শিমুল_ফুল #২০,২১

0
654

#শিমুল_ফুল
#২০,২১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
২০

শওকত হাওলাদারের চিৎকারে সারা বাড়ির মানুষ একসাথে এসে জড়ো হয়।শুধু আসেনা শিমুল।তিনি আবার ডাকে।শিমুল রুমে বসে আছে।তার আব্বার জ্বা/লাময়ী চিৎ/কার তার খুবই ভালো লাগছে।উনার সাধের স্বপ্নে পানি ঢেলে শিমুলের খুবই শান্তি লাগছে।ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।শিমুলকে দেখে শওকত হাওলাদার এগিয়ে আসে।কোন কথা না বলে শিমুলের উজ্জ্বল গালে পরপর তিনটা থা/প্পড় মা/রে।শিমুল থাপ্প/ড় খেয়েও হাসে।ফর্সা গালে বলিষ্ঠ হাতের ছাপ পড়ে গেছে।রাবেয়া ডুকরে কেঁদে দেয়।শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে,
“এমপি সাহেবের কাছে গিয়ে এসব না বললে হতো না?বেয়াদব।”

শিমুলের মুখে তখনো হাসি।
“মিজান চাচাকে আপনি এসব না বললেও পারতেন।”

শিমুলের হাসি মুখে মিজানের নাম শুনে শওকত হাওলাদারের রাগ যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে।
“কিসের সাথে কিসের তুলনা?এমপি হাতে থাকলে আমাদের কতো সুবিধা হতো জানিস?”

“সুবিধা খুঁজে আমার তো লাভ নেই।আপনি তো আমার পছন্দ খুঁজেন নি।”

“এটা কোনো পছন্দ না।কই মিজান আর কই আমরা।লোকে কি বলবে ভেবে দেখেছিস?”

“লোকের কথা শুনার দরকার কী?জীবন কাটাবো আমি আমার ভালোটা আমিই ভালো বুঝি।”

“নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি।কতো।সুবিধা পেতাম আমি।”

“আপনি খুব স্বার্থপর।”

শওকত হাওলাদার ঝাপিয়ে পড়ে শিমুলের উপর উনার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে।কত স্বপ্ন দেখা শেষ আর এই ছেলে ওই ফকিন্নির বাচ্চার জন্য সব বরবাদ করে দিলো।শিমুলের গলা চেপে ধরে।শিমুল।পাল্টা আক্রমণ করতে পারছে না বিধায় উনি জোড়ে চেপে ধরে।শিমুলের বড় ভাই পলাশ কলেজ থেকে ঢাকা ট্রেনিং গিয়েছিলো।সেখান থেকে কাল রাতে এসেছে।এসেই তার আম্মার কাছে সব শুনেছে।গভীর রাতে এসেছে বিধায় সে ঘুমিয়ে ছিলো শোরগোল শুনে পলাশ বেরিয়ে আসে।ছোট ভাইয়ের
আর তার আব্বার অবস্থা দেখে ছুটে এসে শওকত হাওলাদারকে টেনে ধরে।
“আব্বা পাগল হয়ে গেছেন নাকি?এতো বড় ছেলেকে কেউ মা/রে?”

শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকিয়ে রাগে রাবেয়াকে থা/প্পড় দিয়ে বলে,
“তুই তোর ছেলেকে এমন বানাইছিস।”

মায়ের গায়ে হাত তোলাতে শিমুল ক্ষে/পে যায়।ফুসে উঠে বললো,
“আমার মাকে মা/রেন কোন সাহসে?ছোটলোকের বাচ্চা ছোটলোক।”

শিমুলের লাগামছাড়া কথায় সবাই অবাক।পলাশ কিছু বলার আগেই শওকত হাওলাদার আবার শিমুলের মা/রতে যায়।পলাশ তার আব্বাকে জাপটে ধরে কিন্তু শওকত হাওলাদার যেন না মে/রে শান্তি পাচ্ছে না হাত বাড়িয়ে শিমুলকে মা/রতে গেলে মা/রতে পারেনা কিন্তু উনার নখ লেগে শিমুলের গলা ছি/লে যায়।শিমুল গলায় হাত দিয়ে বলে,
“পুষ্পকেই বিয়ে করবো।দেখি কি করেন।”

“দেখবো কিভাবে বিয়ে করিস।”

শিমুল তার রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।শওকত হাওলাদার কতোক্ষন রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।পলাশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মনে মনে ভাবে এমন প্রতিবাদ করতে পারলে তার নিধি তার পাশেই থাকতো,একবুক হাহাকার নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হতো না,সে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার আম্মার দিকে তাকায়।রাবেয়া নিঃশব্দে কাঁদছে।পলাশের তাকানো দেখে নত মস্তিষ্কে জায়গা থেকে সরে দাঁড়ায়।রাবেয়ার খুব খারাপ লাগছে।আগে কথায় কথায় চড় থা/প্পড় দিতো তখন না হয় ছেলেরা বুঝতো না ছোটো ছিলো এখন তো ছেলেরা বড়ো হয়েছে।এতো বড়ো ছেলেদের সামনে তাকে মা/রাতে খুব লজ্জা লাগছে।চুপচাপ চোখের পানি ফেলে।সারাজীবন শওকত হাওলাদারের রাগের তুপেই জীবন কাটালো,বিয়ের পরে তার আম্মাকে শওকত হাওলাদারের এমন ব্যবহারের কথা বলেছিলো।উনার মা বলেছিলেন পুরুষেরা একটু এমন হয়’ই বাচ্চা হয়ে গেছে মানিয়ে নে,সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখবি জীবন কেঁটে গেছে।এই মানিয়ে নিতে নিতে রাবেয়া ক্লান্ত।স্বামী হিসেবে শওকত কখনো রাবেয়ার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়নি।শুধুমাত্র একটা কথাই রেখেছেন,
তখন রাবেয়া প্রথম মা হয়েছে।ছোট হাত পায়ের সুন্দর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে কেঁদে দেয়।স্বামীর কাছে আর্জি জানায় বাচ্চাটার নাম সে রাখবে। শওকত’ও তখন সম্মতি দিলে,রাবেয়া খুশী হয়।কোমল মনের অধিকারী রাবেয়ার ফুল ভীষন পছন্দ।ছোট্ট উজ্জল ছেলেটার নাম রেখে দিলেন পলাশ।তার চার বছর পরে আবার ছেলে হলে নাম রাখে শিমুল।এই দু’টোর দিকে তাকিয়েই রাবেয়া সারা জীবন কাটিয়ে ফেলেছে।

পুষ্পর জ্বরের কথা সকালেই সবাই জানতে পারে।রোকসানা ছুটে আসে।মেয়ের অবস্থা দেখে টিউবওয়েল থেকে মাথায় দেয়ার জন্য বালতি ভরা ঠান্ডা পানি আনে।মিজান শেখ চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।উনার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।মেয়েদের উপর হাত তোলার অভ্যাস তার কোনকালেই ছিলো না।দুই মেয়ে তার খুবই আদরের।আর সেই আদরের পুষ্পকেই কিনা নিজ হাতে এতো মা/রলো?শওকত চেয়ারম্যানের কথাগুলো শুনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।কিন্তু এখন মেয়ের এই অবস্থা দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।তিনি তো তার মেয়ের ভালোই চায়,মেয়ে যে চেয়ারম্যান বাড়িতে ভালো থাকবেনা এটা জানা কথা।

বিকালের দিকে পুষ্পর জ্বর কমে।বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে।রোকসানা ভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে আনে।পুষ্পর ভর্তা পছন্দ।জ্বরের মুখ ঝাল খেলে ভালো লাগবে।পুষ্পকে খাওয়াতে খাওয়াতে রোকসানা ভাবে পুষ্পকে মে/রে ধরে এই রাস্তা থেকে সরানো যাবে না,উল্টো বিপরীত হবে।লেবু বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায়।
রোকসানা পুষ্পকে বলে,
“নিজের ভালোটা কেন বুঝিস না পুষ্প?”

পুষ্প মায়ের দিকে তাকায়।রোকসানাই আবার বলে,
“মানলাম শিমুল তোকে ভালোবাসে কিন্তু ওই বাড়ির কেউ তোকে চায় না।শিমুলের সাথে সংসার করলেও সারাদিন ঘরে থাকতে হবে।সারাদিন ঘরে শান্তি না পেলে যে কেমন লাগে সেটা তুই ধারনাও করতে পারবি না।তখন শিমুলের ভালোবাসাও ভালো লাগবে না।”

পুষ্প বললো,
“ঘরের মানুষ ভালো হতে হবে না।শিমুল ভালো হলেই হবে।”

রোকসানা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়েটা শিমুল ছাড়া আর কিছুই বুঝার চেষ্টা করছে না।মা বাবার কষ্ট পুষ্পর চোখে পড়ছে না।
তারপরেও বলেন,
“অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে এর চেয়ে সুখে থাকবি।আম্মার কথা শোন।”

“কিভাবে জানো অন্য জায়গায় সুখী থাকবো?এমনো হতে পারে অন্য জায়গায় বিয়ে দিলে অশান্তিতে থাকতে পারি।অশান্তির জ্বালায় ম/রে যেতে পারি।”

“তুই এমন ছিলি না পুষ্প।কি মেয়ে কি হয়ে গেলো।”

রোকসানা গুনগুনিয়ে কাঁদে।মায়ের কান্না পুষ্পর ভালো লাগে না।সে মাকে দেখে,আজকে চলে গেলে আবার কবে দেখা হয় কে জানে।আজকে চলে যাবে ভেবে পুষ্পর চোখ ভরে পানি আসে।

শিমুল রাত এগারোটায় বাইক নিয়ে হিজল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।পুষ্প বের হতে পারলো কিনা সেই টেনশনে স্থির হয়ে থাকতে পারে না।এই দাঁড়ায় এই বসে।তার সব পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে।এখন সোজা ঢাকা যাবে ওখানে গিয়ে বিয়ে করে ভার্সিটির বন্ধু ফাহিমের বাসায় গিয়ে একদিন থেকে বাসা খুঁজে নিবে।তারপর তার চড়ুইকে নিয়ে থাকবে।সারাক্ষণ পুষ্প তার সাথে থাকবে কোন ভয় দ্বিধা ছাড়াই পুষ্পকে ভালোবাসতে পারবে।সারাজীবনের জন্য পুষ্প তার হয়ে যাবে এটা ভেবেই শিমুলের খুশীতে শরীর শিরশির করে উঠছে।কিন্তু পুষ্প যে আসছেনা।বের হতে পারেনি?

বারোটার দিকে পুষ্প বিছানা থেকে উঠে বসে।আজকে তার এতো ঘুম পাচ্ছে কেন?ঘুমের ট্যাবলেট খেলে যেমন ঘুম পায় তার এমন লাগছে ইচ্ছা করছে বিছানায় শুয়ে যেতে।কিন্তু।শোয়া যাবে না।পুষ্প আস্তে করে উঠে বসে।মুন্নী আছে বিধায় হয়তো দরজায় তালা দেয়নি।গায়ে ওরনা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর বেরিয়ে যায় নতুন জীবনের উদ্যেশ্যে।হিজল গাছের নিচে গিয়ে শিমুলকে পায়।দুজন দুজনকে দেখে আলতো হাসে।শিমুল এগিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে নেয়।পুষ্প দুই হাত দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।শিমুল পুষ্পর কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“সব ঠিকঠাক?তুমি ঠিক আছো?”

পুষ্পর চোখ বেয়ে পানি পড়ে সাথে মাথা নাড়ে।শিমুল পুষ্পর দুই গালে হাত রেখে বললো,
“আর কাঁদতে হবে না জান।আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।কষ্ট আমাদের ছোঁয়ে দিতে পারবেনা।তুমি দেখো।”

পুষ্প মাথা নাড়ে।তার কেন জানি কষ্ট হচ্ছে।শিমুল পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“চলো তাহলে।”

পুষ্প শিমুলের সাথে হাটে।পুষ্পর চোখে তার আব্বা আম্মার কান্নাভেজা মুখটা স্পষ্ট ভেসে উঠে। সে দুই কদম গিয়ে থেমে যায়।শিমুল তাকিয়ে বলে,
“কি হলো?হাটতে কষ্ট হয়?”

পুষ্প বা হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো,
“আমরা কি ঠিক করছি?”

শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয়?আমরা ভুল করছি?”

পুষ্প ফুপিয়ে বলে,
“আব্বা আম্মার জন্য মন পুড়াচ্ছে।কালকে জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।”

শিমুল পুষ্পর চোখে চোখ রেখে বললো,
“উনারা তো কেউ আমাদের বুঝলো না।”

পুষ্প কিছু বলেনা এক হাতে শিমুলের টিশার্ট খামচে ধরে আছে।
শিমুল পুষ্পর মনের অবস্থা বুঝতে পারে।শিমুল যতো সহজে চলে এসেছে পুষ্প পারছেনা।শিমুল বললো,
“কি করবে তাহলে?”

“আমি বুঝতে পারছিনা।”

“কেউ তো রাজি না।পালিয়ে না গেলে তোমাকে আপন করে নিবো কি করে জান?”

পুষ্প পালিয়ে গেলে তার আব্বা আম্মা খুব কষ্ট পাবে।তার আব্বার হাই প্রেশার বেশী টেনশনে যদি স্ট্রোক করে ফেলে?আব্বার কিছু হয়ে গেলে পুষ্প নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।তার মনে হয় তার আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝালে যদি রাজি হয়।শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাই?”

শিমুল কিছু বলেনা।শিমুল চুপ করে আছে দেখে পুষ্প বললো,

“চুপ করে আছো কেন?”

“কি বলবো?”

“আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাই।আমার মনে হয় উনারা বুঝবে।”

“মা/র ছাড়া কোনো কথা নাই। তাদের বুঝালে বুঝবে বলে মনে হয়?”

পুষ্প বললো,
“উনাদের কষ্ট দিয়ে আমরা কি সুখী হবো?আব্বা আম্মার বদদোয়া
লাগবে না?”

শিমুল পুষ্পর দিকে তাকিয়ে থাকে।
“আচ্ছা।”

পুষ্প শিমুলকে আবার জড়িয়ে ধরে।
“কথা দিচ্ছি আব্বা আম্মাকে মানিয়েই তোমার হবো।”

শিমুল বললো,
“তাহলে আর দেরী করো না।বাড়ি যাও।”

পুষ্প আস্তে-ধীরে ফিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।যেতে যেতে পুষ্প বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে।পুষ্পর যাওয়ার পথে তাকিয়ে শিমুলের বুকটা জ্বলে উঠে।তার মনে হচ্ছে পুষ্প চলে গেলেই চিরতরে হারিয়ে ফেলবে।আর পাওয়া হবে না দেখা হবে না।পুষ্পর ফিরে তাকানো মায়া মায়া দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে এই মায়াবী চোখ আর কখনো দেখা হবে না,মায়ায় পড়া হবে না।শিমুলের গভীর চোখ থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়ে।অসহ্য জ্বলন পুড়ানে দেহ কেঁপে ওঠে।ছুটে গিয়ে পুষ্পকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ বলিষ্ঠ দেহের আলতো ধাক্কাতে পুষ্প সামনের দিকে হেলে পড়ে পরক্ষনেই শিমুল হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে।শিমুল এই প্রথম পুষ্পর সামনে ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়।পিছন থেকেই কাধে গাল রেখে বলে,
“আমার খুব ভয় হচ্ছে জান।মনে হচ্ছে তোকে হারিয়ে ফেলবো।”

পুষ্পর মনটা কেঁপে ওঠে।সবাইকে মানিয়েই তো সে শিমুলকে চায়।কিন্তু শিমুলের এমন চোখের পানি ঝরিয়ে না।শিমুলই আবার বলে,
“তোকে ছাড়া আমি মরে যাবো।এক মূহুর্তও বাঁচতে পারবো না।”

পুষ্প শিমুলের দিকে ফিরে।শিমুল জড়িয়ে নেয় বুকে।শক্ত করে ধরে রাখে।যেন এটাই শেষ কাছে আসা।শিমুল পাগলের মতো কাঁদছে।শিমুলের এমন কান্না দেখে পুষ্পও কেঁদে দেয়।
“আমি বাড়ি যাবোনা।তোমার সাথে যাবো।চলো।”

শিমুল কথা বলেনা।পুষ্প শিমুলের প্রসস্থ বুকে নাক ঘষে।মাথাটা উপরে তুলে শিমুলের থুতনিতে চুমু খায়।শিমুল তাকালে বলে,
“চলো।”

পুষ্প যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিমুল সেটাই রাখবে।পুষ্প চায় বাবা মাকে মানিয়ে তার হতে,কাউকে কষ্ট না দিয়ে কবুল করতে।এখন শিমুলের জন্যই আবার সিদ্ধান্ত বদলে নিচ্ছে।শিমুল চাইলেই পুষ্পকে নিয়ে যেতে পারে কিন্তু এতে করে সারাজীবন পুষ্পর মনে হবে আরেকবার বুঝালে বাবা মা বুঝতো।তাই শিমুল পুষ্পকে বুঝানোর সময় দিবে।মাথা নেড়ে বললো,
“বেশি খারাপ লাগছে তাই জড়িয়ে ধরেছি।তুমি যাও।”

পুষ্প মাথা নেড়ে না বলে।যাওয়ার পথে শিমুলকে টানতে টানতে বলে,
“চল পালাই।”

“না আব্বা আম্মাকে আরেকবার বুঝাও।যাও।”

পুষ্প শিমুলের কাতর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখে এখনো পানির আনাগোনা।পুষ্প শিমুলের কাছে এগিয়ে আসে।গভীর গলায় বললো,
“পুষ্প বেঁচে থাকলে তোমার আর যদি বেঁচে থাকতে অন্য কারো হতে হয় তাহলে পুষ্প বাঁচবে না।সইচ্ছায় মরে যাবে।”

শিমুল কথা বলেনা।পুষ্প শিমুলের চুলে হাত রেখে বললো,
“আমার কলিজাটাকে খুব ভালোবাসি।খুব বেশি।”

শিমুল পুষ্পর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কোমড়ে হাত রেখে টেনে বুকে মিশিয়ে নেয়।কপালে চুমু খেয়ে পুষ্পর কোমল ঠোঁটের ভাজে মিশিয়ে দেয় নিজেকে।শিমুলের ভয় হচ্ছে চুম্বনরত অবস্থায়ই চোখ বেয়ে পানি পড়ে।তা বুঝতে পেরে পুষ্প শিমুলকে নিজের দিকে আরো টেনে নেয়।শিমুল পুষ্পর গালে গাল ঘসে বললো,
“আমি তোকে খুব ভালোবাসি।”

“আমিও।”

পুষ্প গুটিগুটি পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।শিমুল সেদিকে তাকিয়ে থাকে।তার বুকটা এতো পুড়ছে কেন?আবার দেখবে তো তার জানপাখিকে?

সকালে পুষ্পর ঘুম ভাঙ্গে অনেক মানুষের কথাবার্তায়।পুষ্প চোখ খুলে দেয়াল ঘড়িতে দেখে দশটা বাজে।চমকে উঠে বসে।এতো বেলা করে ঘুমানোর মানে কি?সে তো এতো বেলা অবধি ঘুমায় না।গায়ে ওরনা জড়িয়ে বের হয় মায়ের রুমে গিয়ে শুনে তার আম্মা মুন্নীকে বলছে “তুই কয়টা ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিস?এখনো উঠেনা কেন?”

মুন্নী বললো,
“একটাই তো দিয়েছি।”

পুষ্পর দুনিয়া ঘুরে উঠে।ঘুমের ওষুধ কেন খাওয়াবে?তার জন্যই কি রাতে এতো ঘুম পাচ্ছিলো?পাশের রুমে অচেনা মানুষের কথা শুনে পুষ্প সেদিকে পা বাড়ায়।সেখানে দেখে সাফিন পাঞ্জাবি পরে বসে আছে সাথে তার বাবা মা সহ আরো দশ বারোজন মানুষ।পুষ্প মূহুর্তেই বুঝে নেয় আজকে কি হতে যাচ্ছে।কোনদিকে না তাকিয়ে তার রুমের দিকে দৌড় দেয়।রোকসানা আর মুন্নী দেখে ফেলে পিছু পিছু ছুটে।পুষ্পর সারা শরীর কাঁপছে।পেছনের দরজা দিয়ে বের হতে নিলেই রোকসানা আর মুন্নী টেনে রুমে নিয়ে যায়।পুষ্প জোড়ে জোড়ে বলে,
“তোরা বেইমান,তোরা খা/রাপ।আমারে বাঁচতে দিলি না।শিমুল আমি ভুল করেছি।অ- শিমুল।”

রোকসানা মুখে চেপে ধরে বললো,
“যদি একটু সাউন্ড হয় আর সাফিনরা শুনতে পায় তাহলে তোর আব্বা আর আমি বি/ষ খেয়ে ম/রে যাবো।”

পুষ্পর মুখে রোকসানা হাত চেপে ধরে রাখে।পুষ্পর বোবা কান্নায় চোখ ফেটে পানি পড়ে।আহা কি ভুল করলো।এই জীবনে শিমুলকে পাওয়া হলো না!অহ শিমুল আমার শিমুল।

শিমুল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়।রাতে ঘুমাতে দেরী করেছিলো বিধায় আজকে বেশীই ঘুমিয়েছে।দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা খুলা যাচ্ছে না।বাহির থেকে লক করা।শিমুল কয়েকবার ডাকে কেউ সারা দেয় না অথচ শিমুল স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে কাছেই কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলছে।হঠাৎ করেই বুদ্ধিমান শিমুল বুঝে যায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে।কয়েকবার তার মাকে ডাকে,ফুলিকে ডাকে।কেউ সারা দেয় না।শিমুলের গলা শুকিয়ে যায়,জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।অনুমান করা ভ/য়ে বুকটা কাঁপছে।মা মা করে আরো কয়েকবার ডাকে কিন্তু কেউ সারা দেয় না।শিমুল দরজায় জোড়ে জোড়ে আঘাত করে সেখানে দাঁড়িয়েই কেঁদে দেয়।

চলবে…….

#শিমুল_ফুল
#২১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

শিমুল দরজায় থা/প্পড় দিতে দিতে ডাকে।কেউ সারা দেয় না।তখনি মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠে।ইচ্ছা না থাকা সত্বেও তিয়াসের ফোন দেখে ধরে।ফোন কানে দেয়ার সাথে সাথে তিয়াসের কন্ঠ শুনে,
“শিমুল পুষ্পকে তো লুকিয়ে ওই সাফিনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।তুই তাড়াতাড়ি আয়।”

পুষ্পর বিয়ে?এই ভ/য়টাই সে পাচ্ছিলো।তার বুকের গহীনে ভ/য়ংকর ব্যাথা হয়।গলা আটকে কান্না আসে।জড়ানো গলায় বলে,
“কিভাবে আসবো?আমাকে আ/টকে রেখছে।”

তিয়াস অবাক হয়ে বলে,
“বলিস কি?তাহলে কি করবো?”

“আমাকে বের করার ব্যবস্থা কর।”

“আচ্ছা দেখি।শুনেছি যোহরের পরেই বিয়ে হয়ে যাবে।”

শিমুল ফোন কেটে চিৎ/কার করে তার মাকে ডাকে।
“মা,মা দরজা খুলো।মা তোমার পায়ে পড়ি মা।আমার পুষ্পর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে মা।”

তখন দরজার ওপাশ থেকে শওকত হাওলাদার গা জ্বা/লানো হাসি দেয়।
“কি ব্যাপার কালকে না বড়ো বড়ো কথা বললে।তোমার পুষ্পর তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অথচ তুমি রুম থেকেই বেরোতে পারছনা।প্রেমিক হিসাবে তুমি ফেইল।”

শিমুল গলা ফাটিয়ে চি/ৎকার করে উঠে।
“দরজা খুলে দে নাহলে আমি কি করবো ভাবতে পারবি না।”

“যোহরের পরে খুলবো।বিয়েটা হয়ে যাক।”

শিমুল মুহূর্তেই কেঁদে দেয়।
“আব্বা আপনার পায়ে পড়ি আব্বা।দরজা খুলে দেন,সারাজীবন আপনার গোলাম হয়ে থাকবো।”

“চুপচাপ থাকো।আর সবাই শোনো এই দরজার সামনে যেন কেউ না আসে।আমার অনুমতি ব্যতীত যে দরজা খুলবে তার অবস্থা হবে ভ/য়াবহ।”

শিমুল চেচিয়ে বলে,
“ওই কু/ত্তার বাচ্চা তুই দরজা খোল।কাপুরুষের বাচ্চা আমাকে আটকে রেখে জিতে যেতে চাস?পারলে দরজা খুলে দে।”

“আজকে গা/লাগা/লি করলে আমি মাইন্ড করবো না।ইচ্ছেমতো গা/লি দাও।আমি বিয়ে দিয়ে আসি।”

শিমুল সত্যি সত্যিই তার আব্বাকে সব বি/শ্রী গা/লি দেয়।ঘরের সব ভেঙে চুরমার করে ফেলে।দরজায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে।কিন্তু কাঠের দরজা ভাঙ্গে না।শিমুল জোড়ে জোড়ে কাঁদে।অসহায় হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।কালকে রাতেই ভুল হয়েছে,পুষ্পর বাচ্চামোকে প্রাধান্য দেয়া ঠিক হয়নি,শিমুলের উচিত ছিলো পুষ্পকে নিয়ে চলে যাওয়া।তার বুঝা উচিত ছিলো যারা এভাবে মা/রতে পারে তারা কখনোই পুষ্পর কথায় রাজি হবেনা।পুষ্পর আবেগকে আগে ভাবা ঠিক হয়নি।যদি চলে যেতো তাহলে আজকে এই দিন এই বি/শ্রী সময় আসতো না।অহ পুষ্প তুই কি করলি?শিমুল হাটুর ভাজে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দেয়।বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কাঁদে।আল্লাহর কাছে আর্জি করে,আল্লাহ আমার সহায় হও।বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।আবার দরজায় হাত চাপরে বলে,
“মা তুমিও এতো নি/ষ্ঠুর!মা হয়ে বুঝলে না সন্তানের কোথায় জ্বলে।আমি ম/রে যাবো মা।তোমরা পুষ্পর বিয়ে দিতেছো না আমার ক/বর করতেছো।অ মা দরজা খুলো মা।আমার পুষ্প ম/রে যাবে।”

শিমুল আকুতি মিনতি করতে করতে কাঁদে।ঘরের সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।শিমুলের থেকে এমন কান্না আসা করেনি।কখনো কেউ ভাবেনি একটা সস্তা মেয়ের জন্য শিমুল এভাবে কাঁদবে।সবাই ভেবেছিলো পুষ্পর সাথে মজা করে ছেড়ে দিবে কিন্তু শিমুল যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।শিমুলের চিৎকারে হাওলাদার বাড়ি কেঁপে ওঠে।রাবেয়া ছেলের কান্না সহ্য করতে পারেনা।মুখে আঁচল চেপে ধরে।তার ইচ্ছা করছে দরজা খুলে দিতে। ছেলের খুশী চোখ ভরে দেখতে।কিন্তু সামনের সোফায় শওকত হাওলাদার বসে আছে। উনি চলে যাবে বললেও যায় নি হয়তো যোহর পর্যন্ত বসে থাকবে।রাবেয়া উনার কাছে গিয়ে বলেন,
“একটু দয়া করেন।আমার ছেলেটা ম/রে যাবে।আল্লাহর দোহাই লাগে।আপনার পায়ে পড়ি।”

এটা বলতে বলতে রাবেয়া বসে স্বামীর পায়ে ধরে।

শওকত হাওলাদার বললো,
“তোমাকে বিয়ে করাই আমার ভুল ছিলো।এখন আমাকে এতো রাগিয়ো না যে এতো বছর পরে ভুল সংশোধন করতে তিন কথা বলে দেই।”

রাবেয়া স্তব্ধ হয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে।কি নি/ষ্ঠুর মানুষ!রাবেয়ার মনে হচ্ছে তার জীবনটাই বৃথা।বড়ো ছেলের কান্না দেখেও কিছু করতে পারেনি আর ছোটো ছেলের বেলায়ও অসহায়।মা হিসেবে সে ব্যর্থ।

কালকে রাতে পুষ্পর বলা কথাটা শিমুলের কানে বাজে, “পুষ্প বেঁচে থাকলে তোমার আর যদি বেঁচে থাকতে অন্য কারো হতে হয় তাহলে পুষ্প বাঁচবে না।সইচ্ছায় মরে যাবে।”তার পুষ্প যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলে!শিমলতো জানে পাখিটা তাকে কতো ভালোবাসে।তার জন্য কতো পাগল।সে জোড়ে জোড়ে বলে,
“আমার পুষ্পর কিছু হলে তোদের একেকটা কে জ্যান্ত ক/বর দিবো। শওকত তুই দরজা খুল আমার পুষ্পর কিছু হলে তুই শে/ষ।”

শিমুল আবার বাচ্চাদের মতো কাঁদে।হাত দিয়ে চুল খাম/চে ধরে।পাগ/লের মতো মাথা নেড়ে নিজে নিজে বলে না না।আমার পুষ্পর কিছু হবে না।জান তুই অপেক্ষা কর আমি আসবো।আমি আসবো জান।তারপর আবার গলা উচিয়ে তার আব্বাকে বি/শ্রী সব গা/লি দেয়।তখনি তিয়াস আসে শওকত তিয়াসকে দেখে বলে,
“কি ব্যাপার কেনো এসেছো?”

শিমুল আর তিয়াস ছোটবেলা থেকে একসাথে বড়ো হয়েছে।একজন আরেকজনের খুব ভালো বন্ধু।শিমুলের কান্নায় তিয়াসের বুক ভারী হয়ে চোখ ভরে পানি আসে।চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“চাচা শিমুলকে যেতে দিন।”

তিয়াসের কথা শুনে শওকত হাওলাদার হো হো করে হাসে।
“আজকে দুনিয়া উল্টে গেলেও শিমুল বের হতে পারবেনা।”

হঠাৎ করে তিয়াস হাটুমুড়ে শওকত হাওলাদারের পায়ের কাছে বসে পা আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।
“চাচা দুইটা’ই ম/রে যাবে চাচা।আপনি নিজেও জানেন না শিমুল পুষ্পকে কতো ভালোবাসে।”

শওকত বলেন,
“পা ছাড়ো।চামচামি করতে এসেছো?যাও বাড়ি যাও।”

“চাচা একটু দয়া করেন।বিয়েটা আটকান চাচা।”

শওকত হাওলাদার মুচকি হাসে।বিয়ে আটকাবে সে?কেন আটকাবে?কাল রাতে মিজান বলে গেছে আজকে পুষ্পর বিয়ে শিমুল যেন ওদিকে না যায়।তাইতো সকাল হওয়ার সাথে সাথেই শিমুলের দরজা বন্ধ করে এই এক জায়গায় বসে আছে।তিয়াসের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাড়ি যাও।যা আবদার করেছো তা কখনো পুরন হবেনা।”

শিমুল তিয়াসের কন্ঠ শুনে বলে,
“তিয়াস তুই এসেছিস?আমাকে নিয়ে যা।এই শুয়ো***বাচ্চা আমাকে আটকে রেখেছে আমাকে নিয়ে যা।আমার পুষ্প….. ”

এটুকু বলে শিমুল আবার কাঁদে।শিমুলের কান্না শুনে তিয়াস সব উপেক্ষা করে দরজার দিকে ছুটে।তা দেখে শওকত আর মজিব হাওলাদার তিয়াশকে পেছন থেকে কি/ল ঘু/ষি দিয়ে ধা/ক্কিয়ে বের করে দেয়।তিয়াস অসহায় হয়ে বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে।বাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে ঘৃ/ণায় মাটিতে থু থু মারে।

পুষ্প বিছানায় বসে পাগ/লের মতো কাঁদে।তার ভুলের জন্যই আজকে এই পরিনতি।কে বলেছিলো ফিরে আসতে?পাকনামি করে বাবা মায়ের কাছে তাদের মন রক্ষায় ফিরে এসেছে আর তারা কিনা বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেলেছে।ভুল করেছে সে তার শিমুলের সাথে চলে যাওয়া উচিত ছিলো।শিমুলের কথা ভাবা উচিত ছিলো।শিমুল বলেছিলো যারা মা/রা/মা/রি ছাড়া কিছু বুঝেনা তারা আর যাইহোক মেনে নিবেনা।এখন শিমুল কি করছে? আসছেনা কেন?নাকি জানেনা?পুষ্প হাত দিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে।দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।হাত দিয়ে চুল খামচে বিছানায় হেলে পড়ে ঘুঙ্গিয়ে উঠে।শিমুলকে ছাড়া সে বাচ/বেনা।অন্য কারো বউ হওয়ার চেয়ে ম/রে যাওয়া অনেক ভালো।বুকে অসহ্য ব্যথা জানিয়ে দিচ্ছে বিচ্ছেদের করুণ হাহাকার।রোকসানা শাড়ী নিয়ে আসে পুষ্প মাকে দেখে মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়ে।
“আম্মাগো আমারে বিয়ে দিওনা।আমার শিমুল ম/রে যাবে।দয়া করো আম্মা।”

রোকসানা জোর করে পা ছাড়িয়ে নেয়।তখনি মিজান শেখ আসে,
পুষ্প হামাগুড়ি দিয়ে তার আব্বা পায়ে গিয়ে ধরে,
“আব্বা।অ আব্বা বিয়েটা বন্ধ করে দাও।আমি শিমুলকে ছাড়া বাঁচ/বো না।”

মিজান বা রোকসানা কারোরই মন গলেনা।মিজান বলে,
“কিছুক্ষণ পরেই আজান দিয়ে ফেলবে।মুন্নীকে বলো শাড়ী পড়িয়ে দিতে।”

পুষ্প ফ্লোরে হাত বারি মেরে বলে,
“আমাকে জোড় করে বিয়ে দিলে আমি ম/রে যাবো।কথা বুঝনা তোমরা?”

রোকসানা পুষ্পর গাল চেপে ধরে বললো,
“তোর লা/শের সাথেই বিয়ে দেবো।তাও শিমুলের কাছে দিবো না।”

পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে বললো,
“তোমরা এতো নিষ্ঠুর গো আম্মা?এমন করো না,আমার শিমুল ম/রে যাবে।”

পুষ্পর করুন কান্নায় উনাদের মন গলেনা মন্নী আসলে উনারা চলে যায়।পুষ্প ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।আহা শিমুলকে ছাড়া বাঁচবে কি করে?শিমুলের নামে নিজেকে লিখে না দিতে পারলে পুষ্পর মৃ/ত্যু হয়ে যাক।ফ্লোরে হাত থা/প্পড় মে/রে বলে জান তুমি কই?আমার ভুল হয়েছে।এইবার নিয়ে যাও আমি আর কখনো ফিরে আসবো না।শিমুল।”

মুন্নী তাকে টেনে তুলে।পুষ্প তার বোনকে দেখে।সবাই তাকে কতো ভালোবাসতো অথচ এখন কি নি/ষ্ঠুর তাদের ব্যবহার।পুষ্প মুন্নীকে কিছু বলতে চাইলে মুন্নী বলে,
“একটা কথাও বলবি না।বেশী পেকে গেছিস।”

মুন্নীর ফোনটা টেবিলের উপরে রাখা।পুষ্প আড়চোখে তাকিয়ে দেখে।তারপর আস্তে করে সরে মোবাইলটা আড়াল করে দাঁড়ায়।মুন্নী ড্রেসিংটেবিল থেকে সেফটিপিন আনতে গেলে পুষ্প মোবাইলটা খাটের তোশকের নিচে ঢুকিয়ে ফেলে।তারপরের সময়টা পুষ্প শান্ত হয়ে শাড়ী পড়ে নেয়।শাড়ী পড়ানোর পরে মন্নী মোবাইলটা খুঁজে ভাবে অন্যরুমে তাই খুঁজতে যায়।পুষ্প দ্রুত গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
মোবাইলটা বের করে শিমুলের নাম্বার ডায়াল করে।
শিমুল তখনো দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করছে।ফোন আসাতে বিরক্ত হয় পরক্ষনেই ভাবে পুষ্প কিনা।তাই ধরে।
পুষ্প ধরা গলায় বলে,
“শিমুল,আমার জান।”

পুষ্পর গলা শুনে শিমুল স্থির হয়ে যায়।পুষ্পই আবার বলে,
“আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তুমি কই?আসতে এতো লেট করছো কেন?আমার ভুল হয়ে গেছে কালকে রাতে ফিরে আসা উচিত হয়নি।এরা ভালো না।”

শিমুল ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে,
“পুষ্প রে।আমাকে তো আটকে রাখছে।”

পুষ্পও হাহাকার করে বললো,
“আল্লাহ আমি কেন ফিরে আসলাম?অ-জান আমাকে নিয়ে যাও।”

শিমুল চুপ করে থাকে।পুষ্পই আবার বলে,
“আমি তোমাকে ছাড়া ম/রে যাবো।”

শিমুল কাঁদে।তার পা/গল পা/গল লাগছে।পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“বিয়ের শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে।আমি ম/রে যাবো তাও বিয়ে করবনা।”

শিমুল বললো,
“দুনিয়া এতো নি/ষ্ঠুর কেন?ওরা আমাদের একসাথে বাঁ/চতে দিলো না।”

পুষ্প কান্না গলায় বলে,
“শিমুল,তোমার সাথে বাঁচতে না পারলে আর বাঁচার ইচ্ছা নাই।”

শিমুল কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে যায়।পুষ্প কান থেকে ফোনটা নামিয়ে দেখে মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে।তখনি বাহিরে বলতে শুনা যায় কাজী এসেছে,পুষ্প উঠে টেবিলের দিকে যায়।

আল্লাহর ঘরে নামায পড়তে যাওয়ার জন্য মোয়াজ্জিন আজান দিচ্ছে।শিমুল স্তব্ধ হয়ে আজানের সুরটা শুনে।তার পুষ্পর এখন বিয়ে হবে।পুষ্প অন্যকারো হয়ে যাবে।সে ব্যর্থ,প্রেমিক হিসেবে ব্যর্থ।শিমুল ঘর কাঁপিয়ে চি/ৎকার দিয়ে মাথা দিয়ে দেয়ালে আ/ঘাত করে।একটা দুইটা আ/ঘাত করে থামে না।অনেকগুলো আ/ঘাত করে যখন আর শক্তি পায় না তখন দেয়াল ঘেষে বসে পড়ে।মাথা থেকে র/ক্ত বেরোচ্ছে।বেরোচ্ছে বললে ভুল হবে যেন কলকল করে পানির মতো র/ক্ত পড়ছে।শিমুল শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে চিৎ/কার করে বললো,
“তোরা বাঁচ/তে দিলি না।”

পুষ্প টেবিলের রেক্সিনের নিচে থেকে ব্লে/ডটা বের করে।অনেকদিন আগে খাতা বাধার পরে বাড়তি সুতো কাটার জন্য কিনেছিলো।আজকে সেটা পেয়ে পুষ্প তৃপ্তির হাসি হাসে।
ফ্লোরে বসে চোখ বন্ধ করে হাতে ব্লে/ড টেনে টেনে বলে তোমাকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব না।কিছুক্ষণ পরেই ফ্লোর র/ক্তে লাল হয়ে যায়।পুষ্প বলে,
“তোমাকে আর পাওয়া হলো না শিমুল।”
পুষ্পর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়,হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট হয়ে বুকে চাপ পড়ে।
আশ্রুচোখে ঢলে পড়ে ফ্লোরে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here