকে নিয়ে যাচ্ছি তোমার এতে যতটা কষ্ট হচ্ছে পরশু নিয়ে গেলেও ঠিক তত টাই কষ্ট হতো…..যদিও এটা ভেবে ভালো লাগগো দু দিন বেশি থেকেছো বাট যেতে কিন্তু হতোই…….তাই একদম কান্না কাটি না করে চলো দেখবে ঐ বাড়িতেওও বেশ ভালো লাগবে……..”
“হুম…….”
“আমার কিন্ত প্রচুর ক্ষুদা লাগছে নৌশিন……এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে খাবো কি করে??”
নৌশিন মাথা তুলে হেঁদে দিয়ে বলে,
“আমি ভুলে গিয়েছিলাম তোমার খাওয়ার কথা…..চলো….”
“হুম চলো…..”
………………………….
খাওয়া শেষে এবার নৌশিনের যাবার পালা……….
সাদাদ নৌশিনের ভাবীকে ডেকে নিয়ে নৌশিনকে যাওয়ার জন্য তৈরী করে দিতে বলে……….
ভাবী নৌশিনকে গিয়ে বলে যাওয়ার কথা আর সার্ভন্ট দিয়ে নৌশিনের ব্যাগ গুলো সাদাদের গাড়িতে উঠিয়ে দেয়…………..
সবাই ড্রয়িং রোমে,নৌশিনের ভাই নৌশিনের আজ যাওয়ার কথা শোনে এক রকম রেগে আছেন……তার বক্তব্য,
“আমার বোন এলো একদিন হলো না-আজ কেন যাবে?কারও দেখার ইচ্ছে হলে থেকে যেতে পারতো দু দিন তারপর বোন গেলে দেখবে……..”
অনেক কষ্টে নৌশিনের মা আর ভাবী-ব্যাচারার রাগ সামলেছে………………….
ছোট বেলায় যে বোন ছোট বোনকে জ্বালিয়ে মারতো বোধবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে সে বোনের গাঁয়ে একটা ফুলের টোকাও আসতে দেয় নি……..
এমনি কলেজ শেষ করা পর্যন্ত যত কাজ ই থাক…বন্ধুদের সাথে আড্ডা বাদ দিয়েও বোনকে নিয়ে একবার দিয়ে আসতো তো আবার নিয়ে আসতো………ভার্সিটিতে ওঠার পর একা একা যাওয়া আসার জন্য পাঠাতো তবুও সবসময়ের জন্য গাড়ি থাকতো নৌশিনের সাথে……………আজ সে বোন এভাবে চলে যাচ্ছে ঠিক যেন মেনে নিতে পারছে না নৌশিনের বড় ভাই…………..
“আপু,আবার কবে আসবি?তুই আসলে কিন্তু আমায় বলবি আমি সে দিন ই যশোর থেকে চলে আসবো………আমায় কিন্তু ভুলে যাস না কল করিস,আর স্টাডিতে হেল্প লাগলে আগে যেমন কল করতাম এখন করলে বোরিং হবি না তো……”(আরফান)
নৌশিন এগক্ষণ অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছিলো ছোট ভাইয়ের মুখে কথাগুলো শোনে চোখের পানিগুলো আর থেমে থাকতে পারে নি……………
আরফান নৌশিনের কাছে এসে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়………দুজনেই পুরো বাকরুদ্ধ ওদের হয়ে কথা বলে যাচ্ছে গড়িয়ে পড়া অজস্র নোনাজল……………
“আরফান,এটা কিন্তু ঠিক না যারা হ্যান্ডসাম হয় তারা কিন্তু এতো সহজে কাঁদে না……বাট ওয়াট আর ইউ ডুয়িং……..”(সাদাদ)
“আরফান বাবা এমন করে না……ছাড়ো তোমার আপুকে….”(নৌশিনের বাবা)
“ফোন দিবি কিন্তু……”(আরফান)
“দিবো……বাদরামো করিস না একদম পড়াশোনায় মন দিস……”(নৌশিন)
“এতো পড়তে পারবো না……তুই ই ঠিক মতো পড়িস তোর হাজব্যান্ডের মতো বার বার ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হোস…..”
“পাগল ছেলে………”(নৌশিনের বাবা)
“আরফান,তুমি তোমার আপুকে ই সব ভালোবাসা দিয়ে দিচ্ছো আমাকে তো কিছু হলেই দাও…….”(সাদাদ)
“ওকে দিচ্ছি-ভাগ করে নিও দুজনে………কাপলের সব কিছু ভাগাভাগি হয়……”(আরফান)
“হা হা হা……..”(সাদাদ)
নৌশিনের মা একদৃষ্টিতে মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে,নৌশিন ওর মায়ের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে,
মায়ের চোখের পানির সাথে মেয়েরও আবেগ বাঁধা মানছে না………..নৌশিনের ভাইয়া বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখতে রাজি নয় তাই বিয়ের দিন যেভাবে পালিয়ে বাঁচার চেষ্ঠা করেছিলো আজও সেই চেষ্টা টাই করছে কিন্তু সে দিনের মতো আজও বোনের চোখ ফাঁকি দিতে পারে নি…..
“শোন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি,কোনো সমস্যা হলে জামাইয়ের সাথে শেয়ার করবি……না খেয়ে ঘুমাবি না কোনো দিন……”(মামী)
“সাদাদ বাড়ির লাইটিং টা মনে করে ঠিক করে নিও……”(ভাইয়া)
“জ্বি ভাইয়া…….আজ লোক পাঠিয়েছিলাম হয়ে গেছে মনে হয়…..আপনারা টেনশন নিবেন না…..”(সাদাদ)
……….সবার কাছ থেকে আরও বিদায় নিতে হয় নৌশিনকে…….নৌশিনের ভাবী সাদাদের হাতে নৌশিনের কিছগ মেডিকেল রিপোর্ট দেন….মেয়েটা জন্মগত ভাবে একটা রোগ নিয়ে এসেছে সেটার ই রিপোর্ট……..জন্মানোর কিছু দিন পরেই ওর মা এই অস্বাভাবিকতা খেয়াল করেন…..বিয়ের আগে সাদাদের পরিবারের সকল সদস্যকে নৌশিনের বাবা সবটা খুলে বলেছিলেন………..
“একটু খেয়াল রেখো ভাই……”(ভাবী)
“ভাবী এভাবে বলবেন না……নৌশিন তো আমারও তাই না……..”
…………………….আরফান,ভাবী আর বাবা এরা মেয়েকে গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য নিচে আসেন…………
গাড়িতে উঠার আগে,
“বাবা আবারও আমার মেয়ের হাত টা তোমার হাতে দিলাম….আমার জীবনের শ্রষ্ঠ সম্পদ এটা-কষ্ট দিও না কোনো দিন…..ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ দিও তবু হাত টা ছেড়ো না…….”
“বাবা আমি আমার সর্বোচ্চ টা দিয়ে আপনার মেয়েকে আগলে রাখবো……..আপনি এসব নিয়ে প্লিজ কিছু ভাববেন না……..”
বাবা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে……..বাবার মন মেয়েকে ছাড়তে চাইছে না দিয়ে দিয়েছে তো মেয়ে তবুও আজও বুক টা ফেঁটে যাচ্ছে…..
“বাবা যেতে দিন ওদের……সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে…..”(ভাবী)
বাবা মেয়েকে ছেড়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন,
“খেয়াল রাখবে নিজের……খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম করো না…….আর মন খারাপ করে থাকার কিছু নেই ভার্সিটির ক্লাস শুরু এটেন করলে দেখবে সব আগের মতে লাগছে……..আর ট্রাই করবে ঐ বাড়িতে যেন সবার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারো……..”
নৌশিন মাথা হ্যাঁ সূচক উত্তর দিতে মাথা নাঁড়ায়…………..
গাড়িতে উঠবে এমন সময় আরফান নৌশিনের মাথায় একটা টুকা মেরে বলে,
“খোপা করছিস কেন?তোর চুলে টান দিয়ে পারলাম না…তাই টোকা দিলাম……যা এখন…..”
নৌশিনও ভাইয়ের মাথায় আস্তে করে একটু টোকা দিয়ে বললো, ‘পাঁজি একটা……”
!
চলে গেলো বাড়ির একমাত্র মেয়ে……যতদূর পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় বাবার চোখের পলক পড়ে নি……..নৌশিনও জানালা দিয়ে ওর বাবা,ছোট ভাই আর ভাবীকে দেখে যাচ্ছিলো………….
গাড়ি চলে গেলে ওরাও বাসায় চলে আসে………….
সাদাদ ড্রাইভ করছে আর নৌশিন মুখ গোমড়া করে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে…….
সাদাদ কোনে কিছু বললো না….কারণ ও জানে যত তো ই সাত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করুক এই কষ্ট টা কমবে না স্বাভাবিক ভাবেই সব টা ঠিক হয়ে যাবে তাই নৌশিনকে নিজের মতো করে একটু সময় কাটানোর সুযোগ দেয় সাদাদ……………………………
!
কিছু দূর যেতেই সাদাদের চোখ পড়ে ফুচকার দোকানের উপর….নৌশিন অবশ্য আকাশ দেখায় ব্যস্ত থাকায় সেটা খেয়াল করে নি…………….
সাদাদ গাড়ি থামায়……..মনে মনে ভাবছে ‘ওর মন খারাপ দূরর করার সর্বোউত্তম মাধ্যম এই ফুচকা”
নৌশিন সাদাদের দিকে তাঁকায় এবার….কিন্তু কিছু বললো না………………..
“ফুচকা খাবে??”(সাদাদ)
“এখন?”(নৌশিন)
“হুম….ঐ যে স্টল…..নামো…..”
“না না খাবো না আমি…..”
“নৌশিন তুমি ফুচকা খাবে না এটা হতে পারে না……সো মোড ঠিক করতে গেলে চলো ফুচকা খাই…..”
“খাই মানে তুমিও খাবে?”
“আআআ ট্রাই করে দেখতে পারি,তুমি সে দিন বললে না আমার কারণে তোমার রাগ হলে শাস্তি স্বরূপ ফুচকা খাওয়াবে সো আগে থেকেই প্রেকটিস করতে চাচ্ছিলাম……”
“না না এখন খাতে হবে না সন্ধ্যা লেগে আসছে……….”
“তো??আমি আছি না-ভয় কিসের……সন্ধ্যা হোক বা রাত…..চলো…..”
“শাড়ি পড়ে রাস্তায় দাঁড়াবো না আমি…..”
“ওয়াট?শাড়ি পরে গেলে কি হবে?”
“কিছু না,হিজাব নাই মাথায় আমি যাবো না……তুমি গাড়ি স্টার্ট দাও…….”
“হিজাব……!”
“হুম…….চুল দেখাবো নাকি মানুষকে?জানালা বন্ধ করতাম না হিজাব থাকলে……..”
আনমনেই সাদাদে মুখে হাঁসির রেখা ভেসে উঠে,
“হাসছো যে???”(নৌশিন)
“না….এমনি…..বসো তুমি আমি আসছি……….”
“আরে কোথায় যাচ্ছো?…….”
!
সাদাদ আবার গাড়িতে ব্যাক করে,
“এই তোমার হাতে কি?”
“ফুচকা…….”
“ফুচকার কি দরকার ছিলো,অন্য দিন খেতাম…..”
“অন্য দিনের টা অন্য দিন আজকের টা আজ……….”কথা শেষ করে সাদাদ গাড়ি স্টার্ট দিতে শুরু করে………….
“ওয়েট ওয়েট……..স্টার্ট শুরু করো না…….”
সাদাদ অলরেডি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিয়েছিলো নৌশিন বলায় কোনোভাবে তাড়াহুড়ো করে থামায়…………..
“কি হলো??থামতে বললে কেনো??”
“এই কটা ফুচকায় হবে না……”
“কিহ্???দু প্লেট ফুচকা আছে এখানে ঝাল ও পারফেক্ট দেওয়া হয়েছে তোমার জন্য…….হবে না এতে??”
“না……”
“হেয়……নিয়েছি এটাই বেশি আর নিতে পারবো না……”
“না নিতে হবে……এটা রেখে যাও…..আর আরও আরও এগারো প্লেট ফুচকা আনো মিডিয়াম ঝাল দিয়ে……দেন আরও এক প্লেট অর্ডার করো ঝাল ছাড়া……..”
“পাগল নাকি???এতো ফুচকা মানুষ খায়?? ”
“আরে যাও না তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে……..”
“পারবো না আমি……..”
“উফফ…..সাদাদ তুমি না……”
“আমি কি সেটা তুমি জানো-আমি এতো ফুচকা তোমাকে খেতে দিবো না……এরপর আর কোনো কথা বলবে না…..”
“আজব…..তোমার কমন সেন্স কই গেলো?খুব তো বলো আমার কমন সেন্স নেই……”
“এখানে কমন সেন্সের কি হলো?”
“এই এত্ত এত্ত ফুচকা কি আমি একা খাবো?এটা তুমি কি করে ভাবলে…….আমি কি রাক্ষসী?”
“তো কি হবে এতো ফুচকা দিয়ে?”
“আল্লহ্….সব খুলে বলতে হয়……তুমি আমার জন্য ফুচকা আনলে-এটা আমরা বাসায় নিয়ে যাচ্ছি….