#শিমুল_ফুল
#৩২,৩৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
৩২
পেশকারার সব কথা রাবেয়ার কর্ণগোচর হয়।বসার ঘরে তার শশুড় আয়েশ করে বসে রাবেয়ার কথা শুনছে।উনিই বউয়ের কথায় পুষ্পকে জ/ব্দ করার জন্যই ভোর সকালে তিতাস মাছের আড়ৎ থেকে ছোট মাছ কিনে এনেছেন।রাবেয়া হাতের কাজ ফুলির কাছে দিয়ে পেশকারার কাছে যায়।পেশকারা ততক্ষণে স্বামীর সাথে বসে হাসাহাসি শুরু করেছে।উনাদের সাথে তার ননদ আছমা আর ভাগনী সুইটিকে দেখে রাবেয়ার মনটা বি/ষিয়ে যায়।সুইটির নি/র্লজ্জতায় তিনি যারপরনাই হতাশ।মেয়ে মানুষ এতো নি/র্লজ্জ হলে কি তাকে আর মেয়ে বলে?শিমুলের পিছনে যেন আঠার মতো লেগে আছে।যে বোঝা কাধে নিতে চায় না তাকে কি জোড় করে কাধে তুলে দেয়া যায়?রাবেয়া মাথা ঘুরিয়ে একবার শিমুলের ঘরের দিকে তাকায়।শিমুল আর পুষ্পর যে সামনে বি/পদ আছে এটা বেশ আঁচ করা যাচ্ছে।উনি আবার রান্নাঘরে ফিরে যান।রাবেয়ার মনটা য/ন্ত্রনায় কা/তর।কাল রাত থেকে পলাশ বাড়ি নেই।সেই যে রা/গ করে গেলো আর ফিরেনি।তিনি রাত তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বসে ছিলেন,মোবাইলে ফোন দিয়ে মোবাইল বন্ধ পায়।এতো রাত ছিলো বিধায় শিমুলকে ডাকে নি।সিদ্ধান্ত নেয় শিমুল ঘুম থেকে উঠলেই পলাশকে খুঁজতে পাঠাবে।
পলাশ হস/পিটালের বেডে চুপচাপ বসে আছে।তার চোখ নিধির মুখের দিকে স্থির।এমন মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে এমন কাজ করতে তার আব্বার বুকটা কাঁ/পলো না?শ/ত্রু ও তো শ/ত্রুর এমন ক্ষ/তি করতে চায় না।শওকত হাওলাদার যানে নিধিকে পলাশ পা/গলের মতো ভালোবাসে তারপরেও নিধিকে আঘা/ত করতে ভাবলো না?এ কেমন বাবা?মানুষ নাকি ছেলেমেয়ের সুখের জন্য দুনিয়া বাজি ধরতে পারে আর উনি কিনা নিজের বড়াই,অ/হং/কার বজায় রাখতে প/শুর মতো আচরন করলো!
নিধি নড়েচড়ে উঠে।আস্তেধীরে চোখ খুলে।পলাশকে দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে উঠে।ডাগর-চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে কানের লতি ছুঁয়ে যায়।ফিসফিস করে বলে,
“পলাশ…”
পলাশের দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।ঝাপসা চোখেই নিধির বাম হাতটা শক্ত করে নিজের হাতে পুড়ে নেয় যেন আশ্বাস দিচ্ছে,”ভ/য় পেও না।আমি আছি।”
নিধি আর কিছু বলে না ঘুমের ও/ষুধের প্রভাবে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে।পলাশ নিধির হাতে তার ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়।হাতটা গালের সাথে মিশিয়ে ভাবে কালকে যদি আরেকটু দেরী হতো তাহলে কি হতো?পলাশের চোখের পর্দায় কালকের ভ/য়ং/কর চিত্রটা ভেসে উঠে।নিধির উপর পড়ে থাকা বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটা নিজের পুরুষত্বের তেজ দেখাতে মরিয়া তখন পলাশ পেছন থেকে ঝাপটে ধরে।হঠাৎ করে কাজে বিগ্ন ঘটানোতে লোকটা পাল্টা আ/ক্রম/ণ করতে পারেনা।কিন্তু পরমূহুর্তেই পলাশের দিকে আ/ক্রম/ণ করে।পলাশ খেয়াল করে দেখে এটা তার আব্বার চ্যালাপেলার একজন,নাম রকিব।এই ছেলেটা নে/শা করার জন্য কয়েকবার পুলি/শের দৌড়ানী খেয়েছে।পলাশ কিছু বুঝে উঠার আগেই রকিব ঘু/ষি দিয়ে পলাশের নাক র/ক্তা/ক্ত করে ফেলে।পলাশ নাকে হাত দিয়ে র/ক্ত দেখে রকিবের দিকে তাকায়।রকিব তার লাল দাঁতগুলো বের করে হাসে।”ভাইজান চাচার আদেশ আমি পালন করতে আইছি,আপনি চইলা যান।”
পলাশের শরীরেও শক্তি কম নেই কিন্তু কখনো মা/রামা/রি করে অভস্ত্য না বিধায় হঠাৎই আ/ক্রম/ণ করতে পারলো না।রকিবের মুখের কথা শুনে তার র/ক্ত টিগবগিয়ে ফুটে উঠে।গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে রকিবের উদোম পেটে লা/থি দেয়।রকিব ছিটকে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে পড়ে।নিধি হাত দিয়ে মুখের বাধন খুলে।নিজের অবস্থা দেখে ভ/য়ে ডুকড়ে কেঁদে উঠে।রকিবের আনা ছু/ড়িটা ড্রেসিংটেবিলের কোনায় অবহেলায় পড়ে আছে,রকিব মাথা তুলে ছু/ড়িটা হাতে নেয়।হাতে নিয়ে পলাশের বুকের দিকে সোজা টেনে দেয়।রকিবকে আ/ক্রম/ণ করতে দেখে পলাশ সরে যায় কিন্তু হঠাৎ ধারালো কিছুর আ/ঘাতে পলাশের ডান হাতের বাহু ব্যা/থায় নীল হয়ে জানান দেয় র/ক্তে/র স্রোত।পলাশ তার হাতের ক্ষ/তের দিকে যখন তাকিয়ে আছে তখন রকিব র/ক্তা/ক্ত ছু/রি হাতেই নিধির বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”তোরে না খাইতে পারলে নাই মা/রতে তো পারমু।”
প্রিয় পুরুষের এমন অবস্থা সাথে এই ভ/য়ং/কর লোকের বিশ্রী কথায় নিধি কুকড়ে যায়,পলাশ বলে আ/র্তনাদ করে উঠে।পলাশ ততক্ষণে রকিবের কোমড় পিছন থেকে টেনে ধরেছে।রকিব সোজা হলে পলাশ ধস্তাধস্তি করে ছু/রিটা রকিবের হাত থেকে তার হাতে নিয়ে নেয়।একটুও দেরী না করে রকিবের পেটে আঘাত করে।রকিব আর্তনাদ করে উঠে পলাশের দিকে তাকিয়ে একছুটে বেরিয়ে যায়।পলাশ তাড়া করেও নাগাল পায় না।সে নিধির কাছে ফিরে এসে দেখে নিধি অ/জ্ঞান হয়ে গেছে,গায়ের জামা ছিড়ে ছি/ন্নভিন্ন করা।পলাশ পানি এনে নিধির চোখে মুখে পানি দেয়।নিধির জ্ঞান ফিরেনা,রাত তিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া জানায় যে নিধির কোনো ক্ষ/তি হয়নি।আর একটু দেরী হলেই সর্ব/নাশ হতো,অতিরিক্ত ভ/য়ের কারনেই অজ্ঞান হয়ে গেছে,আর ভ/য়টা মনে আ/ঘাত করে রোগীকে স্বরণ করিয়ে দিচ্ছে যে এখনো বি/পদ আছে তাইতো জ্ঞান ফিরতে দেরী হয়েছে।ডাক্তার পলাশের পরিচিত।উনি একটা ঘুমের ইঞ্জে/কশন দিয়েছেন কিছু ওষুধ হাতের শিরায় স্যালাইনের মাধ্যমে দিচ্ছে।পলাশ শওকত হাওলাদারকে ছাড়বে না।এবার বোঝাপড়া হবে।কিভাবে এমন নি/কৃষ্ট কাজ করলো?
পুষ্প বাহিরে টিউবওয়েল পাড়ে মাছ কাটতে বসে।রাবেয়া আরেকটা বটি এনে নিজেও বসে।এতোগুলো মাছ একা কাটা সম্ভব না।পুষ্প শাশুড়ীকে দেখে মিষ্টি করে হাসে।রাবেয়া মাছ কাটতে কাটতে বল,
“পুষ্প তোমাকে একটা কথা বলি?”
পুষ্প রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“জ্বী আম্মা বলেন।”
রাবেয়া পুষ্পর দিকে একপলক তাকায়।
“সুইটি যে শিমুলকে পছন্দ করে,সবাই সুইটিকে বিয়ে করাতে চেয়েছিলো সে কথা জানো?”
শাশুড়ীর মুখে এমন কথা শুনে পুষ্প বললো,
“জ্বী।উনি বলেছে।”
“সবাই পরিকল্পনা করছে তোমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে সুইটি নিজে শিমুলের বউ হবে।”
পুষ্প চোখ বড়ো বড়ো করে তার শাশুড়ীকে দেখে।রাবেয়া মাছ কাটতে কাটতেই বলে,
“তাই উনারা তোমার সাথে এমন জ/ঘন্য ব্যবহার করছে।”
পুষ্প বুঝতে পারেনা তার কি করা উচিত।
“আমি এখন কি করবো আম্মা?”
“মেনে নিবে মানিয়ে যাবে,চুপ থাকবে তাহলেই সংসারে শান্তি আসবে এই চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দাও।এই আমাকে দেখো চুপ থেকে জীবনের এতোগুলো বছর এই বাড়িতে কাটিয়ে দিলাম অথচ কারো কাছে আমার বিন্দমাত্র দাম নেই।আমার সাথে সবাই যা করেছে আমি চাইনা তোমার সাথেও তা হোক।কেউ কটু কথা বললে প্রতিবাদ করবে,অবশ্যই বেয়াদবি করে না শালীন ভাষায় সুন্দর করে বুঝিয়ে দিবে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল।তুমি নরম থাকলে আ/ঘাত পাবেই।তোমাকে শক্ত হতে হবে।কথায় আছেনা শক্তের ভক্ত নরমের যম।এই কথাটা আসলেই সঠিক।আমার সাথে যা হয়েছে তা আবার তোমার সাথে হতে পারেনা।আমার শাশুড়ী যা করছেন এটা যদি আমি করতাম তাহলেও মানা যেতো কিন্তু উনি দাদী-শাশুড়ি হয়ে এই কাজগুলো করছে।আমি চাই তুমি শক্ত থাকবে।প্রতিবাদ করে নিজের স্থান দেখিয়ে দিবে।ভয় পাবেনা আমি তোমার সাথে আছি।”
পুষ্প হা করে তার শাশুড়ীর কথাগুলো শুনে।রাবেয়া পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি ভাবছো আমি শাশুড়ী হয়ে কিভাবে এসব শিখিয়ে দিচ্ছি?শিখাচ্ছি কারণ তুমি আমার কাছে আমার ছেলের-বউ না তুমি আমার মেয়ে।আমি চাইনা আমার মেয়ে কারো কথায় ক/ষ্ট পেয়ে লুকিয়ে কাঁদুক।”
পুষ্পর চোখ বেয়ে পানি পড়ে।মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে এমন ভালো শাশুড়ী তার কপালে রাখার জন্য।
শিমুল ঘুম থেকে উঠে।বাহিরে এসে পুষ্পর কাছে দাঁড়ায়।রাবেয়া ছেলেকে দেখে ইশারায় পাশে বসতে বলে।শিমুল কাছে আসলে পলাশের ব্যাপারে সব সংক্ষিপ্ত আকারে বলে।শিমুল অবাক হয়ে বলে,
“এতোকিছু ঘটে গেছে আর তুমি আমাকে এতোক্ষণে জানাচ্ছো?”
রাবেয়া ছেলের মুখের দিকে তাকায়।
“রাতেই জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু এতোরাত বলে ডাকিনি।”
“এতোরাত তো কি হয়েছে ডাকা যায় না।আমার ভাই এতো বি/পদে আর আমি কিনা বাড়িতে বসে আছি?”
শিমুল দ্রুত পায়ে রুমে যায়।পলাশ তার যে উপকার করেছে এটা শোধ করার মতো না।আর আজকে পলাশই কিনা বি/পদে পড়ে আছে।শিমুল তিয়াসকে ফোন করে কাপড় বদলে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সকাল আটটার দিকে নিধির ঘুম ভাঙে।পলাশ নিধির কপালে হাত ছুঁয়িয়ে বলে,
“কেমন লাগছে নিধি?”
নিধি মাথা নেড়ে বললো,
“ভালো।”
“কিছু খাবে?বলো এনে দেই।”
নিধি কিছুক্ষণ পলাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার যে ছেলেটার সাথে বিয়ে ঠিক হয় পারিবারিক সমস্যার কারনে উনি হঠাৎ করেই না করে দেয়।আব্বা ভীষন ভে/ঙে পড়ে।আমি অবশ্য খুশী ছিলাম।কিন্তু আমার খুশী বেশিক্ষণ টিকলো না।তোমার আব্বা উনার এক সহযোগীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে দেয়।কৌশলে আব্বাকে ট্রান্সফার করে অন্য জেলায় পাঠায়।বিয়ে ঠিক হবার পরে আব্বা জানতে পারে লোকটা ইয়া/বার সাথে যুক্ত।আশেপাশের এলাকায় উনিই ইয়া/বা সাপ্লাই দেয়।আব্বা বিয়ে দেবেনা নাকোচ করে দেয়।এটা শুনে তোমার আব্বা স/ন্ত্রা/স নিয়ে আমাদের বাসায় যায়।আমার আব্বা আম্মা তো ভ/য়ে শেষ।আব্বা সাহস করে জানায় উনি মেয়ে বিয়ে দিবেনা।তোমার আব্বা আমার আম্মা আব্বাকে অনেক হু/মকি দেয়।কিন্তু তাও যখন রাজী হচ্ছিলো না তখন উনি হু/মকি দিয়ে বলে,
‘নিধি যদি ফের পলাশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাহলে তিনি উনাদের মেরে ফেলতে একবারো ভাববেন না।’
আমার আম্মা আব্বার জীবনের সংকট দেখে আমি রাজী হয়ে জানাই আর কখনোই কথা বলার চেষ্টা করবো না।উনি দলবল নিয়ে আবার চলে আসে।কিন্তু আমি তো তোমাকে ভুলতে পারিনা।অর্ধ পা/গল হয়ে গিয়েছিলাম।বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নেই।কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন আব্বা অফিস থেকে আসার পথে রাস্তায় এক্সি/ডেন্ট করে মা/রা যায়।আমি আর আম্মা অসহায় হয়ে পড়ি।আব্বার কথা ভেবে আম্মা সারাদিন কাঁদতো।একদিন সকালে উঠে দেখি আম্মা ঘুমেই চলে গেছে।এই এতো-বড়ো দুনিয়ায় আমি একা হয়ে পড়ি।কিভাবে কি করবো যখন রাস্তা পাচ্ছিলাম না তখনি আমার নানা উনার কাছে আমাকে নিয়ে যায়।উনার কাছ থেকেই লেখাপড়া শেষ করি।তুমি মনে বাসা বেধে থাকলেও আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অপেক্ষায় ছিলাম।এখন তো আব্বা আম্মাও নেই কাউকে হা/রানোর ভ/য় নেই তাই তোমার সানিধ্যে এসেছিলাম তোমাকে দেখবো বলে।ভেবেছিলাম বিয়ে করে ফেলেছো কিন্তু আমাকে ভুল প্রমানিত করে তুমিও আমার মতোই আশায় আছো।কিন্তু তোমার আব্বা তো আমাকে ছাড়লেন না,ঠিক আমাকে ছিড়ে খাওয়ার জন্য কুকুর পাঠিয়ে দিলেন।উনি আসলে আমাকে বাঁ/চতে দিবে না।”
নিধি থামে।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে।চোখের পানিতে গাল ভিজে যাচ্ছে।পলাশ হতভম্ব হয়ে বসে আছে।তার অগোচরে তার আব্বা এতো কাহিনী ঘটিয়ে ফেলেছে?অথচ সে জানেই না?আবারো নিজের উপর নিজের রাগ হয়।নিধির ভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বিয়ে করবে আমায়?”
নিধি চোখ খুলে পলাশকে দেখে।দুর্বল হাতে পলাশের চুলে হাত রেখে বললো,
“মেয়েদের সবচেয়ে দামী জিনিস হলো তার সম্মান।তোমার কাছে আসার অপ/রাধে যদি তোমার আব্বা আমার সম্মান ছিনিয়ে নিতে একবার না ভাবে যদি বিয়ে করি তাহলে জ/বাই করতে সেকেন্ডও ভাববে না।”
পলাশ আজকে যদি চুপ থাকে তাহলে নিধিকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবে।নিধির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুড়ে বললো,
“হেটে যেতে পারবে?নাকি কোলে করে নিবো?”
নিধি অবাক হয়ে বললো,
“কোথায়?”
“কাজী অফিসে।”
“আমি কি বলেছি বিয়ে করবো?”
“না।”
“তাহলে?”
পলাশ নিধির হাতের উল্টোপিঠে চুমু দিয়ে বললো,
“আজকে সব আমার কথায় হবে।আর পু/ড়/তে চাই না।এখন থেকে যে বাধা হয়ে আসবে তাকেই পু/ড়িয়ে দেবো।”
শিমুল আর তিয়াস ব্যস্ত পায়ে পলাশের কাছে এসে দাঁড়ায়।নিধির দিকে তাকিয়ে আলতো হাসে।শিমুলকে দেখে পলাশ হাসে।সে জানতো তার ভাই তাকে ঠিক খুঁজে বের করে নিবে।
“নে চাবি।নিধির বাসায় বিয়ের ব্যবস্থা কর।কিছুক্ষণ পরে আমি আর নিধি আসছি।”
শিমুল চুপচাপ চাবি নিয়ে বেরিয়ে আসে।তার ভাই বিয়ে করবে!সে আর তিয়াস যতো দ্রুত সম্ভব বিয়ের আয়োজন করে।বিকাল চারটা নাগাদ পলাশ আর নিধির বিয়ে হয়।পলাশ শিমুলকে বলে তার প্রয়োজনীয় সব কিছু এই বাসায় পাঠিয়ে দিতে,ওই বাসায় আর যাবেনা।শিমুল চলে গেলে পলাশ নিধির রুমে আসে।শিমুল আর তিয়াস এই অল্প সময়েই বাসাটা গুছিয়ে ফেলেছে,এমনকি বিছানায় ফুলের সমাহার দেখা যাচ্ছে।এই বিপদের মাঝেও ছেলেগুলো বাসর ঘর নিয়ে কতো সিরিয়াস!পলাশ বাসর ঘরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।নিধি ড্রেসিংটেবিলের সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার হাতে কালকের ছিড়া জামাটা পলাশের দিকে এগিয়ে বললো,
“এই ছেড়া জামাটা বদলে দিয়েছে কে?”
পলাশ হাত দিয়ে মাথা চুলকে বললো,
“কে আবার?আমি।”
নিধি বুকে হাত দিয়ে বললো,
“তুমি!”
“হ্যাঁ।”
নিধি আস্তে করে বললো,
“সব দেখে নিয়েছো?”
পলাশ এগিয়ে আসে।নিধি দিকে তাকিয়ে বলে,
“তখন তো হারিয়ে ফেলার ভ/য়ে কাঁদছিলাম এসব খেয়াল করার সময় ছিলো নাকি?তবে আজকে ভালো করে দেখে নিবো।”
পলাশের কথায় নিধি আতৎকে উঠে।
“মানে?”
পলাশ নিধির কোমড়ে নিজের দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে কাছে টেনে বললো,
“বিছানার দিকে তাকাও।”
নিধি বিছানার দিকে তাকায় না।সে তো দেখেছেই শিমুল ভাই তাদের বাসর সাজিয়েছে।নিধি তার দু’হাত দিয়ে পলাশের গলা আঁকড়ে ধরে।
“বিছানা দেখেছি।”
“আমার ভাই এতো কষ্ট করে বাসর ঘর সাজিয়েছে আমি বড়ো ভাই হয়ে কিভাবে তার অবমূল্যায়ন করি?ভাবছি কাজে লাগাবো।”
লজ্জায় নিধির নাকটা কেঁপে ওঠে।আস্তে করে বললো,
“তুমি না শিক্ষক মানুষ।শিক্ষকদের ভদ্র হতে হয়।”
“আজকে অ/ভদ্র হয়েই নাহয় ক্লাস নিবো।কি তুমি ক্লাস করবে তো?”
নিধি পলাশের চোখের দিকে তাকায়।লজ্জামাখা হাসি দিয়ে পলাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।পলাশ নিধির কানে ফিসফিস করে বললো,
“আজকে যদি একটুও অভদ্র না হই তাহলে এই জীবন বৃথা।”
পলাশ মাথা নিচু করে নিধির কানের লতিতে ভেজা স্পর্শ দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“নিধি..”
নিধি মাথা তুলে পলাশের দিকে তাকায়।পলাশ নিধির কানে ফিসফিস করে বললো,
“আজকে আমি মা/তাল হয়ে গেলে কি তুমি মাইন্ড করবে?”
চলবে…..
#শিমুল_ফুল
#৩৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
শওকত হাওলাদার হনহনিয়ে বাড়ির ভেতরে আসে।শিমুল তখন তার আম্মার কাছে বিস্তারিত বলছে।রাবেয়া পলাশের এমন সিদ্ধান্তে ভীষণ খুশী হয়েছেন।পলাশ তার আব্বাকে সম্মান দিয়েছে তার আব্বার মনের দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছাকে ত্যাগ করেছে কিন্তু শওকত হাওলাদার সেই সম্মান পাবার মানুষ না।নিধির সাথে হওয়া ঘটনা শুনার পর থেকে রাবেয়ার মনে ঘৃণার পরিমাণ বাড়ছে।লোকটা কতোটা নিকৃষ্ট একটা মেয়ের ইজ্জত হরণ করতে লোক পাঠালো?পলাশ ঠিক কাজ করেছে।বিয়ে করে উনাকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে।আবেগে চোখে পানি চিকচিক করে উঠে।শিমুলকে বলে,
“আব্বা কালকে আমাকে পলাশের বাসায় নিয়ে যাবি?বউমাকে আমি মন ভরে দেখবো।”
শিমুল হাওলাদার পিছনে দাঁড়িয়ে কড়কড় করে বললো,
“হ্যাঁ!খুব রঙে আছিস তো!তুই যেমন তোর পেটে থেকে আসছেও এমন।”
হঠাৎ স্বামীর কন্ঠস্বর শুনে রাবেয়া ভয়ে কেঁপে ওঠে।শিমুল,পুষ্প,রাবেয়া চুপ হয়ে বসে থাকে।চেচামেচি শুনে পেশকারা আর আসমা বেড়িয়ে আসে,পলাশ বিয়ে করেছে এটা শুনার পর থেকেই তারা অবাক!শান্ত ছেলের নিচে যে এতো গুন কে জানতো!শওকত হাওলাদার রাবেয়ার কাছে এসে দাঁড়ায়।
“শুনেছিস তোর ছেলে কি করেছে?”
উনাকে দেখেই রাবেয়ার মনটা ঘৃণায় রি রি করে উঠে।হঠাৎ করেই মন থেকে স্বামী নামের ভয় দূর হয়ে যায়।বুকে সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে,
“কি করেছে?বিয়েই তো করেছে।পলাশের বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে সেই কবে।কোন ঝামেলা ছাড়াই বিয়ে করে ফেলেছে ভালোই তো হলো।”
রাবেয়ার তেজী গলার উত্তর শুনে সবাই অবাক।চিরকাল স্বামী-ভক্তি করা রাবেয়া কখনো উঁচুস্বরে কথা বলেনি সেই রাবেয়াই কিনা এভাবে কথা বলছে?শওকত হাওলাদার চোয়াল শক্ত করে চোখ পাকিয়ে রাবেয়ার দিকে তাকায়।
“ভালো করেছে?”
“হ্যাঁ।”
“আসলে দোষ তোর পেটের।একটা ছেলেও ভালো হলো না।”
রাবেয়া কথা বলেনা।শিমুল বলে,
“আব্বা বিয়ে তো হয়ে গেছে এখন আর রাগারাগি করে লাভ কি?মাথা ঠান্ডা করেন সবাই মিলে ভাইয়া ভাবীকে বাড়িতে নিয়ে আসি।”
শওকত হাওলাদার কিছু বলার আগে মজিব হাওলাদার খ্যাকখ্যাক করে বললো,
“কিসের বাড়িতে আনাআনি?বিয়ে করে সংসার করতে গেছে যাক।ওর মতো পোলা বাড়িতে না আসলে বা**ছিড়া যাবে।”
পেশকারা সাথে সুর মিলায়।
“ঠিক বলছেন।কয়দিন মজা খেয়ে আসুক।”
রাবেয়া তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে।পলাশ আর নিধি দুজনেই সরকারী কলেজে চাকরী করে।যা বেতন পায় এতে দুজনের খুব ভালোই চলবে এটা শুধু রাবেয়া না উপস্থিত সবাই জানে।
“আপনাদের বাড়িতে না আসলেও পলাশ বউ পালতে পারবে।”
শওকত হাওলাদার হাত মুঠোয় পাঞ্জাবি খাঁমচে ধরে।স্ত্রীর মুখের চটাং চটাং কথা সহ্য হয় না।
“এতো হে*ডাম তোর পোলার?”
“আপনি কি মানুষ!একটা মেয়ের সম্মান লুট করার জন্য কিভাবে আদেশ দিতে পারেন?ল/জ্জা করলো না?”
রাবেয়ার কথা শুনে শওকত হাওলাদার কিছুটা নিভে যায়।সে রকিবকে বলেছিলো নিধি একা বাসায় থাকে ছু//ড়ি দেখিয়ে হু//মকি ধা/মকি দিয়ে আসতে,আর একটু গায়ে হাত দিয়ে সম্মানের ভ/য় দেখাতে যেনো এই এলাকা ছেড়ে চলে যায় কিন্তু কে জানতো এই নে/শা/খোর যে নিধির উপর ঝাপিয়ে পড়ে এমন কাজ করতে চাইবে?সবার সামনে কি বলবে ভেবে পেলো না।
“চুপ করো।সব ব্যাপারে নাক গলাও কেন?”
রাবেয়া শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।পেশকারা আ/গুনে ঘি ঢালে শওকত হাওলাদারকে শুনিয়ে বলে,
“এই মহিলাটার জন্যই আজকে সংসারের এই অবস্থা।ছেলেদের লাই দিয়েই এমন ব/দমা/ইশ বানিয়েছে।আর বানাবে না কেন নিজেই তো আস্ত একটা ব/দমা/ইশ।”
শিমুল তেড়ে পেশকারার কাছে যায়।
“কি বলছো মাথা ঠিক আছে?আমারে চোখে পড়েনা?জিহব্বাটা টান দিয়ে হাতে ধরাই দেবো।সারাজীবন আমার মা’কে জ্বা/লিয়েছো।কু/টনী বুড়ী।এতো চুল/কানী তোমার গলায়!”
পেশকারা হা/য়হা/য় করে উঠে।শওকতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আব্বা দেখলি কি বলে আমাকে?এই দিন দেখার জন্যই তোরে পেটে নিয়েছিলাম?”
শওকত হাওলাদার ধমকে বলে,
“বুবুর সাথে এভাবে কথা বলিস কেন?বিয়ে করে বেশী আদব-কায়দা শিখে গেছিস নাকি?”
শিমুল শওকত হাওলাদারের কথা পাত্তা দেয় না।পেশকারার দিকে আ/গুন চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমার মাকে কথা বলার আগে ভেবে বলবে।ঠিক আছে?”
পলাশের এমন কান্ডে এমনিতেই মাথা গ/রম হয়ে ছিলো এখন শিমুলের কথা শুনে শওকত হাওলাদার নিজেকে আর সামলাতে পারে না।সব রা/গ রাবেয়ার উপর ঢালে।রাবেয়ার দুই গালে দুই থা/প্পড় দিয়ে বলে,
“তোর মারে থা/প্পড় দিলাম কি করবি?”
হঠাৎ করে আ/ঘাত করায় রাবেয়া নিজেকে সামলাতে পারে না।দু’পা পিছিয়ে গিয়ে সোফায় পড়ে যায়।শিমুল রা/গী চোখে তার আব্বাকে দেখে বলে,
“আপনি তো একটা কা/পুরুষ।যে প্রতিপক্ষের সাথে না পেরে মহিলাদের উপর অ/ত্যা/চার করেন।”
“মুখ সামলিয়ে কথা বল।বেয়া/দব।”
“কথায় কথায় মা’কে মা/রেন কেন?মানুষ মনে হয়না?”
শওকত হাওলাদার তেড়ে শিমুলের কাছে আসতে চাইলে মজিব হাওলাদার আটকায়।ঠেলে বাহিরে নিতে চায়।শিমুল পুষ্পকে বলে রাবেয়াকে রুমে নিয়ে যেতে।তারপর লম্বা পা ফেলে ছাদে চলে যায়।এমন নি/কৃ/ষ্ট একটা মানুষ তার আব্বা এটা ভাবতেই খা/রাপ লাগে।
হাওলাদার বাড়ির রাতের পরিবেশ হলো থমথমে।রাবেয়ার মাথা ব্যা/থা শুরু হয়েছে বিধায় সে রুম থেকে বেরোয়নি।পুষ্প ভাত খাওয়ার জন্য ডেকে এসেছে উনি বলেছে ব্যা/থা কমলে পড়ে খাবে।পুষ্প দুরুদুরু বুকে রান্নাঘরে আসে।রাবেয়া বেগম আশেপাশে থাকলে মনে আলাদা জোড় পান।উনি অনুপস্থিত বিধায় সবার কটু কথা শোনার ভ/য়ে পুষ্পর গলা শুকিয়ে আসে।যদিও রাবেয়া বলেছে চুপচাপ যেনো এসব কথা না শুনে।কিন্তু পুষ্প যানে সে একটা কথা তর্ক দিলেই এটা আগু/নের মতো সারা বাড়িতে অশান্তি ছড়িয়ে দিবে।শিমুল যদি শুনতে পায় পুষ্পর সাথে কারাও ঝা/মেলা তাহলে শিমুল বিপক্ষকে কথা না শুনিয়ে ছাড়বে না এতে করেও পরিবারে তুমুল অ/শান্তি হবে।পুষ্প এসব চায় না সে শান্তিতে সংসার করতে চায়।এমনিতেই সবাই মুখে মুখে বলে প্রেম করে বিয়ে করেছে।এই মেয়েগুলা ভালো হয় না ভালোমেয়ে তো প্রেম করেনা!পেশকারা তো উঠতে বসতে খোটা দেয়।তাই পুষ্প ঠিক করে সে মানিয়ে চলবে,একটু কষ্ট হোক কিন্তু দেখিয়ে দিবে প্রেম করলেই মেয়েরা খা/রাপ হয় না।পেশকারা খাবার টেবিলে পুষ্পকে হাজারটা খুত ধরে।শিমুল তখনো ছাদে ছিলো বিধায় কোনো ঝামেলা হয় না।পুষ্পও চুপচাপ সব শুনে।খাবার খাওয়ার পরে শশুড়ের জন্য চা বানায়।কাপে ঢালছে এমন সময় সুইটি পেছন থেকে যাওয়ার পথে পুষ্পর গায়ে ধা/ক্কা দেয়।চুলা থেকে নামানো চা বাম হাতে পড়ে মূহুর্তেই চামড়া লাল হয়ে যায়।পুষ্পর হাত থেকে চায়ের পাতিল সশ্বব্দে পড়ে যায়।ফুলি দৌড়ে এসে বলে,
“সুইটি আফা আফনে ইচ্চা কইরা ধাক্কা দিছেন তাই না?”
সুইটি অবাক হয়ে বললো,
“আমিতো তেল গরম করতে যাচ্ছিলাম মাথায় দিবো বলে।পাটকাঠির মতো শরীর লাগলেই যে পড়ে যাবে কে জানতো?”
পুষ্পর হাতে ততক্ষণে ফুসকা পড়ে গেছে।ফুলি তার গলা ছেড়ে চেচিয়ে শিমুলকে ডাকে।সুইটি ফাক দিয়ে পালায়।তার তো ইচ্ছা করছিলো এক পাতিল পানি গরম করে পুষ্পর মাথায় ঢেলে দিতে।যা করেছে তাও কম না।মনটা কেমন শান্তি লাগছে সুইটি তার ইউকার্ট চুলগুলো দুলাতে দুলাতে রুমে চলে যায়।নিচে চেচামেচি শুনে শিমুল ছাদ থেকে দৌড়ে নেমে আসে।রান্নাঘরে দেখে পুষ্প বেসিংয়ের কলে হাত ধরে মুখ কুচকে রেখেছে।শিমুল এগিয়ে বললো,
“কি হয়েছে?”
ফুলি শিমুলকে দেখে বললো,
“সুইটি আফায় তেল গরম করার বাহানায় ভাবীর হাতে চা ফালাইছে।ঠুয়া পইরা কি হইছে দেহেন।”
শিমুল পুষ্পর হাত ধরে দেখে।তারপর হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়।রুমে খাটে বসিয়ে সরিষার তেল আনে।শান্ত গলায় বলে,
“হাতে গরম কিছু পড়লে পানি দিবে না।সরিষার তেল দিবে একটু জ্ব/লবে কিন্তু এই ফোস্কা পড়বে না।আম্মাকে দেখতাম এভাবেই দেয়।”
তারপর পুষ্পর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফু দেয়।আস্তে করে বললো,
“বেশী জ্ব/লছে?”
শিমুলের আদুরে কথা শুনে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।শিমুল পুষ্পর চোখের পানি মুছে বললো,
“বাড়িতে লম্বা চুলের মানুষ বেশী হয়ে গেছে।তাই না বউ?”
পুষ্প শিমুলের কথার অর্থ বুঝে না ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। শিমুল পুষ্পর চাহনীর অর্থ বুঝে মুচকি হাসে।আবার মাথা নিচু করে পুষ্পর হাতে ফু দেয়।
“বার্ন অয়েনমেন্ট এনে দিচ্ছি।লাগালে জ্বা/লা কমবে।”
নিধি চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে।পলাশ যে এতো দুষ্টু সে এটা কখনোই ভাবেনি।শান্ত স্বভাবের পলাশ যে বুকে এতো ভালোবাসা নিয়ে ঘুরেছে কে জানতো!পলাশকে দেখলে কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা কিছুক্ষন আগে এই পলাশই কালবৈশাখী তা/ন্ডব বইয়ে দিয়েছে।আদরে আদরে নিধিকে পা/গল করে তবেই ক্ষান্ত দিয়েছে।প্রত্যেক মানুষই বোধহয় নিজেকে প্রকাশ করার জন্য একজন ব্যক্তিগত মানুষ খুঁজে যার কাছে নিজেকে যেকোনো ভাবেই উপস্থাপন করা যায় কোনো দ্বিধা কাজ করেনা।মনের ভেতরে লুকায়িত রুপে প্রিয় মানুষের সামনে আসতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।নিধি পলাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে যদি এই পাগ/লটাকে জীবনে না পেতো?সারাজীবন হাহাকার নিয়েই কাটাতে হতো।পলাশের এমন উচ্ছলতা দেখতেই পেতো না।পলাশ যে এমন উচ্ছল এটা কখনোই কেউ জানবে না জানবে শুধু নিধি।কিছু কিছু ব্যাপার আছে শুধু প্রিয় মানুষদের জানার অধিকার থাকে।নিধি পলাশের দিকে তাকায়।পলাশ তাকেই দেখছে।নিধি তাকানোতে মিষ্টি করে হাসে।নিধিও হাসে।পলাশ নিধির নরম শরীর আবার নিজের দিকে টেনে নেয়।নিধির গায়ের সাথে নাক ছুঁয়িয়ে নিধির গায়ের ঘ্রান নেয়।নিধির নিজস্ব ঘ্রানটা পলাশকে নড়েবড়ে করে দেয়,বুকের ধুকপুকানি মূহুর্তেই বেড়ে যায়।নিধিকে বুকে নিয়ে মনে হলো আজকে নিজেকে খুব হালকা লাগছে,মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে।জন্ম উপোস দেহে আকাশছোঁয়া সর্গীয় সুখের দেখা পেয়ে পলাশ নিজেই পাগল হয়ে গেছে সাথে সমানতালে নিধিকে পাগল করতে কোনো কার্পন্য করেনি।নিধির কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয়।আলতো গলায় বলে,
“ধন্যবাদ সোনা!”
পলাশের ধন্যবাদের কারন খুঁজতে বুদ্ধিমান নিধির বেশীক্ষণ লাগলো না।প্রতিউত্তরে মুচকি হাসি উপহার দিলো।দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ।হঠাৎ পলাশ দুষ্টু হেসে বললো,
“নিধি?”
নিধি পলাশের বুকে নাক ঘষে।পলাশের মুখে নাম শুনে তার দিকে তাকায়।
“বাসর ঘর তো যেমনেরটা তেমনি আছে।”
“হুম।”
“কি বাসর হলো যে দুই একটা ফুলও ছিড়লো না।নট গুড!”
নিধি ফিক করে হেসে বললো,
“ফুল ছিড়তে হয় নাকি?”
“হ্যাঁ।না ছিড়লে তো বাসর ঘরের সব স্টেপ পূরণ হয় না।”
“আচ্ছা!এমন কথা কই লিখা আছে?”
“বাংলা সিনেমায় দেখেছিলাম বাসর হলে ফুলটুল ছিড়ে একাকার অবস্থা হয়ে যায়।”
নিধি পলাশের কথা শুনে আবারো হাসে।পলাশ নিধির হাসি দেখে বললো,
“হাসো কেনো?আমার ভাইয়ের টাকায় ফুল কিনে ভাইটা এতো কষ্ট করে সাজিয়ে দিয়েছে ফুল ছিড়ে টিরে বাসর রাত পার না করলে তো টাকা উশুল হবে না।”
“তাই নাকি?”
পলাশ একগাল হেসে বললো,
“হ্যাঁ।এককাজ করি চলো।”
“কি?”
“এবার সব ফুল ছিড়ে বাসর করে টাকা উশুল করি।”
নিধি পলাশকে ঠেলে উঠে পড়ে।শিক্ষকের হাবভাব মোটেই সুবিধা না।আবারো ক্লাস নিতে চলে আসবে।বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
“রাতে কি খাবো?অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।”
পলাশ পাশ ফিরে নিধিকে দেখে।অবাক হওয়ার বান করে বললো,
“খাবারও খেতে হবে?চুমু খেলে চলবে না?”
নিধি কিছু বলেনা।হাসতে হাসতে দরজা বন্ধ করে।পলাশ চোখ বন্ধ করে বাড়ির অবস্থা ভাবে।বাড়িতে যে আজকে সুনামী হবে এটা জানা কথা।একবার ভাবে শিমুলকে ফোন দিবে আবার ভাবে না আজকে নিধিই মনে থাকুক।বাড়িতে যা হয় শিমুল সামলাবে।
পলাশ ভাত মাখিয়ে নিধির মুখের সামনে ধরে নিধি মাথা নাড়িয়ে বললো,
“বাব্বাহ।এতো খাতির কেন স্যার।”
পলাশ মুচকি হাসে।
“যে আমার সুখের পাখি তার যত্ন নিতে দোষ কী?”
নিধি উত্তর দেয় না।চুপচাপ ভাত খায়।সুখে চোখে পানি আসে।মনে মনে ভাবে কোন দোষ নেই স্যার।এভাবেই যত্ন নিন।আমি যে আপনার ভালোবাসার কাতরপাখি।প্লিজ বেশি বেশি ভালোবাসুন।পলাশ নিধির চোখে চিকচিক পানি দেখে কি বুঝলো কে জানে।নিধির চোখে তাকিয়ে বললো,
“খুব ভালোবাসবো সোনা।তোমার কল্পনার থেকেও বেশী।”
চলবে…….