জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর পর্ব- ১৪+১৫

0
470

#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
পর্ব- ১৪+১৫
#লেখিকা: #Kaynat_Ash

এরপর কিছুক্ষণ নীরবতার পর আমান বলল “এই এত বছরে তোমার যে পরিবর্তনটা খেয়াল করিনি, তা হচ্ছে, তুমি খুব সুন্দর করে কথা বলা শিখে গিয়েছ।”

হেসে আইজা বলল “আমার তেমন কোন পরিবর্তনই হয়নি। এটাও একটা অযথা অভিযোগ তোমার, যা তুমি সবসময়ই করে থাকো যে আমি বদলে গিয়েছি।

আর এই সুন্দর করে কথা বলাটা-ও সবার সামনে বলতে পারি না। জানি না, তোমার কাছে আজ কীভাবে এত সুন্দর করে বলে ফেললাম। আজ আমার আল্লাহ আমার উপর একটু বেশিই মেহেরবান মনে হচ্ছে।”

আমান বলল “আর আমার উপরও। যাই হোক, আগামীকাল সকালে নাকি তোমার ক্লাস আছে, ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”

আইজা বলল “হ্যাঁ। আর সাথে তোমারও নিশ্চয়ই আছে। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো।”

আমান বলল “তোমার মিথ্যা খুশির জন্য আমিও মিথ্যে বলতে পারব না। এখনই আমি ঘুমাচ্ছি না।ইন ফ্যাক্ট, বন্ধুদের সাথে সারা রাত আড্ডা দেয়ার প্ল্যান আছে।”

আইজা বলল “বাহ আমান, তোমার মত সত্যবাদী প্রেমিক যদি আর দুই চারটা থাকত যে এভাবে তার প্রেমিকাকে এসব শুনাবে, তবে পৃথিবীতে আর একটি সম্পর্কও টিকে থাকত না।
যাই হোক, যা খুশি তুমি তুমি করো।
আর আমাকে অন্তত ঘুমাতে দাও। খোদা হাফেজ।”

এই বলে আইজা কল কাট করে দিল। এরপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

.
.
.

পরদিন ক্লাস করার পর সে আর রিতা ক্যান্টিনে বসে কথা বলছিল।

সে সময় আমান তিথি আর তাদের বেশ কিছু ফ্রেন্ডস এসে ক্যান্টিনে প্রবেশ করে। আইজা আমানকে দেখেও না দেখার ভান করে রিতার সাথে কথা বলতে লাগলো। সে মোটেও চাচ্ছিল না আমান সবার সামনে তার সাথে কথা বলুক। আর এটা তো একদমই না যে কেউ তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়।

ছোটবেলার বোঝাপড়ার জন্য কিনা আইজা জানে না তবে হয়ত আমানও আইজার মনে কি চলে, তা বুঝতে পারে।

সে আইজার টেবিলের খুব কাছের একটি টেবিলে গিয়ে বসল। আইজার সাথে কোন কথাও বলে নি।

তবে আইজাকে শুনিয়ে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো “আচ্ছা, তোদের কারো গার্লফ্রেন্ড যদি তোদের জীবনের বিশেষ একটি দিন ভুলে যায়, তাহলে তোরা কি করবি?”

আনিস বলল “প্রথমত মেয়েরা এসব তারিখের ব্যাপারে ভালবাসার মানুষের চেয়ে বেশি যত্নবান, সুতরাং তারিখ তারা ভুলবে না। আর যদি কোন মেয়ে ভুলে যায়, তাহলে তার সিরিয়াস কোন সমস্যা আছে। এমন মেয়েকে তো আমি ছেড়েই দিতাম।”

আনিসের জোকস শুনে তারা সবাই হেসে উঠল। কিন্তু আইজার খুব মেজাজ খারাপ হয়েছে এই ছেলের উপর। মনে হয়েছে যেন জন্মগত শয়তান একটা।

আনিসের উদ্দেশ্যে তাদের আরেক বন্ধু মিরাজ বলল “এই ছোট কারণে তুই তোর প্রেমিকাকে ছেড়ে দিবি, কোন হতভাগী জানি হয় তোর প্রেমিকা।” তখন আরেক দফা হাসাহাসি শুরু হলো।

এসব অর্থহীন হাসাহাসি শুনে আইজার মেজাজ খুব খারাপ হতে লাগল। সে তার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল “রিতা, আমি একটু লাইব্রেরী ঘুরে দেখব। সুতরাং এখন আমার যেতে হচ্ছে। তুমি খাবার শেষ করে এসো।”

রিতা বলল “তুমিও খাবার শেষ করে উঠো, তুমি তো তেমন কিছুই খাও নি।”

আইজা বলল “আমি পরে কিছু খেয়ে নিব।”
এই বলে আর কোন কথা শুনার অপেক্ষা না করে সে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে গেল।

হাঁটতে হাঁটতে সে ভাবতে লাগলো যে আমান ক্যান্টিনে এমন কথা কেন বলছিল! আজ তার জীবনের বিশেষ কোন্ দিন, যা আইজার মনে নেই। বার্থডে তো না। তার বার্থ ডেট আইজার ভালোভাবে মনে আছে। তবে?

লাইব্রেরীতে পৌঁছে পাশে ব্যাগ রেখে একটা বই নিয়ে বসে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল সে। কিন্তু তার মন এখন শুধু একটা জিনিসের উত্তর-ই খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার মনে পড়ল, আজকের দিনেই সে তার মায়ের সাথে আমানের শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল।

আইজা টেবিলে কনুই রেখে কপাল আলতো করে স্পর্শ করে চিন্তিত মুখে ভাবতে লাগলো, আমান এই দিনটি আজও এভাবে স্মরণীয় করে রেখে দিয়েছে কেন নিজের জীবনে!”

এরপর লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে ফোন হাতে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে যে, করবে নাকি করবে না, অবশেষে সে আমানকে কল করে ফোন কানে ধরে অপেক্ষা করতে লাগলো কল রিসিভ হওয়ার।

আমান আর তার বন্ধুরা তখনও ক্যান্টিনে। সে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি ঠোঁটে টেনে, ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোন রেখে দিল। ফোন কিছুক্ষণ বেজে এরপর কেটে গেল।

আইজা ফোন হাতে আবারও লাইব্রেরীতে এসে বসলো।

কিছুক্ষণ পর আইজার ফোন বেজে উঠে। আইজা জানে, তাকে বিরক্ত করার জন্যই আমান এসব করে।

সে ফোন হাতে আবারও লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে এলো, এরপর কল রিসিভ করে বলল “আমান, তোমাকে কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, রিসিভ করছ না কেন?! যাই হোক, তোমার সাথে দেখা করতে চাই, আজ বিকেলে ফ্রি আছো?”

পর্ব_১৫

আমান বলল “আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উদিত হয়েছে, নিজ থেকে দেখা করতে চাইছ!”

আইজা বলল “আমান প্লিজ!”
এরপর একটু দম নিয়ে বলল “তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। যদি দেখা করতে পারো, ভালো হত।”

আমান বলল “আজ দেখা করার এত শখ হচ্ছে; এমনিতেই, নাকি বিশেষ কোন কারণে, ভুলে যাওয়া কিছু বা কাউকে মনে পড়ে গিয়েছে!”

আইজা আমানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না।

সে কনফিউজড হয়ে একটু উত্তেজিত হয়ে বলল “দেখা করতে পারবে কিনা তাই বলো। অযথা এত কথা কেন বলতে হচ্ছে তোমার?!”

আমান বলল “সরি, বিকেলে ব্যস্ত থাকব‌। আমরা সব বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করেছি, আজ নতুন এই শহর ঘুরে দেখব। নতুন এসব শহরের প্রতি এমনিতেও আমার পুরোনো একটি হিসাবনিকাশ আছে। আই মিন, আমিও জানতে চাই, নতুন এসব শহরে এমন কি আছে যে মানুষ পুরোনো মানুষগুলোর মনের কথা বুঝা তো দূরের কথা, তাদের মুখে বলা কথার গভীরতা পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারে না।”

আইজা মাথা নেড়ে বলল “আমান, এভাবে বলছো কেন?! আমি এই বিষয়েই কথা বলার জন্য দেখা করতে চাচ্ছিলাম। তুমি বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে এত কমপ্লেইন করো কেন!
তুমি দেখা করতে চাইছো না তো। তবে ঠিক আছে, বেড়াও তুমি তোমার বন্ধুদের সাথে। আমি তাহলে রাখি এখন।”
এই বলে আইজা কল কাট করে দেয়।

.
.
.

আমানের বন্ধুরা তাকে জিজ্ঞেস করে যে ফোনে কে ছিল। আমান সরাসরি উত্তর দেয় “গার্লফ্রেন্ড।”

এই কথা শুনে তার সব বন্ধুরা বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, আর বান্ধবীদের, সবগুলোর মন খারাপ। তবে সেখানে উপস্থিত বেশিরভাগই তার কথা বিশ্বাস করল না।

আনিস বলল “কে সেই সৌভাগ্যবতী? আমাদের ভার্সিটির কেউ নাকি! আর দেখা কবে করাচ্ছিস?”

আমানের সোজাসুজি উত্তর “আমাদের বিয়ের দিন।”

এই বলে আমান চেয়ার থেকে উঠে সেখান থেকে চলে গেল।

.
.
.

বিকেলের দিকে আমানের সব বন্ধুরা মিলে ঘুরতে বের হলো ঠিকই, কিন্তু সে যায় নি তাদের সাথে।

আমান আইজার হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কল করে তাকে।

কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হলো, আইজা বলল “হ্যাঁ, বলো। কি হয়েছে?”

আমান বলল “তুমি কি হোস্টেলে?”

আইজা বলল “না, একটু বের হয়েছিলাম। হোস্টেলে বোর হচ্ছিলাম, তাই আমিও ভাবলাম বন্ধুদের সাথে একটু বেরিয়ে আসা যাক।

এছাড়া তুমিও নিশ্চয়ই ইনজয় করছ খুব, বন্ধুদের সাথে!”

আমান গম্ভীর স্বরে বলল “কার সাথে বের হয়েছ?”

আইজা বলল “আমি, রিতা, হৃদয় আর সায়মা।”

আমান বলল “সেই হৃদয়ই তো যে তোমাকে নিজ থেকে সব নোট জোগাড় করে দেয়া থেকে শুরু করে সবসময়ই তোমার অনেক সাহায্য করে?”

আইজা বলল “হ্যাঁ, তবে তুমি কীভাবে জানলে যে হৃদয় আমার এত সাহায্য করে?!”

কিছু না বলেই আমান কল কাট করে দেয়। তার ঠান্ডা দুচোখে যেন আগুন জ্বলে উঠে।

.
.
.

পরের দিন ভার্সিটির লাইব্রেরীতে হৃদয় নোট তৈরি করছিল যখন কিছু ছেলে সেখানে প্রবেশ করে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।

একটি জনশূন্য ক্লাস রুমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে আগে থেকে আমান তার জন্য অপেক্ষা করছিল।

কিছু না বলে বেশ ঠান্ডা ভঙ্গিতেই আমান, হৃদয়ের কাছে এগিয়ে যায় , এরপর তার সামনে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তার গালে চড় মারে পরপর কয়েকবার।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here