প্রেম ঘোর #পর্ব_৫৫_৫৬ 💜💜

0
1443

#প্রেম ঘোর
#পর্ব_৫৫_৫৬
💜💜
Writer:Nargis Sultana Ripa.
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
সাদাদ নামায পড়ে এসেছে।নৌশিন সাদাদের সামনে দাঁড়িয়ে সাদাদের পান্জাবির বোতাম খুলে দিচ্ছে।
“কি আমার জানপাখি!মনে হচ্ছে কিছু বলবে??”
“না…….”
“উমমম আমার তো মনে হচ্ছে,কিছু একটা বলবে…..”
“না…… এমনি…..”
“আচ্ছা!!তাহলে মুখ টা এমন ভার হয়ে আছে কেন??বলেছি তো সেমিস্টার টা শেষ হোক তারপর ভাববে এসব নিয়ে……”
“না সেটা না…..”
“দেখি রাখো বোতাম…..এবার বলো তো কি হয়েছে…….”
নৌশিন কিছু বলবে….তার আগেই ওর ফোন টা বেজে উঠলো…………
“হ্যাঁ মা বলো……”
নৌশিন ফোন টা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো….
সাদাদ পান্জাবি টা চেন্স করে নিয়ে খাটে গা মেলে দিলো…..বাইরে খুব গরম!!
নামায থেকে এসে কিছুটা টায়ার্ড আর কি!
………
“হ্যাঁ মা….বলো……”
“জামাই এসেছে??”
“হুম…..আমি না বলতেই পারছি না…..যদি ও কিছু মনে করে??ওর যা রাগ….”
“আরে এতে মনে করার কি আছে??তুই ই না বলেছিলি,জামাই বলেছে তোর ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তোকে আনবে একবার……এসে তো একটা দিনও থাকতে পারিস নি মা!!তুই বললি আসবি তাই তো আমি গেলাম না……তোর ভাবীর শরীর টা তেমন ভালো না আর দিন এগিয়ে আসছে যেতে চেয়েছিলো আমি যেতে দিলাম না…..”
“মা এমন করে বলবে না তো…..আমি কিন্তু কালও বললাম তোমাকে খুব মিস করছি…তুমি এমন করে বলে আরও আমাকে ইমোশনাল করছো…..”
“কি করবো মা…..তোকে দেখি না এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলো…….তুই এক কাজ কর সাদাদকে ফোন টা দে……”
“কিহ্???”
“হ্যাঁ….দে…..”
“না…..”
“না মানে কেন???কাল কাঁদলি তুই আসার জন্য….আজ না করছিস…এতো ভয় পাওয়ার কি আছে.???”
“মা ও যদি রাগ করে??”
“কেন রাগ করবে??”
“না ও তো বলেছিলো ভার্সিটি খোলার আগে নিয়ে যাবে….পরশু ই তো ক্লাস চালু…ও তো কিছুই বললো না…..”
“এই মেয়েকে নিয়ে কি করবো আমি…….”
“মা!!!……..”
“এই খবর দার একদম কাঁদবি না….আমি আনার ব্যবস্থা করছি……না হলে আমিই যাবো….তবুও যেন চোখের পানি না আসে…..পরে আবার মাথা ব্যথা করবে……”
“সত্যি আসবে তো??”
“কি…..এখনো কাঁদতেছিস??চোখ মুছ মা….ভালো মা আমার কাঁদিস না…….মাথা ব্যথা করবে কাঁদলে…..সোনা মা আমার আমি আসবো বললাম তো……”
“ছাই আসো তোমরা…..কেউ তো এলে না……কত দিন হলো!!!”
“পাগলী আমার!!তুই যে বলছিলি আসবি তাই তো…..”
“আমি কি জানতাম ও ভুলে যাবে!!!……..”
“তোকে কাঁদতে না করলাম তো!!কাজের চাপে ভুলে গেছে হয়তো…….আমি আসবো আজ বিকেলেই আসবো…….চোখ মুছ এবার…..”
“উমমমমমম………..”
“পাগলী একটা আমার……..”
“আচ্ছা,তাহলে রাখলাম…..আজকে না আসলে কিন্তু কথাই বলবো না আর………”
“আচ্ছা বাবা আচ্ছা……..বাই…..”
“হুম….বাই……”
……… নৌশিন ফোন কেটে পেছনে তাঁকাতেই ঢুক গিলতে লাগলো……..
কারণ ওর পেছনে যে স্বয়ং সাদাদ।
সাদাদ এক দৃষ্টিতে নৌশিনের দিকে তাকিয়ে।
নৌশিন ভয়ে কাঁপছে!সাদাদ এভাবে তাঁকিয়ে আছে তার মানে ও সব শোনে ফেলেছে।
নৌশিন কিছু বলার আগেই সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়।আর সাথে সাথে কল করে নৌশিনের মায়ের নম্বরে…..
দু রিং হতেই ফোন তুলে নৌশিনের মা………..
নৌশিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর সাদাদ কানে ফোন নিয়ে নৌশিনের দিকে…………
“হ্যাঁ….মা বল…..”
“আসসালামু আলাইকুম মা……”
“ও বাবা….ওয়ালাইকুম আসসালাম……কেমন আছো??”
“জ্বি মা ভালো….আপনি??”
“আলহামদুলিল্লাহ…… তোমার মাকে ফোন করেছিলাম বাবা….মেয়েটাকে অনেক দিন দেখি না তো……..”
“তাই আসবেন তাই তো??”
“হ্যাঁ….নৌশিনও বলেছিলো…..”
“আমি চাই না আপনাদের বাড়ির কোনো সদস্য আমার বাসায় পা রাখুক….”
কথাটা শোনা মাত্রই নৌশিনের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে….সাথে সাথে একরাশ প্রশ্নসিদ্ধ নয়নে সাদাদের দিকে তাঁকায়!!
নৌশিনের মায়ের যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেছে!এটা কি বলছে মেয়ে জামাই!এতো বড় কথা!কি বলবে কোনো কিছু বুজতে পারছে না নৌশিনের মা…চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে বারবার কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলা মেয়ের কলকের বলা কথাটা মনে পড়ছে “আই মিস ইউ মা….”…….মেয়ে তো আজও কাঁদলো “মা আসবে তো??….”।।।।
আর কিছু ভাবার আগে সাদাদ আবারও বলতে শুরু করে…..”আশা করি আমার কথা বুজতে পেরেছেন??”
প্রত্তিতুরে কিছুই বলতে পারলো না নৌশিনের মা…
এমন ব্যবহার করে কোনো মেয়ে জামাই জানা ছিলো না তার!মনের মধ্য একটা ভয় কাজ করতে লাগলো…
না না অপমানের কথা ওনি ভাবছেন না!ওনার ভয় একটায়… “আমার মেয়ে টা ভালো আছে তো…..”
“মা,আশা করি বুজতে পেরেছেন…..তাহলে রাখছি আমি…….”
সাদাদ কল টা কেটে দিলো।
নৌশিনের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
ঐদিকে নৌশিনের মা যে কিছু ভাবতে পারছেন না।
সাদাদ নৌশিনের ফোনে কিছুক্ষণ কি জানি টাইপ করলো……নৌশিন সাদাদের থেকে এমন ব্যবহার আশা করে নি!
সাদাদ রাগ করতে পারতো নৌশিনের সাথে কিন্তু তাই বলে……. না নৌশিন চিনতে পারছে না এই সাদাদকে…..
সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে বলা শুরু করে,
“কান্না বন্ধ করো…..বিয়ের পর মেয়েদের বাবা মা কে ছাড়া থাকার চেষ্ঠা করা উচিত……”
“……………..”
“বললাম কান্না বন্ধ করো……আমার ক্ষুদা পেয়েছে খুব চলো খাবার দিবে…….”
নৌশিনের কিছু বলার শক্তি চলে গেছে….ওর মা কি ভাবছে!!মা কে তো কোনো দিন এভাবে বাবাও বলে নি!সেখানে সাদাদ কি রকম একটা ব্যবহার করলো!
“কি হলো,আজাইরা কথা না ভেবে চলো খাবার দিবে….আর বাবা মা কে ছাড়া থাকার অভ্যাস করো…….আর আমার এতো টাকা নেই যে দু দিন পর পর শশুড় বাড়ির লোক বাসায় এনে খাওয়াবো…..”
নৌশিনের সারা শরীরে একটা কম্পন বয়ে গেলো সাদাদের কথাটা শোনে।
ছিঃ…সাদাদ খাওয়ার কথা বললো।নৌশিন এবার আর চুপ থাকতে পারলো না…….
“আ আ মার ব বব বাবা,মা তোতো তোমা তোমার বাড়িতে খেতে আস আসবে সাদ সাদাদ??”
এতোটাই ভেঙে পড়েছে যে ভেতর থেকে কথাটাও আসছে না।
“আরে রাখো তো এসব কথা…..আমাকে খেতে দাও চলো……”
নৌশিন আর কিছু বললো না….চোখ টা মুছে নিলো কিন্তু আবার চোখ টা ভিজে গেলো।।।।এভাবে কতবার চোখ মুছে নিলো সে নিজেও জানে না।
সাদাদ একই ভাবে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে,নৌশিন সাদাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক আগেই।
আবারও সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে ভাঙা স্বরে বললো,
“চলো….খেয়ে নিবে…..”
“হুম….”
নৌশিন নিচে মেনে গেলো।
ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।আজ যে চির চেনা সাদাদ কে বড্ড অচেনা লাগছে।
সবার জন্য খাবার রেডি করছে রাফসা আর নৌশিন।
“কি রে মন খারাপ?”
মাথা নেড়ে না জানালো নৌশিন।
“উম হু…..আমার তো তেমন মনে হচ্ছে না….”
“আসলে একটু মাথাটা ধরেছে তো তাই কেমন যেন লাগছে……”
“মা সেকি!তোর মাথা ব্যথা আর তুই কাজ করছিস….সর সর।।।আমি করে নিবো….যা গিয়ে বস…”
“না ভাবী…মাথা ব্যথা নয় তো একটু ভার ভার লাগছে আর কি….”
“সে যাই হোক….তুই বস তো।।।খারাপ তো লাগছে!!”
“ঠিক আছি আমি…..”
“চুপ যা সবার সাথে বস…আমি এগুলো নিয়ে আসছি……..”
নৌশিন অনেক জোর করার পরও কোনো লাভ হলো না…….বাধ্য হয়ে নৌশিন ডায়নিং টেবিলে বসলো তবু আবার সাদাদের পাশে….কারণ এটা ছাড়া আর সব চেয়ার বুকিং………..
“দেখি খেয়ে নে…..”
“কি গো ছোট বউ মা,এমন দেখাচ্ছে কেন তোমায়??”
“আর বলবেন না কাকি,ওর নাকি শরীর টা খারাপ লাগছে……”
“ও মা সে কি!”
“না কাকি বেশি খারাপ লাগছে না একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে…….”
“আচ্ছা,ঠিক আছে খেয়ে একটা ঘুম দিবে কেমন?”
“জ্বি বাবা…….”
…..আজ নৌশিন চুপচাপ যতটা খাওয়া যায় খেয়ে নিলো,গলা দিয়ে খাবার টা নামতেই চাইছিলো না বারবার সাদাদের কথাটা কানে বাজছিলো ‘তার নাকি শশুড় বাড়ির লোককে খাওয়ানোর টাকা নেই’…..’আর সাদাদ তো এটাও বলেছিলো ওর বাড়িতে যেন ঐ বাড়ির কারও পা না পড়ে….তারমানে?সাদাদ তো এটা বললো না,যে আমাদের বাড়ি!ও তো বললো-ওর বাড়ি…..তার মানে ওর কাছে আমি এই বাড়ির কেউ না’…….
“কি রে,গ্লাস হাতে নিয়ে কি এতো ভাবছিস…….”
“না ভাবী,এতো খাচ্ছি।।।।।”
নৌশিন পানি টা কে কাউকে কিছু না বলেই উপরে চলে গেলো।
এমনিতে খাবার সময় সবার সাথে অনেক কথা বলে কিন্তু আজ সেটা হলো না।
“সাদাদ তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে দেখো আমার নৌশিন মায়ের শরীর বেশি খারাপ লাগছে কি না??”
“ওকে বাবা…….”
সাদাদ কিছু একটা ভেবে মুঁচকি একটা হাঁসি দিলো।তারপর খাবার টা খেয়ে সে ও নিজের রোমে চলে যায়।
নৌশিন উপুড় হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে……..
“এই উঠো…..”
নৌশিন উঠলো না কেঁদে যাচ্ছে শুধু……..ওর শরীর যে গুলিয়ে যাচ্ছে…..সাদাদ তো বলেছে নৌশিনের বাড়ির কাউকে খাওয়াতে পারবে না….আর সাদাদের মতে ও তো এ বাড়ির কেউ না!যদি হতো সাদাদ তো এটা বলতো না যে ‘আমার বাড়ি’ তাহলে নৌশিন তো এই বাড়ির খাবার খেয়েছে…এটা যে শরীরে থাকতে চাইছে না…………
“কি হলো উঠতে বললাম না আমি……..”
“বুজেছি তোমার কান্না থামবে না………..অরূপ!!অরূপ…………”
সাদাদ অরূপকে ডাকতে ডাকতে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।নৌশিন নিজেকে সামলাতে পারছে না,
বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছে।’মা নিশ্চয় খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাদ কেন বললো মাকে এসব??আমারি দোষ…মা কে আসতে বলা ঠিক হয় নি আমার,আমার জন্য মা অপমানিত হলো!কি কম আছে ওদের যে এই বাড়িতে খাওয়ার জন্য আসবে!!!!’…..নৌশিন মনে মনে ভেবে চলেছে এসব….
আজ চির চেনা সাদাদকে সত্যিই বড্ড অচেনা লাগছে।আর কিছু ভাবতে পারলো না নৌশিন পিঠের উপর ভারী,কমল কিছুর অসিত্ব অনুভব করলো।
হাতে কোনো নরম ছোঁয়া পেলো,বুঝতে আর বাকী রইলো না নৌশিনের…..অরূপ ওর পিঠে শুয়ে আছে।বাধ্য হয়ে বুকে চাঁপা কষ্ট টা আর বের করতে পারলো না!চোখ টা মুছে ফেলতে হলো…………
“নতুন বউ….কাঁদছো কেন তুমি??”
নৌশিন ঠিক হয়ে শুয়ে অরূপকে নিজের বুকে শুইয়ে দিয়ে জবাব দিলো,
“কই না তো বাবু….আসলো মাথা ব্যথা করছিলো তো তাই…….”
“ও…..দালাও আমি মাথা টিপে দিই……”
অরূপ কপালে নরম দুহাতে আস্তে আস্তে চাপ দিতে থাকে…..বাঁধা দিলো না নৌশিন….এই নরম হাতের ছোঁয়া যে ওকে অন্য রকম সুখ দেয়……….এই নরম ছোঁয়া পেয়ে নৌশিন কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেই বুজতে পারে নি……….
আসরের আযান শোনে ঘুম ভাঙে নৌশিনের……বুকে ভারী কিছু আছে মনে হচ্ছ,
চোখ মেলে অরূপকে নিজের বুকে আবিষ্কার করলো নৌশিন।কি সুন্দর বাচ্চাটা নৌশিনের উপর হাত পা মেলে দিয়ে গলায় মাথা রেখে শরীরের উপর শরীর দিয়ে ঘুমাচ্ছে……….
নৌশিন আরও কিছু আবিষ্কার করছে নিজের উপর…..সাদাদ নৌশিনের গা ঘেষে ঘুমাচ্ছে…..এক হাত নৌশিনের মাথার উপর দিয়ে কাঁধে রাখা……..আর অন্য হাত অরূপেরর উপর দিয়ে রেখে দুজনকে জড়িয়ে রেখেছে…..
আর পা দুটো দিয়েও নৌশিনের দুটো পা আটকে রেখেছে সাদাদ………………
সব মিলিয়ে নৌশিন যে একটু নড়বে তার উপায় টুকুও নেই…………..এই সব কিছুর মাঝে এই যে অরূপের কমল দেহ টা নৌশিনের উপর সেটা যেন একটা বিশাল আলোড়ন বইয়ে নিচ্ছে নৌশিনের মনে,
ইশশশশশ……এতটা নিষপাপ কমলতা আর কোথায়ও পাওয়া যায় না!
মা হওয়ার এতো সুখ!!নৌশিন এক ফোটাও নড়লো না…..যদি অরূপ জেগে যায়!তাই,নৌশিন নিজের যে হাত টা মুক্ত আছে সেটা দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলো অরূপকে।নৌশিন গায়ে হাত রাখা মাত্রই অরূপ নিজেরর মাথা টা নাড়াতে শুরু করছে….নৌশিনের কেমন জানি শুড়শুড়ি লাগছে গলায়……নিশব্দে হেঁসে উঠে নৌশিন………
তার সাথে বুকে ভেতর একটা মাতৃত্ববোধের ইচ্ছা আরও তীব্র হয়ে ওঠে…….
এমন ভাবে চুমু দিচ্ছে অরূপের কপালে,গালে মনে হয় ওর ই ছেলে।
সব মেয়েরা বাচ্চা চায় কিন্তু এই মেয়ে টা যেন পুরোই একটা বাচ্চা পাগলী।……
“ইশশ!অরূপ যদি আমায় মা বলে ডাকতো! হুম….ও তো আমায় নতুন বউ বলে ডাকে,ওকে বলবো মাঝে মাঝে নতুন মা বলে ডাকতে!যদি না ডাকে😞….না না সব সময় না ডাকলো….মাঝে মাঝে ডাকবে….আমি তো ওকে মায়ের মতোই ভালোবাসি,
না না মায়ের মতো কি!আমি ওর আরেক টা মা….কাকি তো আরেক টা মা হতেই পারে!!!ডাকবে নিশ্চয় ডাকবে,আমি বললে ও ডাকবে…..আমি বলবো ডাকতে……. “এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নৌশিনের ওর মায়ের কথা মনে পড়ে যায়…….আর পরমুহুর্তেই মনে পড়ে-তার মা কে বলা সাদাদের সেই বিশ্রিধরনের কথাটা………
বুক টা ধুকধুক করে উঠলো নৌশিনের…..সাদাদের মুখের দিকে তাঁকালো.
মায়ের মুখটাও চোখের সামনে ভেসে উঠে……..
একটা তীব্র ব্যথা জিইয়ে উঠলো বুকের গহীনে…………………..
পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

#প্রেমঘোর#৫৬#
💜💜

অনেকক্ষণ হলো আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে।নৌশিন আর শুয়ে না থেকে নিজের উপর থেকে অরূপকে খুব সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিলো।উঠতে যাবে কিন্তু পারছে না কারণ পা দুটো সাদাদের পায়ের মাঝে আষ্টেপিষ্ঠে বাঁধা।পা বেড় করতে চাইলে ব্যর্থ হয় নৌশিন।সাদাদকেও তো নামাযের জন্য ডাকা দরকার যত কিছুই হোক তাই বলে নামাযের জন্য ডেকে দিবে না?তা কি করে হয়!
নৌশিন সাদাদকে ঘুম থেকে তুলে,দুজনে এক সাথেই বিছানা থেকে উঠে যায়।নৌশিন সাদাদের দিকে একবারের জন্য তাঁকায় নি কিন্তু সাদাদ পলকহীন ভাবে নৌশিনকেই দেখে যাচ্ছে।
সাদাদ খাটের উপরি বসে আছে।নৌশিন ওযু করে জায়নামায হাতে নিবে এমন সময় সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে নৌশিনকে।
“এত কান্না করতে হয়??কি এমন বলেছি??”
নৌশিন দুচোখ বয়ে আবারও নোনা জল পড়তে লাগলো।সাদাদ নিজে কি বুঝতে পারছে না?একটা মেয়ের কাছে তার বলা তখনকার সে কথা গুলো কতটা কষ্টের।
“আবার কাঁদছো?”
নৌশিন নিশ্চুপ……
“দেখো,চোখ মুখ কিন্তু লাল হয়ে ফুলে গেছে…..আর বেশি করলে মাথা ব্যাথা করবে জান……”
নৌশিনের আর ভালো লাগছে না।কি করে লাগবে সাদাদ যে ওর মা কে খুব কষ্ট দিয়েছে।আর নৌশিন সাদাদকে যতটা ভালোবাসে তার মা বাবা কে ঠিক ততটাই ভালোবাসে।
নৌশিন চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,
“ছাড়ো……নামায পড়বো….তুমিও নামায পড়ে আসো……”
সাদাদ আর কথা বাড়ালো না,নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেস হয়ে নামাযের জন্য মসজিদে চলে যায়।নৌশিনও নামায টা সেরে নিলো।
নামায পড়ে নৌশিন আবারও অরূপের পাশে শুয়ে পড়লো।অরূপ নিজের পাশে কারও অস্তিত্ব পেয়ে নিজের মা ই ভেবেছে হয়তো।গলা জড়িয়ে ধরে নৌশিনের।নৌশিনও পরম আদরে আগলে নেয় অরূপকে।সাদাদ নামায থেকে এসে একই অবস্থায় নৌশিনকে দেখতে পায়।কিছু না বলে নিজের ফোনটা নিয়ে রোমের বাইরে চলে গেলো।
নৌশিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ থেকে নিজের ফোন নিয়ে কল করলো মায়ের নম্বরে।
কিন্তু ওপাশ থেকে কল টা আর রিসিভ হলো না।
আবারও কল করবে এর মাঝে অরূপ ওঠে যায়।বেচারা আবার চোখ খুলে মা কে না দেখলে কান্না শুরু করে।আজ চোখ খুলে নৌশিনকে দেখেছে,কাঁদে নি….কিন্তু মা কে দেখতে না পেয়ে ছলছল চোখে ঘুমভাঙা স্বরে বলে উঠে,
“আম্মু যাবো…….”
নৌশিন একটা আদুরে হাঁসি দিয়ে অরূপকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে-অরূপের মায়ের কাছে দিয়ে আসে।
রোমে এসে বিছানা টা ঠিক করছে এমন সময় সাদাদ রোমে আসে।ফোনটা ড্রেসিং টেবিলে রাখতে গিয়ে নৌশিনকে বলছে,
“রেডি হয়ে নাও….বের হবো আমরা…..”
নৌশিন কথাটা শোনলেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না।
“কি বললাম আমি??রেডি হতে বলেছি কিন্তু!!!”
নৌশিন এখনও কিছু বললো না।সাদাদ রেগে গিয়ে নৌশিনের হাত থেকে ভাজ করা কাথাটা ছুড়ে দিয়ে নৌশিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলা শুরু করে,
“কি বলছি আমি তোমার কানে যায় না?”
“…………..”
“কি হলো??বোবা হয়ে গেছো তুমি??”
“সাদাদ ভালো লাগছে না আমার……ছাড়ো….”
“কেন ভালো লাগছে না তোমার??বাবা মায়ের জন্য পাগল হয়ে গেছো??”
“সাদাদ প্লিজ মা বাবাকে কেন এনছো এখানে?”
“তো??কেন ভালো লাগছে না তোমার??কি এমন বলেছি আমি?”
“সাদাদ প্লিজ……..”
“স্টপ দিজ…….কান্না আমার সহ্য হয় না…..সো যা বলছি তাই করো……..”
“সাদাদ আমার সাথে কেন এমন করছো তুমি?”(কাঁদতে কাঁদতে)
সাদাদ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলো,
“জানি না আমি…….”
“সাদাদ!!!প্লিজ….আমার সাথে এমন করো না,আমার কষ্ট হয় খুব প্লিজ…..”
সাদাদ কিছুটা অসস্তি নিয়ে আবারও বললো,
“কেঁদো না,রেডি হয়ে নাও এক সাথে ডিনার করবো…..”
নৌশিন খুব খারাপ লাগছে এখন,সাদাদ নোশিনের মনের কষ্ট টা না বুঝে শুধু নিজের ইচ্ছা টাই দেখছে।
আর কিছু না বলে,নৌশিন নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা করলো।কিন্তু ওর মন বলছে,”সাদাদ!কখনো ওকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে না…….কখনো না….”
নৌশিন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও সাদাদের ইচ্ছা রাখার জন্য রেডি হয়ে নিলো।রেডি বলতে জাস্ট একটা গোল্ডেন কালারের শাড়ি,শাড়িটার পাড়ে সাদা বেডিং এর উপর নানা রংয়ের স্টোন…আর সারা শাড়ীতে হালকা স্টোনের সুন্দর করে লাক্চারী করা।শাড়ী টা বেশ সুন্দর কিন্তু নৌশিনকে সুন্দর লাগছে না এতে।সাজে নি তার জন্য নয়,ওর মুখে যে হাঁসি টাই নেই তাই।সাদাদও একটা আজাশী রংয়ের পান্জাবী আর সাদাদ চুরিদার পায়জামা পড়ছে।বেশ লাগছে সাদাদকে।জাস্ট দেখার মতো।নৌশিন খোপা করতে করতে সাদাদকে এক নজর দেখে নিয়েছে।
আবারও এক নতুন ভালোলাগার আভাস ছুঁয়ে যায় নৌশিনের মনের অন্তরালে।
এই অনুভতি টা আজ অপ্রকাশিত ই রয়ে গেলো।
ঢাকা পড়ে রইলো নৌশিনের ঝপসা চোখে।
নৌশিনের খোপা করা শেষ হলে সাদাদ কে বলে,
“আমার হয়ে গেছে……”
সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে দেখে….নৌশিন একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছে,বেশ মানিয়েছে নৌশিনকে।কিন্তু নৌশিন শুধু এটাই করছে দেখে মনে হচ্ছে মুখে একটি ক্রিমও লাগায় নি।
এমন কি বাইরে গেলে যে সবসময় হুজাব বাঁধে সেটাও করে নি আজ।
মন টা বুঝি বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে।
আর মুখ টাও শুকিয়ে আছে মোয়েটার।
কিছু বললো না সাদাদ…..নৌশিনের কাছে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো।
পেনকেক লাগিয়ে দিলো,
চোখে হালকা কাজল এঁকে,মাশকারাও দিয়ে দিলো।নৌশিন এতোক্ষণ কিছু বলে নি,এবার বললো,
“এতো সেজে কি হবে?”
সাদাদ নৌশিনের চোখে আইসেড দিয়ে দিতে দিতেই বললো,
“চুপ…..বেশি কথা বলবে না…..”
নৌশিন চুপ করে বসে রইলো।।।যা ইচ্ছা করুক সাদাদ নৌশিনের সে সব দিকে নজর দিতে আর কোনো আগ্রহ ধরছে না।
শুধু বুকের ভেতরে লালচে হৃৎপিন্ড টা ধুকধুক করছে আর ভালোবাসার মানুষটাকে বিশ্বাস করে এখনো, সেটারইজানা দিচ্ছে।
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে লাল রং এর লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো।হলকা করে নয়,গাঢ় করে।এক কথায় সাদাদ নৌশুনকে এই সাজে সাজিয়ে নিজেই আবারও প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।বেশ খানিক টা সময় সাদাদ নৌশিনের দিকে এক পলকে তাঁকিয়ে আছে।তারপর একটা সাদাদ হিজাব এনে বেঁধে দেওয়ার চেষ্ঠা চালাচ্ছে কিন্তু নৌশিন যেমন সুন্দর করে বাঁধে তেমন করতে পারছে না।
অবশেষে রেগে গিয়ে বলে,
“ধুর……করো এটা…..পারছি না…..”
নৌশিন সাদাদের দিকে এক বার তাঁকিয়ে,হাত থেকে হিজাব টা নিয়ে খুব অল্প সময়ের মাঝেই হিজাব টা সুন্দর করে পড়ে নিলো।
“বাহ্…..এতো জলদি করে ফেললে….”
কিন্তু নৌশিনকে কেমন লাগছে সেটা বললো না সাদাদ।নৌশিন কিছু না বলে সোফায় এসে বসে।সাদাদ যখন যেতে বলবে যাবে তাই এখানে বসলো।
সাদাদও কোনো কথা না বলে,আলমারি থেকে কিছু গহনা বের করে আন।নৌশিনের পাশে সেগুলো নিয়ে বসতেই নৌশিন বলে উঠে,
“এতো গয়না??”
“হ্যাঁ…..কম ই তো…..আমার ইচ্ছে হচ্ছে গয়নাতে দেখবো তাই পড়বে আজ…সরি পড়বে কি!আমিই পড়িয়ে দিবো…”
সাদাদ নৌশিনের গলায় একটা ভারী হার,হাতে বালা আর হাত ভর্তি সব ভারী ভারী সোনার চুড়িতে ভড়িয়ে দিলো।বলতে গেলে নৌশিনকে সাদাদ আজ নিজের হাতে পুরো গর্জিয়াস সাজে সাজিয়ে নিয়েছে।
নৌশিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাদ নৌশিনকে কোলে তুলে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।
“আরে কি করছো??নামাও আমায়…..আমি তো যাবো….নামাও আমায়….কেউ দেখবে….”
কিন্তু না সাদাদ কোনো কথাই শুনছে না।নৌশিন আশোপাশে চোখ বুলিয়ে একরকম অবাক হয়ে যায়।বাসায় এই সময় সবাই ড্রয়িং রোমে থাকে কিন্তু আজ পুরো বাড়িতেই কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে দেয়।নৌশিন চুপচাপ বসে আছে।এতো কথা বলেও লাভ হয় নি তাই শুধু শুধু আর কি বলবে…এতোক্ষণ তো কতবার জানতে চাইলো,বাড়ির সবার কথা।কিন্তু সাদাদ মুখে কুলু পেতো রেখেছে একদম।
সাদাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়,নৌশিন সিট ব্লেট বাঁধে নি তাই গাড়ী স্টার্ট করার আগে সেটাও বেঁধে দেয় সাদাদ কিন্তু কোনো কথা বলে নি।যাওয়ার সময় দাড়োয়ানকে কি যেন বললো সাদাদ…..নৌশিন সেটাও জানতে চেয়েছে কিন্তু সাদাদ সেই আগের মতোই নির্বাক।
গেট পাড় হয়ে সাদাদ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
যেটা নৌশিনের একদম পচ্ছন্দ না।এতো জোরে গাড়ি চালানো তো ঠিকও না।কখন কি হয়!কে জানে?
“কি করছো??এতো স্পিডে কেন চালাচ্ছো তুমি?”
ভয় লাগছে নৌশিনের…..এতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে সাদাদ যে আশে পাশের সব গাড়িকে ক্রস করে গেছে।এমন কি কোনো সিগনালও মানছে না সাদাদ……….নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে।।
!
চলবে।

পুরো গল্পের লিংক
https://www.facebook.com/groups/2837664109643809/permalink/2935151703228382/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here